সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️ #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️ #পর্বসংখ্যা-(১৯)

0
57

#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(১৯)
_______________________________

রাগে গজগজ করলো প্রভা। যা-ই বলছে মানুষটা হেতু বের করছে! যা-ই পছন্দ হচ্ছে মানুষটা খুঁত খুঁজছে! কেনো যে এমন মানুষের সাথে তার বিয়ে হলো আল্লাহই জানে। বিরক্তিতে বলে উঠলো,”কোন অলক্ষ্মীর মুখ দেখে যে বের হয়েছিলাম কুপা লেগেছে।”

“এটা কেমন কথা?”

“তো কি! যাই করতে যাচ্ছি সবখানেই নিষেধাজ্ঞা!”

তপ্তশ্বাস ফেললো প্রভা।

“এইমাত্র আপনি একটা ছোটখাটো শিরক করে ফেললেন। সবসময় কথা বলতে হুশিয়ার হয়ে বলবেন।”

“আমি যা-ই করি,যা-ই বলি সবকিছুতেই দোষ!”

“এডুকেটেড মেয়ে হয়ে এই পর্যন্ত কোন ভালো কাজটা করেছেন আপনি?”

রাগে গজগজ করলো প্রভা। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,”ধার্মিক,পরহেজগার ছেলেকে বিয়ে করে জীবনটা শেষ! করো আরো ধার্মিক ছেলেকে বিয়ে! শখ মিটে গেছে!”

শুনতে পেয়ে আরমান বলল,”একজন মুসলিম স্বামীর কর্তব্য হলো তার স্ত্রীকে ইসলামিক পথের নিদের্শনা দেয়া। আর ভালো স্ত্রী না হলে একজন স্বামীর সাজানো সংসার নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়।”

“ওহ আচ্ছা! তো দিচ্ছেন তো! প্রতি সেকেণ্ডে সেকেণ্ডে দিচ্ছেন। আরো দিন না নিষেধ করেছি?”

“একটু আগে যেই কথাটি বলেছেন বাস্তবে এটি একটি গর্হিত কথা। যার কোনো ধরনের ভিত্তি নেই। আর এই ভিত্তিহীন কথার উপর নির্ভর করে দিনের প্রথম দেখা মানুষটির ব্যপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা আর এটা মারাত্মক অন্যায়। শুধু তাই নয় অনেকেই তো দিনের প্রথম উপার্জনকে প্রণাম করা সম্পর্কে কিংবা কোনো বিপদাপদের সম্মুখীন হলে কোনো কোনো মানুষকে এই ধরনের কথাও বলতে শোনা যায় যে,“কার মুখ দেখে যে বের হয়েছিলাম!”যেটা গর্হিত কাজ। আল্লাহ তায়ালাই বিভিন্ন হিকমতে বান্দাদেরকে বালা-মুসিবত দিয়ে থাকেন যেমন দিয়ে থাকেন অসংখ্য নিয়ামত। এর সাথে প্রথম দেখা মানুষটির কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম এই ধরনের মানসিকতাকে কঠোরভাবে প্রত্যাহার করেছে। ঘোষিত হয়েছে,

لا عدوى و لا طيرة و لا هامة لا هامة و لا صفر.

অর্থাৎ “রোগ লেগে যাওয়া,কুলক্ষ্মণ,পেঁচা ও সফর-এর কোনো বাস্তবতা নেই।”(সহীহ বুখারী : হা/৫৭০৭)

তাছাড়া অযথা কারো প্রতি কু-ধারণা পোষণ করা গুনাহ। ইরশাদ হয়েছে,

من الطر، إن بعض الطر إثم يا أيها الذين آمنوا اجتسوا.

