#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–১৬
আমাকেও সাথে নিননা?? আমিও যাই..??
স্নিগ্ধার ছেলেমানুষী গলায় আবরার মৃদূ হেসে দু হাতের আজোলে স্নিগ্ধার গাল তুলে নিলো । বলল,
— এরকম করলে কি আমার যেতে ইচ্ছে করবে পরি??
স্নিগ্ধা ঠোঁট দুটো উল্টে বলল,
— আপনি সব সময় এরকম করেন,কারো কথা শোনেন না,,আমাকে নিয়ে গেলে কি হবে আপনার?
আমিতো সারাদিন এই বাড়িটার মধ্যেই থাকি,
আমার কি একটুও বাইরে যেতে ইচ্ছে করেনা??
আবরার গাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো,ভ্রু কুঁচকে বলল,
— কালই না বাইরে থেকে ঘুরে এলাম??
স্নিগ্ধা এখনও ফুলিয়ে রেখেছে গাল।ওভাবেই বলে উঠলো,
— তো কি হয়েছে,,,কাল তো কাল।আজ তো নয়।আজকে যাইনা প্লিজ..??
আবরার মুচকি হেসে বলল,
— একটা বাচ্চাকে বিয়ে করে আনলাম শেষ মেষ??
স্নিগ্ধা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
— কি বললেন?
আবরার মাথা নেড়ে বলল,
— কিছুনা।
স্নিগ্ধা আবারো উদগ্রীব হয়ে বলল,
— নিয়ে চলুন না আমায়।আবরার প্লিজ,,আমি যাবো।
আবরারের প্রচন্ড হাসি পেলো স্নিগ্ধার এমন বাচ্চামো দেখে,,,,খুব কষ্টে হাসি চাপিয়ে স্নিগ্ধার বাহুতে হাত ঠেকালো
শান্ত ভাবে বলল,
— দেখো পরি,,পরপর তিনটে এতিম খানায় যাচ্ছি। অনেক দূরের পথ,,,যাওয়া আসা মিলিয়ে তোমার অনেক জার্নি করতে হবে,,আর তুমিতো গাড়িতে জার্নি করার অভ্যাস এখনও ঠিক ভাবে করে উঠতে পারোনি। এইতো কাল কেও মাথা ঘুরছিলো তোমার, বলছিলে না? ,তাও ওইটুকু রাস্তায়,,আজ কি হবে বুঝতে পারছো??
আমিতো তোমার ভালোর জন্যেই বলছি তাইনা বলো??
স্নিগ্ধা মাথা নাড়লো,মুখ কালো করে বলল
— বুঝতে পেরেছি,,থাক যাবোনা।
আবরার ভ্রু নাঁচিয়ে বললো,
— তাহলে হাসো একটু.?
স্নিগ্ধা সামান্য ঠোঁট টিপে হাসে। পরক্ষনেই উদ্বেগ নিয়ে বলল,
— কিন্তু আপনি কখন আসবেন??
আবরার সরু চোখে তাকায়,, সন্দেহীভাবে বলে,
— কেন মিস করবে আমাকে??
স্নিগ্ধা চোখ নামিয়ে নিলো,,মৃদূ মাথা নেড়ে বলল– একটুও নাহ।
আবরার সামান্য শব্দ করে হাসলো,,,
পরক্ষনে হাসি থামিয়ে কব্জিতে বাধা ঘড়িটাতে চোখ বুলিয়ে বলল,
—আচ্ছা ঠিক আছে,, এখন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আসছি তাহলে?
স্নিগ্ধা চোখ তুললো,আবরার হাটতে ধরলেই তাড়াহুড়ো করে বলল– শুনুন..??
আবরার ঘাড় ফেরায়,,এক ভ্রু নাঁচিয়ে বলে,
— কিছু বলবে?
