প্রানেশা #পর্ব_৫ #জান্নাত_সুলতানা

0
82

#প্রানেশা
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন]

রাশি নিজের একটা হাত সমুদ্র’র কাঁধে আরেক টা হাতে নিজের কোলের উপর রেখে বসে আছে।গ্রামের অন্ধকার রাস্তায় কেউ কাউ কে দেখতে পাচ্ছে না।যদিও বাইকের হেডলাইট জ্বালানো। ওদের সামনে পেছনে আরও চার পাঁচ টা বাইক আছে।
সমুদ্র খুব ধীরগতিতে বাইক চালাচ্ছে। নিজে কে তার কেমন হাল্কা লাগছে সাথে পরিপূর্ণও মনে হচ্ছে তবে কোথাও একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে যেনো।
সমুদ্র অন্ধকারের মাঝেও ঘাড় টা হাল্কা ঘুরিয়ে কাঁধে রাখা রাশির হাত টার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল

-“হাত টা বুকে রেখে শক্ত করে ধরে বসো।”
বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা করছে।”

সাধারণ কথায় নয় যেনো আদেশ করলো।
রাশি কিঞ্চিৎ পরিমাপ অবাক হলো।বুকের ব্যাথার কারনও বুঝতে পারলো তবে
আশেপাশে তাকিয়ে আমতা আমতা করে জিগ্যেস করলো

-“আপনি আশেপাশে দেখেছেন?
কেউ দেখলে কি বলবে?”

-“আমি কি প্রেম করছি!
বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। চুরি করছি না।
একটা কথাও না বলে যেটা বলেছি সেটা করো।”

রাশি আর কিছু বলল না সমুদ্র’র কথা মতো কাজ করে। তবে প্রথম প্রথম অস্বস্তি বোধ করলেও আস্তে আস্তে তা ভালো লাগায় পরিপূর্ণ হলো।
মাথা সহ নিজের পুরো শরীর টাই সমুদ্রের উপর ছেড়ে দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে রইলো।
সমুদ্র সশব্দে হাসলো। এতোক্ষণ কাছেই আসছিল না আর এখন দেখো!

——–

রাত নয় টার সময় বিয়ে পড়ানো হয়ে ছিল।বউ নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে দশ টায় পৌঁছাল। রাশির কাছে যেনো সব স্বপ্ন মনে হলো।
কি হওয়ার কথা ছিল আর কি হলো।রাশি যেনো সারাক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিল।
সামিরা বেগম বেশ আদরে করে রাশি কে ঘরে তুলে। সবচেয়ে বেশি অবাক তো রাশি তক্ষুনি হয়েছে যখন শুনেছে
সারাহ নয় মাসের পেট নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ভাইয়ের বাসর সাজিয়েছে।
এক দিক দিয়ে যেমন ভালো লাগছে তেমন ভয়েও হচ্ছে রাশির শুনেছে সমুদ্রের দাদি ভীষণ রাগী মানুষ। যদিও তিনি বর্তমানে গ্রামে নেই শহরে বড় নাতির বাসায় রয়েছে। কাল না-কি আসবে সামিরা বেগম জানিয়েছেন।
সেই থেকে রাশি ভয়ে আছে।
সামিরা বেগম রাশি কে নিজের হাতে নিজের একটা শাড়ী সুন্দর না পড়িয়ে নিজে হাতে খাবার খাইয়ে দিয়ে একদম পুতুল বানিয়ে সমুদ্রের রুমে রেখে গিয়েছে।
সেই কখন থেকে রাশি বিছানায় বসে যত দুনিয়ার কথা আছে চিন্তা করে যাচ্ছে।
ঘড়ির কাটা যখন বারোটার কোঠায় তখুনি দেয়ালে থাকা ঘড়ি টা টুং করে শব্দ করলে তক্ষুনি রাশি অস্থিরতা বাড়তে লাগলো।
এতো ফুল দিয়ে বিছানায় বসে অস্বস্তি হচ্ছে বিধায় বিছানা হতে নেমে সমুদ্র সারা রুমে হাঁটতে লাগলো।বেশ গোছালো রুম টা।
এই গ্রামের এই একটা বাড়িই আছে যেটা সবার থেকে ভিন্ন। বেশ বড় বাড়ি টা তবে অনেক পুরনো দিনের দেখতে পুরনো কোনো জমিদার বাড়ির মতো।
এই বাড়ির জিনিস গুলো সব পুরনো আমলের। সব কাঠের আসবাবপত্র। রাশি ঘর টা ঘুরেঘুরে দেখা শেষ হলেই এটা সাথে এডজাস্ট করা ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল।
এখান থেকে সমুদ্রের বাড়ির মেইন গেইট সহ সম্পূর্ণ বাগান টা খুব সুন্দর দেখা যাচ্ছে।
রাশি চাঁদের আলোয়ে ঝাপসা চোখে সে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
কিন্তু হঠাৎ রুমে শব্দ হলো।
কেউ রুমে এসছে।
রাশির গলা শুকিয়ে এলো। বুঝতে বেগ পেতে হয় না তার সমুদ্র ভাই এসছে।
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলো সমুদ্র নিজের গায়ের সফেদা রঙের পাঞ্জাবি টা গা হতে টেনে খোলে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে ব্যালকনির দিকে আসছে।
রাশি সমুদ্র কে আসতে দেখে দরজার আড়ালে থেকে তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে সমুদ্র ব্যালকনিতে পা রাখার আগেই রাশি রুমের মধ্যে প্রবেশ করে।

