সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️ #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️ #পর্বসংখ্যা-(১৭)

0
61

#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(১৭)
_______________________________

আরমান একটি কালো রঙের বোরকা চুজ করলো। পর্দার ক্ষেত্রে আরমান কালো রঙটাই প্রাধান্য দেয়। আর এটাই তার কাছে বেস্ট বলে মনে হয়। বোরকা হাতে নিয়ে আরমান বলতে লাগলো,”যে পোশাকে আবৃত হলে ব্যক্তি যুবতী নাকি বৃদ্ধা বোঝা যায় না তাকেই পর্দা বলে। অনেকভাবে পর্দাকে সঙ্গায়িত করা যায়। কিন্তু এই যমানায় ডিফাইন করা টা বেশ জরুরী।

১) প্রথমত পর্দা হতে হবে ঢিলেঢালা আপাদমস্তক ঢাকা একটি পোশাক। যে পোশাক পড়লে শরীরের অবয়ব বুঝা যাবে না,স্বাস্থ্য বুঝা যাবে না। এমনকি ভিতরের ব্যক্তি যুবতী নাকি বৃদ্ধ তাও বুঝা যাবে না।

২) পর্দা হতে হবে ফিকে রঙের এবং ডিজাইনবিহীন। যে রঙ এবং ডিজাইন চোখে লাগে না। যে রঙ চাকচিক্যময় না। এক্ষেত্রে পর্দার রঙের জন্য কালো,এ্যাশ,ডিপ ব্লু এবং একপেশ বোরকা বেস্ট।

৩) পর্দার ক্ষেত্রে মুখ ঢাকা ফরজ। তাই ফুল কভারেজ নিকাব ব্যবহার করতে হবে। বর্তমান ফিতনার যমানায় কেও যদি চোখ ঢেকে চলতে পারেন তো আরোও বেস্ট।নোস নিকাব,মাস্ক পর্দার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য না। এইসবে কপাল বের হয়ে থাকে। ব্যক্তির গায়ের রঙ বুঝে যাওয়া সহ চেহারা অব্দি গেস করা যায়। এইটা পর্দা না। পর্দা হতে হবে সম্পুর্ন ঢেকে যাবে এমন একটি আবরণ।

৪) পর্দা কেন করা হয়? পর্দা করা হয় এইকারণেই যে যাতে করে ব্যক্তির সৌন্দর্য প্রকাশিত না হয়ে যায়। তাহলে নিকাব ব্যবহারের পরেও আইলাইনার,কাজল বা মাশকারা দিয়ে চোখ সাজানোর মানে কি দাঁড়ায়? মানে এই দাঁড়ায় যে,পর্দা করেও আমি আমাকে সুন্দর,আকর্ষিত দেখাতে চাই। এইটা পর্দা না।

৫) পর্দার ক্ষেত্রে হাত-পা ঢাকতে হবে হাত-পা মোজা দিয়ে। বিশেষত পা ঢাকা আবশ্যক। অনেকেই বোরকা এত ছোট করে ফেলেন যে উচু জায়গায় বা গাড়িতে উঠলে অর্ধেক পা বেরিয়ে যায়। এইটা পর্দা না। টাখনুর নিচে সালোয়ার পড়তে হবে। পা মোজা দিয়ে পায়ের গোড়ালিসহ সম্পুর্ন ঢাকতে হবে। যাতে করে উচু স্থান বা বাসে-রিকশায় উঠার সময় পা দেখা না যায়। অনেকে ফিংগারলেস হাত মোজা পড়েন। এক্ষেত্রে আমি সাজেস্ট করি ফুল কভারেজ হাত মোজা পড়ার। এতে করে স্কিন টোন বুঝা যায় না। কিন্তু অনেকেরই বাইরে বের হলে ফোন চালানোতে অসুবিধা হয়। তারা আংগুলের পাশে একটু খানি করে কেটে নিতে পারেন। এইটা ফিংগারলেস হাত মোজার থেকেও উত্তম। এছাড়া এখন ফোন টাচেবলও হাত মোজা পাওয়া যায়।

