অসম্ভবেও আমার তুমি নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–২৯

0
353

#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–২৯

আবরারের কথা অনুযায়ী স্নিগ্ধার মুখচোখ আকাশ চুম্বি গোল গোল আকার ধারন করলো। উদ্বেগ নিয়ে বলল,

— মোবাইল ফোন??

আবরার সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই জবাব দেয়,

— হুম।

— কিন্তু আমি মোবাইল দিয়ে কি করবো? মেঘ আমাকে কেন দিলো এটা?

— জানিনা। কোনও কারন তো নিশ্চয়ই আছে তাইনা?
গম্ভীর গলায় কথাটা বলে স্নিগ্ধার দিকে তাকায় আবরার। স্নিগ্ধা বোকা চাহনীতে চেয়ে বলে,

— অদ্ভূত।আমিতো কোনও কারন দেখছিনা।
আপনি কি কারন পেলেন একটু বলুন না…!

আবরার বাকা হাসলো।স্নিগ্ধার সরলতায় ।মেয়েটা এতোটাই সরল যে কোনও কিছুই তলিয়ে ভাবেনা।

সেদিন রাতে ল্যান্ড ফোনে কল আসা নম্বর চেক করেছে আবরার,,, নাম মোতাবেক মৃনাল মাহবুব লেখা ছিলো। সেহেতু মৃনালের নম্বরই ছিলো সেটা।

মৃনাল অত রাতে কল করেছে কাকে চাইতে সেটা না বোঝার মত বোকা সে নয়। কিন্তু এ নিয়ে কোনও বাড়াবাড়ি করতে চাইছেনা আবরার। দেখা যাক না কোথাকার জল কতদূর ছড়ায়।

আবরারের ভাবনার মাঝেই খট করে একটা আওয়াজ হলো।জিজ্ঞাসু মুখ নিয়ে সেদিকে তাকালো আবরার। স্নিগ্ধা গাড়ির এটাচ ডেস্ক খুলে তার মধ্যে হাতে থাকা ফোন টা রেখে দিলো। এরপর আগের মতই আটকে দিলো সেটা। বিষয় টা দেখতেই অবাক হওয়ার পাশাপাশি কৌতুহল জেঁকে ধরলো আবরার কে।ভ্রু কুঁচকে স্নিগ্ধার দিকে চেয়ে বলল,

— এখানে রাখলে যে..??

স্নিগ্ধা সোজা হয়ে বসলো।রীতিমতো সিটের সাথে মাথা এলিয়ে। উদ্বেগ হীন গলায় বলে উঠলো,

— রেখে দিলাম,তার দুটো কারন…
এক-এটার কোনও প্রয়োজন আমার নেই

আর দুই- কাল এটা মেঘ কে ফিরিয়ে দেবো৷

বিস্ময় গাঢ় হয়ে এলো আবরারের। তাৎক্ষণিক ব্রেক কষলো গাড়িতে। আকষ্মিক ব্যাপারটায় সামনের দিকে ঝুঁকে পরলো স্নিগ্ধা। নিজেকে সামলে আবরারের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

— কি হলো ? গাড়ি থামালেন যে .?

স্নিগ্ধার কথার জবাব দিলোনা আবরার। সন্দেহীভাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ওর দিকে,

— ফিরিয়ে দেবে? কেন? এরকম একটা দামি হ্যান্ডসেট পেয়েও তুমি ফিরিয়ে দেবে?

স্নিগ্ধা ভাবলেশহীন জবাব দিলো,,

— হ্যা।তা নয় তো কি? যেটা আমার দরকারই নেই সেটা আমি কেন নিতে যাবো? দেখুন! আমার ছোট্ট পৃথিবীর মধ্যে বাবা, মা, নিতু আর আপনি,, এদের সাথে তো আমার রোজই কথা হয়,,,বাবা মায়ের সাথে ইচ্ছে হলেই তো দেখা করতে পারছি আপনার নম্বর থেকে কল করতে পারছি তাহলে এটার কি দরকার বলুন তো? তার থেকে মেঘ কে এটা আমি ফিরিয়ে দিলে ও ব্যাবহার করবে। শুধু শুধু এত দামি জিনিসটা ফেলে রেখে নষ্ট করবো কেন বলুন!

