অর্ধ_নক্ষত্র ।৪। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
223

#অর্ধ_নক্ষত্র ।৪।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

আরশমান মেহরার চুলের ভাঁজে হাত ডুবিয়ে দিয়ে আলতো করে কপালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”আপনি যতই নিজেকে আমার কাছে শক্ত ব্যক্তিত্বের দেখান না কেনো আমি জানি তো আমার রূপসী কত টা নরম মনের।”

আরশমান এর স্পর্শে মেহরা ক্ষীণ কেঁপে উঠল মাথা তুলে আরশমানের মুখ পানে তাকালো।হেঁচকি তুলে কাদঁছে মেহরা।আরশমান কে নিজের দুই হাতে স্বেচ্ছায় জাপ্টে ধরে রেখেছে সে।মেহরা কী বুঝতে পারছে সে আজ প্রথম আরশমানকে স্বেচ্ছায় স্পর্শ করেছে।

জুনায়নার ফোন বেজে উঠে ফোন রিসিভ করে কানে চেপে ধরে উগ্র মেজাজে বলে,”কী হয়েছে?”

ওইপাশে থাকা প্রশান্ত ভড়কে যায় বলে উঠে,”এই কী হয়েছে জুনায়না তুই রেগে আছিস?সকালে আমার পেনড্রাইভ নিয়ে কেনো আসলি না।আমার মিটিং ক্যানসেল করতে হয়েছে।”

জুনায়না একই সুরে বলল,”ওই হা রামজাদা হা রামী
কু ত্তা সাফওয়ান মরার আর সময় পায় নাই দোস্ত আজকেই মরসে।ওর জন্যই যাওয়া হয় নাই।”

প্রশান্ত জুনায়নার এহেন রাগান্বিত কথা শুনে নিঃশব্দে হাঁসলো বলল,”রাগ করিস না।আজ রাতে আমি তোকে নিতে আসবো তখন নাহয় পেনড্রাইভ টা নিয়ে নিবো।”

জুনায়নার রাগ মৃদু কমে এলো।সুদূরে হাঁটু ভাঁজ করে দুই মানব মানবী দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে এহেন দৃশ্য যেনো বাকি রাগ টাও জলে পরিনত করে দিলো জুনায়নার।জুনায়না মুগ্ধ কণ্ঠে বলল,”জানিস প্রশান্ত আজ মেহরা নিজে থেকে আমাদের আরশু বাবুকে জড়িয়ে ধরেছে।দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।”

“তুই ওদের দিকে তাকিয়ে আছিস নাকি?নির্লজ্য মাইয়া নজর সড়া।”, ওইপাশ থেকে প্রশান্ত কথাটি বলতেই জুনায়না হাঁসলো।

আরশমান নিজের হাত দুটো মেহরার থেকে আলগা করে মেহরার এলোমেলো চুল গুলো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সযত্নে হাত খোপা করে দিলো।মেহরা তার চোখের জলে সিক্ত ভারী নেত্রপল্লবে তাকিয়ে আছে আরশমানের মুখ পানে আর একের পর এক হেঁচকি তুলছে।ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসলো
আরশমান মেহরার রক্তিম মুখশ্রীর পানে চেয়ে থেকে বলল,”এমন করে জড়িয়ে ধরে থাকলে তার উপর আপনার এই রক্তিম মুখ খানা হায় আমাকে মেরে ফেলবেন আপনি?সব মিলিয়ে কিন্তু আমার নিষিদ্ধ অদম্য ইচ্ছে গুলোকে জাগিয়ে তুলছেন রূপসী।আমি কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।”

মেহরা ক্ষীণ ভ্রু কুঁচকে ফেলে।সবে তার মস্তিষ্কে হানা দিয়েছে সে কী করে ফেলেছে।তৎক্ষণাৎ আরশমানকে ছেড়ে উঠে দাড়ায়।চোখের সামনে চলে আসা ছোট ছোট অবাধ্য চুল গুলোকে কানের পিছনে ঠেলে দেয়।অসস্তি লাগছে মেহরার।মেহরা এমন অসস্তি বোধ আগেও একবার হয়েছিল যেইদিন আরশমানকে প্রথম দেখেছিল সে।এত সবের মাঝে মস্তিষ্কে সাফওয়ান এর সাথে তার অতীত এর স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠলো।

অতীত …..

