প্রানেশা #পর্ব_৩ #জান্নাত_সুলতানা

0
91

#প্রানেশা
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা

-“শুনো রিয়াজ।মেয়ের বিয়ে দিয়ে দাও।
মেম্বার এর ছেলে খুব ভালো।”

আজগর শিকদার এর কথার ইঙ্গিত বুঝতে পারে না ঠিক রিয়াজ মাহমুদ।
তবে আটঘাট বেঁধেই যে চেয়ারম্যান আজগর আজ এখানে এসছে সেটা ঢের বুঝতে পারলো।
তিনি না বোঝার মতোই বলল

-“জ্বি চাচা?”

-“মেম্বার লতিফের ছেলে পাত্র।”

চেয়ারম্যান আজগর শিকদার সোফায় বেশ আয়েশ করে বসলেন এবার গা এলিয়ে দিয়ে সোফায় পূর্বের ন্যায় জানালো।
রিয়াজ মাহমুদ এবার পুরোপুরি বুঝতে পারে। তবে মেয়ে কে এতো জলদি বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে নেই।পড়ালেখা করাবে।কিন্তু আজ হঠাৎ চেয়ারম্যান নিজে এলো?আগে তো প্রায়ই খবর পাঠাতো লোক দিয়ে মেয়ে যেনো সামলে রাখেই এই বার্তা দিয়ে।
তবে কি জল বেশি দূর গড়ালো?এমন হলে তো মেয়ে কে তিনি নিজ ইচ্ছে বিয়ে দিয়ে দূরে করবে।তবুও এই চেয়ারম্যান এর মতো মানুষের কাছে আর অপমানিত হবে না।
তিনি মনের কথা মনে রাখলেন মুখে জানালো

-“মেয়ে টার পরীক্ষা মাসের শেষ।”

-“তাতে কি?
ঘরোয়া ভাবে করিয়ে রাখো।
মেয়ের লাগাম দাও,আমার নাতির দ্বারপ্রান্তে যেনো না যায়।
বুঝতে পারছো আমি কি বললাম!”

কঠিন স্বরে জানালো আজগর শিকদার। রিয়াজ মাহমুদ সহজসরল মানুষ গায়ে বেশ লাগলো কথা গুলো। মেয়ে কে আজ একটা কিছু করবেই বলে ভেবে নিলো।
মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম হয়েও কেন বড় পরিবারের ছেলের দিকে নজর দিবে?
আজগর শিকদার চলে যাওয়ার আগে জানালো কাল বাদে এক দিন পর শুক্রবার পরে সেই দিন তিনি মেম্বার আর তার ছেলে কে নিয়ে আসবে। মেয়ে দেখে আংটিবদলে করে যাবে তার এক সাপ্তাহ পর ওনার ছেলে গ্রামে এলে বিয়ে হবে।
রিয়াজ মাহমুদ কোনো জবাব দিলো না। শুধু নির্বিকার হয়ে রইলো।গ্রামের বাজারে দুইটা কাপড় দোকান আছে বড় বড়। একটা ছেলে আর ওনি দেখেন আর একটা ভাড়া দিয়ে রেখেছে এতেই বেশ চলে।তবে ছেলে তার চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে এসছে চাকরিটা হয়ে গেলো দোকান দুইটাই ভাড়া দিয়ে দেবো।ছেলে চায় না বাবা এই বয়সে এসে এতো কষ্ট করুক। বেশ আত্মনির্ভরশীল লোক সাথে সম্মান তার প্রখর সেখানে কেউ বাড়ি বয়ে এসে মেয়ের জন্য তাকে এতো কথা শোনাল।
একটু খারাপ লাগলো।রাগে ক্ষোভে ঘরে গিয়ে স্ত্রীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
রাশির মা রাহনুমা বেগম এতোক্ষণ পর্দার আড়ালে থেকে সব কথা শুনেছে তবে তিনি ভাবতে পারে নি স্বামী এমন কিছু করবে আটাশ বছর বিবাহিত জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো হাত তুলে রিয়াজ।
প্রথম বার ছেলের জন্য আর আজ দ্বিতীয় বার মেয়ের জন্য।রাহনুমা বেগম যতটা না ব্যাথা পেয়েছে তার থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে সাথে মেয়ের উপর অঢেল রাগ।
চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়তেই তিনি তা হাতের তালুর সাহায্য মুছে নিলো।রিয়াজ মাহমুদ স্ত্রী চোখে অশ্রু দেখে যেনো হুঁশ এলো।রাগের মাথায় কাপুরুষের পরিচয় দিয়ে ফেলেছেন বুঝতে পারে। এগিয়ে এসে স্ত্রী হাত ধরে বুকে আগলে রাখলো অনেক্ক্ষণ। রাহনুমা বেগম কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে না সেভাবেই পরে থাকে।তবে মনে মনে মেয়ের জন্য কঠিন শাস্তি বরাদ্দ করে।
পাশের রুমেই ছিল রাশি মায়ের গায়ে বাবা হাত তুলেছে বুঝতে অসুবিধা হলো না।সে তার বাবা কে কখনো মায়ের সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে শুনেনি আর আজ কি না সেই স্বামী তার স্ত্রী গায়ে হাত তুলল।তাও আবার কারণ টা মেয়ে।
আচ্ছা আদৌও কি সেই কারণ!
শুধু কি সেই নিজে দোষী!
সমুদ্র ভাই বুঝি দোষী নয়!
না-কি দোষ সব সময় গরীব আর মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের থাকে!আর বড় লোকদের থাকে না!

