মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৮)

0
80

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (১৮)

অনুভবের সাথে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় টুকটাক কথা হয়। ছেলেটাকে একেক সময় একেক রকম মনে হয় সায়রার। কখনো মনে হয় খুব ম্যাচিউর আবার কখনো মনে হয় ভীষণ অলস প্রকৃতির। সব মিলিয়ে কেমন গুলিয়ে আসছে। সায়রা আজ ভার্সিটির পরীক্ষা গুলো শেষ করে এল। ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা হয়ে গেল। দেখতে দেখতে সময় কোথায় চলে যায়। সব মিলিয়ে সায়রা এখন ভীষণ ব্যস্ত। পরীক্ষার জন্য আহনাফকে পড়াতে পারে নি। তবে পরীক্ষা শেষ হতেই পড়াতে এসেছে। রনু মাসের বেতন দিতে গেলেই সায়রা বলল,”আপু আমি তো এ মাসে পড়াতেই পারি নি।”

রনু হাসল। তারপর বলল,”তুমি তো ঘন্টা ধরে পড়াও না সায়রা।”

সায়রা কৃতজ্ঞতায় চোখ নামিয়ে নিল। সে সত্যিই ঘন্টা ধরে পড়ায় না। আহনাফকে ভীষণ যত্নে পড়ায় সে। এত গুলো মাস পড়াল ছেলেটাকে। কখনো কখনো খেলা ধুলায় ও সঙ্গ দিয়েছে। তাই হয়তো আগের থেকে অনেকটাই ঠিক হয়েছে আহনাফ। মাসের বেতন পেয়ে সায়রার ভালো লাগল। পরীক্ষার জন্য ভালোই খরচা হচ্ছিল। ও ভাবছিল আমিরাকে কিছু জামা কিনে দিবে। মেয়েটির চাওয়া পাওয়া আগে বিশাল থাকলেও এখানে আসার পর একেবারেই নেই হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে মায়ের মতন কেউ হতে পারবে না। সায়রা হতেও চায় না। ও চায় ভালো মিমি হতে। সে নিজের সবটুকু দিয়ে আরেকটি প্রাণকে আগলে নিবে। দিবে নতুন জীবন।

অনেক গুলো ড্রেস কিনল সায়রা। বলা চলে সব টাকাই খরচ করে ফেলল আমিরার ড্রেসের পেছনে। অনুভব ও এখানেই এসেছিল। সে প্রায় সপ্তাহেই এটা সেটা শপিং করে। সায়রাকে দেখতে পেয়ে দোতলা থেকে নেমে এল। সায়রা বেরিয়েই পড়েছিল। তবে ডাক শুনে পেছন ঘুরে তাকাল। দেখল এস্কেলেটর দিয়ে লাফিয়ে নামছে অনুভব। সায়রা চেচাতে গিয়েও থেমে গেল। চারপাশে অনেক মানুষজন। সবাই তাকিয়ে আছে। অনুভব ঝড়ের গতিতে নেমে এল যেন। সায়রা মৃদু কণ্ঠে বলল,”পাগল, ওভাবে কেন আসছিলে?”

অনুভব কথাটির জবাব না দিয়ে বরং শুধাল,”এখানে কেন?”

সায়রা চেয়ে রইল। তার হাত ভরাট করা শপিং ব্যাগে। এটা একটা শপিং মল। সে এখানে কেন আসতে পারে? অনুভবের প্রশ্নে, ও আসলেই হতাশ। আসলে অনুভব ও এ কথা বলতে চায় নি। ও অন্য কথাই বলতে চাচ্ছিল। তবে কীভাবে যে এ কথাটি বলে ফেলল নিজেও জানে না। তবে সে কথাটির তোয়াক্কা না করে অনুভব পুনরায় বলল,”তুমি আহনাফকে পড়াতে যাও না কেন?”

