সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️ #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️ #পর্বসংখ্যা-(১৪)

0
247

#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(১৪)
_______________________________

চিৎকার চেঁচামেচিতে আর্সেলের ঘুম ভেঙে গেলো। ব্যপারটা বুঝতে পের আরমানের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো আর্সেল।

“তোমার সব জেনেশুনে ও আমি তোমায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম। তা না করে তুমি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে নিয়েছো। বার-বার কেনো তুমি আমাকে রিজেক্ট করেছো বলো?”

আরমান অপ্রস্তুত ছিলো। আর্সেল যে আবারও ফিরে এসেছে জানতে পারেনি। চেঁচিয়ে উঠে বলল,”তোমাকে বিয়ে করার কথা ছিলো নাকি?”

“ছিলো। তোমাকে আমি ভালোবাসি সেই ছোটবেলা থেকে। সবটা জেনেও তুমি কেনো ওই মেয়েটাকে বিয়ে করেছো বলো?”

“এক্সপ্লেনেশন দিতে বাধ্য নয় মির্জা আরমান শাহরিয়ার চৌধুরী।”

“একশবার বাধ্য! আমার মধ্যে কি নেই যার জন্য তুমি আমাকে রিজেক্ট করলে?”

চেঁচিয়ে উঠলো আর্সেল।

“জাস্ট তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না। আসতে পারো। আর তোমরা সবাই কি পেয়েছো? কিসের ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসেছো আমার কাছে? আ’ম ম্যারিড নাউ। আই হ্যাভ ওয়াইফ। সো আজকের পর থেকে কেউ আমাকে বিরক্ত করবে না। নয়তো এর ফল ভালো হবে না।”

বলেই একটা ফুলদানিতে লা’থি মা’র’লো। আর্সেল বলল,”তুমি এখুনি আমাদের তিনজনকে একসাথে বিয়ে করবে।”

“কি বললে?”

“আমাদেরকে বিয়ে করবে তুমি।”

“তোমাদেরকে বিয়ে করবো মানে?”

“তুমি তো পরহেজগার মানুষ। ইসলাম ধর্মে একসাথে চার বউ রাখা জায়েজ আছে। তাই তুমি এখন আমাদের তিনজনকে বিয়ে করবে। কারণ আমরা তিনজন তোমাকে ভালোবাসি।”

চোয়াল শক্ত করলো আরমান।

“ইসলাম ধর্মে একসাথে চার বউ রাখা জায়েজ। বাকিটা বলোনি কেনো?”

“কিসের বাকিটা বলবো?”

“স্টুপিড লেডী,ইসলামে পুরুষদের বিয়ে একটাই!”

“মোটেও না।”

“তোমার মতো অজ্ঞ যারা তারাই মনে করে ইসলামে চারটি বিয়ে করা জায়েজ। আবার কেউ বলে ফরয। কোরআনে পুরুষের একটি বিয়ের কথাই বলা হয়েছে। এ কথায় অনেকেই চমকে যাবে। সেটাই স্বাভাবিক। অনেকেই ভাবে চারটি পর্যন্ত বিয়ে করা জায়েজ। অনেক অমুসলিমেরও ধারণা আল্লাহর নির্দেশেই মুসলিম পুরুষ চারটি বিয়ে করে। একথা ঠিক,কুরআনে চারটি পর্যন্ত বিয়ের “অনুমতি”দেওয়া হয়েছে। তবে সে বিয়ে চঞ্চলা চপলা যুবতী নারীর রূপ যৌবনে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে নয়,তিনটি বিশেষ শ্রেণীর নারীকে বিয়ের জন্যই সে অনুমতি।

১) সমাজের অসহায় যুবতী।
২) অসহায় বিধবা কিংবা বিধবা।
৩) স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা।

অর্থাৎ এই অনুমতি অসহায় বঞ্চিত নারী জাতীকে রক্ষা করার জন্য। মোটেও সম্ভোগ কিংবা
লালসার জন্য নয়। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো সকল স্ত্রীকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আর গাফেল হলে তার জন্য এক বিয়ে। কোরআনে সুরা নিসায় বলেন,“কিন্তু যদি আশঙ্কা করে যে,সকলের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না,তবে একটি মাত্র বিয়ে করো।”(সূরা নিসাঃ আয়াত ৪:৩)

