তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡 #DcD_দীপ্ত #পর্ব__________46

0
587

#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________46

ভোরে তৃপ্তিকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে আসছে আমেনা । গতকাল রাত ১০টায় বাড়িতে এসে পৌছে ছিল নিদ্র, তৃপ্তি আর নীলা । ইকরাকে হাতিরঝিল গাড়ি দার করিয়ে নামিয়ে দিয়েছিল নিদ্র । সেখান থেকে ইকরার ছোট ভাই এসে নিয়ে গেছে ইকরাকে । আর সাব্বির, রাহুল, জেক তাদের গাড়ি নিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে । আমেনা, তৃপ্তির বেডের পাসে বসে, তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে, ছোট করে তৃপ্তিকে ডাক দিলেন । তৃপ্তি কোলবালিশ জরিয়ে ধরে অঘর ঘুমে তলিয়ে আছে । আমেনার ডাক যেন তার কানে পৌছোয় নি । আমেনা অনেক কষ্টে তৃপ্তিকে ঘুম থেকে যাগিয়ে টেনে টুনে বসালেন । পুরসু রাতের নেশা এখনো ঠিক ভাবে কাটেনি তৃপ্তির । চোখ দু’টো বারবার বুঝে আসছে তার । তৃপ্তি আমেনার কোলে ঢলে পড়ে ঘুম জোরালো কন্ঠে বললো ।

:+বড় আম্মু,,,ছেরে দাও না আজ । কাল থেকে ঠিক ভাবে পড়বো ।(তৃপ্তি)

আমেনা তৃপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলে উঠলেন ।

:+না,,, কোন ছাড় নেই । তোর আম্মু আমাকে এই বিষয়ে কড়া থাকতে বলছে ।(আমেনা)

এই বলে তৃপ্তির কপালে ছোট একটা চুমু একে দিলেন আমেনা । এরপর তৃপ্তিকে নিজের থেকে ছারিয়ে, ঠিক ভাবে বসিয়ে বললেন ।

:+তাড়াতাড়ি আজু করে নামাজ পড়ে নে । আমাকেও নামাজ পড়তে হবে, আমি গেলাম ।(আমেনা)

এই বলে আমেনা তৃপ্তির রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন । আর তৃপ্তি তার দুর্বল শরীর টাকে টেনে টুনে ওয়াসরুমে নিয়ে গেল । এরপর আজু সেরে নামজে বসে পরলো । এদিকে নিদ্রও, ফরহাদের সাথে মসজিদে নামাজ পড়তে চলে গেছে ।

————————————–

সকাল ৮টা বাজে………
ডাইনিং টেবিলে বসে আছে নিদ্র, তৃপ্তি, ফরহাদ আর আমেনা । সবাই বসে সকালের নাশতা শেষ করছে । নিরবতা ভেঙে নিদ্রকে উদ্দেশ্য করে আমেনা বলে উঠলেন ।

:+ও কি আজ থেকেই কলেজে যাবে । নাকি কাল থেকে নিয়ে যাবি ।(আমেনা)

নিদ্র একবার চোখ তুলে আমেনার দিকে তাকালো । এরপর আবার চোখ নামিয়ে খাবারে মনোযোগ দিয়ে বললো ।

:+আজ থেকেই যাবে । খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেডি হতে বলো ।(নিদ্র)

আমেনা, তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললেন ।

:+শুনলি তো কি বললো । তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হয়েনে ।(আমেনা)

তৃপ্তি তো মহা খুশি । আজ থেকে সে কলেজে যাবে ।তার কলেজের প্রথম দিন হবে আজ । তৃপ্তি খুশিতে গজগজিয়ে বলে উঠলো ।

:+ঠিক আছে, বড় আম্মু ।(তৃপ্তি)

নিদ্র একটু রুটি চিবোতে চিবোতে তৃপ্তির দিকে তাকালো । ফরহাদ, নিদ্রকে বলে বসলো ।

:+তুই কবে থেকে অফিসে জয়েন করবি ।(ফরহাদ)

কথা’টা শুনে নিদ্রর খুব বিরক্ত লাগলো । সে বিরক্তিকর মুখ দেখিয়ে বললো ।

:+এক কথা কয়দিন পর পর জিজ্ঞেস করো কেন আমাকে । বললাম তো আমার সময় হলে আমি জয়েন করবো ।(নিদ্র)

