#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৩০)
অনুভবের প্রতিটা সকাল শুরু হয় জিমে শরীরচর্চার মাধ্যমে। ভারী ডাম্বেল ওঠানামা করছে সে। এদিকে সায়েমের অবস্থা কাহিল। সে একটুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অনুভব শরীরচর্চা শেষ করে তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছে নিচ্ছে। সায়েম বলল,”আপনার শক্তির কাছে নিজেকে তুচ্ছ লাগে স্যার।”
“তাই?”
“হুম। ভাবতেও অবাক লাগে আপনি এক সময় কেমন হেংলা,পাতলা ছিলেন। আর অলস ও বটে।”
সায়েমের সাথে ওর সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। তাই খুব সহজেই কথা গুলো বলে ফেলল ও। অনুভব এক ফালি হেসে বলল,”মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল।”
“সেটাই স্যার। না হলে আমার অত দিনের গার্লফ্রেন্ডটা বিয়ে করে নিতে পারত!”
সায়েমের কথায় দুঃখ মিশে আছে। অনুভব ওর বাহুতে হাত রেখে বলল,”জীবন কারো জন্য থেমে থাকবে না সায়েম। যে ছেড়ে যায় তাকে স্মরণে ও রাখতে নেই।”
“ঠিক। তাকে ঘৃণা করা উচিত।”
এবার অনুভবের মুখশ্রী ইষৎ কালো হয়ে গেল। তারপর ও বলল,”অনেক বেশি ঘৃণা করা উচিত।”
অনুভব যখন বাসায় ফিরছিল তখন আহনাফ লিফ্টের কাছে দাঁড়িয়ে। পড়াশোনার চাপে কাতর হয়ে গেছে ও। চোখে চশমা ওঠেছে।
“এই যে পড়কুট ছেলে। কী খবর?”
অনুভব কে দেখে আহনাফ স্থিমিত হয়ে গেল। ওর বাহু টেনে ধরল অনুভব।
“কী ব্যাপার। সারাক্ষণ শুধু পড়াশোনাই করিস?”
“পড়াশোনা তো ভালো অনুভব চাচ্চু।”
“ভালো, তবে অতো বেশি পড়া তো ভালো না। দেখেছিস এই বয়সেই তোর চোখে চশমা ওঠে গেছে।”
আহনাফ চুপ করে গেল। লিফ্ট এসে গেছে। ওরা দুজন লিফ্টে ওঠল। অনুভব ফের বলল,”এত না পড়ে একটু অন্য দিকে ফোকাস করলেও তো পারিস।”
“আমার পড়তেই ভালো লাগে। মিস বলেছিল পড়াশোনা করলে অনেক বড়ো হওয়া যায়। বন্ধুরা ও গুরুত্ব দেয়।”
কথাটা শুনে অনুভবের মুখশ্রী বির্বণ হয়ে এল। লিফ্ট ওদের তলায় এসে যাওয়ায় ও চলে গেল। আহনাফ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। ও ভেবে পায় না অনুভব চাচ্চু কেন সায়রা মিসের কথা ওঠলেই চুপ হয়ে যায়। তাদের দুজনের বন্ধুত্ব এখনো মনে পড়ে ওর।
জাফরিন এসেছে। সায়রা সাদা ভাত আর ঝাল ঝাল করে মুরগির ঝোল করেছে। ও তৃপ্তি নিয়ে ভাতের লোকমা তুলল। চিবুতে চিবুতে বলল,”জাস্ট ওয়াও। এত দারুণ রান্না জানো তুমি।”
“আরেকটু নাও জাফরিন।”
“হুম দাও।”
জাফরিন ফের খাওয়া শুরু করল। তৃপ্তিতে ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। আমিরা খেতে খেতে বলল,”জাফরিন আপু, তোমার তো গ্রাজুয়েশন শেষ, তুমি কি ইন্ডিয়া যাবে?”
