#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–০৫
আবরারের শর্তে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এলো স্নিগ্ধার মুখে। হতভম্ব হয়ে আবরারের মুখের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধার কোমড়ে রাখা হাতটাতে জোর দিয়ে চেপে স্নিগ্ধাকে নিজের আরেকটু কাছে নিয়ে এলো আবরার। দুষ্টি হেসে বললো,,
— মৌনতা সম্মতির লক্ষন। সেটাই বুঝে নেবো?
কথাটা কানে পৌঁছানো মাত্রই এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে সুরে দাড়ালো স্নিগ্ধা।রাগ ক্রোধ দুটোই পাচ্ছে,খুব পাচ্ছে৷ কিন্তু ভুল জায়গায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লাভ আছে??
ক্রমশ এক হাতের আঙুলের সাথে অন্য হাতের আঙুল কচলাতে শুরু করলো স্নিগ্ধা। বুকের বা পাশের হৃদপিন্ডটা ভয় আর অশান্তির প্রেক্ষিতে ধড়াস ধড়াস করে লাফাচ্ছে।
কাপা কাপা চোখে আবরারের দিকে তাকালো স্নিগ্ধা।আবরার কেমন অদ্ভূত চোখে চেয়ে আছে। এখন যেন আবরারের এমন স্বাভাবিক দৃষ্টিটাও লোলুপ লোলুপ মনে হতে শুরু করলো স্নিগ্ধার।
এতক্ষন পর বিছানা ছেড়ে উঠে এসে স্নিগ্ধার সামনে গিয়ে দাড়ালো আবরার।
ভ্রু কুঁচকে বললো,
—- কি হয়েছে?? ভুল কিছু চেয়ে ফেলেছি?
চট করে তাকালো স্নিগ্ধা। প্রগাঢ় গলায় বললো
— আপনি ভালো করেই জানেন,আমি আপনাকে এখনও মেনে নেইনি। তাও,,
কথা শেষ করতে দিলোনা আবরার। ব্যাস্ত গলায় বলে ওঠে,
— মেনে নাওনি তো মেনে নাও… আমার তো কোনও আপত্তি নেই।
অবাক হয়ে তাকায় স্নিগ্ধা।
— আপত্তি নেই মানে?? আপনার নেই কিন্তু আমার আছে,,আপনি ঘরে আপনার স্ত্রী রেখে আমাকে বিয়ে করেছেন। তাও সম্পূর্ন আমাকে না জানিয়ে যে আপনি বিবাহিত। তারপর একি বাড়িতে অন্য ঘরে ওনাকে রেখে আমাকে নিয়ে থাকছেন,, আপনি জানেন? এখন ওনার মনের মধ্যে কি ঝড় বইছে??
এটুকু বলে থামলো স্নিগ্ধা। পুনরায় আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে,
“” জানবেন কি করে,আপনি যে পুরুষ মানুষ,,পুরুষ মানুষের হৃদয় বলতে কিছু হয়না,,যা হয় তার সব টাই মোহ। যেমন মোহে পরে আমাকে বিয়ে করলেন,,আমার বাবার গরীবির সুযোগ নিয়ে।
ছোট করে নিঃশ্বাস ফেললো স্নিগ্ধা। আবরারের দিকে তাকাতেই দেখলো আবরার কেমন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বললো,,
— এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
আবরার বড় বড় চোখ করে জবাব দিলো,
— তুমি এতো কথা বলতে পারো?? আগে জানতাম না তো,,
বিরক্ত হলো স্নিগ্ধা,,,তার এত গুলো কথা আদৌ আবরারের কানে পৌছেছে কিনা সন্দেহ হচ্ছে এখন। কৌতূহল মেটাতে স্নিগ্ধা জিজ্ঞেস করেই বসলো,,,
— আপনি কি শুনেছেন আমি এতক্ষন কি কি বলেছি??
আবরার মুচকি হেসে বললো,
— শুনেছি।
আর বুঝেও- ছি।
কপালের ভাজ গাঢ় হয়ে আসে স্নিগ্ধার,, বলে ওঠে,
— কি বুঝেছেন??
