স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2 #ফাতেমা_তুজ #part_39

0
51

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_39

পড়াশোনার মতো প্যারা সাথে ফারহানের কড়া নজরদারি মোট কথা গলায় দঁড়ি ঝুলিয়ে আছে।
তিন ঘন্টা পড়ার পর ফারহান ফারাবি কে ছেড়ে দিলো।
বেচারির কোমরে ব্যথা হয়ে গেছে। ফারহান এখনো লেপটব হাতে কাজ করে যাচ্ছে। ফারাবি কিছুই বুঝতে পারে না । একটা মানুষ লেপটব নাড়া চাড়া করলে তাতে কি এমন আহামরি কাজ হয় তা ফারাবির বোধগম্য হলো না।
ফারাবি গভীর দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকিয়ে রইলো। মানুষটার চোখের নিচে একটু কালি জমেছে। কিন্তু কেন ?
ফারাবি বেশ অনেকক্ষণ মনোযোগ দিয়ে ফারহান কে দেখতে লাগলো। ফারহান গভীর মনোযোগে লেপটবে কাজ করে যাচ্ছে।
ফারাবি ধীর গতিতে ফারহানের দিকে এগিয়ে গেল। ফারহানের মসৃন গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি তে হাত বুলিয়ে বলল
_ সেভ করলেন না কেন ?

_ সময় নেই।

_ তাহলে কিসে সময় আছে ? আমাকে সন্ধ্যা বেলায় টেনে সাওয়ার নেওয়াতে ?

_ হুমম

_ আজব তো। আমার কথার কোনো মূল্য ই নেই দেখছি। ধ্যাত

ফারাবি উঠে চলে যেতে লাগলো। ফারহান এক হাতে ফারাবি কে ধরে ফেললো।
লেপটবে চোখ রেখেই বলল
_ কোথায় যাচ্ছিস ?

_ ছাঁদে যাবো ?

_ একা কেন যাচ্ছিস ?

_ আমি কি বাচ্চা নাকি যে আর ও দশ জন কে সাথে নিয়ে যাবো।

ফারাবির কথাতে ফারহান ভ্রু কুঁচকালো। কিছু একটা ভেবে দম ফেলে বলল
_ যাহহ।

ফারাবি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ফারহান গভীর মনোযোগে লেপটব চালাতে লাগল।
ফারাবি খট খট শব্দ করে চলে গেল। ফারহান এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
হঠাৎ এমন করার কারন টা বুঝে উঠলো না ফারহান।

*

ছাঁদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে ফারাবি। প্রচন্ড পরিমানে মন খারাপ ওর। একটা মানুষ কি সারাক্ষণ লেপটব নিয়েই থাকবে ?
বউ কে একটু দেখবে না ? আগের মতো বুঝি ভালোবাসা নেই আর। এর জন্য ই বলে সময় ফুরালে ভালোবাসা ও ফুরুত হয়ে যায়।
ছাঁদের এক কোনে এক টা লাইট জ্বলছে। হালকা বাতাস ও বইছে , চন্দ্র মামা পূর্নরূপে তবে ফারাবির মন তাতে নেই। ওর ভাবনা জুড়ে একটাই কথা ফারহান কি আগের মতো ভালোবাসে না আমায় ?

খটখট আওয়াজে পেছন ঘুরে তাকায় ফারাবি। ফারহান ভেবে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু কই ফারহান তো নেই।
ফারাবির মুখে কালো মেঘ এসে বসে পরলো। কিন্তু আওয়াজ টা এলো কোথায় থেকে ?
ভ্রু যুগল বাঁকিয়ে ধীর পায়ে চিলেকোঠার সাইটে আসলো। কই কেউ তো নেই।
এই বাড়িতে শুধু ফারহান আর ওহ ই থাকে ।
আর গেটে দাড়োয়ান। ফারাবির বুক টা কেঁপে উঠলো।
বাড়ির পেছনে বিশাল পাইন গাছের সারি।অদূর পর্যন্ত শুধু পাইন গাছ আর পাইন গাছ।ফারাবির চিত্ত কেঁপে উঠলো। সাইন্স ভূত বলতে কিছু আছে তা স্বীকার করে না। কিন্তু নেই যে তা ও তো বলে না।
তাছাড়া জিন জাতি তো রয়েছেই। ফারাবি শুকনো ঢোক গিলে নিলো। হঠাৎ বাম পাশে কিছু পরার শব্দ পেল।
ফারাবি বাম দিকে তাকাবে তার আগেই ডান পাশে শব্দ হলো।
ভয়ে ফারাবির গলা শুকিয়ে কাঁঠ। ছাঁদের পাশে থাকা সুপারি গাছ টা নড়ে উঠতেই ফারাবি চিৎকার করে উঠলো।
মিনিটের মধ্যে ই ওহ জ্ঞান হারালো।