স্নিগ্ধা নরম পায়ে এগিয়ে এসে আবরারের টাইয়ে মৃদূ হাত বোলালো,,নিচু গলায় বলল,
— তাড়াতাড়ি ফিরবেন।
এটুকু বলতেই পেছনে দুহাত বেধে স্নিগ্ধার সামনে ঝুঁকে এলো আবরার।দুষ্টু হেসে বলল,
— তাহলে ডিসকাউন্ট চাই।
স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকালে আবরার নিজের গাল ইশারা করলো হাতের আঙুল ছুইয়ে,,,আবরারের ইশারার মানে বুঝতে পেরে স্নিগ্ধা চঞ্চল গলায় বলল,
— দেবো,তবে তাড়াতাড়ি ফিরলে তবেই।
আবরার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
— বাহ।আমার বউ দেখছি আমার থেকেও এগিয়ে। ইশারায় সব বুঝে নেয়,
স্নিগ্ধা মুচকি হাসলে আবরার এক হাত প্রসারিত করে ওকে বাহুর সাথে জড়িয়ে নিলো। একিসাথে পা মিলিয়ে হেটে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো তারপর।
সদর দরজার কাছাকাছি আসতেই স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিলো আবরার। ঠোঁট এগিয়ে উষ্ণ পরশ দিলো স্নিগ্ধার কপালে,,,চোখ বন্ধ করে নিলো স্নিগ্ধা।
আবরার বাকা হেসে বলল,,
— আমার টা এসেই নেবো ওকে??
উত্তরে চোখ মেলে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো স্নিগ্ধা। আবরার উদ্বেজিত মুখ করে বুকের বাম দিকে হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে বলল,
— এভাবে হেসোনা পরি,,বুকে লাগে খুব।
স্নিগ্ধা নাক মুখ কুচকে নিলো,,ব্যাস্ত গলায় বলল,
—- সব সময় শয়তানী,আপনার না দেরি হয়ে যাচ্ছে?? যান তাড়াতাড়ি যান।
আবরার দুঃখি মুখ করে বলল,
— তাড়িয়ে দিচ্ছো আমায়?
— হ্যা দিচ্ছি।
স্নিগ্ধা আবরার কে ঠেলেঠুলে দরজার বাইরে বার করলো,,ব্যাগ্র গলায় বলল,
— তাড়াতাড়ি যাবেন তাড়াতাড়ি ফিরবেন।আর হ্যা দুটোই সাবধানে।
এটুকু বলে ব্যাস্ত হাতে স্নিগ্ধা দরজা চাপাতে গেলে বাধ সাধলো আবরার। হাত দিয়ে দরজা আটকে এক পাশ দিয়ে মাথা বের করলো, উঁকি দিয়ে চোখ টিপে বলল,
— ঠিক আছে যাচ্ছি,, তবে পাওনা টা কিন্তু এসে সুদ সমেত তুলে নেবো।
স্নিগ্ধা মুচকি হেসে তৎপর হয়ে বলল,
— হয়েছে। বুঝেছি। যান এবার।
আবরার হাটার মধ্যে কয়েকবার পিছু ফিরে তাকালো,,,দরজার সাথেই লেপ্টে দাঁড়িয়ে ছিলো স্নিগ্ধা। আবরার গাড়িতে উঠে বসে সিট বেল্ট বেধে আবারো তাকালো জানলা দিয়ে,,হাত উঁচিয়ে বিদায় জানালে স্নিগ্ধাও জবাবে হাত ওচালো,,,
বাম হাত স্টিয়ারিংয়ে রেখে ডান হাত দিয়ে স্নিগ্ধার দিকে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলো আবরার। এ পর্যায়ে স্নিগ্ধা লজ্জ্বায় মাথা নামিয়ে নিয়ে পরক্ষনে আবারো তাকালো আবরারের দিকে।
ঠোঁট এলিয়ে হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো আবরার। আবরারের গাড়ি চোখের আড়াল হওয়া অব্দি তাকিয়ে ছিলো স্নিগ্ধা।
এরপর ভেতরে এসে দরজার লক ভালো করে টেনে দিয়ে,,গলা বাড়িয়ে ডেকে উঠলো,
— মকবুল ভাই..??
ডাক শুনে দ্রুত পায়ে হাজির হলো মকবুল,,
— ডাকছিলেন ম্যাডাম?