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনেক ধারণা পরিহার করো। কারণ কোনো কোনো ধারণা গুনাহ।”(হুজুরাত : ১২)

অতএব এই ধরনের অমূলক ধারণা ও অসমীচীন কথা পরিত্যাগ করা একজন মুমিনের অবশ্যই কর্তব্য।”

চুপ করে রইলো প্রভা। শপিংমল থেকে বেরিয়ে ততক্ষণে ওরা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। রিয়াদ নিজের হাতের ব্যাগগুলো গাড়িতে রেখে আরমানের হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে গাড়িতে রেখে আরমানের পাশে এসে দাঁড়ালো। আরমানের দিকে তাকালো প্রভা। মাত্রাতিরিক্ত গরমে লাল টুকটুকে হয়ে গেছে মানুষটা। এমনিতেই ধবধবে ফর্সা। তার উপরে উত্তপ্ত রোদ। বাইরে বের হলে খোলা চোখে তাকাতে পারে না মানুষটা। তাই সবসময়ই সানগ্লাস পরেই বের হয়। মানুষটার লাল টুকটুকে মুখের দিকে তাকাতেই প্রভার ভীষণ মায়া হলো। মুহূর্তেই মেজাজ শিথিল হয়ে এলো। কোমল কণ্ঠে বলল,”মাস্কটা একটু খুলে রাখুন না! আর কতক্ষণ পরে থাকবেন? আপনার মুখ তো লাল টুকটুকে হয়ে গেছে চেরীফলের মতো।”

গম্ভীর হলো আরমান।

“এটা আমি ছোটবেলা থেকেই করি এবং এতে আমি অভ্যস্ত। নো প্রবলেম। আ’ম ওকে।”

“কেন?”

“কারণ আমি চাই না আমার দিকে তাকিয়ে কোনো মেয়ে যেনো বলতে না পারে ছেলেটা খুব সুন্দর কিংবা ছেলেটাকে ভালো লেগেছে অথবা ভালো লাগছে নতুবা ছেলেটার উপর ক্রাশ খেয়েছি ইত্যাদি।”

“বারেহ! বললে কী হয়েছে? আপনি তো খুব সুন্দর মানুষ! সুন্দরকে সুন্দর বলবে,ক্রাশ খাবে এটা তো স্বাভাবিক! এতে মাস্ক পরার কি আছে? আর আপনি তো নারী নন আপনি হলেন পুরুষ। এতে পর্দা করার কি আছে?”

“আমি চাই না আমার কারণে কোনো মেয়ের নফসের গুণাহ না হয়। আর এটা গায়রত।”

অবাক হলো প্রভা।

“গায়রত!?”

“হ্যাঁ।”

“গায়রত মানে কি?”

“গায়রত হচ্ছে আত্মমর্যাদাবোধ। আর আত্মমর্যাদাবোধকে আরবীতে গায়রত বলে। গায়রত এমন একটা জিনিস যা না থাকলে কাউকে পুরুষ বলা যায় না। সাহাবীরা তাদের স্ত্রীর নাম পর্যন্ত পরপুরুষকে বলতেন না এটাও গায়রত। আর একজন গায়রতহীন পুরুষ বড়ই ভয়ংকর!”

“মানে?”

“গায়রত থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য আর অহংকার থাকা কাফিরের বৈশিষ্ট্য।”

“খুব সুন্দর কথা বলেন তো আপনি।”

“তাহলে শুনুন। ঘটনা-১

একদিন এক ব্যক্তি আলি ইবনু আবি তালিব (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন তার স্ত্রী কেমন আছে? তিনি উত্তর দিলেন,যদি তোমার রক্ত হালাল হতো,তাহলে আমি তরবারি দিয়ে তোমার মাথা কেটে ফেলতাম। (ইবনে কাসীর,আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া)

