আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_১২ লেখনীতে #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
82

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১২
লেখনীতে #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

অভিক যেতে না যেতেই আনিকা বলল আপনাকে আমি ডেকে পাঠিয়েছিলাম সুজানা।

সুজানা মিনমিন করে বলল

ওই আসলে স্যারের সাথে অনেক মানুষ দেখলাম তো।

আনিকা কাষ্ঠ হাসলো।

এমা এত লজ্জা পেলে চলবে? আমি আপনার বয়সে থাকতে এত উড়া উড়েছি মা বাবাকে জ্বালিয়ে মারতাম। এখন বাচ্চাকাচ্চার মা হয়েছি তাই একটু শান্ত হয়েছি তারপরও আহনাফ ফারদিনকে প্রচুর জ্বালায়। আপনি খুব লাজুক। তবে লাজুক মানুষ আমার ভীষণ ভালো লাগে।

আনিকার পিছু যেতে যেতে হাসলো সুজানা।

ওরা তাহলে আপনার মতো দুষ্টু হয়েছে।

আনিকা একটু আওয়াজ করে হাসলো এবার।

আপনিও বলছেন একথা? ওদের আব্বু সারাক্ষণ আমাকে একথা বলে পঁচায়।

সুজানা তাল মিলিয়ে আরেকটু হাসলো। পথিমধ্যে সালমা বেগমের সাথে দেখা হয়ে গেল। কফির মগ হাতে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন তিনি। সুজানাকে আগাগোড়া একপলক দেখে নিলেন তিনি । সুজানা সালাম দিলে ছোট্ট করে সালামের জবাব দিয়ে বলল

কি ব্যাপার মেয়ে? তুমি এসেছ কিন্তু সোজা উপরে গিয়ে বসে আছ? মুরব্বিদের সাথে দেখা করতে হয় সেটা জানোনা? এসব আদবকায়দা বুঝেছ? আজকে বলছি মাথায় রাখো। শ্বশুরবাড়িতে গেলে তখন শ্বাশুড়ি তোমাকে মা কিছু শেখায়নি বলে কথা শোনাবে। এরকম ভুল আর করোনা যেন। আজকালকার মেয়ে ছেলেদের তো আবার কোনো কিছু শেখাতেও নেই। তাদের ধাতে লাগে।

সুজানা মাথা নত করে মাথা নাড়ালো হালকা।

আনিকা ঠোঁট টিপে হালকা হেসে সুজানার দিকে তাকালো।

তুমি হাসছ কেন বউ?

আনিকা জিভে কামড় দিল।

না ছোটমা আমি ওকে এমনিতেও রান্নাঘরে তোমাদের সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাচ্ছিলাম।

সালমা বেগম এবার সুজানার দিকে তাকালেন।

দেখেছ? ওকে শিখিয়েছি তাই মনে রেখেছে। তোমাকে যেন দ্বিতীয়বার আর বলতে না হয়।

কাঠকাঠ গলায় কথা বলে উনি চলে গেলেন। উনি যেতেই আনিকা বলল

কিছু মনে করবেন না সুজানা। ছোটমা এমন কিন্তু খুব ভালো মনের মানুষ।

না আমি কিছু মনে করিনি। স্পষ্টবাদী মানুষ আমার ভালো লাগে।

আনিকা মৃদু হাসলো। বলল

আমার দাদীশ্বাশুড়ির সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ডেকেছি।

আচ্ছা। অনা আর আবিদ কোথায়?

ওদেরকে অভি নিয়ে গেছে সাজিয়ে পড়িয়ে দেয়ার জন্য।

ওহ আচ্ছা।

দুজনেই কথা বলতে বলতে ড্রয়িংরুমে চলে এল। বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠর পাশে অনেকে বসে আছেন। উনার গায়ে সাদা আর হালকা আকাশী রঙা শাড়ি। গায়ের রঙ হলুদাভ । ভাঁজ পড়া চামড়ায়ও কেমন লাবণ্যতা। চোখে পাওয়ারী চশমা। মাথার চুল লাল। ডানপাশের ভুরুর শুরুতেই কালো বড় তিল। বৃদ্ধা হয়েও কেমন দীপ্তি উনার চেহারায়। সুজানা দেখতে দেখতে অবাক হলো। এত সুন্দর! নিশ্চয়ই যুবতী থাকতে আরও বেশি সুন্দর ছিলেন।

