আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৫৩ #লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
80

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৫৩
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

সুজানার বন্ধু-বান্ধবরা সবাই এল বেলা দুটোর দিকে। সুজানা তাদের উপর ভীষণ রেগে গিয়েছে। বলেছে তাড়াতাড়ি আসতে এসেছে দুটোর দিকে। তার রাগ করা দেখে আহির বলল

এই শালী দুটো সাজতে সাজতে দেরী কইরা ফেলছে। আমাগো দোষ নাই স্যারের বউ।

শান্তা চোখ গরম করে বলল

আচ্ছা? তোরা এসেছিস ক’টায়? দেড়টায় এসেছিস। আমরা আর আধঘন্টা পর রেডি। নিজেরাই তো দেরী করে আসছোস।

মেহুল বলল

জানু রাগ করিস না। তোর ছেলেপুলের আকীকায় তাড়াতাড়ি আসুম।

সুজানা বলল

বেয়াদ্দব।

সবাই একসাথে হে হে করে হেসে উঠলো। সুজানা জায়িনকে বলল

তোর বোন কোথায়?

আমার বোন?

নিহাত?

ওকে বলছি। ও কিছু বলেনাই।

নিখিল বলল

দাওয়াত করছিস ব্যস। আসলে আসবে না আসলে নাই। দ্যাটস ইট।

সুজানার মন খারাপ হলো। বলল

ও এল না। কত করে বললাম। ক্লাসে দেখা হলে দেখে নেব।

শান্তা বলল

হ্যা ভালো কথা। ক্লাসে কখন থেকে জয়ন হবি? ইয়ে মানে বটতলীতে আবার দেখা হবে নাকি স্যার মানে তোমার বরের সাথে যাবা?

সুজানা বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল

পাগলের মতো কথা বলিস? আমি কেন উনার সাথে যাব?

তাইলে ঠিক আছে। দোস্ত তোরে আজ রাণী রাণী লাগতেছে। আহা আমাগো স্যার দেখলে..

সুজানা হেসে বলল

ফাইজলামি রাখ।

শান্তা ঘরটা ঘুরে ঘুরে বলল

স্যার দেখি ভীষণ শৌখিন মানুষ। আচ্ছা বইও পড়ে। জানুরে তোর আর বই বই করা লাগবে না।

সুজানা বলল

হুমম।

ঘরে জিনিয়া উঁকি দিল। তার পড়নে লেহেঙ্গা। আজ নতুন ভাবির সাথে ওরা ননদিনীরা মিলিয়ে লেহেঙ্গা পড়েছে। সবার নজর ওর দিকে গেল। ও বলল

ভাবি নীচে একজন এসেছে। আপনার বান্ধবী। নিয়ে আসি?

সুজানা দাঁড়িয়ে পড়লো।

কে?

আমি নিয়ে আসি।

জিনিয়া গেল আর নিহাতকে নিয়ে এল। সুজানা খুশি হয়ে গেল তাকে দেখে। জড়িয়ে ধরে বলল

কার সাথে এসেছ?

বাবা নামিয়ে দিয়ে গেছে।

আঙ্কেলকে যেতে দিলে?

বাবার কাজ আছে।

জায়িনের সাথে এলেনা কেন তাহলে?

নিহাত সবার দিকে একপলক তাকালো। বলল

ওরা আমাকে ওদের দলে রাখতে চায় না। ওরা না কেউ কেউ। সো আমিও প্যারা হতে চাই না।

সুজানা সবার দিকে ফিরে তাকালো। সবাই ঠোঁট উল্টালো।

জিনিয়া বলল

ভাবি মামী বলছে আপনার বন্ধুদের নাশতা এখানে আনবে নাকি নীচে যাবে?

মেহুল বলল

না না আমরা নীচে যাব। অত কষ্ট করতে হবে না। আমরা সুজুকে নিয়ে যাব।

তাহলে ঠিক আছে। আপনারা সবাই আসুন। আমি আসি।

সুজানা নিহাতকে নিয়ে এসে বিছানায় বসালো। শান্তা দোলনায় বসে বসে দোল খাচ্ছে।

জিনিয়া যেতেই নিখিল বলে উঠলো

সুজু তোর ননদরে পছন্দ হয়ছে। লাইন করায় দে। আহির বলে উঠলো

যাহ শ্লা আমি বলার আগে বলে দিছোস।

নিখিল বলল

আরও দুটো দেখছি তুই ওগুলারে দেখ। ওগুলোরে মানাইবো তোর সাথে। এটার দিকে নজর দিবিনা।

সুজানা হেসে উঠলো

তোরা জীবনেও ভালো হবি না?

