অর্ধ_নক্ষত্র ।২। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
318

#অর্ধ_নক্ষত্র ।২।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

“পুলিশ বউ আমার তার উপর রূপবতী,রূপসী।এমন বউ থাকা সত্ত্বেও যদি আমার বুক ভরা সাহস না থাকে তাহলে তো সমাজ আমাকে মেনে নিবে না মেহরা।”,ঠোঁট উল্টে মেহরার রাগান্বিত মুখ পানে চেয়ে কথাটি বলল আরশমান।

গাড়িতে উঠার পর থেকেই মেহরা চেঁচিয়ে বলেই যাচ্ছে, আরশমানের সাহস কী করে হয় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে টেনে গাড়িতে তোলার,তার হাত ধরে বসে থাকার।আরশমান তার বাম হাতে থাকা ট্যাবে সকল মনোযোগ দিয়ে রেখেছিল বলে মেহরা কে এতক্ষন যাবৎ উত্তর দেয় নি।এখন হাতের ট্যাবটি পাশে রেখে প্রতুত্তর করে আরশমান।

মেহরা দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”আমি তোর বউ এখনো হই নি তাই বার বার বউ বউ একদম করবি না বলে দিচ্ছি।হাত ছাড় আমার।”

আরশমান মেহরার তুই তোকারি দেখে ভড়কালো না,বরং তার হাতের ভাঁজে আবদ্ধ মেহরার হাতের দিকে তাকালো।গাড়িতে উঠার পর থেকেই মেহরার বাম হাত আরশমানের ডান হাতের দৃঢ় ভাঁজে আবদ্ধ।আরশমান মেহরার হাত টেনে নিজের বুকের বাম পাশে চেপে ধরে বলে,”আমি তো ছাড়ার মানুষ নই রূপসী।বুকের এই বাম পাশের অতি মুল্যবান স্থানে জায়গা দিয়েছি আপনাকে,ছাড়ার জন্য তো নয়।আর বিয়ে?আমি চাইলে এখনই আপনাকে বিয়ে করতে পারি।”

মেহরা আরশমানের পাঞ্জাবি খামচে ধরে।আরশমান মেহরা কে “রূপসী” নামে সম্বোধন করলেই মেহরার রাগ সব সময় যেনো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।আরশমানকে নিজের কাছে টেনে এনে রাগান্বিত স্বরে বলে,”কখনো না।আর রইলো তোর মুল্যবান স্থান,আমি তোর এই মুল্যবান স্থান কে নরকেও পরিণত করতে পারি আরশমান।”

আরশমান বাঁকা হেঁসে বলে,”আমিও বউকে আদর করে চুমু খেয়ে নরক থেকে তা স্বর্গে পরিনত করতে পারি রূপসী।”

মেহরার রাগে মুখাবয়ব লাল আফায় ছেয়ে এসেছে।আরশমানের সাথে দ্বিরুক্তি করার মত সে আর ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।চরম বিরক্ত হলো মেহরা।বিরক্তির সর্ব শেষ স্তরে এসে আরশমানের বুকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো।আরশমান অল্প পিছিয়ে গেলো।

কোলাহলপূর্ণ বড় সড়ক পেরিয়ে স্টিয়ারিং ঘোরালো আকাশ,নির্জন রাস্তাটিতে বাক নিয়ে প্রবেশ করলো তার সাথে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নিলো আরশমানকে।

আরশমান ঠিক হয়ে বসে হাত বাড়িয়ে মেহরার হাতটি পুনরায় নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে নিলো।রক্তিম লাল আভায় আচ্ছন্ন মুখাবয়বের দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু হাঁসে আরশমান এবং ভাবে,কতই না রাগ তার রূপসীর!শ্যাম বর্ণের মেহরার মায়াবী নেত্র,বাম গালের কালো তিল নিয়ে সাধারণ মুখখানা’ই আরশমানের কাছে রূপে ভর্তি মনে হয়।মেহরার হাতটি নিজের ওষ্ঠের অতি নিকটে নিয়ে হাতের উলটো পিঠে অত্যন্ত আবেশে চুমু খায় আরশমান।মেহরার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে।মুহূর্তের মধ্যেই হৃদযন্ত্রের স্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে স্পন্দিত হতে শুরু করে।চোখ দুটো বড় বড় আকার ধারণ করে।অত্যাধিক চকিত হয় সে।