বৃদ্ধা সবার সাথে টুকটাক খোশগল্পে মত্ত। আনিকা সুজানাকে নিয়ে গেল। বলল

দাদু সুজানাকে এনেছি। ইনি সুজানা। ওদের টিচার।

বৃদ্ধা চাইলেন সুজানার দিকে। সুজানা সালাম দিতেই সালামের উত্তর দিলেন। বললেন

বসো।

আনিকা বলল

দাদু আমাদের অন্য কাজ আছে। উনি পরে বসবেন।

আচ্ছা।

বৃদ্ধা আবারও খোশগল্পে মজে গেলেন। সুজানা বলল

উনি অনেক সুন্দর মাশাল্লাহ।

আনিকা তার কথায় হাসলো। বললো

উনি এই বয়সেও কত আধুনিকা জানেন।

বুঝতে পারছি খানিকটা হলেও।

দুজনেই হাসলো।

সুজানাকে নিয়ে আনিকা আবারও চলে গেল উপরে। সুজানা মনে মনে পণ করলো সে আনিকার ঘর হতে বেরোবে না একদম।

_____________________

ড্রয়িং রুমে মাঝারি সাইজের টেবিলটা সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। তার মাঝ বরাবর দুটো কেক আর জেলি মোমবাতি। দুটো কেকেই লেখা আছে আবিদ ফারদিন আর অনামিকা ফারদিন। কেক কাটার সময় হয়ে আসায় সবাই প্রকান্ড ড্রয়িংরুমে এসে ভীড় জমালো। উনাদের আত্মীয়সরূপ বেড়াতে আসা অল্পবয়সী ছেলেপেলেগুলো গান টান ছেড়ে হুলস্থুল অবস্থা। সালমা বেগমের চেঁচামেচিতে কিছুক্ষণ তা থামলেও ছেলেগুলো আবারও গান ছেড়ে দিল। আনজুমা বেগম বললেন থাক ছোট কিছু বলিস না। বাচ্চারা আনন্দ করছে। আনিকা আহনাফের সাথে কি বিষয়ে ভারী গম্ভীর হয়ে কথা বলছে। সুজানা একদম এককোণায় গিয়ে দাঁড়ালো। তার কমবয়সী কয়েকটা মেয়ের সাথে ভালোই আলাপ জমেছে। এখন ঠিকঠাক লাগছে কারণ অনেক মানুষের ভীড় হয়েছে। তাকে আপতত দেখা যাবেনা। কেউ জানতে চাইবেনা মেয়েটা কে মেয়েটা কে। এ পর্যন্ত অনেকের মুখে এই প্রশ্ন শুনতে বিরক্তি ধরে গেছে সুজানাকে। আনিকাও উত্তর দিতে দিতে বেহাল।

অনা আর আবিদকে আর একবারও দেখতে পায়নি সুজানা। ওদের যেখানে সাজগোছ চলছিল ওখানে একঝাঁক তরুণ আর যুবকের হাসির আওয়াজ ভেসে আসছিল বিধায় ওদিকে পাও বাড়ায়নি সুজানা। কেকটা কাটা হয়ে গেলে আর একমুহূর্তও থাকবেনা সে এখানে।

হৈহৈ রব উঠলো চারপাশে। তরুণ আর যুবকের দল নেমে এল অনা আর আবিদকে সাথে করে। আবিদ আগেই নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে নাচের তালে তালে। কেক ছুঁতে যেতেই আনিকা তার হাত ধরে ফেলল। পুরোটা আপনার। কিন্তু এখন ধরা যাবেনা।

আম্মুনি ভালু নয়।

আনিকা তাকে কোলে তুলে নিয়ে গালে গাঁঢ় চুম্বন করে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে ভুরু উঁচিয়ে বলল

মিস্টার আমার বাচ্চাদের গিফট কোথায়?

আবিদ মায়ের সাথে সাথে জানতে চাইলো।

কুথায় কুথায়, গিফ কুথায়?

আহনাফ হেসে ঝুঁকে তার কপালে চুমু দিল। বলল

অনেক বড় গিফট আছে মশাই। কিন্তু মাদারের গিফট কোথায়?

আনিকা হেসে আবিদকে জড়িয়ে ধরে মাথায় দুটো চুমু দিয়ে বলল

এগুলোর চাইতে বড় গিফট আর আছে?

আহনাফ হাসলো। বলল

এসব বলে লাভ নেই ম্যাডাম।

আনিকা আবিদকে বুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দুলতে দুলতে বলল

আছে আছে। অনেক বড় গিফট আছে।

অভিকের কোল থেকে অনা ডাক দিল। সবাই তাকালো তার দিকে। গায়ে লাল রঙের শাড়ি মাথায় লম্বা চুল লাগিয়েছে। সুজানা দূর থেকে ওকে দেখে একগাল হাসলো। পাকা বুড়িটাকে কত্ত কিউট লাগছে।

আহনাফ তাকে হাত বাড়িয়ে কোলে নিয়ে বলল

এত লম্বা চুল লাগিয়েছে । এসব কে করেছে।

অভি অভি।

অভিক ঘাড়ে হাত মালিশ করে বলল

বউ সাজিয়েছি।

আহনাফ চুমু খেল মেয়ের গালে। বলল

কার মতো লাগছে। কার মতো মতো।

অনার চুল সুজানের মোতো এত্তো বড়ো।

আহনাফ ফোকলা হাসলো। বলল

ঠিক। কিন্তু কোথায় আপনার টিচার? আনু সুজানা কোথায়?

আনিকা বলল

এমা কোথায় গেল মেয়েটা!

জেলী মোমবাতিতে আগুন লাগাতে লাগাতে অভিক চোখ তুলে ওই দূরে ভীড়ের ফাঁকে কালো পোশাকের মেয়েটার দিকে তাকাতেই মেয়েটা সংকোচে আবারও নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ালো।

_____________________

দুজনেই চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে মোমবাতি নেভাতেই জন্মদিনের শুভেচ্ছান্তে মুখোরিত হলো পুরো ড্রয়িংরুম। হ্যাপী বার্থডে মিউজিক চলছে অন্যদিকে। করতালিতে মুখোরিত হলো চারপাশ। আবিদ মোমবাতি নিভিয়ে একটা আঙুল কেকের একপাশে চট করে ঢুকিয়ে তারপর আঙুলটা গালে পুরলো। হায়হায় করে উঠলো আনিকা আর তরুণ তরুণী গুলো। অভিক হেসে বলল

জুনিয়রের আর তর সইছেনা।

আবিদ বলল

আবিকে কেক এত্তু বড়ো দাও।

অনা বলল

আবি পঁচাআআ। পঁচা ছিলে তুমি।

আবিদ ধমক দিল।

ছোপপপ। তুমার কেক ফেলি দিবো।

অনা চোখ রাঙিয়ে চাইলো। সুজানা ওদের ঝগড়া দেখে হাসলো। কেক কাটার পর্ব শুরু হলো। আগে ওদের খাইয়ে ওদের হাতে সবাই কেক খেল। সালমা বেগম আর আনজুমা বেগমকে টেনে নিয়ে এল অভিক। কেক খাইয়ে দিল জোর করে। সালমা বেগম একটু করে খেয়ে বাকিটুকু ছেলেকে খাইয়ে দিয়ে বললেন..

আমি তোর বাচ্চাকাচ্চা কবে কোলে নেব অভি? আমার কি ছেলের ভবিষ্যৎ দেখে মরতে ইচ্ছে হয় না?

কিসব বাজে কথা মা। দাদুকে দেখে কিছু তো শেখো।

বলেই চলে গেল সে।

সালমা বেগম মৃদু হাসলেন।

অনা আর আবিদ তখনও সবাইকে একে একে কেক খাওয়াচ্ছে। একসময় দুজনেই কানে ফিসফিস করলো। অভিক তার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের সাথে মজামাস্তিতে ব্যস্ত। ওদের দিকে চোখ পড়তেই সে এগিয়ে এল। বলল

দুজন কি ফিসফিস করছেন?

অনা হাত বাড়িয়ে ডাকলো

অভি অভি শুনো।

অভি এসে মাথা নামালো তাদের মুখের কাছে।

সুজানকে আনি দাও। সুজান কই?

অভিক সুজানা যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেদিকে তাকালো। সুজানা সেখানে নেই। গেল কোথায়? আবিদ ততক্ষণে সুজানার আঙুল ধরে টেনে নিয়ে এসেছে। সবার নজর এবার তার উপর পড়লো। যারা চেনেনা তারাও জানতে পারলো যে মেয়েটা ওদের টিচার। আবিদ চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে কেক নিয়ে বলল

সুজান সুজান হেপি বার্থডে বোলো।

সুজানা মিষ্টি করে হেসে বার্থডে উইশ করে আদর করলো দু’জনকে। ছোট ছোট হাতে দুজনেই কেক বাড়িয়ে দিল। সুজানা একটু একটু করে খেয়ে তাদেরও খাইয়ে দিল। আবিদ বাকিটুকু নিজের গালে পুরে দিল। অনা সুজানার হাত থেকে কেক খেতে খেতে বলল অভি অভি সুজানকে কেক খায়ি দাও।

সুজানা কেক খেতে খেতে কেশে উঠলো।
দেখলো অভিক ঠিকই ওদের কথামতো কেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ভুরু উঁচিয়ে খেতে ইশারা করলো। সুজানা খাবেনা বলে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

কিন্তু কেকটা একদম মুখের সামনে নিয়ে আসাতে একটুখানি খেল সে । লজ্জায় তার কেমন কেমন লাগছে।
অভিক বাকি কেকটা নিয়ে যেতে যেতে মুখে পুরলো।

একদম পানসা।

চলবে..
রিচেক করা হবে পাঠক। নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here