উত্তর না দিয়ে এক ধাক্কায় স্নিগ্ধাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয় আবরার।চমকে যায় স্নিগ্ধা,,,এক মুহুর্তের জন্যে ভয়ে সিটিয়ে পরে,, আবরারের দিকে চকিতে তাকায়। কাঁপা গলায় বলে ওঠে,,,
— এসব কি অসভ্যতা,,,
জবাব না দিয়ে নিজের এক হাত স্নিগ্ধার গলায় আর অন্যহাত কোমড়ে ছোয়ায় আবরার ,,, মৃদূ গলায় বলে ওঠে,
— আমি যা বোঝার বুঝেছি,পরি,তুমি এখনও বুঝতে পারোনি । শুধুমাত্র মোহের বশবর্তী হয়ে তোমাকে বিয়েটা আমি করিনি,,,,যদি বিয়ের কারণ সত্যি সত্যি মোহই হতো তাহলে বিয়ের মতো পবিত্র জিনিস কে মাঝখানে টেনে আনার কোনও প্রয়োজনই পড়তোনা।খুব কঠিন হতোনা তোমাকে এই আবরার ফাহাদ চৌধুরীর শয্যাসঙ্গী করতে,,,কিন্তু আমি ভালোবাসি তোমাকে তাই সন্মান দিয়ে ঘরে তুলেছি,,,
আবরারের চোখে দৃষ্টি রেখেই বিদ্রুপ করে বাকা হাসে স্নিগ্ধা। আবরার ভ্রু বাকিয়ে নিয়ে বললো,
— হাসছো যে?
স্নিগ্ধা ঠোঁটে হাসি মেখেই জবাব দিলো,
— আপনার কথা শুনে হাসি ছাড়া কিছুই পেলোনা।
পরক্ষনেই স্নিগ্ধা দৃষ্টি কঠিন করে নিয়ে বললো,
— যে পুরুষ এক স্ত্রী থাকা কালীন অন্য একজন কে ভালোবাসে তাকে কি বলা উচিত আবরার ফাহাদ চৌধুরী?? চরিত্রহীন??
এমন কথায় চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আবরারের।কিন্তু না,,,চোখ বন্ধ করে রাগ সংবরন করে তাকালো স্নিগ্ধার ক্রুদ্ধ মুখের দিকে,,সামান্য হেসে বলে উঠলো,
— তোমার প্রশ্নের উত্তর একদিন তুমি নিজেই পাবে পরি। আমি শিওর,, সেদিন আর আমাকে এতোটা ঘৃনা তুমি করবেনা। বরং হাজার গুন বেশি ভালোবাসবে।
উত্তর দেয়না স্নিগ্ধা। মনে মনে আওড়ে ওঠে,
— কোনও দিনও হবেনা এরকম।কোনও দিনও নাহ।
আচমকা স্নিগ্ধার থেকে দূরে সরে দাড়ায় আবরার। প্রশ্ন করে,
— তাহলে তুমি তোমাদের বাড়িতে যেতে চাইছোনা তাইতো??
ভাবনার সুতোতে টান পরে স্নিগ্ধার। অবাক হয়ে বললো,।
— আমি এরকম কখন বললাম?
আবরার স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,
— বলোনি কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা এক কাজ করি আমি বরং তোমার বাবাকে ফোনে জানিয়ে দেই। যেখানে ওনার মেয়েই যেতে নারাজ সেখানে আমার কি করার..??
কথাগুলো বলে বিছানার দিকে এগোয় আবরার। ফোন উঠিয়ে হাতে নিতেই ছুটে এসে হাত ধরে আটকায় স্নিগ্ধা। সরু চোখে সেদিকে তাকালো আবরার। জিজ্ঞেস করলো,
— কিছু বলবে?
স্নিগ্ধা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বললো,
— প্লিজ আমাকে যেতে দিন না,তিন দিন মনে হচ্ছে তিনশ দিন হয়ে এসছে।
আবরার অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— আমি কি বলেছি আমি যেতে দেবোনা? তুমিই তো চাইছোনা,,
স্নিগ্ধা এবার মুখ শক্ত করে বললো,
— আমি মোটেও বলিনি,মন গড়া কথা বলবেন না।
স্নিগ্ধার খুব কাছে এসে দাড়ায় আবরার। উষ্ণ নিঃশ্বাস ঠিকড়ে পরে স্নিগ্ধার মুখের ওপর। আবরার তার ঠান্ডা আওয়াজে বলে,
— শর্ত মেনে নিয়েছো তুমি? নাওনি তো,তাহলে কথা তো একই দাড়ালো।
বিস্মিত হলো স্নিগ্ধা। দৃঢ় গলায় বললো,
— আপনি এত বাজে একটা লোক?
এই শর্ত কখনোই মানবোনা আমি।
মুচকি হাসলো আবরার। বিছানার ওপর ফোন সামান্য জোরে ছুড়ে মারলো,,,স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললো,
— বেশ না মানলে নেই,তবে আমিও আর যাচ্ছিনা।
স্নিগ্ধার উত্তরের অপেক্ষা না করে সরে এসে বিছানার এক পাশে শুয়ে পরে আবরার। কপালের ওপর হাত ঠেকায়। চোখ বন্ধ করার আগে বলে ওঠে,
— শোয়ার আগে লাইট টা নিভিয়ে দিও।
প্রচন্ড কান্না পেলো স্নিগ্ধার। চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পরলোও গড়িয়ে।একদিকে আবরারের জঘন্য শর্ত,,অন্যদিকে আবরারের হাত থেকে সারাজীবনের জন্যে মুক্তি পাওয়ার ফিনকে প্রত্যাশা। দোটানার মধ্যে মুহুর্তেই নিজেকে তলিয়ে ফেললো স্নিগ্ধা। দাড়িয়ে রইলো থমমেরে কিছু সময়।
কিছু একটা ভেবে,, চোখের পানি গুলো মুছে ফেললো,,,নরম পায়ে এগিয়ে এলো বিছানার দিকে।কাপা কাপা স্বরে ডেকে উঠলো,
— শুনছেন..??
