#হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব২৪_২৫ [স্পেশাল পর্ব]
এরই মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। ড্রয়িং রুমে সবাই গোল হয়ে বসে আছে। সবার মুখে আজ চিন্তার ছাপ স্পষ্ট! এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টেনশন হয়তো আমিই করছি। একভাবে পায়চারী করছি আর দাঁত দিয়ে নখ কাটছি। এটা আমার জন্মগত অভ্যেস বলা চলে। বলা বাহুল্য, আমি যখন কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করি তখন এমনই করে থাকি। আর এই দুশ্চিন্তার কারণও রয়েছে বটে। আজ সেই কাঙ্খিত দিনটা, আমার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন!
সোফায় পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল হাতে নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে রয়েছে আদ্রিশ ভাইয়া। আর তাকে ঘিরেই বসে আছে সবাই। আদ্রিশ ভাইয়া অবশ্য এর মাঝে এসে আমায় আশ্বাস দিয়ে গেছে। তবুও ফলাফল না জানা অবধি কিছুতেই যেন স্বস্তি মিলছে না আমার! টেনশনে আমি গতরাতে ঠিকমতো খেতেও পারিনি ঘুমাতেও পারিনি। আমার বন্ধুমহল গতরাত হতে এই অবধি কয়েকদফা ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিতে বিন্দুমাত্রও কার্পন্য করেনি অথচ সারাবছর তাদের পাত্তা মেলা ভার!
পায়চারি করতে করতে হুট করে রিশতার মাথার সাথে জোড়ে ধাক্কা লাগে আমার মাথায়। মাথায় হাত দিয়ে ডলতে ডলতে আমি বিরক্তিতে কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলে বললাম
-‘ দেখেশুনে চলতে পারিস না? এমনিতেই টেনশনে মরে যাচ্ছি, তার উপর আবার ষাঁড়ের মতো এসে ধাক্কা মারলি!
রিশতা অনুনয়ের সুরে বলল
-‘ সরি বনু। আচ্ছা আমার মাথার সাথে তোর মাথায় আরেকবার ধাক্কা দে, নয়তো কিন্তু শিং গজাবে!
আমি বিরক্ততে চোখমুখ কুচকে ফেলে বললাম
-‘ সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়ে এসব কুসংস্কারে বিশ্বাসী নই আমি।
ঠোঁট বাকিয়ে রিশতা বলে বসল
-‘ আজ আর্টসের স্টুডেন্ট বলে তুই এভাবে অপমান করলি আমায়?
আমি আর কথা না বাড়িয়ে নির্বিকার চিত্তে দাঁড়িয়ে রইলাম। এখন ঝগড়া করার সময় না। ঝগড়া পরেও করা যাবে। কিন্তু এদিকে যে টেনশনে আমার হাত পা বরফ হয়ে আসছে!
-‘ মেহরুন!
আদ্রিশ ভাইয়ার ডাকে ফিরে চাইলাম সেদিক পানে। তার মুখশ্রীতে আঁধার নেমে এসেছে কেমন। তার এহেন হাবভাব দেখে আমার বুক ধুকপুক করতে শুরু করে। নেত্রের কোণে অশ্রু কণার ঠাঁই মিলেছে ইতোমধ্যে। ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো আদ্রিশ ভাইয়া। থমথমে আওয়াজে সে বলল
-‘ তোকে নিয়ে অনেক বেশি আশা ছিল আমাদের। কিন্তু তুই এটা কিভাবে করতে পারলি মেহু!
আদ্রিশ ভাইয়ার এমন কথায় আমার চোখে আবারও অশ্রু কণারা এসে ভিড় জমায়। আমার সবগুলো পরীক্ষা তো মোটামুটি ভালোই হয়েছিল, তবে! তবে কি আশানুরূপ ফলাফল হয়নি আমার! এজন্যই কি আদ্রিশ ভাইয়ার কন্ঠস্বর এমন শোনাচ্ছে!
