স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2 #ফাতেমা_তুজ #part_41

0
79

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_41

ঘুম থেকে উঠে ফারহান কে না দেখতে পেয়ে ফারাবির মন খারাপ হলো।
হয়তো নিচে গেছে ভেবে আড়মোড়া ভেঙে নিচে চলে আসলো।
কিন্তু ফারহান কে দেখতে পেল না। মেইন ডোর টা বাইরে থেকে লক করা। তার মানে ওনি বাইরে গেছেন।
ফারাবি মুখ টা ছোট করে নিয়ে রুমে চলে আসলো। কাল রাতে ফারহান কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল।
আর সকালে উঠে দেখলো মানুষটা পাশে নেই। গেল টা কোথায় ?
ফারাবি ফোন লাগালো , কিন্তু সুইচ অফ বলছে।
নিজের প্রতি খুব রাগ হলো। কেন এতো ঘুমায় ওহ ?
পাশ থেকে বর উঠে চলে গেল আর বুঝতে ও পারলো না।
ফোন টা ডিবাইনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে রুমে চলে আসলো।
ভেতর থেকে কেমন ক্লান্ত লাগছে। ফারহান কে ফোনে না পেয়ে ভয় ও লাগছে। মানুষ টা এই অসময়ে গেল ই বা কোথায় ?
ফারাবি আপনমনে এসব ভাবতে লাগলো। আর ঘরময় পায়চারি করতে লাগলো।
বিজ্ঞদের মতো ভাবনা বাদ দিয়ে বেডে উবু হয়ে শুয়ে পরলো।
গলা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। তবু ও ইচ্ছে হচ্ছে না পানি টা ঢেলে খাওয়ার।
তৃষ্ণা টা বেশি ই পেয়েছে। তাই অলসতা ঝেরে ফারাবি উঠে বসলো।
সাইট টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিতে যেতেই একটা চিরকুট চোখে পরলো।
ফারাবির ভ্রু যুগলো সামান্য কুঞ্চিত হয়ে গেল। ফারহানের কথা মাথায় আসতেই দ্রুত চিরকুট টা নিয়ে নিলো।
চিরকুট টা খুলে পড়তে লাগলো।

” আমার মিষ্টি প্রেয়সী । অফিসে আর্জেন্ট একটা মিটিং পরে গেছে। তাই আমাকে যেতে হলো। তোর ঘুমন্ত মুখ টা দেখে আমার ডাকতে ইচ্ছে হয় নি। একদম পিচ্ছি দের মতো ঠোঁট গোল করে ঘুমিয়েছিলি। আমার অন্তকর্নে যেন ঢুকে গেছিস। চাইছিলাম আরেকটু সময় বুকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সময় হলো না। না বলে যাওয়ার জন্য স্যরি জান। আর শোন আমি তোর গোল হয়ে যাওয়া ঠোঁটে চুমু খেয়ে এসেছি। ফিরতে একটু লেট হবে। রাতে ফিরে এসে তোর থেকে চুমু খাবো কিন্তু । খাবার সব ফ্রিজ করা আছে খেয়ে নিস। নিজের যত্ন রাখিস। ”

লাইন গুলো পড়ে মুচকি হাসলো ফারাবি। পরক্ষণেই মন খারাপ হয়ে গেল। রাতের আগে ফারহানের দেখা পাবে না ভাবতেই বুক টা ছ্যাঁৎ করে উঠছে।

*

রক্ত মাখা শার্ট টা মুঠো বন্দি করে বসে আছে ফারহান। কপালে গাঢ় ক্ষতর দাগ। শরীরে নানান জায়গায় ও আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট। তবে মুখে তাচ্ছিল্যর হাসি।

রাফি বার বার ফারহানের কাছে আসছে। ফারহান হাত দিয়ে ইশারা করলো সে ঠিক আছে। তবু ও রাফি মানছে না। কপালের কোন থেকে অনড়গল রক্ত ঝরছে। আর সে বলছে সে ঠিক আছে।

রায়হান ফাস্ট এইডস বক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। রিফাত মুখ খিচে দাঁড়িয়ে আছে।
ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ আরে আমি ঠিক আছি। তোরা এমন করছিস যেন আমি মরে যাবো। আম ওকে ইয়ার।

_ তুই শালা কোনো দিন আমার কথা শুনবি না। ভাগ্যিস রায়হান সবাই কে খবর দিয়েছিলো।
না হলে কি হতো বুঝতে পারছিস?

ফারহান তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে সামনে তাকালো। রিক কে বেঁধে রাখা হয়েছে। রাগে কটমট করছে ওহ। ফারহানের চোখ মুহুর্তেই রক্ত বর্ন ধারন করলো। চোখ খিচে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।

রিকের দিকে একটু একটু করে আগাতে লাগলো। রিফাত দ্রুত এসে ফারহান কে ধরে ফেললো।
_ রিফাত ছাড়।

_ তুই এখন ইনজুরিতে আছিস। এতো হাইপার হোস না প্লিজ।

_ ছাড় ইয়ার। হাইপার হবো না আমি।

_ না তুই এখন ওর কাছে যাবি না। ঐ জানোয়ার কে আইন ই শাস্তি দিবে।

_ ওকে ফাইন । আমি কিচ্ছু করছি না।

_ তুই

_ কিচ্ছু হবে না। হাত পা খোলা যখন ছিলো তখনি তো কিছু করতে পারলো না।
চিন্তা করিস না আমাকে জানে মারার ক্ষমতা ওর নেই।

রায়হান এগিয়ে এসে ফারহানের দিকে তাকালো। ফারহান ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে রাখলো।
রায়হান মুখ টা মেঘবরন করে নিলো।

_ তুই ওহহ ?

_ ভাই। আপনার অবস্থা টা দেখেন । হারামি তে সুযোগ পেয়ে কি হাল করেছে।

_ কিন্তু একটা কথা বল রায়হান রিকের সাথে ভাই পেরে উঠলো না ?

ফারহান দারুন হাসিতে হাসলো। রিফাত ভাবুক হয়ে ভাবতে লাগলো। ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ ফুটেজ এর লাস্ট কপি টা ওর হাতেই ছিলো। আমি বারাবারি করলে তিনটে মেয়ের জীবন শেষ হয়ে যেত।
এই টুকু রক্ত ঝরেছে তাতে সমস্যা নেই।

_ কি হয়েছিলো বল তো ?

ফারহান মৃদু ছন্দে হাসতে লাগলো। রিকের দিকে তাকিয়ে কিছু ক্ষন আগের ঘটনা ভাবতে লাগলো।