স্নিগ্ধার এক দমে আওড়ানো উত্তরে আবরার আবারো অবাক হবে নাকি খুশি হবে বুঝে উঠতে পারলোনা। শুধু পলক হীন চোখ গুলো স্থির করে রাখলো স্নিগ্ধার মুখের ওপর।

মেয়েটার মধ্যে সামান্য তম লালস ভাব নেই।যেদিন তার দেয়া হীরের আংটি টা ফিরিয়ে দিয়েছিলো স্নিগ্ধা, সেদিনের মত আজ আরো একবার প্রমান পেলো সে।

এই গুন গুলোর জন্যেই হয়তো পরিকে প্রথম দেখেই মনে হয়েছিলো,ও অন্যরকম! হ্যা অন্য রকমই তো…পুরোটাই অন্যরকম আমার বউটা…

আবরার কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্নিগ্ধা দুই ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

— কি দেখছেন…??

জবাবে আবরার ঠোঁট প্রসারিত করে চোখ ইশারা করে শীতল গলায় বলল,

— তোমাকে….

সোজাসাপটা উত্তরের ব্যাপারটায় প্রথম দফায় লজ্জ্বা পেলো স্নিগ্ধা। পরমুহূর্তে আবরারের দিকে তাকিয়ে চোখ সরু করে বলল

— আপনি কি আমাকে নতুন দেখছেন নাকি??

আবরার তাকিয়ে থেকেই জবাব দেয়

—উহু। নতুন নতুন রুপ দেখছি তোমার…

স্নিগ্ধা বুঝতে না পেরে বোকা চাহনী দিয়ে তাকিয়ে রইলো।
আবরার মুচকি হাসলো,,,গাড়ির স্টিয়ারিং -এ এক হাত রেখেই স্নিগ্ধার দিকে নিজেকে এগিয়ে আনলো খানিকটা।
আবরার কে এগিয়ে আসতে দেখে বরাবরের মতই স্নিগ্ধার হৃদযন্ত্র টা একটু বেশিই সচল হয়ে ওঠে,,

আবরার নিজের ঠোঁট এগিয়ে এনে স্নিগ্ধার কানের কাছে দুবার আলতো করে চুমু খেলো।ঠান্ডা স্রোত বইলো স্নিগ্ধার আপাদমস্তক পুরো শরীরে। কাপা চোখের পাতা তুলে তাকালো আবরারের দিকে।আবরার মুগ্ধতায় ছেয়ে আসা আখিজোড়া দিয়ে চেয়ে বলল,

—বড় বেশি ভালোবাসি পরি !!

স্নিগ্ধা লাজুক হেসে মাথা নামিয়ে নেয়।আবরার উদ্বিগ্ন হয়ে বলে ওঠে,

— এই একদম এভাবে হাসবেনা।

স্নিগ্ধা মাথা তুললো,,

— কেন?

আবরার মুখটা সিরিয়াস করে বলল,

— তোমার এমন লজ্বায় মাখোমাখো মুখটা দেখলে আমার যে আরো অনেক ভালোবাসতে মন চায়। তাই…!

কথাটায় স্নিগ্ধা খানিকক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। মুখ হা করে। আবরার সরু চোখে তাকাতেই ফিক করে হেসে ফেলে স্নিগ্ধা। ভ্রু নাঁচিয়ে নাঁচিয়ে বলে,

— আমারও অনেক কিছু ইচ্ছে করে। জানেন?

কথাটায় আবরার অবাক হয়ে বলল,

— লাইক সিরিয়াসলি? তা কি কি মন চায় তোমার বলোনা…!

আবরার বেশ আগ্রহ নিয়ে আরেকটু ঘুরে বসলো স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা দুষ্টু হেসে বলল,

— বললেই কি আপনি রাজি হবেন??

— কেন নয়? ইউ ক্যান ডু এনিথিং!

উত্তর পেয়েই স্নিগ্ধা হাত বাড়িয়ে বাচ্চাদের মত আবরারের গাল টেনে দিলো। পরমুহূর্তে সোজা হয়ে বসে বলল

— হয়ে গেছে…!

