#গহন_কুসুম_কুঞ্জে
১৬.
স্কুলের মাঠের এক কোণে বিশাল দেবদারু গাছের তলায় বসে তনয়া স্কুলের গল্প শুনল। সকালবেলা সে মায়ের সাথে আবদার করে তার স্কুল দেখতে চলে এসেছে। মা এসেই ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বেশ কিছুদিন তিনি ছেলের বিয়ের জন্য স্কুলে আসতে পারেননি। প্রচুর কাজ জমে গেছে। তনয়া দেখে এসেছে তার টেবিলে ফাইলের স্তুপ আর অপেক্ষারত দর্শনার্থীদের ভিড়। তনয়া বলে এসেছে সে একাই ঘুরেফিরে দেখবে।
মা অবশ্য একা ছাড়েননি তাকে। স্কুলেরই এক শিক্ষিকাকে বলেছেন তনয়াকে সব ঘুরে দেখাতে। স্কুলশিক্ষিকা সুরমাকে বেশ পছন্দ হয়ে গেছে তনয়ার। মেয়েটার বয়স তার কাছাকাছি। এই গ্রামেরই মেয়ে। তার পড়ানোর বিষয় বাংলা। মেয়েটা ঘুরেফিরে সব দেখল তনয়াকে। প্রতিটা ক্লাসরুম, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে, তাদের কমনরুম, একচিলতে বাগান। সুন্দর গোছানো স্কুল৷ ঘুরেফিরে তারা দেবদারু গাছের নিচে এসে বসলে সুরমা তাকে গল্পটা বলল।
এর আগে ওদের গ্রামে কোনো স্কুল ছিল না। ওরা যারা পড়াশুনা করত তাদের যেতে হতো দুই গ্রাম পরে সরকারি স্কুলে। সেখানেই একসময় শিক্ষকতা করতেন স্বরূপের মা, মানে সুরাইয়া বেগম। শিক্ষকতার কাজটা তার খুবই পছন্দ ছিল। প্রতিদিন এতটা হেঁটে যেতেন পড়ানোর খাতিরে।
সেবার ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। বন্যায় গ্রামের রাস্তাঘাটের অবস্থা এত খারাপ হয়েছিল যে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। স্কুলও অনেকদিন বন্ধ রয়েছিল। কিন্তু যখন খুলল, তখনো এই গ্রাম থেকে স্কুলে যাওয়ার পথ সুগম হলো না। ছাত্ররা তবু পড়ার তাগিদে কয়েক মাইল হেঁটে ঘুরে যেত। ছাত্রীদের পড়া বন্ধ হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল সুরাইয়া বেগমের স্কুলে পড়ানোও। তিনি বেশ ভেঙে পড়লেন।
তার স্বামী তাকে ভীষণ ভালোবাসতেন৷ স্ত্রীর কষ্ট তার সহ্য হলো না। তিনি কথা দিলেন, এই গ্রামেই তিনি স্কুল করে দেবেন। সেই স্কুলেই তার স্ত্রী শিক্ষকতা করবেন।
তিনি ছিলেন সাধারণ চাকুরে। অল্প কিছু বেতন পেতেন মাস শেষে৷ চাকরির টাকায় তার পক্ষে স্কুল করা সম্ভব ছিল না। তিনি নিজের পৈতৃক সম্পত্তির বড় একটা অংশ বিক্রি করে দিলেন। স্কুল হলো।
গ্রামের লোকজন প্রথম প্রথম তার এই কান্ডে হাসাহাসি করতে বাকি রাখল না। কতকিছুই না বলেছিল তারা! সেসব এখন অতীত। স্কুলটা আস্তে আস্তে চলতে শুরু করেছিল। সুরাইয়া বেগমের দক্ষতায় এখন এই স্কুলটাই কয়েক গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে ভালো স্কুল।
কিন্তু দুঃখেত বিষয় হলো, স্কুলটা ভালো করে চলতে শুরু করার আগেই সুরাইয়া বেগমের স্বামী মারা গিয়েছিলেন। তবে দু’জনের স্বপ্ন আর ভালোবাসা এখনো বেঁচে আছে।
তনয়া চারদিকে তাকিয়ে দেখল কী সুন্দর পরিবেশ! বাচ্চাদের কলকাকলিতে মুখরিত স্নিগ্ধ শীতল বাতাস। ওর মন ভরে গেল। সে স্কুলেই বসে রইল মায়ের কাজ শেষ হওয়া অবধি। টিফিনের সময় মায়ের সাথে বসে বাড়ি থেকে আনা খাবার খেল।
মা বোধহয় তখনই স্বরূপকে ফোন করেছিলেন৷ একটু পর তনয়া দেখল স্বরূপ এসেছে। সাথে মিলি। গতকাল রয়ে গিয়েছিল সে। মিলি অসম্ভব সুন্দর। তনয়ার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর। ওকে তনয়ার এত ভালো লাগে! কিন্তু আজ এই গ্রামের পরিবেশে তার পশ্চিমা পোশাক বেমানান লাগছে।
ওরা একসাথে ঘুরতে বের হলো। এখান থেকে অটোরিকশায় করে বড় বিলে যাওয়া যায়। সেখানে নাকি অজস্র পদ্ম ফোটে।
ওরা বড় বিলে পৌঁছুল বিকেলে। তখন দুপুরের চড়া রোদ নরম হয়ে এসেছে। পাড়ে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। ওরা একটা নৌকা ভাড়া করে উঠে পড়ল। তনয়া শাড়ি পরে এসেছে। নীল রঙের শাড়ি। পরিবেশ অনুযায়ী খুব মানিয়ে গেছে। মিলি বারবার আফসোস করল, কেন যে শাড়ি পরে এলাম না!
