মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২৯)

0
79

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২৯)

সায়রা শাওয়ার নিয়ে সবে ফিরেছে। ওমনি আমিরা এসে বলল জুথি কল করেছে। এখানে আসার পর থেকে কথা বার্তার পরিমাণ কমে গেছে। এই যে যেমন আজ তাদের দু সপ্তাহ পর কথা হচ্ছে।

“হ্যাঁ ভাবি কেমন আছ?”

“কেমন থাকব বল। ভুলেই তো গেছিস।”

“ভুলি নি গো। সমস্যা হলো সময়। সময় মেলাতে পারি না।”

“থাক আর সাফাই দিতে হবে না।”

সায়রা একটু হেসে বলল,”আচ্ছা বাবা সরি। এখন বলো সবার কী খবর?”

“খবর আর কি হবে। তোর ভাতিজি তো তোর মতন। অবশেষে বিয়ের জন্য রাজি হলো।”

সায়রা সবে মাত্র বিষয়টা খেয়াল করল। দেখতে জুঁই ও বড়ো হয়ে গেল। এখন তার একুশ বছর বয়স।

“ছেলে কী করে ভাবি?”

“আর বলিস না। মেয়ে নিজে পছন্দ করে বসে আছে।”

“ভালোই তো।”

“ভালো না ছাই। ছেলের আহামরি টাকা পয়সা নেই। সাধারণ চাকরি করে।”

“তাতে কী ভাবি? টাকা পয়সা দিয়ে কী সুখ হবে বলো। তার থেকে ভালো ওর ভালো থাকা টা। তুমিই দেখো। তোমার যখন বিয়ে হয় ভাইয়া তখনো স্টুডেন্ট। রোজগার নেই। সময়ের সাথে সাথে সংসার ভরে ওঠেছে। তুমি কী সুখী নও?”

জুথি একটা গভীর নিশ্বাস ছাড়ল। হ্যাঁ সে সুখী। তবে কখনো সখনো মনে হয় জীবনটা আরো সুন্দর হলেও পারত। আসলে মানুষের মন ই খারাপ। এই মন যত পায় তত চায়। সন্তুষ্ট হতে পারে না কিছুতেই। তবু জুথি মনে মনে একবার সব কিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ বলে নিল।

“শোনো, জুঁই কে কিছু বলবে না। ছেলে ভালো হলেই হয়।”

“সে ঠিক আছে। এখন বল তুই কবে আসবি?”

“আমি?”

“এত অবাক কেন হচ্ছিস?”

“ভাবি আমি তো….”

“শোন সায়রা। তুই যদি না আছিস, তাহলে বিয়ে বন্ধ।”

“এটা কেমন কথা ভাবি?”

“এটাই ভালো কথা। তোকে ছাড়া মেয়ে বিদায় করব না।”

সায়রা মৌন হয়ে গেল। জুথি মন খারাপের সুরে বলল,”এখন তো অনেক কিছু বদ‍লে গেছে সায়রা। এখন তো আসতেই পারিস।”

সায়রা চুপ। সে ও ফিরতে চায়। তবে কখনো সখনো মনটা বড়ো পো ড়া য়।

অনুভব এক মনে খাবার খাচ্ছে। তার খাবার তৈরি করা হয় বিশেষ ভাবে। তেল মসলার পরিমাণ নেই বললেই চলে। সারাক্ষণ সেদ্ধ খাবার গুলো খায়। ছেলের এমন অবস্থা দেখে রুপবান হতাশ হয়। তিনি আজ ছেলের প্রিয় সর্ষে ইলিশ করেছেন। অথচ অনুভব ফিরেও দেখছে না।

“বাবা একটু খেয়ে দেখ না।”

“মা, আমি এসব খাই না।”

“তোর প্রিয় সর্ষে ইলিশ। দেখ একটু খেয়ে।”

রূপবান ছেলের নাকের কাছে খাবারটি ধরলেন। অথচ ছেলে নাক ছিটকে বলল,”প্লিজ জোর কোরো না।”

রূপবানের কান্না পেল। ছেলেটা কী শুরু করেছে। এই সেদ্ধ শাক,পাতা খাওয়া কোনো জীবনের মধ্যে পড়ে? আমিন সাহেব চুপ করে খাচ্ছিলেন। এবার মুখ খুললেন।

“মাঝে মধ্যে এ রকম খাবার খেতেই পারো অনুভব।”

“না, বাবা। এসব আমার ভালো লাগে না।”

“কথা টা তো সত্য নয়। ভালো লাগে। বরং তুমি ইগ্নোর করো। সেটাও বহাল রেখেছ এত বছর ধরে।”

“একটা হলেই হলো। এখন এসব খেতে ইচ্ছে করে না।”

“তোমার যে কী হলো অনুভব।”

“কিছু হয় নি বাবা। আমি একদম ঠিক আছি।”

“সেটা তো দেখতেই পারছি। হেংলা ছেলেটা কেমন বলিষ্ঠ হয়ে গেছে। এত এত দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছে। রীতিমতো বাবাকে ধা ক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।”

বাবার কথায় এক চোট হাসল অনুভব। ওর খাওয়া শেষ। টিসু দিয়ে মুখ মুছে বলল,”ঠিক আছে। তোমরা খাও। আমি বের হলাম।”

“শুনে যাও অনুভব।”

অনুভবের হাতে সময় কম। মিটিং রয়েছে। বাবার কথায় দাঁড়াল ও।

“দ্রুত বলো প্লিজ। সময় নেই।”

“বলছি, এত তাড়া কেন?”

“মিটিং আছে।”

“সুনেরাহ কে কেমন লাগল?”