মেহরা বারকয়েক বড় করে নিশ্বাস নিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,”আপনি আমাকে ছোঁয়ার সাহস কী করে পান?এত নির্লজ্য কী করে আপনি?”

আরশমান উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলো।মেহরার গা ঘেঁষে বসে ফিসফিস করে বলল,”আমি’ই তো আপনার হাত ছোঁয়ার সাহস রাখি রূপসী।আপনি ভালো করেই জানেন আমি ছাড়া অন্য কেউ আপনাকে ছোঁয়ার সাহস করলে তখনই হবে তার অন্তিম মুহূর্ত।আর রইলো নির্লজ্যের কথা বিয়ে টা হোক তারপর দেখবেন এই আরশমান খান কত টা নির্লজ্য।”

মেহরার বোধ হচ্ছে তার কান দিয়ে গরম ধোয়া বেরিয়ে আসছে।গাড়ির এসি চালু থাকা সত্ত্বেও মেহরা ঘামছে।আরশমান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থেকে নিঃশব্দে হাঁসে।মেহরার মুখ পানে তাকিয়ে থেকে পাঞ্জাবির পকেট থেকে রুমাল বের করে সযত্নে মেহরার ঘর্মাক্ত মুখটি মুছে দিতে শুরু করে।আরশমানের স্পর্শ পেতেই মেহরা আরশমানের হাতটি নিজে থেকেই শক্ত করে চেপে ধরে সহসা তার আখিযুগল বন্ধ করে ফেলে।মেহরার ঘর্মাক্ত কপাল সযত্নে মুছে দিয়ে আরশমান মেহরার কানের কাছে এগিয়ে গিয়ে রুদ্ধশ্বাস কণ্ঠে বলে,”আপনাকে লজ্জা পেতে দেখলে আমি বেকাবু হয়ে যাই রূপসী।এমন করে লজ্জা পাবেন না নাহয় আমি আমাকে সংযমন করে রাখতে পারবো না।”

মেহরা তড়িৎ গতিতে চোখ খুলে তাকায়।আরশমান ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসে,মেহরার হাত ছেড়ে দেয়।সরে এসে পাশ থেকে ট্যাবটি হাতে তুলে নেয় অল্পসল্প সময় নিয়ে ট্যাবটির স্ক্রিনে আঙ্গুল চালিয়ে মেহরার হাতে ট্যাবটি ধরিয়ে দিয়ে চোখের ইশারা করে বলে,”ভিডিও টি দেখুন।”

মেহরা প্রতিউত্তর না করে আরশমান থেকে চোখ সরিয়ে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ট্যাবটির স্ক্রিনে দিয়ে ভিডিও টি দেখা শুরু করে।

.
নিঃশব্দে পুরো ভিডিওটি দেখলো মেহরা।ভিডিও টি সমাপ্ত হতেই আরশমান মেহরার থেকে ট্যাবটি নিয়ে বলল,”প্রমাণ পেয়েছেন মেহরা?”

