#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________44
এক দিন দুই দিন করে,
কেটে গেলো ১৫ টা দিন………….
এই পনেরো দিনে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে । নীলার সাথে ইমনের প্রেম জমে উঠেছে । আবার এদিকে সাব্বিরের সাথে ইকরার কি ভাবে যেন রিলেশন হয়ে গেছে । শোনা গেল তারা নাকি ফেসবুকে একে অপরের সাথে পরিচিত ছিল । রাহুল এই পনেরো দিনে এখনো সামিয়াকে তার মনের কথা বলতে পারে নি । আর সামিয়াও অপর পাস থেকে একই অবস্থায় আছে । সেও রাহুলকে তার মনের কথা বলতে পারছে না । দু’জনেই অনেক দিধার মধ্যে আছে । যদি রিজেক্ট করে দেয়,, তাহলে তো অনেক কষ্ট পাবে । তাই দু’জেনর একজনও কেও কারো মনের কথা খুলে বলছে না । নিদ্র এখন পুরো সুস্থ,,,,আজ তাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করা হয়েছে । তবে পায়ে এখনো সামান্য একটু ব্যথা আছে । এখানে আরো দু’টো দিন থাকবে তারা । তারপর ঢাকায় ফিরে যাবে । তৃপ্তিকে নিদ্রর বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নিদ্র । অপর দিকে আমেনা তো নিদ্রকে ইচ্ছা মতো বকছেন, কেন নিদ্রর ফোন অফ ?,,,, কেন নিদ্র ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে না ?,,,তৃপ্তির তো কলেজ সুরু হয়ে গেছে । আরো কতদিন থাকবে এখানে,,,, কলেজ অফ যাচ্ছে তো । নিদ্রর এমন অবস্থার কথা কেও আমেনা বা ফরহাদকে শোনায় নি । শোনালে তো আমেনা পুরো উথাল-পাতাল করে ফেলবে । আজ সকাল সকাল নিদ্র হসপিটাল থেকে এসে চেয়ারম্যান বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো । এরপর বসার ঘরে সোফার উপরে গিয়ে বসলো নিদ্র । জেক,সাব্বির আর রাহুলও নিদ্রর পাসে বসলো । বজলুর একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে বললো ।
:+ঢাকা যাবি কবে । না আরো কয়’টা দিন থেকে যাবি ।(বজলুর)
নিদ্র ফ্লোর থেকে মাথা তুলে বজলুরের দিকে তাকালো । এরপর আবার চোখ নামিয়ে বললো ।
:+কাল চলে যাবো ভাবছি ।(নিদ্র)
নিদ্রর কথা শুনে জেক বলে উঠলো ।
:+আরে না,, কাল না । আরো দু’টো দিন থাকবো আমরা । তোর পিছনে সময় দিতে দিতে,,,,,,, তোদের গ্রাম ঘুরে দেখা হয়নি আমাদের । তাই আমরা ভবছি দুই দিন আরো থেকে যাবো । তারপর ঢাকা ফিরবো,,,কি বলিস রাহুল,,,,,।(জেক)
শেষের কথা রাহুলের দিকে তাকিয়ে বললো জেক । রাহুলও জেকের মতো লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বলে উঠলো ।
:+আব,,,,হ্যাঁ,,না,,,মানে,, আরো কয়দিন থাকবো আমরা নিদ্র । আমরা তো এখনো ঘুরে দেখতে পারলাম না তোদের গ্রাম’টা ।(রাহুল)
নিদ্র জেক আর রাহুলের দিকে তাকালো । জেক আর রাহুল নিদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে । সাব্বির মাথা নিচু করে বসে আছে । তার কিছু বলার নেই । জেক আর রাহুল যা বলবে তাই করবে সে স্থির করে নিয়েছে । বজলুরের কাছ থেকেও মাপ চেয়ে নিয়েছে সাব্বির নিজের কার্জ কালাপের জন্য । হঠাৎ সালমার আগোম ঘটে সেখানে । তিনি জেক আর রাহুলের কথা শুনে, নিদ্র কিছু বলার আগেই বললেন ।