আলতো হাতে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে ঠোঁট চেপে মৃদু স্বরে সে বলল
-‘ এখন আর কেঁদে কি লাভ! যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে।
একথা শুনে এবার আমি সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেললাম। আমার এতোদিনের পরিশ্রম, আশা, ভরসা কি তবে সব ধুলিস্মাৎ হয়ে গেল! আদ্রিশ ভাইয়া আমার এহেন অবস্থা দেখে আচমকা হো হো করে হেসে উঠল। আমি কান্না থামিয়ে হা হয়ে চেয়ে রইলাম তার পানে। অন্যান্যদের মুখ চেপে হাসতে দেখে আপনাআপনিই ভ্রু যুগলে কিঞ্চিৎ ভাঁজ চলে এলো আমার। হাসতে হাসতে সে বলল
-‘ ইউ আর রিয়েলি ফুলিশ মেহু। ইউ আর রিয়েলি ফুলিশ! আরে বোকা মেয়ে, এভাবে কি কেউ কাঁদে! কান্না থামা বলছি। তোর কান্না সহ্য হয়না আমার।
আমি ভীষণ অবাকই হলাম আদ্রিশ ভাইয়ার এমন আচরণে। আমায় আরও একদফা অবাক করে দিয়ে সে এবার আমার দুই গালে দুহাত রেখে বেশ উচ্ছ্বাসের সহিত চিৎকার করে বলে উঠল
-‘ কংগ্রাচুলেশনস, মিস মেহরুন ইবনাত খান! ইউ গট জিপিএ ফাইভ ইন ইউর এসএসসি এক্সামিনেশন! আর ইউ হ্যাপি নাও?
এক মুহূর্তের জন্য আমার পুরো পৃথিবী যেন থমকে যায়। আমি নিজের কর্ণকুহুরকেও বিশ্বাস করতে পারছি না। এই বাক্যগুলো যে ঠিক কতোটা মধুর তা বলে বোঝানো মুশকিল। আমার মনের মাঝে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায়। আদ্রিশ ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে অনুনয়ের সুরে বলল
-‘ প্রথমে একটু অভিনয় করার জন্য স’রি। আমি এক্টুচুয়ালি তোর এক্সপ্রেশনটা দেখতে চাইছিলাম। ইটস জাস্ট ফান। ডোন্ট টেইক ইট সিরিয়াসলি লিটেল বেইবি!
আমি এবার রেগে গেলাম কিছুটা। লোকটা সবসময় আমার অনুভুতি নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করে। মনটায় চায় তুলে এক আছাড় দিতে। কিন্তু আফসোস এর মতো একটা আস্ত গন্ডারকে তুলতেই তো আমার খবর হয়ে যাবে! অনেক হয়েছে আর না, নিজের রাগকে সংবরণ করতে না পেরে তাই আমার ধারালো নখের খামচি বসিয়ে দিলাম আদ্রিশ ভাইয়ার হাতে। আদ্রিশ ভাইয়া ‘উহু’ করে মৃদু চিৎকার করে ওঠে। সরু চোখে আমার পানে চেয়ে রইল খানিক্ষন। এরপর গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে
-‘ এটা কি হলো মেহরুন! ওয়েট এর শোধ আমি নিবোই। তখন সামলাতে পারবি তো?