কপাল থেকে হাত নামিয়ে তাকালো আবরার।ভ্রু নাঁচিয়ে বললো,
— কিছু বলবে,
স্নিগ্ধা আস্তে করে বললো,
— আমি রাজি।
লাফিয়ে উঠে বসে আবরার। উদ্বেগ নিয়ে বললো
— কি বললে??
স্নিগ্ধা একিভাবে উত্তর দেয়,
— আমি রাজি।
আবরার বিস্মিত হয়ে বললো,
— তুমি রাজি আমার শর্তে?
ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে হ্যা বোধক মাথা নাড়লো স্নিগ্ধা। তাৎক্ষণিক স্নিগ্ধার হাতে হ্যাচকা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসে আবরার।
ভারসাম্য রাখতে না পেরে শুয়ে পরে স্নিগ্ধা। সুযোগ পেয়ে স্নিগ্ধার ওপর আধশোয়া হয়ে পরতে দেরি করেনা আবরার।
বুকের মধ্যে লজ্জ্বায়,ঘৃনায় ধুকধুক করতে থাকে স্নিগ্ধার৷ কোনও ভাবে এই বিশ্রি সময় টাকে যদি এখানেই থামিয়ে দেয়া যেত? তবে এমন অসহ্যকর,,,, পরিস্থিতি থেকে দৌড়ে পালাতো সে।
অন্যদিকে আবরার মুখ ডোবালো স্নিগ্ধার গলাতে,,ডুকরে কেঁদে উঠে বিছানার চাদর খামচে ধরলো স্নিগ্ধা। কিন্তু আবরার থামলোনা। গুটি কয়েক চুমু খেয়ে মৃদূ কামড় বসালো গলাতে,,,ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো স্নিগ্ধা।
পুনরায় আবরার চুমু খেলো সেখানে। এবার মুখ সরিয়ে এনে তাকালো স্নিগ্ধার মুখের দিকে। স্নিগ্ধার স্নিগ্ধ মুখটাকে এখন কেমন ভয়ার্ত লাগছে। ভয়ে কুকড়ে যাচ্ছে এমন অনুভূত হচ্ছে। পাত্তা না দিয়ে স্নিগ্ধার ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিলো আবরার। চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নিলো স্নিগ্ধা।
আচমকা আবরার সরে পরে স্নিগ্ধার ওপর থেকে।চট করে চোখে মেলে তাকালো স্নিগ্ধা। আশ্চর্যকিত হয়ে পাশে শুয়ে থাকা আবরারের দিকে ঘাড় ফেরায়,,,চোখে মুখে তার প্রশ্ন,,এক ঝাঁক প্রশ্ন,,,
স্নিগ্ধা তাকাতেই অপর কাত হয়ে শুয়ে পরলো আবরার। স্নিগ্ধার কৌতুহল মেটাতে কিঞ্চিৎ ঘাড় বাকিয়ে বলে উঠলো,,
— আমার এখন ভালোবাসার মুড নেই,,,বেশি না ভেবে ঘুমিয়ে পরো। আর হ্যা অবশ্যই আলো টা নিভিয়ে দিয়ে,,
প্রথমে অবাক হলেও পরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয় স্নিগ্ধা।তবে ভয় হতে থাকে খুব,,,,কাল নিজের বাড়িতে আবরার তাকে নিয়ে যাবে তো..??
সকাল বেলা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে তৈরি হচ্ছিলো স্নিগ্ধা। আবরারই বলেছে তৈরি হতে,,,,শর্ত পূরন না হলেও তাকে যে নিয়ে যাচ্ছে এটাই মহারাজের দয়া।
উল্লাসিত মন নিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চোখে কাজল পরতে নিলো স্নিগ্ধা। কোথ থেকে আবরার এসে হাত ধরে নিলো। অবাক হয়ে তাকালো স্নিগ্ধা। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে,,
হাত ছেড়ে দিয়ে স্নিগ্ধার পেছনে এসে দাড়ালো আবরার। স্নিগ্ধার কপাল সঙ্কুচিত হয়ে এলো এতে,,,কি করতে চাইছে কি ইনি..??