-“খাবার,,,

-“আন্টি খাইয়ে দিয়েছে।”

সমুদ্র সব টা কথা শেষ করার আগেই রাশি জানালো।
সমুদ্র স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। টেনশনে ছিলো এতোক্ষণ। একটা কাজে তাকে বাইরে যেতে হয়ে ছিল।আর পাঠিয়ে ছিল আজগর শিকদার।
সমুদ্র আর কিছু না বলে রাশি কে পাশ কাটিয়ে ব্যালকনি হতে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো। রাশি সে দিকে একবার তাকিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানার একপ্রান্তে গিয়ে গুটিশুটি মেরে বসলো।
রাশি নার্ভাস। রুমে ফুল স্পিডে ফ্যান চলছে কিন্তু তার মধ্যে ঘামছে রাশি।
গায়ের পাতলা শাড়ী টার আঁচল টেনে মুখের ঘাম গুলো মুছে নিলো।
লম্বা ভেজা চুল গুলো কেমন হাসফাস লাগছে।
ঘুম টা ফেলে রাশি চুল গুলো আবার হাত খোঁপা করে নিলো।
অতঃপর ঘুমটা টানতে গিয়েও টানে না।
ভাবে সমুদ্র ভাই আসার আগে টেনে নিবে।কিন্তু রাশি কি আর জানত সমুদ্র এক্ষুনি বেড়িয়ে আসবে?
সমুদ্র কোমড়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে অর্ধনগ্ন শরীরে বেড়িয়ে এলো।
হাল্কা গোলাপি রঙের টাওয়াল,ভেজা চুল গুলো এলোমেলো বুকের উন্মুক্ত ভেজা পশম মারাত্মক সুদর্শন দেখাচ্ছে পুরুষ টাকে।
সমুদ্র রাশি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো যা রাশির নজরে পড়তেই হুঁশ ফিরিয়ে।দৃষ্টি সরিয়ে নিলো নিজের উন্মুক্ত রুপ কে ডেকে নিতে বেমালুম ভুলে বসে। যা সমুদ্রের ভেতরটা নাড়িয়ে দিলো বউয়ের এমন দশা দেখে।
এলেমেলো পায়ে এগিয়ে রাশির সামনে দাঁড়াল।
রাশি কিঞ্চিৎ পরিমাণ বসে থাকা অবস্থায় পিছিয়ে গেলো। সমুদ্র সে দিকে তাকিয়ে আবার হাসলো।এই মেয়ের অনুভূতি লুকানোর শক্তি প্রখর। তবে সে ঠিকই টেনেহিঁচড়ে অনুভূতি বেড় করে নিয়েছে।
সমুদ্রের রাশির চুলের দিকে নজর দিতেই দেখলো রাশির চুল পানি রয়েছে। সমুদ্র এর আগেও রাশির চুল অনেকবার দেখেছে।কোমড়ের নিচে সমান চুল যথেষ্ট বড় তাই চুল না মুছলে ঠান্ডা খুব সহজেই যে লাগতে পারবে।
কথা গুলো ভেবেই সমুদ্র রাশি কে জিগ্যেস করলো

-“চুলের পানি মুছো নি কেন?”

-“আন্টি তাড়াহুড়ো করছিল শাড়ী পড়া শেষ খাবার খাওয়ার,,,

রাশি মিনমিন করে উত্তর দিচ্ছিল।কিন্তু সমুদ্র সব টা শুনে না মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে নিজে বিরক্তিকর কণ্ঠে বলে উঠলো

-“কি তখন থেকে আন্টি, আন্টি করছো!
আমি যা বলি তুমিও তাই বলবে।”

রাশি শুধু মাথা নাড়াল।
সমুদ্র রুমেই একটা ছাই রঙের ট্রাউজার আর কালো একটা টি-শার্ট পড়ে নিলো।
নিজের চুল আঁচড়ে রাশির কাছে ফিরে এসে রাশির চুল মুছে দিলো।অতঃপর টাওয়াল নিয়ে ব্যালকনিতে রেখে ফিরে এসে কাঠের আলমারি খুলে সেখান থেকে একটা শাড়ী নিয়ে ফিরে এলো।
রাশির হাতে শাড়ী টা দিয়ে রাশি কে আদেশের স্বরে বলল

-“এটা পড়ে এসো।”

-“আমি শাড়ী পড়তে পারি না।
একটু আগে আন না মানে মা পড়িয়ে দিয়েছে।”

সমুদ্র বেকুব বনে গেলো। সে নিজেও পারে না এসব শাড়ী পড়াতে তাহলে?