:+তোমাদের যতো দিন ইচ্ছে এখানে থাকবে । কোনো সমস্যা নেই ।(সালমা)
হাতে থাকা চায়ের ট্রে’টা টেবিলের উপর রেখে বললেন তিনি ।
:+কিন্তু চাচি আম্মা,,, MOM,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।(নিদ্র)
নিদ্র আরো কিছু বালর আগে রাহুল নিদ্রর মুখ চেপে ধরে বললো ।
:+আন্টি যেহেতু একবার বলে দিয়েছে । তাহলে আর কথা না । এখন চুপচাপ বসে থাক বোবার মতো । আমরা যা বলবো তাই হবে ।(রাহুল)
রাহুলের কান্ড দেখে সালমা একটা মুচকি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন । বজলুর একটা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললো ।
:+এখন চা খাও । আর তোমাদের যতদিন মন চায় থাকো সমস্যা নেই ।(বজলুর)
এই বলে বজলুর চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসা থেকে উঠে,, সেখান থেকে চলে গেলেন । রাহুল তখন নিদ্রর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো । জেক এক কাপ চা হাতে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল । রাহুলও এক কাপ চা হাতে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল । নিদ্র এখন যেই ভাসন দিবে তা শোনার ইচ্ছে নেই জেক আর রাহুলের । সাব্বির বসে আছে দেখে নিদ্র সাব্বিরকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাব্বিরও এক কাপ চা হাতে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল । নিদ্র নিরাশ হয়ে বসা থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো । পিছন থেকে তখন সালমা বলে উঠলো ।
:+চা খাবে না । চা’টা খেয়ে যাও । ঠান্ডা হয়ে যাবে তো ।(সালমা)
সালমার কথা শুনে নিদ্র দারিয়ে গেল । এরপর সালমার দিকে ঘুরে বললো ।
:+ভালো লাগছে না চাচি আম্মা,,, আপনি ওটা অন্য কাওকে দিয়ে দিন ।(নিদ্র)
এই বলে নিদ্র সিরি বেয়ে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো । সালমা একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে চায়ের ট্রে’টা হাতে নিয়ে কিচেনের দিকে চলে গেলেন । নিদ্র তৃপ্তির রুমের সামনে এসে দারালো,,, এরপর দরজা হালকা খুলে দেখলো । তৃপ্তি টেডি জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে বেডের উপর । আর তার চুল গুলো উস্কো খুস্কো ভাবে ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে মুখের উপর । নিদ্র মুচকি হেসে ভাবছে,,, এই টেডি’টার যায়গায় সে থাকলে কি হতো । খুব ভালো হতো । তার কলিজা, তার বুকের উপর শুয়ে থাকতো । আর সে তার কলিজা’টাকে পরমযন্তে জরিয়ে ধরতো । এরপর চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে কপালে ছোট একটা চুমু খেতো । আর বলতো,,”মাই কিউটি” । এসব ভেবে নিদ্র আবার দরজা’টা ভেজিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো । এরপর রুমের সিলিং ফেন’টা ছেরে দিয়ে বেডের উপর গা এলিয়ে দিলো । কিছুখনের মাঝে রাজ্যের ঘুম এসে দারালো নিদ্রর চোখে । নিদ্র সাত পাচ ভাবা বন্ধ করে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল ।
——————————————
এভাবে কেটে গেল আরো দুই’টা দিন………….