শান্তা বলল

এই লুচ্চা দুটোকে কোথাও নিয়ে যাওয়া মানে সর্বনাশ।

নিখিল বলল

মেয়েটাকে দেইখা মনে হইলো ভাবওয়ালী না। ভাব দেখানো মাইয়্যাগুলোরে দেখলেই মনে হয় কানের নীচে একটা দেই।

সবাই হে হে করে হাসলো।
নিহাত বলল

সুজানা চলো নীচে যাই। স্যারের সাথেও দেখা হয়নি।

মেহুল বলল

হ্যা, এবার যাওয়া দরকার। অনেক আগেই ডাক এসেছে।

সুজানা আয়নায় নিজের মুখশ্রী একবার দেখে নিল। তার গায়ের লেহেঙ্গাটা অভিক পছন্দ করে কিনেছে ওয়ালিমার দিন পড়ার জন্য। বেশ ভারী। সুজানা ধীরে ধীরে হাঁটলো।

ঘর থেকে বের হতেই ননদের দল ছুটে এল। সবাই আহির আর নিখিলদের দিকে তাকাতেই ওরা দু’জন হেসে উঠে দ্রুত প্রস্থান নিল।

বউ আসছে শুনে আগত মেহমানরা তাকালো। সুজানার দুচোখ যাকে খুঁজছে সে ওই দূরে দাঁড়িয়ে। ব্লুরঙা স্যুটবুট পড়া। গোছানো, ফিটফাট। মুখে একরত্তি হাসি রেখে কথা বলেই যাচ্ছে। সুজানা চোখ সরিয়ে নিল। দূরে থাকুক কিন্তু কাছে। তাও ভালো।

সুজানা সিঁড়ি বেয়ে থেমে থেমে নামলো। আনিকা ছুটে এল। সে গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে। ভারী মিষ্টি হেসে বলল

এই দেখো সবাই বান্ধবীর ঘরে গিয়ে বসে আছে। খাওয়াদাওয়া কি করতে হবে না।

নিহাত, মেহুল আর শান্তা হাসলো।

অভিকের চোখ সুজানার দিকে তারদিকে পড়লো বলে।
বন্ধুদের বলল

চলে এসেছে। আপাতত আমাকে ওদিকে যেতে হবে। স্যারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। তোরা বাকিটা সামলে নিস।

বন্ধুরা সম্মতি জানালো।

সুজানার চোখ তার দিকে পড়তেই সে বরাবরের মতো ভুরু নাচাতেই সুজানা যেন আজ অন্যদিনের চাইতে ভারী লজ্জা পেল। হেসে মাথা নামিয়ে নিল দ্রুত।

সুজানাকে বসার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো। সাজিয়া বেগম এসে মেয়ের পাশে বসলেন। মেয়েকে দেখলেন। হাতের তালুতে নিজের জিভজল লাগিয়ে বললেন নজর না লাগুক।

সুজানা মায়ের দিকে তাকিয়ে নির্মল হেসে বলল

ভাই কোথায়? তখন একটুখানি দেখলাম।

আছে আশপাশে। বন্ধু পেয়ে গেছে অনেক।

আনিকা এসে কানে কানে বলল

গয়নাগাটিগুলো আলমিরায় রেখেছেন তো।

সুজানা বলল

ওগুলো উনি রেখেছেন। চাবিও উনার কাছে।

তাহলে ঠিক আছে। ছোটমা বলছিল তাই। আরেকটা কথা অভি বললো যে আপনার পায়ে নাকি ফোস্কা পড়ায় ব্যাথা হয়েছে । জুতোগুলো পড়ে হাঁটতে পারছেন?

এগুলো বিয়ের জুতোগুলোর চাইতে ভালো আছে। ব্যাথা লাগছেনা তেমন।

তাহলে ঠিক আছে।

অভিক সায়েমকে ধরে নিয়ে এল। সাজিয়া বেগমকে বলল

শালাবাবু লুকিয়ে লুকিয়ে থাকে সারাদিন। সমস্যা কি?

সাজিয়া বেগম হেসে বললেন

লজ্জা পাচ্ছে হয়ত।

দু ভাইবোনের এত লজ্জা কেন? এত লজ্জা নিয়ে ঘুমায় কি করে?

হেসে উঠলো সবাই মিলে।

সাইফ আর রোজা আসলো। সুজানা বলল

কোথায় গিয়েছ তুমি সাইফ ভাই? এই আছ এই নেই।

এইতো আছি।

সাজিয়া বেগম বললেন

ছেলেটা না থাকলে আমার কি যে হতো। এত কাজ সে সামাল দিয়েছে।

সাইফ বলল

কি বলো না আন্টি। এসব কোনো কাজ হলো?

অভিক তার পিঠ চাপড়ে বলল

বোনের জন্য করতে হয়। রোজামণি ভালো আছে?

রোজা লজ্জা পেয়ে সাইফের পেছনে লুকিয়ে পড়লো।

ক্যামেরা ম্যান বলল

স্যার বসুন। ছবি তোলা হয়নি একটাও।

অভিক সুজানার পাশে গিয়ে বসলো। সায়েমকে পাশে বসালো। সাইফ আর রোজাও বসলো। সাজিয়া বেগম বললেন

আমি যাই তাহলে।

অভিক বলল

শ্বাশুড়ি মা জামাই-রাজার সাথে একটা ছবি থাকাই যায়।

উনি বসলেন। তারপর ছবি তোলা হলো। সুজানার বন্ধুরা সবাই এসে বললো

আরেহ সাইফ তুমি এখানে? স্যার আপনিও? আপনাকে খুঁজছিলাম।

অভিক বলল

কি খবর আপনাদের! আগে স্যারের সাথে দেখা করা উচিত না?

আপনাকে দেখতেই পেলাম না তাই।

বসো বসো সবাই।

সাজিয়া বেগম নেমে গেলেন।

সবাই হুড়োহুড়ি করে বসলো। সুজানার পাশের সোফায় রোজা, শান্তা, মেহুল আর নিহাত বসলো।

ছবি তোলা হলো সবার। সব শেষে অনা আবিদ এল আরও কয়েকটা বাচ্চা নিয়ে। সুজানার কাছে এসে সুজানাকে দেখিয়ে ওদের বলল

ইটা বউ। সুজান বউ। অভির বউ।

অভিক আর সুজানা হাসলো তার কথায়। সুজানা বলল

এরা কারা সোনা মণি?

অনা অভিকের কোলে উঠে বসে বলল

আমার বোন্ধু। আবির বোন্ধু।

সুজানা সবাইকে তার পাশে বসালো। আবিদ বলল

বোন্ধু সুজানের জুন্য চকলেত আনছে। গিফট। বউ গিফট।

ওমা তাই।

বাচ্চাদুটো চকলেট বাড়িয়ে দিল সুজানার দিকে। সুজানা চকলেট নিয়ে হেসে আদর করে দিয়ে বলল

বাহ আমার খুব প্রিয় চকলেট। আমি খাব।

ওরা খুব খুশি হয়ে তারপর একদৌড়ে চলে গেল। সুজানা হেসে বলল

পালিয়ে গেল কেন?

অভিক বলল

লজ্জা পেয়েছে। বাই দ্য ওয়ে, স্যারদের আনছি। পরিচয় করিয়ে দেব আপনার সাথে।

আমি যাব?

অত হাঁটাহাঁটির দরকার নেই। আমি নিয়ে আসছি।

ঠিক আছে।

দুজনেই মিষ্টি হাসলো।

খাওয়াদাওয়া, হৈ-হুল্লোড়, হাসি তামাশায় কেটে গেল পুরো দিনটা। মুহূর্তে গুলো বন্দী হলো স্মৃতির কৌটায়। শুরু হলো নতুন পথচলা। এই পথচলায় দুজন দুজনকে ভালো রাখার কারণ আবার দুজনেই দুজনের ভালো থাকার কারণ।

______________

রাত নামতেই মেহমান কমে এল। বন্ধুদের বিদায়ের সময় সুজানার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। যদিও সবার বাসা নবকুঠির থেকে খুব দূরে নয়। এবং রোজ যোগাযোগ হয়। তারপরও কোথাও একটা খারাপ লাগলো।

তারপর চাচী, খালাম্মা আর ফুপুরা যখন চলে গেল তখন আরও খারাপ লাগলো। তারপর মা ভাই চলে যাওয়ার সময় সুজানাকে আর কেউ ধরে রাখতে পারেনি। বিয়ের দিনও এভাবে কাঁদার সুযোগ পায়নি সে। সাজিয়া বেগম নিজেও কাঁদলেন আবার সান্ত্বনা দিলেন মেয়েকে।

কাল তো বেড়াতে যাবি । আর কাঁদিস না।

আজ থেকে যাওনা আম্মা।

সবাই তার সাথে সাথে আবদার করলো।

থেকে গেলে কি হয়?