চোখ পিটপিট করে খুলে তাকালো ফারাবি। মাথা টা কেমন ঝিম মেরে আছে। ফারাবি উঠেই মাথা চেপে ধরলো। মাথায় কেমন যন্ত্রণা ও হচ্ছে। কিন্তু ওহহ এখানে কি করে এলো ?
সব কিছু মনে হতেই ফারাবি চিৎকার করে উঠলো। হুরমুরিয়ে রুমে ঢুকলো ফারহান। ফারাবি ফারহানের অবয়ব দেখেই ছুটে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো।
এতো টাই জোড়ে ধরেছে যে ফারহানের হাতে থাকা স্যুপ টা একটু পরে ও গেল।
ফারহান টেবিলে স্যুপ এর বাটি টা রেখে এক হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির শ্বাস ভারী , খুব বেশি ই ভয় পেয়ে ছে ওহহ ।
ফারহান মুখ টা ছোট করে রইলো। মিনিট খানেক পর ফারাবি শান্ত হলো।
_ ফারাবি কি হয়েছে এমন করিস কেন ?

_ ঐ যেযযয আমিমম ছাঁদে ছিললাম এখানে কি কররে এলাম ?

_ তুতলাচ্ছিস কেন ? আগে শান্ত হয়ে বস।

ফারাবি বেডে বসলো , তবে চোখ চারিপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফারহান এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই ফারাবি ঢকঢক করে গিলে নিলো।
ফারহান দুহাতে ঠোঁটের কোন বেয়ে পরা পানি টুকু মুছে দিলো।
বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা চললো। ফারহানের ভেতর থেকে বার বার দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে যাচ্ছে।
_ বলেছিলাম একা ছাঁদে যাওয়ার দরকার নেই।
কিন্তু তুই তো বড় হয়ে গেছিস।

ফারাবির কানে সে শব্দ গেল না। ফারাবি কে ঝাঁকিয়ে ফারহান বলল
_ শান্ত হ, কোনো ভুত ছিলো না। ঐ টা আমি ই ছিলাম।

ফারাবি অবাক চোখে তাকালো। ফারহান মেকি হাসি দিয়ে তাকালো। ফারাবির চোখ দুটো কেমন ছলছল করছে। ফারহান অবাক হলো , কিছু বোঝার আগেই ফারাবি ঝাঁপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে।
ফারহান যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। ফারাবি ফোঁপাতে লাগলো। ফারহান অপরাধীর কন্ঠে বলল
_ সরি। আসলে তুই এতো ভয় পাবি আমি বুঝতে পারি নি।

ফারাবির কাঁপছে, যেন সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ চলছে। ফারহান ফারাবির কাঁপা কাঁপি দেখে ফারাবি কে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবির কাঁপনি খানিকটা কমতেই ফারহান ধীর হস্তে ফারাবির মুখ টা আবদ্ধ করলো।
ফারাবি মুখ ঘুরিয়ে রইলো। ফারহান বুঝে উঠতে পারলো না এর কারন।
ফারাবির হাতে চুমু এঁকে দিয়ে ফারহান বলল
_ রাগ করেছিস তুই ?

_ আপনি খুব বাজে।

_ সরি বউ। আমি তো চাই নি তোকে এতো টা ভয় পাওয়াতে।

_ কিসের বউ। আপনি খুব বাজে , সারাক্ষণ লেপটবে মুখ গুঁজে থাকেন।
আমাকে দেখে ও দেখেন না।

ফারাবির কথাতে ফারহান ভরকে গেল। মেয়েটা বলে কি ?
একটু লেপটবে মুখ গুঁজে ছিলো আর তাই এই অবস্থা।

ফারহান ধীর হস্তে ফারাবির মুখ টা তুললো। থুতনি ধরে খানিকটা উচু করেই চুমু খেল। রন্ধে রন্ধে শিহরন জেগে গেল।
ঘোর লাগানো কন্ঠে উচ্চারন করলো।
_ আমার পিচ্ছি বউয়ের অভিমান হয়েছে ? সে বরের ভালোবাসা কে মিস করছে ?
তাহলে এখন একটু ভালোবাসা হয়ে যাক ?

ফারাবি লম্বা দম ফেলে তাকালো। ফারহানের কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত। ফারাবি নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল
_ নো নো আমি আর সাওয়ার নিতে পারবো না।
ছাড়ুন আমায় , দেখুন ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
আপনি

ফারাবি কে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না। দুজনেই ভালোবাসায় হারিয়ে গেল।

*

মাথা ব্যথা তে উঠতে পারছে না ফারাবি। পচন্ড ক্লান্ত ওহহ , ভোরের দিকে ঘুমিয়েছিল। না জানি এখন কয়টা বাজে, বোধহয় সকাল পেরিয়ে গেছে।
ফারাবি হাই তুলতে লাগলো। ফারহান কে আশে পাশে দেখতে পেল না। আয়নার সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলো।
মিররে দেখতে পেল ফারহান ট্রে হাতে রুমে ঢুকছে। ফারহানের পরনে কালো রঙের স্লিভের গেঞ্জি। গায়ে লেপ্টে আছে একদম , ফারাবির চোখ যেন নামছেই না।
ফারহান মিররে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।
ফারহান আলতো হেসে খাবার টা টেবিলে রাখলো।
ফারাবি বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসতেই দেখলো ফারহান মুচকি হাসছে। ফারাবি নাক মুখ কুঁচকে নিলো। ফারহান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
_ চুল টা ঘাড়ের কাছে ফেলে রাখ।

_ কেন ?