স্নিগ্ধা কোমল গলায় বলল,
— আজ আর রান্নার বন্দোবস্ত করতে হবেনা,,আপনার স্যার বাইরে খাবেন,আর আমিও কিছু একটা খেয়ে নেবো।
মকবুল মাথা নাড়লো– জ্বি আচ্ছা।
মৃদূ হেসে স্নিগ্ধা নরম পায়ে ভেতরের ঘরের দিকে এগোলো, পেছন থেকে সেদিক তাকিয়ে ঘাড় কাত করে বাকা হাসলো মকবুল,,
— আপনার আজ আর খেতে হবেনা ম্যাডাম।ওপরে গিয়েই খাওয়া দাওয়া টা সেড়ে নেবেন না হয়।
,,
,,
,,
তনয়া ওই মেয়েটাকে মারার প্ল্যান করছে..!কি যেন নাম? ও হ্যা স্নিগ্ধা। আর সেটাও আবরার দের বাড়ির কাজের লোক মকবুল কে দিয়ে।
কথাটায় পানি খেতে গিয়ে বিষম খেলো আমিনুল।গোল চোখে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
— কাজ করে সাক্ষি কেন রাখবেন স্যার??ওতো ধরা পরবেই সাথে মুখ খুললে আপনার মেয়েও জেলে যাবে।তখন কিন্তু আমার হাতে কিছু থাকবেনা বলে দিলাম।
তোফায়েল বিরক্তি নিয়ে বলল,
— আহ! তুমি এত কথা কিভাবে বলতে পারো আমিনুল ??
আগে শোনো আমি কি বলছি…!!
আমিনুল হাতের গ্লাশ টা টেবিলে রাখলো,,,জিজ্ঞাসা নিয়ে বলল,
—- বলুম শুনে দেখি,,,
তোফায়েল পায়ের ওপর পা উঠিয়ে বসে বললেন,
— তনয়া যা করার করেছে,,কিন্তু ও জানেনা যে আমি ও ওর বাবা। আমার নাকের ডগা দিয়ে কিচ্ছু করা সম্ভব নয়,,তাই আমি ভেবেছি তনয়ার চাল টা একটু ঘুরিয়ে দিতে।
আমিনুল ভ্রু বাকিয়ে বলল,
— কিরকম?
তোফায়েল বাকা হাসলো। বলল,
— ধরো যদি এরকম হয়,, স্নিগ্ধার জায়গায় আবরারকে মেরে দেই?
আমিনুল চমকে উঠলো,
— এসব কি বলছেন স্যার,,আবরারের মত লোককে মারা কি পুঁটি মাছ ধরার মত সহজ ভাবছেন?
তোফায়েল দৃঢ় গলায় বলল
— সহজ হবেনা।তবে কঠিন কিছু নয়,,যেমন টা তুমি ভাবছো। টাকা দিলে বাঘের চোখ ও পাওয়া যায়।সেখানে আবরার তো অনেক ছোট ব্যাপার। আসলে গল্পটা এমন ভাবে সাজাবো যে দাড়ি কমা কোনও কিছুরই কমতি রাখবোনা আমি,
আমিনুল কিছু একটা ভেবে বলল,
— কিন্তু এতে লাভ?
তোফায়েল উঠে দাড়ালো ,আমিনুলের বসার জায়গাটা ঘোল করে ঘুরতে ঘুরতে বলতে লাগলো,
— দেখো আমিনুল,,তনয়া আবরারের প্রেমে একেবারে ডেস্পারেট হয়ে গিয়েছে,,ও ভাবছে স্নিগ্ধা মেয়েটাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই আবরার ওর হবে,,,কিন্তু আবরারের ভাব মূর্তিতে আমি যেটা বুঝলাম,, তাতে আবরারের তনয়ার কাছে ফিরে আসার চান্সেস জিরো পার্সেন্ট।
তনয়া আর আবরার কে ফিরে পাবেনা এটাতো নিশ্চিত।
ও এখন যা করছে সব টাই ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে । যাকে এক কথায় পাগলামি বলা চলে,
কিন্তু আমিতো আর ওর মত ছেলেমানুষ নই।আমি বিষয় টা একটু তলিয়ে ভাবছি।আজ যদি স্নিগ্ধা মেয়েটাকে মারতে চাই তাহলে এখানে লাভ কি হচ্ছে ?? আবরার তো ফিরছেনা,,উল্টে দেখা গেলো বউয়ের মার্ডারে ক্রুদ্ধ হয়ে মিডিয়া প্রেসে একবারে ঝড় তুলে দিলো,,শেষমেষ কি হবে?? তদন্ত হয়ে লেজে টান পরলে ফাসবো আমরাই।
কিন্তু যদি এটার উল্টো ঘটে? মানে হলো আবরার কে মারি আর সেই দ্বায়ে স্নিগ্ধাকে জেলে ভরে দেই,,লাভের লাভ তো এখানেই,,
আমিনুল ঘাড় বাকিয়ে বলল,
—- কিরকম?
তোফায়েল বিরক্তি নিয়ে বলল,
— উফ,,তোমাকে পুলিশের চাকরি কে দিয়েছে বলোতো?? একটা সামান্য জিনিস মাথায় ঢুকছেনা?