বিলের মাঝ বরাবর গিয়ে দেখা গেল পাড় দেখা যায় না। যেন পদ্মের একটা সমূদ্রে চলে এসেছে তারা! মিলির জামা ম্যাচ না হলেও সে ছবি তুলতে কার্পন্য করল না। স্বরূপকে ক্যামেরাম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হলো। তনয়ার ছবি তুলতে ইচ্ছে করল না। সে চুপচাপ মাঝির পাশে বসে রইল। স্বরূপ আর মিলি কয়েকবার তাকে বলল। কিন্তু সে জায়গা থেকে উঠল না। এত সুন্দর পরিবেশ স্মৃতিতে ধারণ করলেই বরং বেশি ভালো লাগবে। অত পোজ দিয়ে ছবি তুলে বড়জোর প্রোফাইলের ছবি বদলে দেয়া যাবে! আর কী লাভ হবে?
ওর খুব বিরক্ত লাগতে লাগল মিলির ওপর। এই মেয়েটা না থাকলে সে স্বরূপের হাত ধরে বসে থাকত। মিহি বাতাস গায়ে মেখে ওর কাঁধে মাথা রেখে দিগন্তে আকাশ আর জল এক হয়ে যেতে দেখত। স্বরূপকে আবদার করত পদ্ম তুলে দিতে। কিন্তু এদিকে ফটোসেশন শেষ হবার নাম নেই।
অপূর্ণ মনোরথেই তনয়াকে ফিরতে হলো। সূর্য তখন পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। অটোরিকশায় বসে ঠান্ডা হাওয়া খেতে খেতে তারা বাড়ি ফিরল। আগামীকাল তারা ফিরে যাবে। আজ শেষ রজনী।
সারাদিন ঘুরে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তনয়া। স্বরূপ মায়ের সাথে গল্প করছিল বাইরে। সে ঘরে এসে শুয়ে পড়ল। চোখ লেগে এলো কখন যেন৷
গভীর ঘুমে একসময় তার মনে হলো কেউ তাকে যেন টানছে, কিংবা ঠেলছে। তনয়ার ঘুম আধো আধো ভাঙল। চোখ মেলল না সে। তবে বুঝতে পারল পাশের মানুষটা তাকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়েছে। অভ্যাস হয়ে গেল এই ক’দিনেই? তনয়ার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটল।
*
স্টেশনে তনয়াকে নিতে বাবা মা দু’জনেই এসেছেন। ট্রেন থেকে নেমে তাদের দেখতে পেয়েই চিৎকার করে ছুটে গেল তনয়া। জড়িয়ে ধরল মা বাবাকে। ওনারা ওখান থেকেই ওকে নিয়ে যাবে।
স্বরূপের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে চড়ে বসল তনয়া। একদিকে বাসায় যাবার প্রচন্ড আনন্দ আবার অন্যদিকে মনে চাপা কষ্টও কাজ করছে। স্বরূপকে অনেকবার বলা হয়েছিল, সে যাবে না। অফিসে যেতে হবে। কত কী নাকি কাজ আছে! বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি যাবার যে রীতি আছে সেটা পালন করা হলো না। ওদের দার্জিলিং যাবার তারিখ ফিক্সড৷ এখন নাকি অফিসের কাজকর্ম ম্যানেজ করে রাখতে হবে। নইলে এই বিয়ের ছুটির পরপর আবার ছুটি পাওয়া যাবে না।
তনয়া গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। মিলিও এসেছিল ওদের সাথে। সে হাত নাড়ছে। স্বরূপ পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি ধোঁয়াশার মতো। তাতে আবেগ খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হলো তনয়া৷ ওর কি একটুও কষ্ট হবে না? একফোঁটাও না?
