প্রানেশা #পর্ব_৬ #জান্নাত_সুলতানা

0
189

#প্রানেশা
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন]

-“সব কাম কাইজ পারো?”

রাশি সমুদ্রের দাদির প্রশ্নে চুপসে গেলো। সে বাড়িতে কাজ করে নি এমন নয়।করেছে মায়ের হাতে হাতে এটা সেটা এগিয়ে দিয়েছে কিন্তু পাকাপোক্ত ভাবে রান্না টা আয়ত্তে করতে পারে নি।
রাশি কে চুপ করে থাকতে দেখে সমুদ্রের দাদি নাক ছিঁটকে নিজের ছেলে বউয়ের দিকে তাকালো।
সামিরা বেগম মেকি হেঁসে বলল

-“বাচ্চা মেয়ে আম্মা।
আমি নাহয় আপনি যেভাবে আমায় গড়ে নিয়ে ছিলেন আমি ওকে সেভাবে নিজে হাতে গড়ে নিলাম!”

সামিরা বেগম জানে শাশুড়ী তার ভীষণ নরম মনের মানুষ তাই তো এই বয়সে এসে স্বামীর এমন একগুয়ে স্বভাব মেনে নিতে পারছে না বলেই তো জেদ করে বড় নাতির সাথে শহরে পাড়ি জমিয়েছে।তবে একটা সময় ছিল এই সংসার এর সব দায়িত্ব ওনি নিজে পালন করতেন।
সামিরা বেগম শাশুড়ীর দুর্বল জায়গা যে তীর ছুঁড়তে সক্ষম হয়েছে বুঝতে বেগ পেতে হয় না।
সমুদ্রের দাদি গম্ভীর মুখে রাশির দিকে তাকিয়ে বলল

-“জানতো পছন্দ যখন নিজের হয় তখন মানিয়ে নিয়ে সংসার করতে হয়।”

রাশি এই পর্যায়ে মাথা নাড়াল।অতঃপর সামিরা বেগম কে সমুদ্রের দাদি ইশারায় চলে যাওয়ার জন্য।
বেলা অনেকটা গড়িয়েছে।
সামিরা বেগম রাশি কে নিয়ে চলে গেলো।
কমলা বেগম সকালেই এসছে গ্রামে সমুদ্রের বড় ভাই সায়র এর বাসা থেকে। সায়র শহরে যখন লেখা পড়া করতো তখনই একটা এতিম মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে হয়।কিন্তু আজগর শিকদার কিছুতেই সে সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি ছিল না। আর তাই তো কমলা বেগম নিজে বড় নাতির বিয়ে দিয়ে বাড়ি ছেড়ে নাতির বাসায় চলে গিয়েছে।

———-

-“গোসল করবেন আবার?”

রাশি রুমে এসেই দেখলো সমুদ্র ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারে হয়তো ওর আসার আগেই রুমে এসছে।
সমুদ্রে রাশির দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজের হাতের দামী ঘড়ি টা খোলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে ফিরে এসে রাশির সামনে দাঁড়িয়ে চকলেট কালার শার্ট এর বোতাম কয়েকটা বুকের কাছের খোলে রাশির দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল

-“গোসল করেও লাভ নেই তোমার এই রূপের গরম আমার সারা অঙ্গে ঝলসে দিতে সক্ষম।”

সমুদ্র কথা টা শেষ করেই রাশি কে ঝট করে কোলে তুলে ওয়াশ রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
রাশি হকচকিয়ে উঠলো ঝটপট গলা জড়িয়ে ধরে সমুদ্রের।মুখের লাল আভা ফুটে ওঠে।মেয়ে টা লজ্জা পাচ্ছে সমুদ্র সে দিকে তাকিয়ে হাসলো একবার যা দেখে রাশি থমথমে খেলো।
নিজের লজ্জা রাঙা মুখ লুকিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে জিগ্যেস করলো

-“আমাকে কোথায় নিচ্ছেন?
নামান,আপনি আগে যান আমি পরে যাচ্ছি।”

-“উঁহু, এক সাথে হবে। কোনো কথা নয়।”