আবরার কপাল কুঁচকে হতভম্ব হয়ে তাকায়। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে স্নিগ্ধা ঠোঁট টিপে হেসে বলে,

— আপনার গাল টানার ভীষণ ইচ্ছে ছিলো জানেন। আপনি কত্ত ভালো আবরার,আমার ইচ্ছেটা পূরন করে দিলেন।

আবরার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওঠে। কি ভাবলো আর কি করলো এই মেয়ে! বিষয় টা যে স্নিগ্ধা মজা করলো সেটা বুঝে উঠতে দেরি হয়না আবরারের। শুধু চোখ ছোট করে খানিকক্ষণ স্নিগ্ধার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে সামনের দিকে চোখ সরিয়ে নেয় । দাঁত চিবিয়ে বলে,,

— তোমাকে যতটা বোকা ভাবি ততটা তুমি নও।বেশ চালাক তুমি।

এ পর্যায়ে মুখের হাসিটা মিইয়ে আসে স্নিগ্ধার।ঠোঁট উল্টে বলে ওঠে,

— আপনি কি রাগ করলেন? আমিতো মজা করছিলাম,,

জবাবে আবরার গম্ভীরমুখে তাকালো।স্নিগ্ধার মুখটা আরো কালো হয়ে আসে তাতে। পরমুহূর্তে আবরার ঠোঁট এলিয়ে হেসে ওঠে। বাকা হেসে বলে,

— ভেবোনা এমনি এমনি ছাড় দিচ্ছি। এই মজার মজা,,,বাড়ি গিয়ে পুষিয়ে দেবো পরি..!

কথাটার মানে বুঝতে পেরে স্নিগ্ধা বিস্ময়কর চাহনীতে তাকায়। পরমুহূর্তেই নাক মুখ কুঁচকে বলল,
— আপনিও না।যা তা একটা!

____________________________________________

ফোন দিয়েছি তো কি? মানুষ মানুষকে ফোন উপহার দিতে পারেনা? আমিও সেটাই করেছি ।তাই বলে তোর ফিরিয়ে দিতে হবে??

মেঘের এমন ঝাঁঝালো স্বরে মুখটা কালো করে নিলো স্নিগ্ধা।ক্ষীন আওয়াজে বলে ওঠে,,

— আসলে আমি…

মেঘ মাঝপথে কথা কেড়ে নিয়ে বলল,

— আমি আমি ছাড়। তোকে একটা জিনিস গিফট করলাম।কাল তো খুব সুন্দর করে নিয়ে নিলি।আজ হঠাৎ এমন কি হলো যে ফিরিয়ে দিতে হবে তোকে? ফোনই তো ছিলো,, বম তো আর দেইনি যে উড়ে যেতিস তাইনা?

স্নিগ্ধা এবার উদ্বেগ নিয়ে বলে,

— তুই এরকম কেন করছিস? আমিতো বললাম এটার কোনো দরকার আমার নেই। আমি ফোন টোন ইউজ করতে পছন্দ করিনা। যদি এমন হতো যে আমার ফোনের খুব দরকার ছিলো অবশ্যই এতোদিনে আমি ফোন কিনে নিতাম।কিন্তু তা নয়। আচ্ছা এটা যদি নিয়েও নিতাম আমি,কি হতো? ইউজ করতাম কি? ফেলে রাখতাম কোথাও,,, তোর এত গুলো টাকা শুধু শুধু নষ্ট হতো।তাই জন্যেই না ফিরিয়ে দিতে এলাম।

মেঘের মেজাজ ভীষণ রকম খারাপ হয়ে আছে।স্নিগ্ধা যত যাই বোঝাক মাথায় কোনও কিছুই ঢুকছেনা তার। তার ভাই কত কৌশল অবলম্বন করে এই হ্যান্ডসেট টা স্নিগ্ধার কাছে পাঠানোর বন্দবস্ত করলো তাকে দিয়ে।সফল ও হলো।আর আজ মেয়েটা সেটা ফিরিয়ে দিতে এলো? এখন যদি মৃনাল ভাইয়া জানতে পারে? ওতো ভীষণ কষ্ট পাবে।কত কি ভেবে ও এই ফোন টা স্নিগ্ধার জন্যে নিলো। সেসবে তো জল ঢেলে দিলো এই মেয়ে!

মেঘ কে নিশ্চুপ দেখে স্নিগ্ধা ওর কাধে হাত ঠেকায় নিজের। কিছু বলতে ধরলে মেঘ স্নিগ্ধার হাত টা সরিয়ে দিলো।অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,

— কোনও আদিক্ষেতা দেখানোর দরকার নেই। শুধুমাত্র মুখেই আমাকে বন্ধু ভাবিস তুই। বুঝে গিয়েছি আমি।

— উফ! তুই কেন বাচ্চাদের মত কথা বলছিস মেঘ? তোকে তো বোঝালাম আমি।তারপরেও তুই…

— হ্যা তারপরেও আমি বলছি এসব, কারন টা যদি তুই বুঝতিস তাহলে আর বলতি না এসব।

মেঘের কথার মানেটা ঠিক বুঝলোনা স্নিগ্ধা। জিজ্ঞাসু মুখ চোখ নিয়ে চেয়ে রইলো। মেঘ পুনরায় হা করে কিছু বলতে ধরতে নিলেই সামনের দিক থেকে মৃনাল কে এগিয়ে আসতে দেখে দমে যায়। মৃনাল এগিয়ে এসে সামনে দাড়ায় ওদের।

— কি হয়েছে??

