#প্রানেশা
#পর্ব_২
#জান্নাত_সুলতানা
-“ইদানীং দেখছি তোর পাখনা গজিয়েছে!
পাখনা কিন্তু সমুদ্র ছাঁটতে জানে।”
সামনে দাঁড়ানো পঁচিশ কি ছাব্বিশ বছরের লম্বা চওড়া যুবক টা মুখে কোনো রূপ জবাব দিলো না।
তবে ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছে।শুধু আজগর শিকদার এর কথায় চুপ করে আছে।
তিনি সমুদ্রের সাথে কোনো রূপ ঝামেলা করতে বারণ করেছে নয়তো আজ সমুদ্র কে ছেড়ে দিত না ময়নাল।গ্রামের অনেক মেয়ের সাথে সে বাজে ব্যবহার করে কিন্তু কেউ তাকে কিছু বলতে পারে না তার কারণ একটাই বাপ মেম্বার গ্রামের।এখন সাথে যুক্তির হয়েছে এলাকার চেয়ারম্যান তাই তো সাহস একটু বেড়েছে। নয়তো কি চেয়ারম্যান এর ছোট নাতি সমুদ্র শিকদার এর জিনিসের প্রতি নজর দিয়ে, এতো সাহস দেখাতে পারতো?
সমুদ্র এবার বাইক এর উপর হতে নেমে দাঁড়ায়।নিজের গায়ের সাদা শার্ট এর হাতা গুটিয়ে কনুইয়ের উপর ভাঁজ করে রাখতে রাখতে গম্ভীর কণ্ঠে দাপটের সাথে বলল
-“দ্বিতীয় বার ওর আশেপাশে ঘেঁষার চেষ্টা করবি না।
জানে মে’রে দেব তাহলে।”
কথা টা বলতে বলতে গিয়ে সমুদ্র আবার বাইকে বসে নিজের সাথে থাকা ছেলেপেলে নিয়ে চলে গেলো।ময়নাল নামক যুবকটার কোনো কথা শোনার অপেক্ষা করে না।
ময়নাল সে দিকে তাকিয়ে শব্দ করে বিচ্ছিরী হাসি হাসলো।
যা আশেপাশের মানুষের কানে খুব বাজে লাগলো।
——
স্কুল আর কলেজ এর পাশেই গ্রামের বাজার রয়েছে। সেখানে আজ একটা সমাবেশ আছে। আর গ্রামের চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে আজগর শিকদার এর উপস্থিতি থাকছে।আর আজগর শিকদার সমুদ্র কে নিয়ে এসছে। সমুদ্র আসতে চায় নি।কিন্তু আজগর শিকদার জোর করেই নাতি কে সমাবেশে নিয়ে এসছে।
সমাবেশ শুরু হওয়ার প্রায় আধঘণ্টা পর কে বা কারা যেনো গন্ডগোল শুরু করে দিলো।এক পর্যায়ে তা হাতাহাতি থেকে মারামারি রুপ নিলো।সব মানুষ জন যে যার জীবন নিয়ে ছুটতে লাগল। আজগর শিকদার কে সমুদ্র সাবধানের সহিত পুলিশের সাহায্য নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিলো।নিজের সাথে থাকা ছেলেপেলে গুলো কে নিয়ে যখন নিজেও নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য উদগম হলো ঠিক তক্ষুনি নজরে এলো রাস্তার ওপারে রাশি আর মিরা দাঁড়িয়ে আছে আর কিছু মেয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। সবার গায়ে কলেজ ইউনিফর্ম পড়া।
ওদের সামনে কয়েকটা ছেলে মিলে আরও কিছু ছেলে কে মারছে। যেকোনো সময় ওদের উপর আঘাত লাগতে পারে। দুজনেই এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে সামনে আসা ছাড়া ডানে পামে কোনো দিকে যেতে পারছে না।
রাশি মিরা সহ আরও কয়েকটা মেয়ে মিলে বাজার কিছু নিতে এসছিল আজ ওদের কলেজে একজন টিচার এর বার্থডে সেই জন্য। কিন্তু এসে যে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে বুঝতে পারে নি কেউ।
মিরা ভয়ে কেঁদে দিয়েছে রাশি কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না সে জন্য বুঝতে পারছে না এখানে কি হচ্ছে মাথায় কিছু ঢুকছে না।
এর মধ্যে হাতে হেঁচকা টানে সামনে তাকিয়ে দেখলো সমুদ্র ওঁকে টানছে সাথে অনেকগুলো ছেলে এসে এখনো মারতে থাকা ছেলে গুলো কে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে।
রাশি সব টা পর্যবেক্ষণ করলো তবে মাথায় যেনো ঘুরছে সব কিছু অন্ধকার দেখছে।
মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগেই সমুদ্র ঝাপটে জড়িয়ে ধরে নিজের শক্তপোক্ত প্রসস্থ বুকে।
মিরা চারপাশে তাকালো।এই বাজারে আরেক গলিতে রাশির বাবা আর ভাইয়ের কাপড় দোকান কিন্তু ওনারও এসে গিয়েছে। এখন কি কোনো ঝামেলা করবে ওনারা?
