আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৪৩ #লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
80

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪৩
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

আংটি বদলের পর সবার হাত তালিতে মুখোরিত হলো পুরো রুমটা। সালমা বেগম টেবিল থেকে মিষ্টির প্লেট নিয়ে সুজানাকে খানিকটা খাইয়ে দিয়ে দিল। অভিককে বাকিটা খাইয়ে দিতে দিতে বলল

এবার বড় হতে হবে অভি।

অভিক মাকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল

আমি বড় হইনি?

হয়েছিস। বয়সে। বুদ্ধিতে আন্ডা।

সুজানা শব্দহীন হেসে উঠলো। সাথে বাকিরাও। সবার মিষ্টি খাওয়াখাওয়ি হলো।

সাজিয়া বেগমকে আনিকা টেনে নিয়ে এল। অভিক আর সুজানার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিল। মিষ্টি চামচে তুলে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল

মিষ্টিমুখ করান আন্টি।

সাজিয়া বেগম চামচটা অভিকের মুখে তুলে দিতে দিতে বললেন,

আমার তো আজকে দেয়ার মতো কিছু নেই। কি দেব আমি?

অভিক খেয়ে চামচটা নিয়ে মিষ্টি কেটে উনাকে খাইয়ে দিতে দিতে বললেন

আমি অত ছাড় দেয়ার পাত্র নই। হিসেব মতো সবচাইতে মূল্যবান রত্নটা বুঝে নিয়েছি।

সাজিয়া বেগম মিষ্টিটা চিবিয়ে হাসলেন। বললেন,

ইলিশ মাছটা রেঁধেছি। কাঁটা বেছে খেয়ে যেতে হবে কিন্তু। কাঁটা লাগলে তো আবার সমস্যা।

সমস্যা কি? গলা থেকে কাঁটা না নামা অব্দি থেকে যাব। রাতটা গল্প করে কাটিয়ে দেব। করিমের আবার রাত জাগার অভ্যাস আছে।

তাই? আমার আব্বা করিমউল্লাহ সর্দার রাতে গ্রামের চোর ডাকাত পাহাড়া দিতেন বলে রাত জাগার অভ্যাস ছিল। কিন্তু করিম কাকে পাহাড় দেয়?

করিমও চোর পাহাড়া দেয়।

তাই বুঝি?

হুমম। সবাই কি আর টাকা পয়সা চুরি করে? মানুষও চুরি করা যায় তো।

চুরি কি হলো?

তা আর বলতে? মানুষ তো চুরি হলোই, সাথে তার মন, রাতের ঘুম আর প্রিয় ট্র্যাকস্যুট। চোরটাকে ধরার কারসাজি চলছে অবশ্য।

সুজানা মৃদু হেসে মাথা নামিয়ে নিল। ইশশ ট্র্যাকস্যুটটা এখনো রয়ে গেছে।

সাজিয়া বেগম হাসলেন এবারও। বললেন,

শুরুতেই ভেবেছিলাম করিম ভীষণ ছেলেমানুষ। ছোট মানুষ। পরে দেখলাম সে ছোটমানুষের ছদ্মবেশে এক মাস্টারমশাই। তবে এখন বুঝলাম মাস্টারমশাই ভীষণ ছোট মানুষ না হলেও ভীষণরকম ছেলেমানুষ।

ভীষণরকম ছেলেমানুষটাকে পছন্দ হয়েছে?

সে যদি আমাকে অপছন্দ হওয়ার সুযোগ না দেয় পছন্দ না করে যাব কোথায়?

অভিক মাথার পেছনে হাত বুলিয়ে হাসলো । বলল

আমি তাহলে নিয়ে নিলাম।

সাজিয়া বেগম মেয়ের দিকে তাকালেন না। বকেছেন তাই নিজেও শান্তিতে নেই। অভিকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন

সে তো আবার বিয়ে-টিয়ে নিয়ে বড়ই দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে।

আমার কাছে আছে।

কি আছে?

দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূরীকরণের মহৌষধ। এক ডোজে যথেষ্ট।

সাজিয়া বেগম ঠোঁট এলিয়ে হাসলেন। মাথায় হাত বুলাতে গিয়ে চুল টেনে দিয়ে বললেন

দুষ্টু ছেলে।

_____________________

বড়রা কথা বলার জন্য এক ঘরে বসলেন। বাকিদের সুজানার ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সুজানা অনামিকা আঙুলটা সেই তখন ধরে রেখেছে অন্য হাতে। বড়রা কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা জিনিয়া শান্তা আর মেহুল আগাম পরিকল্পনা করে হাসছে আর সুজানার সাথে মজা নিচ্ছে। অনা আবিদ সুজানার পাশে বসে রয়েছে ভালো বাচ্চার মতো। কিছুক্ষণ পর পর সুজানার দিকে তাকাচ্ছে। আর জানতে চাইছে ” সুজান বউ? “। তাদের কথায় হাসা ছাড়া সুজানার উপায় নেই।

কিছুক্ষণ পর সায়েম ঘরে উঁকি দিল। জিনিয়া বলল

কি অবস্থা?

সায়েম লজ্জা কান মলতে মলতে বলল

আপা তোকে ডাকে।

কে কে?

সবার চেঁচিয়ে উঠায় সুজানা অবাক চোখে তাকালো।

শান্তা বলল

স্যার নাকি?

সায়েম মাথা দুলালো। বলল

এখন যেতে বলেছে।

জিনিয়া ফিক করে হেসে উঠে বলল

ভাইয়া তুমি গিয়ে বলো যে আমরা এখন তাকে ছাড়ছিনা।

সায়েম চলেই যাচ্ছিল। সুজানা বলল

না, না এরকম বলিস না।

সবাই হেসে উঠলো। মেহুল শান্তার গায়ে ঠেস দিয়ে বলল

সখী ভালোবাসা কারে কয়?

আনিকা অনার চুলে ক্লিপ লাগিয়ে দিতে দিতে বলল

সুজানা আপনি যান। আপনারা কেন বেচারিকে এত লজ্জা দিচ্ছেন?

সায়েম বলল

তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।

সুজানা আবার সবার দিকে তাকালো। মেহুল বলল

যাহ গা*ধী।

সুজানা মাথা নেড়ে বলল

আচ্ছা।

আনিকা কপাল চাপড়ে বলল

এ কেমন মেয়ে!

আবিদ বলল

আম্মু সুজান কুথায় যায়?

অভি ডাকে।

অভি কেন ডাকে?

আনিকা সবাইকে প্রশ্ন করলো

কেন ডাকে?

সবাই হেসে উঠলো।

**

সুজানা সায়েমের পেছন পেছন যেতে যেতে বলল

কোথায়?

বারান্দায় ফোনে কথা বলছিল এতক্ষণ। এখন ছাদের দিকে গিয়েছে বোধহয়। ছাদে যা।

আচ্ছা। আম্মা ডাকলে বলিস। কেমন?

সায়েম মাথা দুলালো।

সুজানা ধীরপায়ে হেঁটে ছাদে উঠে গেল। ছাদের একপাশে সিমেন্টের বস্তা। অন্যপাশে ট্যাংক। অভিক ফোন কানে দিয়ে পশ্চিমমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। সুজানা ত্রস্তপায়ে হেঁটে তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। অভিকের কথা শোনার পর সুজানা বুঝতে পারলো অভিক দাদুর সাথে কথা বলছে। সুজানার আসার টের পেয়ে সে পেছন ফিরে তাকালো।

সুজানাও লাজুকলতা ন্যায় তাকালো। অভিক ফোনটা কেটে পকেটে রেখে তার দিকে ফিরতেই সুজানা খুবই ধীরগতিতে পিছিয়ে গিয়ে হাসলো।

অভিক এগোতে এগোতে দুষ্টুমির ছলে বলল

দেরীতে আসায় আমার অভিমান জমেছে প্রথম দিনের মতো।

সুজানা হেসে পিছিয়ে গিয়ে বলল

প্রথম দিন কি করেছি?