আওয়াজ পেয়ে স্নিগ্ধা ঘাড় কাত করে চোখ তুলে তাকায় মৃনালের দিকে।মৃনাল একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,

— তোরা কি ঝগড়া করছিস? দূর থেকে দেখে মন হলো।

এ পর্যায়ে স্নিগ্ধা চুপ করে থাকলেও মেঘ অধৈর্য হয়ে বলল,

— দ্যাখ না ভাইয়া।কাল ওকে আমি একটা হ্যান্ডসেট গিফট করলাম আর আজ ও সেটা আমাকে ফিরিয়ে দিতে চাইছে… বলছে ওর নাকি প্রয়োজন নেই। তুই-ই বল এটার কোনো মানে আছে?

কথাটা মৃনালের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল মেঘ। মেঘের দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে মৃনাল ধড়ফড় করে তাকালো স্নিগ্ধার দিকে।উদ্বেগ নিয়ে বলল,

— তুমি এটা কেন ফিরিয়ে দিচ্ছো স্নিগ্ধা?

জবাবে স্নিগ্ধা মুখটা গম্ভীর করে বলল,

— উত্তর তো আপনাকে মেঘ দিয়েই দিলো। আমার এটার প্রয়োজন নেই।

এটুকু বলে হ্যান্ডসেটের সাদা বাক্সটা বেঞ্চীর ওপর রাখলো স্নিগ্ধা। মেঘের দিকে চোখ না রেখেই বলল,

— আমি এখন আসছি।

স্নিগ্ধা উঠে হাটা ধরতে নিলো। পা বাড়ানোর আগেই পেছন থেকে ওর হাতটা টেনে ধরলো মৃনাল। স্নিগ্ধা পিছু ফিরে তাকালো। মৃনাল কে হাত ধরে থাকতে দেখে অবাক হয়ে এলো। কপাল কুঁচকে বলল,

— হাত ধরেছেন কেন?

মৃনাল হাতটা ছেড়ে দেয়। ঝুঁকে গিয়ে বাক্সটা হাতে উঠিয়ে নিয়ে স্নিগ্ধার সামনে এসে দাড়ায়। ঠোঁটে ক্ষীন হাসি টেনে বলে,

— এটা তোমার জন্যে মেঘ নয়।আমি কিনেছিলাম!

এমন কথায় স্নিগ্ধার সাথে সাথে মেঘ নিজেও বিস্মিত হয়ে আসে। তার ভাই যে এত তাড়াতাড়ি মনের কথা বলতে শুরু করবে সেটা তার ভাবনাতেই ছিলোনা।

স্নিগ্ধা চোখ সরু করে বলল,

— আপনি আমার জন্যে এটা কিনেছেন? ঠিক বুঝলাম না।

মেঘ বসা থেকে উঠে দাড়ালো।স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— আসলে স্নিগ্ধা হয়েছে কি…

মৃনাল হাত উঁচু করে থামিয়ে দিলো মেঘ কে। স্নিগ্ধার দিকে চোখ রেখেই বলল,

— আমি বলছি মেঘ…

ভাইবোনের আচরনের মানে বোধগম্য হচ্ছেনা স্নিগ্ধার৷ জিজ্ঞাসু মুখে একবার মৃনাল কে দেখছে তো আবার মেঘকে।মৃনাল নিচের দিকে তাকিয়ে লম্বা করে একটা শ্বাস টানলো। স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আলোড়িত ধ্বনি নিয়ে বলল,

— স্নিগ্ধা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি তোমাকে নিজের করে…

স্নিগ্ধা মাঝপথে চট করে বলে ওঠে,

— আমি বিবাহিত।

কথা ওখানেই আটকে যায় মৃনালের। বিস্ময় নিয়ে একভাবে তাকিয়ে স্নিগ্ধার দিকে। মেঘ এর গলা থেকেও আওয়াজ আসেনা আর।
স্নিগ্ধা পুনরায় মৃদূ আওয়াজে বলে,

— আমি বিবাহিত।আমার স্বামীর নাম আবরার ফাহাদ চৌধুরী। গত নয় মাস আগেই বিয়ে করেছি আমরা। আর আমি আমার বর কে খুব ভালো ও বাসি.?? আপনার আর কিছু বলার আছে??

