#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________40
রাত ৮টা বাজে………….
হসপিটালের বেডে সুয়ে পিটপিট করে চোখ খুললো সালমা । মাথা’টা হালকা ঝিম ঝিম করছে তার । এরপর ধিরে সুস্থে বেডের উপর উঠে বসলেন তিনি । চারদিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলেন তিনি কোথায় আছেন । পাসে আরেকটা বেড খালি । পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে যখন সালমা বুঝলেন,,, তিনি হসপিটালে । তখন তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে কেবিন থেকে হুড় মুড়িয়ে বেরিয়ে আসলেন । সালমা কেবিন থেকে বেরিয়ে রিসিপশনের সামনে যেতেই দেখলো বজলুর পাই চারি করছে । তখন সালমা লম্বা পা ফেলে বজলুরের সামনে গিয়ে দারিয়ে জোরালো কন্ঠে বললো ।
:+আমার ছেলে কোথায় ।(সালমা)
সালমাকে দেখে খানিক’টা থম থমি খেয়ে দারিয়ে যায় বজলুর । সামিয়া, নীলা,ইকরা,তৃপ্তি,সেখানে চেয়ারে বসা ছিল । সালমাকে দেখে উঠে দারালো তারা । তৃপ্তির ঙ্গেন ফিরেছে খানিক খন আগে,, সামিয়া, নীলা, ইকরা, এতোখনে তৃপ্তিকে সামলিয়ে নিয়েছে । বজলুর কিছু বলছে না দেখে,,বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠে সালমার । তিনি আসতে করে বজলুরের আরো সামনে গিয়ে দারিয়ে বললেন ।
:+তবে কি,,, আমার সব শেষ ।(সালমা)
সালমার কথা সুনে বজলুর আসতে করে সালমার ডান হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন ।
:+না,,,, কিছু শেষ হয় নি । সব ঠিক আছে ।(বজলুর)
বজলুরের কথা সুনে সালমা বজলুরকে জরিয়ে ধরে ঠুকরে কেদে উঠলেন । বজলুর আসতে করে সালমার মাথায় হাত রাখে বললেন ।
:+কেদো না । এটা হসপিটাল । এখানে অনেক লোকজন আছে । আমাদের সজিব এখন ঠিক আছে । দেখি এখানে এসে বসো ।(বজলুর)
থেমে থেমে কথা গুলো বলে বজলুর সালমাকে নিজে থেকে ছারিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো । সালমা চেয়ারে বসে বলে উঠলো ।
:+আমার ছেলের কাছে নিয়ে চলো । আমি আমার ছেলের কাছে যাবো ।(সালমা)
সালমার কথা সুনে নীলা এসে সালমার পাসে বসলো । নীলা তখন বজলুরকে বললো ।
:+আংকেল আপনি ওইদিক’টা দেখুন ডক্টর কি বলে । আমি আন্টিকে সব বুঝিয়ে বলছি ।(নীলা)
:+ঠিক আছে,,, মামুনি ।(বজলুর)
এই বলে বজলুর সেখান থেকে চলে গেল । তৃপ্তি এসে সালমার আরেক পাসে বসে সালমাকে জরিয়ে ধরলো । সালমা আলতো করে তৃপ্তির মাথায় ডান হাত রাখলো । আর নীলা সালমার বাম হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো ।
:+আন্টি এভাবে ভেঙে পরলে চলবে না । নিজেকে একটু শক্ত করুন । সজিব এখন ঠিক আছে । সজিবকে আর নিদ্রকে একটা কেবিনে রাখা হয়েছে । ওদের ঙ্গেন না ফেরা প্রর্জন্ত আমরা ওদের সাথে দেখা করতে পারবো না । এটা ডক্টরের নিশেদ । একটু আগে ওদের অপারেশন রুম থেকে বের করে কেবিনে সিফট করা হয়েছে ।(নীলা)
নীলার কথা সুনে সালমা বিচলিত হয়ে বললো ।
:+অপারেশন মানে । আমার ছেলের কি হয়েছে ।(সালমা)
সালমার বিচলিত দেখে সামিয়া আর ইকরা, সালমার দিকে এগিয়ে আসলো । সামিয়া বললো ।
