মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৪)

0
111

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৪)

দ্বিতীয় দিনের টিউশনিতে এসেছে সায়রা। আহনাফ একদম ই চুপচাপ বসে। সে কলমের দিকে চেয়ে আছে। এ রকমের পরিস্থিতির সাথে সায়রা পরিচিত নয়। তবে ও চেষ্টা করছে। যতটা সম্ভব ছেলেটার সাথে ফ্রি হতে।

“আহনাফ এদিকে তাকাও তো।”

আহনাফ তাকাল না। সায়রা আরো দু বার ডেকেও সাড়া পেল না। ও ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে এগিয়ে দিল।

“এটা খাবে তুমি?”

অন্য বাচ্চাদের মতন উচ্ছ্বাস নেই আহনাফের মাঝে। হতাশ হতে হলো সায়রার। ও আহনাফের পাশে এসে বসল,”তুমি কি কিছু খেলতে চাও?”

খেলা শব্দটি বোধহয় আহনাফের ভালো লাগল। ও ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল। মনোযোগ পেয়ে সায়রা বলল,”চলো আমরা খেলি।”

আহনাফের হাত ধরিয়ে ওঠিয়ে নিল সায়রা। তবে কি খেলবে ঠিক বুঝতে পারল না। আহনাফ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে।

“আহনাফ,বলো তো তোমার প্রিয় খেলা কি?”

কোনো জবাব দিল না ও। তবে পাশে থাকা বলের দিকে তাকাল। সেটাকেই প্রিয় বলে ধরে নিল সায়রা। বলটা উঠিয়ে নিয়ে বলল,”ক্যাচ ধরবে,কেমন?”

আহনাফ কোনো কথা বলল না। তবে মনে হলো তার ভালো লাগছে। সায়রা দুজনের মাঝে কয়েক হাত দূরত্ব সৃষ্টি করে বলটা হালকা হাতে ছুড়ে দিল। আহনাফ অবশ্য ধরতে পারল না। তবে বল কুড়িয়ে আনল। তারপর চেয়ে রইল। ওকে ভরসা দিতে সায়রা বলল,”বল টা আমার দিকে ছুড়ে দেও।”

আহনাফ কথা মতন বল ছুড়ে দিল। এভাবে ওদের খেলা চলল অনেক সময়। খেলার এক পর্যায়ে আহনাফ নিজ থেকেই বলল,”আন্টি বাইরে গিয়‍ে খেলব।”

নিজ থেকে কথা বলায় সায়রার ভালো লাগল। ও একটু বুদ্ধি করে বলল,”বাইরেই খেলব যদি তুমি পড়াটা ঠিক মতন পড়ো।”

প্রস্তাবটা আহনাফের মনে ধরল। ও পড়তে বসল। সায়রা যতক্ষণ পড়াল খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ল।

আহনাফ কে পড়িয়ে বের হতেই সাঈদের কল এল। সায়রার মনে হলো ওর শরীর কাঁপতে শুরু করেছে। ও চট করেই রিসিভ করল। ভা ঙা গলায় বলল,”হ্যালো।”

“কেমন আছ?”

“ভালো। তুমি?”

ছোট্ট শব্দটি উচ্চারণ করতে গিয়ে সায়রার হৃদয় ভে ঙে আসছে। সাঈদ মিনমিনে কণ্ঠে জবাব দেয়।

“ভালো।”

তারপর নীরবতা। দুজনেই যেন অদ্ভুত ভাবে কথা হারিয়ে ফেলেছে। সায়রার শরীর থরথর করে কাঁপছে।

“এখন কোথায় আছ?”

“টিউশনি করাতে এসেছি।”

“অহ,দেখা করতে পারবে?”

“পারব।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এসো তবে।”

“হুম।”

কথাটি শেষ করেই সায়রার হৃদয় মন অশান্ত হয়ে পড়ল। ও দ্রুত নেমে এসে একটা রিকশা নিল।

“মামা একটু দ্রুত যাবেন প্লিজ।”

আজ ওরা ক্যাফেতে বসে নি। ওরা চলছে ফুটপাত দিয়ে। দুজনের মাঝের দূরত্ব কয়েক ইঞ্চি মাত্র। তবে মনের দূরত্ব? সেটা জানা নেই। সায়রা খোলা আকাশের দিকে চেয়ে পথ চলছিল। হুট করেই ওর পা হড়কে যায়। তবে সাঈদ ধরে ফেলল বিধায় ব্যথাটা পায় নি।

“সাবধানে চলো।”

সায়রা উত্তর দিল না। ওরা পুনরায় পথ চলতে লাগল। সময়টা আসলে মন্দ নয়।

“তোমার ডিসিশন কী এখনো বদলায় নি?”

