#একটি_সাঁঝরঙা_গল্প
#তানিয়া_মাহি
#পর্ব_২৬
“বেশি কথা বললে চুমু দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিব। তোর বাপের সামনে তোর এই গালে, ঠোঁটে চুমু পরলে ভালো লাগবে? আমার সাথে একদম তেজ দেখিয়ে কথা বলবি না। হবু বরের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় জানিস না? হবু বর হই আমি তোর। সম্মান দিয়ে কথা বলবি। ‘তুই’ করে সম্বোধন যতবার করে করবি ততবার করে একটা চুমু। ট্রেনে মানুষ কত দেখেছিস? তোর বাপ-মাও আছে। আমার বাপ-মা সমস্যা করবে না কিন্তু তোর বাপ?”
তোয়া রাগী চোখে আবিরের দিকে তাকালো।
“আমি তোকে দেখছি আর অবাক হচ্ছি। কী পরিমাণ অসভ্য হয়ে গেছিস তুই! আমার সাথে এসব নিয়ে কথা বলতে তো একটুও রুচিতে বাঁধছে না।”
আবির লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করে বলল,
”যাহ! তোমার সামনে আবার কীসের লজ্জা!”
“তুই আমাকে তুমি করে বলছিস?”
“তুমিও আমার সাথে আপনি বা তুমি করে না বললে চুমুর ডোজ বাড়িয়ে দেব।”
“অশ্লীল!”
“ইয়েস, আই অ্যাম৷”
“আবার স্বীকারও করছিস!”
“তুমি বলবে আর আমি স্বীকার করব না?”
“দরদ উথলে পড়ছে দেখছি।”
”ভালোবাসা, দরদ না।”
“আমি এসব ভালোবাসা নিতে পারছি না।”
দমে গেল আবির। তোয়ার দিকে মলিনমুখে তাকিয়ে বলল,
“আসলেই? অসহ্য লাগছে?”
“হ্যাঁ, অনেক।”
“আমাকে?”
“হ্যাঁ, তোকে। তুই রিলেটেড সব কথাবার্তাকে।”
“ভেবে বলছিস?”
“এখানে আবার ভেবে বলার কী আছে?”
“ভেবে বলার বিষয়ই তো। তোর কাছে অসহ্যকর লাগলে বিয়েটা ক্যান্সেল হয়ে যাবে।”
তোয়া মাথার দুই পাশে হাত দিয়ে চেপে ধরে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে উঠল,
“বিয়ে ঠিক হলোই বা কবে যে ক্যান্সেল হবে?”
“তোর বাড়ির মানুষ, আমার বাড়ির মানুষ সবাই তো মেনে নিয়েছে। এখন শুধু তুই বাকি।”
“আমি তোকে কীভাবে বিয়ে করব?”
“করবি না কেন? আমি তোকে ভালোবাসি। সমস্যা কোথায়?”
“আমি ভালোবাসি না।”
“অন্য কাউকে ভালোবাসিস?”
“অন্যকাউকেও ভালোবাসি না তোকেও ভালোবাসি না। যা এখান থেকে।”
“তুই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিস আমাকে।”
“কাছে আসিস না তাহলে এমন করব না।”
“তোকে ভালোবেসে অপ*রাধ করে ফেলেছি?”
“কাইন্ড অব।”
“সিরিয়াসলি?”
“হুম। আমি অবাক হচ্ছি।”
“ফার্স্ট অব অল, তোর আর আমার বয়সের পার্থক্য খুব একটা নেই। আমি পয়ত্রিশ বছর বয়সে ঝিমিয়ে যাওয়া শুরু করব, তুই ইয়ং হবি। তখন চারপাশে সুন্দর সুন্দর মেয়ে আসবে। আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করবে। আমার ভাই ফালাককে পছন্দ করে। তুই অন্তত বাহিরে বিয়েটা কর। একই জায়গায় কেন আটকে যেতে হবে? তার ওপর এই যে তুই অশ্লীল হওয়ার অভিনয় করছিস সেটা ভালো হচ্ছে না। তুই এরকম না। তুই অতি সভ্য একটা ছেলে। তোর সাথে এমন কথাবার্তা যায় না। হ্যাঁ প্রতিটা ছেলে বাহিরে সবার কাছে সভ্য হলেও প্রেমিকা বা বউয়ের কাছে অসভ্য। এটা চিরন্তন সত্য কিন্তু আমি তোর এই অসভ্য হওয়ার অভিনয় ধরে ফেলেছি৷ এসবে তুই কাঁচা। তোর সাথে এতদিনের সম্পর্কটা ভিন্ন ছিল। কাল থেকে সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। তোকে ভীষণ দূরের লাগছে। ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ দূরের। তোকে অচেনা লাগছে।”
তোয়া থেমে আবার বলল,“আর বাকি রইল চুমু। তুই আমাকে চুমু খেতে পারবি? আসলেই পারবি?”