প্রথম কথাটুকু গম্ভীর স্বরে বললেও, শেষোক্ত কথাটা বাঁকা হেসে মিনমিনিয়ে বলল সে। ওনার কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসলাম শুধু।
ইতোমধ্যে আমার মা, বাবা, মামনি এসে জড়িয়ে ধরেছে আমায়। তাদের চোখে অশ্রু কণারা চিকচিক করছে। এ অশ্রু দুঃখের নয়, আনন্দের! তাদের মেয়ের সাফল্যের আনন্দ। প্রতিটি মা বাবাই তার সন্তানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে। সন্তানের পেছনে তারা যে কষ্টটা করে, আজকের দিনের এই ভালো রেজাল্টটা সত্যিই তারা ডিজার্ভ করে! আমি আমার মা বাবা আর মামনিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম।
আদ্রিশের চোখেমুখেও আজ প্রশান্তির ছাপ। তার মেহু সফলতার এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে যে। সে চায় তার মেহু তার থেকেও বড় কিছু হোক।
আলভি ভাইয়া আমাদের দিকে এগিয়ে এসে, আমায় জড়িয়ে নিল নিজের বুকে। এরপর বেশ ভাব নিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
-‘ দেখতে হবে না কার বোন! রেজাল্ট তো ভালো হবেই হবে। সবাই বলি আলহামদুলিল্লাহ!
আলভি ভাইয়ার সাথে সাথে সবাই উচ্চ স্বরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠলাম। রিশতা আর অরনীর চোখেমুখেও আজ খুশির ঝিলিক! আমার এমন রেজাল্টে তারা বেজায় খুশি! তবে এতো খুশির মাঝে নিজেদের রেজাল্টটা দেখতেই বেমালুম ভুলে গিয়েছিল ওরা।
আমি ওদের মনে করিয়ে দিয়ে বললাম
-‘ এই এই তোরাও তো আমার সাথে পরীক্ষা দিয়েছিলি। তোদের রেজাল্ট কই?
আমাকে নিয়ে মাতামাতি করতে গিয়ে ওদের কথাই বেমালুম ভুলে গিয়েছিল সবাই। আমার কথায় টনক নড়ে ওদের। আলভি ভাইয়া দ্রুত গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে রোল আর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিয়ে রেজাল্ট চেক করল।
রিশতা জিপিএ 4.83 পেয়েছে। এতেই ও খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে, কেননা ওকে কিছুতেই ধরে বেঁধেও পড়তে বসানো যেত না। সবাই ভেবেছিল ও হয়তো পরীক্ষায় ফেল করে বসবে। কিন্তু সেখানে পরীক্ষার আগে আগে পড়ে এই রেজাল্ট, বিশাল ব্যাপার ওর কাছে! আমরাও সবাই খুশি হলাম এতে।
অরনীও আমার মতো বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। তবে ও একটুর জন্য এ প্লাস মিস করেছে। ওর জিপিএ এসেছে 4.94। এটা দেখে আরও বেশি কান্নায় ভেঙে পড়ে অরনী। আমরা সবাই মিলে ওকে সামলে নিলাম।
আদ্রিশ ভাইয়া অরনীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল
-‘ সামান্য রেজাল্ট কখনো কারও ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনা অরনী। তুই কাঁদিস না। ইনশাআল্লাহ, অদূর ভবিষ্যতে তোর জন্য ভালো কিছুই ওয়েট করছে।
আদ্রিশ ভাইয়ার সাথে সহমত পোষণ করে আলভি ভাইয়া বলে উঠল
-‘ আমায় দেখ, আমি জিপিএ 4.68 পেয়েছিলাম। মানে তোর থেকেও কম ছিল আমার জিপিএ। তাই বলে কি আমি খারাপ ছাত্র! তোর একটুর জন্য প্লাস হয়নি তো কি হয়েছে, এতে কি তুই খারাপ ছাত্রী হয়ে গিয়েছিস। না মোটেও না। তুই তো নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছিস। এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যা, ইনশাআল্লাহ তোর জন্য ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে। রেজাল্ট যা-ই হোক না কেন দিন শেষে তুই তু-ই থাকবি অরু। বোকা মেয়ের মতো একদম কাঁদবিনা তুই। ভালো করে পড়াশোনা কর। আমরা তোর পাশেই আছি বোন।
এতে অরনীর কান্নার আওয়াজ পূর্বের তুলনায় কিছুটা কমে আসে কিন্তু তবুও ও এক নাগারে কেঁদে চলেছে। অরনীর এমন পরিস্থিতি দেখে ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম আমি। অরনী আমায় জড়িয়ে ধরে আবারও হুহু করে কেঁদে ওঠে। ওকে অনেক ভাবে সান্ত্বনা দিয়ে অবশেষে শান্ত করা গেল।
এদিকে বাবা আর চাচ্চু গিয়েছে মিষ্টির দোকানে। সঙ্গে আদ্রিশ ভাইয়া আর আলভি ভাইয়াও গিয়েছে। আজ তো এমনিতেও মিষ্টির দোকানে মিষ্টির দাম চড়াও থাকবে!
আমি আমার ফোনটা হাতে নিয়ে আহিরকে ফোন দিলাম। আমি সুস্থ হওয়ার পরপরই ছেলেটা ফিরে গিয়েছিল নিজ বাড়িতে। আদ্রিশ ভাইয়ার সেদিনকার আচরণে ও হয়তো কষ্ট পেয়েছিল। পরবর্তীতে ওদের দুজনকে একসাথে করে ভুল বোঝাবুঝি ভেঙে ছিলাম। আদ্রিশ ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পারে তবে মুখে তা প্রকাশ করেনি আর। এরপর থেকে আহিরের সাথে আবার স্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে সে। আহিরও বড্ড মিশুক প্রকৃতির তাই সেও আর মনে রাখেনি সেসব।
ফোনের অপর প্রান্ত হতে বেশ উচ্ছ্বাসের সহিত একেবারে গদগদ হয়ে আহির বলে উঠল
-‘ মেহুবুড়ি, আমি তো গোল্ডেন পেয়েছি। তোর কি খবর?
-‘ ভাই, আমিও তো গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি।
এতে ভীষণ খুশি হয় আহির। আহিরও আমার মতোই বিজ্ঞানের ছাত্র। যথেষ্ট মেধাবী ছেলে সে। তবে এতো পড়ার চাপ ওর ভালো লাগেনা বিধায় ইন্টারে সে আর্টস নিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
-‘ বিকেলের দিকে মিষ্টি নিয়ে আসছি তোদের বাসায়। সবাই মিলে জম্পেশ আড্ডা দেওয়া হবে তাহলে।
আহিরের কথায় আমি হেসে ফেললাম। ওর সাথে আরও কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম আমি।
ইতোমধ্যে আমার বন্ধুমহলের ফোন আসতে শুরু করে দিয়েছে। আমিও সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে ফোন রাখলাম। আজ আমার মনটা ভীষণ খুশিতে ভরে উঠেছে। যদিও অরনীর জন্য খারাপ লাগছে ভীষণ। মেয়েটা আমার চাইতেও বেশি পরিশ্রম করেছে। তবুও তার এমন ফলাফল দেখে সে বিষন্ন হয়ে পড়েছে। সবার সান্ত্বনাতে অবশ্য কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে সে।
এরই মাঝে একেবারে যেন পুরো মিষ্টির দোকান নিয়ে হাজির হয়েছে বাবা, চাচ্চুরা। আমাদের জন্য কিছু মিষ্টির প্যাকেট রেখে, বাকিগুলো নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়েন আত্মীয় স্বজনদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আর এদিকে মা, মামনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন খানদানি আয়োজনে। মা আমার আজ ভীষণ খুশি! এক ফাঁকে এসে আমায় আদর করে বলে গেলেন
-‘ এমনি এমনি তোকে রাগ করতাম রে মা? দেখ আজকের এই দিনটাতে আমরা সবাই কতোটা খুশি হয়েছি। তুই ভালো করে পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হ, মা। আমরা তোর কাছে শুধু এটুকুই চাই। বল, মা হিসেবে কি আমি তোর কাছে খুব বেশিই চেয়ে ফেলেছি?