:+আন্টি আপনি বিচলিত হবেন না । সজিবের তেমন কিছু হয়নি । কপাল সামান্য একটু কেটে গেছে । এখন সব ঠিক আছে ।(সামিয়া)
সামিয়ার কথা সুনে সালমা একটু সময় চুপ থেকে তারপর বলে উঠলো ।
:+নিদ্র,,,,,,নিদ্রর কি হয়েছে । ও ঠিক আছে তো ।(সালমা)
কিছু’টা তরি ঘরি করে বললো সালমা । নীলা সালমার এমন অবস্থা দেখে বললো ।
:+আন্টি সব ঠিক আছে । নিদ্ররও এখন মোটা-মুটি ঠিক আছে । দুই বেগ রক্ত লেগেছিল । সেটা হসপিটাল থেকে দেওয়া হয়েছে । আরো দুই বেগ রক্ত লাগবে । সেটা তো এখন সম্ভব নয় । কারন এখন রাত হয়ে গেছে । তাই সেটা কাল ব্যবস্থা করবো । ডক্টর বলছে রক্ত দিতে হবেই । কিন্তু আজ আর এতো’টা যলদি নেই । কালকে দিলেও চলবে । তবে দিতেই হবে ।(নীলা)
নীলার কথা শুনে সালমা দু’চোখের অশ্রু ছেরে দিলেন । এরপর তৃপ্তিকে নিজের দু’হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বললেন ।
:+তাহলে এখন আমার ছেলের সাথে দেখা করতে পারবো না ।(সালমা)
সালমার কথা সুনে নীলা বললো ।
:+না আন্টি । ওদের ঙ্গেন না ফেরা প্রর্জন্ত দেখা করতে দেবে না ।(নীলা)
নীলার কথার পিঠে সালমা আর কিছু বললেন না । তিনি চুপচাপ তৃপ্তিকে জরিয়ে ধরে চোখের পানি বির্সযন দিতে লাগলেন । তৃপ্তিও সালমাকে জরিয়ে ধরে চুপচাপ বসে আছে । তৃপ্তির মুখে কোন কথা নেই । জীবনে প্রথম নিজের চোখের সামনে এমন একটা দৃশ্য দেখেছে সে । এর আগে দেখলেও সেটা ল্যাপটপে দেখেছিল । আর সেই মৃত্যু ছিল জেসিকার । কিন্তু আজ নিজের চোখের সামনে দেখলো সে এমন নির্মম একটা দৃশ্য । এদিকে সজিব আর নিদ্রকে যেই কেবিনে রাখা হয়েছে । সেই কেবিনের কাচের দরজার সামনে দারিয়ে ভিতরের দিকে তাকিয়ে আছে বজলুর । ভিতরে একজন নার্স নিদ্র আর সজিবকে কিছুখন পর পর দেখছে । নিদ্র আর সজিবের হাতে কেনেলাতে সেলাইন লাগালো । বজলুর কেবিনের ভিতর থেকে চোখ ফিরিয়ে পাসে তাকাতে দেখলেন । ইমন আর জয় তার দিকে আসছে । ইমন লম্বা পা ফেলে বজলুরের সামনে এসে দারিয়ে বললো ।
:+আংকেল আমরা এখন চলে যাচ্ছি । রাত হয়ে গেছে, আম্মু টেনশন করবেন ।(ইমন)
ইমনের কথা সুনে বজলুর ইমনের হাত ধরে বললো ।
:+তোমাদের কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো । তা আমি বুঝতে পারছি না ।(বজলুর)
:+আংকেল আপনি এটা কি বলছেন । আপনারা আমাদের বাড়ির মেহমান । আমাদের উচিত আপনাদের সুভিধা অসুবিধার খেয়াল রাখা । আর আমি একজন ডক্টর । সেই দিক দিয়ে এটা আমার দায়িত্বও ছিল ।(ইমন)
বজলুরের কথা সুনে চট করে বলে উঠলো ইমন । বজলুর ইমনের কথা সুনে বললেন ।
:+এখনকার সময়,,,,একজন অপরিচিত মানুষকে হেল্প করা, মুখের কথা না । এখনকার মানুষ নিজেদের সার্থ খোজে । কিন্তু তোমরা দুজন আমাদের অনেক হেল্প করেছো । তোমরা না থাকলে আমি কি থেকে কি করতাম বুঝেই উঠতে পারতাম না । তোমাদের উপর আমি ঋৃণি থাকবো ।(বজলুর)
বজলুর কথা সুনে জয় বলে উঠলো ।
:+আরে আংকেল আপনি এটা কি বলছেন । আচ্ছা এসব বিষয় এখন বাদ দিন । আমাদের বাড়িতে যেতে হবে । কাল আবার এসে দেখে যাবো । আপনি ওদের উপর একটু নজর রাখবেন ।(জয়)
জয়ের এই কথা সুনে বজলুর বললো ।