তোয়া নিজের হাতটা আবিরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,“আমার হাতটা ধরে দেখা। আমি দেখি তুই কতটা অসভ্য। ”
আবির মাথা নিচু করল। তার পক্ষে এসব আসলেই সম্ভব নয়। তোয়াকে কাল সবটা বলার পর থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে সে। আবির সেটা মোটেও মেনে নিতে পারছিল না তাই ভেবেছিল এসব বললে হয়তো তোয়া ভালোভাবে কথাবার্তা বলবে। এখন নিজের কর্মকান্ড মনে করতেই লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসছে তার। তোয়া তখনো আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির মাথা উঁচু করে তোয়ার দিকে তাকালো। ভাঙা ভাঙা শব্দে বলল,
“ক কী চাইছিস তুই?”
“তোর জন্য আমার কোন অনুভূতি নেই।”
“তোর জন্য আমার কোন অনুভূতি নেই।” কথাটা বারবার আবিরের কানে বাজতে থাকলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জোরপূর্বক হেসে উঠে দাঁড়ালো সে। মৃদু গলায় শুধু বলল,
“আসছি।”
ট্রেন এসে স্টেশনে থামলো। ফালাক অনেকক্ষণ আগেই আবিরের কথায় আবার তোয়ার কাছে এসে বসেছিল। ট্রেন থামলে তোয়াকে আসতে বলে ফালাক নিজের ব্যাগটা নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। নিশো আগে আগে নেমেছে সবাইকে নামতে সাহায্য করতে। একে একে সবাই নামছে। ট্রেন থামার সাথে সাথে দরজার দিকে সীমিত সময়ের মধ্যে নামার জন্য ভিড় জমে যায়। একে একে সবাই নামছে। তোয়া এগিয়ে এলে আবিরও বের হয়। নিশো আর আবিরের কথা হয়েছিল এটা নিয়ে যে, একজন সবাইকে নামাবে আর একজন সবচেয়ে শেষে থাকবে যেন কারো অসুবিধা না হয়।
তোয়া দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে গেল। সামনের মানুষগুলো নামছে। স্টেশনে আজ অন্যদিনের তুলনায় ভিড় অনেক বেশি। রাবেয়া বেগম নামার পরপরই ফালাক সামনে এসে দাঁড়ালো। নিশো হাত এগিয়ে দিল ফালাকের দিকে। ফালাক নিজের ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“ব্যাগটা ধরুন, আমি নামতে পারব। আমাকে ধরতে হবে না। ”
নিশো ফালাকের কথামতো ব্যাগটা নিয়ে নিচে রেখে আবার হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“মাঝে ফাঁকা অনেক আর প্লাটফর্ম ওখান থেকে নিচেও। তুমি হাতটা ধরেই নেমে এসো নইলে পড়ে যেতে পারো।”
ফালাক বাহিরে তাকিয়ে দেখল। আসলেই দূরত্ব বেশি। লাফ দিয়ে নামতে হবে। সুতরাং সে নিশোর হাত ধরতেই নিশো ফালাককে নেমে আসতে বলল। নিশোর কথামতো ফালাকও নেমে এলো। মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে।
নিশো পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখল তোয়া আর আবিরও কাছাকাছি চলে এসেছে। সে অন্যদের নামতেও সাহায্য করছিল একপাশে দাঁড়িয়ে। আবির আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে। ঠিক দরজার সন্নিকটে এসে তোয়ার পিছনে দাঁড়ানো একটা বিশ- একুশ বছর বয়সী ছেলেকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জোরে একটা থাপ্পড় দিল। জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল। সবাই আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তোয়া আবিরের কান্ড দেখে চকিতে বলে উঠল,
“তুই ছেলেটাকে মা*রলি কেন? আমার ওপরের রাগ এখন যাকে তাকে দেখাবি? ছেলেটা কী দোষ করল যে তুই ওকে এত জোরে মা*রলি?”