অতীত
” বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকাতে কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। আজ ভোর বেলা একটা আর্জেন্ট মিটিং চলে আসে। তরিঘরি করে মিটিং এ আসে। মিটিং এর অর্ধেক কমপ্লিট হতেই খবর আসে রিকের কাছে এক্সট্রা যে ফুটেজ ছিলো তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ফারহান তৃপ্তির হাসি হাসলে ও সে হাসি ম্লান হয়ে উঠে।
যখন শুনতে পায় রিকের কাছে লাস্ট একটা ফুটেজ আছে। রিক সমস্ত কিছু বুঝতে পেরে গেছে। আর এটা ও জানে যে ওর জন্য জেল হাজির রয়েছে। তবে শেষ বোম টা না ফাটিয়ে তো ওহ জেলে যাবে না।
একজন কে হায়ার করে নেয় রিক। যার মাধ্যমে সমস্ত টা ভাইরাল করতে পারবে।
ফারহান তখনি রিফাত কে মিটিং কমপ্লিট করতে বলে চলে আছে।
রিকের সাথে আরো দুটো ছেলে ও ছিলো। যাদের হাতে ফুটেজ টা ছিলো। রিক ফারহান কি দেখে ভরকে যায়। কিন্তু ওর পাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে পৈশাচিক হাসি তে মেতে উঠে।
ফারহান ওর দিকে তেড়ে গেলেই ওহ ওর লোকজন কে বলে ফুটেজ টা ভাইরাল করতে।
ফারহান বাঁধা দিতে গেলেই রিক মারতে থাকে ওকে। রিক ওর লোকজন কে বলে ওর গায়ে যদি ফারহান একটা আঘাত করে তাহলে তখনি যেন ফুটেজ সাবমিট করে দেয়।
ফারহানের তখন কিছু করার ছিলো না। মেয়ে গুলোর ভাবনাই ছিলো তখন। রিক সেই সুযোগেই বেঘোরে ফারহান কে মারতে থাকে। ফারহান যথা সম্ভব নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষ ওহহ , ব্যথা তো লাগবেই।
আর্তনাদ করে উঠলেই রিক পৈশাচিক হাসে। নিজের এতো দিনের রাগ মেটাতে থাকে। ফারহান সুযোগ খুঁজতে থাকে। কোনো ভাবে লোকগুলোর থেকে ফুটেজ টা নিতে পারলেই হতো।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান সক্ষম হয় ওদের কাছ থেকে ফুটেজ নিতে। আঘাত বেশি হওয়াতে তিনজনের সাথে ঠিক ঠাক পেরে উঠে না।
রিক হকি স্টিক দিয়ে ফারহানের কপালে আঘাত করে। আরেকটা আঘাত করার আগেই রিফাত এসে ধরে ফেলে। রায়াহান রাফি আর রিফাত মিলে সবাই কে মারে।
ফারহান নিজেকে সামলে নিয়ে রিক কে বেঘোরে মারতে থাকে। এতোটাই মারে যে রিকের জ্ঞান হারিয়ে যায়। রিফাত দু হাতে ফারহান কে আটকায়।
তারপর নিয়ে আসে ওদের গোডাউনে। সমস্ত ফুটেজ নষ্ট করে দেওয়া হয়। ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেলে।

বর্তমান

_ তুই আমাকে জানাতে পারতি। আমি তোর সাথে আসলে এতটা ঝামেলা হতো না।

_ মিটিং টা খুব প্রয়োজন ছিলো। না হলে কথার খেলাপ হয়ে যেত।

রিফাত তপ্ত শ্বাস ফেলল। এই ছেলেটা এমন কেন ? অন্যের জন্য নিজের জান টা বাজি রেখেছে।
অথচ প্রিয় মানুষ টার কথা ভাবলো না। যদি ওর কিছু হয়ে যেত তাহলে সবার কি হতো ?

*

রাত সাড়ে আটটা বেজে গেছে। ফারাবি ডাইনিং এ বসে আছে। সারা দিন এটা সেটা করে কাটিয়েছে। একবার ছাঁদে ও গিয়েছিলো। তবে পাইন গাছের সাড়ি দেখে ভয় পেয়ে চলে এসেছে।
বাগানে যাওয়ার ও উপায় নেই। কারন ফারহান লক করে রেখে গেছে । ফোন করেছিলো বলেছে একটু পর ই চলে আসবে।
অথচ দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেল আসলো না। ফারাবির একটু চিন্তা ও হচ্ছে। দেখতে দেখতে নয় টা বেজে গেল। সাধারনত আট টায় ডিনার সারে ওহহ।
একটু ক্ষিদে পেলে ও গলা দিয়ে খাবার নামছে না। তাই খাবার টা রেখে দিলো। দেখতে দেখতে সাড়ে নয়টা বেজে গেল। বাসার মেইন ডোর খোলার আওয়াজে ফারাবির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
ছুটে গিয়ে মেইন ডোরের কাছে আসলো। হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ফারাবি। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে লাগলো। ফারহানের কপালে ব্যান্ডেজ দেখে ফারাবির যেন আকাশ ভেঙে পরলো। ফারহানের দিকে আগাতে গিয়ে ও পারলো না । শরীর কাঁপতে লাগলো। ফারহান ধীর কন্ঠে ফারাবি বলে ডাকতেই ফারাবির শরীর নিস্তেজ হয়ে পরলো। ফারহান ছুটে এসে ধরলো ওকে। একটুর জন্য মাথায় ব্যথা পায় নি। ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে ফারাবি কে কোলে তুলে নিলো।
শরীরে চাপ পরাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তবে ফারহান সে দিকে পাত্তা দিলো না।

সফেদ বেডশিট টা তে মলিন মুখে বসে আছে ফারহান। ফারাবি জ্ঞান শূন্য হয়ে আছে। মেয়েটার জ্ঞান ফিরলে কি করে বোঝাবে ওকে ?