“বলিস না রে, বাবা-মা পাগল করে দিচ্ছে। ছুটিতে যেতে বলে। আমার ইচ্ছা করে না।”
“কেন?”
“গেলেই বিয়ে করতে বলবে।”
“খারাপ কী? তুমি বিয়ে করবে না?”
“না।”
“ওমা! কেন?”
“ভালো লাগে না আমার। আমি চিল লাইফে থাকতে চাই।”
সায়রা খাওয়ার সময় কথা পছন্দ করে না। ও আসায় ওরা চুপ হয়ে গেল। জাফরিন বলল,”আপু তুমিও বসে পড়ো।”
“বসছি। কি নিয়ে কথা বলছিলে তোমরা?”
আমিরা কিছু বলতে চাচ্ছিল। ওর কথা কেড়ে নিয়ে জাফরিন বলল,”ভাবছিলাম বাংলাদেশ গিয়ে একবার ঘুরে আসব।”
“বাহ ভালো তো। কবে যেতে চাও?”
“এখনো ঠিক করি নি।”
সায়রা একটু ভেবে নিয়ে বলল,”তাহলে আমাদের সাথে যাবে জাফরিন?”
“মিমি, আমরা বাংলাদেশে যাব?”
“হুম। ভাবি কল করে বলল জুঁই এর বিয়ে।”
“ইস আমি তো কিছুই জানি না।”
“তা জাফরিন, আমাদের সাথে যাবে? তাছাড়া বাংলাদেশে তো তোমার চেনা জানা নেই। কোথায় যাবে, থাকবে।”
জাফরিন বিষয়টা মজা করে বলেছিল। তবে সায়রা বলার পর কেন যেন যেতে ইচ্ছা করছে। তাছাড়া বাবা-মায়ের জন্য দেশে ও যাওয়া যাচ্ছে না। তার থেকে ভালো প্রতিবেশি দেশে ঘুরে আসা যাক। জাফরিন ভাতের লোকমা তুলে বলল,”ঠিক আছে।”
আমিরার তেমন আনন্দ লাগছে না। ওর ইতালিই ভালো লাগে। এই ভালো লাগার পেছনে কারণ ও আছে। এই যে ওর ছোট্ট মনে একজন জায়গা করে নিয়েছে। দেশে গেলে সেই মানুষটার সাথে দেখা হবে না। এ বিষয়টিই ওর মন খারাপ করে দিচ্ছে।
সুনেরাহ বাবার ঘরের দরজায় এসে নক করল। শব্দ পেয়ে ভদ্রলোক বললেন,”এসো।”
“পাপা হুট করে ডাকলে যে?”
“তুমি তো আপডেট দিলে না মামুনি। অনুভবের সাথে দেখা করেছে দু সপ্তাহের ও বেশি।”
সুনেরাহ আমতা আমতা করে বলল,”আসলে পাপা আমি একটু সময় চাই।”
“ওকে তোমার পছন্দ নয়?”
সুনেরাহ চুপ করে রইল। ওর মা এবার বললেন,”তুমি যদি এবার ও বলো পছন্দ না তাহলে আর কিছু বলার নেই। অনুভব লাখে একটা।”
“আই নো মাম্মা।”
“তাহলে সমস্যা কী?”
“আমরা দুজন এখনো নিজেদের ভালো করে জানি না মাম্মা। পরিচয়টা ভালো হোক। তারপর না হয় ডিসিশন নিব।”
ওর মা কিছু একটা বলতেই নিচ্ছিলেন। তবে ওর বাবা বাঁধা দিয়ে বললেন,”ঠিক আছে মামুনি। তুমি যেটা ভালো মনে করো।”
“থ্যাংক ইউ পাপা।”
সুনেরাহ নিজের ঘরে ফিরে অনুভবের একটি ছবি বের করে দেখতে লাগল। ছেলেটার খামতি নজরে আসে না ওর। ওর সব কিছুই ভীষণ সুন্দর। সুনেরাহ দু চোখ ভরে দেখে নিচ্ছে। কিছু সময় পর ও ভাবল অনুভব কে কল করবে। হলো ও তাই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। কিন্তু কল রিসিভ হলেও ওপাশের ব্যক্তিটার কণ্ঠ শুনে ওর মুখ কালো হয়ে গেল।
“আপনি কে?”