মিরার ভাবনার মাঝেই রিহান দৌড়ে এসে বোন কে আগলে নিলো। কোলে তুলে নিজের দোকানের দিকে ছুটলো।
সমুদ্র সে দিকে তাকিয়ে রইলো।এতোক্ষণ কোথায় ছিল সবাই এখন দরদ দেখাতে এসছে।
মিরা সমুদ্র কে বলল
-“ধন্যবাদ ভাই।”
কথা টা বলে চলে যেতে নিলেই পেছন হতে সমুদ্র প্রশ্ন করলো
-“নিজের জীবন বাঁচালে ধন্যবাদ পায় কেউ?”
মিরা হাসলো শুধু।
ভালোবাসা সত্যি সুন্দর।রিহান ভাই কবে তাকে ভালোবাসবে আর তার জীবন টাও সুন্দর হবে?”
——–
রাশি কে দোকানে এনে চেয়ারে বসিয়ে মুখে পানি ঝাপটা দিল রিহান।এর মধ্যে রাশির বাবা রিয়াজ মাহমুদ পাশের ফার্মেসী থেকে গ্রাম্য ডক্টর নিয়ে হাজির হয়।
রিহান বোনকে আগলে বসে আছে নিজেও।
ডক্টর টা রাশির ডান হাত টেনে বুড়ো আঙুল দিয়ে কিছু চেক করলো অতঃপর জানালো
-“অতিরিক্ত ভয় আর টেনশনে জ্ঞান হারিয়েছে।
ঠিক হয়ে যাবে সব।”
ডক্টর চলে গেলো।
রিহান দোকানের কর্মচারী দ্বারা ডেকে সিএনজি আনে।ততক্ষণে রাশি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে।
রিহান বোন কে নিয়ে বাড়ি চলে আসে সাথে মিরাকেও আনে।
———
রাত তখন নয় টার বেশি সময় বাজে। আর রাত নয় টা মানেই গ্রামের জন্য অনেক রাত।রাত দশ টা বাজতে বাজতে পুরো গ্রামের মানুষ নিদ্রা ঢলে।
শুধু মাঝে মাঝে দূর হতে শিয়াল কুকুরের ডাক ভেসে আসে।
রাশি নিজের রুমে পড়র টেবিলে বসে।সারা বিকেল শুয়ে ছিল।ভাই আর বাবা মিলে কড়া আদেশ দিয়েছে যেনো কোনো নড়াচড়া না করে। রিয়াজ মাহমুদ তো বিকেলে আর দোকানেই গেলো না। পড়ার মোড় থেকে মেয়ের জন্য ভাজাপোড়া নিয়ে এসে সারা বিকেল মেয়ের সাথে বসে গল্প করেছে। ডক্টর বলে ছিল মেয়ে তার ভীষণ ভয় পেয়েছে তাই তো ভয় কাটাতে যতটা পারে মেয়ে কে স্বাভাবিক রাখার জন্য কতকিছুই না করলো।
রাত আটটার দিকে খাবার খেয়ে মেয়ে কে রুমে ঘুমুতে বলে নিজেও ঘুমুতে গেলো।কিন্তু রাশির ঘুম আসছিল না তাই পড়তে বসে আছে।
সামনেও পরীক্ষা পড়াও দরকার তাই সময় টাকে কাজে লাগাচ্ছে।
রাশি একটা ম্যাথ করলো।
সেটা করা শেষ খাতার পৃষ্ঠা উল্টে আরেক টা করার জন্য ব্যাস্ত হতে জানালায় ঠকঠক শব্দ হলো।
কাঠের জানালা বিধায় রাশি ভাবলো হয়তো গাছের ডালপালা লেগে শব্দ হচ্ছে কারন বাইরে তখন অল্প বাতাসও বইছে।
কিন্তু রাশির ভাবনা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে ভরাট কন্ঠে সমুদ্র ভাই আদেশের স্বরে বলল
-“জানালা খোল চট করে, এখানে ঠিক করে দাঁড়াতে পারছি না।”
জানালা টা রাশির পড়ার টেবিল বরাবর বিধায় কথা গুলো স্পষ্টই শোনা গেলো।আর রাশি তৎক্ষনাৎ চমকে উঠলো। এতো রাতে সমুদ্র ভাই কে সে এখানে কল্পনাও করে নি কখনো।
মনের ভুল ভেবে আবার খাতায় কলম বসাতেই সমুদ্র এবার ধমকের স্বরে ফিসফিস করে প্রশ্ন করলো
-“জানালা খুলবি না-কি আমি ভেঙ্গে ফেলবো?”