৬) অনেককেই হাত মোজার উপর চুড়ি,আংটি পড়তে দেখা যায়। এইটা পর্দা না। মূল কথা হলো কোনোভাবেই সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না।”

বোরকা পরে নিকাব পড়ার জন্য চুলগুলো উঁচু করে বাঁধলো প্রভা। তা দেখে আরমান বলল,

৭) পর্দার ক্ষেত্রে উঁচু করে কখনোই চুল খোঁপা করা যাবে না। এমনভাবে চুল বাঁধতে হবে যেন উঁচু হয়ে না থাকে কিংবা সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে প্রকাশ না পায়। এক্ষেত্রে চুল বেনী করা যায়।”

“চুল উঁচু করে বাঁধলে কি হয়েছে?”

“সৌন্দর্য প্রকাশ যাতে না পায়।”

“নিকাবের ভেতরে সৌন্দর্য কিভাবে দেখবে?”

“বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায় চুল বাঁধা জাহান্নামী মহিলাদের নিদর্শন। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মেয়েদের জন্য মাথায় চুলের খোঁপা বাঁধা জায়েয। কিন্তু মাথার উপর উটের কুজের মত উঁচু করে বাঁধা বৈধ নয়। কিন্তু পেছনে ঘাড়ের কাছে ফেলে রাখতে কোন সমস্যা নেই-যাতে উঁচু দেখাবে না।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন,

صنفان من أهل النار لم أرهما تيجان بأيديهن سياط يضربون بها الناس يعني ظلماً ونساء كاسيات عاريات مائلات مميلات رؤوسهن كأسمنة البخت المائلة لا يدخلن الجنة ولا يجدن ريحها، وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا.

“জাহান্নামীদের দু-দল এমন হবে যাদেরকে আমি দেখি নাই। একদল এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে যা দিয়ে তারা লোকদেরকে অন্যায়ভাবে মা’র’বে। আর দ্বিতীয় দল হবে ঐ সকল নারীদের যারা পোশাক পরিধান করার পরেও থাকবে উলঙ্গ। তারা পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করবে। আর তারা নিজেরাও পুরুষদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুল বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের মত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর হতে পাওয়া যাবে।”(মুসলিম : ২১২৮)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মাজাহির হক এর গ্রন্থকার রহিমাহল্লাহ লিখেছেন,“তাদের মাথার চুল বুখতী উটের হেলেপড়া কুঁজের ন্যায় দুলতে থাকে। এর দ্বারা ঐ সকল তরুণী ও যুবতীরা উদ্দেশ্য যারা ফ্যাশন করে মাথার চুল বাঁধে। আর যেভাবে বুখতী উট মোটাতাজা হওয়ার কারণে তার কুঁজ এদিক-ওদিক হেলতে থাকে। তদ্রূপভাবে ঐ সকল নারীদের মাথার সন্ধিস্থল এদিক-সেদিক দুলতে থাকে। নবী করিম (সা.) এর যুগে এধরনের নারীদের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু নবী করিম (সা.) মুজিযাস্বরূপ এসকল ভবিষৎবাণী করেছেন।” বর্তমানে যা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।(আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৭৪,ইমদাদুল আহকাম ১/৫৫৭)

অতঃপর পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে প্রভাকে রেডি করে আরমান নিজেও মাস্ক পড়ে গাড়িতে উঠলো। গাড়ি চলতে শুরু করলো। প্রভার হাতের উপর হাত রাখলো আরমান। প্রভা তাকাতেই বলল,”এখন সমাজ যতই উন্নত হোক না কেনো বা মহিলাদের পোশাক পরার ব্যক্তি স্বাধীনতা থাকুক না কেনো তার মধ্যেই শালীনতা থাকাটা খুব দরকার। পোশাকের ওপরেই তার ব্যক্তিত্ব পারিবারিক শিক্ষা আভিজাত্য নির্ভর করে। সেটা আমার মনে হয় সকল মানুষেরই ভাবা উচিত। এছাড়াও পর্দাশীল চরিত্রবান নারীরা সব জায়গায় সম্মানিত। রাসূল (সা.) বলেছেন,“মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরনীয়/গোপন বস্তু) সে বাইরে বের হলে শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়।”(সহীহ্ মিশকাত: হা/৩১০৯,ইরওয়া ২৭৩,তা’লীক আলা ইবনে খুযাইমা:হা/১৬৮৫)