না জানি কি করে বসবে। মলিন মুখে উঠে গিয়ে একটু স্যুপ বানিয়ে নিলো।
অর্ধেক টা খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলো। ধীর হাতে ফারাবির শুকিয়ে যাওয়া মুখ টাকে স্পর্শ করলো।
ফারাবির মুখের কাছে মুখ নিতেই ফারাবির গরম নিশ্বাস ফারহানের মুখে আঁচড়ে পরলো।
প্রশস্ত হাসলো ফারহান। মেয়েটার কপালে সময় নিয়ে অধর ছোঁয়ালো।

ঘন্টা খানেক পর ফারাবির জ্ঞান ফিরলো। চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠলো। ফারহান কে খুঁজতে লাগলো। দু চোখ বেয়ে অশ্রুর ধারা নেমে যাচ্ছে।
পাগলের মতো হাউ মাউ করতে লাগলো। ফারহান কিচেনে গিয়েছিলো স্যুপ টা কে গরম করতে।
ফারাবির চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসলো। ফারহান কে দরজায় দেখে পাগলের মতো করতে লাগলো।
ঝাঁপিয়ে পরলো ফারহানের বুকে। ফারাবির দৃষ্টি এলো মেলো , হাত দুটো ফারহানের সারা শরীর কে স্পর্শ করে যাচ্ছে।
ফারহান অনুভব করছে ফারাবির শরীরে কম্পন। ধীর হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করলো।
কিন্তু কোনো লাভ হলো না। ফারাবির কান্নার বেগ বাড়তে লাগলো। মুহুর্তেই হেচকি উঠে গেল । ফারহান মেয়েটাকে সামলাতে পারছে না।
কেমন পাগলামি করছে। কোনো উপায় অন্তর না পেয়ে টেবিলে রাখা এক জগ পানি ফারাবির মুখে ছুঁড়ে মারলো।
ফারাবি থমকে গেল। খানিকটা স্থির হলো , আসলে প্রচন্ড শক পেয়ে জ্ঞানে ছিলো না ওহ।
ফারহান ধীর হাতে ফারাবি কে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবি কাঁপছি , এখনো ঠিক ঠাক হুসে নেই। কোনো দিকে খেয়াল নেই। পুরো ভিজে গেছে । ফারহান ধীর কন্ঠে বলল
_ চেঞ্জ করে আয়।

কিন্তু ফারাবির কোনো হেলদোল নেই। ফারহান খানিকটা চিন্তিত হলো। এতো টা শক পেলো মেয়েটা ?
দীর্ঘশ্বাসে ভরে গেল পুরো ঘর। কাবাড থেকে ড্রেস এনে ফারাবি কে চেঞ্জ করিয়ে দিলো ফারহান।
ফারাবি যেন পাথরের মুর্তি। ফারহান মৃদু হেসে স্যুপ টুকু ফারাবি কে খাইয়ে দিলো। যে মেয়ে স্যুপ দেখলে লাফিয়ে উঠে খাবে না বলে।
আজ সে বিনা বাক্যে খেয়ে নিলো। ফারহানের বেশ চিন্তা হলো। লম্ভা ঘুমের প্রয়োজন । নিশ্চয়ই ফারাবির মাথার নিউরন গুলো কাজ করছে না।
টেম্পোরালি শক যাকে বলে। লম্বা ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে।
ফারাবি কে বেডের এক পাশে শুইয়ে দিয়ে ফারহান ও শুইয়ে পরলো।
কিছুক্ষণ পর ফারাবি কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে বুকে জড়িয়ে নিলো।
আদর মাখা কন্ঠে ফারাবি কে লক্ষী বউ বলে ডাকতে লাগলো।
ফারাবির অধরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে দিলো।

** জয়েন করুন Fatema’s story discussion

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here