সাজিয়া বেগম বললেন

বাসায় তো মেহমান আছে। এখন কি থাকার সময়? অনেক থাকা যাবে।

সবাই সুজানাকে সান্ত্বনা দিল। বিয়ের ঝামেলা চুকে যাক। মা মেয়ে একসাথে থাকার সুযোগ হবে।

সুজানা সবার কথা শুনে শান্ত হলো। তারপর সাজিয়া বেগম যেতে পারলো। মেয়েটা আজও ছোট থেকে গিয়েছে। মা ছাড়া কিছু বুঝেনা।

______

বাড়ি খালি হওয়ার পর ভারী সাজগোছ ফেলে গোসল করে নিল সুজানা। তারপর শান্তি লাগলো। সবার একই অবস্থা। ছোট থেকে বড় সবাই গোসলটোসল সেড়ে ড্রয়িংরুমে আড্ডায় বসলো। কে এল, কে এল না তা নিয়ে। সুজানা আসতেই সবাই নড়েচড়ে বসে কথার সুর পাল্টালো। সব কথা নতুন বউয়ের কানে তোলা যায় না। অভিক সোফায় হেলান দিয়ে বসে বলল

আপনি টায়ার্ড থাকলে এখানে থাকার দরকার নেই।

সালমা বেগম বললেন

ও ঘরে একা একা বসে থাকবে নাকি? বসুক এখানে। মায়ের জন্য এভাবে কেউ কাঁদে। ভেবেছি এই মেয়ের অনেক বুঝ। এখন দেখি সব উল্টো।

সুজানা অভিকের দিকে তাকালো। অভিক নরম হাসলো। সুজানা দাদুর পাশে বসলো। দাদু মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

কত এমন বড় হয়েছে? মায়ের আঁচল ছাড়লে সব মেয়েই বাচ্চা হয়ে যায়। দিনগুলো মনে করে দেখো। তুমিও কম করোনি। কিন্তু আমার বোনের কান্নার কারণ নেই। দাদুভাই তোমাকে দিনে দিনে নিয়ে যাবে। তোমার যখন মায়ের জন্য মন পুড়বে তখন চলে যাবে। আর মন খারাপ করোনা ঠিক আছে?

সুজানা মাথা নাড়ালো।

এই শাড়িতে আরাম লাগছে?

হ্যা।

অভিক দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল

মা আমি বেরোচ্ছি। আজ রাতে খাব না। সবাই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ো। ঠিক আছে।

সুজানা উৎসুক হয়ে তাকালো। অভিক বলল

খুব তাড়াতাড়ি ফিরব মা।

সালমা বেগম কিছু বলার আগেই অভিক বেরিয়ে গেল। সুজানার সময় কাটলো সবার সাথে। রাতে শ্বাশুড়ির হাতে খেয়ে ঘরে চলে গেল। সেখানে ননদ আর আনিকার সাথে অনেক গল্পসল্প হলো। তারপর তারা যার যার ঘরে চলে যেতেই সুজানা ঘরের আলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালালো। মোমবাতি গুলো অভিকের ড্রয়ারে দেখার পর মাথায় বুদ্ধি এসেছিল এই মোক্ষম সুযোগে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে খুঁজতে মাস্টারমশাই অব্দি পৌঁছেছে সে। উনি নিশ্চয়ই খুব চমকে যাবে। ভাববে সুজানার এত বুদ্ধি হলো কবে থেকে? যদিও উনি জানেন সুজানা নির্বোধ নয় অতটা। সুজানা ঠিক তার মতো, যতটা দরকার ঠিক ততটা।

সে রাত এগারোটা হতেই ছোট্ট একটা মিসকল দিল অভিকের ফোনে। অভিক তখন বাড়ির গেইট পার হয়েছে। মিসকল দেখে ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটলো তার।

