#যেখানে_দিগন্ত_হারায়
#পার্ট_৪৩
জাওয়াদ জামী জামী
কাঁচের দরজা ভেদ করে আরমান দেখছে বেডে জীবনমৃ’ত্যু’র সন্ধিক্ষণে থাকা এক মেয়েকে। যে মেয়ে ওর ভালোবাসা পায়ে মাড়িয়ে, ওকে কান্নার সাগরে নিমজ্জিত করে চলে এসেছিল একদিন। আজ সেই মেয়ে জীবনের সব লেনাদেনা পেছনে ফেলে নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে সবাইকে হতাশায় নিমজ্জিত করে। বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল আরমানের। আজ তিনদিন ধরে ও মাশিয়াকে এভাবেই শুয়ে থাকতে দেখছে। কোন উন্নতি নেই ওর। এদিকে বাচ্চারা মাঝেমধ্যেই কান্নাকাটি করছে। ওদের সামলাতে সবাই হিমশিম খাচ্ছে। গতরাতে হঠাৎ করেই ছোট মেয়েটা অসুস্থ হয়ে গেছিল। ওর চিন্তায় সারারাত কেউ দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি। নিজেকে অসহায় লাগছে আরমানের। এমন পরিস্থিতিতে ও আগে কখনোই পরেনি।
” স্যার, এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন? আপনাকে খেতে ডাকছে সুধা। ” মিতুলের ডাকে মাশিয়ার থেকে চোখ ফেরায় আরমান।
” এখন খাবোনা। বাচ্চারা ঘুমিয়েছে? ”
” হুম। ”
” আচ্ছা। ”
” একটা গল্প শুনবেন, স্যার? উমম, একটা গল্প নয়, এটা হবে অনেকগুলো ছোট গল্পের সমন্বয়ে একটা গল্প। ”
মিতুলের হেঁয়ালিপূর্ণ কথা শুনে আরমান চোখ সরু করে তাকায়।
” গল্প? কিসের গল্প? ”
” যে আপনাকে আঘাত দিয়েছে, আপনার ভালোবাসা নিয়ে খেলেছে, তার গল্প। ” মিতুলের চোখ মাশিয়ার দিকে।
আরমান মিতুলের কথার কোন উত্তর দিলনা। ও ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছে সামনে করিডোরের দিকে। ওর দিক থেকে কোন সাড়া না পেয়ে মিতুল বলেই চলল,
” আপনার বাড়ি থেকে চলে আসার সাতদিন পর আমরা মাশিয়াকে দেখি। জানতে পারি ও ঢাকাতেই থাকছে। তখন ওর মধ্যে সুক্ষ্ম পরিবর্তন লক্ষ্য করি আমরা। পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী হয়েছে ও। আগের মত দুরন্ত আর রাগী স্বভাবের কিছুই বিদ্যমান নেই ওর মধ্যে। আমরা ওর এমন পরিবর্তনে বেশ অবাক হয়েছিলাম। আরও অবাক হয়েছিলাম, যখন দেখি ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছে। জিন্স, টি-শার্ট, টপসের বদলে শাড়ি পরছে। একদিন ওর বাসায় গিয়ে দেখলাম, এসি অফ করে মেঝেতে ঘুমাচ্ছে। ওকে এসব জিজ্ঞেস করলে বারবার এড়িয়ে যেত। মলিন হেসে তাকিয়ে থাকত অন্যদিকে। তারপর একদিন জানলাম, ও প্রেগন্যান্ট। ওকে বারবার রিকুয়েষ্ট করলাম আপনাকে জানাতে। কিন্তু ও কিছুতেই রাজি হলোনা। অনেক বোঝালাম। কিন্তু কোন কাজ হলোনা। ওর ভেতর সব সময়ই কিসের যেন একটা ভয় কাজ করত। সেটা আমি হাজার চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি। ”
আরমান অবাক হয়ে শুনছে মিতুলের কথা। মাশিয়ার এতটা বদল হয়েছে শুনে ও সত্যিই অভিভূত।