সাহাবীরা তাদের স্ত্রীর নাম পর্যন্ত
পরপুরুষদেরকে বলতো না। এটাই গায়রত! আর এখনকার পুরুষদের গায়রত থাকবে তো দূরের কথা,অনেকে গায়রত কি সেটাও জানে না। হায় আফসোস! তারা তাদের স্ত্রীর বেপর্দা ছবি ফেইসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড দেয়। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বন্ধুদের সাথে হাসি-তামাসা-আড্ডায় ব্যস্ত থাকে! বউয়ের চুল দেখা যাবে তাতে কষ্ট পাবে তো দূরের কথা,বিয়ের সময় বন্ধুকে নিজের বউকে দেখিয়ে পরে আবার বলে,মেয়েটা দেখতে কেমন রে! বন্ধুদের চোখের খোরাক বানিয়ে তারপর সে বিয়ে করে! এটাই নাকি এই ভদ্র সমাজের ট্রেন্ড। গায়রত (আত্মমর্যাদা) সম্পন্ন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে পারে না। এটি নিতান্ত ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তির দ্বারাই সম্ভব। আল্লাহুমাগফিরলি!

ঘটনা-২

মক্কার এক মুশরিক তার উটকে জবেহ
করে দিচ্ছিলো। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি উটটি জবেহ কেন করলেন? আপনার টাকার প্রয়োজন হলে তো বিক্রি করে দিতে পারতেন। তখন লোকটি বললো,এই উটের উপর আমার মহিলারা বসতো। বিক্রি করে দিলে এই উটের উপর অন্যপুরুষ বসবে এটা আমার সহ্য হবে না। তাই এই উটই আমি রাখবো না।

এবার বুঝুন,একজন মুশরিক হওয়া সত্বেও তার কত গায়রত! এই উম্মাহর কোনো নারী গায়রতহীন পুরুষকে আপন করে নিয়েছে এমন নজির নেই। হায় আফসোস! এই উম্মাহর পুরুষেরা আজ জানেই না গায়রত কী? মহিলারা আজ বোঝে না গায়রতের মর্ম। বরং তারা গায়রতহীন চাকচিক্যময় নিবেদিত পুরুষদেরই খুঁজে ফেরে হর-হামেশা। গায়রতহীন পুরুষরা সবাই দাইয়ুস। রাসূল (সা.) বলেছেন,“তারা জান্নাত তো পাবেই না,জান্নাতের গন্ধও পাবে না।”

وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ ﴿۲۰﴾

“আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।”(সুরা হাদীদ-২০)

যে জাতির পুরুষদের মাঝে গায়রত থাকে,সে জাতির নারীদের মাঝে পবিত্রতা থাকে। যে জাতির পুরুষদের মধ্যে গায়রত থাকে না সেই জাতির নারীদের মাঝেও পবিত্রতাও থাকে না। অতএব গায়রত বোঝে না এমন অর্ধেক দ্বীনওয়ালা পুরুষ কোনো নারীর জীবনে না আসুক! গায়রতহীন পুরুষ কখনোই পর্দাশীল মেয়ের যোগ্য নয়।”

আর কিছু বলতে পারলো না প্রভা। মানুষটার লাল টুকটুকে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি মায়া! কি নূর! কি জাদু! গাড়িতে উঠার পূর্বে আরমানের কল এলো। পিক-আপ করে কথা বলে নিলো। আরমানের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রভা। ওদের দু’জনকে দেখতেই কয়েকটা ছেলে-মেয়ে হাসি-তামাশা করতে লাগলো। তার কারণ আরমানের তুলনায় প্রভা একদম খাটো। বিষয়টা বুঝতে পারলো আরমান। প্রভাকে ইশারা দিলো গাড়িতে উঠতে। বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো প্রভা। ছেলে-মেয়েগুলো এগিয়ে এলো। একটা মেয়ে বলে উঠলো,”হাই!”

ইগনোর করতে যেয়েও ইগনোর করতে পারলো না আরমান। ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,”হ্যালো।”

“আপনারা কি হোন?”

“স্বামী-স্ত্রী।”

“রিয়েলি?”

“হ্যাঁ।”

“ওহ। বাই দ্যা ওয়ে,আপনার ওয়াইফের গরম লাগে না?”

“কেনো?”

“প্যাকেট হয়ে আছে যে?”