মেহরা মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো।তার ভীষণ খটকা লাগছে কিন্তু আরশমানের দেখানো ভিডিও টি দেখার পর আরশমানকেও দোষী দাবি করতে পারে না মেহরা।

আরশমান মেহরার মুখ পানে তাকিয়ে থেকে বলল,”দেখুন আসিফ ভূইয়া সাফওয়ান চৌধুরীর
কি ডন্যাপ এর পিছনে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত।আর আসিফ ভূইয়া সাফওয়ান চৌধুরী দুজনেই আমার বিপরীত দলের লোক নিশ্চই আমি আসিফ ভূইয়ার সঙ্গে জড়িত থাকবনা।”

মেহরা ভ্রু কুঁচকে ছোট করে বলল,”হম।”

ভিডিও’টির মধ্যে পরিস্ফুট ছিলো যে,রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে এলাকার প্রাক্তন এমপি সাফওয়ান চৌধুরীর বাড়ি থেকে খানিক দূরে ল্যাম্প পোস্টের নিচে দাড়িয়ে ছিলো আসিফ ভূইয়া।আসিফ ভূইয়া সাফওয়ান চৌধুরীর দলের একজন বিশ্বস্ত লোক।

আসিফ ভূইয়া তার হাতের ইশারা করতেই বাড়ির নিচ থেকে দারোয়ান সহসা সরে যায় এবং কালো পোশাক পরা কয়েকজন মানুষ সাফওয়ান চৌধুরীর বাড়িতে প্রবেশ করে।অল্প-স্বল্প সময় যেতেই অজ্ঞান অবস্থায় থাকা সাফওয়ান চৌধুরীকে কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে আসে লোকগুলো।অতঃপর একটি সাদা রঙের গাড়িতে উঠে পড়ে সকলে সাথে আসিফ ভূইয়াও উঠে পড়েন।ভিডিও টির মধ্যে গাড়ির নম্বর অস্পষ্ট।ভিডিও’টি বাড়ির পাশের সড়কের সিসি ক্যামেরা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

.
আকাশ গাড়ি জোরে ব্রেক কষতেই মেহরা ত্রস্ত হলো।মাথা উঠিয়ে আশে পাশে তাকালো।আরশমান মেহরার গালে তার দুই হাত রেখে তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে কপাল ঠেকলো।মেহরার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো আখিজুগল বন্ধ করে ফেললো।নিশ্বাস গাঢ় হলো তার।আরশমান মেলায়েম স্বরে বলল,”আপনি আমার প্রাণশক্তি মেহরা।আপনি ছাড়া আমার অস্তিত্ব অভাবাত্মক।দয়া করে আপনি আর ওই সাফওয়ান চৌধুরীকে নিয়ে ভাববেন না।আপনার ভাবনা জুড়ে শুধু মাত্রই এই আমি থাকতে চাই।”

মেহরা চুপ করে রইলো।আরশমান ছেড়ে দিলো মেহরা কে।সরে আসলো।গাড়ির দরজা খুলে দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আদেশের সঙ্গে বলল,”আকাশ মেহরা কে সাবধানে পৌঁছে দিবে।”

আকাশ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গাড়ি ঘুড়িয়ে জায়গাটি ত্যাগ করলো।মেহরা শরীর এর ভার ছেরে দিলো সিটে বিড়বিড় করে বলল,”তবুও আপনাকেই আমার সন্দেহ হয় আরশমান।”

.
আশপাশ অন্ধকারে ঢেকে এসেছে।রাত হওয়া মাত্রই কোলাহলপূর্ণ ব্যাস্ত শহরটি নিস্তব্ধতায় ছেয়ে এসেছে।
জুনায়না মেইন রোডের এক পাশে দাড়িয়ে এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে রিকশার খোঁজ করছে।আধ ঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছে জুনায়না এই ফাঁকা রাস্তায়,একটি রিকশাও দেখতে পেলো না সে।

ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হলো।জুনায়না পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজ অপশানে প্রবেশ করলো।প্রশান্তর নম্বর থেকে সবে একটি মেসেজ এসেছে।মেসেজটি পড়লো,”জুনায়না বাড়ি গিয়েছিস?”