সমুদ্র শুনে না রাশি কথা নিজে হাতে বউ কে গোসল করিয়ে গায়ে একটা টাওয়াল পেঁচিয়ে দিলো।অতঃপর ওয়াশ রুম হতে বেড় করে দিয়ে নিজেও মিনিট সাত মিনিট এর মাথায় বেড়িয়ে এলো।
রাশি তখন মাত্র সাদা রঙের থ্রি-পিস টা গায়ে জড়িয়ে ওড়না গলায় ঝুলাতে যাচ্ছিল।সমুদ্র কে দেখে সেটা আরও তড়িঘড়ি করে গায়ে পেঁচিয়ে নিলো।
সমুদ্র ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠলো। এগিয়ে এসে রাশি বরাবর দাঁড়িয়ে কণ্ঠে খাদে এনে বলল

-“যার সব কিছুতে আমি কাল রাতেই আমার ছোঁয়া লেপ্টে দিয়েছি।যার সারা অঙ্গে আমার ঠোঁটের ছোঁয়া তার এমন লজ্জা সাজে না বউ।”

রাশি কানে যেনো কেউ গরম তেল ঢেলে দিয়েছে।চোখ বড় বড় করে সমুদ্র’র দিকে একবার তাকিয়ে পরক্ষণেই লজ্জায় মাথায় নুইয়ে নিলো।
সে এই বারো ঘন্টায় ঠিকে বুঝে নিয়েছে সমুদ্র ভাই যে ভীষণ ঠোঁট কাটা লোক আগে তো এমন মনে হয় নি।
রাশি নিজের এমন উদ্ভট চিন্তা ভাবনা নিজেই বিরক্ত হলো।আগে বিয়ে হয়ে ছিল যে এমন হওয়ার কোনো কারণ পাবে।

-“আচ্ছা কোনো ব্যাপার না আজ রাতে না হয় আবার মনে করিয়ে দেব সব।”

-“আপনি চুপ করুন প্লিজ।”

রাশির লজ্জায় চোখ বন্ধ তবে কণ্ঠ করুন যা দেখে সমুদ্র হাসি পেলো।
তবে হাসলো না।
এগিয়ে গিয়ে বউ কে টেনে নিজের বক্ষদেশে আনলো।
রাশির নরম সত্তা সমুদ্রের প্রসস্থ বুকে এসে ঠেকালো।রাশি তৎক্ষনাৎ শিউরে ওঠে।সমুদ্র বউয়ের মুখ উঁচু করে ডান হাত দিয়ে ধরে অতঃপর নিজের শক্ত পুরুষালী ঠোঁটের ভাঁজে চেপে ধরে।
রাশি আলগোছে চোখ বন্ধ করে।কাল রাতে মেয়ে টা যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছে হয়তো প্রথমবার তাই।
দীর্ঘক্ষণ চুম্বন আবদ্ধ হয়ে সমুদ্র ঠোঁট ছেড়ে রাশির গা হতে ওড়না টেনে খোলে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
গলায় ঘাড়ে বুকের ভাঁজে অজস্র চুম্বন করতে লাগলো।
রাশি যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।
সমুদ্র বউয়ের ভালোবাসার মাঝে যক্ষুনি গভীর মত্ত ঠিক তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।রাশি সমুদ্র থেকে ছিটকে দূরে সরে আসে।সমুদ্র বিরক্ত হয়।
রাশির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রাশি দরজার দিকে ইশারা করে। সমুদ্র নিজের ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে কণ্ঠে বিরক্ত এনে ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো

-“কে?”

-“দাদি আপনাগোরে ডাকে।
খাবার খাইতে সবাই বইয়া আছে।”

-“তুই যা আমরা আসছি।”

-“আইচ্ছা।”

কাজের মেয়ে টা চলে গেলো। সমুদ্র নিজেও ড্রেস চেঞ্জ করে রাশি কে নিয়ে বেড়িয়ে এলো।

-“শহরে কবে যাচ্ছো?”