এই অনুমতিকেই হাতিয়ার করে কিছু সম্ভোগ বিলাসী পুরুষ একাধিক বিবাহে উৎসাহী হন। অনেক অমুসলিম সুযোগ সন্ধানী পুরুষও একাধিক অবৈধ স্ত্রীকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সাময়িকভাবে মুসলিম হয়ে যান। আল্লাহর দেওয়া কঠিন শর্তটা উপেক্ষিতই থেকে যায়।
একাধিক স্ত্রীকে সমান চোখে দেখা বা সমান মর্যাদা দেওয়া রক্ত মাংসের কোনো পুরুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ সেটা ভালই জানেন। তাই তিনি সূরা নিসায় ১২৯ আয়াতে বলেই দিয়েছেন,“যতো ইচ্ছাই করো না কেন,তোমরা স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে পারবে না।”(৪:১২৯)

তাহলে কুরআনের শেষ কথা দাঁড়ালো,একের বেশি বিয়ে করো না। কুরআনের এই আয়াতটা সমাজে অপ্রচলিত,উপেক্ষিত। আলেম সমাজ ও ১২৯ নম্বর আয়াতটির উল্লেখ সেভাবে করেন না এবং সেটা নিজেদের স্বার্থেই। কারণ নিজেরাই তো সমস্ত শর্ত জলাঞ্জলি দিয়ে তিন-চারটি বিয়ে করে বসে আছেন!
কেউ থাকেন গাছ তলায়,কেউ থাকেন হাট খোলায়,তবুও নাকি সব স্ত্রী আছেন সমান মর্যাদায়!

এছাড়াও শাফিঈ মাযহাবের আল-মাওয়ার্দী বলেছেন,“আল্লাহ একজন পুরুষকে চারটি স্ত্রী পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছেন।”

শাফিঈ মাযহাবের আইনশাস্ত্রের আশ-শিরবেনি বলেছেন,“আপাতত প্রয়োজন না থাকলে একাধিক স্ত্রীকে বিয়ে না করাই সুন্নত।”(মুগনী আল-মুহতাজঃ ৪/২০৭)

আরমান থামতেই লিয়ানার মা বলল,”আরমান তুমি বেশি বাড় বেড়েছো। আমার মেয়ে তোমাকে বিয়ে করে মুসলিম হতে চেয়েছিলো। আর তুমি একি করলে?”

আর্সেল বলল,”তোমার কোনো কথা শুনছি না তুমি আমাদের তিনজনকে এই মুহূর্তে বিয়ে করবে।”

“এতোক্ষণ যে এতোগুলা কথা বললাম,বলো এখানে তোমরা কে অসহায়,বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা? তাকেই বিয়ে করবো আমি। কারণ আমি এতক্ষণ যতগুলো কথা বলেছি,কোরআনের বাইরে কোথাও একটি কথা বলিনি। কোরআনই হলো আল্লাহর থেকে প্রেরিত একমাত্র গ্রন্থ যা আমরা মুসলিম হিসেবে মানতে আদ্দিষ্ট। কোরআন হলো ফোরকান,সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। কোরআনের আলোকে সব সত্য মিথ্যা যাচাই হবে। কোরআনে কোন বহুবিবাহ নাই, কোরআনের যে আয়াতের ইচ্ছাকৃত ভুল অনুবাদ করে বহুবিবাহের কথা বলা হয়েছিলো তা প্রকাশ করেছি। কোরআনে আল্লাহ বহুবিবাহের কোন বিধান রাখেননি নবীর জন্য ছাড়া।”

ইল্মিরিয়া বলল,”এইসব দিয়ে তুমি কি করবে? তুমি আমাদেরকে বিয়ে করবে এটাই ফাইনাল।”

কষিয়ে একটা থাপ্পড় মা’র’লো ইল্মিরিয়ার গালে।

“স্টুপিড গার্ল। গেট আউট ফ্রম মাই হাউজ।”

থাপ্পড় খেয়ে ইল্মিরিয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। আর্সেল বলল,”এখুনি তুমি ওই মেয়েটাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাদেরকে বিয়ে করবে। লাগবে না তোমার অসহায়,স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা বিধবা। আমরা কোনদিকে কম?”