” প্রত্যাখ্যানের ভয় ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। ও আপনার সাথে চরম অন্যায় করেছিল, আঘাত দিয়েছিল আপনাকে, সেজন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি। ও ভেবেছিল, সব ভুলে আপনার কাছে গেলে আপনি যদি ওকে ফিরিয়ে দেন। আপনার প্রত্যাখ্যান ও সইতে পারতনা। তাইতো দিনের পর দিন রিশাদের বাজে কথা, বাজে ইংগিত, ওর ভাবির করা হাজারও অপমান সহ্য করে এখানেই পরে থেকেছে। যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তখন আলাদা ফ্ল্যাটে শিফ্ট হয়েছে। আপনাকে ও আঘাত দিতে যেয়ে প্রতিনিয়ত নিজেই আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়েছে। ”
তৃষার গলা শুনে আরমান পেছনে তাকায়। কখন যেন তৃষা ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
আরমান এই মুহূর্তে কিছু বলতে ভুলে গেছে। ওর অগোচরে এত কিছু ঘটে গেছে! আজ নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। যদি ও একটাবার মাশিয়ার খোঁজ নিত, তবে মেয়েটার গত দিনগুলো সুখের হতে পারত। একটু একটু করে অনুভব করতে পারত সন্তানদের পৃথিবীতে আসার আয়োজন। ও নিজেও মাশিয়াকে ভালোবাসত। তবে কেন এতটা পাষান হয়ে মাশিয়ার থেকে দূরে থেকেছে? কেন মাশিয়াকে ওর জীবন থেকে চিরতরে দূরে ঠেলে দেয়ার চিন্তা করেছে? করেছে ডিভোর্সের সকল আয়োজন! আজ নিজেকে নিকৃষ্ট স্বামী বলে মনে হচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তৃষার দিকে তাকায় আরমান।
” রিশাদ কি করেছে? আর ওর ভাবির বিষয়টাও জানতে চাই। আজ তিনদিন হয আমি এখানে এসেছি কিন্তু ওর ভাবিকে একবারও দেখিনি। কেন? ” শান্ত অথচ দৃঢ় গলায় জিজ্ঞেস করল আরমান।
তৃষা কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে একে একে সব কথা বলল আরমানকে।
” তবে ওর ভাবি কেন এমন করেছে এটা আমরা জানিনা। ও কখনোই ভাবির সাথে খারাপ আচরণ করেনি। কিন্তু ওর প্রতি ভাবির মনোভাব সব সময়ই বিরক্তিকর ছিল। ” মিতুল কথাটা বলে তৃষার দিকে তাকায়।
” তবে মাশিয়া চায়নি এসব কথা আপনি জানুন। আমি আগেও আপনাকে ফোন দিতে চেয়েছি। কিন্তু মাশিয়া প্রতিবারই আমাকে আটকে দিয়েছে। কিন্তু ফাইনালি আপনি যখন এসেছেন, এসব কথা আপনাকে জানানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করেছি। আপনার জানা উচিত, যে আ’গু’নে মাশিয়া আপনাকে পো’ড়া’তে চেয়েছিল, সে আ’গু’নে ও নিজেই পু’ড়ে ছারখার হয়েছে। যা পুরোনো মাশিয়াকে ভেঙে খাঁটি সোনায় পরিনত করেছে। ” তৃষা মনের যত কথা সব বলে দিল আরমানকে। আজ ও শান্তি পাচ্ছে।
আরমান সব শুনে চুপচাপ তাকিয়ে থাকল কাঁচ-ঘেরা দরজার ভেতরে। রাগে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। কপালের দুই পাশের শিরা দপদপ করছে।
বাচ্চাদের কল্পনা মোর্তাজার কাছে রেখে সুধা শশীকে নিয়ে নিচে গেছে। ওরা ওদের ফ্লাটে যাবে। কয়েকটা প্রয়োজনিয় কাজ সেড়ে ঘন্টা তিনেকের মধ্যেই ফিরবে।
নিচে আসতেই শশীর ফোন বেজে উঠল। ও ফোন নিয়ে একপাশ গিয়ে কথা বলতে থাকল। সুধা ওর অপেক্ষায় রিসিপশন কাউন্টারের একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