আমিনুল কাচুমাচু মুখে বলল,
— কি স্যার,,,পুলিশ হলেও ডিউটিতো আপনার পেছনেই বেশি করছি তাইনাহ?
তোফায়েল বিরক্তিতে ঘাড় নেড়ে বলল,
— যাক গে ছাড়ো এসব,,
যেটা বলছিলাম,,
একটু ভেবে দেখো আমিনুল,,আবরার মরলে ব্যাপারটা আমার জন্যে কতটা সহজ হবে? স্নিগ্ধা মেয়েটাতো গ্রামের একটা অশিক্ষিত মেয়ে। ও আঈন আর সমাজের মার প্যাচ বুঝবেনা। স্বামীর মরার শোক আর নিজের বাকি জীবন জেলে কাটানোর দুঃখে কাতর হয়ে থাকবে আজীবন।এসব ব্যাপার নিয়ে ঘাটবেওনা।
আর সেই সুযোগে বুদ্ধি খাটিয়ে আবরারের বিশাল স্বয় সম্পত্তি হাতিয়ে নেবো আমি,
স্নিগ্ধা যাবে জেলে,,আর আবরার কবরে।কি বলো? কেমন হবে?
উত্তরে আমিনুল উত্তেজিত ধ্বনি নিয়ে বলল,
— বাহ কি প্ল্যান করেছেন স্যার।জবাব নেই আপনার।
প্রশংসায় তোফায়েল বাকা ঠোঁটে হাসলো,
আমিনুল পরক্ষনেই ভয়ার্ত মুখে বলল,
— কিন্তু স্যার মকবুল ধরা পরলে যদি মুখ খুলে দেয়?
তোফায়েল দৃঢ় গলায় বলল,
— এত সহজ নয়,,,ব্যাপারটা এমন ভাবে ঘটবে যে কেউ কূল কিনারাও করতে পারবেনা।
আমিনুল জিজ্ঞাসা নিয়ে বলল,
— আপনি এত কনফিডেন্স কিভাবে পাচ্ছেন?
তোফায়েল এগিয়ে এসে বলল,
— আবরার দের বসার ঘরে দরজা বরাবর ঝারবাতি দেখতে পেয়েছিলে?
আমিনুল কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলল,,
— খেয়াল করিনি।একবার গিয়েই ওপরের দিকে কে তাকায় বলুন স্যার,,
তোফায়েল বিদ্রুপ করে বলল,
— পুলিশের নজর নাকি শকুনের মত? এই তার নমুনা?
আমিনুলের মৃদূ রাগ হলো,,প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,
—- আসল কথা বলুন স্যার।ঝারবাতি দিয়ে কি হবে?
তোফায়েল উৎক আওয়াজে বলল,
— যা করার ওটাই করবে।
আমিনুল কৌতূহল নিয়ে তকিয়ে বলল,
— কিন্তু তনয়া ম্যাডাম? উনি কি মানবেন?
তোফায়েল সরু চোখ করে বলল,
— ওকে কে জানাবে ? যতক্ষনে এসব ওর কান অব্দি পৌছবে ততক্ষনে আবরারের ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাবে।
এটুকু বলেই হাসিতে মেতে উঠলো তোফায়েল,,তাল মিলিয়ে হাসলো আমিনুল,,
পর্দার আড়াল থেকে সব কথা শুনতে পেয়ে,,মাথায় চক্কর কাটলো তনয়ার।হাত পা জমে এলো।
“”” এতক্ষন এসব কি শুনলো সে?
“” বাবা আবরার কে মারতে চাইছে? তাও সম্পত্তির লোভে,,বাবা একবারো আমার কথাটা ভাবলোনা? আমিতো আবরার কে ভালোবাসি।
না না ,আমি আবরার কে যে করেই হোক নিজের করে চাই,,,আমি ওকে মরতে দেবোনা। কিছুতেই নাহ!
কিন্তু এখন কি করবো আমি?? বাবাকে নিষেধ করতে করতেও অনেকে সময় পেরিয়ে যাবে,,,আবরার কে বাঁচাতে হবে আমার।
হন্তদন্ত পায়ে দৌড়ে রুমে গেলো তনয়া।বিছানার ওপর পরে থাকা মুঠোফোন উঠিয়ে নিয়েই কাপা হাতে ডায়াল করলো মকবুলের নম্বরে,,গুটি কয়েক বার রিং হতেই রিসিভ করলো মকবুল।
— হ্যালো ম্যাডাম বলুন..?