“না।”

“পাশ থেকে ছেলেটা বলে উঠলো,”ব্রো তোমার গাল চুলকায় না? দাঁড়ি রাখো কেনো? ক্লিনসেভ করলে তোমায় কত দারুণ লাগবে জানো?”

মৃদু হেঁসে আরমান বলে উঠলো,”দাঁড়ির মধ্যে ওয়্যারলেস টেকনোলজি রয়েছে যে রাখে তার চুলকায় না। কিন্তু আশেপাশের অনেক মানুষের চুলকায়। আর বোরকা-হিজাবের মধ্যে ওয়েদার কন্ট্রোল টেকনোলজি রয়েছে! যে পরে তার গরম লাগে না কিন্তু আশেপাশের মানুষ গরমে সিদ্ধ হয়ে যায়।”

ওরা বুঝতে পারলো আরমান খুব সুক্ষ্মভাবে তাদের খোঁচা মে’রে’ছে। মেয়েটা বলল,”আমি কি আপনার নাম্বারটা পেতে পারি? আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।”

“শিউর!”

“তাহলে দিন।”

“১৮-২৪-৩০-৩১”

“এইটা আবার কোন অপারেটর?”

“আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমি মুসলিম।”

“হ্যাঁ?”

“আর এটা সরাসরি আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আরশের একচেঞ্জ নাম্বার।”

“কি বলছেন?”

“হ্যাঁ। ১৮তম পারা,২৪তম সুরা,৩০-৩১ নাম্বার আয়াত। বাসায় ফিরে আল-কোরআন খুলে ডায়াল করবেন।”

ছেলেটি উদ্বেগী হয়ে বলল,”ওখানে কি লেখা আছে?”

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ.

অর্থঃ “তুমি মুমিন পুরুষদের বলো যে তারা তাদের দৃষ্টি অবনত করুক এবং তাদের আঙ্গিক কর্তব্যাবলীর হেফাজত করুক। এ তাদের জন্য পবিত্রতার তারা যা করে আল্লাহ্ সে-বিষয়ে নিশ্চয়ই পূর্ণ ওয়াকিফহাল।”(সুরা আন-নূর : ৩০)(মুমিন পুরুষের প্রতি)

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ.

অর্থঃ “আর মুমিন নারীদের বলো যে তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে,আর তাদের আঙ্গিক কর্তব্যাবলীর হেফাজত করে,আর তাদের অঙ্গশোভা যেন প্রদর্শন না করে শুধু তার মধ্যে যা প্রকাশ হয়ে থাকে তা ভিন্ন,আর যেন তারা তাদের মাথার কাপড় দিয়ে তাদের বুকের উপরটা ঢেকে রাখে,আর তারা যেন তাদের শোভা-সৌন্দর্য প্রদর্শন করে না শুধু তাদের স্বামীদের অথবা তাদের পিতাদের অথবা তাদের শ্বশুরদের অথবা তাদের পুত্রদের অথবা তাদের সৎপুত্রদের অথবা তাদের ভাইদের অথবা তাদের ভ্রাতুস্পুত্রদের অথবা তাদের ভাগ্নেদের অথবা তাদের পরিচারিকাদের অথবা তাদের ডান হাত যাদের ধরে রেখেছে,অথবা পুরুষ চাকর-নকর যাদের কাম-লালসা নেই,অথবা ছেলেপিলেদের যাদের নারীদের গোপন অঙ্গ সন্বন্ধে জ্ঞানবোধ হয়নি,এমন লোকদের ভিন্ন,আর তাদের পা দিয়ে যেন তারা আঘাত না করে যাতে তাদের অলংকারের যা লুকিয়ে আছে তা জানানো যায়। আর হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহ্‌র দিকে ফেরো যেন তোমাদের সফলতা অর্জন হয়।”(সূরা নূর : ৩১) (মুমিন নারীদের প্রতি)

পুরুষ ও নারীদের প্রতি মহান আল্লাহর নির্দেশনা। (সূরা নূর,আয়াত : ৩০ ও ৩১)

অতঃপর আরমান গাড়িতে উঠে গেলো। ছেলে-মেয়েগুলো তাকিয়ে রইলো আরমানের যাওয়ার দিকে। এদিকে ছেলেমেয়েগুলোর উপর প্রচণ্ড জেলাশ হলো প্রভা। রাগে-জিদে বোরকা-হিজাব সব খুলে ফেললো আরমানের নাম্বার চাওয়ায়।

“সব খুলে ফেললেন যে?”