” সুধাময়ী, আপনি এখানে! হোয়াট আ সারপ্রাইজ! গত তিনদিন আপনাকে মেডিকেলে কত খুঁজেছি জানেন? কিন্তু আপনি লাপাত্তা। ক্লাসে আসেননি কেন? ”
মেডিকেলের সেই ছেলেকে দেখে ভয়ে সুধার গলা শুকিয়ে আসছে। সুধা ছেলেটির নাম মনে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে পরছেনা। এদিকে অনিক নামের ছেলেটি উত্তরের আশায় সুধার দিকে তাকিয়ে আছে। সুধা সেটা লক্ষ্য করেই আমতাআমতা করে বলল,
” ভাবির বেবি হয়েছে। সেজন্য গত তিনদিন ধরে এখানেই আছি। ”
” ওহ্ রিয়লি! আমার আব্বুর চেম্বার এখানেই। আপনার ভাবির চিকিৎসা করছেন কোন ডক্টর? ”
সুধা খুব করে চাইছে শশী আসুক। ওকে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করুক। মেয়েটা ইতিউতি করে উত্তর দেয়,
” ডক্টর জহুরুল হক। ”
” উনিই আমার আব্বু। আপনার ভাবির নাম বলুন, আমি আব্বুকে তার কথা বলব। হাজার হলেও আপনার ভাবি। বাই দ্য ওয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? ”
” বাসায়। ”
” আপনি চাইলে আমি আপনাকে পৌঁছে দিতে পারি। যাবেন আমার সাথে? বিশ্বাস করতে পারেন আমাকে। সহি সালামতে আপনাকে পৌঁছে দিব। ”
” নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কখনো? চেহারাতো নয় যেন শুকনা ঢেঁড়স। মনে হচ্ছে, গাছ থেকে তুলেই সারাদিন ৫০° রোদের মধ্যে ফেলে রেখেছিল। আর সেজন্যই চেহারা এমন চুপসানো। রাস্তায় যদি কোন ছিনতাইকারী আক্রমণ করে, তবে আপনি এই মেয়েকে রক্ষা করতে পারবেন? ” হঠাৎ সেখানে শশী উদয় হয়ে বলতে শুরু করল।
অজানা, অচেনা একটা মেয়ের মুখে এমন কটুবাক্য শুনে অনিকের মুখটা চুপসে যায়। ও চিরকালই নম্রভদ্র গোছের ছেলে। তাই সহসা কারও কোন কথায় উচ্চবাচ্য করেনা। আজও করলনা। তবে মিনমিনিয়ে নিজের পক্ষে সাফাই দিতে চেষ্টা করল।
” আমি মানছি, আমি একটু হ্যাংলাপাতলা। কিন্তু তাই মোটেও ঢ্যাঁড়সের মত নই। আর তাছাড়া আপনি আমাকে এভাবে বলছেন কেন? কে আপনি? জানেননা, অচেনা কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে নেই? ”
” ষড়ি, ভুল হয়ে গেছে। আপনি ঢেঁড়স হতে যাবেন কেন। আপনিতো কদু, কচি কদু। মাচায় ঝুলে থাকা কদু। যেই কদুকে গ্রামের বউ-ঝি ” রা চিমটি দিয়ে পরখ করে কচি আছে নাকি বুড়ো হয়েছে। তা কচি কদু, আপনি যদি অচেনা মেয়ের সাথে এখানে দাঁড়িয়ে ফ্লার্ট করতে পারেন, তবে আমিও আপনাকে ঢেঁড়স বলতে পারি। ” শশীর কথা শুনে সুধা বেশ মজা পাচ্ছে। ও অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছে।
” ইনি মোটেও অপরিচিত কেউ নন। ইনি আমার জুনিয়র। আমরা একই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করি। আপনিতো দেখছি খুব সাংঘাতিক মেয়ে। আপনাকে বড় করতে বাড়ির লোকজনের বোধহয় অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি ইনার সাথে ফ্লার্ট করছিনা। আপনি শুধুশুধু আমার নামে দূর্নাম করছেন। ”
” আসছে আমার বিশেষজ্ঞ। কে বলেছে আমাকে বড় করতে সবার কষ্ট হয়েছে? আমি সব সময়ই শান্ত, নম্র একটা মেয়ে। এ্যাঁহ্, নিউটন স্যার দুই মিনিট আমাকে দেখেই কতবড় কমপ্লিমেন্ট করছে! ” অনিকের কথা শুনে ফোঁস করে উঠল শশী। সুধার সামনে বেয়াদব লোকটা ওকে ইনসাল্ট করছে। সুধা নিশ্চয়ই বাসায় গিয়ে ওকে পঁচাবে।