তনয়া তেঁতে উঠে বলল,
— মকবুল এসব কি শুনছি আমি,তুমি প্ল্যান চেঞ্জ করে আবরার কে মারতে চাইছো?
মকবুল প্রথমে ইতস্তত করলো,পরবর্তীতে বলল,
— আপনাকে স্যার বলে দিলো?তাহলে আমাকে বলতে নিষেধ করলো যে?
তনয়া দাঁত চিবিয়ে বলল,
— আগে আমার কথার উত্তর দাও।তোমাকে আমি এডভান্স দিয়েছি না? তাহলে কি করে তুমি অন্যের হয় কাজ করতে পারো?
মকবুল শক্ত গলায় বলল,
— দেখুন ম্যাডাম,কাজ কে দিয়েছে,, কিভাবে দিয়েছে সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়,আমি টাকার জন্যে করছি,তাই যে আমাকে টাকা বেশি দেবে আমি তার কাজই আগে করবো,,আপনি আমায় পঞ্চাশ দিয়েছেন, আর আপনার বাবা আমায় গুনে গুনে দেড় লাখ দিয়েছে। এখন আপনিই বলুন অপশন কোনটা ভালো??
তনয়া ক্ষিপ্ত গলায় বলল,
— মকবুল তুমি আবরারের গায়ে একটা ফুলের টোকাও ফেলবেনা । বুঝতে পারছো ?? আমি কিন্তু পুলিশ কে জানিয়ে দেবো সব..!
মকবুল দাঁত কেলিয়ে বলল,
— ভয় পাচ্ছিনা ম্যাডাম,,,কারন কাজ আমি কিভাবে করবো আপনি তার কিছুই জানেন না,,আর যেখানে পুলিশ আপনার বাবার সাথেই আছে সেখানে আমার কিসের ভয়?? এখন রাখছি ম্যাডাম,সাহেব আসার সময় হয়ে গিয়েছে,,,প্ল্যান সাজাতে হবে।
তনয়া কিছু বলতে নেয়ার আগেই লাইন কেটে দিলো মকবুল । আসন্ন পরিস্থিতির কথা ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তনয়ার।
— এখন আমি কি করবো? আবরার কে বাঁচাবো কি করে?? আমাকে আবরারের বাড়িতে যেতে হবে,,এক্ষুনি যেতে হবে।
সময় নষ্ট না করে আবরারের বাড়ির উদ্দেশ্যে এক ছুট লাগালো তনয়া। নিজের ভালোবাসার মানুষের নিরাপত্তাই এখন এক মাত্র লক্ষ্য তার।
“”
“”
“”
ফোনের রিংটোনের শব্দে গাড়ি ব্রেক কষলো আবরার। ফোন উঠিয়ে
স্ক্রিনে তনয়ার নম্বর দেখে প্রথমেই ভাবলো ধরবেনা। এরুপ ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে লাইন কেটে দিলো।পকেটে রাখতে গিয়ে মেসেজের টুংটাং শব্দ কানে পৌঁছাতেই পুনরায় ফোন সামনে ধরে ইনবক্স অন করলো ফোনের।
প্রথম সাড়িতেই গোটা অক্ষরে তনয়ার মেসেজ ভেসে আছে,
“”” please abrar phone ta tolo please….!!
এটুকু দেখে ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবলো আবরার। ততক্ষনে আবারো তনয়ার কল এসেছে ফোনে।এবার আর দেরি না করে রিসিভ বাটনে প্রেস করে ফোন কানে ঠেকালো আবরার।বিরক্তি নিয়ে বলল,
— কি হয়েছে??
ওপাশ থেকে তনয়া উত্তেজনা নিয়ে বলল,
— আবরার প্লিজ তুমি বাড়ি যেওনা প্লিজ…তোমার অনেক বড় বিপদ।
কথাটা কৌতুক কৌতুক মনে হলো আবরারের। বিদ্রুপাত্মক হাসলো। বলল,
— আপনাদের থেকেও বড় বিপদ?