সমুদ্র আজগর শিকদার এর প্রশ্নে মুখের খাবার টা শেষ করে পানির গ্লাস হাতে নিতে নিতে জবাব দিলো

-“আমি একা যাচ্ছি না।
পরীক্ষা শেষ হলে বউ সাথে নিয়ে যাচ্ছি।”

আজগর শিকদার থমথমে খেলো চিন্তিত হলেন চেহারায় তা স্পষ্ট ছাপ।
সমুদ্র সে দিকে তাকিয়ে রইলো।
তার দাদার মনে আবার কি চলছে?

——

-“দেখো ছেলে আগে রাশি আমার কেউ ছিল না।
কিন্তু এখন সে শিকদার বাড়ির বউ আর শিকদার বাড়ি সাথে জড়িত থাকা মানেই আমার সম্মান।তাই রাশি কে পাওয়া বা ওর কোনো ক্ষতি করার কথা ভুলে যাও।
অন্য কাউ কে খুঁজ।
রাত অনেক হয়েছে তোমরা এখন আসতে পারো।”

লতিফ মেম্বার ঘাড় নাড়ে।তবে ময়নাল তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলল

-“নিজের নাতির পক্ষে চলে গিয়েছেন!
কিন্তু তাতে আমার কি আমি কিন্তু সুযোগের অপেক্ষা থাকব।”

-“না থাকবে না।
নিজের জীবন হারাতে না চাইলে আমার নাতির সাথে লাগতে এসো না। চোখ কান খোলা রাখ আর অনেক উপায় কিন্তু রয়েছে।সুন্দরী মেয়ের অভাব পড়ে নি গ্রামে।”

কি ইঙ্গিত করলে আজগর শিকদার?
ময়নাল বুঝতে পারে না। লতিফ মেম্বার নিজেও অদ্ভুত নয়নে তাকিয়ে রইলো আজগর শিকদার এর দিকে।

-“বাড়ি যাও।”

লতিফ মেম্বার সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ছেলে কেও ইশারায় উঠে আসতে বলে।
ময়নাল যে বেজায় ক্ষেপে আছে বুঝতে পারে লতিফ মেম্বার।
তবে ছেলের স্বভাব আর ভালো করতে পারলো না কথা গুলো ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
অতঃপর বেড়িয়ে যা।
রাত প্রায় সাড়ে বারো টা রহমত আলী স্যার এর পাশে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো

-“স্যার বাড়ি যাই?”

-“ওহ হ্যাঁ, আমি যাচ্ছি। ঘর টা লক করে যেয়েও।”

আজগর শিকদার সিঁড়ির কোঠার নিচের রুম হতে বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রহমত আলী নিজেও রুম লক করে চলে গেলো।

——-

রাশি সমুদ্র’র উন্মুক্ত বুকের উপর শুয়ে আছে।
গায়ে একটা সমুদ্র’র কালো শার্ট।ঘন্টা খানিক্ষণ আগেই বউ কে শাওয়ার নিয়ে নিজে হাতে সব করে দিলো।
কালও মেয়ে টা লাস্ট পর্যায়ে এসে একদম নেতিয়ে গিয়েছিল আর আজও তাই হলো যদিও সমুদ্র আজ রাশির কাছাকাছি যেতে চায় নি তবে বউয়ের উস্কানিমূলক সারা পেয়ে কোনো স্বামী চুপ করে থাকতে পারবে না সমুদ্র নিজেও পারে নি।

-“সরি বউপাখি।
কিন্তু দোষ টা তো তোমার নিজের এই শরীর নিয়ে আমাকে কামনা করেছো।আর এখন সেটার ফল তো ভুগ করতে হবে।”

কথা গুলো শেষ করে সমুদ্র রাশির মাথায় চুমু খেলো।পর পরই ভাবলো শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন গা কেমন করছে। বউ কে গোসল করিয়ে সে নিজে তো আর করার সময় পেলো না বউ কে ঔষধ খাইয়ে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়েছিল। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে সমুদ্র
নিজের উপর হতে রাশি কে সরিয়ে বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।

#চলবে……

[রাতে আরেক পর্ব আসতে পারে।আবার না ও পারে!]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here