” যে পাজি তাকে দুই সেকেন্ডেই চেনা যায়। চেনার জন্য দুই মিনিট অনেক বেশি সময়। আপনি ভিষন ঝগরুটে একটা মেয়ে, এটাও আমি বুঝতে পারছি। ”
” এই যে একে জিজ্ঞেস করুন। আমি যে ভালো, শান্ত, ভদ্র একটা মেয়ে সেটা আপনার এই সুধাময়ী-ই বলে দিবে। দেখে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা। কিন্তু না, এই লোক ভাজা মাছ না উল্টেই খেয়ে নেয়! হসপিটালে দাঁড়িয়ে একটা অবলা, অবিবাহিতা মেয়েকে সুধাময়ী বলে ডাকছে! এমন মিনমিনে স্বভাব হলে সারাজীবন একে সুধাময়ী বলেই ডাকতে হবে। সুধাময়ী যখন এক গন্ডা বাচ্চা নিয়ে এসে আপনার সামনে দাঁড়াবে, তখন কি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, সুধাময়ী এগুলো আপনার জামাইয়ের প্রোডাশন? আমি আপনার মা কারন হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনি আমাকে মামা বানিয়ে দিলেন। কেন সুধাময়ী, কেন? ”
সুধা এবার ফাঁপড়ে পরে যায়। ও চেয়েছিল শশী এসে ওকে উদ্ধার করুক। কিন্তু না শশীই ওকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। মনে মনে হাজারটা গালি দেয় শশীকে। ওর হাত ধরে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শশী শুনলেতো।
অনিক বুঝতে পারছে এই দুরন্ত মেয়েটা সুধার পরিচিত। ওর পরিবারের সদস্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ওর মুখে হাসি এসেও মিলিয়ে যায়। মেয়েটার কথার গতিপ্রকৃতি ভালো নয়। যেকারো সামনে ওকে লজ্জায় ফেলতে পারে মেয়েটা। কয়েক মুহূর্ত ভেবে উত্তর দেয় শশীর কথার।
” আপনার নাম জানতে পারি? আর পরিচয়? এসব জানলে আপনার কথার উত্তর দিতে সুবিধা হতো। ”
” এই আপু, তোমার নাম সুধা শুনে এই ঢেঁড়স তোমাকে সুধাময়ী ডাকছে। আর আমার নাম শশী শুনলে নিশ্চয়ই শশীবালা ডাকবে? একে কি বলব আমার নাম শশী? ” সুধার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল শশী।
অনিক শশীর কথা শুনে হেসে উঠল।
” আপনি নিজের নাম বলেই দিয়েছেন। আবার পারিচয়ও জানিয়ে দিয়েছেন। তবে আপনাকে শশীবালা ডাকবনা এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন। আপনি যে বিচ্চু। এই যে বিচ্চুরানী শুনে রাখুন, আমি ঐ এক গন্ডা বাচ্চার বাবা হতে চাই। বাবা হওয়ার মধ্যে যে অহংকার আছে, মামা হওয়ার মধ্যে সেটা নেই। তাই আসল পরিচয়েই অহংকার করতে চাই। ”
অনিকের কথা শুনে সুধা হা হয়ে গেছে। ওর শরীর কাঁপছে। কেউ যে এত নির্লজ্জ হতে পারে এটা সুধার জানা ছিলনা।
” শশী, তারাতারি চল। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে। ” শশীর হাতে জোড়ে টান দেয় সুধা।
” আরে ছাড়োতো। অসময়ে টানাটানি করার অভ্যাস তোমার গেলোনা। দেখছো যে আমি নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করছি। একটু চুপচাপ থাকবে কিনা, সে টানাটানি শুরু করেছে। ” শশী সুধার হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে যায় অনিকের কাছে।
” নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করছেন কিভাবে? আমিতো দেখছি আপনি আমাদের নিয়ে কথা বলছেন। বুঝতে পারছিনা আমি। ” অনিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞেস করল।
” তা বুঝবেন কেন? আপনার জিনে শুধু ডাক্তারিটাই আছে, বুদ্ধি নেই। আরে ঢেঁড়স, আপনার সুধাময়ীকে যদি আপনার ঘাড়ে বসিয়ে দিতে পারি, তবে আমার বিয়ের রাস্তাও ক্লিয়ার হয়ে যাবেনা? অবিবাহিত বড় বোন রেখে আমিতো আর ভাইয়াকে বলতে পারিনা, আমার বিয়ে দাও। ভাইয়াতো বুঝবেনা অবিবাহিতদের কষ্ট। আর সেজন্যই ঘটকালি করতে চাইছি। আপনাদের বিয়ের ঘটকালি করলে আপনি নিশ্চয়ই আমার ওপর সদয় হবেন। আর উপহার স্বরূপ নিজের বন্ধু অথবা কাজিনদের সঙ্গে আমার সেটিং করিয়ে দিবেন। হয়ে গেল, খাপে খাপ, সদর আলীর বাপ। ” শশী হাতে তালি দিয়ে বলল।
অনিক এদিকওদিক তাকিয়ে সদর আলীর বাপকে খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু কাউকে না পেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কোথায় সদর আলীর বাপ? এখানে কি আছে? ”
অনিকের কথা শুনে সুধা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। আর শশী রেগে আ’গু’ন।
” আরে মিঞা, সদর আলী এখনো দুনিয়ায় ল্যান্ড করেনি। তাকে ল্যান্ড করানোর জন্যইতো ওর বাপকে প্রয়োজন। যাকে এনে দেয়ার দ্বায়িত্ব আপনার। ”
শশীর কথা শুনে সুধার লজ্জায় মরোমরো অবস্থা। এই মেয়ে ছোটবেলা থেকেই ঠোঁটকাটা স্বভাবের। কিন্তু তাই বলে অপরিচিত একজনের সামনে এমন অশ্লীল কথাবার্তা বলবে? সুধা রাগী চোখে তাকায় শশীর দিকে। কিন্তু শশীর ওর চোখ রাঙ্গানিকে পাত্তা দেয়না।
” এবার বলুন, আপনার সুধাময়ীকে কবে নাগাদ চাই? ”
” সত্যিই আপনি ঘটকালি করবেন? ”
” হুঁ। আপনার আব্বুকে গিয়ে বলব, আপনার ছেলে তার সুধাময়ীকে চায়। হয় সুধাময়ীকে দেবেন, নয় ছেলেকে ঘরজামাই রাখার জন্য প্রস্তুত হন। ”
” ওকে। আপনি তাহলে আব্বুকে বলে ফেলুন। নিজের বিয়ের কথা বলতে আমার অনেক লজ্জা লাগে। ” অনিক সত্যি সত্যিই লজ্জা পাচ্ছে।
” ওমা! লজ্জাবতী ঢেঁড়স এই প্রথম দেখলাম! আপনি বাপের ডাক্তারি কোটায় মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন বুঝি? ”
” নাহ্। মোটেও না। আমি সারাদেশের মধ্যে চতুর্থ হয়েছিলাম। ”
” বুঝেছি। বই ছাড়া ভুল করেও মেয়েদের দিকে তাকাননি। আপু, এটার মধ্যে রোমান্টিকতা নাই। বাসর ঘরেও যে পড়তে বসবে সেই গ্যারান্টি তোমাকে দিতে পারি। ”
” বেয়াদব মেয়ে, তুই বাসায় চল। তোকে যদি না থাপড়িয়েছি তবে আমার নাম সুধা নয়। ”
” মিস্টেক। ঐটা সুধা নয় সুধাময়ী হবে। এইযে ঢেঁড়স, গেলাম। আজকেই আপনার বিয়ের কথা বলব। আহাম্মক বাবা-মা নিষ্পাপ বাচ্চাদের কষ্ট বোঝেনা। আঠারো পেরোলেই যে তাদের বিয়ে করাতে হয়, সেটা তারা মানতেই পারেনা। আমার ভাইয়াও সেই আহাম্মকদের দলে। ” শশী আফসোস করতে করতে সুধাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে…