অসম্ভবেও আমার তুমি নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–২০

0
84

#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–২০

“”” তুমি সুখ যদি নাহি পাও…
যাও সুখের-ও সন্ধানে যাও………

“”””””আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়ও মাঝে,
আরো কিছু নাহি চাই…গো…….
“””””””””আমারও পরানও যাহা চায়,,

লাইন কয়েক শেষ করে থামলো স্নিগ্ধা।শূন্যতা চারপাশ ঘিরে রেখেছে।বড্ড ফাকা লাগছে সব কিছু। এমন কেন হচ্ছে? মাত্র এইটুকুতে!

আবরারের তনয়ার মাথায় হাত বোলানো,,তনয়ার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলা সেই কথা,,

“””” আমি কোথাও যাচ্ছিনা।আপনার পাশেই আছি”””””
কেন এই শব্দ গুলোই কানে বাজছে বারবার?

“”” আমিতো জানি আবরার আমাকে ভালোবাসে।তনয়া আপুকে নয়।তাহলে? তাহলে কেন আমার এত কষ্ট হচ্ছে? কেন ফেটে যাচ্ছে বুকটা? কেন?

— কারন আপনিও যে আমাকে ভালোবাসেন,

কথাটা শুনে চমকে পেছন ফিরলো স্নিগ্ধা। আবরার ঠোঁট বাকা করে হেসে আছে। স্নিগ্ধা,ভ্রু কুঁচকে বলল,

— আপনি কি করে এলেন?

— কেন পায়ে হেটে।

স্নিগ্ধা কৌতুহল নিয়ে বলল,
— কিন্তু সদর দরজাতো বন্ধ ছিলো।খুলে রাখিনিতো!

আবরার ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
— তোমার কি মনে হয়? বন্ধ দরজা দিয়ে কি করে এলাম আমি?

স্নিগ্ধা একিভাবে তাকিয়ে থাকায় আবরার উদ্বেগ হীন হেসে বলল,
— অবিয়েস্লি এক্সট্রা চাবি দিয়ে।

কথাটা বোধগম্য হওয়ার পর স্নিগ্ধা চোখ নামিয়ে নিলো। মৃদূ স্বরে বলল,–
— তনয়া আপু এখন কেমন আছে?

আবরার এগিয়ে এসে সোফার ওপর বসলো,,পায়ের জুতোয় বাধা ফিতে খুলতে খুলতে বলল,
— আগের মতই। ফুল বেড রেস্ট এখন।কাল বাদে পরশু রিলিজ পাবে হয়তো!

— ওহ!

আবরার হাতের কাজ থামিয়ে তাকালো। বলল,
— খেয়েছো?

উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লো স্নিগ্ধা।বলল,
— তনয়া আপু আপনাকে আসতে বাধা দিলোনা?

আবরার স্বাভাবিক গলায় বলল,
— ওকে ইঞ্জেক্ট করা হয়েছিলো।ঘুমোচ্ছিলো সেই ফাকে চলে এলাম।জেগে থাকলে এত সহজে ছাড়া পেতাম না হয়তো! এই ঘটনানাটায় মনে হচ্ছে তনয়ার পাগলামি টা আরো বাড়লো!

স্নিগ্ধা মৃদূ মাথা নেড়ে বলল,
— ওহ!

আবরার উঠে এলো।স্নিগ্ধার সামনে দাঁড়িয়ে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
— মুখটা এত শুকনো কেন লাগছে? কিছু খাওনি?

স্নিগ্ধা ক্ষুন্ন গলায় জবাব দেয়,
— খেয়েছি!

আবরার ভ্রু কুঁচকে বলল,
— মুখ দেখে তো মনে হচ্ছেনা কিছু খেয়েছো!

স্নিগ্ধা প্রসঙ্গ পাল্টাতে ব্যাস্ত হয়ে বলে ওঠে,
— আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন।আমি আপনার খাবার বারছি।

স্নিগ্ধা চলে যেতে নিলে এক হাত টেনে ধরলো আবরার। থমকে দাড়ালো স্নিগ্ধা। জিজ্ঞাসা নিয়ে ঘাড় বাকা করে তাকালো।বলল,

— কিছু বলবেন?