স্নিগ্ধার পিঠে ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে পেছন থেকে ওকে জাপটে নিলো আবরার। নিজের চওড়া বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো স্নিগ্ধার পিঠ সহ পুরো শরীর। হুটহাট ব্যাপারটাতে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো স্নিগ্ধা। হুশ ফিরতেই নড়তে শুরু করলো নিজেকে ছোটাতে।
ফলে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো আবরার। স্নিগ্ধার কাধে থুতনী ঠেকিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো,
— এই চোখে তো আমি এমনিই মারা পরেছি পরি,,কাজল লাগিয়ে আরো মারতে চাইছো আমাকে??
বিরক্তি নিয়ে আবারো নড়ে উঠলো স্নিগ্ধা। মৃদূ ক্ষিপ্ততা নিয়ে বললো,
— ছাড়ুন আমায়,,,সব সময় এসব ভালো লাগেনা।
জবাবে হাসলো আবরার। কিন্তু ছাড়লোনা স্নিগ্ধাকে। মুক্ত করলোনা নিজের বাহু বন্ধন থেকে, ওভাবে ধরে রেখেই অন্য হাত দিয়ে একটা লাল ফ্ল্যাট বক্স উঁচিয়ে ধরলো স্নিগ্ধার সামনে,,
স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়েই প্রশ্ন ছুড়লো,,
— কি এটা,,??
আবরার মৃদূ আওয়াজে জবাব দেয়,
— খুলে দেখো,,
বক্স হাতে নিয়ে খুলতেই চোখ কপালে উঠে এলো স্নিগ্ধার। পুরো একটা ভারী সেট আছে স্বর্নের গয়নার।
অবাক হয়ে ঘাড় বাকিয়ে স্নিগ্ধা তাকালো আবরারের দিকে। আবরার মিটিমিটি হাসছে,,,
পরক্ষনেই ড্রেসিং টেবিলে শব্দ করে বক্স টা রেখে দিলো স্নিগ্ধা। অনেকাংশে ছুড়ে মারার মতো। আশ্চর্য লাগলো আবরারের,,,
উদ্বেগ পূর্ণ গলায় বললো
— কি হয়েছে? পছন্দ হয়নি?
স্নিগ্ধা ক্রোধান্বিত হয়ে জবাব দিলো,
— এসব দামি গয়না দিয়ে ভোলাতে চাইছেন আমাকে?? লাভ নেই। গরিব হলেও আমি সেরকম মেয়ে নই,,
স্নিগ্ধার কথায় আবারো মুচকি হাসলো আবরার।
স্ফীত গলায় বললো,
— আমি জানিতো তুমি সেরকম মেয়ে নও,,আর এই কারনেই তুমি আমার বউ,,,
আর নিজের বউ কে কেউ গয়না দিয়ে ভোলাতে চাইবে কেন?? এটা তোমাকে দেয়া আমার প্রথম উপহার,,,,পরে নাও,,,
এটুকু বলে থামলো আবরার। স্নিগ্ধার মেজাজ বিগড়ে আছে। নাক মুখ এক করে কুঁচকে তাকিয়ে আছে আয়নায় ভেসে থাকা আবরারের প্রতিবিম্বের দিকে,,
আবরার এবার ব্যাস্ত গলায় বলে উঠলো,
— আচ্ছা থাক৷ আমিই পরিয়ে দিচ্ছি।
স্নিগ্ধাকে বুকের সাথে মিশিয়েই বক্স খুলে একে একে সব গয়না স্নিগ্ধাকে পরিয়ে দিতে শুরু করলো আবরার। দাঁতের সাথে দাঁত চেপে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো স্নিগ্ধা। এতোটা জঘন্য লাগছে এখন তাও মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছেনা,,,এর থেকে অসহায়ত্ব এর কিছু হয়কি?
স্নিগ্ধাকে গয়না পড়ানো শেষে পুনরায় আয়নার দিকে তাকালো আবরার। অধীর গলায় বললো,,
— বাহ বেশ লাগছে তো তোমায়,,
স্নিগ্ধা কঠিন গলায় জবাব দিলো,
— হ্যা ,সং এর মতোই লাগছে।
শব্দ করে হেসে ওঠে আবরার। স্নিগ্ধার রাগী মুখটাকেও ভীষণ এঞ্জয় করে সে। তবে হালকা পাতলা সাজে এতোটাই মায়াময়ি লাগছে স্নিগ্ধার মুখটা যে এখন কোনও কথাই কান অব্দি পৌছাবেনা। পুনরায় স্নিগ্ধার কাধে থুত্নী ঠেকায় আবরার। বরফ গলায় বলে ওঠে,
— তুমি এতো সুন্দর কেন??