এই দুই দিনে অনেক ঘুরা ফেরা করেছে সবাই । আজ জেক,,রাহুল,আর সাব্বির বায়না করছে তারা খাসির গ্রিল খাবে । মানে গোটা খাসি টাকে পুরিয়ে খাবে । তা শুনে বজলুর বাজার থেকে একটা খাসি কিনে নিয়ে আসলেন । এরপর বাবুর্চি ডেকে খাসি সাইজ করতে বললেন তিনি । রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে এটা খাওয়ার প্লেন করলো সবাই । নীলা তা শুনে তো মহা খুশি । এদিকে তৃপ্তি তো সামিয়া আর ইকরাকে রিতিমতো টেনে নিয়ে আসছে বাড়িতে । রাতে এটা একসাথে বসে খাওয়ার প্লেন করলো সবাই । হঠাৎ নিদ্রর মনে এলো ইমনের কথা । নীলার জন্য এটা একটা সারপ্রাইজ হবে ভেবে নিদ্র ইমনকে কল করে আসতে বললো । ইমন প্রথমে না করলেও পরে নিদ্রর জোরা জুরিতে আসবে বলে কথা দেয় । প্লেন মোতাবেগ কাজ চলছে । সন্ধার পর থেকে জেক, রাহুল আর সাব্বির বাড়ির ভিতর থেকে চেয়ার টেবিল নিয়ে বাহিয়ে গোছাতে লাগলো । নিদ্র সজিবকে কোলে নিয়ে এক পাসে বসে বাবুর্চিদের কাজ দেখছে,,,। এদিকে তৃপ্তি, নীলা, সামিয়া আর ইকরা বাড়ির ভিতরে সোফার উপর বসে গল্প করছে । হঠাৎ নীলা বলে উঠলো ।
:+কাল তো আমরা চলে যাবো । কিন্তু তোমাদের অনেক মিস করবো ।(নীলা)
নীলার কথা শুনে সামিয়ার বুক ধরত করে উঠে । হাসি মুখ’টা সাথে সাথে কালো মেঘে ঢেকে যায় । কিন্তু সামিয়া কাওকে এটা বুঝতে না দিয়ে আরাল করে নেয় । ইকরা বলে উঠলো ।
:+আমিও তো কাল চলে যাবো ।(ইকরা)
ইকরার কথা শুনে তৃপ্তি বললো ।
:+তুমি কাল চলে যাবে মানে । মিম তো শুনলাম পরসু আসবে ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথার পাত্তা না দিয়ে নীলা বললো ।
:+আচ্ছা তোমাদের বাড়ি কোথায় । আসলে এখন প্রজন্ত যানতে পারলাম না । তাই জিজ্ঞেস করলাম । বলবো বলবো ভাবছিলাম কিন্তু আর বলা হয়ে উঠে নি ।(নীলা)
নীলার কথা শুনে ইকরা বললো ।
:+আমরা ঢাকায় থাকি । কিন্তু আমাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে ।(ইকরা)
তৃপ্তি তখন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো ।
:+তোমরা ঢাকায় কোন যায়গায় থাকো আপু ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে নীলা তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+এই কথা এখন আমিও জিজ্ঞেস করতাম ।(নীলা)
ইকরা ঘার ডলতে ডলতে বললো ।
:+ঢাকায়,, হাতিরঝিল ।(ইকরা)
ইকরার কথা শুনে তৃপ্তি উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো ।
:+আরে তাহলে তো তুমি আমাদের সাথে যেতে পারো । আমরা তো ওখান দিয়েই যাবো । তাই না নীলা আপু ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে নীলা বললো ।
:+হুম তাই তো । তুমি আমাদের সাথে যেতে পারো । আমরা তো ওখান দিয়েই যাবো ।(নীলা)
ইকরা তখন বললো ।
:+তোমাদের বাসা কোথায় আপু ।(ইকরা)
নীলা কিছু বলার আগেই তৃপ্তি বলে উঠলো ।