*
সারাদিন মা বাবার সাথে কাটিয়ে, মায়ের হাতের রান্না খেয়ে রাতে নিজের ঘরে ঘুমুতে গিয়ে তনয়ার ভারি শান্তি শান্তি লাগল। এতদিন মনে হচ্ছিল সে যাযাবর হয়ে গেছে। আজ শান্তির ঘুম হবে। কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে নরম গদিতে গা ডুবিয়ে আরামে চোখ বন্ধ হয়ে এলেও পরমুহূর্তে চোখ খুলে গেল। সব আছে, তবু কী যেন নেই। তার এতদিনের সঙ্গী কোলবালিশটাকে পছন্দ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে পাশে আস্ত মানুষ চাই। মানুষের গায়ের ঘ্রাণ চাই। বুকের উষ্ণতা চাই।
কিন্তু এই কিছুদিন আগেও তো সব ঠিক ছিল৷ এই ঘরে, এই বিছানায় তার সব শান্তি গুটিশুটি হয়ে পড়েছিল।বিয়ে হওয়া মানেই কি তবে নিজের পুরানো অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে দেয়া? নিজেকে দু’ভাগ কর ফেলা?
স্বরূপ এখন কী করছে?
*
স্বরূপ ল্যাপটপে কাজ করছিল। প্রচুর কাজ জমেছে। তার পাশে ধূমায়িত কফির কাপ। স্ক্রিন থেকে চোখ সরছে না মুহূর্তের জন্যও। এসব কাজ তাকে সবসময়ই করতে হয়। কখনো খারাপ লাগেনি। আজ লাগছে। পুরোপুরি বিরক্ত লাগছে। তার রাত জাগার অভ্যাস ছিল। অদ্ভূত কারনে জলদি ঘুমিয়ে পড়া সিন্ডারেলাকে জড়িয়ে ধরলে তার ঘুম চলে আসত। আজও আসছে। কিন্তু সিন্ডারেলা নেই। সে জানে, বিছানায় যাওয়ামাত্র তার ঘুম নির্বংশ হবে। কিন্তু এখন একেকটা হাই তোলা তাকে বারবার ঘুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই ঘুম একা একা ঘুমুবার নয়৷ কী বিরক্তিকর বিষয়!
স্বরূপ একসময় ল্যাপটপ বন্ধ করে বারান্দায় গিয়ে বসল। তনয়ার প্রতি তার আকর্ষণটা সে কী দিয়ে ব্যাখ্যা করবে? শরীরী আকর্ষণ? শুধুই কি তাই? তাই হবার কথা। কারন মেয়েটাকে তার সারাক্ষণ মনে পড়ছিল না। এইযে রাতে ঘুমানোর সময় হয়েছে, এখন মনে পড়ছে। স্বরূপ আস্ত সিগারেট শেষ করতে করতে মস্তিষ্কের জটিল চিন্তা সরলীকরণ করে ফেলল। তনয়ার জন্য সে যা অনুভব করছে তার পুরোটাই জৈবিক প্রয়োজন। আর কিছুই নয়। আরেকটা বিষয় হলো মেয়েটা ভালো। তাই কয়েকদিন একসাথে থেকে ওর একটা প্রভাব তার মনের মধ্যে ছাপ ফেলে গেছে।
উঠে পড়ে আবার ল্যাপটপ অন করল সে। তখনই তনয়ার ফোন এলো। ঘড়িতে বারোটা চল্লিশ।
ফোন ধরে সে বলল, “ঘুমাওনি?”
তনয়া আহ্লাদি স্বরে বলল, “না। ঘুম আসছে না।”
“সিন্ডারেলাদের ঘুম আসতে এত দেরি হয় জানতাম না তো।”
“একটা রাক্ষস ওর ঘুম চুরি করে পালিয়ে গেছে।”
স্বরূপ মুখ দিয়ে চু চু শব্দ করে বলল, “আহারে! তা এখন কী করতে হবে?”
“রাক্ষটাকে এসে ঘুম দিয়ে যেতে হবে।”
“পারলে রাক্ষস বধ করে ঘুম নিয়ে যাও।”
“যাহ! কী বলো!”
“যা মনে হলো তাই।”
“কাল এসো না এখানে। তোমাকে মিস করছি।”
স্বরূপ হেসে বলল, “মিস করলে নিজে চলে এসো। আমি পারব না যেতে।”
“তুমি খুব খারাপ।”
“রাক্ষস জাতি ভালো ছিল কবে?”
“গতকালও ভালো ছিল।”
“খারাপ লোকের সাথে কথা বলতে রাত বিরাতে ফোন করছো কেন?”
“স্যরি, বাই!”
“বাই বাই।”
স্বরূপ ফোন কেটে দিল। তনয়া ভাবেনি এভাবে ফোন কাটবে সে। ভেবেছিল তাকে কিছু বলে মানাতে চেষ্টা করবে। আস্ত পাজি তো!