জুনায়নার ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো।মেসেজ এর উত্তরে নিজে একটি মেসেজ করলো,”আধ ঘন্টার বেশি সময় ধরে থানার পিছনের রোডে দাড়িয়ে আছি।রিকশা পাচ্ছি না দোস্ত।”

দুই এক মিনিট যেতেই প্রশান্ত মেসেজ করলো,”তুই দাড়া আমি আসছি।”

জুনায়না মেসেজটি পড়েই খুশিতে ” ইয়াহু ” বলেই এক লাফ দিলো।কৃত্রিম আলোয় আলোকিত ফাঁকা সড়কটিতে এদিক থেকে ওদিক লাফালাফি করতে শুরু করলো জুনায়না।আর খিটখিট করে হাসতে শুরু করলো।খুশিতে গাল দুটো লাল হয়ে এসেছে তার।

পনেরো মিনিট যেতেই জুনায়নার দৃষ্টিগোচর হলো সুদূরে থাকা তার পরিচিত লাল রঙের গাড়িটি,ঠোঁটের কোণে হাঁসি আরো প্রসারিত হলো।লাফানো থামিয়ে চুপটি করে দাঁড়ালো সে।

লাল রঙের গাড়িটি জুনায়নার সামনে এসে থামলে গাড়ি থেকে একজন কৃষ্ণ বর্ণের পুরুষ বেরিয়ে আসে।কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম এবং চোখে মুখে এক চিন্তার ছাপ উপস্থিত।পরনে তার সাদা শার্ট এবং কালো প্যান্ট।শার্টের হাতা ফোল্ড করা।বাম হাতে সিলভার রঙের ঘড়ি।চুল গুলো তার এলোমেলো।

জুনায়না এগিয়ে যায়।পুরুষটির একদম কাছে এসে দাঁড়ায়।তার এলোমেলো চুলে সন্তর্পনে হাত ডুবিয়ে দেয়।এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিতে দিতে শুধায়,”এমন এলোমেলো অবস্থা কেনো প্রশান্ত বাবুর?”

প্রশান্ত জুনায়নার হাত তার চুলের ভাঁজ থেকে সরিয়ে এনে বলে,”তুই রিকশা পাচ্ছিস না তা একটা ম্যাসেজ বা কল করে আমাকে তো জানাতে পারতি।তাহলে তো আমি আরো আগেই চলে আসতাম।”

জুনায়না হেঁসে বলে,”কেনো প্রশান্ত বাবু আমি এতক্ষন যাবৎ দাড়িয়ে ছিলাম বলে আপনার কষ্ট হচ্ছে বুঝি?”

প্রশান্ত বাম হাতের উলটো পিঠে কপালের ঘাম মুছে শান্ত কণ্ঠে বলে,”তুই কাজের কথা না জানলেও বাজে কথা ভালোই জানিস।যা গাড়িতে গিয়ে বস তাড়াতাড়ি।”

জুনায়না জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে গাড়ির চাবি খুলে পকেটে নিয়ে নিলো।অতঃপর প্রশান্তর হাত ধরে সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।প্রশান্ত চমকিত কণ্ঠে বলল,”কী হলো?”

“সামনে একটা খাবারের স্টল আছে বুঝলি।আমি জানি তুই এখনও খাওয়া দাওয়া করিস নি,আমিও এখনও কিছু খাইনি।চল দুজন মিলে কিছু একটা খেয়ে আসি।”

প্রশান্ত স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো জুনায়নার দিকে।
দোকানটির সামনে এসে দাঁড়াতেই জুনায়না প্রশান্তর
হাত ছেড়ে উচ্চ কণ্ঠে বলে উঠলো,”এ কী স্টল বন্ধ করছেন কেনো?”

যুবকটি স্টলের সব গুছিয়ে শাটার অর্ধেক বন্ধ করে ঘুরে তাকালো সৌজন্য মূলক হেঁসে বলল,”রাত বারোটার পর তো স্টল বন্ধ করে দেই আপু।”

জুনায়না হেঁসে এগিয়ে গিয়ে বলল,”দেখুন ভাইয়া আমি শুধু মাত্র আপনার জন্য এইখানে এসেছি আর আপনি কিনা স্টল বন্ধ করে দিচ্ছেন?”