:+মোহম্মদপুর,, আপুরা আমার বড় আব্বুর বাসায় ভারা থাকেন ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথার পিঠে নীলা কিছু বলতে গিয়ে হঠাৎ সামিয়ার উপর চোখ পরলো,, দেখলো সামিয়া মাথা নিচু করে বসে আছে । মুখ’টা ঢেকে আছে কালো মেঘে । নীলা তখন সামিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো ।
:+সামিয়া মন খারাপ । এমন ভাবে বসে আছো যে । কিছু বলছো না কেন ।(নীলা)
সামিয়া ছলছল নয়নে নীলার দিকে তাকালো । নীলা তখন বসা থেকে উঠে সামিয়ার পাসে গিয়ে বসে সামিয়া হাত ধরে বললো ।
:+কোন সমস্যা হয়েছে । মন খারাপ কেন তোমার ।(নীলা)
সামিয়া তখন নিজেকে কিছু’টা সাভাবিক করার চেস্টা করে বললো ।
:+আমি একা হয়ে গেলাম আপু ।(সামিয়া)
বলেই দু’চোখের জল ছেরে দিলো সামিয়া । তৃপ্তি তখন সামিয়ার পাসে গিয়ে বসে সামিয়াকে জরিয়ে ধরলো । চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গরিয়ে পরলো তৃপ্তির । কাদালো কন্ঠে তৃপ্তি বলে উঠলো ।
:+তুই একা হবি কেন ? আমি আছি না ।(তৃপ্তি)
সামিয়া এবার তৃপ্তিকে দু’হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বললো ।
:+কাল তো তুই চলে যাবি ঢাকায় । তখন তো আমি একা হয়ে যাবো । আর মিমের তো বিয়ে হয়ে গেছে । এখন আমি একা হয়ে গেলাম না বল ।(সামিয়া)
তৃপ্তি চোখের পানি মুছে বললো ।
:+আমি কল করবো তো তোকে ।(তৃপ্তি)
সামিয়া তৃপ্তির কথা শুনে বললো ।
:+এর আগের বারও এ কথা বলেছিস তুই । কৈ একটা কলও তে করিস নি ।(সামিয়া)
তৃপ্তি এবার সামিয়াকে শুরশুরী দিতে দিতে বললো ।
:+আমি না একবার বলেছি নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি । কথা কানে যায়নি,,,, সালি ।(তৃপ্তি)
এই বলে তৃপ্তি সামিয়াকে শুরশুরী দিতে লাগলো । আর সামিয়া হো হো করে হাসতে হাসতে বলে উঠলো ।
:+তৃপ্তি ভালো হচ্ছে না কিন্তু । ছার আমায় ।(সামিয়া)
কিন্তু কে শুনে কার কথা তৃপ্তি সমানে নিজের কাজ করে যাচ্ছে । নীলা আর ইকরা এদের দুঃখ ভরা খুন সুটি দেখে হাসছে । এদিকে সালমা একটু দুরে দারিয়ে এদের দেখছিল । আর নিজের পুরোনো বান্ধবীদের কথা মনে করে আফসোস করছিল । কত না সুন্দর ছিল দিন গুলো । হেসে খেলে এ বাড়ি ও বাড়ি টো টো করে ঘুরে বেরাতো তারা । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসলেন তিনি । সালমা বাহিরে বেরিয়ে দেখলো । উঠানের এক কোনায় বসার আয়োজন করছে নিদ্রর বন্ধুরা । যেখানে বসে সবাই আমদ ফুর্তি করবে । সালমা এখন ভাবছে । আজ তার বাড়ি’টা কতো হৈ হুল্লোড়ে মেতে আছে । কিন্তু কাল,, কাল এই বাড়ি’টা পুরো শান্ত হয়ে যাবে । এমন হয়ে যাবে যে,,মনে হবে এই বাড়িতে কেও থাকে না । কতো কতো কাল ধরে যেন কেও থাকে না । বাড়ির ভিতর থেকে যেন অশরীরী আত্তার হাসি ঠাটঠার আওয়াজ শুনা যাবে । নেমে আসবে কালো মেঘ । ভেবে সালমার গা সিরসির করে উঠে ।
:+চাচি আম্মা,,,, আপনি ওখানে দারিয়ে আছেন কেন । এখানে এসে বসুন ।(নিদ্র)
নিদ্রর গলার আওয়াজ শুনে ঘোর কাটে সালমার । তিনি নিদ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলো,, নিদ্র, সজিবকে কোলে নিয়ে বসে আছে । সালমা নিদ্রর পাসে এক’টা চেয়ারে বসে বললো ।