রাশির যেনো আবারও চমকাল। সত্যি সত্যি সমুদ্র ভাই এসছে?
রাশির ভাবনার মাঝেই জানালায় শব্দ হলো জোরে এক বার, দ্বিতীয় বার হওয়ার আগেই রাশি জানালার ছিটকানি খোলে পর্দা সরাতেই রাশি কে ঠেলে সরিয়ে সমুদ্র লাফিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।জানালার কোনো গ্রিল না থাকায় খুব সহজেই পারে।
নিজের হাতে থাকা শপিং ব্যাগ ট টেবিলের উপর রেখে বাইরে তাকিয়ে বলল
-“তোরা যা।
আমি বেরুনোর আগে কল দেব তখন আসলেই হবে।”
কে ছিল বাহিরে রাশি জানে না তবে দুই জন মানুষের হাঁটার শব্দ পেলো।সমুদ্র জানালা টা বন্ধ করে নিলো রাশি সে দিকে তাকিয়ে রইলো জলপাই রঙের টি-শার্ট আর ছাই রঙের ট্রাউজার পরিহিত সমুদ্র নামক যুবক টাকে মারাত্মক সুন্দর দেখতে লাগছে।
রাশি আঁড়চোখে তাকিয়ে সব টা পর্যবেক্ষণ করলো।
সমুদ্র জানালা বন্ধ করে রাশি কে বিছানায় বসতে ইশারা করে নিজে রাশির এতোক্ষণ বসে থাকা চেয়ার টায় বসলো।
খাতার দিকে একবার তাকিয়ে ফের রাশির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো
-“শরীর কেমন আছে?”
-“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
রাশি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর করলো।
মেয়ে টা ভয় পাচ্ছে। সমুদ্র বুঝতে পারে স্বাভাবিক করতে দিনের ঘটনা জানতে প্রশ্ন করে
-“ওখানে কেন গিয়েছিলে?”
-“আজ মিতু ম্যাম এর বার্থডে ছিল।
আমাদের গ্রুপের সব মেয়েরা প্ল্যান করেছিল ম্যম কে সারপ্রাইজ দিবে।”
-“সমুদ্র শিকদার কে ভালোবাসো অথচ এই সামন্য কারণে জ্ঞান হারালে!
ভবিষ্যতে যদি এর থেকে বড় কোনো বিপদ আসে তখন কি করবে?”
সমুদ্রের এরূপ কথা শুনে নিজের হাতের আঙুল ওড়না পেঁচাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ সমুদ্রের মুখে এমন কথা শুনে বিস্ফোরণ নয়নে তাকাল রাশি।লোকটা কি সব বলছে?তাদের মিলন যে সম্ভব নয়।পরক্ষণেই রাশি ভাবলো কেন সম্ভব নয়?সমুদ্র ভাই চাইলে অবশ্যই সম্ভব। রাশি কথা টা ভেবেইল আনমনেই জবাব দিলো
-“আপনি পাশে থাকলে আমি সব বিপদের সাথে লড়াইয়ের করতে পারব, সমুদ্র ভাই।”
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/