__________________________________________

কি ব্যাপার আমিনুল? সকাল থেকেই দেখছি তুমি লা পাত্তা….

তোফায়লের কথায় আমিনুল জবাব দিলোনা।উল্টে চিন্তিত ভঙিমায় জ্বিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। তোফায়েল ভ্রু কুঁচকে বলল,

— কিছু হয়েছে আমিনুল??

পেছন থেকে ততক্ষনে বাবার পাশে এসে দাড়ালো তনয়া। আমিনুলের মুখ চোখ খেয়াল করতেই নিজেও কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,

— কিছু হয়েছে অফিসার??

আমিনুল এবার তনয়ার দিকে তাকায়। চোখের চাহনী বেশ নিষ্প্রান তার। গলায় উদ্বিগ্ন তা নিয়ে বলে উঠলো,,

— একটা খারাপ খবর আছে স্যার…!!

তোফায়েল প্রথমে গায়ে মাখলোনা। বিদ্রুপ করে বলল,

— আর খারাপ খবর। যেদিন জেলে ঢুকলাম সেদিন থেকেই খারাপের মধ্যে আছি। আর কত খারাপ হবে?

আমিনুল আহত চোখে তাকিয়ে বলল,

— এটা একটু বেশিই খারাপ স্যার। তনয়া ম্যাডামের জন্যেতো বটেই

তোফায়েল তনয়া কেউই বুঝলোনা। তনয়া বেশ উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,

— একটু পরিষ্কার করে বলুন অফিসার।আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা।কি হয়েছে?

আমিনুল একটা ফাকা ঢোক গিললো। তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

— আপনার বেল আবার না মঞ্জুর হয়েছে ম্যাডাম!

কথাটা শুনতেই মাথায় বাজ পরার মত অনুভূত হলো তনয়ার। তোফায়েল হা করে তাকিয়ে রইলো। পরমুহূর্তেই উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,

— কি বলছো টাকি? এইতো সেদিন বললে বেল মঞ্জুর করেছে…

— বলেতো ছিলাম স্যার।আমাকে যা বলেছিলো আপনার উকিল খোরশেদ আলম সেটাই জানিয়েছি আমি।কিন্তু আজ!

তনয়া অধৈর্য হয়ে বলল

— আজ কি বলুন? বলুন আজ কি.

আমিনুল মুখ গোমড়া করে বলল,

— আপনার মেন্টাল উইকনেসের জন্যে যে সার্টিফিকেট বানিয়েছিলাম,, সেটা ভূয়া প্রমানিত হয়েছে। আর তাই আপনার বেল হচ্ছেনা।উল্টে আপনাদের কোর্টে তুলতে আদেশ দিয়েছে আদালত।

বিস্ময়ে মাথায় চক্কর কাটলো তনয়ার। তোফায়েল ক্রুদ্ধ গলায় বলল,

— ফাজলামো করছো? খোরশেদ কি করলো টা কি? এতগুলো টাকা নিয়ে কাজের কাজ কিছুই হলোনা? উল্টে, উল্টে এখন কোর্টে উঠতে হবে আমাদের? কি করে সম্ভব এসব..??

আমিনুল বেশ উদ্বেগ নিয়ে বলল,

— আবরার ফাহাদ চৌধুরীর জন্যে সব সম্ভব স্যার। পাকা খেলোয়াড় উনি।আপনার থেকেও দ্বিগুন টাকা দিয়ে আপনাদের উকিল কে কিনে নিয়েছে।আর আমাদের সব জালিয়াতি ধরিয়ে দিয়েছে কোর্টে।

— কি বলছেন কি? আবরার এসব করেছে?

তনয়ার ধৈর্য হীন প্রশ্নে আমিনুল মাথা নাড়লো।যার অর্থ হ্যা।পরমুহূর্তেই ধীর গলায় বলল,

— আবরার চৌধুরী আমাদের সবার ওপর নজর রাখছিলো ম্যাডাম।তাই হয়তো পাল্টা চালে মাত দিয়ে দিলো! আম ও গেলো সাথে আমের ছোলাটাও।আপনাদের আর জেল থেকে বের হওয়া হচ্ছেনা।

কথাটা শুনতেই তনয়া দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বসে পরে চকির ওপর। তোফায়েল একবার মেয়ের দিকে চোখ বুলিয়ে আমিনুলের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে,,

— জেল থেকে বের হওয়া হবেনা মানে? তুমি থাকতে আমরা এখানে পঁচে মরবো? আর তুমি বাইরের হাওয়া বাতাস খাবে??