সায়েম আমতা আমতা করে বলল,”আমি অনুভব স্যারের পি এ।”
“ওনার ফোন কল কেন রিসিভ করেছেন?”
“আসলে ওনি মিটিং এ।”
“তাই বলে রিসিভ করবেন?”
সায়েম তাজ্জব বনে গেল। উত্তর দিতে পারল না। কিছু সেকেন্ডের মাঝেই অনুভব এসে পড়ল। সায়েম ফোন এগিয়ে দিল।
“হ্যালো।”
সেই কণ্ঠস্বর! সুনেরাহ’র ভেতরটা শীতল হয়ে গেল।
“অনুভব, আমাকে চিনতে পারছেন?”
“সুনেরাহ?”
“জি। কী খবর আপনার?”
“ঠিক ঠাক। আমি ভেবেছিলাম কিছু দিনের মধ্যেই আপনার সাথে মিট করব।”
“কবে ফ্রি আছেন? আমি কি আপনার অফিসে আসব?”
“আসতে পারেন। আপনার সাথে ডিটেলস আলোচনা আছে।”
“ঠিক আছে। তার আগে একদিন আমাদের বাসায় আসুন। পাপা বলছিল আপনাকে বাসায় নিয়ে আসতে।”
অনুভব ঘড়িতে টাইম দেখল। রাত এগারোটা বাজে। আজ অনেক গুলো কাজ ছিল। ও বলল,”সময় করে আসব এক দিন। আপনি ফ্রি থাকলে কাল ই চলে আসুন। দ্রুত কাজ গুলো করে রাখতে চাই।”
“ঠিক আছে। তাহলে রাখছি?”
“আচ্ছা। গুড নাইট।”
“গুড নাইট।”
কল রেখে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল সুনেরাহ। ওর ভেতরটায় শত শত প্রজাপতি ডানা মেলে ওড়ে বেড়াচ্ছে। হুট করেই নিজেকে কেমন সুখী সুখী অনুভব হচ্ছে।
এদিকে সায়েমের মুখ গোমড়া। অনুভব সেটা খেয়াল করে বলল,”কী হয়েছে?”
“ম্যাডাম আমাকে বকা দিয়েছে স্যার।”
“কেন?”
“কল রিসিভ করায়।”
“কী বলেছে?”
“বলেছে কেন আপনার কল রিসিভ করেছি।”
“তুমি কী বললে?”
“আমি কিছু বলতে পারি নি।”
অনুভব হতাশ হয়ে চেয়ে রইল। শুরুর দিকে সায়েমকে চালাক মনে হতো। অথচ এখন মনে হয় ছেলেটা আস্ত গাধা। এর কারণ আছে অবশ্য। ঐ যে, গার্লফ্রেন্ড হারানোর শোকে ছেলেটার মস্তিষ্কের বুদ্ধি হারিয়েছে। অনুভব বুক ভরে শ্বাস নিল। কাউকে হারিয়ে ফেলার পর মানুষের জীবনে আমুল পরিবর্তন আসে। তার ও এসেছে।
চলবে…
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি
| গ্রামে এসেছি। লেখার সুযোগ হয় না। ফারহান ভাই কে চিনেন কেউ? ফারহান ভাই কে নিয়ে নতুন গল্প এসেছে। নাম “হৃদয়ে রয়েছ গোপনে”। লিংক কমেন্টে দেই। পড়ে নিন। |
পর্ব (৩১)
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/440472051847028/?app=fbl