আবরারের ঘোর লাগা কন্ঠের প্রশ্নে কিছু সময়ের জন্যে ভড়কে যায় স্নিগ্ধা। একটু আগে তার কড়া কথার জবাব কি দিলো এই লোক..?? ভারী অদ্ভূত।
স্নিগ্ধার চুলে মৃদূ চুমু খেলো আবরার। ঈষৎ কেঁপে উঠলো স্নিগ্ধা।
এবার স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে টেবিলের ড্রয়ার খুলে সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে ব্যালকোনির দিকে পা বাড়ালো আবরার। তবে যাওয়ার আগে আরেকবার পিছু ফিরে তাকালো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,,
— কাজল টা পরে নিও। নাহলে নজর লাগতে পারে।
থতমত খেলো স্নিগ্ধা। আবরারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
— এই লোক কি পাগল??
,
,
,
সামনে আবরার আর পেছনে স্নিগ্ধা। রুম থেকে এভাবে হেটে ড্রয়িং রুমে এসে দাড়াতেই এক সোফা জুড়ে ফরমাল পোশাক পরিহিত পরিচিত একজন লোক দেখে অবাক হলো আবরার। আবরার দাড়িয়ে পরায় স্নিগ্ধাও দাড়ালো। তবে কারন টা তার অজানা।
পকেটে দুহাত গুজে সোফার দিকে এগিয়ে এলো আবরার। স্নিগ্ধা নড়লোনা জায়গা থেকে। এবার
আবরার লোক টার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন ছোড়ে,
— আপনি? এই সময়..??
গ্লাস ভর্তি পানিতে চুমুক দিতে দিতে তাকান শফিক। হাসি মুখে উৎকন্ঠা নিয়ে জবাব দেন..
— ও,মিস্টার আবরার,আপনি উঠে পরলেন তাহলে,,, আমার অপেক্ষার অবসান ঘটলো,,,
সামান্য ঠোঁট প্রসারিত করে খালি সোফায় পা তুলে বসলো আবরার। বললো,,
—- আপনি হঠাৎ এলেন,, আমাকে না জানিয়ে,,তাও এত সকাল সকাল…
শফিক বেশ ব্যাতিব্যস্ত হয়ে জবাব দিলো,
— আমি নই,,,মিস্টার ডিসোজা আজকে ল্যান্ড করেছেন ওনারই তাড়া ছিলো। উনিই পাঠালেন আমায়।
আবরার সোফার হাতলে হেলান দিয়ে বললো,
—- বুঝতে পেরেছি,,,কিন্তু এই সময় আমি একটা কাজে বের হচ্ছিলাম,,,আমারো তাড়া ছিলো,,,মিস্টার শফিক।
শফিক হেসে জবাব দিলেন,
— আমি জানি আপনি ভীষণ ব্যাস্ত মানুষ আবরার। তবে ডিল ফাইনাল যখন আগেই ছিলো তাই বেশি সময় নেবোনা। শুধু আপনার সাইন টাই বাকি এখন।
অন্যদিকে এক ভাবে আবরারের পেছনে সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে স্নিগ্ধা। চোখে মুখে বিরক্তি না থাকলেও অপেক্ষা আছে,,,নিজের বাড়িতে পৌছানোর অপেক্ষা,, কাছের মানুষ দের চোখ ভরে দেখার অপেক্ষা আর সেই সাথে আবরারের থেকে মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষা।তবুও দ্বিরুক্তি না দেখিয়ে শান্ত ভাবেই সটান হয়ে দাড়িয়ে রইলো স্নিগ্ধা। সময় গুনতে লাগলো আবরারের অফিসিয়্যাল আলোচনা শেষের। পায়ের বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়েই মেঝেতে বৃত্ত আঁকায় মনোযোগ দিলো তারপর।
ট্রেতে কিছু খাবার সাজিয়ে হাজির হলো তনয়া। স্নিগ্ধাকে দেখে এক মুহুর্ত এর জন্যে থমকে দাড়ালেও পরক্ষনে পরিস্থিতির কথা ভেবে হাসি মুখে এগিয়ে এলো।
তনয়াকে দেখতেই নিচের দিকে মাথা নামিয়ে নিলো স্নিগ্ধা।সেদিনের এক চড়ে তনয়াকে দেখলেই ভারী ভয় লাগে ইদানিং,,
তাই এতক্ষনের উশখুশ ভাবটাও তার উবে গেলো কর্পূরের মতোন। পিলারের মতোন শক্ত ভাবে স্থির হয়ে রইলো এক জায়গায়।
সার্ভিং ট্রে থেকে একে একে সব খাবার গুলো টেবিলে নামালো তনয়া। হাসি মুখে বললো,,,
— মিস্টার শফিক এতোদিন পর এলেন একটু কিছু মুখে দিন। ভালো লাগবে,
তনয়ার কথার প্রেক্ষিতে আবরারের ভঙিমা স্বাভাবিক থাকলেও সৌজন্যে সুচক হাসলো শফিক।
— এসবের আবার কি দরকার ছিলো,,,
স্যান্ডউইচ এর প্লেট টা শফিকের হাতে তুলে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো তনয়া।
কিন্তু চোখ ঘুরিয়ে ক্ষনে ক্ষনে স্নিগ্ধাকে দেখছে তনয়া,,আবরার আর স্নিগ্ধার সাজসজ্জা প্রমান দিচ্ছে দুজনেই একিসাথে বেরোচ্ছে কোথাও,,,কিন্তু কোথায় যাচ্ছে?? হানিমুনে..?? ভাবতেই বুকটা কেপে উঠলো তনয়ার।
,
,
“” কালোজাম মিষ্টির টুকরো কাটা চামচ দিয়ে তুলতে তুলতে
হুট করে শফিকের চোখ পৌছালো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকা স্নিগ্ধার দিকে। খাওয়া রেখে কিছুক্ষন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। দৃষ্টি অনুসরন করে তাকাতেই আবরার বুঝতে পারলো শফিক স্নিগ্ধাকে দেখছে। গলা খাকাড়ি দিয়ে কেশে উঠলো আবরার।
— এনি প্রব্লেম মিস্টার শফিক?