ফরহাদ চুপ হয়ে যায় । আমেনা চোখ গরম করে নিদ্রর দিকে তাকায় । আমেনার চোখে চোখ পরতে নিদ্র মাথা নিচু করে খাবার খেতে সুরু করলো । তৃপ্তি তা দেখে মুচকি হাসতে লাগলো । কারন কাল রাতে অনেক বকা খেয়েছে নিদ্র । তৃপ্তি একটু আদটু শুনেছে ।

সকালের নাশতা শেষ করে কলেজের জন্য তৈড়ি হচ্ছে তৃপ্তি । আজ তার কলেজের প্রথম দিন । খুশিতে তার মনে লাড্ডু ফাটুছে । আমেনা নিজে তৃপ্তিকে তৈডি হতে সাহায্য করছেন । কফি কালারের বোরখা,বাদামী কালারের হিজাব পড়ছে তৃপ্তি । নিকাব সে পড়বে না । ছাফ যানিয়ে দিয়েছে আমেনাকে । আমেনাও কিছু বললো না । কারন তিনি যানেন, নিদ্র এভাবে কখনো তৃপ্তিকে কলেজে নিয়ে যাবে না । নিবাক তো ওকে পড়াবেই । সাথে কয়েক’টা গরম ধমকানো বাক্য শুনাবে । আমেনার ভাবনাই সত্যি হলো । তৃপ্তি বাড়ি থেকে বেরোতেই নিদ্র চোখ গরম করে বলে উঠলো ।

:+নিকাব কৈ তোর । তাড়াতাড়ি নিকাব পড়ে আয় ।(নিদ্র)

নিদ্রর ধমক খেয়ে, তৃপ্তি ধুম ধাম পা ফেলে বাড়ির ভিতরে যেতে যেতে নেকা কান্না জুরে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো ।

:+আমি যাবো না এই শয়তান ছেলের সাথে । খালি ধমক দেয় । বড় আম্মু তুমি কৈ? দেখো তোমার ছেলে আমাকে ধমক্কাচ্ছে ।(তৃপ্তি)

আমেনা এসে তৃপ্তির মুখে একটা নিকাব পড়িয়ে দিতে দিতে বললেন ।

:+আমি আগেই বলে ছিলাম । আমার কথা শুনলে ধমক খেতে হতো না ।(আমেনা)

এই বলে তিনি তৃপ্তিকে নিকাব’টা পড়িয়ে দিলেন । তৃপ্তি বলে উঠলো ।

:+নিকাব না পড়লে হয় না । এটা আমার মুখ ঢেকে রাখে । আমি তো এখন কলেজে যাবো । আমার মুখ কেও না দেখলে, আমাকে চিনবে কি করে ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে আমেনা কপাল কুঁচকে তৃপ্তির দিকে তাকালেন । এরপর কিছু’টা কড়া গলায় তিনি বললেন ।

:+কেও তোকে চিনা লাগবে না । সোজা কলেজে যাবি । আবার সোজা বাড়িতে আসবি । এদিক সেদিক একদম যাবি না । তাকাবিও না ।(আমেনা)

এই বলে আমেনা, তৃপ্তির হাত ধরে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসলেন । নিদ্র বাইকের উপর বসে ছিল । আমেনা তৃপ্তিকে নিয়ে বাইকের কাছে এসে নিদ্রকে রাগি গলায় বললেন ।

:+তুই আমার মেয়েকে ধমক দিয়েছিস কেন? কি সমস্যা তোর । একটু শান্ত ভাবে বলতে পারতি না ।(আমেনা)

আমেনার কথা ও রাগি ভাব দেখে তৃপ্তি তো মহা খুশি । নিদ্রকে বকছে দেখে সে অলরেডি আমেনাকে জরিয়েও ধরে ফেলেছে । নিদ্র তো আবুল হয়ে গেছে । নিদ্র আমেনাকে বলে উঠলো ।

:+MOM,,,,,,,,ও নিকাব পড়েনি । তাই ওকে নিকাব পড়ে আসতে বলছিলাম ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শেষ হতে, আমেনা আবার ধমক দিয়ে উঠেলন ।