:+এতো সময় ধরে তোমাদের সাথে আছি । এখনো তোমাদের নাম যানতে পারলাম না ।(বজলুর)
বজলুরের কথা সুনে ইমন বলে উঠলো ।
:+সরি আংকেল একটু তরি-ঘরি থাকায় পরিচয় দিতে পারিনি । আমি ইমন খান । আমার আব্বু হারুন খান । তিনি মারা গিয়েছেন আজ দুই বছর হয়ে গেছে । আম্মু সুলতানা ইসলাম । আপনারা যার বৌ ভাতে এসছেন,,,সে আমার বড় চাচুর ছেলে । ও আমেরিকায় থাকে,,,আর আমরা দেশে থাকি । আমি ঢাকার একজন হাড় বিষয়ক ডক্টর ।(ইমন)
ইমনের শেষের কথা বজলুর বুঝতে না পেরে বললো ।
:+হাড় বিষয়ক ডক্টর মানে ।(বজলুর)
বজলুরের কথার পিঠে জয় বললো ।
:+মানে আংকেল । ওই যে ধরুন হাড় ভেঙে যাওয়া । হাড় ফেটে যাওয়া । ওই সব রুগীকে অপারেশন করে ও । এই ধরুন যে কোন ধরনের এক্সিডেন্টের রুগী ।(জয়)
:+ও বুঝতে পারছি । আচ্ছা তোমার নাম ।(বজলুর)
জয়ের কথা সুনে বজলুর জয়কে প্রশ্ন করলো । জয় খানিক খন সময় নিয়ে বললো ।
:+আমি জয় । ইমনের বন্ধু । আংকেল এর চেয়ে বেসি কিছু বলতে পারবো না ।(জয়)
জয়ের কথা সুনে বজলুর একটু হাসার চেষ্টা করে বললো ।
:+আচ্ছা,, ঠিক আছে,,, বলতে হবে না ।(বজলুর)
:+আংকেল আমরা তাহলে এখন যাই ।(ইমন)
:+ঠিক আছে । তবে কাল একবার অবশ্যই এসো ।(বজলুর)
:+ঠিক আছে আংকেল আসবো । আব,,,এখন আমরা যাই । ইমন চল ।(জয়)
এই বলে জয় আর ইমন রিসিপশনের সামনে আসলো । ইমন রিসিপশনের সামনে গিয়ে নীলাকে একবার দেখে নিলো । মেয়েটা এখনো রক্ত মাখা বোরখা চেঞ্জ করেনি । দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইমন । এরপর ইমন জয়কে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল । বজলুর আরো কিছু সময় নিদ্র আর সজিবের কেবিনের সামনে দারিয়ে থেকে পরে আবার রিসিপশনের সামনে চলে আসলো ।
———————————————
রাত ১২টা বেজে ২৩ মিনিট………………
চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে কিছু দুরে পিজ ঢালা রাস্তায় দারালো ২টো বাস । আর মাইক্রো তিনটে শা শা করে এসে চেয়ারম্যান বাড়ির গেটের সামনে দারালো । বাস থেকে রা’ন’দা, ২ফুট ওলা ছুরি, রড, চাইনিজ কুড়ল, চাপাতি, এরকম আরো অনেক ধরনের অশ্র নিয়ে বাস দু’টো থেকে বেরিয়ে আসলো প্রায় ১৫০ এর উপরে ছেলে । সবাই নিজেদের ফোন বের করে ফোনের টচ লাইট অন করে মাইক্রো তিন’টাকে অনুসরন করে চেয়ারম্যান বাড়ির গেটের সামনে এসে দারালো । প্রথম জিপ গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো রাহুল,জেক,আর সাব্বির । চেয়ারম্যান বাড়ির গেটের দারোয়ান আলম মিয়া আজ গেটে তালা দিয়ে নিজ বাড়িতে গিয়ে নিশ্চিনতে ঘুমাচ্ছেন । চেয়ারম্যান বাড়ির গেট আজ ফোনের টচ লাইটের আলোয়ে আলোকিত হয়ে আছে । সাব্বির এগিয়ে এসে গেটের বড় তালা ধরে বললো ।
:+জেক এটাই কি নিদ্রদের গ্রামের বাড়ি ।(সাব্বির)
সাব্বিরের কথা সুনে জেক আর রাহুল সাব্বিরের পিছনে এসে দারালো । জেক বললো ।
:+হ্যাঁ,,,এটাই নিদ্রদের গ্রামের বাড়ি । আমি এর আগের বার এই রাড়ি থেকেই নিদ্রকে বের হতে দেখেছি ।(জেক)
জেকের কথা শেষ হতে রাহুল বললো ।