আবরার উত্তর না দিয়ে এক টানে স্নিগ্ধাকে আবারো নিজের সামনে নিয়ে আসে।স্নিগ্ধা হকচকিয়ে তাকিয়ে থাকে।
আবরার স্নিগ্ধার ক্লান্ত মুখটা দুহাতের আজোলে নিয়ে আহ্লাদী গলায় বলে,

— আমার পরিটা খুব কষ্ট পেয়েছে আজ।
তাইনা?

স্নিগ্ধা মুখ কালো করে চোখ নামিয়ে নিয়ে মৃদূ মাথা নাড়লো।যার অর্থ হ্যা”

আবরার বড় চোখ করে বলল,

— খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে?

স্নিগ্ধা ঠোঁট উল্টে বলল– হুম।

স্নিগ্ধার বাচ্চামোতে ঠোঁট টিপে হাসলো আবরার।
পরক্ষনে কোমল গলায় বলল,

— কি করবো বলো? তনয়ার অবস্থা তো দেখলেই,,কেবিনে ঢোকার আগে নার্স মেয়েটা আমাকে বারবার সতর্ক করে দিয়েছে যাতে ওকে উত্তেজিত না করি। আর ও তোমাকে দেখে যা রিয়্যাক্ট করছিলো,, চাইছিলাম না ওর আমাদের জন্যে কোনও ক্ষতি হোক। রাগ হলেও ওকে কিছু বলতেও পারছিলাম নাহ। তাই তোমাকে পাঠিয়ে দিতে হলো।

এটুকু বলে ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো আবরার।

স্নিগ্ধা সামান্য ঠোঁট এলিয়ে বলল,– আমি বুঝতে পেরেছি। তখন কষ্ট পেলেও এখন আমার সব কষ্ট চলে গিয়েছে।

মুচকি হেসে স্নিগ্ধাকে টেনে নিজের চওড়া বুকে নিয়ে এলো আবরার। স্পর্শ পেয়ে স্নিগ্ধাও মিশে গেলো আবরারের সাথে।তবে পরক্ষনেই এক দুষ্টুমি নাড়া দিলো আবরারের মাথায়।স্নিগ্ধার মাথা চট করে উঠিয়ে সন্দেহী ভাবে বলল,

—আচ্ছা? তুমি কেন কষ্ট পেয়েছো? তুমিতো আমাকে ভালোবাসোনা!

স্নিগ্ধা কৌতুক করে বলল– না বাসিনা।তো?

আবরার স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দূরে সরে দাড়ালো। চিন্তিত মুখে বলল,
— তাইতো। আসলে আমিও একটা ব্যাপার ভেবে দেখলাম।

স্নিগ্ধা ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
— তাই? তা কি ভাবলেন?

আবরার মুখটা গম্ভীর করে বলল,
— এটাই, যে আমাকে একটুও ভালোবাসেনা তার কাছে থেকে তো কোনও লাভ নেই তাইনা?
তার থেকে আমাকে যে ভালোবাসে আমি তার কাছে যাই। মানে তনয়ার কাছে,এমনিতেও তো আসার সময় ও আমাকে ছাড়তেই চাইছিলোনা। আমি বরং ওর কাছেই ফিরে যাই আবার।তুমি থাকো।ওকে?

কথাগুলো শেষ করে আবরার স্নিগ্ধার দিকে আড়চোখে তাকালো।স্নিধার ফর্সা মুখ টা কেমন লাল হয়ে এসছে। একটু নাড়া দিলেই ঝরঝর করে বারিধারা বর্ষনের অবস্থাপ্রায়।

আবরার তাতে পাত্তা না দেয়ার ভান করে বলল,

— যাচ্ছি তাহলে? ভালো থেকো!

এটুকু বলে স্নিগ্ধার পাশ কাটিয়ে হাটা ধরলো আবরার। আবরার কে চমকে দিয়ে ওর এক বাহু শক্ত হাতে আকড়ে ধরলো স্নিগ্ধা। পেছনে না তাকিয়েই বাকা হাসলো আবরার।মুহুর্তে মুখে সিরিয়াস ভাব এনে পিছন ঘুরে বলল,

— কিছু বলবে? না মানে তনয়ার কাছে যেতে দেরি হচ্ছে তো!

আবরারের কথাটা বলতে দেরি হলেও স্নিগ্ধার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরতে সময় লাগলোনা।প্রথম দফায় বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টে কেঁদে,এক পর্যায়ে শব্দ করে কেঁদে দিলো। হতভম্ব হয়ে পরলো আবরার,ব্যাস্ত হয়ে বলল,

— এ বাবা! কাঁদছো কেন পরি..??