আচমকা আর্সেলের গালে কষিয়ে দুইটা থাপ্পড় মা’র’লো আরমান। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো সবাই। কেউই ভাবতে পারেনি আরমান এমনটা করবে। সবাই চুপসে গেলো। আয়েশা মির্জা এবং মারইয়াম ইউজিওয়েল দিকদিশা হারিয়ে ফেললেন। কি হচ্ছে এইসব? বুঝতে পারছেন না কিছুই! দিশেহারা হলো প্রভাও। এতো এতো সুন্দরী মেয়ের মধ্যে প্রভা কিছুই না। অন্যরা অন্য বিষয় নিয়ে ভাবলেও বোকা প্রভা ভাবছে তার রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে।

“ইডিয়েট লেডি। কি করবো না করবো তোমার থেকে পারমিশন নিতে হবে? মুখ সামলে কথা বলবে। আর “ওই মেয়ে” কাকে বলেছো? ইস্টুিড লেডি। শী ইজ মাই ওয়াইফ। সম্মান দিতে শিখো। তা না হলে এইভাবে পানিশমেন্ট পাবে। আমার স্ত্রীকে অসম্মান করা মানে আমাকে অসম্মান করার সামিল। আর একবার এইভাবে বলেছো তো তোমার জ্বীভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।”

রেগে উঠে আর্সেল বলল,”কি নিয়ে বড়াই করছো তুমি? কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে? না আছে রূপ,গুণ,ধনদৌলত,অর্থ-সম্পদ,ক্ষমতা আর না ঐশ্বর্য! তোমার বুকের নিচে পড়ে থাকে মেয়েটা। দ্বীনি শিক্ষা-দীক্ষাও মনে হয় তেমন নেই।”

“শী হ্যাজ নাথিং। ডু ইউ হ্যাভ এনি প্রবলেম?”

“ইয়েস। আই হ্যাভ মেনি প্রবলেম। আমার মতো এতো সুন্দরী,রূপবতী-গুণবতী,ধনে-জনে,ঐশ্বর্যবতী মেয়ে রেখে তুমি কুৎসিত একটা মেয়েকে বিয়ে করেছো!”

“আজ পরিষ্কার হলো,নারীদের প্রথম শত্রু সবসমসয় নারীরাই হয় পুরুষ নয়! এক নারীর ভালো আরেক নারীর সহ্য হয় না। একজন পুরুষের মানুষের কান ভার করতে একজন নারীই যথেষ্ট। যেমন তুমি। আর তুমি আমার স্ত্রীর শারীরিক গঠন,সুন্দর-অসুন্দরের ব্যাখা করে উপহাস করছো! তুমি তো ধার্মিক মেয়ে তাহলে সুরা আত-ত্বীন এর ০৪ নাম্বার আয়াত পড়ে আসো। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ পবিত্র আল-কোরআনে বলেছেন,“নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম-সুন্দর আকৃতিতে।” সুরা আত-ত্বীনঃ আয়াত-৪)

বস্তুত সত্য এই যে প্রতিটি মানুষ কোন না কোন অর্থে সুন্দর! কারোর চোখ সুন্দর,কারোর চুল,কারোর হাসি অথবা কারোর গায়ের রঙ! তবে সবথেকে বেশি সুন্দর হওয়া জরুরী মানুষের মন। যার মন সুন্দর তার মানসিকতা সুন্দর তাই নয় কি? আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ! মহান আল্লাহ সুরা বনী-ঈসরাইলে বলেছেন,“নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি,আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি! তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।”(সূরা বনী-ইসরাইল : ৭০)