:+চুপ,,, কথা কম,,, এখন ওকে কলেজে নিয়ে যা । আবার ছুটির পড় নিয়ে আসবি । মনে থাকে যেন । নাহলে তোর বাড়িতে খাওয়া বন্ধ। আর খবদার তুই আমার মেয়েকে ধমক দিবি না। (আমেনা)

এই বলে আমেনা নিদ্রকে চোখে ইসারা করলো । নিদ্রর বুঝে গেলো আমেনার এই রাগি ভাব’টা আসলে অভিনয় । নিদ্র নিজের বুকে হাত দিয়ে আমেনার দিকে তাকালো । তার MOM এতো নিখুদ অভিনয় শিখলো কি করে । নিদ্র ভেবে পাচ্ছে না । তিনি কি সিরিয়াল দেখা সুরু করলেন নাকি । নিদ্র তো খনিকের জন্য ভেবে বসেছিল এটা আমেনার রাগ । তিনি রেগে নিদ্রকে বকছেন । অবশ্য কাল রাতেই নিদ্রর বকা খাওয়া হয়ে গেছে । সে কেন এতোদিন গ্রামে ছিল? আমেনা এই নিয়ে নানান প্রশ্ন করেছে নিদ্রকে আর বকেছে । নিদ্র অনেক গুলো মিথ্যা কথা বলে আমেনাকে সামাল দিয়েছে । যাই হোক গল্পে ফিরি,,,। তৃপ্তি আস্তে করে নিদ্রর বাইকের পিছনে উঠে বসলো । তারপর আমেনাকে হাত নারিয়ে বললো ।

:+থ্যাংস বড় আম্মু । বায় ।(তৃপ্তি)

নিদ্র বাইক স্টার্ড দিতেই তৃপ্তি চোখ মুখ বুজে নিদ্রকে পিছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো । এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো বাইকে উঠছে তৃপ্তি । আমেনা মুচকি হেসে বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন । আর নিদ্র ঠোঁট কামড়ে হেসে বাইক চালিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো । আজ বাড়িতে ফিরার পর এই থ্যাংসের জবাব দিবে নিদ্র । তাকে বকা খাওয়ানো হয়েছে আমেনাকে দিয়ে ।

:+এই বৃষ্টি ।(রুমি)

বৃষ্টি খুব মনোযোগ দিয়ে ফোন দেখছিল । ঠিক তখন রুমি পাস থেকে ধাক্কা মেরে বৃষ্টিকে ডাক দিলো । বৃষ্টি চোখ গরম করে রুমির দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+কি হয়েছে । এমন ধাক্কাচ্ছিস কেন । আমি না তোকে বলছি, আমাকে ধাক্কা দিয়ে কথা বলবি না । আমার এসব ভালো লাগে না ।(বৃষ্টি)

রুমি মুখ বাকিয়ে কলেজের গেটের দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+ম্যাম গেটের দিকে তাকান । দেখেন আপনার নাগড় কাকে নিয়ে কলেজে আসছে ।(রুমি)

রুমির হিট লাগানো কথা শুনে বৃষ্টির গা জ্বলে গেলো । সে কলেজের গেটের দিকে তাকালো । তাকিয়ে শখড খেয়ে বসা থেকে দারিয়ে গেল বৃষ্টি । কারন বৃষ্টি দেখছে? নিদ্র বাইক কলেজের গেটের কাছে পার্ক করছে । আর তৃপ্তি পিছন থেকে নিদ্রকে জরিয়ে ধরে আছে । এটা দেখে বৃষ্টি রেগে আগুন হয়ে গেলো । একে তো এতোদিন দেখা হয়নি নিদ্রর সাথে । তার উপর তৃপ্তির এমন ঘেষা ঘেষি বৃষ্টির গা জ্বলে যাচ্ছে । বৃষ্টি লম্বা পা ফেলে নিদ্রর দিকে যেতে লাগলো । রুমি পিছন থেকে ডাক দিলো বৃষ্টিকে । কিন্তু বৃষ্টি শুনলো না । সে সোজা নিদ্রর দিকে যেতে লাগলো । এদিকে বাইক পার্ক করে নিদ্র মুচকি হেসে আস্তে করে তৃপ্তিকে বললো ।

