হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶 #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব১৩

0
479

#হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব১৩

চিৎকার করতে করতে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম আমি। ঘামে ভিজে একেবারে জুবুথুবু অবস্থা হয়েছে আমার। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে যেন! বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিলাম। আমার বুক ধরফর করছে ভীষণ। হৃদপিন্ড এতো জোরে বিট করছে যেন মনে হচ্ছে লাফিয়ে বেড়িয়ে পড়ার উপক্রম! দোয়াদুরুদ পড়ে বুকে কয়েকবার ফুঁক দিলাম। মাথার উপরে থাকা সিলিং ফ্যানটা ফুল স্পিডে চলছে কিন্তু তবুও আমি ঘামছি অনবরত।

পুরো ঘর জুড়ে এখন আবছা আবছা অন্ধকারে ছেয়ে আছে। আশেপাশে এলোমেলো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজেকে নিজের ঘরেই আবিষ্কার করলাম। প্রচণ্ড ভয়ে থরথর করে কাপছি এখনো। আমি এখনও বেঁচে আছি তাহলে? এতোক্ষণ যা দেখেছি তা নিছক স্বপ্ন ছিল তবে? সত্যিই কি ভয়ংকর স্বপ্ন! একেবারে জীবন্ত মনে হয়েছিল! এই বুঝি টুপ করে ঝরে গেল আমার তর তাজা প্রাণটা! নিজেকে ধাতস্থ করতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। স্বপ্ন নিছক স্বপ্নই হয়। কিন্তু আমার কাছে এখনো বাস্তব মনে হচ্ছে। এর রেশ কাটেনি এখনো আমার।

আমার চিৎকার শুনে ইতোমধ্যে বাড়ির সকলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে আমার ঘরে। ঘরের আলো জ্বালাতেই আমাকে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে দেখে তাদের ঘুম উবে যায়। সবার চোখেমুখে ফুটে উঠল চিন্তার ভাঁজ। আমি ভীতসন্ত্রস্ত চিত্তে তাকালাম একবার সবার পানে। মা এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। আমি ভয়ে জাগটে ধরি মাকে। মামনি এসে পানিভর্তি গ্লাসটা এগিয়ে দিল আমার দিকে। আমি তা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পুরোটুকু গলায় ঢেলে নিলাম। তারপর জোরেজোরে শ্বাস নিতে থাকলাম আমি।

আলভি ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে চিন্তাগ্রস্থ চিত্তে বলল

-‘ কি হয়েছে মেহু, এই মাঝরাতে এভাবে চিৎকার করছিস কেন?

অতিরিক্ত ভয় পাওয়ার কারণে আমি কোনো কথা বলতে পারলাম না। নির্বিকার হয়ে তাই মায়ের বুকে মাথা এলিয়ে দিলাম। মাথাটা ধরেছে ভীষন। সবটা কেমন ওলোট পালোট লাগছে। একটা স্বপ্ন এতোটা জীবন্ত কীভাবে হতে পারে? যদিও স্বপ্নে যা দেখেছি তা পুরোটাই অবাস্তব ছিল। তবুও ভয় পেয়েছি ভীষণ।

আলভি ভাইয়াদের সাথে ঘুরাঘুরি করে, ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বেজে গিয়েছিল। আমরা ব্রিজ থেকে ঘুরে আবার পার্কে টুকটাক ঘুরে ফিরে হালকা খাবার খেয়ে চলে এসেছিলাম। রাত হয়ে যাওয়ায় ক্যাফেতে আর যাওয়া হয়নি, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাই। এজন্য বাইরে থেকে দেখেই ফিরে এসেছিলাম আমরা। বাসায় ফিরে আর খাওয়া দাওয়া হয়নি। ঘরে এসে ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল, ঘুমও আসছিল না। তাছাড়াও অরনী আর রিশতাও ছিলনা বিধায়, আমার আজ একা একা খুব বোরিং লাগছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একটা সিরিজ দেখা যাক। তো সেখানে একটা সিন ছিল এমন, যেটা আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম। আর তাছাড়াও পার্কের ঐ রোডটায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, দোকানপাট থাকায় প্রায় সবসময়ই কোলাহলপূর্ণ থাকে, ফলে ঐ রাস্তায় একা পেয়ে ক্ষতি হবার সম্ভাবনাও খুব একটা নেই বললেই চলে। কেউ কিছু বললেও কেউ না কেউ তা দেখবেই। অতএব স্বপ্ন অবাস্তবই হয়। স্বপ্ন আসলে মুলত তিন ধরনের হয়ে থাকে। একটা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আরেকটা শয়তানের পক্ষ থেকে আর সর্বশেষ আমরা যা দেখি, বা যা নিয়ে সারাক্ষণ কল্পনায় মগ্ন থাকি তা-ই দেখি। এজন্য গুরুজনেরা বা পরহেজগার ব্যক্তিরা সবসময় ঘুমানোর আগে ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। আর দূষ্স্বপ্ন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বিভিন্ন আমল রয়েছে, যেগুলো পড়লে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তবে আজ সিরিজ দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, খেয়ালই ছিল না। ক্লান্তির কারণে আজ এশার নামাজটাও মিস হয়েছিল।

আদ্রিশ ভাইয়া আমার পাশে এসে বসল। আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত স্বরে বলল

-‘ মেহু, ঠিক আছিস তুই? তোকে এমন লাগছে কেন? কি হয়েছে আমাকে বল।

আমি আদ্রিশ ভাইয়ার দিকে ফিরে ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম

-‘ খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি ভাইয়া।

আদ্রিশ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো হেসে বলল

-‘ বোকা মেয়ে, সামান্য স্বপ্ন দেখে কি কেউ এতো ভয় পায়? স্বপ্ন স্বপ্নই হয়। কখনো বাস্তব হয়না।

আমি ভীতসন্ত্রস্ত কন্ঠে বললাম

-‘ তোমার সাথে এমন ঘটলে তখন বুঝতে ভাইয়া, ঠিক কেমন লাগে!

