সুখ_একটি_প্রজাপতি (১৬)

0
114

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (১৬)

কিছু সমস্যার কারণেই রজনীর বিয়েটা এক সপ্তাহ পিছিয়েছিল। আজ সকাল থেকেই চলছে নানান আয়োজন। দুপুরে মেহেদীর অনুষ্ঠান আর রাতে হলুদ। পুরো গ্রামের সব লোককে দাওয়াত করা হয়েছে। চৌধুরী পরিবারের সুনাম সব খানেই। বরাবরই লোক মুখের শীর্ষে তাদের নাম। সৃষ্টিকর্তার রহমতে ধন সম্পদ ক্ষমতা কোনো কিছুরই কমতি নেই। ভাতিজির বিয়ে উপলক্ষ্যে ফিরেছেন রকিবুল চৌধুরীও। তিনি প্রবাসী। লন্ডন শহরে ওনার একটি ফ্যাক্টরি ও রয়েছে। দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বরাবরই চিন্তায় থাকেন। অথচ একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এত অর্থ লাগে না। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে যে যত পায় সে আরও বেশি চায়। ওনার ক্ষেত্রে বাক্যটি শতভাগ সত্য। ভদ্রলোকের সাথে এর আগে একবারই দেখা হয়েছে ঝিলের। মায়ের মুখের সাথে অনেকটা মিল। পিঠোপিঠি কী না।
“ভালো আছ মামুনি?”

“জী মামা। আপনি কেমন আছেন?”

“আল্লাহ রেখেছেন ভালো। তোমার সাথে তো সেভাবে কথাই হয় নি। অথচ এমন সময় দেখা হলো যখন কথা বলার সময় ই নেই। আচ্ছা আসো তো আমার সাথে।”

ঝিলের ছোট মামার দুই মেয়ে সুমা আর রানি ছুটে এসেছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কুশলাদি করল।
“আমার পিন্সেসদের জন্য অনেক অনেক চকলেট এনেছি।”

“থ্যাংক ইউ পাপা।”

“এই নাও তোমার জুস।”

“এখন এসব করতে গেলে কেন? আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না।”

“কত দিন পর এসেছ খেয়াল আছে?”

স্ত্রীর কথাতে ভদ্রলোক হাসলেন। ঝিল আড়চোখে এসব দেখছিল। হঠাৎ ই ওর মন খারাপ হলো। ওর মা কিংবা চাচি রা বেঁচে থাকলে ওদের পরিবারেও এমন সব সুন্দর মুহূর্ত আসত। পাপা রা যখন এক বুক ক্লান্তি নিয়ে ফিরে আসেন তখন নিশ্চয়ই তাদের জন্যও এমন এক ক্লাস শরবত বরাদ্দ হতো। কিন্তু সেসব কেবল কল্পনা। যারা অনেক দূরে চলে যায় তারা আর কখনো ফিরে আসে না। বা হাতের তালুতে চোখ মুছে মেয়েটি। রকিবুল চৌধুরী সবার সাথে কথা শেষ করে ঝিলকে নিয়ে বসলেন।
“তোমার মায়ের সাথে আমার খুব ভাব ছিল। আমাদের বয়সের ফারাক মাত্র দু বছর। সব সময় ভালোবাসা কাজ করত। আমি দু বছরের বড় হওয়া সত্বেও এক ক্লাসেই পড়াশোনা করেছি। সে দিক থেকে বন্ধুই বলা চলে। অথচ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলোতে আমরা সবাই সবার থেকে দূরে সরে এসেছিলাম।”

কথাটা বলে থামলেন ভদ্রলোক। ঝিল বুঝতে পারছে না হঠাৎ করেই মামা কেন এসব বলে চলেছেন।
“মামুনি অলোয়েজ মনে রাখবে পরিবারের লোকজন খারাপ চায় না। তারা সর্বদা ভালো চায়। হয়ত ভাগ্যের দোষে কখনো কখনো খারাপ হয়ে যায়। আমাদের পৃথিবীটা বেশ বৈচিত্র্যময়। তাই কোনো কিছুকে ফিক্সড করে নেওয়া যায় না। বুঝলে?”

ঝিল মাথা ঝাঁকায়। ভদ্রলোকের ঝিলের হাতে একটা ছোট বক্স ধরিয়ে চলে যান। মেয়েটি অনেকটা সময় সোফাতে বসে থাকে। ওর চোখ জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে কোথাও একটা যন্ত্রণা। কিন্তু সে যন্ত্রণার কারণ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বীয় কক্ষে এসে বক্সটা খুলে ঝিল। একটা গোল্ডের লকেট। যার ভেতরে লেখা
‘বাটারফ্লাই।’

অনেকটা অগোচরেই একটা সীম কার্ড এনে দিয়েছে আয়ুষ। সেটা লোড করে প্রথমেই অভিনবকে কল করল ঝিল। অভিনবর ঘুম ভাঙে নি তখনো। ঘুমু ঘুমু কণ্ঠেই জবাব দিল।
“কি ব্যপার প্রজাপতি। আপনি নিজ থেকে কল করলেন যে। সূর্য আজ কোন দিকে?”

“নিজেই দেখে নিন না সূর্য কোন দিকে।”

“তা তো দেখবই। বাট আই এম লিটল সারপ্রাইজড!”

“কল দিয়ে বুঝি ভুল করেছি। তবে রেখে দিচ্ছি।”

“রাখবেন না প্রজাপতি। বুকে যন্ত্রণা হয়।”

“এসব বাজে কথা ছাড়া আপনি কি কিছু বলতে পারেন না?”

“কেন পারব না। আমি তো অনেক কিছু বলতে পারি। এই ধরেন আপনার গভীর চোখ, সরু নাক, উষ্ণ ঠোঁট।”

কেঁপে উঠে ঝিল। অভিনব মিটিমিটি হাসে।
“শুনেন প্রজাপতি আমি আপনার প্রতিটা অংশের বর্ননা দিতে পারব। কিন্তু দেখা যাবে আপনার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”

মেয়েটি কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনেকটা চুপ করে রইল। অভিনবই বলল,
“পৃথিবীর কোনো প্রেমিক পুরুষ নেই যারা প্রেমিকার প্রতি আকর্ষণ পায় না। আপনি আমার ঠোঁটের অগ্রভাগে।”

“এসব ছাড়ুন। আমার বুকের ভেতর ভয় হয়।”

“ভয় কেন হয়?”

“হারিয়ে ফেলব মনে হয়।”

“হারিয়ে ফেললে আবার খুঁজে নিবেন না হয়।”

“যদি না পাই?”

“তবে অভিনব এসে নিজ থেকেই ধরা দিবে।”

“সত্যি?”

“হারিয়ে দেখাব নাকি?”

“একদমই নয়।”

চমৎকার করে হাসল অভিনব। এতক্ষণে ওর ঘুম চলে গেছে। মেয়েটির একটু একটু আকুলতা ওকে আনন্দ দিচ্ছে।
.

ঘামে ভেজা শার্টটা খুলে রাখতেই আয়ুষের যুবক দেহের প্রতি আর্কষণ পেল একদল তরুণী। তারা সবাই এসেছে রজনীর বিয়ে উপলক্ষে। বান্ধবীর এই ভাইটির প্রতি এর আগেও আর্কষণ পেয়েছে ওরা। তবে আজ যেন একটু বেশিই আর্কষণীয়। সুমা আর রানি দুজনেই স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা মেয়ে। ওদের আগে চারজন ভাই বোন মা রা গিয়েছে। বাচ্চা গুলোকে কিছুতেই ধরে রাখা যাচ্ছিল না। প্রতিবার মৃ’ত সন্তান জন্ম দিয়ে একটা সময় ভেঙে পড়েছিলেন সুমতি বেগম। ভেবেছিলেন স্বামীর সাথে সংসারের পাঠ বুঝি এই চুকলো। তবে তেমনটা ঘটে নি। রকিবুল সাহেব সর্বদা স্ত্রীর প্রতি বিনয়ী ছিলেন। অবশেষে তাদের ঘর আলো করে এসেছে সুমা আর রানি। দুজনের বয়স কাছাকাছি। দেড় বছরের পার্থক্য। ঝিলের সাথে এতদিনে ওদের কথা হয় নি বলা চলে। মূলত মেয়েটিকে ওরা ভয় পেত। আজ সকালে আয়ুষ এসে কথা বলিয়ে দিয়েছে। সেই থেকে বাচ্চা দুটো ঝিল কে ছাড়ছেই না।
“আপু, তুমি কি কার্টুন দেখ?”

“দেখি তো।”

“ডোরেমন দেখ?”

“হুম। খুব দেখি।”

“নবিতাকে তোমার কেমন লাগে?”

“খুব ভালো। কেন তোমাদের ভালো লাগে না?”

“ভালো লাগে। কিন্তু ও খুব বোকা আর ভীতু।”

ঝিল হাসল। তারপরই বলল, “জানো ও বোকা হলেও কিন্তু ভালোবাসতে জানে।”

“কেমন?”

“বলছি, নবিতা একটু ভীতু প্রকৃতির ছেলে। কিন্তু ওর বন্ধুরা কেউ বিপদে পড়লে সমস্ত ভয় ছাপিয়ে ঠিকই ঝাপিয়ে পড়ে। যা সবাই পারে না।”

সুমা আর রানি তাকিয়ে আছে। ঝিল খুব সুন্দর করে বুঝালো ওদের। লয়েল ব্যক্তি যদি দূর্বল ও হয় তবু তারা আমাদের জন্য প্রশান্তি নিয়ে আছে। আয়ুষের ঘাড়ে অনেক কাজ। সে সকাল থেকে ব্যস্ত। এখন প্রায় দুপুর হতে চলেছে। ফুল গুলো লাগাতে বলে এদিকেই এসেছে।
“কি রে পিচ্চিদের দল, এদিকে কি?”

“আমরা তো ঘুরতে এসেছি।”

“এখনো তো কমপ্লিট হয় নি। এখন আর কি দেখবি।”

“তুমি যা দেখছ।”

“আমি তো কাজ করছি। তোরা ও কি করবি?”

হেসে জবাব দিল ঝিল, “করতে তো সমস্যা নেই।”

কিন্তু সুমা আর রানি দাঁত কেলিয়ে পালিয়ে গেল। পেছন থেকে ঝিল বলল, “আরে আরে এটা কেমন হলো। কথা বলব না আর।”

“থাক বাচ্চা ওরা যেতে দে। এদিকে আয়।”

আয়ুষের সাথে গেল ঝিল। বাড়িটা বিশাল হলেও সেভাবে ঘোরা হয় নি। চারপাশে এত এত ফুল যে ঝিলের চোখ শুধু ফুলই দেখতে পাচ্ছে।
“শুনলাম সকালে নাস্তা করিস নি।”

“ভালো লাগছিল না।”

“এভাবে তো শরীর খারাপ করবে।”

“কিছুই হবে না।”

“এত হেলায় থাকিস না, কেমন?”

ওমন সময় একদল লোক এলো। ওরা গানের লোক। হাতে নানান ধরনের মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট।
“আপনারা এসে গেছেন। বাহ, আসুন আপনাদের গেস্ট রুমে নিয়ে যাচ্ছি।”

লোক গুলো কে নিয়ে গেল আয়ুষ। এরা মূলত একটি বিদেশী ব্যান্ড।

চলবে…
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here