:+তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে ।(সালমা)
নিদ্র কিছু’টা অবাক দৃষ্টিতে সালমার দিকে তাকালো । সালমা তখন সজিবকে বললো ।
:+আব্বু,,,, বাড়ির ভিতর থেকে আম্মুর ফোন’টা নিয়ে আসো তো । আম্মু ফোন’টা আনতে ভুলে গেছি ।(সালমা)
সালমার কথা শুনে সজিব নিদ্রর কোল থেকে নেমে বাড়িত ভিতরে চলে গেল ফোন আনার জন্য । আর সালমা তখন নিদ্রর হাত ধরে বললো ।
:+বাবা আমি তোমার কাছে একটা রিকুয়েষ্ট করবো । আমার রিকুয়েষ্ট’টা রাখবে বলো ।(সালমা)
হঠাৎ সালমা এমন করায় নিদ্র ভেবা ছেকা খেয়ে যায় । নিদ্র কিছুখন চুপ থাকার পর বুঝতে পারলো সালমা তার কাছে কি রিকুয়েষ্ট করবে । নিদ্র মুচকি হেসে বললো ।
:+বলেন আগে শুনি ।(নিদ্র)
সালমা এবার আবার বললো ।
:+না তুমি বলো,, আমি যা বলবো তা রাখবে ।(সালমা)
আকুতি শুরে বললো সালমা । নিদ্র চুপ করে রইলো । সালমা নিদ্রর চুপ থাকা দেখে বললো ।
:+মানুষ বলে হাত ধরা আর পা ধরা এক সমান । আমি তোমার হাত ধরেছি । তুমি যদি বলো,,,,,,,।(সালমা)
সালমা আর কিছু বলার আগে নিদ্র চট করে নিজের হাত সালমার থেকে ছারিয়ে বলে উঠলো ।
:+চাচি আম্মা,,, আপনি এসব কি বলছেন । আপনি আমার গুরুজন,,,আপনি আমার MOM এর মতো । আপনি যা বলবেন আমি তা শুনবো । তুবুও আপনি আমাকে এতো বড় পাপি বানায়েন না । আমাকে আপনি গুনাগারী বানায়েন না চাচি আম্মা ।(নিদ্র)
নিদ্রর কথা শুনে সালমা চোখের পানি মুছে বললো ।
:+আমি যা বলতে চাচ্ছি । তুমি নিশ্চয় বুঝতে পারছো আমি কি বলবো । আমার ভাই অনেক ভালো মানুষ বাবা । ছেলে’টার প্রান ভিক্ষা চাই আমি তোমার কাছে । ওকে প্লিজ ছেরে দাও । আমার ভাই ওদিকে ছেলে ছেলে করে পাগল হয়ে যাচ্ছে । এই ১৬/১৭ দিনে না হলেও হাজার’টার উপর কল করেছেন তিনি । আমি এটা ওটা বলে উনাকে বুঝ দিয়ে রেখেছি । প্লিজ ওকে ছেরে দাও,,, ও আর কখনো এই দেশে আসবে না ।(সালমা)
সালমার মিনতি ভরা কন্ঠ নিদ্রর মন গলে গেল । নিদ্র সালমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো ।
:+চাচি আম্মা,,,আমি আগে ঢাকা গিয়ে দেখি ওকে । তারপর আপনাকে আমি যানাবো ।(নিদ্র)
সালমা শারীর আচল দিয়ে চোখের পানি মুছে বললেন ।
:+আমি সপ্নেও কখনো ভাবিনি আমার ভাইয়ের ছেলে এমন হবে ।(সালমা)
এই বলে সালমা বসা থেকে উঠে বাড়ির ভিতরের দিকে চলে যান । নিদ্র ঠাই বসে রয় । তখন জেক নিদ্রর পিছনে এসে দারিয়ে বললো ।
:+যা বলে গেছে আমি কিছু শুনি নি । তবে দুর থেকে যা বুঝলাম । ছেলে’টাকে ছেরে দেওয়ার কথা বলেছে । কিন্তু এর তো শাস্থি পাওয়ার দরকার নিদ্র ।(জেক)
জেকের কথা শুনে নিদ্র ঘার কাত করে পিছনে জেকের দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+আজ এসব বাদ দে জেক । এখন এই আনন্দ ভরা আমেজ নষ্ট করতে চাই না আমি । এই বিষয়ে আমরা পরে কথা বলবো ।(নিদ্র)
জেক কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেল । নিদ্র বসে বসে আবার বাবুর্চিদের কাজ দেখতে লাগলো ।
—————————————
রাত ১০ বেজে ৪৫ মিনিট……………..