“আমার পরীক্ষা চলছিল।”

“সেই জন্যেই সোশ্যাল মিডিয়া অফ করে দিয়েছিলে?”

সায়রা মাথা দোলাল। অনুভব অনেক বেশি লম্বা। তার ওপর চিকন। সায়রা নিজেও লম্বা। তবু নিজেকে লিলিপুট ই মনে হচ্ছে। চারপাশের মানুষজন ওদের দেখছে। সায়রার অস্বস্তি হয়।

“আমরা এখান থেকে বেরিয়ে কথা বলি?”

অনুভব সায় জানিয়ে চলতে লাগল। মাঝে ওদের আর কথা হলো না। অনুভব ও ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিল। এই কটা দিন ওর যন্ত্রণায় গিয়েছে। সায়রার সাথে দেখা হচ্ছে না। কথা হচ্ছে না। এই প্রথম অনুভব নামের ভবঘুরে ছেলেটা অনুভব করেছিল তার জীবনটা কোথাও একটা আটকে গেছে। পিছুটান এসেছে। ও বুক ভরে শ্বাস নিল। যেন কত শত দিন পর এক টুকরো মুক্ত বাতাস ছুঁয়ে গেল শরীর ও মন।

সায়রা বলল,”ফুচকা খাবে?”

“তুমি খাওয়াবে?”

“হ্যাঁ।”

অনুভব কিছু বলল না। সে সায়রাকে এইটুকু বুঝেছে নিজ উপার্জনের টাকা ছাড়া মেয়েটি তার দেওয়া কিছুই নিবে না। এই বিষয়টি ওকে ভাবিয়ে তুলল। সে একটু নয় অনেকটাই অলস প্রকৃতির। সারাজীবন বাবার টাকায় চলেছে। অনুভব আজকাল অনেক বেশি ভাবতে শুরু করেছে। তার ভাবনার দৌড় পৌছে গেছে তিন কবুল অবধি। সায়রাকে কীভাবে মানাবে। কীভাবে ওর ভালোবাসা পাবে। এসব নিয়েই সারাক্ষণ চিন্তা করে। মিউজিকে হাত লাগায় না কত দিন হলো। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসা হয় না। হলেও অন্য মনস্ক থাকে। সব মিলিয়ে জীবনটাই যেন বদলে গেল। অনুভবের ঘোরটি ভাঙে সায়রার ছোঁয়ায়। ও দেখে সায়রা ওর হাতে বাহু দ্বারা ধাক্কিয়ে বলছে,”আরে ধরো। আমার হাতে এত গুলো জিনিস।”

অনুভব চট করে ফুচকার প্লেট ধরে। সায়রা চোখ ছোট ছোট করে বলে,”তুমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?”

মুখে কিছু না বললেও অনুভবের মন বলছে আমি তোমার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম সায়রা। তুমি আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছ। আমাকে ভাবতে বসিয়েছ। আমি নিজেকেই চিনতে পারছি না সায়রা। কি থেকে কি হয়ে গেল। এই আমি যে বড়ো অচেনা।

এত এত শপিং করে এনেছে সায়রা। অথচ আমিরার মুখ শুকিয়ে আছে। ও ব্যাগ গুলো কাবাডে তুলে দিয়ে বলল,”কী রে। কী হয়েছে?”

আমিরা ঝড়ের মতন এসে সায়রার বুকে পড়ল। কাঁদতে লাগল।

“আমিরা, কী হয়েছে সোনা? কাঁদছিস কেন?”

“মিমি, আমি যাব না। আমি যাব না মিমি।”

সায়রা বুঝতে পারল না। আমিরার পিঠে হাত রেখে বলল‍,”কোথায় যাবি না? কাঁদছিস কেন?”

আমিরার বলার পূর্বেই ঘরে প্রবেশ করল জুথি। হাতে কাগজ পত্র। সায়রা আমিরাকে বুক থেকে সরিয়ে বলল,”ভাবি, ও কাঁদছে কেন?”

