#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫০।
ছেলেটার কথা শুনে প্রিয়তা মৌমির কাছে এসে বলল,
‘তুমি এখানে কী করছো? চলো।’
মৌমি অসহায় সুরে বলল,
‘ঐ ছেলেটার কাছে আমার দুলটা রয়ে গেছে।’
ছেলেটা তাদের বাংলা কথা বুঝতে পারছে না। তাই জিজ্ঞেস করল,
‘কী ফিসিরফিসির করছো দু’জন, আমাকেও একটু বলো।’
প্রিয়তা হেসে বলল,
‘শুনতে চান? এদিকে আসুন।’
ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে এগিয়ে আসে। প্রিয়তা তখন আর বিলম্ব না করে প্রকাণ্ড এক চড় মেরে বসে তার গালে। তব্দা খেয়ে যায় ছেলেটা। কানের ভেতর ঝিম করে উঠে। মৌমি নির্বিকার চেয়ে হাসল কেবল। ছেলেটা এবার রেগে গেল দ্বিগুণ। মুখে শিস বাজাল, তার সাথে সাথেই আরো বেশ কয়জন ছেলে এসে হাজির হলো সেখানে। আচমকা এতগুলো ছেলেকে দেখে খানিকটা ঘাবড়ে গেল মৌমি আর প্রিয়তা। চড় খাওয়া ছেলেটা বলল,
‘এই দুই মেয়েকে আজ আমার বিছানাতে চাই, বাকি ব্যবস্থা তোরা করবি।’
তার হুকুম পাওয়া মাত্রই বাকি ছেলেগুলো মৌমি আর প্রিয়তার হাত চেপে ধরল। প্রিয়তা কর্কশ গলায় বলল,
‘হাত ছাড়।’
‘ছাড়ব না।’
একটা ছেলে জবাব দিল। মৌমি চিৎকার দিয়ে ডাকল,
‘ভাইয়াআআআআ।’
একে তো সন্ধ্যার সময়। তারউপর জায়গাটাতে মানুষ নেই কোনো। আর ফারজাদ আর নীহালও হয়তো ঐদিকেই ব্যস্ত। এখন এই ঝামেলা থেকে তারা উদ্ধার হবে কী করে?
মৌমির চোখ মুখ পাংশুবর্ণ ধারণ করেছে ইতিমধ্যেই। ভয় পাচ্ছে খুব। প্রিয়তার অভিজ্ঞতা আছে আগেরবারের। তাও এবার সেও চিন্তিত। ছেলে দুটো এবার জোর করছে তাদের সেখান থেকে সরানোর জন্য। প্রিয়তা নিজেকে শক্ত করে রেখেছে। মৌমি ভীত সুরে বলল,
‘এবার কী করব, আপু?’
বাংলা যেহেতু তারা বোঝে না তাই প্রিয়তা বলল,
‘নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে ছেলেটার হাতে কামড় বসাও, আর দৌড় দাও।’
মৌমি তাই করল। শক্ত এক কামড় বসাল ছেলেটার হাতে। তাতে কাজও হলো। হাতের বাঁধন আলগা হতেই দৌড় লাগাল মৌমি। ছেলেটা তাকে ধরার জন্য পা বাড়াতেই প্রিয়তা তার পা বাড়িয়ে দেয় সামনে, যার দরুন সে মাটিতে পড়ে যায়। মৌমিকে ছুটতে দেখে প্রিয়তাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরে অন্যজন। মৌমি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ফিরে তাকায়। প্রিয়তা ছাড়া পায়নি দেখে সে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
‘তুমি আসবে না, আপু?’
‘তুমি যাও, মৌমি, গিয়ে সবাইকে জানাও সবকিছু।’
মৌমি উপায়ান্তর না পেয়ে সবার কাছে ছুটে গেল।
_______
‘কিরে, এখনো ওদের আনছিস না কেন?’
‘ভাই একটা তো পালিয়েছে।’
‘যেটা আছে সেটাকেই আন তবে।’
ছেলেগুলো একপ্রকার জোর জবরদস্তি করে প্রিয়তাকে টেনে এক নীরব জায়গায় নিয়ে গেল। চারদিক অন্ধকার ততক্ষণে। প্রিয়তা হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। তাকে এমন এক জায়গায় আনা হয়েছে যেখানে সচরাচর কোনো মানুষ আসেই না। কেবল টিম টিম করে একটা ক্ষীণ আলো জ্বলছে দূরে। ছেলেগুলো ধাক্কা দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। ঘাসের উপরে হওয়ায় খুব বেশি ব্যথা পায়নি। সে ক্ষুব্ধ গলায় বলে,
‘মেয়ে বলে দূর্বল ভাবিস না, আমি তোদের খু ন করতে দুবার ভাবব না কিন্তু।’
ছেলেগুলো স্বশব্দে হাসে। প্রিয়তার এসব হুমকি যেন গায়েই লাগল না তাদের। মুহূর্তের মধ্যেই দুজন লোক এসে তার সামনে দাঁড়াল। তার মধ্যে একজন বলল,
‘আব্বু, দুজনের মধ্যে একজনকে আনতে পেরেছে। এবার একে কী করবেন?’
প্রিয়তা লোক দুটির মুখের দিকে তাকায়। ছেলেটাকে চিনে, তার পাশের লোকটা অপরিচিত। সম্বোধনে বোঝা গেল, ছেলেটার বাবা। প্রিয়তা গর্জে উঠে বলল,
‘আপনার ছেলে এত জঘন্য! আপনার তো উচিত ওকে শাসন করা, তা না করে আপনি ওকে সাহায্য করছেন!’