আধঘন্টা পর তনয়ার নাম্বার থেকে ভিডিও কল এলো। এখনো জেগে! স্বরূপ দেরি করল না। তনয়াকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। ছবি বের করতে গিয়েও নিজের মনের সাথে লড়াইয়ে পেরে উঠছিল না। কল ধরে দেখল অন্ধকার। সে বিরক্ত মুখে বলল, “অন্ধকারই যখন দেখাবে তখন ভিডিও কল করেছ কেন?”
তনয়া উত্তর দিল, “তোমাকে দেখতে।”
“দেখা হলো তো? বাই!”
“আরে দাঁড়াও দাঁড়াও। আমাকে দেখবে?”
“দেখাও।”
তনয়া আলো জ্বালিয়ে দিল। স্বরূপ ছিটকে উঠল। মোবাইলটা আরেকটু হলে হাত থেকে পড়ে যেত। ভয়ানক একটা চেহারা দেখা যাচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড লাগল তার বুঝতে যে ওটা তনয়া। কাজল আর লিপস্টিক মেখে ভূত সেজেছে৷
তনয়া খিলখিল করে হাসছে। স্বরূপ দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “প্রতিশোধ?”
“না তো, তুমি আমাকে ভুত ডাকো তাই ভূত হয়ে দেখালাম।”
“ভূত ডাকি না, ভুতু ডাকি।”
“সে যাই হোক, আমাকে কেমন লাগছে বলো।”
“ভূতের এক্সিবিশন হলে প্রেজেন্ট করা যাবে, কেউ সন্দেহও করবে না যে তুমি মানুষ।”
“বাহ! তাহলে ভালো সেজেছি বলো!”
“তুমি যা তাই সেজেছ, খারাপ কী?”
“তুমিও তাহলে ঝন্টু মিয়া সেজে বসে থাকো।”
“কেমন করে সাজে?”
“মুখে ছাগলদাড়ি আর মাথায় চারকোনা টুপি পরলেই চলবে।”
স্বরূপ হাসল। কথা চলল আরও অনেকক্ষণ। স্বরূপের আর কাজ করা হলো না। ফোন যখন রাখল তখন ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে তার।
*
পরপর কয়েকদিন একই রুটিন চলল। সারাদিন দু’জন ব্যস্ত থাকে, রাতে ভিডিও কলে কথা হয়। তনয়াই কল করে। সে প্রথমদিন ভূত সেজেছিল, এরপর থেকে উল্টোপাল্টা সব ফিল্টার দিয়ে রাখে মুখের ওপর। আসল চেহারা স্বরূপকে দেখতে দেয় না। স্বরূপ নানা কথা বলে ফিল্টার সরানোর চেষ্টা করে। তনয়া সরায় না। তার কথা হলো সে স্বরূপকে দেখতে ফোন করেছে। স্বরূপের যদি তাকে দেখতে ইচ্ছে হয় তাহলে যেন নিজে কল করে নেয়।
স্বরূপ করে না। রোজ ইচ্ছে করে, তবুও করে না। একদিন আর থাকতে না পেরে করে ফেলল। তনয়া খুশি হয়ে কল ধরল। কয়েকদিন পর তনয়ার স্বাভাবিক চেহারা দেখে কেমন ভালো লাগতে শুরু করল স্বরূপের। তনয়া বলল, “অবশেষে ফোন করলেন তাহলে!”
স্বরূপ তা স্বীকার করবে কেন? সে বলল, “ভুলে করেছি। আসলে মা’কে ফোন করছিলাম।”
তনয়া সাথে সাথে কল কেটে দিল। স্বরূপ থতমত খেয়ে গেলেও আর কল করল না। তনয়াও সেদিন আর স্বরূপকে কল করল না। তার পরের দিনও না।
স্বরূপের শ্বশুরবাড়ি যাবার কথা ছিল শুক্রবার। সে বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ফেরার পথে কী মনে করে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিল। তনয়া দু’দিন ধরে কথা বলছে না। তার রাতের ঘুম তো হচ্ছেই না, কাজকর্মও লাটে ওঠার জোগাড়!
তনয়া স্বরূপের এই অনাকাঙ্ক্ষিত আগমনে সব রাগ ভুলে গিয়ে হাসিমুখে বলল, “ইশ! তুমি কি এই কদিনে আরো সুন্দর হয়েছ?”
স্বরূপ অবাক হয়ে বলল, “সুন্দর হব কেন? কাজের চাপে আরও শুটকি লেগে গেছি।”
“কিন্তু আমার কাছে আগের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে।”
*
সেই রাতে তনয়ার ঘুম খুব ভালো হলো। তার মনে হলো এতদিনে তার ঘরের শান্তি ফিরে এসেছে। সব আগের মতো হয়ে গেছে। শুধু ওর কোলবালিশটা বদলে গেছে এই যা!
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু