আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_২৩ Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
452

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_২৩
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

সবার উদ্বেগ চাহনিতে সুজানা বেশ বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়ে গেল। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সুজানা সবার মুখ দর্শন করে নিল আরও একবার। এখানে কি কিছু হয়েছে?

আবিদ তাকে দেখে ছুটে গেল। আঙুল টেনে ধরে মুখ তুলে তাকিয়ে বলল

সুজান আছকে ছুতি নাই?

সুজানা তার সাথে মৃদু হাসলো। দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো “নাই “।

অনা গিয়ে বলল

সুজান অভির কাচি। অচুখ।

আবিদ গ্লাস দিয়ে পানি খাওয়ার মতো দেখিয়ে বলল

অভি পানি খাচচে, তাপোর কাচি উঠি গেচে । চুখ লাল হয়ি গেচে।

কথাগুলো শুনে সুজানার হাসি পেলে সে চুপ থাকলো। অন্যকিছু ঘটেছে এখানে। সে বেশ বুঝতে পারছে। কাশি উঠলে চোখ লাল হয়, চাহনি দুর্বহ নয়। সুজানা এতগুলো দিনে এটুকু বুঝেছে অভিক ফারদিনের চোখ তার দিকে এলেই মায়ার সাগরে পরিণত হয়। সুজানা সেটাকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে বারবার। ছাত্রী হিসেবে স্নেহের চোখে অবশ্যই দেখতে পারে কিন্তু অমর্ষ চাহনিতে সেই তাকায় যার প্রবল অধিকারবোধ থাকে।

কিন্তু সুজানা কি এমন করেছে? আজকাল তার অনুপস্থিতিতে তাকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় তা বেশ বুঝতে পারছে সে।

আরেহ ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন।

আনিকার কথায় ধ্যান ভাঙলো সুজানার। আবিদের হাত ধরে এগিয়ে যেতেই খুকখুক করে কেশে উঠলো অভিক। সে আবারও থেমে গেল। সালমা বেগম ছেলেকে হাত ধরে টেনে সোফায় বসালেন। পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বললেন

পানিটা খা অভি। কথা শুনিস না আমার।

অনা কপালে হাত দিয়ে বলল

অভি তুমার বিশি অচুখ?

আনিকা বলল

হ্যা, অচুখ। আপনি ম্যাডামকে নিয়ে উপরে যান। অনেক খেলেছেন আজকে।

আচচা। সুজান চোলো চোলো ।

সুজানা তাদের সাথে যাওয়ার সময় আরও একবার তাকালো পিছু। তারপর সোজা হেঁটে চলে গেল।

সুজানা যেতেই মমতাজ বেগম বড়সড় একটা দম ফেলল। সালমা বেগম বললেন

মা আপনি কথা বলার সময় একটু হুশিয়ারে বলবেন। মুখে যা বলে আসে তা বলে দিলে তো হয় না।

বৃদ্ধা পানের মধ্যে সুপারি আর চুন লাগাতে লাগাতে বললেন

হ্যা, আমিই ভুল। তুমি সঠিক বৌমা। ছোট খোকা তোর বউকে বলে দে চোখ কান যেন খোলা রেখে চলে। কিছুদিন বাদে তো ছেলের বউ আসবে। নিজেও শ্বাশুড়ি হতে যাচ্ছে। আমার চাইতেও খারাপ শ্বাশুড়ি যেন নয় হয় তোর বউ।

বলেই তিনি দিয়ে চলে গেলেন ধীরপায়ে হেঁটে।

সালমা বেগম আজীম সাহেবের দিকে তাকালো। বলল

মা কি বলে গেল?

মায়ের বয়স হয়েছে। সব কথা কানে নিতে নেই সালমা।

______________________

সবগুলো পড়া একেবারে শুরু থেকে পড়িয়ে দু’জনকে ছড়া পড়তে দিল সুজানা। ওরা বইয়ে আঙুল টিপে পড়তে পড়তে সুজানার দিকে মুখ তুলে তাকালো। সুজানা বলল

একটা কাজ করতে পারবেন সুজানের জন্য?

তারা উৎসুক হয়ে তাকালো। সুজানা ব্যাগ থেকে অভিকের ট্র্যাকসুইটটার শপিং ব্যাগ বের করে বলল

এটা চাচ্চুকে দিয়ে আসুন।

অভি?

হুম?

সুজান অভির জুন্য কাপুড় আনচে?

হুমম।

আচচা।

আবিদ বলল

না। আমি যাবো।

সুজানা বলল

আচ্ছা আচ্ছা বাপু। দুজনেই নিয়ে যান। এক্ষুণি চলে আসবেন কিন্তু। হ্যা?

ওরা দুজনেই চলে গেল দৌড়ে। কিছু পরেই ফিরে এল ব্যাগটা হাতে নিয়ে। সুজানার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল

অভি বুলচে নিবেনা।

কেন নেবে না? এটা ঠিক করে দিয়েছি তো। বলবেন এটা সুজানা নিয়ে যাবেনা আর।

নাহহ অভি বুলছে সুজানকে যিতে।

আমাকে যেতে?

হুমম।

কপাল হাত দিল সুজানা। ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে বলল

ওকে যাওয়ার সময় দেব।

হাতভর্তি ইমিটিশনের চুড়ি আর নতুন কানের দুল নাকের দুল পরিহিত মর্জিনা ট্রে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। টেবিলের উপর ট্রে রেখে বলল

বাপের বাড়ি থেকে মাত্রই ফিরলাম। এই বাড়ির মানুষ আমারে ছাড়া আন্ধা বুঝলা?