:+ এখনো কি এভাবে ধরে বসে থাকবি । নাকি বাইক থেকে নামবি । কলেজে এসে গেছি আমরা । অবশ্য এভাবে জরিয়ে ধরে বসে থাকলেও আমি কিছু বলবো না । বেস ভালোই লাগছে ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে ধিরে ধিরে চোখ খুললো তৃপ্তি । এরপর চার পাসে তাকিয়ে দেখলো । অনেক ছেলে মেয়েরা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে । এটা দেখে তৃপ্তি তাড়াতাড়ি নিদ্রকে ছেরে দিয়ে বাইক থেকে নেমে দারালো । কিছু’টা লজ্জা অনুভব হলো তৃপ্তি । এই ফাস্ট টাইম তার এমন অনুভুতি হলো । নিদ্র অবাক হয়ে তৃপ্তির দিকে তাকালো । এর আগের বারো তো ভর্তির সময় এমন ভাবে নিদ্রকে জরিয়ে ধরে এসেছিল তৃপ্তি । কৈ তখন তো এমন লজ্জা পায়নি । তাহলে আজ কি হলো । তৃপ্তি নিজেও বুঝতে পারছে না তার এমন অনুভুতি হচ্ছে কেন । নিদ্র বাইকের চাবি’টা বাইক থেকে খুলে হাতে নিয়ে বাইক থেকে নেমে দারালো । এমন সময় বৃষ্টি এসে পৌছালো সেখানে । বৃষ্টির মুখে এখন রাগি ভাব নেই । ফুটে আছে এক চিলতে হাসি । বৃষ্টিকে এখানে দেখে নিদ্রর গা জ্বলে যাচ্ছে । নিদ্র কিছু বলার আগেই বৃষ্টি শান্ত কন্ঠে মাথা নিচু করে বলে উঠলো ।

:+সরি,, ওই দিন আমার এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি । আমি যানতাম না এই মেয়েটা তোমার চাচাতো বোন হয় । আর ও গ্রামের মেয়ে, এটা আমি গত পরশু কলেজে আসার পর জুইর থেকে শুনতে পেরেছি ।(বৃষ্টি)

বৃষ্টির আচরণ দেখে নিদ্র অবাক হয়ে গেলো । যে মেয়ে সব সময় খিটখিটে মেজাজে থাকে । সে মেয়ে আজ নিদ্রর সামনে দারিয়ে শান্ত ভাবে কথা বলছে । নিদ্রর বেপার’টা কেমন যেন লাগছে । নিদ্র আস্তে করে বললো ।

:+ইট’স ওকে । নেক্সট টাইম যাতে এমন আর না হয় । যাও ।(নিদ্র)

এদিকে বৃষ্টিকে দাখা মাত্র নিদ্রর পিছনে গিলে লুকিয়ে পরেছে তৃপ্তি । কারন সেদিনের বৃষ্টির রাগি চেহারা এখন আবার তৃপ্তির চোখের সামনে ভাসা দিয়ে উঠেছে । তৃপ্তির কলেজে ভর্তির দিন কি রাগ টাই না দেখালো বৃষ্টি । আর নিদ্র কি চড় টাই না মারলো বৃষ্টিকে । তৃপ্তি নিদ্রর পিছনে শার্ট খামছে ধরে একটু পর পর নিদ্রর পিছন থেকে মাথা বের করে উকি দিয়ে বৃষ্টিকে দেখতে লাগলো । বৃষ্টি মুচকি হেসে মাথা তুলে নিদ্রর দিকে তাকালো । এরপর নিদ্রর আরো কাছে এগিয়ে এসে নিদ্রর চোখে চোখ রেখে বললো ।

:+তাহলে আমার প্রপোজের উওর দাও । আমি আর ওয়েট করতে পারছি না । তোমার ঘরের বৌ হয়ে যেতে চাই আমি । আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দাও আমি চলে যাবো । ডু ইউ লাভ মি??(বৃষ্টি)

লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বলে উঠলো বৃষ্টি । কথা গুলো শোনার পর নিদ্রর মাথা ১০০ ডিগ্রি গরম হয়ে গেলো । চোখ দু’টো লাল হতে থাকলো । কপালের রগ দপতাটে থাকলো । এই মেয়েকে,, এ প্রজন্ত অনেক বার বুঝিয়েছে নিদ্র । যে সে অন্য কাওকে ভালোবাসে । তার পিছনে যেন না লাগে । কিন্তু এই মেয়ে বেহায়ার মতো নিদ্রর পিছনে লেগেই আছে । বৃষ্টি, নিদ্রর এমন চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেল । দু’পা পিছিয়ে গেল সে । নিদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো ।

:+কত বার তোকে বলছি আমার সামনে এগুলো বলবি না । কারন আমি একজনকে প্রছন্ড পরিমান ভালো বাসি । আমার নিজের চাইতেও বেশি । চাইলেও সেখানে নতুন করে কাওকে বসাতে পারবো না । সে আমার আত্তায় মিসে গেছে ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে কেপে উঠলো বৃষ্টি । পরখনেই আবার রেগে আগুন হয়ে গেলো সে । এতোখনের ভদ্রতার আড়ালের মুখশ বেরিয়ে এলো । বৃষ্টি রেগে বলে উঠলো ।

:+আমি খুন করবো ওই মেয়েকে । যে আমার স্থান কেরে নিয়েছে । আমি আদায় করেই ছাড়বো আমার যায়গা । ওই মেয়েকে আমি ওই যায়গা থেকে চিরতরে মুছে ফেলবো ।(বৃষ্টি)

কথা গুলো শোনার পর নিদ্রর মাথা আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে গেল । সে দু’পা এগিয়ে এসে খপ করে ডান হাত দিয়ে বৃষ্টি গলা চেপে ধরলো । হঠাৎ এমন হওয়ায় তৃপ্তি থমথমি খেয়ে যায় । বৃষ্টি, নিদ্রর হাত নিজের গলা থেকে ছারানোর বেথ্য চেষ্টা করতে লাগলো । কিন্তু নিদ্রর শক্ত হাতের কাছে সে পেরে উঠছে না । নিদ্র, বৃষ্টির চোখে চোখ রেখে গরম গলায় বললো ।

:+যে গলা দিয়ে এই কথা গুলো বেরিয়ে আসছে না । আমি চাইলে চিরদিনের জন্য তোর এই গলার আওয়াজ বন্ধ করে দিতে পারি ।(নিদ্র)

এই বলে আরো একটু শক্ত করে বৃষ্টির গলা চেপে ধরলো নিদ্র । বৃষ্টির চোখ দু’টো বড় বড় হয়ে গেলো । দু’ফোটা চোখের পানি গাল বেয়ে কানের লতিতে এসে লাগলো । মুখ দিয়ে সুধু গড় গড় আওয়াজ বেরোতে লাগলো বৃষ্টির । তৃপ্তি এটা দেখে নিদ্রকে সামনে থেকে জরিয়ে ধরে কেদে উঠলো । আর বললো ।

:+প্লিজ ভাইয়া আপু টাকে ছেরে দাও । আপু’টা মরে যাবে । আমার ভয় করছে ।(তৃপ্তি)

বলেই ফুফিয়ে উঠলো তৃপ্তি । নিদ্র, বৃষ্টির গলা ধরে নিজের আরো সামনে নিয়ে এসে বললো ।

:+যে আমার রাগ দেখও আমাতে মিসে থাকবে । সেই হবে আমার বৌ । তোর মতো ভয় পরে দু’পা পিছিয়ে যাওয়া মেয়েকে আমি বৌ বানাবো, ভাবলি কি করে । এখন যে আমাতে মিসে আছে সে আমার আত্তা । তার দিকে যদি তুই একবার নজর দিয়েছিস । তাহলে তোর দেহ থেকে রুহ বের করে নেবো ।(নিদ্র)

এই বলে হাত ঝারা মেরে বৃষ্টিকে ছেরে দিয়ে নিদ্র । বৃষ্টি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, নিজের গলা দু’হাত দিয়ে ডলতে লাগলো । আর কাসতে কাসতে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো । চোখ দু’টো দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে বৃষ্টির । কলেজের প্রায় অনেক ছেলে মেয়ে জরো হয়ে গেছে । নিদ্র আস্তে করে তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো । আর তৃপ্তি হেচকি তুলে ফুফাচ্ছে । খনিকের মাঝেই অনেক ভয় পেয়ে গেছে সে । নিদ্র নিজের বুকের সাথে তৃপ্তিকে জরিয়ে ধরে রাখলো । এমন সময় ভির ঠেলে ভিতরে এলো আদি । আদিকে দেখা মাত্র নিদ্র বললো ।