পুনরায় মিসকল দিতেই সুজানা তার উত্তর পেয়ে গেল। দরজায় ঠোকা পড়ার অপেক্ষায় দিব্যি দাঁড়িয়ে রইলো সে দরজার পাশে খোলা চুলে খুশিমনে।

যখন ঠোকা পড়লো আর সে অনুভব করলো ওপাশের জন তার মানুষ তখন বুকের ভেতর অদ্ভুত দুন্দুভিধ্বনি টের পেল সে। দরজা খোলামাত্রই লাজুক মুখটা চোখে পড়লো অভিকের। মাথাটা বুকে এসে ঠেকতেই দু হাত দিয়ে সে বেঁধে নিল পরম যত্নে। কপালে পুনঃবার ঠোঁটের স্পর্শে হুশ ফিরলো সুজানার। সে মুখ তুলে বলল

চোখ বন্ধ করুন।

অভিক ভালো ছেলেটির মতো চোখ বন্ধ করলো। সুজানা তাকে ঘরে নিয়ে এল। দরজাটা বন্ধ করে বলল

এবার খুলুন।

অভিক চোখ খুলেই দেখলো অন্ধকার ঘরটা। মৃদুমন্দ আলোর উৎস খুঁজতেই দেখলো মোমবাতি জ্বলছে মিটিমিটি।

সুজানা মোমবাতির দিক থেকে চোখ সরিয়ে অভিকের দিকে তাকালো। অভিক তার নাকে দুম করে নাক ঠেকিয়ে বলল

হঠাৎ!

প্রথম প্রশ্নটা মনে আছে?

হুমম।

যে জিনিসটা শুধুমাত্র আপনার সেটা আপনি শুধুমাত্র আমাকে দিতে পারেন। উত্তরটা হচ্ছে…

অভিক হাসলো। সুজানা বুকে আঙুল ঠেকিয়ে বলল

মন।

হুমম। তারপর।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে আপনি আমার কাছে লাইব্রেরি চেয়েছিলেন। হাজার বই দিয়ে সাজানো লাইব্রেরি দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই। কিন্তু আমার সেই লাইব্রেরি দেয়ার সামর্থ্য আছে যেটা আপনি চেয়েছিলেন। একটা ভালো বন্ধু যে একটা লাইব্রেরীর সমান। আপনি আমার বন্ধুত্ব চেয়েছিলেন। উত্তরটা ঠিক আছে?

জিনিয়াস বউ আমার।

সুজানা হাসলো। অভিক তার চুল গুঁজে দিল কানের পেছনে। বলল

এবার তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর।

এই ঘরে কি কি দেখতে পাচ্ছেন আপনি?

আমি, আপনি, মোমবাতির আলো, আবছা আবছা আসবাবপত্র ইত্যাদি ইত্যাদি।

উহু। আপনি স্বপ্নে দেখেছেন। একটা অন্ধকার ঘর, একটা আমি অন্যটা আপনি আর কিছু ছায়ারা নৃত্য করছে।

একদম তাই।

সুজানা হেসে ঘরটা দেখিয়ে বলল

এই যে অন্ধকার ঘর। একটা আমি আরেকটা আপনি। আর ওই যে ছায়ারা নৃত্য করছে।

অভিক দেখলো মোমবাতির ছায়াগুলো নৃত্যরত অবস্থায় আছে।

সুজানা বলল এটাই আপনার স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আপনার স্বপ্ন আপনার মতোই সুন্দর।

অভিক জড়িয়ে ধরলো তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে। ভেঁজা চুলে মুখ গুঁজে বলল

কি ভেবেছেন এটা ঘুমিয়ে দেখেছি?

তো?

অভিক হেসে উঠলো। বলল

এটা জেগে জেগে দেখেছি ম্যাডাম।

সুজানা অবাক চোখে বুক থেকে মুখ তুলে তাকালো।

কি! দুষ্টু লোক। আমাকে শুধু শুধু নাচালেন উত্তর খোঁজার জন্য?

ইয়েস।

সুজানা তার মাথাটা ধুপধাপ ঠেকালো অভিকের বুকে। অভিক হাসতে হাসতে বলল

আপনাকে আমার প্রয়োজন এটা বুঝাতেই তো অবস্থা খারাপ আমার। আমি চেয়েছিলাম যাতে আপনি নিজে নিজে বুঝতে পারেন।

সুজানা আবারও মুখ গুঁজলো। বলল

দুষ্টু লোক।

অভিক কপালের পাশেই ঠোঁট ছুঁয়ে বলল

আমার সারপ্রাইজটা দিতে দিন।

সুজানা মুখ তুলে বলল

কি?