প্রশান্ত ঠোঁট টিপে হাঁসলো বুকে হাত গুজে দাড়ালো।

যুবকটি আমতা আমতা করে বলল,”জি আপু।”

জুনায়না তার চোখের সামনে চলে আসা অবাধ্য চুল গুলো কানের পিছনে ঠেলে মুগ্ধ কণ্ঠে বলল,”বলছিলাম যে আপনার মত একজন হ্যান্ডসাম যুবক থাকতে ওই স্টলে তো বার বার আসতে ইচ্ছে করে।এখন কী আপনি এইভাবেই ফিরিয়ে দিবেন আমাকে।”

যুবকটি জুনায়নার কথায় গলে গেলো শাটার খুলে দিয়ে বলল,”আপু বসেন কী খাবেন বলেন।আজ আমার তরফ থেকে আপনাকে ট্রিট।”

প্রশান্ত নিঃশব্দে হাঁসলো।জুনায়না পিছন ঘুরে প্রশান্তর
হাত ধরে টেনে এনে টুলে বসে অনর্গল কয়েক রকমের খাবারের কথা বলে দিলো যুবকটিকে।

যুবকটি সব শোনার পর প্রশান্তর দিকে তাকিয়ে বলল,”আপু ইনি আপনার কে হয়?”

জুনায়না প্রশান্তর দিকে চেয়ে চোখ মেরে বলে,”ইনি আমার জান।”

যুবকটির মুখ ছোট হয়ে গেলো।প্রশান্ত ছেলেটির দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে উঠল।জুনায়না প্রশান্ত’র হাঁসির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,”অপূর্ব হাঁসি।”

.
খাওয়া দাওয়া শেষে প্রশান্ত বাড়ি পৌঁছে দিলো জুনায়না কে।জুনায়না গাড়ি থেকে নেমে বলল,”প্রশান্ত তুই দাড়া আমি উপরে গিয়ে তোর পেনড্রাইভ টা নিয়ে আসি।”

“দরকার নেই তুই কাল আমার অফিসে গিয়ে দিয়ে আসিস।এখন গিয়ে বিশ্রাম কর।”

জুনায়না সুর টেনে বলল,”ওহ ভালো কথা তোর অফিসের কয়েকটা হ্যান্ডসাম দের সাথে কাল দেখাও হয়ে যাবে এই সুযোগে।”

প্রশান্ত দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ল।

.
আইসিইউ থেকে বেরিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে লিফটের সামনে গিয়ে ঘাড় কাত করে দাঁড়ালো ফাইজ।লিফটের দরজা খুলতেই ফাইজ চমকিত কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,”এ তো সেই অসভ্য মহিলা।”

জাহরা ভ্রু কুচকালো বলল,”এইযে আপনি কী লিফটে প্রবেশ করবেন নাকি এমন খাম্বার মত দাড়িয়ে থাকবেন?”

ফাইজ লিফটের ভিতর ঢুকে বলে,”খাম্বা কাকে বলছেন?”

জাহরা অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”খাম্বা কে খাম্বা বলছি।”

“ছোট পুঁচকি মেয়ে আমাকে খাম্বা বলছে ওয়াও ফাইজ ওয়াও!”,বলে পকেটে দুই হাত গুজে দাড়ালো।লিফটের দরজা খুলে গেলো,লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে চলে এসেছে।ফাইজ বড় বড় পায়ে বেরিয়ে গেলো। জাহরা পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”কাকে বলছেন পুচকি?ফাজিল লোক।”

.
ফাইজ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসলে কিছুটা দূরে গাড়ির সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে থাকা তার পরিচিত মানুষের সাথে চোখাচোখি হতেই উচু স্বরে বলে উঠলো,”আমাদের মেহরা ভাবি এইখানে?”,বলে ফাইজ এগিয়ে এলো।

মেহরা ঠিক হয়ে দাড়ালো সৌজন্য হাঁসলো।বলল,”আমি এসেছি আমার বোন জাহরা কে নিতে।ফাইজ কবে ফিরেছেন ইন্ডিয়া থেকে?”

“এইতো কয়েকদিন আগেই ফিরেছি।আরশমান শালাকে তো কত বার করে বললাম দোস্ত তোর এনগেজমেন্টে তো আমি থাকতে পারিনি এই হিসেবে আমি তোর থেকে ট্রিট পাই।কিন্তু বন্ধু পেয়েছি বলতে গেলে শালার কিপ্টার নানা।”,ফাইজ এর কথা শুনে মেহরা মৃদু হাঁসলো।

পিছন থেকে উচ্চ স্বরে মেয়েলী কণ্ঠে,”মেহরা”,বলে ডাকটি কানে ভেসে আসতেই মেহরা ও ফাইজ ডাকের উৎসের দিকে তাকালো।ফাইজ তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলে,”এই অসভ্য মহিলা আমাদের ভাবীকে কেনো ডাকছে?”

জাহরা এগিয়ে আসে মেহরা কে ছাড়া সবে তার নজরে ফাইজ পড়লো।তার ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসলো।মেহরা জাহরার হাত ধরে বলে,”এই হচ্ছে আমার বোন ডক্টর রোমাইজা জাহরা।জাহরা এই হাসপাতালে নতুন জয়েন হয়েছে ।”

ফাইজ ঠোঁট গোল করে সুর টেনে বলল,”ওহ!”

মেহরা পুনরায় বলল,”আর জাহরা ইনি হচ্ছে ফাইজ আজমির।আরশমানের বন্ধু।ফাইজ এই হাসপাতালেরই একজন ডক্টর।ফাইজ আমার আর আরশমানের এনগেজমেন্টের সময় ইন্ডিয়া ছিলো তাই আসতে পারেনি।”

জাহরা তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে চেয়ে দেখলো ফাইজকে।ফাইজ চোখ ছোট ছোট করে জাহরা কে দেখে হেঁসে বলল,”ওহ ভালোই আমার বন্ধুর শালী আমার বেয়াইন।কী বলেন বেয়াইন আপনার সাথে কিন্তু আমার খুব ভালো জমবে।”

জাহরা মিষ্টি করে হাসলো এগিয়ে গিয়ে মেহরার নজর এড়িয়ে ফাইজের পায়ে জোড়ে পা দিয়ে আঘাত করে বলল,”ঠিক বলেছেন বেয়াই আপনার আর আমার খুব ভালো জমবে।”,বলে দ্রুত সরে আসে জাহরা।ফাইজ ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে বলে,”সাংঘাতিক মাইয়া।আমার ঠ্যাং ডা দিসে।”

“কিছু হয়েছে ফাইজ।”,মিষ্টি কণ্ঠে বলল জাহরা।ফাইজ জোরপূর্বক হেঁসে বলল,”নাহ কিছু না।”,থেমে গিয়ে পুনরায় বিড়বিড় করে বলল,”মাইয়া দেখতে নিষ্পাপ হলেও আস্ত একটা শাকচুন্নি।”

জাহরা একই ভাবে বলল,”বারবার কী বিড়বিড় করছেন ফাইজ।”

ফাইজ হাঁসলো বলল,”বিড়বিড় করে বলছি আমার বেয়াইন টা কত্ত ভালো কত মিষ্টি একদম করলার মত।”

জাহরা হাঁসলো প্রতুত্তরে বলল,”আইশ!কী যে বলেন না বেয়াই আর আপনি তো পুরোই নিমপাতার মত মিষ্টি।”

মেহরা ভ্রু কুঁচকে মনে মনে আওরালো,”নিমপাতা আর করলা কবে থেকে মিষ্টি হলো!”

#চলবে

আজ ব্যক্তিগত কারণে দেরী করে দেয়ার জন্য দুঃখিত।কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সকলে।কিছু বিষয় ঘোলাটে রয়েছে পরবর্তী পর্বে তা তুলে ধরা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here