বাড়ির উঠানের এক কোনায় তৃপ্তি, নীলা, ইকরা, সামিয়া, আর সালমা একপাসে বসে আছে । আর অপর পাসে নিদ্র, জেক, সাব্বির, রাহুল, ইমন, সজিব, আর বজলুর বসে আছে । বাবুর্চি দু’জন খাসির মাংস কেটে কেটে প্লেটে নিয়ে সবার হাতে হাতে দিচ্ছে । সালমা খাসির মাংস খায় না । কিন্তু আজ সবাই মিলে জোর করে উনাকে বসিয়েছে খাওয়ার জন্য । নীলা তো ইমনকে এখানে দেখে রিতিমতো সক খেয়েছে । কিন্তু সবার সামনা সামনি ইমনের সাথে কথা বলতে পারছে না দেখে, নীলা ফোনে ইমনকে মেসেজ করে যানতে চাইল সে এখানে কি করে । তখন ইমন নিদ্রর কথা বলে,,যে নিদ্র তাকে আসতে বলেছে । নীলা মনে মনে অনেক খুশি হয় এটা শুনে । নীলা মনে প্রানে চেয়েছিল যাওয়ার আগে একবার যেন ইমনের সাথে দেখা হয় । আর নিদ্র তার সেই আসা পুরোন করেছে । নীলা তখন নিদ্রর দিকে তাকালো । কিন্তু নিদ্র তখন জেকের সাথে কথা বলায় বেস্ত ছিল । খাওয়া দাওয়ার এক প্রর্যায় সালমা বলে উঠলো ।
:+আমি খেতে পারবো না । আমার কেমন যেন লাগছে ।(সালমা)
মাত্র একটু মাংস মুখে দিয়েই সালমা এই কথা বলে উঠে । সালমার কথা শুনে সবাই সালমার দিকে তাকালো । তৃপ্তি বললো ।
:+খারাপ লাগছে আম্মু ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির বাম পাসেই সালমা বসে ছিল । তাই তৃপ্তি তার বাম হাত সালমার পিঠে রাখলো । সালমা নিজের পেট আর মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে সেখান থেকে এক প্রকার দৌড়েই চলে যান । সবাই সালমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে । বজলুর তা দেখে বললো ।
:+তোমরা সবাই খাও । আসলে ওর খাসির মাংস পছন্দ না । তাই একটু মুখে দিতেই,,,,,,। আমি আগেই বলে ছিলাম জোর করো না ওকে । আচ্ছা তোমরা সবাই খাও আমি দেখছি ।(বজলুর)
এই বলে বজলুরও উঠে চলে যান সালমার পিছু পিছু । নীলা তখন বলে উঠলো ।
:+আন্টির যেহেতু খাসি পছন্দ না । সেহেতু আন্টিকে জোর করা ঠিক হয়নি ।(নীলা)
নীলার কথা শুনে ইকরা একটু মাংস মুখে দিয়ে বললো ।
:+হুম,,,,সব মানুষ তো আর সব’টা খেতে পারে না । যেমন আমার খাসির মাংস খেতে ভালো লাগে । কিন্তু গরুর মাংস আমি খেতে পারি না । আর তা ছারা গরুর মাংস আমার কাছে কেমন যেন লাগে ।(ইকরা)
ইকরা কথা গুলো সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলছিল । সাব্বিরও ইকরার দিকে তাকিয়ে ছিল । সাব্বির বেস বুঝতে পারলো ইকরা কিছু’টা কথা তাকে ইঙ্গিত করে বলছে । নিদ্র তা দেখে কিছু’টা গলা খেখিয়ে বললো ।
:+খাও না কেন সবাই । এভাবে বসে আছো কেন ।(নিদ্র)
নিদ্র কথায় হুস ফিরে সাব্বিরের । এমন সময় বজলুর আবার এসে বললো ।
:+তোমরা সবাই খাও । তোমাদের আন্টির শরীর খারাপ হয়েছে । ও আর আসবে না এখানে ।(বজলুর)
এই বলে বজলুর আবার সজিবকে উদ্দেশ্য করে বললো ।
:+আব্বু খাওয়া শেষ হলে রুমে গিয়ে শুয়ে পরো ঠিক আছে ।(বজলুর)
সজিব একটু মাংস মুখে দিয়ে মাথা নারালো । তৃপ্তি তখন বললো ।
:+আব্বু তুমি খাবে না ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে বজলুর তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+না মামুনি আমার আর খাওয়া হবে না । আচ্ছা তোমরা খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পরো ।(বজলুর)
এই বলে বজলুর আবার চলে গেল । নিদ্র ছোট একটা নিশ্বাস ছারলো । এরপর আবার সবাই খাওয়ায় মন দিলো । খেতে খেতে পুরো অবস্থা কাহিল সবার । খাওয়ার শেষ প্রর্যায় হঠাৎ রাহুল টেবিলের নিচ থেকে একটা কোককলার বোতল বের করলো । তা দেখে নীলা বলে উঠলো ।
:+রাহুল ভাইয়া এটা আপনি ভালো কাজ করেছেন । এটা এখনি দরকার ছিল । পেটের খাবার কিছু’টা হজম হবে । খেতে খেতে পুরো অবস্থা শেষ আমার ।(নীলা)
এই কয়দিনে নিদ্রর বন্ধুদের সাথে নীলার কিছু’টা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে । নীলার কথা শুনে রাহুল একটা শুকনো ঢোক গিললো । আর মনে মনে বললো ।
:+হায় আল্লাহ এই মেয়ে বলে কি । এখন আমি কি করি । ভুল সময় এটা বের করে ফেলছি । রাহুল তুই একটা গাধা,, হাদারাম,, বেক্কেল ।(রাহুল)
মনে মনে নিজেকে গালি দিতে থাকে রাহুল । রাহুল কিছু বলছে না দেখে নীলা বসা থেকে উঠে এসে রাহুলের পাসে দারিয়ে বললো ।
:+ভাইয়া বোতল’টা আমাকে দিন আমি সবাইকে দিচ্ছি । আপনাকে কষ্ট করতে হবে না ।(নীলা)
নীলার কথা শুনে রাহুল দু’হাত দিয়ে বোতল’টাকে ধরে বড় ধরনের একটা ঢোক গিলে জেকের দিকে তাকালো । দেখলো জেক তার দিকে রহস্যর হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে । রাহুল বোতল দিচ্ছে না দেখে,, নীলা রাহুলের হাত থেকে বোতল’টা টান দিয়ে বললো ।
:+এতো কিপটামি করেন কেন ভাইয়া । নাহয় আমরা একটু খাবো আর কি । আমরা তো পুরো বোতল আর শেষ করে ফেলবো না । আর আপনি কি এটা একা খাওয়ার জন্য এনেছেন নাকি ।(নীলা)
এই বলে নীলা এক টানে রাহুলের কাছ থেকে বোতল’টা নিয়ে একে একে সবার গ্লাসে দিতে লাগলো । জেক, রাহুল আর সাব্বিরের দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকালো নিদ্র । রাহুল নিদ্রর তাকানো দেখে কাঁচুমাচু হয়ে বসলো । রাহুলের অবস্থা দেখে নিদ্রর সন্দেহ আরো বেরে যায় । সে নীলা যে গ্লাসে তাকে কোককলা দিয়েছিল সেই গ্লাস নাকের কাছে এনে ধরলো । সাথে সাথে একটা বোটকা গন্ধ ভেসে এলো । নিদ্র তাড়াতাড়ি গ্লাস’টা টেবিলে রেখে রাহুলের নিকে চোখ গরম করে তাকালো । কিন্তু এদিকে ঘটে গেছে অঘটন । তৃপ্তি, সামিয়া, আর ইকরার গ্লাসে কোককলা দিতেই তারা এক দমে সব খেয়ে নিয়েছে । পিচ্চি সজিবও খেয়ে ফেলতো কিন্তু সজিবের নাকে বাজে গন্ধ লাগায় সজিব আর এটা খেলো না । নিদ্র দারিয়ে চিৎকার দিয়ে বলতে গিয়ে থেমে যায়,, কারন নীলা বাদে তৃপ্তি, সামিয়া, ইকরা খেয়ে নিয়েছে । নীলাও খেতে নিতো এমন সময় নিদ্র নীলার হাত থেকে টান দিয়ে গ্লাস’টা ফেলে দিলো । নীলা কিছু বলার আগে নীলার হাত থেকে কোককলার বোতল’টা নিয়ে দুরে ছুরে ফেলে দিলো নিদ্র । তা দেখে জেক দৌড়ে গিয়ে কোককলার বোতল’টা ধরলো । যাক সামন্য একটু পরে গেছে । বাকিটা বাচাতে পেরেছে জেক । নীলা নিদ্রকে বললো ।