“এই যে দেখ।”

কাগজ হাতে নিল সায়রা। তারপর দেখতে লাগল। পুরোটা পড়ে ও রাগে গজগজ করে বলল,”শ য় তা ন একটা।”

“আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে।”

“যা ইচ্ছে করুক। আমিরা কোথাও যাবে না।”

জুথি চুপ। সায়রা আমিরাকে দু হাতে আগলে নিয়ে বলল,”মিমি থাকতে তোর কোনো ভয় নেই।”

মুখে এ কথা বললেও আসলেই সায়রা চিন্তিত হলো। বাহাদুর এত দিন চুপ ছিল। সায়রা তাই ভুলেই বসেছিল বিষয়টা। এখন আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। মামলা করেছে। তাদের মতে বাচ্চার ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। আরো কত কী লেখা আছে। সায়রা হতাশ, কিছুটা চিন্তিত। মামলা লড়তে গেলেও টাকার প্রয়োজন। তারা গরিব নয়। তবে এমন পরিস্থিতি ও নেই যে দু হাতে খরচ করবে। সব মিলিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ল ও। ওর ঘুম হারিয়ে গেল। আমিরা সবে শুয়েছে। এত সময় ভয়ে কাঁপছিল। মেয়েটির মুখশ্রীর দিকে চাইলেই সায়রার হৃদয় লাফিয়ে ওঠে। সময়ের সাথে সাথে বাচ্চাটি বড়ো হচ্ছে। কত সমস্যা রয়েছে। সায়রার বুকের ভেতর থেকে তপ্ততা নেমে আসে। সে খুব করে অনুভব করে মা হওয়া সহজ নয়। মোটেও সহজ নয়।

পরীক্ষা যেহেতু শেষ। হাতে সময় ও আছে বেশ। সায়রা ঠিক করল সে টিউশনি বাড়িয়ে দিব। এখন তো হাতে অনেক সময়। এতে বাড়তি রোজগার হবে। মামলা লড়তে পারবে। কিছু সেভিং ও হবে। সব মিলিয়ে সে টিউশনি খুঁজতে বের হলো। মাথার ওপর সূর্য ওঠেছে। রোদের তপ্ততা অনেক বেশি। সায়রা রিকশা নিল। হুড তুলে দিল। তবু রোদ যেন শরীরের সমস্ত শক্তি নিয়ে নিচ্ছে। তার ওপর লম্বা জ্যাম। সায়রা হতাশ হয়ে বসে রইল। সহসাই চোখ গেল পাশের একটি গাড়িতে। সেখানে একটি সুন্দর মেয়ে বসে। এক পলকেই চিনে ফেলল সায়রা। মেয়েটি নম্রতা। সাঈদের স্ত্রী। ও শুকনো ঢোক গিলল। সেকেন্ড কয়েক বাদে নম্রতা মাথাটা নিচু করল। সম্ভবত পায়ের কাছে কিছু একটা পড়ে গেছে। সেটা ই তুলে নিচ্ছে। সে সময়েই দেখা মিলল সাঈদের। ছেলেটাকে দেখে সায়রার সমস্ত শরীর কেঁপে ওঠল। মন মস্তিষ্ক যন্ত্রণা এসে ছুঁয়ে গেল। মানুষ যা দেখতে চায় না, সেটাই বার বার চোখে আসে। এটাই জীবন। সুখের থেকে দুঃখ বেশি।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

| আমায় একটু জানান তো গল্পটা কেমন হচ্ছে। আমি লিখে ভীষণ সন্তুষ্ট হচ্ছি। মনে হচ্ছে গতানুগতিক ধারা থেকে বেশ বাইরের একটা প্লট সাজাতে পেরেছি। আর লেখনী, আমায় তৃপ্ত ও করছে। এবার আপনারা বলেন তো সব ঠিক আছে কী না। |

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here