মুসলিম নারীরা হচ্ছে মুক্তোর মতো। যা থাকে সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত। আর তাদের পরিধেয় বোরকা-হিজাব হলো ঝিনুকের মতো। যা মুক্তোকে সুরক্ষিত রেখে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। মানুষের কুদৃষ্টি থেকে আড়াল করে রাখে। তাই বোরকা-হিজাবকে কখনোই অবজ্ঞা করবেন না। কারণ বোরকা-হিজাবই আপনাকে সংরক্ষিত,সংরক্ষণ এবং সুরক্ষিত করে রাখবে। এছাড়াও পর্দা যদি আমাদের হেফাজত না করতো,তাহলে সৃষ্টিকর্তা কখনোই হয়তো আমাদের
মায়ের গর্ভে সৃষ্টি করতেন না। পৃথিবীতে প্রত্যেক জীবের সৃষ্টি কিন্তু একটা নিরাপদ স্থানে হয়। তাই পর্দা মানে পরাধীনতা নয় পর্দা মানে নিরাপত্তা। ইসলামে নারীরা সম্মানিত! আর ইসলামে নারীরা খুব সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। এছাড়াও পর্দাশীল চরিত্রবান নারীরা সব যায়গায় সম্মানের পাত্রী ছিলো আছে এবং থাকবে। আমি নারীদেরকে যথেষ্ট সম্মান করি। যদি তারা আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলে এবং জীবন পরিচালনা করে। সাহসী ওই নারী যে আল্লাহর আইন অনুযায়ী চলে। সুন্দর ওই মানুষ যার চরিত্র আখলাক সুন্দর। তাই নিজে পর্দাশীল চরিত্রবান হোন অন্যকেও উৎসাহীত করুন। একজন পর্দাশীল নারী হাজার পুরুষের চেয়েও শক্তিশালী প্লাস দ্বীনি-সুশিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এছাড়াও প্রতিটি মেয়ের জীবনে এমন কাউকে খুব প্রয়োজন যে তার পর্দার গুরুত্ব বুঝবে। দ্বীনের পথে চলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে,একজোড়া বিশ্বস্ত হাত মেয়েটাকে আগলে রাখবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। মনে রাখবেন,খোলা চকলেটে যেমন পিঁপড়া ধরে তাড়াতাড়ি,তেমনি পর্দাহীন নারীকেও কৃদুষ্টি দিয়ে গিলে নেয় খারাপ মানুষেরা। তাই খোলা চকলেট হবেন না। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন,একজন মানুষের আচার-আচরণ,চলাফেরা ভাব-ভঙ্গিমা এবং পোশাকই বলে দেবে সে কেমন? তার রুচি,শিক্ষা,মানসিকতা,ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি সবটাই! অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা যথাযথভাবে এ বিধান পালনের তাওফীক দান করুক। আমিন।”

ডক্টরের শরণাপন্ন হলো দু’জনে। বেবির কন্ডিশন জানার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে হলো। রিপোর্ট চেক করে বেশকিছু মেডিসিন সাজেস্ট করলো ডক্টর। একসাথে মেডিসিন কিনে দু’জনে বেরিয়ে এলো হসপিটাল থেকে। উশখুশ করে প্রভা বলল,”বেবির জেন্ডার নিয়ে ডক্টর কিছু বলতে চেয়েছিলেন। শুনেননি কেনো?”

“বেবির কন্ডিশন কেমন আছে সেটা জানা জরুরী ছিলো জেন্ডার নয়।”

“জানলে কি হয়েছে?”