আপনাকে পেছন থেকে ডেকেছিলাম। আর আপনি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পালাচ্ছিলেন।

সেগুনবাগিচায় যাওয়ার তাড়া পড়েছিল সেদিন।

থেমে গেল সুজানা। অভিকও থামলো।

তার আর সুজানার দূরত্ব মেপে নিল। ঠিক একটা হাত দূরে সুজানা দাঁড়িয়ে।

অনামিকায় পড়া আংটিটা এখনো অন্য হাতে মোচড়াচ্ছে। অভিক এক হাত দূরত্ব কমিয়ে আধা হাত দূরত্বে গিয়ে দাঁড়ালো।

বলল,

আমার কাছে আসার তাড়া ছিল ?

আমি সেদিন একটা বিলেত পাস ছেলেকে বোকা বানাতে গিয়েছিলাম।

পরে কি হলো?

আমি নিজেই বোকা হয়ে গেলাম। তারপর…

সে একটুখানি নিকটে আসায় সুজানা তার দিকে পুরোপুরি তাকিয়ে হাসলো। অভিক তার দু’পাশের রেলিঙে হাত ঠেকিয়ে তাকে ঘিরে দাঁড়ালো। ভুরু নাচিয়ে জানতে চাইলো,

কি?

আপনি দূরের জিনিস ভালো দেখতে পান?

অভিক ভুরু কুঁচকে চাইলো। কিয়ৎপরিমাণ সময় নিয়ে পরক্ষণে হেসে উঠলো। ঝুঁকে বলল,

কাছের জিনিসও ভালো দেখতে পাই। এই যে তাকে দেখতে পাচ্ছি।

কেমন?

শাড়িতে সে আমার বাগানের ফুলের মতো। আজ থেকে সেই শাড়িটা তার। আর সে একান্তই আমার।

শিরশিরে অনুভূতি হলো সুজানার তার হাতটা অন্য পাঁচ আঙুলের ভাঁজে বন্দী হওয়ায়। কপালে কপালের স্পর্শ, নিঃশ্বাসের শব্দসন্ধি, আর সেই ভাঁজে ভাঁজে বসে থাকা পাঁচ আঙুলের স্পর্শ অনুভবে সুজানার তখন বেহাল অবস্থা। সে মিনমিন করে বলে উঠলো।

বসন্তের কোকিল অল্প সময়ের জন্য আসে। আমার ভীষণ ভয় হয়। ভালোবাসাকে যে সবাই বসন্ত বলে।

আপনি আমার জীবনে বসন্তের কোকিল নন, আমিও না। আপনি আমার বারান্দার পাশের গাছটির নরম ডালে বসা শালিক পাখিটি। যার থাকার জন্য কোনো ঋতুর প্রয়োজন হয় না। সে ডাকে, গান গায়, আমি কথা না বললে রাগ করে, মুখ গোমড়া করে, ভিজে এসে আমায় দেখিয়ে দেখিয়ে পালক ঝাড়ে।
আপনি সেই শালিক পাখিটির মতো। আপনি থাকলেই আমার জন্য সব ঋতুই বসন্ত। কোকিলের বৈশিষ্ট্য তো অল্পটুকু, আর একটুখানি।
একটুখানি ভালোবেসে কি মন ভরে?
আমার একটুখানিতে পোষাবে না। আমি সুজানাকে ভীষণরকম ভালোবাসার জন্য ভালোবেসেছি। একটুখানি নয়।

তারপর, সুজানার সেই অনামিকা আঙুলটাও বোধহয় রেগে গিয়ে বাঁকা হয়ে বসলো তাকে ভালোবেসে একটুখানি ছোঁয়ায় তার তো আরও একটু বেশি চায়। ভালোবাসায় কি কম বলতে কোনো শব্দ হয়?

চলবে……
রিচেক করা হয়নি….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here