:+ভির ক্লিয়ার কর ।(নিদ্র)

নিদ্রর অডার পাওয়া মাত্র আদি সব স্টুডেন্টকে সেখান থেকে চলে যেতে বললো । স্টুডেন্টরাও আদির কথা মতো চলে গেল । বৃষ্টিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে । আদি মঝার ছলে নিদ্রকে বললো ।

:+কি হয়েছে ভাই । বৃষ্টি এভাবে মাটিতে পড়ে আছে কেন? ওরতো আকাশে থাকার কথা ।(আদি)

নিদ্র দাত কটমট করে বললো ।

:+একটা শিক্ষা দিয়েছি, তাই মাটিতে পড়ে আছে । ওর ফ্রেন্ডদের ডেকে ওকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বল ।(নিদ্র)

এই বলে তৃপ্তিকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল নিদ্র । আর আদি, বৃষ্টির ফ্রেন্ড রুমিকে ডেকে বৃষ্টিকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বললো । রুমি এসে বৃষ্টিকে সেখান থেকে কলেজের ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতে নিলে, বৃষ্টির গলা থেকে আস্তে করে একটা কথা বেরিয়ে আসলো ।

:+আমি বাসায় যাবো ।(বৃষ্টি)

রুমি কোনো উপায় না পেয়ে বৃষ্টিকে রিকশায় তুলে তার বাড়িতে নিয়ে যেতে লাগলো । এদিকে নিদ্র, তৃপ্তিকে নিয়ে পিন্সিপেল স্যারের রুমের দরজার কাছে এসে দারিয়ে বললো ।

:+কামিং স্যার ।(নিদ্র)

পিন্সিপেল স্যার তার মেয়ে জুইকে বকছিল । আর জুই চোখ মুখ লাল করে পিন্সিপেলের দিকে তাকিয়ে ছিল । এমন সময় নিদ্র দরজার বাহিরে থেকে আওয়াজ করে । পিন্সিপেল স্যার সেদিকে না তাকিয়েই বললো ।

:+কামিং ।(পি.স্যার)

নিদ্র আস্তে করে তৃপ্তিকে নিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো । জুই বিরবির করে পি.স্যারের চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে, রুমের ভিতরে কে এসছে তাকে দেখার জন্য পিছনে ঘুরে তাকালো । তাকিয়ে তো বসা থেকে উঠে দারিয়ে গেলো জুই । এরপর মুখে চোড়া হাসি এনে বলে উঠলো ।

:+আরে নিদ্র ভাইয়া আপনি । কেমন আছেন ভাইয়া ।(জুই)

জুইর কথা শুনে পি.স্যার এবার মাথা তুলে সামনে তাকালো । নিদ্র একটু হেসে জুইকে বললো ।

:+আমি ভালো আছি । তুমি কেমন আছো ।(নিদ্র)

জুই পি.স্যারের দিকে এবার তাকিয়ে, আবার নিদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+আমিও ভালো আছি । কিন্তু এই টাকলা মাস্টার আমাকে সেই কখন থেকে বকে যাচ্ছে ।(জুই)

পি.স্যার হা করে জুইর দিকে তাকালো । তাকে টাকলা বললো জুই । একটু আগেই তো এই কথার জন্য অনেক বকছেন তিনি । যার তার সামনে ইজ্জত মাটিতে মিসিয়ে দেয় এই মেয়ে । খুব আদর দিয়ে লাই দিয়ে ফেলেন পি.স্যার এই মেয়েকে । যার কারনে এখন মুখে মুখে কথা বলতেও ভয় পায় না । উল্টো পি.স্যারের টাক মাথায় তবলা বাজায় । এক মাত্র আদরের মেয়ে । তাই পি.স্যার কিছু বলতেও পারেন না । বেসি কিছু বললে সেদিন গাল মুখ ফুলিয়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় । পি.স্যার চোখ লাল করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জুই টেবিলের উপর থেকে তার বেগ কাধে নিয়ে দৌড় নিদ্রর কাছে আসলো । এরপর তৃপ্তির হাত ধরে টানতে টানতে বললো ।