:+তাহলে আর কি । গেটের তালা ভেঙে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে হবে । তাছারা আর কোন উপায় নেই । দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতে কেও নেই ।(রাহুল)
রাহুলের কথা সুনে সাব্বির রাগে দাত কটমট করে বলে উঠলো ।
:+বাড়িতে থাকবে কি করে । ওরা মনে হয় নিদ্রকে মেরে বাড়ি থেকে পালিয়েছে ।(সাব্বির)
সাব্বিরের কথা সুনে জেক ভ্র-কুঁচকে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+আরে না । ওর চাচা অনেক ভালো মানুষ । এই কাজ অন্য কারোর ।(জেক)
রাহুল জেকের কথা সুনে চোখ দু’টো একটু ছোট ছোট করে জেককে বললো ।
:+তুই শিউর,,, এই কাজ নিদ্রর চাচার নয় ।(রাহুল)
রাহুলের কথা সুনে জেক বললো ।
:+হ্যাঁ,,,আমি শিউর ।(জেক)
জেকের কথা শেষ হতে সাব্বির দাত কটমট করে বলে উঠলো ।
:+তুই এতো শিউর হচ্ছিস কি করে জেক । এটাও হতে পারে,,, নিদ্রর চাচা,,, নিদ্র আর তার মেয়ের বেপারে যেনে গেছে । মানে নিদ্র যে ওর চাচা তো বোনকে ভালোবাসে ,,,এটা হয়তো তিনি যেনে গেছে । সেই জন্য হয় তো তিনি নিদ্রকে মেনে না নিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেস্টা করছে । আবার এমনও হতে পারে যে নিদ্রদের কোম্পানি, টাকা,পায়সা, বাড়ি, গাড়ি, হাতানোর জন্য নিদ্রকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চান তিনি ।(সাব্বির)
সাব্বিরের এই সব কথা সুনে জেক একটু সময় নিয়ে ভেবে বললো ।
:+কি যানি,,, হলেও হতে পারে । এখনকার মানুষকে বিশ্বাস নেই । টাকার জন্য তারা যে কোন কিছু করতে পারে ।(জেক)
জেকের কথা শেষ হতে রাহুল বললো ।
:+দেখি তোরা গেট থেকে সরে আয় । গেটের তালা ভাঙতে হবে ।(রাহুল)
এই বলে রাহুল আবার পিছনে ছেলে পেলেদের দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+হুসাইন, মিনহাজ, তালা ভাঙার বেবস্থা কর ।(রাহুল)
এই বলে রাহুল সেখান থেকে সরে গেলো । রাহুলের পিছু পিছু জেক আর সাব্বিরও গেট থেকে সরে এলো । হুসাইন আর মিনহাজ গেটের দিকে এগিয়ে এসে হাতে থাকা রড দিয়ে গেটের তালা ভাঙতে লাগলো । প্রথমে হাতে থাকা রড দিয়ে গেটের তালাতে কয়েকটা আঘাত মারলো মিনহাজ । কিন্তু তালা খুললো না । তখন হুসাইন মিনহাজকে সরিয়ে দিয়ে নিজের হাতে থাকা রড দিয়ে গেটের তালায় ২/৩টা আঘাত দিতে তালা ভেঙে খুলে গেল । মিনহাজের হাতের রডের থেকে হুসাইনের হাতের রড অনেক মোটা ছিল । যাই হোক অতপর সাব্বির, রাহুল,জেক, চেয়ারম্যান বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো, সাথে আরো অনেক ছেলে,পেলে । কিন্তু রাড়ির মেন দরজায় আরেক’টা তালা দেখলো সবাই । তখন রাহুল আবার হুসাইনকে বললো তালা’টা ভাঙার জন্য । গেটের তালা থেকে বাড়ির মেন দরজার তালা একটু ছোট । তাই হুসাইন হাতে থাকা রড দিয়ে দু’টো বারি দিতে তালা ভেঙে খুলে গেল ।
★