সায়রা না তাকিয়েই বলল,”কোন ডিসিশন?”

“বিয়ের বিষয়ে।”

“আমার তো সমস্যা নেই সাঈদ। আমিও বিয়ে করতে চাই। আরো এক বছর আগেই বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু তোমার মা ই তো মানছিলেন না।”

কথাটি বলেই দীঘল একটি শ্বাস ফেলল সায়রা। সাঈদ চুপ। সায়রা পুনরায় বলল,”একটা সত্যি কথা বলবে,আসলেই কি তিনি চান আমি তোমার বউ হই?”

সাঈদ যেন ভাষাহীন কোনো প্রাণী। ওর মৌনতা দেখেই সায়রার হৃদয় ভে ঙে আসছে।

“চান।”

এত সময় পর সাঈদ জবাব দিয়েছে। কথাটির সত্যতা নিয়ে পুরোপুরি সংকোচ অনুভব করে সায়রা। হাসে, নীরবে।

“আমি জানি কথাটি স্বার্থপরের মতন শোনায়,তবে স্বাভাবিক ভাবেই কোনো বাবা মা চাইবে না তার ছেলের বউয়ের সাথে…..

কথাটি পুরো করতে পারল না সাঈদ। ওর অস্বস্তি হচ্ছে। নিচু মনে হচ্ছে। আমিরার মতন এতিম একটি বাচ্চাকে নিয়ে এ রকমের মন্তব্য সে সত্যিই করতে পারছে না। সায়রা এক বুক কষ্ট নিয়ে বলল,”আমার আপু নিজের জীবনের বিশাল সময় আমার জন্য সেক্রিফাইজ করেছে। আমাদের সংসারের জন্য সেক্রিফাইজ করেছে। তার মেয়েটা আজ এতিম হয়ে গেছে। আর আমি কী না ফেলে যাব? সাঈদ, তুমি তো জানোই ভাবি কেমন। তুমি একবার আমিরার জায়গাটা ভেবে দেখো। আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারব না।”

সাঈদ জবাব দিতে পারল না। চুপ ই রইল। ওর কিছু বলার নেই আসলে। পরিস্থিতি ওকে মৌন করে তুলেছে।

রাস্তার ধারে ফুল বিক্রি হচ্ছিল। সাঈদ একটা গোলাপ কিনে বাড়িয়ে দিল। সায়রা সেটা তুলে নিয়ে মিথ্যে হাসিতে মুখশ্রী রাঙিয়ে বলল,”আমাদের সম্পর্কের শেষ ফুল?”

সাঈদ কথা বলতে পারল না। অন্যদিকে ফিরে রইল। সায়রা ও কিছু বলল না। কথায় আছে,পরিস্থিতি মানুষকে সব ভাবে রাঙাতে পারে।

শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে আছে আমিরা। চোখের দৃষ্টি মৃ ত। সায়রা ওকে ডাকল।

“আমিরা, এই আমিরা।”

জবাব দিল না মেয়েটি। সায়রা ওর কাছে এসে দাঁড়াতেই আমিরা অন্যদিকে ফিরে রইল। কাহিনীর কিছুই বুঝল না ও। এদিকে শরীর ভীষণ ক্লান্ত। আমিরা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। কি এক যন্ত্রণায় মেখে আছে সায়রার সমস্ত শরীর। তবে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে ও বেরিয়ে এল। দেখল আমিরা পালাতে চাইছে। ভারী বিস্মিত হলো সায়রা।

“এই আমিরা।”

এবার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে গেল মেয়েটি। ওর পিছু পিছু ওঠল সায়রা ও। এসে দেখল কাঁদতে কাঁদতে বাচ্চাটির হিচকি ওঠে গেছে।

“কী হয়েছে তোর?”

জবাব দিল না বাচ্চাটি। আমিরার ক্রদনরত মুখশ্রী বুকের কাছে এসে হাহাকার মাখিয়ে দিল। ও শুকনো ঢোক গিলে শুধাল,”বল কী হয়েছে?”

“আমি খুব খারাপ তাই না মিমি?”

কথাটা বলার পরই সায়রা বুঝল জল অনেকদূর গড়িয়েছে। ও ভরসা দিয়ে বলল,”কে বলেছে?”

আমিরার বদলে জবাব দিল জুঁই। চোখ মুখ অন্ধকারে ডুবে আছে।

“মা বলেছে। ওকে খুব বকেছে আজ।”

“কেন? কী করেছে?”

“হরলিক্স বানাতে গিয়ে কাপ ভে ঙে ফেলেছে।”

“বুয়া কোথায় ছিল? ও কেন হরলিক্স বানাতে গিয়েছে।”

কথাটি শেষ করার মাঝেই আমিরার ফোস্কা পড়া হাত নজরে এল। সায়রা খপ করে ওর হাতটি ধরে বলল,”এটা কি হয়েছে!”

“পিপি আমি মলম লাগিয়ে দিয়েছি।”

সায়রার মুখশ্রী দেখে মনে হলো,আমিরার বদলে আ ঘা ত পেয়েছে সে। জুঁই কিছুটা নিচু সুরে বলল,”মা ওকে আবার মে রে ছে।”

চোখ বন্ধ করে নিল সায়রা। তারপর বলল,”ওকে নিয়ে নিচে যা তো জুঁই। আমি আসছি।”

সায়রার কথা মতন আমিরাকে নিয়ে নিচে চলে এল জুঁই। সায়রা আকাশের দিকে চেয়ে বলল,”ধৈর্য দাও আল্লাহ। আমায় ধৈর্য দাও।”

সাঈদের সাথে দেখা করে ফেরার পথে পুরো রাস্তায় নানান কথা ভেবেছে সায়রা। ও ভেবেছে কোনো ভাবে আমিরার একটা ব্যবস্থা করা যাবে। তবে বাড়ি ফিরে যা দেখল তাতে ওর সিদ্ধান্তের বদল‍ ঘটল। আমিরা এখানে একা থাকতে পারবে না। কিছুতেই থাকতে পারবে না। বোনের মেয়েটিকে একটা অসুস্থ জীবন দিতে চায় না ও। এসব ই ভাবছিল ও। সে সময়েই জুথির আগমন ঘটল। রোষানলে তপ্ত তার কণ্ঠস্বর।

“সাঈদের সাথে তোর সম্পর্কের কী হলো?”

“কী হবে?”

“লোকে বলাবলি করছে ওর জন্য নাকি মেয়ে দেখা হচ্ছে।”

কথাটি জানে সায়রা। অর্পা ফোন করে বলেছিল সাঈদের মা সবটুকু দিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। সায়রার জবাব দিতে ইচ্ছা করছে না। ও এড়াতে চাইছে। তবে জুথি থেমে রইল না।

“কথা বলছিস না কেন? ও ছেলে যদি অন্য মেয়েকেই বিয়ে করে তবে এতদিনের সম্পর্কের কী মানে?”

“এসব কথা রাখো ভাবি।”

“রাখব কেন? সমস্যাটা কোথায়?”

সায়রার অসহ্য লাগছে। ও চোখ দুটি বন্ধ করে বলল,”প্লিজ ভাবি। এসব আর বলিও না। আমার ভালো লাগছে না।”

“ও ছেলে যদি বিয়ে করে। তবে তুই কেন বসে থাকবি? তোর ভাইয়ের কলিগের ছোট ভাই আছে। ভীষণ ভালো চাকরি করে। অনেকদিন ধরেই বলছিল তোর কথা।”

এ কথা যে কতবার শুনেছে সায়রা। ও এবার শক্ত করেই বলল,”আমি কোথাও যাব না ভাবি। এখন আমিরার পুরো দায়িত্ব আমার। ওকে রেখে কোথাও যাব না।”

জুথি যেন এবার জ্বলে ওঠল। কেন যেন আমিরার প্রতি বিতৃষ্ণা তার।
“তবে, ও মেয়ের জন্য ঘরেই পড়ে থাকবি? আজীবন?”

কথাটা বাজে শোনালেও উচ্চ শব্দে প্রতিবাদ করল না সায়রা। বরং মৃদু কণ্ঠে বলল,”ভাবি, দোহাই লাগি। আমিরার প্রতি একটু দয়াশীল হও। ও তোমার ছেলেমেয়ের ভাগে ভাগ বসাবে না। বিশ্বাস করো আমায়।”

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

| প্রেম অল্প স্বল্প ই-বই টি কে কে পড়েছেন? যারা পড়েন নি দেখে নিন কমেন্টে। |

পর্ব (৫)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=397321319495435&id=100076527090739&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here