সুজানা হাসলো।

আপনাকে তো আজ সুন্দর লাগছে।

ছোটবাবু ও বলছে আমারে নাকি নতুন মেহমানের মতো লাগতেছে। কিন্তু মেহমান ভেবে কেউ তো আর বসায় বসায় একবেলা খাওয়াবো না। নতুন শাড়িডাও বদলাইতে পারলাম না, কাজ আর কাজ। বাপরে বাপ। নাও তোমার খানা। খাইয়্যা লও।

মর্জিনা যেতেই আবিদ গাল চেপে হেসে বলল

মুজ্জিনা লাল চাড়ি পচছে।

সুজানা ফিক করে হেসে উঠে বলল

আল্লাহ ওটা দাদু।

মুজ্জিনা দাদু।

সুজানা আবারও হেসে উঠে গাল টেনে দিয়ে মগ তুলে চুমুক বসাতেই ব্যাতিক্রমী স্বাদ লাগায় নাকমুখ কুঁচকে নিল। টের পেল তা কফি নয়। এত সুন্দর হয়েছে চায়ের রঙটা তাও বিস্বাদ ঠেকলো সুজানার কাছে। ঠিক ওই চোখের চাহনি যেমন ছিল।

_______________

রান্নাঘরে বাজার ঢোকায় আনিকা আসতে পারলো না। মর্জিনার মাধ্যমে খবর পাঠালো সুজানা যাওয়ার আগে যেন দেখা করে যায়। সুজানা অনা আর আবিদকে পড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিল। কখন আবার দেখা হয় তাদের সাথে। তারা এত আদরের মানে বুঝলো না তবে খুশি হয়ে সুজানাকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। সুজানা তাদের আদর করা শেষে অভিকের ঘরের দিকে উঁকিঝুঁকি দিল। ঘরটা হালকা আলোকিত। জানালার বাইরে বহুদূরে সন্ধ্যার তারাবিহীন খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। রিগ্যাল রকিং চেয়ারটা দুলছে। সুজানা ভেবেছিল হাওয়ায় দুলছে ওটি, খেয়াল করে দেখলো আসনটি একজন দখল করে বসে রয়েছে। বুঝতে বেগ পেতে হলোনা কে হতে পারে। নিশ্চিন্ত মনে প্রশ্ন করলো

ট্র্যাকসুইটটা কি রিডিংরুমে রেখে যাব, স্যার?

দুলতে থাকা রকিং চেয়ারটার স্পীড কমে এল। কিছুপরেই চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালো অভিক। হেঁটে গিয়ে ঘরের বাল্ব জ্বেলে দিয়ে বলল

ভেতরে আসুন।

সুজানা ভেতরে পা রাখলো। অভিক ফোনের চার্জার সরিয়ে, ল্যাপটপ চার্জিংয়ে রেখে বলল

বেডের উপর রাখুন। আপনার পারিশ্রমিক কত?

সুজানা ব্যাগটা বেডের উপর রেখে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়ে বলল

উম ওটার জন্য পারিশ্রমিক লাগবে না।

দাঁড়ান। যাবেন না।

সুজানা সত্যি সত্যি গেল না। দাঁড়িয়ে থাকলো। তবে ধাতে ভীষণ লাগলো তার। আর জীবনেও কোনো কাপড়চোপড় নিয়ে যাবেনা সে। যদিও আজকের পর এই বাড়িতে কখন আসবে সে জানেনা।

অভিক ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলতেই বেডসাইড টেবিল কেঁপে উঠলো ফোনটা বেজে উঠলো। ড্রয়ার থেকে সাদা কাগজে নিয়ে ফোনটার দিকে তাকিয়ে একপলক সুজানার দিকে তাকালো। সুজানা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভিক ফোনটা রিসিভ করে লাউড স্পিকার করে দিল। সাইফ ওয়াহিদের এ সময় কি প্রয়োজন হতে পারে?

দুপাশেই সালাম আদান-প্রদান হলো। সুজানা অন্যদিকে মনোযোগ রেখেছে আচমকা পরিচিত গলার আওয়াজ শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল সে। সাইফ ভাই ফোন করার সময় আর পেল না?

অভিক ফারদিন বলছি। আপনি সাইফ ওয়াহিদ?

জ্বি। আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।

বলুন।

আমাদের টিমের একজন সদস্য আপনার বাচ্চাদের পড়িয়েছে গত একমাস। কাল থেকে অন্য একজন যাবে।

অভিক সুজানার দিকে অত্যাধিক বিস্ময় তাকালো। সুজানা তাকে পিছু করে কাঁচুমাচু করে দাঁড়ালো।

যিনি পড়াতেন উনি কেন আসবেন না আর?

ওহ হ্যা, তার অন্য কোথাও চাকরি হয়েছে। সে টিউশনিটা করতে চায় না তাই। কাল থেকে একটা ছেলে যাবে পড়াতে। আশা করি আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না।

জ্বি। রাখতে পারেন।

কলটা টুট টুট করে কেটে গেল। সুজানা ধীরেধীরে সামনে ফিরলো। চোখ ফ্লোরে রেখে বলল

আমি বলতেই যাচ্ছিলাম আবিদের আম্মুকে। কাল যিনি পড়াতে আসবেন তিনি আমার চাইতেও ভালো পড়ান।

অভিক কোনোরূপ প্রশ্ন করলো না। বলল

নীচে যান। আপুর সাথে যা বলার বলে নিন, আপনার পারিশ্রমিক নীচে গিয়ে হাজির হবে।

সুজানা মাথা নেড়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেল। অভিক দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে ডাকলো

সুজানা! আমার প্রশ্নের উত্তর।

সুজানা শুনলে নিশ্চয়ই ফিরতো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here