হসপিটালের বেডে সুয়ে ধিরে ধিরে চোখ খুললো নিদ্র । মাথার পিছনে প্রছন্ড ব্যথা করছে তার । হাত, পা, পুরো শরীর ব্যথায় নারাতে পারছে না সে । নিদ্র আসতে করে ডান পাসে ঘোলাটে চোখে দেখলো সজিব বেডের উপর সুয়ে আছে । আর একজন নার্স রুমের এক কোনায় চেয়ারে বসে ঘুমে ঝিমোচ্ছে । নিদ্রর শরীরের ব্যথা সজ্জ করা অসম্ভব হয়ে পরেছে । চোখ দু’টো দিয়ে দু’ফোটা চোখের পানি গাল বেয়ে কানের লতিতে এসে লেগেছে । দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সজ্জ করার চেস্টা করলো নিদ্র । কিন্তু বৃথ্য হলো সে । ব্যথা সজ্জ করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে উঠলো নিদ্র । নিদ্রর চিৎকারে ঘুম উড়ে যায় নার্সের । চেয়ার থেকে পরতে পরতে পরেনি সে । তাড়াতাড়ি নার্স নিদ্রর কাছে এসে দারালো । এরপর একটা ইনজেকশনে ব্যথার ঔষধ নিয়ে নিদ্রর হাতে থাকা কেনোলাতে ঔষধ পুস করে দিলেন । কিন্তু এতে যেন নিদ্রর শরীরের ব্যথা বিন্দুমাত্র কমলো না । নার্স আর উপায় না পেয়ে ঘুমের ঔষধ ইনজেকশনে নিতে নিতে বললো ।
:+প্লিজ আপনি শান্ত হন । এভাবে চিৎকার করলে পাসের বেডে থাকা ছেলে’টা ঘুম থেকে যেগে যাবে । অনেক কষ্টে ঘুম পারিয়েছি ওকে ।(নার্স)
নার্সের কথা সুনে নিদ্র চোখ মুখ বুঝে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সজ্জ করার চেস্টা করলো । কিন্তু ব্যথা যেন বেড়েই চলেছে । নার্স ঘুমের ঔষধ ইনজেকশনে নিয়ে আবার কেনোলাতে ঔষধ পুস করে দিলো । ঔষধ দিয়ে একটু সরে দারালো নার্স । ধিরে ধিরে পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল নিদ্র । নার্স এটা দেখে নিজের বুকের উপর ডান হাত রেখে সস্তির একটা নিশ্বাস ছারলো । এরপর সজিবের দিকে তাকালো নার্স । পিচ্চি ছেলেটা গুটি সুটি মেরে বেডের উপর সুয়ে আছে । নিদ্রর ঙ্গেন ফেরার কিছুখন আগে ঙ্গেন ফিরেছিল সজিবের । নার্স অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে সজিবের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে সজিবকে ঘুম পারিয়ে দিয়েছিল । সজিব বলেছিল তার মাথা ব্যথা করছে, তখন নার্স একটা ব্যথার টেবলেট সজিবকে খায়িয়ে দিয়েছিল ।
কেবিন থেকে বেরিয়ে হসপিটালের রিসিপশনের দিকে হাটা ধরলো নার্স । সে রিসিপশনের কাছে এসে দেখলো । বজলুর একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে । সামিয়া, ইকরা, নীলা, একে অপরের গায়ে ঢলে পরে ঘুমাচ্ছে । তৃপ্তি সালমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে । আর সালমা তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । নার্স সালমার আর বজলুরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো ।
:+ইস্কুজমি,,,,৫ নাম্বার কেবিনের রুগীর লোক কি আপনারা ।(নার্স)
নার্সের গলার আওয়াজ শুনে বজলুর ফ্লোর থেকে মাথা তুলে নার্সের দিকে তাকালো । সালমারও একই অবস্থা । সালমা বজলুরের দিকে তাকালো । বজলুর নার্সের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত সুরে বললো ।
:+হ্যাঁ,,,আমরা ৫ নাম্বার কেবিনের রুগীর লোক । কেন কোন সমস্যা হয়েছে ।(বজলুর)
নার্স বজলুরের কথা সুনে বজলুরের দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+না আংকেল,,, কোন সমস্যা হয়নি । আপনাদের রুগীদের ঙ্গেন ফিরেছে । আমি ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে । আপনারা চাইলে এখন যেতে পারেন । তবে হই হুলুর করবেন না । তাহলে রুগী ঘুম থেকে যেগে যাবে,,,আর অনেক সমস্যা করবে ।(নার্স)
এই বলে নার্স সেখান থেকে চলে গেল । বজলুর চেয়ারে ঠাই বসে রইলো । সালমা তৃপ্তিকে আসতে করে ডেকে তুললো । তৃপ্তি চোখ দু’টো,,,দুই হাত মুঠি করে ডলতে ডলতে বললো ।
:+কি হয়েছে আম্মু,,,, ডাকছো কেন ।(তৃপ্তি)
সালমা তৃপ্তির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো ।
:+সজিব আর নিদ্রর ঙ্গেন ফিরেছে । ওদের কেবিনে যেতে হবে । তুই যাবি,,,না এখানে থাকবি ।(সালমা)
সালমার কথা সুনে তৃপ্তি কিছু’টা বিচলিত হয়ে সালমার ডান হাত ধরে বললো ।
:+ আমি যাবো আম্মু ।(তৃপ্তি)
সালমা তৃপ্তির হাতের উপর বাম হাত রেখে বললো ।
:+ঠিক আছে ।(সালমা)
এই বলে সালমা বজলুরের দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+এখনো কি এখানে বসিয়ে রাখবে ।(সালমা)
সালমার কথা সুনে সালমার দিকে তাকালো বজলুর । এরপর বজলুর সালমার থেকে চোখ ফিরিয়ে শূন্যে চোখ রেখে বললো ।
:+হ্যাঁ,,,চলো ।(বজলুর)
এই বলে বজলুর চেয়ার থেকে উঠে দারালো । সালমা আর তৃপ্তিও বসা থেকে উঠে দারালো । তৃপ্তি নীলা, সামিয়া আর ইকরার দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+আব্বু,,,সামিয়া, আর আপুদের ডেকে তুলি ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির দিলে শান্ত চোখে তাকিয়ে বজলুর বললো ।
:+এখন ডাকার দরকার নেই । মেয়ে গুলো একটু রেস্ট নেক ।(বজলুর)
:+কিন্তু আব্বু । নীলা আপু বলেছিল,,,, ভাইয়া আর সজিবের ঙ্গেন ফিরলে তাকে যেন ডেকে তুলি ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা সুনে সালমা চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো ।
:+ঠিক আছে । তুই ওদের ডাক । এখানে মেয়ে গুলোকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না ।(সালমা)
সালমার কথা সুনে তৃপ্তি সালমার হাত ছেরে দিয়ে নীলা, সামিয়া আর ইকরাকে ডেকে তুললো । নীলা আরমোড়া ভেঙে হাই তুলে তৃপ্তিকে বললো ।
:+কি হয়েছে সুইটি ।(নীলা)
তৃপ্তি নীলা দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+আপু ভাইয়া আর সজিবের ঙ্গেন ফিরেছে । আমাদের কেবিনে যেতে হবে ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা সুনে নীলা তরি ঘরি করে বললো ।
:+আরে,,, তাহলে এখানে দারিয়ে আছো কেন সবাই । চলো কেবিনের ভিরতে । ওদিকে আবার কি হচ্ছে,, কে যানে ।(নীলা)
এই বলে বসা থেকে উঠে দারালো নীলা । সাথে সামিয়া আর ইকরাও । বজলুর নীলার দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+এতো তরি ঘরি করার কিছু নেই মামুনি । ওদের ঙ্গেন ফিরেছে । তবে নার্স ইনজেকশন দিয়ে ওদের আবার ঘুম পারিয়ে দিয়েছে ।(বজলুর)
নীলা বজলুরের কথা সুনে বজলুরের দিকে তাকিয়ে বললো ।
:+আংকেল,,,, যদি ওদের আবার ঘুম ভেঙে যায় । তখন যদি ওদের সমস্যা হয়,,,,আর আমরা যদি ওখানে না থাকি,,, তাহলে কি হবে,,,,,,।(নীলা)
নীলাকে আর বলতে না দিয়ে সালমা বললো ।