অভিক তাকে পাঁজা খোলা করে তুলতেই সুজানা বলল

অ্যাহ এসব কি? যখন তখন।

ওই ড্রয়িং রুমে নেওয়া উচিত ছিল।

এ্যাহ কচু।

অভিক হাসলো। সুজানাকে বিছানায় বসিয়ে বলল

বসুন। আনছি।

লাইট দিন।

অভিক ডিমলাইট জ্বালিয়ে দিল। ঘরটা গোলাপি রঙ ধারণ করলো।

আলমিরা খুলে দুটো বাক্স বের করলো অভিক। নিয়ে এসে পেছনে রেখে সুজানার সামনে বসলো। বলল

চোখ বন্ধ।

সুজানা চোখ বন্ধ করলো।

অভিক আনরেপ করতে করা শেষে বলল

চোখ খুলুন।

সুজানা চোখ খুললো। কালো রঙের ল্যাপটপ?

হাত দিয়ে ছুঁয়ে অভিকের দিকে তাকালো।

অভিক বলল

আপনার ল্যাপটপ। আর এটা চার্জার। বাকি সরঞ্জাম রাখা আছে ওখানে।

সুজানা ওটাতে হাত বুলিয়ে বলল

আপনার কেন মনে হলো এটা আমার প্রয়োজন?

আমি জানি এটা আপনার খুব প্রয়োজন। আমার বউয়ের আবার সোনাদানায় মন নেই।

সুজানা ওটা পাশে রেখে দিল। অভিকের নিকটে এসে জড়িয়ে ধরলো চুপচাপ। অভিকও চেপে জড়িয়ে ধরে বলল

আমি আপনাকে পড়তে পারি ম্যাডাম।

সুজানা মুখ লুকিয়ে রাখলো। অভিক বলল

এটা ওপেন করে দেখাই। সুজানা মাথা দুলালো। অভিক বুকের নীচে বালিশ রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে ল্যাপটপটা ওপেন করলো।
সুজানা অভিকের পাশেই উপুড় হয়ে শুয়ে ল্যাপটপে চোখ রাখলো।

শুরুতেই তাদের বিয়ের ছবি দেখা গেল ডিসপ্লেতে।

অভিক বলল

এরা কারা?

সুজানা হাসলো। বলল

সব করে রেখেছেন?

হুমম।

এই নিন। আপনার কাজ এবার।

সুজানা ল্যাপটপে তাদের বিয়ের ছবিগুলো দেখলো একের পর এক।

অভিক নিয়ে নিল তারপর। বন্ধ করে রেখে দিয়ে বলল

এটা এখন আমার জায়গা নিয়ে নেবে না তো।

সুজানা বালিশে মাথা এলিয়ে হেসে উঠলো। অভিক বালিশটা টেনে নিয়ে আসলো। নাকে নাক ঘষে বলল

এমন হলে চলবে না। বউ আমার।

সুজানা আবারও হাসলো। চওড়া কপালটাতে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল

আপনার জায়গা অন্য কেউ কভু নিতে পারবে না। আপনি শুধুই আপনি। মাস্টারমশাই!

অভিক মুখটা আগলে ধরে প্রলম্বিত চুম্বনে রাঙিয়ে দিল। পিঠের নীচে হাত গলিয়ে গলায় মুখটা গুঁজতেই সুজানা স্তব্ধ হয়ে গেল।

ঘড়ির কাঁটার টিংটিং আওয়াজ ভেসে এল শুধু। কানে কানে কে যেন বলে গেল

ভালোবাসা ভালোবাসাবাসিদের কাছে সুন্দর।

সমাপ্ত।

আজকে সবার মন্তব্য চাই। চুপ করে থাকলে চলবে না। এই গল্প প্রিয় হতে পেরেছে কি আপনাদের? কোন চরিত্র গুলো প্রিয়?

অতএব শুধু থেকে যারা ছিল তাদের জন্য অন্তরস্থল থেকে ভালোবাসা। এভাবেই পাশে থাকবেন শেষ পর্যন্ত। ভালো থাকবেন, ভালো রাখবেন আপনদের। ভালোবাসা ❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here