“গর্ভাবস্থায় শিশুর লিঙ্গ জানার জন্য প্রচেষ্টা করা কোনো উত্তম কাজ নয়। শিশু ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক পৃথিবীতে সে আসবেই ইনশাআল্লাহ। এক সময় পৃথিবীতে আলট্রাসনোগ্রাম এর অস্তিত্ব ছিল না। তখনও নারীরা সন্তান জন্ম দিতো।”

“আপনি তো অনেক ধার্মিক মানুষ। তো আল্ট্রাসাউন্ড কেনো করালেন তাতে পাপ হবে না?”

“বেবির জেন্ডার জানার উদ্দেশ্যে আল্ট্রাসাউন্ড করাইনি। বরং এখনকার পরিবেশ,খাদ্যাভ্যাস সহ বিভিন্ন কারনে গর্ভবতী মা শিশুদের জটিলতা বাড়ছে এবং এই জটিলতা জানার জন্যই মূলত আপনাকে আল্ট্রাসাউন্ড করিয়েছি। এছাড়াও কোনো শিশুর লিঙ্গ জানার জন্য যদি আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয় এবং সেজন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফী এক্সপার্টের সামনে (সে নারী হোক বা পুরুষ) গর্ভবতী মায়ের সতর খোলা লাগে তাহলে তা বৈধ হবে না।”

“কেনো? অনেক জায়গায়ই তো পুরুষরা করে। তাতে কী হয়?”

“শুধুমাত্র শিশু ছেলে না মেয়ে এটা জানার জন্য কারো সামনে গর্ভবতীর সতর খোলার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। হ্যাঁ,তবে যদি কোনো জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজনে আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করা হয় আর সেই সময় শিশুর লিঙ্গও জেনে নেয়া সম্ভব হয় তাহলে এতে দোষের কিছু নেই। তবে শর্ত হচ্ছে,যিনি আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করাবেন তিনি মহিলা হতে হবে। তিনি প্রয়োজন অনুপাতে সতর খুলবেন এবং কোনো পরপুরুষের সম্মুখে তা সংঘটিত হতে পারবে না।”

চুপসে গেলো প্রভা। ততক্ষণে দুপুরের আযান হয়েছে। বাসায় যেতে যেতে নামাজের ওয়াক্ত থাকবে না। তাই আরমান প্রভাকে একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলো। সেখানে দু’জনে লাঞ্চ করে নিলো। (গতপর্বে রমজান মাসের ১০ দিন দিলাম। বিষয়টির জন্য দুঃখিত) লাঞ্চ শেষে প্রভাকে নিয়ে শপিংমলে ঢুকলো। কৌতুহলী হয়ে প্রভা জিজ্ঞেস করলো শপিংমলে কেনো এলেন?”

“শপিং করতে।”

ফের চুপসে গেলো প্রভা।

“শপিংমলে তো শপিং করতেই আসে। এটা বলার কি হলো আজব!”

“জানেন যেহেতু তাহলে জিজ্ঞেস করলেন কেনো?”

কথা বললো না প্রভা। মানুষটা সত্যিই অদ্ভুত! প্রভাকে নিয়ে ৫ তলায় উঠলো। শপিংমলের ৫ তলায় মসজিদ রয়েছে। মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের কক্ষ রয়েছে। প্রভাকে নিয়ে গেলো। বাইরের অন্যকোনো মসজিদেই সে নামাজ পড়তো কিন্তু প্রভাকে কোথাও একা রেখে যাওয়ার ভয় ছিলো।

“সাবধানে অযু করে নামাজ পড়ে নিন।”

“আল্ট্রাসাউন্ড করেছি এখন কিভাবে নামাজ পড়বো?”

“মানে?”

“গোসল করা লাগবে তো!”