-“আচ্ছা থাক কাল সকালে মায়ের কাছে পড়ে নিও।”

রাশি শাড়ী টা নিজের কোলের উপর নিয়ে বসে রইলো। সমুদ্র শাড়ী টা নিয়ে আবার আগের স্থানে রেখে আসে রাশি অসহায় ফেস করে সে দিকে তাকিয়ে রইলো।আজ প্রথম রাতেই লোকটার প্রথম আবদার রাখতে পারলো না ভেবেই মন টা খারাপ হলো।
সমুদ্র শাড়ী রেখে একটা ছোট বক্স হাতে এগিয়ে এলো।সেখান থেকে একটা আংটি বেড় করে রাশীর হাত টেনে ধরে পড়িয়ে দিলো।
রাশি হাতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
যা দেখে সমুদ্র রাশির দিকে তাকিয়ে বলল

-“আমার আপাতত এতটুকুই সামর্থ্য।এটা আমার নিজের ইনকাম এর টাকায় কেনা।
আমি আমার সবটা দিয়ে তেমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করবো।তবে তুমি চিন্তা করো না তোমার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার মতো সামর্থ্য এই সমুদ্র শিকদার এর রয়েছে।”

রাশির কি হলো কে জানে।বিছানা থেকে ওঠে এগিয়ে এসে সমুদ্রের বুকে আলগোছে রাখলো।
সমুদ্র চোখ বনে করে মূহুর্ত টা অনুভব করে।
রাশি হঠাৎ ফুঁপিয়ে উঠলো।
রোধ হয়ে আসা কণ্ঠে বলল

-“আমার বেশি কিছু চাই না।
খুব অল্প কিছু হলেই আমার চলবে শুধু আপনি পাশে থাকলে হবে।
ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে।
সম্পর্ক পরিণয় পাবে না ভেবেই নিজের মনের অনুভূতি গুলো চেপে রেখেছি।”

রাশির কথায় সমুদ্র দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তার দাদা কাজ টা একদম ঠিক করে নি।
কথা টা ভেবেই রাশিকে আরও শক্ত করে চেপে ধরে নিজের শক্ত পোক্ত শরীর টার সঙ্গে। রাশির যেনো শ্বাস বন্ধ হয়ে আসার জোগাড় তবে সমুদ্র’র কথা শুনে রাশি মূহুর্তের মধ্যে শান্ত হয়ে কথা গুলো মন দিয়ে শুনলো

-“ভালোবাসায় ব্যর্থতা আসে।
কিন্তু জেদে তা আসে না আর তুমি হলে আমার সেই জেদ।যেই জিদ আমি তোমাকে আমার করে নিয়েছি, যা কখনো কখনো ভালোবাসা দিয়েও সম্ভব হয় না।”

সমুদ্র নিজের কথা শেষ রাশি কে ছাড়িয়ে নিলো নিজের বাহুডোর হতে।
নিজের দানবীয় হাতের আঁজল রাশির মুখ খানা নিয়ে নিজের পুরো অধর রাশির অধরেন সন্ধি ঘটাল।
দীর্ঘ এক চুম্বনে আবদ্ধ হলো।
রাশির নড়াচড়া করতে ভুলে বসে। শরীর অবস হয়ে আসছে। শরীরে যেনো শক্তি পাচ্ছে না। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।শরীর ছেড়ে দেওয়ার আগেই
সমুদ্র বুঝতে পারে বউয়ের অবস্থা। তাই তো গাল ছেড়ে শক্ত হাতে রাশির সম্পূর্ণ শরীর টা টেনে নিলো নিজের নিকটে।
দুই হাত শাড়ীর ভেদ করে উন্মুক্ত কোমড়ে রেখে উঁচু করে নেয় বউকে।
রাশিও ততক্ষণে সমুদ্র’র গলা জড়িয়ে ধরে।
সমুদ্র রাশি কে সেভাবেই ধরে রেখে এক পা দুই পা করে বিছানার দিকে এগিয়ে আসে।
আস্তে করে রাশিকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসাল।
অতঃপর একটু আগে পরিহিত গায়ের গেঞ্জি খোলে ছুঁড়ে ফেলে ফ্লোরে।
নিজের জমানো সব ভালোবাসা বউয়ের সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দিলো।রাশি নিজেও তা স্বাদরে গ্রহণ করলো।

#চলবে…..

[১৩০০+শব্দ তবুও বলবে ছোট! 😒]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here