“গরম লাগছে! সূর্যের উত্তাপ দেখেছেন?”

“সূর্যের একটু উত্তাপ বাড়তেই বোরকা আর হিজাব খুলে ফেললেন! এটুকু গরমের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখেন না! কিভাবে সম্ভব যখন কেয়ামাতের ময়দানে মাথার উপরে সূর্য আসবে তখন তাপ সহ্য করা! পারবেন কি জাহান্নামের আগুনের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে? আচ্ছা! আপনার কি মনে হয় জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ এর চেয়েও সহনীয় হবে?”

“তা কখন বললাম?”

“তাহলে বাসায় প্রবেশ না করা অব্ধি কেনো খুললেন?”

“বললাম তো গরম লাগছে।”

“দুনিয়ার উত্তাপ নিয়ে এতো মাথা ব্যথা! জাহান্নামের উত্তাপের ব্যপারে এতো উদাসীন কেন?”

“কোথায় উদাসীন হলাম?”

“জাহান্নামের তাপ কেমন হবে জানেন? হাদিসে এসেছে,“দুনিয়ার আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ। অর্থাৎ দুনিয়ার আগুনের চেয়েও জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুণ বেশি উত্তপ্ত।”(মুসলিম ২৪৮৩,বুখারি:৩২৬৫)

নিরুত্তর রইলো প্রভা। গায়ের মধ্যে বোরকা জড়িয়ে দিয়ে মাথায় হিজাব পেঁচিয়ে দিলো আরমান। অনেক সময় ড্রাইভাররাও লুকিং গ্লাস দিয়ে পেছনে তাকায়।

“পর্দা নারীর লজ্জা নয় অহংকার! পর্দা নারীর সম্মান! মাথায় ঝুলতে থাকা এই এক টুকরো কাপড় কোনো ন্যাকড়া নয়,এটা সেই রাজমুকুট যার মাধ্যমে আল্লাহ আপনার সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। আমার অবাধ্য হবেন না বলে দিচ্ছি। আমি যা পছন্দ করি না তা ভুলেও করবেন না।”

ভারাক্রান্ত মনে বসে রইলো প্রভা। বেবির কন্ডিশন নিয়ে ডক্টর কিছু বলতে চেয়েছিলো আরমান শুনতে চায়নি। শুধু নির্দেশনাগুলো লিখে দিতে বলেছিলো। প্রভার ভয় হচ্ছে খারাপ কিছু হবে না তো?

“মন ভার কেনো?”

“আমার খুব ভয় হচ্ছে।”

“কেনো?”

“ডক্টরকে একবার জিজ্ঞেস করতেন আমাদের কি হবে ছেলে নাকি মেয়ে?”

“যাই হয়। টেনশনের কিছু নেই।”

“আচ্ছা যদি কখনো আমাদের থার্ড জেন্ডার বেবি জন্ম নেয়?”

“আল্লাহ মাফ করুক।”

“আপনি তো পরহেজগার মানুষ। দ্বীন সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা রয়েছে। আমাকে একটু বলুন না ইসলামের দৃষ্টিতে হিজড়া সন্তান জন্ম হওয়ার কারণ কি? তাছাড়া দেশে যেইভাবে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে গুজব শুরু হয়েছে এখন তো ভয় লাগছে।”

তপ্তশ্বাস ফেললো আরমান।

“হিজরারা আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সামান্য কিছু ভুলে জন্ম নিতে পারে হিজরা সন্তান।”

ভয় পেয়ে প্রভা বলল,”কিভাবে?”

“হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন,“হিজড়ারা জ্বীনদের সন্তান।”কোন এক ব্যক্তি আব্বাস (রাঃ) কে প্রশ্ন করেছিলেন,“এটা কেমন করে হতে পারে?” জবাবে তিনি বলেছিলেন,“আল্লাহ ও রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন,মানুষ যেন তার স্ত্রীর মাসিক স্রাব চলাকালীন যৌন সংগম না করে। সুতরাং কোন মহিলার সঙ্গে তার ঋতুস্রাব চলাকালে যৌন সঙ্গম করা হলে,সেই সময় শয়তান তার আগে থাকে। অর্থাৎ শয়তান ওই পুরুষের আগে থেকে যৌন সংগম করতে থাকে এবং সেই শয়তান দ্বারা ওই মহিলা গর্ববতী হয় ও হিজড়া সন্তান প্রসব করে। (মানুষ ও জ্বীন এর যৌথ মিলনজাত সন্তানকে ইসলাম এ বলা হয় “খুন্নাস”) অর্থাৎ মহিলাটি ওই পুরুষ ও শয়তান এর মাধ্যমে গর্ববতী হয় ও হিজড়া সন্তান প্রসব করে।(ইবনে আবি হাতিম,হাকিম তিরমিযী)

আর কিছু বলতে পারলো না প্রভা। বাসায় ফিরে শাওয়ার নিতেই আসরের আযান হলো। দু’জনে অযু করে এলো একসঙ্গে। প্রভাকে ইশারা দিলো জায়নামাজ বিছিয়ে নিজের পেছনে দাঁড়াতে।

“আপনি ফজর আদায় করছেন কিন্তু যোহর আদায় করেননি। তাই আসর পড়ার পূর্বে যোহরের ফরয নামাজ কাজা করে নিন।”

“কাজা!?”

“হ্যাঁ।”

“সেটা আবার কি?”

অবাক হলো আরমান।

“কাজা নামাজ সম্পর্কে আপনি জানেন না?”

“আসলেই..”

আমতা আমতা করলো প্রভা। যা বুঝার আরমান বুঝে গেলো।

“ভুলবশত কিংবা অন্য কোনো বিশেষ কারণে কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারলে এই নামাজ পরবর্তীতে আদায় করাকে কাজা নামাজ বলা হয়। ফরয কিংবা ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে তার কাজা আদায় করা আবশ্যক। সুন্নত কিংবা নফল নামাজ আদায় করা না গেলে কাজা আদায় করতে হয় না।”

“এখন যোহর কাজা না করে আসর পড়লে হয় না?”

“না হবে না।”

“কেনো?”

“কাজা আদায়ে যা লক্ষ্য রাখতে হবে তা হচ্ছে,পাঁচ ওয়াক্ত বা তার কম ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেলে তা ধারাবাহিক ভাবে কাজা আদায় করতে হবে। আগের নামাজ আগে,পরের নামাজ পরে পড়তে হবে। যেমন কোনো ব্যক্তির ফজর এবং জোহরের নামাজ তরক হলে,আসরের নামাজ আদায়ের পূর্বে প্রথম ফজরের নামাজ কাজা আদায় করতে হবে ; অতপর জোহরের নামাজ কাজা আদায় করতে হবে।”

দোনোমোনো করলো প্রভা।

“আপনি কাজা নামাজ আদায় করতে জানেন না?”

মাথা নাড়ালো প্রভা। সে পারে না। তপ্তশ্বাস ফেললো আরমান।

“নাম শুনেছেন কখনো?”