উত্তরে আমিনুল হতাশ গলায় বলল,

— সেটাই বোধ হয় করতে হবে স্যার।বাইরের হাওয়া খেতে হবে।আপনাদের জন্যে আমার আর কোনও কিছুই করা হবেনা।

তোফায়েল বিগড়ানো মেজাজে নাক মুখ কুঁচকে বলল,

— মানে?

আমিনুল ছোট্ট একটা দম ফেলে মুখ ছোট করে বলল,

— আমাকে চাকরি থেকে ডিসমিস করা হয়েছে স্যার ! আপনাদের সাহায্য করার অপরাধে।

— কি বলছো কি?

তোফায়েলের উত্তেজিত আওয়াজে আমিনুল মাথা হ্যা বোধক নাড়লো। বলল,

—হ্যা স্যার। সব ধরা পরে গেছে। মকবুল কে টাকা দিইইয়ে যা যা শিখিয়ে দিলাম। ব্যাটা এবারো বেঈমানি করলো। আর আপনারাও তো আমাকে বলেন নি যে মকবুলের জবান বন্দীর ভিডিও ক্লিপ আবরারের কাছে আছে। এটা জানলে আমি কখনওই এমন কাজ করতাম না। নিজের চাকরীতো খোয়ালাম এখন আমি কি করবো স্যার?

তোফায়েল খানিকক্ষণ ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবলো। পরক্ষনে শিকের মধ্যে থেকে এক হাত বের করে আমিনুলের কাধে ঠেকালো।শান্ত্বনা দিয়ে বলল,

— ভেঙে পরোনা আমিনুল। কিছু একটা হবে।আসলে আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে ব্যাপারটা জানাইনি।ভেবেছিলাম তুমি এটা জানলেই হাত পা ছেড়ে দেবে,,,ভয় পাবে। আমাদের জন্যে আর কোনও উদ্যোগ নেবেনা।কিন্তু এতেও শেষ রক্ষে আর হলোনা। ওই আবরার ঠিক ফাসিয়ে দিলো।আমাদের তো আগেই ফাসিয়েছে এবার তোমাকেও।

আমিনুলের তোফায়েলের প্রতি ভীষণ রাগ হয়। রাগে চিবিয়ে খেয়ে নিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু এই মুহুর্তে সেসব প্রকাশ করেনা সে। কোনও কিছু না বলে উল্টো ঘুরে হাটা ধরে। একটু পরেই গায়ের ইউনিফর্ম তাকে জমা করতে হবে। শেষ মেষ এই তোফায়েলের জন্যে তার এত সাধের চাকরী বলি হলো! যদি ক্ষমতা থাকতো এক্ষুনি বুড়ো টাকে ফাসিতে ঝুলিয়ে দিতো সে।

চলবে।

গত পর্ব পড়েই আমার গল্পের তুলনা স্টার জলসার সিরিয়ালের সাথে করা হয়েছে। আচ্ছা আমি যতই তৃতীয় ব্যাক্তিকে ওদের মধ্যে নিয়ে আসি,,,আদৌ কি ওদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে? হয়নি! এটা আপনারা ভাবতে পারলেন না?? একটা পর্ব পড়েই সমাপ্তি পর্ব অব্দি ভেবে ফেলেন।আপনারা এরকম কেন? যে লিখছে তার প্লট সাজাতে এ নিয়ে কত সমস্যা হয় সেটা একটু ভাবুন। কেউ বলবেন আপু রোমান্টিকতা দিন শুধু,, কেউ বলবে বাস্তবতা নেই গল্পে,,কেউ বলবে স্বামী স্ত্রীর হক আদায় করেনি কেন? লুতুপুতু প্রেম কাহীনি,কেউ বলবে এত দুঃখ আর ভালো লাগেনা,কেউ বলবে এত কাল্পনিক কেন গল্প,কেউ বলবে গল্প গল্পই হয় বাস্তব নাহ । এরকম করলে রাইটার কই যাবে ভাই🥴 মন্তব্য করবেন ভালো কথা। কিন্তু দয়া করে কোনও কিছুর সাথে তুলনা করবেন না😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here