আদ্রিশ ভাইয়া অধরের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে কিছুটা রসিকতা করে বলল

-‘ এমনভাবে চেঁচালি ভেবেছিলাম তো জ্বিনে আছোড় করেছে তোকে। পরে শুনলাম স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছিস। তো কি দেখেছিস স্বপ্নে? প্লিজ ডিসক্রাইব আস। আমরা অধীর আগ্রহে বসে আছি আপনার মূল্যবান বক্তব্যের জন্যে।

আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে স্বপ্নে দেখা সবকিছু বলে ফেললাম।

সবটা শুনে আদ্রিশ ভাইয়া হো হো করে হেসে ফেলল। বিদ্রুপ করে আমায় বলল

-‘ আরেকটু ঐসব ছাইপাঁশ দেখ, আর এসব উদ্ভট উদ্ভট স্বপ্ন দেখ। উজবুক কোথাকার। মানে সিরিয়াসলি সামান্য একটা স্বপ্ন দেখে এতো ভয় পায় মানুষ! তা তুই যখন বিপদে পড়লি তখন তোর হিরো এন্ট্রি নিয়ে তোকে বাঁচাতে আসেনি?

আমি ভয় পেয়েছি। আমার জীবন মরণ নিয়ে টানাটানি পড়ে গিয়েছিল। এমন ভয়ানক স্বপ্ন দেখে ভয়ে যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত তখন কি হতো আমার? কোথায় শান্তনা দিবে তা না করে আমায় নিয়ে ঠাট্টায় মেতে উঠেছেন তিনি! ওনার থেকে এমন কথা শুনে কষ্টের সাথে সাথে আমার রাগও হলো ভীষণ।

মামনি ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল আদ্রিশ ভাইয়াকে।
আমার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত স্বরে বলল

-‘ ভয় নেই মা। আজ রাতটায় আমি তোর সাথে ঘুমাব। কতো করে বললাম, তোর সাথে আমি ঘুমাই তা তো শুনলি না।

আদ্রিশ ভাইয়া পাশ থেকে বলে উঠল

-‘ স্বপ্নকে স্বপ্ন মনে করে উড়িয়ে দিলেও, একটা জিনিস মনে রাখিস, মায়েদের কথা অমান্য করলে এমনই বিপদে পড়তে হয়।

আমি শুনলাম। ভয়ের রেশটা কেটেছে এখন খানিকটা। নিছক স্বপ্ন ভেবে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম বিষয়টা। তবে আদ্রিশ ভাইয়ার কথাটা মাথায় রাখলাম। তার বলার ধরন ভালো না হলেও, সে আজ পর্যন্ত যা বলেছে তা আমার ভালোর জন্যই বলেছে।

আদ্রিশ ভাইয়া এবার ঠাট্টার ছলে বলে উঠল

-‘ আম্মু ওর সাথে থাকছো থাকো তবে সাবধান! এরপর দেখা গেল আবার কি স্বপ্ন দেখল তখন তোমাকে খাট থেকেই ফেলে দিল।

আদ্রিশ ভাইয়ার কথায় আমি চটে গেলাম এবার। সবসময় এমন ঠাট্টা মশকরা ভালো লাগেনা আমার। থমথমে গলায় বললাম

-‘ স্বপ্ন কখনো সত্যি হয়না। এটা আমিও জানি। তবে যদি সত্যিই যদি বাস্তব হতো তখন তো আমি মরেই…

আমার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই আদ্রিশ ভাইয়া আমায় থামিয়ে, ধমক দিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল

-‘ খবরদার বলছি, এসব উলোটপালোট কথা আর কখনো বলবিনা একদম। কথায় কথায় শুধু মরে যাব মরে যাব, করিস কেন? আমাদের কথা কি একটুও ভাবিসনা তুই? বলি, তোর যখন এতোই মরার শখ তাহলে আমার কাছে আয়, তোর গলাটা টিপে দেই একটু। তুই তো জীবনেও বুঝবি না, তোকে আমি ঠিক কতোটা ভালো…।

শেষোক্ত কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায় আদ্রিশ ভাইয়া।

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শুনে মামনি চোখ গরম করে বলল

-‘ আচ্ছা দেখছিস তো মেয়েটা বেশ ভয় পেয়েছে, আর তুই ওর সাথে এমন ব্যবহার করছিস? অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস দিনদিন। যা নিজের ঘরে যা।

মামনির কথায় আদ্রিশ ভাইয়া আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না। গটগট পায়ের আওয়াজ তুলে নিজের ঘরে চলে যায়। একে একে সবাই যে যার ঘরে চলে যায়। মা এসে লবণ পানি খাইয়ে দেয় আমায়। মামনি দোয়াদুরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে দেয়। কিন্তু ঘুম এলো না আর। তবে শেষরাতের দিকে চোখের পাতায় রাজ্যের ঘুম এসে হাজির হয়। বুঁজে আসে দুই নেত্রের পল্লব। তবে আমার অধরের কোণে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। আদ্রিশ ভাইয়ার অনুভূতিগুলো সম্মন্ধে সব জানা হয়ে গেছে আমার। কিভাবে জানলাম পরে বলবো নাহয়, এখন একটু ঘুমিয়ে নেই🥱

#চলবে~

সবাই রেসপন্স করবেন ❤️ ফলো দিয়ে রাখুন ।

পেইজঃ Bindas Life ✅ ফলো করুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here