একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায় #Part_46 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
86

#একই_সুরে_প্রেম_আমায়_কাঁদায়
#Part_46
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সজল চৌধুরী আর সায়মা চৌধুরী দুজনেই বসে সমুদ্র ও প্রণালীর ব্যাপারে কি করা যায় সেই নিয়ে আলোচনা করছিল। সজল চৌধুরী বলেন,”আমার মনে হয় পুষ্পা যতদিন থাকবে ততদিন কিছুতেই প্রণালী আর সমুদ্রকে কাছাকাছি আসতে দিবে না।”

সায়মা চৌধুরী নিজের ভাইয়ের সাথে সহমত প্রকাশ করে বলে,”তুমি একদম ঠিক বলেছ ভাইয়া। ভাবি তো চিনে জোকের মতো ওদের পেছনে পড়ে আছে। আর প্রণালীও কেমন যেন নির্জীব থাকে সবসময়। হয়তো ভাবিকে সামলানো ওর দ্বারা সম্ভব নয়।”

সজল চৌধুরী উদ্বিগ্ন স্বরে বলে ওঠেন,”তাহলে কি করা যায় বল তো? কিভাবে আমি সমুদ্র আর প্রণালী কে কাছাকাছি আনব বল? কিভাবে আমি পুষ্পার নজরের বাইরে থেকে এমনটা করতে পারবো?”

সায়মা চৌধুরী কিছুটা ভেবে বলেন,”আমার মনে হয় না ভাবির চোখের সামনে এমন কিছু সম্ভব। তবে হ্যাঁ, তুমি যদি ওদের কে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দাও ভাবির নজর এড়িয়ে তাহলে ওদের কাছাকাছি আসা সম্ভব হবে। হাজার হোক, ওরা বিয়ে করেছে। বিয়ে শব্দটা দুই শব্দের হলেও এর গাম্ভীর্য অনেক। এই দেখো না, আমার স্বামী আমার থেকে ১০ বছরের বড় ছিল জন্য আমি তো বিয়েতে রাজিই ছিলাম না। তোমরা এক প্রকার ধরে-বেধে আমাদের বিয়ে টা দিয়েছিলে। আর এখন সেই স্বামীকেই আমি চোখে হারাই। বিয়ে হলো এমনই একটা সম্পর্ক যেটায় বাধা পড়ার পর স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি অনুভূতি এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। শুধু তাদের কিছু স্পেস দরকার।”

সজল চৌধুরী ভেবে বলেন,”তাহলে আমি একটা কাজ করি। ওদেরকে হানিমুনে পাঠিয়ে দেই৷ তাহলে কাজ হতে পারে? কি বলিস তুই।”

“সেটা তো ঠিক আছে। কিন্তু সবটাই করতে ভাবির নজর এড়িয়ে। কারণ ভাবি যদি একবার ওদের হানিমুনের কথা জানতে পারে তাহলে দেখবা সেখানেও বাগড়া দিতে চলে যাবে।”

“এটা তুই একদম ঠিক বলেছিস। তবে চিন্তা করিস না। এবার আমি এমন প্ল্যান করব যে সাপও মরবে আর লাঠিও ভাঙবে না।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~
পুষ্পা চৌধুরী নিজের ঘরে বসে বসে নিজের কিছু গহনা আর শাড়ি দেখছিলেন। এমন সময় টায়রা তার রুমে এসে বলে,”আন্টি? আপনি ডেকেছিলেন আমায়?”

পুষ্পা চৌধুরী এক গাল হেসে বলে,”আরে টায়রা। এসো এসো আমার পাশে বসো।”

টায়রা পুষ্পা চৌধুরীর পাশে বসে তার সাথে শাড়ি আর গহনা গুলো দেখছিল। হঠাৎ একটা ডায়মন্ড নেকলেস তার পছন্দ হয়ে যাওয়ায় সে সেটা তুলে নিয়ে বলে,”ওয়াও! এটা কত সুন্দর।”

“তোমার পছন্দ হয়েছে?”

“হ্যাঁ, আন্টি। ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

“তাহলে তুমি এটা নিজের কাছে রেখে দাও”

“সত্যি? আমি এটা নিজের কাছে রাখব?”

“হ্যাঁ, রাখো। এমনিতেই এই সব শাড়ি গহনা আমি তো নিজের ছেলের বউয়ের জন্যই রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার আঙ্কেল যে এমন গেম খেলবে সেটা তো আমি জানতাম না।”

কিছুক্ষণ থেমে পুনরায় বলেন,”কিন্তু তুমি কোন চিন্তা করো না টায়রা। আমার সমুদ্রর বউ তো শুধু তুমিই হবে। ঐ মেয়েটাকে আমি এমন ভাবে অপদস্ত আর টর্চার করব যে আর দুদিনও এই বাড়িতে টিকতে পারবে না।”

টায়রা বলে,”তুমি শুধু শুধু একা কেন কষ্ট করতে যাবে আন্টি? ঐ মেয়ের দায়িত্ব তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও। ঐ মেয়েকে আমি এমন শিক্ষা দেব যে বুঝবে টায়রার জিনিসে নজর দেওয়ার ফল কত ভয়াবহ হতে পারে।”