আকাশ কালো মেঘে ঢেকে এসেছে শীতল বাতাস উত্তর দিক থেকে ছুটে আসছে।বারংবার বজ্রপাতের শব্দে কেঁপে উঠছে মেহরা।ঘড়িতে দশটা ছুঁইছুঁই।বেশি সময় না নিয়েই প্রবল বেগে বৃষ্টি ধরণীতে নেমে আসে সঙ্গে সঙ্গে কাকভেজা হয়ে যায় মেহরা ও তার সঙ্গে থাকা সাফওয়ান।

মেহরা সাফওয়ানের কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে বলে,”সাফওয়ান সাবধানে বাইক চালাও নাহয় আজ দুজনেই অক্কা পেয়ে যাবো।”

সাফওয়ান হেঁসে উচু স্বরে বলে,”আরেহ আমার মহুয়া এত ভাবছো কেনো তোমার সাফওয়ান থাকতে তোমার এত জলদি অক্কা পাওয়া হচ্ছে না।”

“বলাও যায় না সাফওয়ান কার মৃত্যু কখন আসে।”

সাফওয়ান জোরে ব্রেক কষে বাইক থামিয়ে ধমকে বলে,”নামো বাইক থেকে বাড়ি চলে এসেছে তোমার।”

মেহরা মুখ ছোট করে বাইক থেকে নেমে দাড়ালো কাঁপতে কাঁপতে করুন কণ্ঠে বলল,”রেগে যেও না আম সরি।এমন হুট করে কেনো রেগে যাও বলো তো? সরি সরি।”

সাফওয়ান মেহরার মুখ পানে তাকিয়ে হো হো করে হেঁসে ফেলে মেয়েটা তার রাগ দেখে মুহূর্তের মধ্যে কত টাই না উতলা হয়ে উঠে।সাফওয়ান তার গায়ে থাকা জেকেট খুলে মেহরার গায়ের উপর দিয়ে দেয়।মেহরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”আমাকে সরি বলার সময় ইন্সপেক্টর রানীর সকল দাম্ভিকতা কোথায় চলে যায়?”

মেহরা অদূরে কণ্ঠে বলে,”তোমার কাছে এলে দাম্ভিকতা কীসের?আমি তো অদূরে হয়ে উঠি।”

সাফওয়ান মৃদু হাসলো।মুহুর্তেই ব্যাস্ত কণ্ঠে বলল,”বুঝেছি।মহুয়া জলদি বাড়ির ভিতরে যাও কাকভেজা হয়ে গিয়েছ তুমি।আর কিছুক্ষণ এই বৃষ্টিতে এমন করে দাড়িয়ে থাকলে তোমার শরীর খারাপ করবে।”

“ঠিক আছে যাচ্ছি।তুমি সাবধানে বাইক চালিয়ে যেও।”,বলে মেহরা বাড়ির ভিতরে চলে যায়।সাফওয়ান দ্রুত বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।

.
সাফওয়ান তার কলেজ জীবনে এক দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল মেহরার কে।দিনটি ছিলো ছুটির দিন গুরুত্বপূর্ণ এক কাজে সাফওয়ান কলেজে গিয়েছিল।কলেজ আসার পরমুহুর্তেই পাশে থাকা ছোট পুকুরটিতে তার নজর আটকে যায়।মেহরা পানিতে ডুবে যাচ্ছিলো অসহায়ের মত সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল।কয়েকজন মেয়ে ছিলো দূরে দাড়িয়ে,তারা দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছিল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিল না মেহরা কে।সাফওয়ান হাতে থাকা ব্যাগ ফেলেই ছুটে যায় দুইএক না ভেবেই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মেহরা কে ধরে তুলে আনে।মাঠের এক পাশে এনে মেহরা কে বসিয়ে দিলে সাফওয়ান লক্ষ্য করে সুদূর থেকে দৌড়ে আসছে একজন ভদ্র মহিলা ও একজন পুরুষ।তারা দুজন কাছে এসেই একসাথে মেহরা কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো,পুরুষটি সহসা কেঁদে ফেলল বলল,”মেহরা মা ঠিক আছিস।কী করে হলো এমন?”

মেহরা হাঁসলো তার বাবার কান্ড দেখে,বাবার আদরের মেয়ে মেহরা ছোট খাটো ব্যথা পেলেই সে সব কিছু মাথায় তুলে নেয় আজ মেয়ের এই অবস্থা সে চরম ভয় পেয়েছে।মেহরা হেঁসে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলল,”দেখো বাবা আমি ঠিক আছি।এইযে এই ছেলেটা সাহায্য না করলে আজ হয়তো ঠিক থাকতাম না।”

মেহরার বাবা সাফওয়ান এর দিকে তাকালো ভিজে চুপসে আছে সাফওয়ান।মেহরার বাবা ভেজা কণ্ঠে বলল,”তুমি চৌধুরী বাড়ির ছেলে সাফওয়ান চৌধুরী না?”

সাফওয়ান নম্র স্বরে বলল,”জি আঙ্কেল।আপনারা এই গ্রামের?চিনতে পারলাম না আপনাদের।”

মেহরার বাবা এক হাত বাড়িয়ে সাফওয়ানের মাথায় হাত রেখে বলল,”অসংখ্য ধন্যবাদ বাবা আমার মেয়েটাকে সাহায্য করার জন্য।আমি মাহিদ শেইখ।
আমার বাবা সুলায়মান শেইখ তুমি হয়তো চিনবে।আমরা শহর থেকে এইখানে বাবার কাছে অনেক বছর পর এসেছি।”

সাফওয়ান অমায়িক হেঁসে বলল,”ওহ আপনারা শেইখ বাড়ির।সুলায়মান দাদু কিন্তু খুব ভালো।”

মেহরা তার বাবার বুকে মাথা রেখে আড় চোখে দেখলো সাফওয়ান এর অমায়িক হাঁসি।তারপর থেকেই শুরু হলো তার মনে সাফওয়ান কে নিয়ে প্রণয়ের সূত্রপাত।মেহরার পরিবার শহরে যাওয়ার আগ অব্দি প্রতিদিন নিয়ম করে সাফওয়ান যেত মেহরার সাথে দেখা করতে।সাফওয়ান’ও জড়িয়ে পড়ল ধীরে ধীরে মেহরা প্রণয়ের সুতোয়।মেহরার পরিবার যখন শহরে চলে এলো সাফওয়ান মেহরার শহরে আসার কারণ খুঁজে বের করতে লাগলো।ভার্সিটি হিসেবে ঢাবি কে বেছে নিলো সে,পরীক্ষা দিয়ে টিকে গেল সাফওয়ান।তারপর থেকে শুরু হলো মেহরা সাফওয়ান এর প্রণয়ের পর্ব।মেহরার ইন্সপেক্টর পদ টি পাওয়ার পর অনেক বার কঠিন বিপদ থেকে মেহরাকে বাঁচিয়েছে সাফওয়ান।এক সময় সাফওয়ান রাজনীতিতে প্রবেশ করে আলোর পথে থাকতে চাইলেও তাকে অন্ধকার পথে টেনে নিয়ে যায় কিছু কুৎসিত মনের লোক।কুৎসিত মনের মানুষ গুলো সাফওয়ান কে দেশ দ্রো হী বানিয়ে তোলে।খারাপ কাজে লিপ্ত হতে শুরু করে সাফওয়ান,মেহরা কে
পা চা র করে দেয়ার মত খারাপ ভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে কিন্তু এক অদৃশ্য শক্তি সাফওয়ানকে এহেন খারাপ কাজটি করতে অবাধ্য করে তুলে,চেয়েও যেনো পারে না সাফওয়ান।মেহরার সামনে এসে দাড়াতেই আগের নিষ্পাপ সাফওয়ানে পরিনত হয় সে।তার অন্ধকার জগতের সাথে জড়িয়ে যাওয়ার কথা জানতে দেয় না মেহরা কে।ভালোবেসে যেতে থাকে মেহরা কে।

.
মেহরা কাকভেজা হয়ে ফ্লাটে প্রবেশ করে বসার ঘরে যেতেই পাশ থেকে এক পরিচিত পুরুষালি কণ্ঠ তার কর্ণকুহরে ভেসে আসে,”মা এমন ভিজে আছিস কেনো?”