:+চল দোস্ত ক্লাসে যাই । এখানে এখন বোম ফাটবে। (জুই)

বলেই তৃপ্তিকে টানে নিয়ে যেতে লাগলো জুই । তৃপ্তি বোরখা পেচিয়ে পরতে পরতে বেচে যায় । নিদ্রর হাত নিজের এক হাত দিয়ে টেনে ধরলো তৃপ্তি । নিদ্র এটা দেখে মুচকি হেসে বললো ।

:+জুই এক মিনিট দারাও ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে জুই দারিয়ে গেল । নিদ্র, তৃপ্তির হিজাব আর নিকাব ভালো ভাবে দেখে, হিজাব, নিকাবের উপর দিয়ে তৃপ্তির দু’গালে হাত রেখে নিদ্র বললো ।

:+ভয় পাবি না একদম । ওর সাথে ক্লাসে যা । আমি এখানে আছি ।(নিদ্র)

এরপর নিদ্র জুইর দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+জুই আস্তে ধিরে যাও । এভাবে টানা টানি করলে পড়ে যাবে তো ।(নিদ্র)

তৃপ্তি আস্তে করে বললো ।

:+যাই তাহলে এবার ।(তৃপ্তি)

নিদ্র, তৃপ্তিকে ছেরে দিয়ে বললো ।

:+হুমমম । খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করবি ।(নিদ্র)

তৃপ্তি জুইর হাত ধরে বললো ।

:+ঠিক আছে । এটা তোমাকে বলতে হবে না । জুই চলো ।(তৃপ্তি)

জুই আর তৃপ্তি পি.স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে গেল । নিদ্র এসে পি.স্যারের টেবিলের সামনের চেয়ারে বসে বললো ।

:+ কেমন আছেন স্যার ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে পি.স্যার জোরে নিশ্বাস ছেরে বললেন ।

:+আর কেমন থাকবো । এই মেয়ের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পরছি । একটা কথাও শুনে না । উল্টো আমাকে ঙ্গেন দেয় । যার তার সামনে ইজ্জত মাটিতে মিসিয়ে দেয় এই মেয়ে । উফ,,,, এই মেয়েকে নিয়ে পাগল হয়ে যাবো আমি ।(পি.স্যার)

পি.স্যারের কথা শুনে নিদ্র হেসে উঠে বললো ।

:+জুই খুব চঞ্চল টাইপের মেয়ে । আচ্ছা এসব বাদ দিন । আন্টি কেমন আছে ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে পি.স্যার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললো ।

:+এই আছে কোনো রকম । হাই পেসারের মানুষ । কতোই আর ভালো থাকে বলো । তা তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে । মেয়েটা কলেজে আসেনি কেন এতোদিন ।(পি.স্যার)

পি.স্যারের কথা শুনে নিদ্র বললো ।

:+গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম ওকে নিয়ে । ওখানে একটা ঝামেলার কারনে এতোদিন থাকতে হয়েছে । নাহলে কবেই চলে আসতাম । এখন থেকে নিয়মিত কলেজে আসবে ও ।(নিদ্র)

পি.স্যার একটা বেল বাটনে চাপ দিয়ে বললো ।

:+কি খাবে বলো চা না কফি ।(পি.স্যার)

নিদ্র তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো ।

:+না না স্যার । এখন চা খাওয়ার সময় নেই । আমাকে এখন অনেক যায়গায় যেতে হবে ।(নিদ্র)

বলেই বসা থেকে দারিয়ে গেল নিদ্র । পি.স্যার বলে উঠলো ।

:+এর আগের বারো যখন এলে কিছু মুখে দিলে না । এবারো কিছু মুখে দিবে না । এটা হয় না । এক কাপ চা তোমাকে খেতেই হবে ।(পি.স্যার)

নিদ্র হেসে উঠে বললো ।

:+চা না স্যার । আপনার বাসায় গিয়ে একদিন লাঞ্চ করে আসবো । এখন আমি যাই ।(নিদ্র)

নিদ্র পিছনে ঘুরে হাটা ধরলো । পি.স্যার বলে উঠলো ।

:+তা সেদিন কবে ।(পি.স্যার)