এই বলেই একটা বিশ্রী রকমের হাসি দেয় টায়রা।

~~~~~~~~
প্রণালীর ভীষণ মাথা ব্যাথা করছিল। তাই সে গেস্টরুম থেকে বের হয়ে নিচে এসে কিচেনে ঢুকে নিজের জন্য কফি বানাচ্ছিল। টায়রা কিচেনে প্রণালীকে দেখে তার কাছে যায়। প্রণালী টায়রাকে দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। টায়রা প্রণালীকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে থাকে,”কি নির্লজ্জ মেয়ে তুমি! সমুদ্রর মতো একটা রিচ, হ্যান্ডসাম ছেলে দেখে নাচতে নাচতে তার গলায় ঝুলে পড়লে। তোমার কি একটুও সেল্ফ রেস্পেক্ট নেই? এত অপমানিত হয়ে এখানে পড়ে আছ কেন?”

প্রণালী টায়রার কথায় কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজের কাজ করে যেতে থাকে। এতে টায়রা রেগে গিয়ে প্রণালীকে বলে,”এত ইগো কিসের তোমার? এত ইগো কেন?”

সমুদ্র ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিতে কিচেনে এসেছিল। সেও এসে টায়রার কথা শুনে তার সাথ দিয়ে বলে,”এই মেয়েটার শুধু ইগোই আছে আর কিছু নেই। আসলে খুব বড় ছ্যাকা খেয়েছে তো। তাই এমন হয়ে গেছে। জানো, মেয়েটাকে একটা ছেলে ভীষণ বাজে ভাবে ধোকা দিয়েছে। অবশ্য ওর মতো মেয়ে এটাই ডিজার্ভ করে। কেই বা ওর সাথে সংসার করতে চাইবে। ইভেন আমিও তো খুব শীঘ্রই ওকে ডিভোর্স দেবো। আর তোমাকে বিয়ে করে নেব।”

সমুদ্র কথাগুলো প্রণালীকে জ্বালানোর জন্য বলেছিল। কিন্তু প্রণালী কারো কথায় কোন পাত্তা না দিয়ে কানে হেডফোন গুজে গান শুনতে থাকে। টায়রা গিয়ে প্রণালীর কান থেকে হেডফোন খুলে বলে,”এই কথা শুনছ না কেন? তোমার মা কি তোমায় কোন শিক্ষা দেয়নি?”

নিজের মায়ের নামে এমন কথা মেনে নিতে পারল না প্রণালী। এটা তার দূর্বলতার যায়গা। তাই অনেকদিন পর নিজের আসল খোলসে আসল। গরম কফি সম্পূর্ণ ঢেলে দিল টায়রার হাতে। টায়রা যন্ত্রণায় ওমাগো বলে চিৎকার করে উঠল। প্রণালী বলল,”ভবিষ্যতে আমার মায়ের সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলার আগে এই কথাটা মনে রেখো।”

টায়রা গরম চোখে দেখতে থাকে প্রণালীকে। সমুদ্র টায়রাকে বলে,”ইস, হাতের কি অবস্থা। তাড়াতাড়ি পানি দাও হাতে।”

কিন্তু প্রণালীকে সে কিছুই বলে না ব্যাপারটা নিয়ে। টায়রা রেগে গিয়ে বলে,”তুমি ঐ মেয়েটাকে কেন কিছু বলছ না? দাঁড়াও আমি আন্টিকে গিয়ে সব বলছি। তারপর দেখো কি হয়।”

এই বলে টায়রা কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।

সমুদ্র প্রণালীকে বলে,”কাজটা তুমি ঠিক করলে না। এখন দেখো টায়রা মমকে গিয়ে কি বলে। মম কিন্তু টায়রাকে অনেক ভালোবাসে। তোমাকে ছেড়ে কথা বলবে না।”

প্রণালী বলে,”আমি আপনার মতো আপনার মমকে ভয় পাইনা। তাই আমার মধ্যে কোন ভয় নেই।”

এরমধ্যে টায়রা পুষ্পা চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে আসে। পুষ্পা চৌধুরীকে এনেই বলতে শুরু করে,”দেখো আন্টি এই মেয়েটা আমার হাতে গরম কফি ঢেলে কি অবস্থা করেছে। তুমি এর বিচার করো।”

পুষ্পা চৌধুরী প্রণালীর দিকে এগিয়ে এসে বলেন,”এত বড় সাহস তুমি পাও কোথায়?”

বলেই প্রণালীর গায়ে হাত তুলতে যান। প্রণালী পুষ্পা চৌধুরীর হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,”ভুলেও এই কাজটা করবেন না। আমি এতদিন মুখ বুজে সবটা সহ্য করেছি তার মানে এই নয় আমি দূর্বল। আমি একজন আইনের স্টুডেন্ট। বাড়ির বউয়ের গায়ের হাত তোলার কি শাস্তি হয় জানেন? আপনাকে আমি ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের কেইসে জেলের ভাত খাওয়াবো যদি দ্বিতীয় বার এই স্পর্ধা দেখান।”

সমুদ্র চেচিয়ে বলে ওঠে,”তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করছ?”

প্রণালী আরো জোরে চেচিয়ে বলে,”এই মমের চামচা চুপ থাকো।”

সমুদ্র হতবাক হয়ে যায়। সাথে একটু স্বস্তিও পায় যে মেয়েটা আবার আগের রূপে ফিরছে। এদিকে দরজায় দাঁড়িয়ে সব ঘটনা দেখলেন সায়মা চৌধুরী আর সজল চৌধুরী। সজল চৌধুরী সায়মা চৌধুরীকে বলেন,”দেখলি তো। বলেছিলাম না, এই মেয়েই পারবে পুষ্পাকে জব্দ করতে।”

“তাই তো দেখছি ভাইয়া। তুমি একদম ঠিক মেয়েই বাছাই করেছ। এবার খেলা জমবে।”

to be continue…
[আজকের পর্বে প্রণালীর প্রতিবাদ দেখে কেমন লাগলো সেটা সবাই জানাবেন। পুষ্পা চৌধুরীর মতো শাশুড়ী, সমুদ্রর মতো স্বামী হলে কি করতেন সেটাও কমেন্ট করে বলিয়েন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here