মেহরা চোখ তুলে তাকায় বসার ঘর জুড়ে মানুষ কিন্তু তার দৃষ্টি শুধু মাত্র সবে কথাটি বলা পুরুষের পানে,তার বাবার দিকে।ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার পরেই লন্ডন চলে গিয়েছিল তার বাবা।ঐখানে তার ব্যবসার নতুন বীজ বপন করেছিলেন তিনি।সফল ব্যবসায়ী তে পরিনত হয়েছেন তিনি।মেহরা বড়বড় পায়ে এগিয়ে গিয়ে বাবার সামনে দাড়িয়ে হেঁসে বলে,”বাবা তুমি কখন এসেছ?”

মেহরার বাবা তার কাকভেজা মেয়ের দুই বাহু ধরে বলেন,”সারপ্রাইজ মা, ভোরে তুই বেরিয়ে যাওয়ার পরই আমি এসেছি।আর আমার মায়ের জন্য আরো একটা সারপ্রাইজ আছে।”

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জাহরা মুখ ছোট করে বলল,”ইশ মেয়েকে কেমন করে আদর করে।”

বসার ঘরের সকলে হো হো করে হেঁসে উঠে।মেহরা পূর্ণ দৃষ্টিতে বসার ঘরে বসে থাকা সকলের দিকে চোখ বুলায়।তার পরিচিত কয়েকজনের মুখ দেখে মেহরা অবাক হয়,বিড়বিড় করে বলে,”এই লোকটা সাফওয়ান এর বিপরীত দলের লোক না!আর জুনায়ানা প্রশান্ত ভাই এইখানে কী করছে?”সোফায় আরশমান বসে আছে তার ঠোঁটের কোণে হাঁসি তার পিছনে প্রশান্ত,জুনায়না দাড়িয়ে আছে।আরশমান এর পাশে তার বাবা মা বসে আছেন।

মেহরার বাবা আরশমানের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,”আপনারা বসুন আমি আসছি।”অতঃপর মেহরার বাবা মেহরা কে ধরে বলে,”মা তুই আমার সাথে তোর ঘরে চল।”

মেহরা ও তার বাবা ঘরে চলে এলো সাথে মেহরার মা। মাহরার মা মেহরার হাতে একটি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,”এইটার ভিতরে একটি লাল টুকটুকে শাড়ি আছে তাড়াতাড়ি পরে আয়।শাড়িটা তোর বাবা এনেছে।”

মেহরা অবাক হলো এই সময় শাড়ি পরবে কেনো?কিন্তু বাবা শাড়িটি এনেছে তাই দ্বিরুক্তি না করে জলদি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাড়িটি পড়ে বেরিয়ে এলো।মেহরার বাবা এগিয়ে গিয়ে মেহরার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,”আমার লাল টুকটুকে পরী।”

মেহরা মুচকি হাসলো।মেহরার বাবা মেহরার হাত ধরে কোণায় থাকা সোফায় নিয়ে বসে মেহরার মাথায় হাত রেখে বললেন,”তুই আরশমান কে চিনিস মা?”

“হ্যাঁ চিনি বাবা সাফওয়ান এর বিপরীত দলের লোক উনি।এই এলাকায় উনাকে চিনে না এমন কেউ নেই।”

সাফওয়ান এর থেকেও বেশি এলাকার জনগণ আরশমান কে চায়।সাফওয়ান যখন এমপি পদে দাড়ায় আরশমান তখন তার বাবার ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে যায়।এজন্য তাকে তার দলের লোকের কাছে অনেক কথা শুনতেও হয়।এমপি পদ না পেলেও আরশমান নিজের অর্থ দিয়ে জনগণের পাশে থাকে।

মেহরার বাবা পুনরায় বললেন,”জানিস মা আরশমান এর বাবা হচ্ছেন আমজাদ আমার বিজনেস পার্টনার।উনি অনেক বড় একজন বিজনেসম্যান।লন্ডনেও ওনার বিজনেস এর ছড়াছড়ি আছে।লন্ডনে আমার ব্যাবসা দাড় করাতে উনি সাহায্য করেন।”

মেহরা ছোট করে বলল,”ওহ।”

“আসলে আজকে ওনারা আমাদের বাড়িতে একটি শুভ কাজের জন্য এসেছে।”

মেহরা জিজ্ঞেস করলো,”কী কাজ?”

“আমজাদ ভাই হুট করেই সেইদিন তার ছেলের পুত্র বধূ হিসেবে তোকে চাইলেন।তার বাড়ির রানি করে নিয়ে যেতে চান তোকে।আরশমান ছেলেটা খুব ভালো মা।তাই আমি দ্বিরুক্তি করলাম না।ওনারা চাইলো আজ ঘরোয়া ভাবে তোর আর আরশমান এর এঙ্গেজমেন্ট করবে।তাই টিকিট কেটেই চলে এসেছি আমি।”

মেহরার কর্ণকুহরে বজ্রপাতের ন্যায় কথাটি ঝংকার তুললো।মেহরা মৃদু হেঁসে বলল,”কী বলছো বাবা?বাবা তুমি তো জানো সাফওয়ান আর আমার ব্যাপারে।”

মেহরার বাবা মেহরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,”তুই তো বলতি মা আমি যাকেই তোর জন্য পছন্দ করবো তুই তাকেই খুশি খুশি বিয়ে করে ফেলবি।আর শোন মা আমি কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত নেয় নি,সাফওয়ান তোর জন্য সঠিক মানুষ না মা।দয়া করে আজকে আরশমান এর সঙ্গে এঙ্গেজমেন্ট টা করে নে।”

মেহরার নিজেকে পাগল পাগল মনে করলো,কী করবে সে?বাবার সিদ্ধান্ত কে বেছে নিবে নাকি সাফওয়ান? মেহরা তো তার বাবা কেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।মেহরা কিয়ৎক্ষণ চুপ করে থেকে চোখের কোণে চলে আসা জল দুই হাতে মুছে হেঁসে বলে,”বাবা তুমি যা বলবে তাই হবে।”

খুশিতে মেহরার বাবার মুখশ্রী জ্বলজ্বল করে উঠলো।

.
মেহরাকে আরশমান এর পাশে বসানো হলে মেহরা অসস্তি বোধ করে।আরশমান মৃদু কন্ঠে বলে,”অসস্তি বোধ করবেন না নিজেকে সামলে নিন মেহরা।আপনি এই আরশমান এর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত যাবে জড়াতে যাচ্ছেন।”মেহরা ভড়কে গেলো আড় চোখে তাকালো আরশমানের দিকে।উজ্জ্বল গৌড় বর্ণের মানুষটি তার দিকেই তাকিয়ে আছে।দ্রুত চোখ সরিয়ে দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে নিক্ষেপ করলো মেহরা।

কিছু মুহূর্তের মধ্যেই আরশমান এর সাথে মেহরার এঙ্গেজমেন্ট হয়ে যায়।

আরশমান মেহরার বাবার সাথে আলাদা করে কথা বলতে চলে যায়।মেহরার বাবা আরশমানের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,”ধন্যবাদ বাবা।সাফওয়ান যে এত খারাপ হবে আমার ভাবনার বাইরে।কী করে ও আমার মেয়েকে পাচার করে দেয়ার কথা মাথায় আনলো তার উপর খারাপ মানুষদের সাথে জড়িয়েছে ও।তুমি না বললে এইসব থেকে অজানা থেকে যেতাম আমি।”

আরশমান ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে নম্র স্বরে বলল,”মেহরা আমার দায়িত্ব বাবা।আপনি একদম চিন্তা করবেন না।”