শফিক এবার ইতস্তত ভাবে জবাব দেয়,
— না মানে,, ওই মেয়েটা কে?? আগেতো দেখিনি এ বাড়িতে।
এতো আওয়াজেও মাথা তোলেনা স্নিগ্ধা। অন্যদিকে আবরার কোনও উত্তর দেয়ার আগেই তনয়া তাড়াহুড়ো করে বলে ওঠে,,
— ও এই বাড়িতে থাকে,, কিছুদিন হলো এসছে।
তনয়ার দিকে আড়চোখে তাকালো আবরার। তনয়া শফিক সাহেবের সামনে শিথিল হাসলো,,
শফিক সাহেব এবার স্নিগ্ধাকে আপাদমস্তক দেখে নিলো,তনয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো,
— থাকে মানে? আপনাদের আশ্রিতা?
— কোথায় সাইন করতে হবে মিস্টার শফিক??
তনয়ার জবাবের আগেই গুরুগম্ভীর ব্যাস্ত কন্ঠে কথাটা বলে ওঠে আবরার।
টনক নড়ে শফিকের। উদ্বেগ গলায় বলে,
— ওহ,হ্যা,,এক সেকেন্ড।
মাথা নেড়ে নীলরঙা একটি ফাইল আবরারের দিকে এগিয়ে দেয় শফিক।
আবরার ফাইল নিয়েই দ্রুত হাতে সাইন করে ফাইল টাকে ঠেলে দেয় শফিকের দিকে,,,উঠে দাড়ায় তারপর,, তটস্থ গলায় বলে ওঠে,
—- মিস্টার শফিক,,,আমাকে বেড়োতে হবে,,,উইল ইউ প্লিজ এক্সিউজ মি..??
কথার মানে বুঝতে পারায় শফিক ও উঠে দাড়ালো,কোর্ট এর অংশ টানতে টানতে জবাব দিলো
— ঠিক আছে,,তবে আমি আসছি এখন।
ঘাড় নেড়ে সায় দিলো আবরার। সামান্য হেসে করমোর্দন করে নেয়, শফিকের সঙ্গে,,আলোচনা শেষ হওয়াতে অপেক্ষা করেনা তনয়া,,,,স্নিগ্ধাকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। আবরারের চাল চলন দিন দিন সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে,,,এক্ষুনি তার উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত ।
অন্যদিকে এগোতে নিয়েও আবারো পিছিয়ে এসে আবরারের পাশে দাড়ালো শফিক। কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
—- একটু এদিকে আসবেন মিস্টার চৌধুরী ,,দরকারি কথা ছিলো,
আবরার গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয়,
— চলুন।
যাওয়ার আগে আরেকবার স্নিগ্ধার দিকে তাকায় আবরার। স্নিগ্ধা এতোই শক্ত ভাবে দাড়িয়ে মাথা নিচে করে আছে ঘাড় থেকে মাথা খুলে পরে না গেলে হয়।
— কি হলো মিস্টার চৌধুরী, আসুন..?
আবরার কে থামতে দেখে ডেকে উঠলো শফিক,,
স্নিগ্ধার থেকে চোখ সরিয়ে শফিকের দিকে তাকালো আবরার। মৃদূ গলায় বললো,
— হ্যা চলুন।
হেটে গেটের বাইরে এসে দাড়ালো আবরার। শফিকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,
— বলুন,কি বলবেন,
এদিক ওদিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকালো শফিক। ব্যাপারটাতে ভ্রু বাকালো আবরার।
— এনিথিং রং মিস্টার শফিক..??
জবাবে হাত দিয়ে গলার টাই ঢিলে করে শফিক। আলোড়িত হেসে উত্তর দেয়,
— না আসলে একটা ফেবার চাইছিলাম।
আবরার সন্দেহী ভাবে বললো,
— কিসের ফেবার?