স্নিগ্ধাকে ধরতে এলে আবরারের হাত টা ঠেলে সরিয়ে দিলো স্নিগ্ধা। কান্না চেপে বড্ড অভিমান নিয়ে বলল,

— আপনি এরকম কেন আবরার??

আবরার অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
— কি রকম.??

স্নিগ্ধার হেঁচকি উঠে গেলো। কোনও মতে ভাঙা গলা নিয়ে বলতে লাগলো,

— আপনি সব সময় আমার সাথে এরকম করেন। বিয়ের প্রথম দিনে আমাকে মারলেন।তারপর ভালোবাসলেন,,, তারপর বললেন আমি আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইলেও জোর করে আটকে রাখবেন আমায়।
তাহলে এখন কেন এরকম করছেন?

আবরার না বোঝার ভান করে বোকা চাহনী দিয়ে বলল,
— যা বাবা! সেতো তখন তুমি আমায় ভুল বুঝছিলে তাই।আমিতো ভেবেছিলাম তোমার ভুল ভাঙলে…

স্নিগ্ধা মাঝপথে কথা কেড়ে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,
— আপনি সব সময় উল্টো পাল্টাই ভাবেন।তখন ভালোবাসতাম না অথচ জোর জবরদস্তি করে আমাকে রেখে দিতে চাইছিলেন।আর এখন….

স্নিগ্ধার কথা শেষ না হতেই আবরার দুই ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
— আর এখন?

স্নিগ্ধা থেমে যায় ।পরমুহূর্তে চোখ মুছে ধরা গলায় বলে,
— কিছুনা।যেখানে যাচ্ছিলেন যান।

আবরার সন্দিহান ভঙিতে বলল,
— সত্যিতো? যাবো?

স্নিগ্ধা কালো মুখ নিয়ে মাথা নেড়ে বলল– হ্যা!

আবরার দুঃখি মুখ করে বলল,

— বেশ! তুমি যখন ভালোবাসোইনা তখন কি আর করার! ওর কাছেই যাই।

পরক্ষনে আবরার কৌতুক মাখানো স্বরে গলা বাড়িয়ে বলে উঠলো,
— তনয়া! আমি আসছি বেইবি….

কথাটায় স্নিগ্ধা আবারো কাঁদোকাঁদো করে নিলো মুখটা।কালো মেঘ দৌড়ে বেরাচ্ছে তার চেহারায়।

আবরার উল্টো ঘুরে হাটা ধরলে দ্রুত হাতে আবারো ওর হাতটা টেনে ধরলো স্নিগ্ধা। বিরক্ত হওয়ার ভান করে আবরার পিছন ফিরে বলল,

— আবার কি হলো পরি? যেতে দাও আমায়!

স্নিগ্ধা কাঁদো মুখ নিয়ে বলল,

— আপনি কোথাও যাবেন না।

আবরার ভ্রু কুঁচকে বলল,
— কেন যাবোনা?

স্নিগ্ধা আবারো শব্দ করে কেঁদে দেয়। আবরার চকিত চোখে চেয়ে বলে,
— এত কাঁদছো কেন? আমিতো কিছুই করিনি!

স্নিগ্ধা কান্না চেপে ছেলে মানুষি গলায় বলল,

— আপনি কেন বোঝেন না..!!

আবরার সরু চোখ করে বলল,
—-কি বুঝিনা আমি?

স্নিগ্ধা নাক টেনে বলল,
— আমি….আমি…

আবরার মাথা নাড়িয়ে বলল,
— হ্যা। তুমি…তুমি..

স্নিগ্ধা বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বলল,
— আপনি কেন বলছেন? আমি বলছিতো!

আবরার তটস্থ হওয়ার ভান করে বলল,

— ওহ আচ্ছা! একটু তাড়াতাড়ি হ্যা, তনয়ার কাছে যেতে হবেতো!

স্নিগ্ধা তেঁতে উঠে বলল,
— আবার!
আবরার একদম এসব বলবেন না।আমার কষ্ট হচ্ছে!

আবরার অবাক হয়ে বলল,
— সেকি! তোমার কেন কষ্ট হবে। হোয়াই? তুমিতো আর আমাকে ভালোবাসোনা…!

— বাসি!

চট করে তাকালো আবরার। ডান ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
— কি?