যেখানে স্বয়ং আল্লাহ নিজে মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সেখানে তুমি আমি কিভাবে সুন্দর অসুন্দরের ব্যাখা প্রদান করি। একজন কুৎসিত কদাকার দেখতে মানুষটিও কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাতের শামিল। তুমি আমি আদম সন্তান তেমনি সেই কুৎসিত কদাকার মানুষটিও। তুমি অনেক সুন্দর,তোমায় দেখে নজর ফেরানো দায়। ঠিক দেখতে আরেকজন মানুষ কালো,মোটা,বেটে তাই বলে তাকে দেখে অবহেলা করতে হবে? হাসাহাসিতে মেতে উপহাস করতে হবে?সেই মানুষটার ও হয়তো কোন না কোন গুণ আছে যা তোমার নেই। তার সেই গুণের দিক থেকে তুমি কি তার কাছে যোগ্যহীন নও? কিসের এতো অহংকার তোমার?যেখানে তুমি তোমার সৃষ্টিতে অক্ষম? অথচ যে তোমায় সৃষ্টি করেছেন তার সৃষ্টিতে কটুক্তি করতে তোমার বোকা মস্তিষ্ক সর্বদা প্রস্তুত ও সক্ষম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সর্তকবানী দিয়েছেন তিনি বলেছেন,“হে মুমিনগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে বিদ্রুপ না করে। কেননা তারা তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। এবং কোন নারী অপর কোন নারীকেও যেন বিদ্রুপ না করে,কেননা তারা তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান আনার পরে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরনের আচরণ পরিত্যাগ করে না তারাই অত্যাচারী।’’(সূরা হুজুরাতঃ ১১)

অতএব ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে খারাপ নামে ডাকা অথবা কাউকে বিদ্রুপ করা উচিত নয়। বরং এর পরিবর্তে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের সুনাম,মর্যাদা অক্ষত রাখার জন্য যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা শারীরিক ভাবে বিকলাঙ্গ। কেউ চোখে দেখেনা তাদের আমরা অন্ধ বলি,কারোর পা নেই আমরা তাদের খোঁড়া ডাকি,আবার অনেকেই কানে শুনেনা তাদের বয়ড়া বলে ডাকি,আবার অনেকেই প্রতিবন্ধী বলে ডাকি। কিন্ত এজাতীয় নামে ডাকা ইসলামে নিষেধ। প্রতিটি মানুষের নাম আছে পরিচয় আছে। তাকে তার সেই পরিচয়ের মর্যাদা এবং সেই নামেই ডাকা উচিত। সাদা ধবধবে চামড়ার মানুষটিকেও আল্লাহ বানিয়েছেন। আবার কালো বর্ণের মানুষটিকেও আল্লাহই বানিয়েছেন। তাই আমাদের কাউকে উপহাসিত করার অধিকার নেই। কে জানে আজকের এই রুপ-চেহারা কালকের সূর্যোদয় হবার আগেই বিলীন হয়ে যেতে পারে! যারা একে অপরকে নিয়ে কটুক্তি উপহাস করে তাদের জন্য পবিত্র কোরআনের মহান আল্লাহর এই একটি বাক্যই কি যথেষ্ট নয়? “নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠ-সুন্দর আকৃতিতে।”(সুরা তীন : আয়াত-৪)

“যতোই তুমি আমাকে এইসব কোরআন হাদীস শুনাও না কেনো আমি সত্যিটাই বলবো! তোমার বউ কুৎসিত! একটা অসুন্দর কুৎসিত মেয়েকে তুমি বিয়ে করেছো। যার কোনো যোগ্যতাই নেই তোমার স্ত্রীর হওয়ার।”

বুক ফেটে কান্না এলো প্রভার। ছলছল করে উঠলো বড় বড় নয়ন জোড়া। এতো বুঝানোর পরেও এমন কথা শুনতেই আরমানের মস্তিষ্ক উত্তপ্ত হয়ে গেলো। আচমকা প্রভাকে পাঁজাকোলে তুলে প্রভার পা আর্সেলের মুখের সামনে তুলে বলল,”কিন্তু আমার স্ত্রীর পায়ের তলা থেকেও তুমি বেশি সুন্দরী নয়। এই দেখো! তোমার ওই সুন্দর মুখটার চাইতে আমার স্ত্রীর পায়ের তলা ভীষণ সুন্দর! আর তা দেখেই তাকে বিয়ে করেছি। রোজ এই দু-পায়ে আমি হাজারটা চুমু খাই। এবার বুঝো আমার স্ত্রীর হওয়ার যোগ্যতা তাঁর আছে নাকি নেই?”