ছেলেটা গালে হাত দিয়ে আবিরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আবির ছেলেটার শার্টের কর্লার ধরে নামতে নামতে নিশোকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তোর বোনকে নামতে সাহায্য কর।”
প্লাটফর্মে পা রাখতেই জাফর সাহেব এবং জাভেদ সাহেব এগিয়ে এলেন। নিশোও তোয়াকে ট্রেন থেকে নামিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেল।
জাভেদ সাহেব ছেলের দিকে তাকিয়ে শুধালেন,“কী হয়েছে? ছেলেটাকে মা*রলে কেন?”
আবির মাড়ি শক্ত করে বলে উঠল,“উচিত ছিল ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া।”
তোয়া চকিতে বলে উঠল,“কী করেছে তোর ওই ছেলেটা?”
আবির রাগী চোখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে আবার নজর অন্যদিকে রাখলো৷ ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে বলল,
“কী করেছিস বল?”
তোয়া পাশে থেকে আবার বলল,“ সে কী বলবে? মে*রেছিস তো তুই, তাই তুই-ই বল।”
নিশো এবার ধমকে তোয়াকে চুপ করিয়ে বলল,
“তোয়া, তুই চুপ কর। সিরিয়াস কোন ঘটনা না ঘটলে আবির এরকম করার ছেলে না।”
রাবেয়া বেগমও পাশে থেকে বলে উঠলেন,
“হ্যাঁ তোয়া, তুমি চুপ করো একটু। ওকে বলতে দাও।”
আবির তোয়ার দিকে একপলকে তাকিয়ে রাবেয়া বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“কিচ্ছু হয়নি, মা। চলো। বাড়ি যাব। ” বলেই হাঁটা শুরু করল আবির। সবাই এক আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
আবিরদের বাড়ির মানুষদের পাশেই এক মহিলা এতক্ষণ কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন। ফোন কেটে তাদের দিকে দু’পা এগিয়ে এসে তোয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“এই পুঁচকে ছেলেটা তোমার কোমরে বারবার ধাক্কা লাগার ভঙ্গিতে স্পর্শ করছিল। তুমি হয়তো ভিড়ের মাঝে ঠেলাঠেলি ভেবে দাঁড়িয়ে ছিলে। যে ছেলেটা এই ছেলেকে চড় দিল ওই ছেলেটা দেখেছিল কান্ডটা তাই ওটা করেছে। ছেলেটা একদমই ভুল করেনি। পারলে এই শয়তানকে ধরে গণধোলাই দাও। এরা ভিড় খোঁজে মেয়েদের এমন গায়ে হাত দিতে।”
মহিলার কথা শেষ হওয়া মাত্র নিশো সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিল ছেলেটাকে। বেশ গন্ডগোল বেধে গেল। চারদিকের মানুষ সেদিকে এগিয়ে এলো। সবাই বিষয়টা জানলে নিজেরাও মা*রতে আসলে ছেলেটা কান্নাকাটি করে মাফ চাইতে থাকলো। সবাইকে ফেলে রেখে নিশো ছুটলো আবিরকে খুঁজতে। ভিড় কমতে শুরু করলে সবাই বাড়ির দিকে এগুতে থাকলো।
এতক্ষণে তোয়ার মনের মধ্যে খচখচ করা শুরু করেছে। শুধু শুধু আবিরকে এতগুলো কথা শোনালো সে। কী খারাপ ব্যবহারটাই না করল!
#চলবে……..
১৫ তারিখে ফালাক-নিশো বইটই অ্যাপে ‘মনের আঙিনায়’ নামক ই-বুক আকারে আসছে ইন শা আল্লাহ। পড়ে দেখার আমন্ত্রণ রইল। 🌼
সবাই বেশিবেশি কমেন্ট করবেন।💜