_ যা বলছি তাই কর। না হলে পরে নিজেই লজ্জা পাবি।

ফারাবি বিরক্তি নিয়ে চুল গুলো ঘাড়ের কাছে দিতে লাগলো।
ঘাড়ে চোখ যেতেই ফারাবির চোখ রসগোল্লা হয়ে গেল।
ফারহানের দিকে তাকাতেই ফারহান দুষ্টু হাসতে লাগলো।

ফারাবি ভ্যাগা ভ্যাগা মুখ করে বলল
_ এটা কখন ?

ফারহান খানিকটা অপরাধী মুখ করে ফেলল। তারপর আবার চকচকে চোখ করে বলল
_ আসলে আমি তখন হুসে ছিলাম না তাই ঘাড়ে কামড় দিয়ে ফেলছি।
বাট ট্রাস্ট মি আমি কাল সহস্র বার দাগের স্থানে চুমু খেয়েছি।

_ আপনি কি ভুত যে কামড়ে দিবেন ? ইসস কেমন লাল হয়ে আছে।

_ আম সরি জান। আমি তো

কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারহান এক গাল হেসে ফারাবি কে খাবার খেয়ে তৈরি হতে বলল।
ফারাবি কারন জিঙেস করতেই ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ সারপ্রাইজ।

ফারাবি বোকার মতে তাকিয়ে রইলো। ফারহান দরজা লক করে দিলো। না হলে ফারাবি যে নিচে চলে আসবে।

নিচে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই রিফাত জড়িয়ে ধরলো ফারহান কে।
রাফাজের সাথে হাই ফাইফ করে নিলো। সবাই এসেছে শুধু ফারহানের বাবা আর ফারাবির মা বাবা ছাড়া।

সকালে দুজন সার্ভেন্ট কে এনেছে ফারহান। বাইরের খাবার খাওয়াবে না তাই। সার্ভেন্ট রা সবাই কে নাস্তা দিয়ে গেল।
ফারহান মৃদু হেসে বলল
_ তোমরা সবাই বিশ্বাস করো তো আমি ফারাবি কে ভালোবাসি তাই জোড় করে বিয়ে করেছি।
তবে আমি অন্য কিছুতে ওকে জোড় করি নি।

রিফাতের বাবা খানিকটা হেসে বললেন
_ চুপ কর তুই। আমরা জানি সব , ভুল করেছিস তবে ভালোবাসা দিয়ে তা পুষিয়ে ও দিয়েছিস।

সবাই তাতে সায় জানালো। ফারহান কৃতঙ্গতার হাসি তে হাসলো। তারপর বেশ কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা বলতে লাগলো। মিসেস চৌধুরী ছেলেকে জড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছেন।
রাফাজ এসে ওনাকে বোঝালেন। সবাই ফারাবি কে দেখার জন্য বসে আছে।
ফারহান আলতো হেসে জানালো ওকে উপরে লক করে রেখেছে।
সবাই একটু ভাবুক হতেই ফারহান বলল
_ সারপ্রাইজ এর জন্য।

সবাই সরস হাসলো। ফারহান রুমে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো ফারাবি গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
ফারহান ভ্রু নাচিয়ে বলল
_ কিরে গালে হাত দিয়ে বসে আছিস কেন ?

_ এমনি ভালো লাগছে না তাই।

_ আজব , আচ্ছা চল নিচে যাবো।

_ কেন ?

_ এমনি চল।

ফারাবি বেড থেকে উঠে থমথমে মেজাজে চলে আসলো। করিডোর দিয়ে যেতে যেতে নিচে চোখ গেল।
ফারাবির সরু চোখ দুটো কুঁচকে গেল।
এতো মানুষ জন দেখে খানিক টা অবাক হলো।
তবে তাদের ফেস দেখা যাচ্ছে না। একটু কাছে আসতেই ফারাবির চোখ চকচক করে উঠলো।
সবাই কে দেখে যেন পা থমকে গেছে। একবার ফারহানের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার সবার দিকে।
আবেগে আপ্লুত মন টা হো হো করে কেঁদে উঠলো।
ফারহান ছোট্ট হাসিতে হাসলো। মেয়েটার এই চোখের জল সুখের । তাই আর কাঁদতে বারন করলো না। এক হাতে জড়িয়ে ধরতেই ফারাবির কান্নার বেগ বেড়ে গেল।

জয়েন করুন আমার গ্রুপ Fatema’s story discussion

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here