দাঁত বার করে হাসলো শফিক,,,বললো,
— আসলে আপনি তো জানেনই যে আমি বড় বড় ক্ল্যায়েন্ট ধরিয়ে দিতে ভীষণ পটু,কত নামি দামি বিজনেস ম্যান আমার মাধ্যমে রাঘব বোয়াল দের সাথে ডিল করেছেন।
কপাল কুঁচকে নেয় আবরার।
— তো..??
শফিক ধৈর্য হীন হয়ে জবাব দিলো,,
— আসলে মিস্টার আবরার। আমি আপনাকে এরকম অনেক ক্ল্যায়েন্ট- ই ধরিয়ে দেবো সামনে,, আই সোয়্যার,যদি…
কথার মাঝখানে আবরার প্রশ্ন করে,
— যদি?
নিজের চিবুকে হাত বোলায় শফিক,, দাঁত বার করে বলে ওঠে
— না মানে যদি এক রাতের জন্যে আপনার বাড়ির ওই আশ্রিত মেয়েটাকে আমার সাথে দিতেন,,,তাহলে…
শফিক এটুকু বলতেই আগুন চোখে তাকায় আবরার।শক্ত হাতে শফিকের কোর্টের কলার চেপে ধরে। ঘটনা ক্রমে হকচকিয়ে যায় শফিক।
আবরারের চোখ দেখে, ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে,,
— কি করছেন মিস্টার চৌধুরী,,,?
রাগ নিয়ন্ত্রণ করে শফিকের কলার ছেড়ে মৃদূ ধাক্কা দিলো আবরার। এক কদম পিছিয়ে গেলো শফিক। আবরার এবার বেশ সৌজন্য বাক্যে বললো,,
—- আবরার ফাহাদ চৌধুরীর হাতে কখনও ধোলাই খেয়েছেন শফিক সাহেব??
গোল দৃষ্টি নিয়ে মাথা নাড়লো শফিক,,যার অর্থ ” সে খায়নি…
— খেতে চান..??
আবরারের কাঠ প্রশ্নে ঢোক গেলে শফিক। জবাব সে পেয়ে গেছে,,
কথা না বাড়িয়ে এলোমেলো কোর্ট এর কলার ঠিক করতে করতে এগোয় গাড়ির দিকে,,
পেছন থেকে দৃঢ় গলায় ডেকে ওঠে আবরার।
— মিস্টার শফিক?
ভয় নিয়ে পিছু ফিরে তাকালো শফিক। আবরার শক্ত চোয়াল নিয়ে বলে ওঠে,
—- মিস্টার শফিক,,,,পরেরবার আমার বাড়ির ত্রি- সীমানাতেও যেন আপনাকে না দেখতে পাই। আর আজ থেকে কোনও ডিলই হচ্ছেনা। এটাই শেষ!
উৎকন্ঠা নিয়ে আবরার কে বোঝাতে এগিয়ে আসে শফিক,,,,হাত নাড়িয়ে ব্যাস্ত ভাবে বললো,
— আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন মিস্টার আবরার। এতোদিনের সম্পর্ক আমাদের। একটা সামান্য কারনে আমাদের ডিল কেন ক্যান্সেল হবে,,,আমিতো আপনার লাভের জন্যেই,
হাত উঁচু করে থামিয়ে দিলো আবরার। শক্ত মুখে তাকিয়ে বললো,
— আমি এক কথা দুবার বলতে পছন্দ করিনা মিস্টার শফিক। শুধুমাত্র এতোদিনের অফিসিয়াল সম্পর্কের জোরেই আপনি সুস্থ ভাবে ফিরতে পারছেন। বোধ করি এবার আপনার যাওয়া উচিত।
আবরারের দিকে একবার হতাশ ভাবে তাকিয়ে গাড়ির দরজা খুলে উঠে বসলো শফিক।
ধূলো আর ধোয়া উড়িয়ে
শফিকের গাড়ি হাওয়া হতেই ভেতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পেছন ঘোরে আবরার। সদর দরজার সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্নিগ্ধাকে।
স্নিগ্ধা এতক্ষন তার আর শফিকের আলোচনা শুনে নিয়েছে কিনা ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে আবরারের মনে। নিজের খটকা দূর করতে ভ্রু বাকিয়ে বলে ওঠে,
— তুমি এখানে কখন এলে..?