লোকটা হাসল। বলল,
‘আমার ছেলে আমি বুঝব। তুমি আপাতত আজকের রাতটা আমার ছেলেকে আনন্দ দাও।’
প্রিয়তা নাক মুখ কুঁচকে বলল,
‘ছি! এমন কুৎসিত চিন্তাধারার বাবাও হয়?’
ছেলেটা বলল,
‘মেয়েটা কথা বলে খুব। ওকে আমার রুমে দিয়ে আয় তো।’
পাশের ছেলেগুলো তাকে আবার ধরতে এলো। এবার তাদের ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল প্রিয়তা। উঠে দৌড় দিতে গিয়েও পারল না। সেই ছেলেটা এসে ঝাপ্টে ধরল তাকে। পেছন থেকে ধরাতে প্রিয়তা ছুটতে পারছে না। তাও নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে মাথা দিয়ে পেছনে ছেলেটার মুখ বরাবর আঘাত করে বসল। তাতে কাজও হলো। ছেলেটা ছেড়ে দিল। প্রিয়তা ছুট লাগাল দ্রুত। বের হয়ে এল সেই বিধ্বস্ত জায়গা থেকে। তবে থামল না। দৌড়ে গেল পূর্বের জায়গায়। সেখানে গিয়ে থামল সে। ফারজাদকে দেখা গেল কিছুটা সামনে। সে ফোন কানে লাগিয়ে কোমরে হাত দিয়ে এদিক ওদিক দেখছে। অস্থির দেখাচ্ছে তাকে। প্রিয়তা ছুটে যায় তার কাছে। অকস্মাৎ প্রিয়তাকে দেখে আত্মা যেন ফিরে পায় ফারজাদ। প্রিয়তাকে আপাদমস্তক পরখ করে বলে,
‘ঠিক আছেন আপনি?’
প্রিয়তা একবার পেছন ফিরল। দেখল, কেউ নেই। কম্পিত সুরে বলল,
‘ঠিক আছি।’
ফারজাদ সঙ্গে সঙ্গেই নীহালকে কল করে জানাল, প্রিয়তাকে পাওয়া গিয়েছে। তারা একেক জন একেক জায়গায় খুঁজছিল তাকে। ফারজাদ এবার তাকাল ভালো মতো। দেখল, প্রিয়তার কামিজের ডান হাতটা ছেড়া। আঁতকে উঠল সে। জিজ্ঞেস করল,
‘এটা কী করে হলো?’
প্রিয়তা ফারজাদের দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের হাতের দিকে চাইল। বাহুর সবটুকু অংশ দৃশ্যমান। সে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ওড়না দিয়ে ঢাকল সেটা। বলল,
‘ঐ লোকগুলোর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করার সময় এমনটা হয়েছে।’
ফারজাদ চোয়াল শক্ত করল। বলল,
‘কোথায় ওরা? আমাকে নিয়ে চলুন সেখানে।’
‘আপনার কী মনে হয়, ওরা আর সেই জায়গায় থাকবে? পালিয়েছে হয়তো, নয়তো আমার পিছু নিত।’
ফারজাদ তাকে আরো ভালোভাবে পরখ করল। ক্ষীণ সুরে বলল,
‘আপনি সত্যি ঠিক আছেন তো, প্রিয়তা? ওরা আপনার সাথে খারাপ কিছু করেনি তো?’
প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘না, তার আগেই আমি পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।’
ফারজাদ অনুশোচনার সুরে বলল,
‘আমি আপনাকে এখানে এনেও সেইভ করতে পারিনি, আমি দুঃখিত।’
প্রিয়তা কিছু বলার আগেই নীহাল এসে ঝাপ্টে জড়িয়ে ধরল তাকে। অস্থির গলায় বলল,
‘তুই ঠিক আছিস, বোন? ঐ জা নোয়ারগুলা তোর কোনো ক্ষতি করেনি তো? কই ওরা, আমি ওদের সবগুলোকে খু ন করে ফেলব।’
প্রিয়তা ভাইয়ের হাত ধরে বলল,
‘আমার কিছু হয়নি, ভাইয়া। আমি ঠিক আছি। ওরা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।’
মৌমি কাঁদো কাঁদো সুরে বলে উঠে,
‘আজ আমার জন্য তোমাকে বিপদে পড়তে হয়েছে, আমি স্যরি।’
‘ধুর বোকা মেয়ে, বিপদ লেখা থাকলে এমনিতেই হয়। এর জন্য কেউ দায়ী থাকে না।’
দিলরুবা বেগম এগিয়ে এসে প্রিয়তার মাথায় হাত রাখলেন। ক্লেশ নিয়ে বললেন,
‘আজ আমরা এতগুলো মানুষ থেকেও তোমাকে এত বড়ো বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে; আমাদের ক্ষমা করো, মা।’
‘আহা, আপনারা কী শুরু করেছেন? এখানে কারোর দোষ নেই। যেটা হওয়ার ছিল হয়ে গিয়েছে। তবে ঐ লোকগুলোর শাস্তি প্রয়োজন। আমাদের এই রিসোর্টের ম্যানেজারের সাথে কথা বলা উচিত।’
ফারজাদ বলল,
‘হ্যাঁ, আমি পুলিশকে জানিয়েছে, উনারা আর কিছুক্ষণের মাঝেই চলে আসবেন।’
প্রিয়তা অবাক হয়ে বলল,
‘আপনি এরমধ্যে পুলিশকেও জানিয়ে ফেলেছেন।’
‘হ্যাঁ, আপনাকে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম খুব। আজ আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না।’
প্রিয়তা নির্বাক কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল,
‘কিছু হতো না, আপনি তো ছিলেন’ই বরাবরের মতো আমাকে বাঁচানোর জন্য।’
চলবে…..
(ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।)
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/