“আল্ট্রাসাউন্ড করলে গোসল ওয়াজিব হয় না।”

“জেল লেগেছে তো পেটে।”

“সেই অংশটুকু ধুয়ে নামাজ আদায় করা যায়।”

দোনোমোনো করলো প্রভা। বুঝতে পেরে আরমান বলল,”মহিলাদের দুই ধরনের আল্ট্রাসাউন্ড করা হয় বুঝেছেন?একটি হচ্ছে শুধুমাত্র পেটের উপরে করা হয়। দ্বিতীয়টিতে,আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইসটি যোনি দিয়ে জরায়ুর বাইরের প্রান্ত পর্যন্ত চলে যায়। উপরেল্লিখিত দুই অবস্থাতেই মহিলার উপর গোসল ফরজ হবে না। তবে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। তাই উপরেল্লিখিত পরীক্ষার পর নামাজ ও হাতে পবিত্র কুরআন রেখে পড়ার আগে অযু করতে হবে। কারণ গোপনাঙ্গে আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্র প্রবেশ করানো হলে গোপনাঙ্গের অভ্যন্তরীণ তরলতা (যা নাপাক) ডিভাইসে লেগে শরীর থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসে,যা অযু ভঙ্গের কারণ। তবে উপরেল্লিখিত যন্ত্রটি প্রবেশ করানোর কারণে যদি মহিলার কাম উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত হয় এবং তা গোপনাঙ্গের বাহিরে চলে আসে,তাহলে গোসল ওয়াজিব হবে।”

(বাদায়িউস সানায়ে ১/২৪,ফাতাওয়ায়ে শামী ১/২৯৫,ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১৪,মুহিতুল বুরহানী ১/২২৯,হিদায়া ১/৩১)

মিনমিন করে বলল,”আচ্ছা শুনুন তবুও আমি বাসায় ফিরে গোসল করে নামাজ আদায় করবো এখানে না। আমার ড্রেসের মধ্যেও জেল লেগে গেছে।”

তপ্তশ্বাস ফেললো আরমান। সবসময়ই প্রভা ছুঁতো ধরে নামাজ না পড়ার জন্য। আজ মাফ করে দিলেও নেক্সট টাইম থেকে সে পূর্বের মতো কঠোর হবে। তার মতো একজন পরহেজগার মানুষের স্ত্রী নাকি ছুঁতো ধরা বেনামাজি! ভাবতেই আরমানের মন-মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলো। আজ সে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে,বিবাহের মাধ্যমে সবাই সুখী হতে পারে না। কেবল তারাই পারে,যারা শুধুমাত্র এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীনদার জীবনসঙ্গী গ্রহণ করে। এজন্যই বলা হয়েছে,“তবে তুমি দ্বীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হও ; অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।”(বুখারি, হাদিস : ৫০৯০,মুসলিম,হাদিস : ১৪৬৬,সুনানে আবু দাউদ,হাদিস : ২০৪৭)

আরো বলা হয়েছে,“বিয়েতে তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দিবে। নতুবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”(বুখারি,৫০৯০,মুসলিম,১৪৬৬,মুসনাদে আহমদ,৯৫২৬)

প্রভাকে বিয়ে করে তবে কি সে ভুল করে ফেলল?

দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন। যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। (সুরা মাঊন : ৪-৬)

“চুপচাপ এখানে বসে থাকুন। এক পাও কোথাও যাবেন না আমি আসা অব্ধি। পনের মিনিটের মধ্যে আমি নামাজ আদায় করে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। আপনি বসে থাকুন।”

মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো প্রভা। যাওয়ার পূর্বে প্রভাকে কফি এনে দিলো।
______

পনের মিনিট পর নামাজ আদায় করে আরমান ফিরে এলো। প্রভা বসে আছে চুপ করে।

“কোনো সমস্যা হয়েছে?”

“না।”

“আপনি ঠিক আছেন?”

“হ্যাঁ।”

“চলুন। যাওয়া যাক।”

বিনাবাক্য ব্যয়ে আরমানের হাত ধরে এগুতে লাগলো প্রভা। আরমান সাত তলায় পৌঁছালো। লিফট থেকে নামতেই প্রভার চোখে দৃশ্যমান হলো সব ফোনের শপ। কৌতুহলী হলো প্রভা। বিশাল একটা শপে ঢুকলো ওরা। প্রভার জন্য আইফোন,সীমকার্ড আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিলো। ভীষণ খুশি হলো প্রভা। ৬ তলায় আসতেই খুব সুন্দর সুন্দর ঘড়ির কালেকশন দেখতে পেয়ে আরমান এগিয়ে গেলো। প্রভার জন্য খুব সুন্দর একটি ব্যান্ডেড ঘড়ি কিনলো।

“হাত দিন ঘড়িটা পড়িয়ে দিই।”

“বোকার মতো দু-হাত বাড়ালো প্রভা।

“কোন হাতে পড়বেন?”

“আপনি তো পরহেজগার মানুষ কোন হাতে পড়লে ভালো হবে সেই হাতে পড়ান।”

“দুই হাতেই পড়া যায়। সমস্যা নেই এই ব্যপারে।”

প্রভার বাম হাতে ঘড়িটি পড়িয়ে দিয়ে ওরা ৪ তলায় এলো। সব ড্রেস কালেকশন। প্রভার জন্য বেশকতগুলো শাড়ি,থ্রি পিস কিনে নিলো। হঠাৎ প্রভার চোখ পড়লো প্লাজুর দিকে। খুব সুন্দর সুন্দর প্লাজু আর টপস ঝুলিয়ে রেখেছে। অনেক দিন হয়েছে প্রভা টপস আর প্লাজু পরে না। দেশে থাকতে পড়তো। মানুষটা তাকে শাড়ি পরিয়ে বাঙালি নারী বানিয়ে রেখেছে। একদম আনস্মার্ট একটা মানুষ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আপডেট হয়নি একটুও।

“ওই দেখুন না প্লাজু গুলো কি সুন্দর! রাফ ইউজ করার জন্য কয়েকটা নিয়ে নিন।”

আরমান একটা প্লাজু হাতে নিয়ে প্রভার উদ্দেশ্যে বলল,”প্লাজু!?এটা মেয়েদের পোশাক?”

“হ্যাঁ। পায়জামার পরিবর্তে বর্তমানে প্লাজুর অবস্থানটা বিশালভাবে প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে বুঝেছেন? আর সেটা হোক শহর কিংবা গ্রামে।”

“হুম। তবে আপনি কি জানেন এটি সম্পূর্ণই অনুকরণশীল একটি পোশাক এবং এটি দেখতে (পেটিকোট) অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ একটি পোশাকের মতো।”

“জানি তো!”

“এটি পড়লে টাখনু অতি সহজেই দেখা যায়।”

“তো কি হয়েছে?”

“তা ঠিক কিছু হয়নি। কিন্তু কেউ কেউ তো আবার যত উপড়ে পরতে পারে সেটার কম্পিটিশন ও চালায়।”

“প্রতিটি মেয়েই স্মার্ট হতে চায়।”

“হুম। তবে পায়ের টাখনু,তার উপরের প্রায় চার,পাঁচ,ছয় ইঞ্চি উপরে পড়তে ভালবাসে।”

“আরাম পাওয়ার জন্যই।”

“এই প্লাজুর কাপড়টা যে যত পাতলা নিতে পারে তাকে দেখে মনে হয় সে তাতোটাই খুশী থাকে।”

“হ্যাঁ।”

“অনেক সময় দেখা যায় ইলাস্টিক অর্থাৎ স্টিজ কাপড়ের প্লাজুই সবচেয়ে বেশি পরিধান করে সবাই। হাঁটার সময় এটা এদিক-সেদিক হয়ে নড়েচড়ে উড়ে এবং সঠিক জায়গায় কাপড়টি থাকে না। সহজেই অনেক কিছুই চোখে পড়ে।”

এই পর্যায়ে চুপ রইলো প্রভা।

“এই বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ ও ফ্যাশন-আসক্তি নিয়ে কিছু কথা বলবো শুনুন।”

“সাধারণ একটা প্লাজু নিয়েও আপনার আপত্তি?”

“হুম। পোশাক-আশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের বড় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যখন যে ফ্যাশন বের হচ্ছে তখন নির্বিচারে অনুকরণকেই “আধুনিকতা” বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে অমুসলিম বা ফাসেক (অভিনয় শিল্পী,নর্তকী,নায়িকা) লোকদের রীতি-নীতিই অধিক অনুকরণীয় হতে দেখা যায়। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত। হাদীস শরীফে এসেছে,“যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।”(সুনানে আবু দাউদ : হা/২/৫৫৯)

চোখগুলো বড় বড় করলো প্রভা।

“অর্থাৎ কেউ যদি নায়িকা নায়কদের অনুকরণ করে পোষাক পড়ে তাহলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত! সে ঈমানদার নয়। পরকালে তাদের যেমন শাস্তি প্রদান করা হবে তাকেও সেইভাবেই শাস্তি দেওয়া হবে। আবার অনেকেই বলে,“মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট!” আমি মন ভালো রাখার জন্য এসব পড়ি! তাদের উদ্দ্যেশে,যারা পোশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে মনমতো চলতে চায় কিংবা বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে পছন্দ করে তারা তাদের দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে বলে থাকেন,“মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট! বাইরের লেবাস-পোশাকে কী এসে যায়?”এভাবে তারা ইসলামের শিক্ষাকে খাঁটো করতে চায়। অনেক সময় দেখা যায়,ইসলামী পোশাকধারী কোনো ব্যক্তির কোনো ভুল হয়ে গেলে তখন তারা এই সব কথা বড় গলায় বলতে থাকে। ইসলাম ভিতর ও বাহির দুটোর প্রতিই গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন মাজীদে এসেছে,“তোমরা প্রকাশ্য গুনাহ ছাড় এবং অভ্যন্তরীণ গুনাহ ছাড়।”(সূরা আনআম : ১২)

মোটকথা,ইসলামে লেবাস-পোশাকের গুরুত্ব কম নয়। পোশাক-পরিচ্ছদ যদিও বাহ্যিক বিষয়,মানুষের সকল ভালো-মন্দের দলীল এটা নয়,কিন্তু একথাও তো অনস্বীকার্য যে,লেবাস-পোশাকেরও একটি বড় প্রভাব মানুষের স্বভাব ও আচরণের উপর পড়ে থাকে। এটা কি অস্বীকার করা যাবে যে,কিছু পোশাক অন্তরে অহংকার ও আত্মগরিমা সৃষ্টি করে,অন্যদিকে কিছু পোশাক বিনয় ও নম্রতা জাগ্রত করে? কিছু পোশাক ভালো কাজে ও ভালো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে কিছু পোশাক মন্দ ও অকল্যাণের দিকে আকর্ষণ করে! অনেকেই দ্বীনদার শ্রেণীর পোশাককে “সম্প্রদায়িক” পোশাক মনে করে। অনেকে ইসলামী পোশাককে সৌদি,পাকিস্তানী বা হুজুরদের ইউনিফর্ম মনে করে থাকে। ফলে নামায-রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী করলেও তারা এই পোশাক গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের এ ধারণা ভুল। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে,ইসলামসম্মত পোশাক মানে কোনো সাম্প্রদায়িক বা আঞ্চলিক পোশাক নয়। হ্যাঁ,তা মুসলমানের পোশাক বটে। পোশাক সম্পর্কে ইসলামী নীতিমালা। এই জ্ঞানের অভাবে অনেকে সঠিক পোশাক অবলম্বন করতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। আবার কিছু স্বতন্ত্র বিষয়ও রয়েছে।
____________

চলবে।
সংলাপ বা বাক্যগুলো অগোছালো থাকতে পারে আপনারা মানিয়ে নিয়েন। রিচেক করিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here