“শুনেছি,কিন্তু ওতোটা গুরুত্ব দিইনি।”

“আচ্ছা শুনুন। কাজা নামাজ আদায়ের পদ্ধতি এবং বিধান সমূহ ইমাম বাতায়ন থেকে বলছি।

📌কাজা নামাজ আদায়ের বিধান।

🔹যদি কেউ জীবনের কোন সময় শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আল্লাহর হুকুম পালনে গাফেল থাকে আবার যখন আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে দ্বীনি বুঝ পায় তখন তার করণীয় হলো পূর্বেরকার পাপের জন্য আল্লাহর দরবারে মাফ চাওয়ার সাথে সাথে নেক আমল করা এবং বিগত দিনের ছেড়ে দেয়া ফরয নামাজের কাজা আদায় করা। কাজা নামাজ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এটাকে অস্বীকার করা মানে হাদীসকে অস্বীকার করার নামান্তর। হাদীস শরীফে এসেছে,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صل الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى.

অনুবাদঃ “যখন তোমাদের কেউ নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে বা নামায থেকে গাফেল হয়ে যায়,তাহলে তার যখন বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন,“আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় করো।”(সহীহ মুসলিম: হা/১৬০১,মুসনাদে আহমাদ : হা/১২৯৩২,সুনানে বায়হাকী কুবরা : হা/৪১৮২)

عن جابر بن عبد الله : أن عمر بن الخطاب جاء يوم الخندق بعدما غربت الشمس فجعل يسب كفار قريش قال يا رسول الله ما كدت أصلي العصر حتى كادت الشمس تغرب قال النبي صلى الله عليه و سلم ( والله ما صليتها ) . فقمنا إلى بطحان فتوضأ للصلاة وتوضأنا لها فصلى العصر بعدما غربت الشمس ثم صلى بعدها المغرب.

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) খন্দকের দিন সূর্য ডোবার পর কুরাইশ কাফেরদের তিরস্কার করতে করতে এলেন। নবীজি (সা.) কে বললেন,“হে আল্লাহর নবী! আমি আসরের নামায পড়তে পারিনি এরই মাঝে সূর্য ডুবে গেছে।” নবীজি (সা.) বললেন,“হায় আল্লাহ! আমরাও তো পড়তে পারিনি!” তারপর আমরা সমতল ভূমিতে দাঁড়ালাম। আর তিনি নামাযের জন্য অযু করলেন। আর আমরাও নামাযের জন্য অযু করলাম। তারপর সূর্য ডুবে গেলেও প্রথমে আমরা আসর পড়লাম। তারপর মাগরিব পড়লাম।”(বুখারী শরীফ : হা/৫৭১,৫৭৩,৬১৫,৯০৩,৩৮৮৬,)

عن أنس بن مالك قال : سئل رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الرجل يرقد عن الصلاة أو يغفل عنها قال : كفارتها يصليها إذا ذكرها.

হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.)-কে নামায রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও নামায সম্পর্কে গাফেল ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,“এর কাফফারা হলো যখনই নামাযের কথা স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে।”(সহীহ ইবনে খুজাইমা : হা/৯৯১,মুসনাদে আবী আওয়ানা : হা/১০৪১,মুসনাদে আবী ইয়ালা : হা/৩০৬৫,মুসনাদে আহমাদ হাদীস : হা/১৩২৬২,সুনানে নাসায়ী কুবরা : হা/১৫৮৫)

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَقُولُمَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلَمْ يَذْكُرْهَا إِلَّا وَهُوَ مَعَ الْإِمَامِ فَإِذَا سَلَّمَ الْإِمَامُ فَلْيُصَلِّ الصَّلَاةَ الَّتِي نَسِيَ ثُمَّ لِيُصَلِّ بَعْدَهَا الْأُخْرَى.

অনুবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বললেন,“যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় তারপর তা স্মরণ হয় ইমামের সাথে জামাতে নামাযরত অবস্থায়,তাহলে ইমাম সালাম ফিরানোর পর যে নামায ভুলে পড়েনি,তা আদায় করবে,তারপর অন্য নামায পড়বে।”(মু্য়াত্তা মালিক : হা/৫৮৪,সুনানে বায়হাকী কুবরা : হা/৩০১২)

__________

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here