:+কি হয়েছে ভাইয়া । এমন করলেন যে ।(নীলা)
নীলার কথার উওর না দিয়ে, নিদ্র রাহুলের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো ।
:+এগুলো পেয়েছিস কোথায় তোরা । এগুলো আনতে কে বলছে । আ,,,,,(নিদ্র)
:+এই যে মিস্টার হুনুমান ।(তৃপ্তি)
নিদ্র রাহুলকে বকছিল ঠিক সেই সময় নিদ্রর পিছনের শার্ট টেনে তৃপ্তি নেশালো কন্ঠে বলে উঠে । নিদ্র শুকনো ঢোক গিলে তারাতারি পিছনে ঘুরে তৃপ্তিকে দু’বাহুতে আবদ্ধ করে জরিয়ে ধরে । তৃপ্তি ঢুলতে ঢুলতে মাটিতে পরতে গিয়েও পরলো না । এদিকে ইমন বেচারা বসে বসে সাব্বিরের কানে কানে বললো ।
:+এই জিনিস এখানে কি করে এলো । এটা তো এখানে পাওয়া অনেক কষ্টের ।(ইমন)
সাব্বিরও ইমনের কানে কানে বললো ।
:+বাবুর্চি দের দিয়ে আনিয়েছি । ওনাদের বলেছি বাংলা আনতে । কিন্তু ওনারা বিয়ার নিয়ে আসছে । তাই কোককলার বোতলে ভরে রেখেছি । ভেবেছিলাম সবাই যাওয়ার পর এটা খাবো । কিন্তু সালার রাহুইল্লার বাচ্চা এটা এখন বের করে ফেলছে । আর এখন নির্ঘাত কেলেং কারি হবে । কারন নিদ্র এসব খাওয়া পছন্দ করে না । তার উপর আবার নিদ্রর হবু বউ খেয়ে ফেলছে এটা । না যানি রাহুলকে আজ কি করে নিদ্র ।(সাব্বির)
নিদ্রর হবু বউয়ের কথা শুনে ইমন অবাক হয়ে বললো ।
:+উনার হবু বউ আবার কে ।(ইমন)
:+ওইযে যাকে জরিয়ে ধরে আছে সেই ই ।(সাব্বির)
ইমন নিদ্র আর তৃপ্তির দিকে তাকালো । নীলা কিছু বুঝতে পারছে না । সুধু আবুলের মতো এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । সে চেয়েছিল এটা খেয়ে খাবার হজম করতে,, আর এটা কি হচ্ছে । উলটো এটা খেয়ে সবার পেট থেকে খাবার বেরিয়ে আসছে । সামিয়া আর ইকরা বুমি করতে করতে কাহিল হয়ে পরছে । সাব্বির তা দেখে তারাতারি ইকরার কাছে গিয়ে ইকরার মাথা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরছে । যাতে বুমি করতে কষ্ট না হয় । এদিকে সামিয়াকে ধরেছে নীলা । রাহুল উস খুস করছিল সামিয়াকে ধরার জন্য । কিন্তু কোন অধিকারে সে তার গায়ে হাত দিবে । সেই ভয়ে আর ধরলো না । নীলাই সামিয়াকে ধরছে । নিদ্র তৃপ্তিকে জরিয়ে ধরে আছে । আর তৃপ্তি আনবান বকে যাচ্ছে ।
:+এই হুনুমান, সয়তান, আমাকে ধরছিস কেন । ছার ছার বলছি । সয়,,,,,,,,,,,,,,।(তৃপ্তি)
আর কিছু বলতে পারলো না তৃপ্তি । তার আগেই গড় গড় করে নিদ্রর গায়ের উপর বুমি করে দিলো । নিদ্র না পারছে ছারতে না পারছে ধরে রাখতে । যা খেয়েছে সব গড় গড় করে পেটের ভিতর থেকে মুখ দিয়ে সব বেরিয়ে আসলো তৃপ্তির । কিছুখন বুমি করার পর কাহিল হয়ে পরে তৃপ্তি । নিদ্র নিজের শার্ট শরীর থেকে খুলে ফেললো । তারপর তৃপ্তিকে কোলে নিয়ে নীলার উদ্দেশ্য বললো ।
:+নীলা একটু আমার সাথে আয় ।(নিদ্র)
এই বলে নিদ্র তৃপ্তিকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল ।
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
[।কপি করা নিষেধ।]
[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দিষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]