স্নিগ্ধা চোখ নামিয়ে নিয়ে ছোট্ট একটা হেঁচকি তুললো।পরক্ষনে মৃদূ স্বরে বলল,
— আমি আপনাকে ভালোবাসি আবরার!

আবরার একভাবে তাকিয়ে থেকে অন্যদিকে তাকালো।মুচকি হেসে চোখ নিচের দিকে নামিয়ে পরক্ষনে স্নিগ্ধার দিকে ফিরলো। শীতল গলায় বলল,
— এই একটা কথা বলতে এত সময় নিলে?

স্নিগ্ধার নাক টা লাল হয়ে আছে,,,বাচ্চাদের মত মুখ করে নিলো।আবরার ঠোঁট বিস্তৃত করে হেসে,,, এগিয়ে এসে জড়িয়ে নিলো স্নিগ্ধাকে। স্নিগ্ধা দুহাতে আষ্ঠেপৃষ্ঠে ধরলো আবরারকে। পরমুহূর্তে কৌতুহলে মুখ উঠিয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,

— আপনি কি সত্যিই তনয়া আপুর কাছে যেতে চান?

আবরার স্নিগ্ধার কপালে ছোট্ট একটা চুঁমু দিয়ে বলল,
— বোকা মেয়ে! এই চিনলে আমাকে ?

স্নিগ্ধা উদ্বেগ নিয়ে বলল,

— তবে যে বলছিলেন এতক্ষন ?
আমি যদি আপনাকে ভালোবাসার কথা না বলতাম আপনি তো চলেই যেতেন।

আবরার মুচকি হেসে আস্তে করে বলল,

— মজা করছিলাম।আমি আমার বাচ্চা পরিটাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি? এত সাহস নেই আমার।

কথাটায় স্নিগ্ধা ক্ষিপ্ত হয়ে দুহাত মুষ্টি বদ্ধ করে মৃদূ ঘুষি বসাতে থাকলো আবরারের বুকে।তীব্র আলোড়ির স্বরে কান্না মেখে বলল,

— আর কখনও এরকম বিশ্রি মজা করবেন না আমার সাথে।কখনও নাহ।

এক গাল হেসে স্নিগ্ধার মাথাটা শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরলো আবরার। উদ্ভাসনা তার মুখজুড়ে।পরির মুখে ভালোবাসি শব্দটায় কি আছে? একবার শুনতেই এত আনন্দ এত্ত খুশি চেপে ধরেছে তাকে!

স্নিগ্ধাও শান্ত হয়। খানিকক্ষণ দুজনের সময় টা ওখানেই থমকে আসে। নীরবতা কাটিয়ে স্নিগ্ধা ক্ষীন আওয়াজে বলে ওঠে,
— আমাকে ভালোবাসবেন আবরার??

চমকে চোখ খুললো আবরার,ব্যাস্ত হাতে স্নিগ্ধার মুখ তুললো বুক থেকে। অধীর হয়ে বলল,
— কি বললে?

লজ্জ্বায় তাকাতে পারছেনা স্নিগ্ধা।ঠোঁট জুড়ে মিটিমিটি হাসি। কুন্ঠাবোধে লাজুক হেসে আবারো মুখ লোকালো আবরারের বুকে।

প্রশান্তিতে ছেয়ে এলো আবরারের বুকটা।পরিকে নিজের করে পেতে দুহাতে তুলে নিলো ওকে। আবরারের গলা জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বিছানায় ওকে শুইয়ে দিলো আবরার।

দেরি করলোনা ওর ওপর আধশোয়া হতে। পাশে ফিনকি আলো তুলে থাকা
টেবিল ল্যাম্পটা আবরার হাত বাড়িয়ে নিভিয়ে দিলো।

এখন যে মুহুর্ত টাকে ভালোবাসাময় করে তোলার সময় ! একজন অন্যজন কে পরিপূর্ন করার সময়। সম্পর্ক টাকে পূর্নতা দেয়ার সময়। অন্ধকারই না হয় তার সাক্ষি হোক। সাক্ষি হোক দুজনের ঠিকড়ে পরা ভারী নিঃশ্বাস!

চলবে।

কি মনে হয়? আবরার আর স্নিগ্ধার ভালোবাসার দিন কি শুরু হলো? নাকি নতুন কোনও ঝামেলার জন্যে অপেক্ষা 😑😑

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here