কথাটা বলেই প্রভার পা দিয়ে ঘুরিয়ে আর্সেলকে লা’থি মা’র’তে’ই ফ্লোরে পড়ে কপাল ফেটে গেলো আর্সেলের।

“যে অন্যকে সম্মান করতে পারে না সে কি করে অন্যের থেকে সম্মান আশা করে? সম্মান অর্জন করার জন্য অন্যকে সম্মান করতে হয়। নয়তো এইভাবে লা’থি খেতে হয়। আর শুনো,জীবনের শেষ মেক-আপটা কিন্তু সুরমা আর আতর দিয়েই হবে। তাই রূপচর্চা রেখে আমল চর্চা করো,চরিত্র চর্চা করো। চেহারা চর্চা করে কি পাবে?এখুনি মা’রা গেলে মাটির পোকারা কুড়ে কুড়ে খাবে। তখন কেউ বলতে আসবে না সুন্দরী তুমি! মানুষ হওয়ার জন্য চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ,চেহারা রূপ সৌন্দর্য নয়। তোমাকে যথেষ্ট সম্মান করা হয়েছে এবার তুমি আসতে পারো।”

লজ্জায়,অপমানে আর্সেল আর দাঁড়ালো না। এতোদিন সে যেই রূপ নিয়ে বড়াই করতো আজ সেই রূপ এক সাধারণ বাঙালি মেয়ের পায়ের তলায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। কাঁদতে কাঁদতে আর্সেল মহল থেকে বেরিয়ে গেলো। এতো বড় অপমানের পর আর জীবনেও মানুষটার সামনে সে আসবে না। কখনো না! লিয়ানার মা এবং ইরিন জামান চেঁচিয়ে উঠে বলল,”এইসব কেমন আচার ব্যবহার তোমার?তোমাকে তো ভালো জানতাম। সেদিন তুমি আমার মেয়েকে কি করেছো?”

হিসহিস করে আরমান বলল,”প্রথমদিকে আপনি আমার যেই ব্যবহারটা দেখেছেন সেটা আমার শিক্ষা। কালক্রমে পরবর্তীতে আমার যে ব্যবহার আপনারা পেয়েচেন সেটা আপনাদের অর্জন। এবার যেতে পারেন।”

চেঁচিয়ে উঠে আরমান আবারও বলল,”আমার স্ত্রীর পায়ে আর কারো লা’থি খেতে ইচ্ছে হলে আসো। তোমাদেরকে সম্মান করা হবে।”

লিয়ানা আর ইল্মিরিয়া মানে মানে বেরিয়ে গেলো মহল থেকে। প্রভাকে পাঁজাকোলে নিয়েই কামরায় ফিরে গেলো আরমান। বেডের উপর বসিয়ে শক্ত গলায় বলল,”আর কখনো কারো সামনে আপনাকে প্যাঁচ প্যাঁচ করে কাঁদতে দেখলে সেখানেই জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো!”

ঘাবড়ে গেলো প্রভা।

“সবসময় সবার সামনে স্ট্রং থেকে প্রতিবাদ করবেন। আর তা না পারলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবেন। দরকার হলে কামরায় এসে বুকের তলায় বালিশ দিয়ে সারাদিন সারারাত ২৪ ঘন্টা কান্না করবেন। তবুও প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে কেঁদে নিজেকে দূর্বল প্রমাণ করবেন না। মনে রাখবেন,মানুষ আসেই তো মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। দূর্বল করে আঘাত দেওয়ার জন্য। মজা পাওয়ার জন্য। আজকের পর থেকে এইরকম সুযোগ আর কখনো কাউকে দিবেন না। মনে রাখবেন,আপনি যদি কখনো পড়ে যান তাহলে নিজে নিজে উঠার চেষ্টা করবেন। কারণ লোকজন পড়ে থাকা টাকা-পয়সা তুলে নিবে অন্য কেউ নয়। আরেকটা কথা মনে রাখবেন,আপনি মির্জা আরমান শাহরিয়ার চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী। আমার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে আপনাকে দূর্বল নারী রূপে মানায় না। মেয়ে মানুষের তেজ থাকতে হয়,জেদ থাকতে হয় আর আত্মসম্মানবোধটাও প্রখর হতে হয়। তবেই সকল প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। সবসসময় একটা কথা মনে রাখবেন,একমাত্র মাথা নোয়ালে আল্লাহর কাছে নোয়াবেন। তার আগে কোনো ইনসানের কাছে নয়। মনে থাকবে তো কথাগুলো?”

ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ালো প্রভা। আজ মানুষটার যে ভয়ংকর রূপ দেখেছে,সেই ভয়েই শেষ প্রভা। কখন না জানি তাকে কি করে বসে সেই আতঙ্কে আছে। আরমানকে সাইকো মনে হচ্ছে প্রভার কাছে।

“এই কথাগুলো আপনার এই কম বুদ্ধিওয়ালা মাথার মধ্যে গেঁথে নিন। ফিউচারে কাজে দেবে। আর একজন স্বামী তার স্ত্রীর জীবনে ছায়াদানকারী বটবৃক্ষের মতো। সবসময়ই আমি আপনার পাশে থাকবো না ছায়াবৃক্ষটি হয়ে। আপনাকেই প্রতিবাদী হয়ে উঠতে হবে। নিজের ছায়াবৃক্ষ নিজেকেই হতে হবে। নয়তো এই সমাজ-সংসারে টিকে থাকা মুশকিল হবে।”

তপ্তশ্বাস ফেলে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো আরমান। ঠিকমতো ব্রেকফাস্ট করতে পারেনি। কফিটাও পান করা হয়নি। মাথা ধরেছে তার। আর্সেলের কথাগুলো মনে পড়তেই প্রভার ডুকরে কান্না এলো। মেয়েটা কিভাবে বললো সে কুৎসিত! সত্যি কি সে কুৎসিত? ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়ালো। আপাদমস্তক নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। সত্যিই তো! সে-তো তাদের মতো সুন্দরী না! সে কুৎসিত! ফুঁপিয়ে উঠলো প্রভা। ফোঁপানোর শব্দ টের পেতেই কামরায় ফিরে এলো আরমান। পাগলের মতো আচরণ করতে দেখে ঘাবড়ে গেলো। দ্রুত এগিয়ে এলো।

“কি হয়েছে আপনি কাঁদছেন কেনো?”

“ওই মেয়েটা বললো আমি কুৎসিত!”

চোয়াল শক্ত করলো আরমান। সেইজন্যই তো পানিশমেন্ট দিয়েছে। উপস্থিত বুদ্ধি কম প্রভার যে এটা মাথায় ঢুকেছে এবার তো ডিপ্রেশনে চলে যাবে। শান্ত করার জন্য বলল,”ওটা জেলাশফিশ করে আপনাকে বলেছে। কান দেবেন না এইসবে।”

“মোটেও না। আমি সত্যি কুৎসিত! আপনি আমাকে পছন্দ করেন না।”

“বোকা বউ! চরিত্রবান পুরুষের কাছে তার কুৎসিত স্ত্রী-টাও পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী! ইউ আর অলওয়েজ বিউটিফুল!”

“মনগড়া কথা বলছেন কেনো?”

প্রভাকে জড়িয়ে নিয়ে কানের মধ্যে মুখ নিয়ে বলল,”আপনি ছাড়া আর কোনো মুগ্ধতা দেখিনি এই সংক্ষিপ্ত জীবনে বেলাডোনা। ইউ আর অলওয়েজ সো সো বিউটিফুল! সো বিউটিফুল! আপনার বুক যদি মাটি হতো তাহলে আমি নয়নতারা ফুল হয়ে জন্মাতাম।”

হঠাৎ প্রভার বুক ঠেলে কান্না এলো। মানুষটা এতো ভালো কেনো? তাকে শাসন করে আবার আদরও করে। সবার সামনে তাকে সাপোর্ট ও করে,সম্মানও করে। কথায় আছে না,শাসনও ভীষণ ভালো লাগে যদি শাসনের মাঝে ও থাকে ভালোবাসার স্পর্শ। মানুষটার সবকিছুতেই ভালোবাসার স্পর্শ রয়েছে। মানুষটার প্রশস্ত বুকে হিঁচকি তুলে ইমোশনাল হয়ে প্রভা বলল,”রাগী সাহেব,আমি কোনো সুদর্শন নায়ক চাই না যে দেশ বাঁচানোর জন্য আমাকে ছেড়ে দেবে। আমি তো আপনার মতো একজন বদরাগী,জেদী ভিলেন চাই। যে ভিলেন আমার জন্য পুরো পৃথিবী উলটপালট করে দিবে কিংবা আমাকে ভালোবেসে পাওয়ার জন্য পুরো পৃথিবী উলটপালট করে দিতে একটাবারও ভাববে না।”

আরমান বুঝতে পারলো প্রভা খুব সিরিয়াস এবং ইমোশনাল হয়ে পড়েছে তার প্রতি। সে-তো ভালো করেই জানে নারীরা মোমের মতো একটু ভালোবাসা পেলেই গলে যায়। পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,”আমি আপনার জীবনের সেই বদরাগী ভিলেন বেলাডোনা।”
_____

মাস দুয়েক পেরিয়ে গেলো। সামনে রমযান মাস। আর কিছুদিন বাকি। চলছে। প্রভা কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না। কিছু খেলেই বমি করে দিচ্ছে। মাথা ঘুরায় সারাক্ষণ। বারকয়েক ভদ্রভাবে বললেও কোন কথাই কানে তুলেনি প্রভা। ঈদার্নিং আরমানের কথা অমান্য করছে বেশি। যেটা নিষেধ করছে সেটাই বেশি বেশি করছে। ফোনের জন্য বাসায় ঝামেলা শুরু করেছে। ডাক্তারের কাছে যেতে বললে যাচ্ছেও না। সাপ্তাহিক ছুটির দিন আজ রোববার। কাল থেকে আবার অফিস খোলা। ঝিম মে’রে প্রভা শুয়ে রয়েছে,একটু আগে বমি করে এসেছে।

“বলছিলাম রেডি হয়ে নিন ডক্টরের কাছে যাবেন।”

“আমি তো বললাম আমার কিছু হয়নি।”

তপ্তশ্বাস ফেললো আরমান।

“আমি যদি ভুল না হই আপনি কন্সিভ করেছেন। ব্যপারটা হাইড করছেন কেনো?এটা হাইড করার বিষয়?”

ঘাবড়ে গেলো প্রভা। আমতা আমতা করে চোরা চোখে-মুখে বলল,”কোথায় কি হাইড করলাম?”

“আপনি কি মনে করেন আপনার প্রতি আমি খেয়াল রাখি না?”

“তা কখনো বলেছি?”

“মাস তিনেক থেকে আপনাকে পিল নিতে দেখিনি। জিজ্ঞেস করলেই বলতেন নিয়েছেন। আচ্ছা বাদ। প্ল্যান করে বেবি ক্যারি করার ডিসিশন নিয়েছেন তো ডক্টরের কাছে যাচ্ছেন না কেনো?”

ঘেমে গেলো প্রভা। কাঁপতে লাগলো অজানা ভয়ে। আরমান তার প্ল্যান বুঝতে পেরেছে। দাদীমা সেদিন বলেছিলো একটা বেবি হয়ে গেলে আরমান ভালো স্বামী হয়ে যাবে। তাই তো কন্সিভ করার প্ল্যান করেছে।

“আপনার পড়াশোনা এখনও শেষ হয়নি। বলেছি এক্সাম দিয়ে আসতে তাও শুনছেন না। বিয়ে হয়েছে সবে ২-৩টা বছর যেতো। আপনারও আরেকটু বয়স হতো। তারপর বেবি ক্যারির কথা চিন্তা করতেন। তা না করে কার পরামর্শে এমন করছেন বুঝতে পারছি না।”

ঘাবড়ে গেলো প্রভা।

“তার মানে আপনি এখন চাইছেন আমি এবর্শন করে ফেলি! এজন্যই ডক্টরের কাছে যাওয়ার জন্য বার-বার বলছেন তাই না?”

চেঁচিয়ে উঠলো প্রভা। হতভম্ব হলো আরমান। তার সদ্য ঔরসজাত সন্তান সে কেনো এবর্শন করবে?

“পাগল হয়েছেন? কি বলছেন আপনি?”

“এটাই তো চান আপনি। যাতে আমি মে’রে ফেলি। আর আপনি আরো কয়টা বিয়ে করেন। তাই বার-বার ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে চান। আমাকে নিয়ে জোর করে এবর্শন করাবেন।”
___________

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here