স্নিগ্ধা মৃদূ গলায় জবাব দিলো,
— এক্ষুনি।
স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো আবরার। স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললো,
— এসো,,,
স্নিগ্ধা গাড়িতে বসতেই এগিয়ে এসে ওর সিট বেল্ট বেধে দিলো আবরার। আস্বস্ত ভাবে বললো,
— মাথা ঘুরলে বা বমি পেলে আমাকে বলবে,,,
চুপচাপ মাথা নাড়লো স্নিগ্ধা। গাড়িতে প্রথম দিন উঠতেই বমি করে জানলা ভাসিয়ে দিয়েছিলো,,,সেটা আবরার মনে রেখে দিয়েছে। হয়তো নিজের গাড়ি নষ্ট হওয়ার ভয়ে,,,
তবে আজ আর এরকম হবেনা সে নিশ্চিত । আবরারের হাত থেকে বাঁচার আশায় এখন ভীষণ উদগ্রীবতা মনের মধ্যে। সময় পার হয়ে কোনও রকম বাড়ির দরজায় পা রাখতে পারলেই হলো,,
“” পুরো রাস্তায় আর কোনও কথা বাড়ায়নি কেউ। স্নিগ্ধা কিভাবে কিভাবে পালাবে সেসব ভাবলেও আবরারের ভাবভঙ্গি অপ্রকাশিত ছিলো তখন।
এক পর্যায়ে সিটের সাথে মাথা এলিয়ে চোখের পাতা এক করতেই ঘুমে তলিয়ে যায় স্নিগ্ধা। সেদিকে খেয়াল করতেই এক হাত দিয়ে ঘুমন্ত স্নিগ্ধাকে টেনে নিজের বুকে নিয়ে আসে আবরার৷ ওভাবে ধরে রেখেই অন্য হাতে স্টিয়ারিং ধরে ড্রাইভ করতে থাকে,,,
”
চার ঘন্টা জার্নি শেষে গাড়ি ব্রেক কষলো আবরার। চট করে ঘুম ভেঙে চোখ খুলে তাকালো স্নিগ্ধা। নিজেকে আবরারের বুকে দেখতেই ধড়ফড় করে সরে বসলো,,,কিছু না বলে জানলা থেকে
পাশ ফিরতেই বুঝতে পারলো তার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে সে। আবরারের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধা
আনন্দ ধ্বনি নিয়ে বললো,,
— আমরা এসে গেছি,,
শান্তভাবে মাথা নাড়লো আবরার।
স্নিগ্ধা আদুরে গলায় বললো,
— দরজা টা খুলে দিন না,,,আমি ভেতরে যাই।
একিভাবে চুপ থেকে ড্রাইভিং সিটে ছেড়ে গাড়ি থেকে নেমে এলো আবরার। স্নিগ্ধার পাশের দরজা টা টেনে খুলে দিতেই দ্রুত পায়ে নামলো স্নিগ্ধা। আবরার কে তোয়াক্কা না করে বাড়ির দিকে দৌড়ে যেতে ধরতেই পেছন থেকে এক হাত টেনে ধরলো আবরার। অবাক হয়ে তাকালো স্নিগ্ধা। ব্যাকুলতা নিয়ে বললো,
— কি হলো,,যেতে দিন।
মৃদূ হাসলো আবরার। স্নিগ্ধার হাত ছেড়ে দিয়ে পকেটে হাত গুজে প্রগাঢ় গলায় জবাব দিলো
— ভেবোনা এখানে এসেছো মানে আমার থেকে মুক্তি মিলেছে তোমার। ঠিক যেভাবে রেখে যাচ্ছি,,রাতে এসে ঠিক সেভাবে নিয়ে যাবো,,,বাই এনি চান্স কোনও চালাকির চেষ্টা করেছো তো,,,
এটুকু বলে থামলো আবরার
স্নিগ্ধার কাছে এগিয়ে এলো,,হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধা।মুখের হাসি তার মিলিয়ে গিয়েছে এতক্ষনে
আবরার স্নিগ্ধার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস গলায় বললো,,
— তোমাকে না পেলে তোমার পরিবারের সদস্যরা কেউ সুস্থ থাকবে কিনা কথা দিতে পারছিনা, মিসেস স্নিগ্ধা আবরার চৌধুরী।
শেষের লোমহর্ষক কথায় বাক রুদ্ধ হয়ে এলো স্নিগ্ধা।
আবরার আর দাড়ালোনা।গাড়ির দরজা খুলে উঠে বসলো।অন্যদিকে জমে যাওয়া হাত পা নিয়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধা।
চলবে,
আপু বা ভাইয়া যারাই গল্প পড়ার জন্যে আমাকে রিকুয়েষ্ট পাঠাচ্ছেন বা পাঠাবেন তারা অন্তত ইনবক্সে ছোট্ট করে একটা মেসেজ দেবেন আমাকে। অনেক সময় পাঠক ভেবে ফেক আইডি এড করে অনেক হেনস্তায় পরতে হয় আমাকে। তাই সুবিধার জন্যে এইটুকু কষ্ট করতে বলা😊😊😊
1ta kothai bolbo besir bhag writter er golpo incomplete thake.Golpo ta jodi incomplete thake tahole complete korun.