:+আচ্ছা,,,আমি বুঝতে পারছি । এখন চলো সবাই । এখানে দরিয়ে থাকার আর কোন মানে হয় না ।(সালমা)
এই বলে সালমা হাটা ধরলো । সালমার যাওয়া দেখে সাবাই সালমার পিছনে হাটা ধরলো । অতপর ৫ নাম্বার কেবিনের ভিতরে এসে দারালো সবাই । সালমা আর কোন দিকে না তাকিয়ে আসতে করে এসে সজিবের বেডের পাসে বসলো । এরপর সজিবের কপালের বেন্ডেজ উপর দিয়ে ঠোঁট দু’টো ছোয়ালেন তিনি । সালমা সজিবের পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে বুঝার চেষ্টা করলেন আর কোথার ব্যথা পেয়েছে কি না । বুকের ভিতর দুর দুর করছে সালমার । চোখ দু’টো ঘোলাদে হয়ে আসছে বার বার । কিন্তু তিনি ডান হাত আর বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিচ্ছেন বার বার । এদিকে নিদ্রর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সবাই । নিদ্রর মাথায় বেন্ডেজ, দু’হাতে বেন্ডেজ, বুকে বেন্ডেজ, আর বাকি শরীরের উপর কম্বল দেওয়া । তৃপ্তি নিদ্রর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে নীলা খপ করে তৃপ্তির ডান হাত ধরে বললো ।
:+এখন ওর কাছে যাওয়ার দরকার নেই ।(নীলা)
তৃপ্তি নীলার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বললো ।
:+কেন আপু ।(তৃপ্তি)
:+ওর কি অবস্থা দেখতে পারছিস না । এখন বিন্দু মাত্র টাচ লাগলে ওর ঘুম ভেঙে যাবে । পরে অনেক সমস্যা হতে পারে । এখন ওর কাছে যাওয়ার কোন দরকার নেই । আগে ও সুস্থ হোক তারপর যাস ।(নীলা)
এই বলে নীলা তৃপ্তির হাত ছেরে দিলো । সামিয়া আর ইকরা কেবিনের ভিতরে থাকা দু’টো চেয়ারে গিয়ে বসে পরলো । নীলার কথার পিঠে আর কথা বললো না তৃপ্তি । বজলুর আবার কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল । নীলা কেবিনের এক কোনায় গিয়ে দেওয়ালের সাথে ঘেসে ফ্লোরে বসে পরলো । নীলার বসা দেখে সামিয়া আর ইকরাও নীলার পাসে গিয়ে বসলো । তৃপ্তি সালমার কাছে গিয়ে দারালো ।
:+আম্মু,,,সজিবের কাছ থেকে সরে এসো । ওর সমস্যা হতে পারে ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা সুনে সালমা বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে জোরালো কন্ঠে বললো ।
:+কোন সমস্যা হবে না ।(সালমা)
:+কিন্তু আম্মু,,,,,,,।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শেষ হওয়ার আগে সালমা আবার বললো ।
:+তুই এখান থেকে যা ।(সালমা)
তৃপ্তি আর কথা বারালো না । সে সেখান থেকে নীলার পাসে এসে বসে পরলো । সালমা খানিকক্ষণ সময় সজিবের মাথায় হাত বুলিয়ে পাসে তাকালেন । নিদ্রকে দেখে আতকে উঠলেন তিনি । চোখ দু’টো থেকে আপনা আপনি পানি গরিয়ে পরলো । ছেলে’টার কিছু হলে তার মা, বাবাকে কি যবাব দেবে তারা । ভেবে পাচ্ছেন না সালমা । এদিকে নীলা, তৃপ্তি, সামিয়া, ইকরা, কেবিনের ফ্লোরে লম্বা হয়ে সুয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেছে ।
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
[।কপি করা নিষেধ।]
[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দিষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]