তনয়া অধৈর্য হয়ে বলল,
— আবরার প্লিজ আমার কথাটা একবার শোনো,,,বাবা তোমাকে………
আবরার মাঝপথে কথা কেড়ে নিয়ে বলল,
— আমি কিছু শুনতে চাইছিনা তনয়া।বেহায়াপনার একটা লিমিট থাকে। নিজেকে আর নিচে নামাতে না চাইলে প্লিজ আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।আমাকে বাড়ি পৌঁছাতে হবে।
এটুকু বলে লাইন কাটলো আবরার। হতাশ দৃষ্টিতে স্ক্রিনে চোখ বোলালো তনয়া,না এভাবে হবেনা।আবরারকে এভাবে আটকানো যাবেনা।
তাকে অন্য কিছু করতে হবে।
,,
,,
,,
উদ্ভ্রান্তের মত দৌড়াচ্ছে তনয়া। চারপাশের কোলাহল,,, জনমানব কোনও কিছুরই খেয়াল নেই এখন। শাড়ির সাথে বেধে হোচট খেয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝে,,কিন্তু এখন যে থামলে চলবেনা,সব কিছুর আগে আবরার কে বাঁচাতে হবে।
,
,
,
মকবুল চ্যাপ্টা পিলারের আড়ালে লুকিয়ে আছে,,,যেখান থেকে উঁকি দিলেই সদর দরজাটা স্পষ্ট চোখে পরছে,,,বুক ধুকপুক করছে মকবুলের,,,প্রথম বার কাউকে মারতে যাওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। হাতের মুঠোতে তার মোটা দড়ির এক প্রান্ত । কোনও রকম চাপানো দরজা ঠেললেই নিজের কাজ করতে বাধা না পরার অভিনব পদ্ধতি এটা।
কয়েক মিনিটের মাথায় কারো হেটে আসার শব্দ পেলো মকবুল।ঘাড় বাকা করে উঁকি দিলো।দরজার নিচে ছায়ার মত কিছু একটা দেখতেই বুঝতে পারলো আবরার আসছে।
অবয়বটি দরজা ঠেলে ভেতরে পা বাড়ানো মাত্রই মকবুল হাতে থাকা মোটা দড়িটায় শরীরের সব টুকু বল প্রয়োগ করে টান মারলো ,,,,,প্রায় সাথে সাথেই ওপরে ঝুলে থাকা রাজকীয় বিশালাকার ঝাড়বাতিটা ধুপ করে মাথার ওপর পরলো তনয়ার। বিকট শব্দে ঝারবাতিটা মেঝেতে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে কাচ গুলো এদিক ওদিক ছিটকে গেলো,
তনয়ার কপালের এক পাশ থেকে চিকন রেখা আকারে গড়িয়ে পরলো লাল তরল।
টলতে টলতে মেঝেতে উপুড় হয়ে পরলো তনয়া।চোখের পাতা আপনা -আপনি বন্ধ হয়ে এলো,,শুধু ধীরে ধীরে সাদা মেঝে লাল রঙে পরিনত হওয়া থামলোনা।
তনয়াকে লক্ষ্য করতেই চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো মকবুলের। তাড়াহুড়ো তে আবরারের জায়গায় তনয়ার উপস্থিতি বুঝতেই পারেনি সে।এখন কি হবে? শুকনো ঢোক গিললো মকবুল।তোফায়েল জানলে তো তাকে জানে মেরে ফেলবে।অন্যদিকে আবরার? সেও কি ছেড়ে দেবে?
নিজেকে বাঁচাতে দ্রুত পায়ে দৌড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো মকবুল।
উৎকট আওয়াজ পেয়ে রুমের দরজা খুলে ঘুমুঘুমু চোখ নিয়ে বেরিয়ে এলো স্নিগ্ধা। দরজার বাইরে পায়ের কাছে কাচের ছোট ছোট টুকরো দেখে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে ধীর পায়ে এগোতে লাগলো সামনের দিকে,,আচমকা মেঝেতে রক্তে মাখামাখি অবস্থায় তনয়াকে দেখতেই শরীর হিম হয়ে এলো,,
গগন বিদারি এক চিৎকার দিয়ে বসে পরলো মেঝেতে,,ভীত চেহারা মুহুর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে এলো,,চোখের দৃষ্টি অন্ধকারে চারদিক মোড় নিয়ে
নিজেও অচেতন হয়ে পরে রইলো তনয়ার এক পাশে।।বিস্তর বাড়িটাতে দুজন লোকের জ্ঞান শূন্য দেহ আর এলোমেলো কাচের টুকরো ব্যাতীত কিছুই পরে রইলোনা তখন।
চলবে
তনয়া প্রেমিদের কেমন অনুভূত হচ্ছে এখন🤔