———-

-“গালে কি হয়েছে তোমার?”

-“আপনাকে কেন বলবো?”

রাশির এমন জবাব পছন্দ হলো না সমুদ্র নামের যুবকটার।কাল কেও তো এমন কোনো চিহ্ন গালে ছিল না রাতেই তো দেখা হলো তাহলে সকালেই হয়েছে। সমুদ্র চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলো।
সমুদ্র হঠাৎ নিজের কপালে দুই আঙ্গুল ঘঁষে চাপা ধমকে দিয়ে বলল

-“তুমি বলবে না-কি আমি অন্য ব্যবস্থা করবো?”

রাশি সমুদ্রের ধমকে কেঁপে উঠল। পাশে দাঁড়ানো মিরার হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে মিনমিন করে জানাল

-“আম্মা মেরেছে।”

-“কেন?”

ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করে সমুদ্র আবার।
রাশি এবার মুখ খুলল না।পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো। সমুদ্র এবার বেজায় চটে গেলো।খপ করে রাশির হাত টা টেনে ধরে আবার আগের স্থানে দাঁড় করিয়ে হাত টা সাথে সাথে ছেড়ে দিল।

-“সব টা না বলে এখান থেকে এক পাও নড়তে পারবে না।”

-“বায়োলজিতে ফেল এসছে।
তাই মেরেছে।”

সমুদ্র রাশির কথা শুনে হাসলো বোধহয়। তবে রাশির নজরে পড়ল না।
সমুদ্র কি ভেবে যেনো বলল

-“বাড়ি যাও।
আর হ্যাঁ, মিথ্যা বলো না কখনো আমায়।
সত্যি টা জানার ক্ষমতা কিন্তু আমার আছে মাহমুদ বিন রাশি।”

রাশি কথা টা শুনে চোখ তুলে একবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিল।
হ্যাঁ সত্যি তো সে মিথ্যা বলেছে।কিন্তু সত্যি টা বলার মতও নয়।
সমুদ্র নিজের সাথে থাকা বাইক টায় উঠে চাবি ঘুরিয়ে চলে গেলো পেছন পেছন আরও তিন টা বাইক তাকে অনুসরণ করল।রাশি সে দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে।

-“এভাবে আর কতদিন চলবে!
তুই বল নয়তো আমাকে বলতে দে।”

মিরা বলল।
রাশি মিরার কথা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে নিজে বলে উঠলো

-“বাবা বিয়ে দেখছে।
আর তুই ত জানিস এসব সম্ভব নয়।”

মিরা চুপ করে গেলো।সত্যি আজগর শিকদার লোকটা বড্ড পাষাণ।
আজগর শিকদার যাওয়ার পর রিয়াজ মাহমুদ স্ত্রী কে বলে যখন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়ে ছিল তক্ষুনি রাশি মা রাহনুমা বেগম রাশির রুমে আসে আর গত রাতের আগের রাতে সমুদ্রের দেওয়া শপিং ব্যাগে চকলেট আর কিছু ফুল পড়ে ছিল টেবিলে আর সেটা দেখে বুঝতে বাকি থাকে না আজগর শিকদার এতো টা কেন উঠেপড়ে লেগেছেন তাই তিনি রাগের মাথায় মেয়ের গালে থাপ্পড় মেরে বসে পর পরই রাশির টেবিলে থাকা কাঠের স্কেল দিয়েও মেরেছে শেষে রিহান এসে না আদরের বোন কে মায়ের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিল।কথা গুলো মনে হতেই রাশির বুক ভারি হয়ে আসে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে বলে উঠে, এই সবের শেষ কোথায়?

———-

-“শহরে যেতে হবে।
তোমার আব্বা খবর পাঠিয়েছে দাদু ভাই।”

আজগর শিকদার চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে অতঃপর কথা টা জানালো।
সমুদ্র মায়ের হাত থেকে কফির মগ টা হাতে নিয়ে আজগর শিকদার এর বরাবর সিঙ্গেল সোফাটায় বসতে বসতে প্রশ্ন করলো

-“কবে?”

-“আজ রাতে যেতে বলছে।
কাল সকালে মিটিং রয়েছে।”

আজগর শিকদার কথা গুলো বলে আয়েশি ভঙ্গিতে চায়ের কাপে চুমুক বাসালো।
সামিরা বেগম শ্বশুর এর কথা শুনে চিন্তিত হলেন মেয়ে টার নয় মাস চলে প্রেগন্যান্সির যখন তখন যা কিছু হতে পারে। বাড়িতে একটা পুরুষ মানুষ থাকা দরকার।
কথা গুলো ভেবেই তিনি বলে উঠলো

-“কিন্তু আব্বা বাড়তি কোনো পুরুষ মানুষ নেই।
আপনার নাতজামাই পরশু আসবে।”

-“তাতে কি?
দাদু ভাই কাল রাতে না হয় আবার ফিরে আসবে।”

#চলবে……

[অনেকের একটাই প্রশ্ন,প্রথম পর্বে তো রাশির মাঝে সমুদ্র কে ভালোবাসে এমন কোনো লক্ষ্মণ দেখলাম না!আমার প্রশ্ন প্রথম পর্ব কি ভালো করে পড়েছিলেন?রাশির অনুভূতি আমি প্রথম পর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছি।আপনারা হয়তো বুঝতে পারেন নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here