“দারুণ বাবা।”

আমিন সাহেব মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন। অনুভব ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বলল,”ও খুবই কর্মঠ। আমি তো কথা বলেই ঠিক করে ফেলেছি সামনে যে ক্লথের বিজনেস শুরু করব তার মডেল হবে ও।’

ভদ্রলোকের মুখটা চুপসে গেল। তিনি বললেন,”তুমি ওকে মডেল করবে ভেবেছ?”

“হুম। পারফেক্ট যাবে ওর সাথে।”

“তুমি কী পাগল অনুভব?”

“কেন বাবা?”

“ওর সাথে তোমায় ডেটে পাঠিয়েছিলাম। যাতে করে দুজন নিজেদের চিনে নিতে পারো। আর তুমি কী না, বিজনেসের চিন্তা করে এসেছ!”

আমিন সাহেব হতাশ। অনুভবের সময় নেই। ও দ্রুত এসে মা কে জড়িয়ে ধরল। তারপর বিদায় জানিয়ে চলে গেল। এদিকে শুকনো মুখে বসে রইলেন আমিন সাহেব। তার ত্রিশ বছরের ছেলে মাঝে মাঝে তিন বছরের ছেলের মতন আচরণ করে!

জুঁই অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছে। এদিকে সুবর্ণ’র আসার নাম নেই। জুঁই বিরক্ত হয়ে কল করল।

“তুমি কী আসবে না সুবর্ণ?”

“এসে পড়েছি জান। একটু অপেক্ষা করো।”

“তুমি একটা অসহ্য।”

“আই নো। আর এই অসহ্য কেই তুমি ভালোবাসো।”

জুঁই হতাশ হয়ে বসে রইল। এই ছেলে বরাবর ই লেট।

দশ মিনিট পর সুর্বণ কে দেখা গেল। ওর হাতে ফুলের গুচ্ছ। এসেই ফুল গুলো রাখল টেবিলে।

“তোমার প্রিয় অর্কিড।”

“ফুল কেন আনতে গেলে। এসব কত দাম।”

“তাতে কী?”

“আমাদের সংসার গোছাতে হবে সুবর্ণ। আমি তো ভেবে নিয়েছি টিউশনি শুরু করব।”

সুবর্ণ আরাম করে বসল। ওয়েটার এসে অর্ডার নিয়ে গেল। জুঁই ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

“মন খারাপ করে আছ কেন? বাসায় কিছু বলেছে?”

“উহু। বাসায় কিছু বলে নি। তবে ভেবেছি বিয়েতে তেমন অনুষ্ঠান করব না।”

সুর্বণ হেসে শুধাল,”কেন?”

“টাকা বাঁচাতে হবে না? সামনে আমাদের কত কিছু কেনাকাটা আছে। সংসারের জন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে হবে।”

সুর্বণ কথা বলল‍ না। কফি চলে এসেছে। কফি নিয়েও জুঁইয়ের চিন্তার শেষ নেই। ও বলল,”পাঁচশ টাকা দিয়ে এই কফি না খেয়ে আমরা সেভিংস করতে পারতাম বলো।”

সুর্বণ এবার ও চুপ। জুঁই ওর হাতটা আগলে ধরল।

“সুর্বণ আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। প্লিজ কখনো ছেড়ে যেও না।”

“যাব না। তুমি একটু বেশিই চিন্তা করছ।”

“চিন্তা করছি, কারণ আমি একটা সুন্দর সংসার গোছাতে চাই। অনেক কিছু থাকতে হবে না। শুধু আমরা দুজন ভালো থাকলেই হবে।”

জুঁইয়ের বলা কথাটা সুর্বণের বুকে এসে লাগল। মেয়েটা এত বেশি ভালোবাসে ওকে। ও মনে মনে ঠিক করল, শত বাঁধা এলেও মেয়েটিকে ছাড়বে না। কিছুতেই না।

একটা কাজের জন্য ফেসবুকে এসেছিল সায়রা। অনেক দিন পর আসা হলো। ঠিক তখনই ফ্রেন্ড সাজেশনে একটি মুখ ভেসে ওঠল। আইডিটা অনুভবের।

“মিমি কী দেখছ?”

সায়রা চট করেই ফোনটা অফ করে ফেলল। আমিরা খাবার নিয়ে এসেছে।

“কী রে। কী রান্না করেছিস?”

“এটা একটা ইতালিয়ান ডিশ। খুবই মজা হয়েছে। খেয়ে দেখো।”

এক চামচ খাবার তুলে দিল আমিরা। সায়রা খেয়ে দেখল সত্যিই দারুণ।

“ভালো হয়েছে রে।”

“প্রথম ট্রাই করলাম।”

“আচ্ছা শোন, জাফরিন কে একদিন ইনভাইট করতে চাচ্ছি।”

“ওয়াও,এটা তো দারুণ। জাফরিন আপুকে আমার এত ভালো লাগে।”

সায়রা চোখ রাঙিয়ে চাইল। জাফরিনের বয়স চব্বিশ। তাই মেয়েটিকে আপু বলেই সম্বোধন করে আমিরা। এদিকে জাফরিন আবার সায়রাকে আপু কে ডাকে। মোট কথা ওদের সম্বোধনে গোলমাল হয়ে গেছে। সায়রা হতাশ হলো। তারপর বলল,”কবে আসতে বলব?”

“কাল অফ ডে আছে। কাল ই আসতে বলো। ভালো হবে।”

আমিরার চোখে মুখে খুশি খেলা করছে। কত দিন হয় বাড়িতে কেউ আসে না। সব সময় সে আর মিমি।

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

| সন্ধ্যায় লিখে শেষ করতে পারি নি। তাই লেট হলো। দুঃখিত প্রিয় পাঠক। |

পর্ব (৩০)
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/438538192040414/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here