:+দেখি সময় হলে একদিন যাবো ।(নিদ্র)

এই বলে নিদ্র পি.স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে গেল ।

:+আচ্ছা তৃপ্তি,,,তুই কি আমাকে চিনতে পারছিস না? আমি জুই । সেদিন কলেজে ভর্তির সময় আমাদের ফ্রেন্ড সিপ হয়েছিল মনে নেই ।(জুই)

তৃপ্তিকে চুপচাপ ক্লাস রুমে নিজের পাসে বসে থাকতে দেখে বললো জুই । তৃপ্তি মিষ্টি হেসে জুইর দিকে তাকিয়ে, জুইর ডান হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো ।

:+এতো সহজে কোনো কিছু ভুলে যাইনা আমি । তোমাকে দেখেই চিনে ফেলেছি ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে জুই ভ্রু-কুচকে বললো ।

:+তাহলে কথা বলছিস না কেন? চুপচাপ বসে আছিস কেন? (জুই)

জুইর মুখে তুই তুকাড়ি শুনে তৃপ্তি অবাক হয়ে গেল । জুইর সাথে এই নিয়ে দুইবার দেখা । এর মাঝেই জুই তৃপ্তিকে তুই তুকাড়ি সুরু করে দিয়েছে । তৃপ্তি শুকনো ঢোক গিলে বললো ।

:+তুমি আমাকে তুই তুকাড়ি করে বলছো কেন ।(তৃপ্তি)

জুই এবার কপাল কুঁচকে বললো ।

:+তুই একে আমার ক্লাস মিট । দ্বিতীয় আমার ফ্রেন্ড । তৃতীয় আমরা একে অপরের সাথে পরিচিত । তাহলে এখানে তুমি বা আপনি খাটেনা । এখানে সুধুই তুই । আর তুইও আমাকে তুই করে ডাকবি ।(জুই)

তৃপ্তি চোখ দু’টো ছোট ছোট করে বললো ।

:+এতো ফাস্ট আমি পারবো না । একটু সময় লাগবে ।(তৃপ্তি)

জুই কপাল চাপড়ে বললো ।

:+এতো হাবলা মেয়েও এই দুনিয়াতে হয় ।(জুই)

এই বলে জুই নিজেকে শান্ত করলো । এরপর তৃপ্তির দিকে ঘুরে বললো ।

:+আচ্ছা এসব বাদ দে । এখন বল । এতোদিন কলেজে আসিস নি কেন ।(জুই)

জুইর কথা শুনে তৃপ্তি বেঞ্চের উপর একটু নড়ে চড়ে বসে বললো ।

:+গ্রামে ফ্রেন্ডের বিয়েতে গেছিলাম । তাই এতোদিন কলেজে আসতে পারিনি ।(তৃপ্তি)

জুই মুখ হা করে বলে উঠলো ।

:+তোর আবার ফ্রেন্ডও আছে ।(জুই)

তৃপ্তি জুইর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললো ।

:+বারে,, থাকবে না কেন । আমার দুই’টা কলিজার বেস্টু আছে । একটার বিয়ে হয়ে গেছে কিছুদিন আগে । তারই বিয়েতে গ্রামে গিয়ে ছিলাম । আর এখন যে একটা আছে, সেও গ্রামে থাকে ।(তৃপ্তি)

জুই গালে হাত দিয়ে কনুই টেবিলে ঠেকিয়ে তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+আচ্ছা,,, আমাকে তোর বেপারে আরো কিছু বল তো । যাতে আমি তোকে ভালো করে বুঝতে পারি ।(জুই)

সুরু হয়ে গেলো তৃপ্তির বোল বাচন । ক্লাসে স্যারের আড়ালে জুই আর তৃপ্তি গল্প করতে লাগলো । তৃপ্তি নিজের বেপারে সব কিছু ধিরে ধিরে বলতে লাগলো জুইকে । আর জুইও নিজের বেপারে বলতে লাগলো তৃপ্তিকে । দু’জনের ক্লাসের দিকে কোন মন নেই । তারা নিজেদের কথা নিয়ে বেস্থ হয়ে আছে ।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

[।কপি করা নিষেধ।]

[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দিষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here