মেহরার বাবা সস্তির নিশ্বাস ফেললেন।

কয়েকদিন আগে আরশমানের বাবা নিজে থেকেই আরশমানকে মেহরার ছবি দেখায়।তারপর থেকেই আরশমান দূর থেকে পরখ করতে থাকে মেহরা কে।মনের মাঝে মেহরার প্রতি এক সুপ্ত অনুভূতি জেগে উঠে।মেহরার সঙ্গে সাফওয়ান কে একদম পছন্দ হয় না তার।সাফওয়ান সম্পর্কে সকল তথ্য বের করে আনে সে।যখনই জানতে পারে সাফওয়ান গোপনে খারাপ কাজের সাথে যুক্ত নারী পা চা র করছে সঙ্গে মেহরা কে পা চা র করার ইচ্ছা তখনই সকল কিছু তার বাবাকে জানায় আরশমান।আরশমান এর বাবা মেহরার বাবাকে দ্রুত চলে আসতে বলেন,মেহরা কে সাফওয়ান থেকে দূরে রাখার এই একটি পথ খুঁজে পেলেন মেহারর বাবা তা হলো আরশমান।

.
সেইদিন রাতেই ফোন করে ভাঙ্গা কণ্ঠে সাফওয়ান কে সকল কিছু জানায় মেহরা।সাফওয়ান সেই রাত থেকে পাগল হয়ে উঠে পরের দিনই মেহরার কাছে যেতে চায় বারবার আরশমান বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

সাফওয়ান পাগল হয়ে যায় তার এই দুর্দশায় তারই বিশ্বস্ত লোক আসিফ তাকে ড্রা গ স দিতে শুরু করে।ড্রা গ স শরীরে প্রবেশ মাত্রই সাফওয়ান হিং স্র হতে শুরু করে।আরশমানকে খুন করার মত পরিকল্পনা করে বসে সে।যেদিন সাফওয়ান আরশমানকে খু ন করার জন্য তাঁর বাড়িতে চলে যায় সেইদিন আরশমানের বাবা বাঁধা হয়ে দাঁড়ান।তাতে সাফওয়ান আরশমানের বাবার করলার চেপে ধরে।তখনই আরশমান সাফওয়ানকে তার বাবার থেকে ছাড়িয়ে এলোপাথাড়ি মা র তে শুরু করে এক সময় নিজে থেকে থেমে গিয়ে আরশমান দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”আমি তোকে এতদিন যাবৎ কিছু বলি নি সাফওয়ান।কিন্তু তুই আজ আমার বাবার গায়ে হাত দিয়েছিস তুই আদও জানিস তুই কত বড় ভুল করে ফেলেছিস।এই ভুল তোর মৃ ত্যু অব্দি ডেকে আনতে পারে।”

আরশমানের বাবা এগিয়ে এসে আরশমানকে সরিয়ে আনে।আরশমান চিৎকার করে বলে,”বাবা ছাড়ো বলছি ওর সাহস কী করে হলো তোমার গায়ে হাত দেয়ার?”

সেইদিন আরশমানের বাবা আরশমানকে আটকে রাখে যার ফলে সাফওয়ান বেঁচে যায়।কিন্তু কয়েকদিনের মাথায় হঠাৎ জানা যায় সাফওয়ান নিখোঁজ।সাফওয়ান নিখোঁজ হয়েছে তা নিয়ে মেহরার সন্দেহ হয় আরশমানকে।এঙ্গেজমেন্ট এর পরেরদিন থেকেই মেহরা আরশমানের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলে না।সাফওয়ান এর অপকর্মের কথা আরশমান ও তাদের দুই পরিবার ছাড়া জানে না কেউ মেহরাও জানে না।তাইতো মেহরা ক্ষিপ্ত হয়ে থাকে আরশমানের উপর।

বর্তমান..

আরশমান এগিয়ে গিয়ে মেহরার দুই বাহু ধরে হাঁটা শুরু করে।বলে,”আপনি কিছু খেয়েছেন এখনও?আপনি নাকি আজ খাবার নিয়ে আসেননি?”

মেহরা প্রতুত্তর করলো না।

#চলবে।

কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।অতীত পরতে বোরিং ফিল হয়।আপনাদের কি আজ বোরিং লেগেছে।আজকের পর্বটি যদি গুছিয়ে না লিখতে পারি তাহলে আমি দুঃখিত,ক্ষমা করে দিবেন।

#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓 https://facebook.com/groups/329590663119170/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here