এতোটুকু বলতে গিয়ে বারবার গলা ধরে আসছিল মায়ের। তার চোখে এখনো অশ্রু টলমল করছে। মায়ের দিকে চেয়ে আমি নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না, খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম মাকে। পরম যত্নে মা আমায় আগলে নিলেন নিজের বুকে। এই বুকে মাথা রাখতে পারাটা যে পরম শান্তির। পৃথিবীর আর কোথাও এই শান্তি মিলবে না। মাকে এবার ছেড়ে আমি অশ্রু সিক্ত নয়নে তার দিকে চেয়ে বললাম
-‘ তোমায় খুব ভালোবাসি মা। তোমার এই মেয়েটার জন্য একটু দোয়া করো মা।
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কন্ঠে মা বললেন
-‘ তোর জন্য আমি সবসময়ই দোয়া করি রে মা। তুই জীবনে অনেক অনেক বড় হ, অনেক সুখী হ। আমি না থাকলেও আমার দোয়া তোর সাথে সারাজীবন থাকবে।
এতোটুকু বলে আমার কপালে চুমু দিলেন মা। আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে মা বললেন
-‘ যাই রে, এখনও অনেক কাজ বাকি পড়ে রয়েছে।
বলেই মা রান্নাঘরের পথে চলে গেলেন। আমিও মায়ের পিছু পিছু রান্নাঘরে চলে এলাম। গিয়ে দেখলাম মামনি গরুর মাংস কষাচ্ছেন। আমায় দেখতে পেয়ে তিনি হাসি মুখে বললেন
-‘ কি রে, কষানো গরুর মাংস খেতে এসেছিস বুঝি? তোর তো আবার খুব পছন্দের!
আমি এগিয়ে গেলাম মামনির কাছে। মামনি কড়াই থেকে এক টুকরো মাংস তুলে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে, আমার মুখ পুরে দিলেন। চিবোতে চিবোতে বললাম
-‘ তোমার রান্না মানেই অসাধারণ কিছু, মামনি!
আমার কথায় হেসে ফেলেন মামনি। পাশ থেকে মা অভিমানি সুরে বলে উঠলেন
-‘ মামনিকে পেয়ে তো এখন নিজের মাকেই ভুলতে বসেছো। মামনির রান্না সেরা আর মায়ের রান্না বুঝি ভালো ঠেকে না?
মায়ের কথায় ফিক করে হেসে মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম
-‘ তোমাদের দুজনের রান্নাই আমার কাছে সেরার সেরা!
আমার কথায় মা, মামনি দুজনেই হেসে ফেলেন। দুজনের অমায়িক হাসি দেখে আমি মনে মনে বললাম
-‘ সত্যিই আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যই ভীষণ অমায়িক!
মামনির উদ্দেশ্যে মা এবার হেসে বললেন
-‘ ভাবি আমার মেয়েটাকে এভাবেই আগলে রেখো কেমন। শাশুড়ি হওয়ার পর আবার পুত্রবধুর মতো আচরণ করো না যেন।
মামনি ভ্রু উঁচিয়ে অধরের কোণে হাসি ফুটিয়ে বললেন
-‘ তোমার মেয়েটার প্রতি আমার সেই ছোট থেকেই দরদ। ওর উপর দজ্জাল শাশুড়ির মতো কি প্রহার করা সাঁজে! আমি হবো বেস্ট শাশুড়ি মা। আমার কি সৌভাগ্য বল তো, কোন শাশুড়ি তার নিজের বৌমাকে ছোট থেকে কোলে পিঠে বড় করে তোলে? ক’জনের ভাগ্যে জোটে এসব?
দুজনের এহেন কথোপকথনে কান গরম হয়ে এলো আমার। ইশ ছোট থাকতে মজা করে ‘শাশুড়ি আম্মু’ ডেকেই তো জব্বর ভুল করে ফেলেছিলাম আমি। ইচ্ছামতো এখন তারা মজা মশকরাও করে আমায় নিয়ে। ইশ কি লজ্জা কি লজ্জা! ইচ্ছে করছে ইঁদুরের গর্তে টুপ করে লুকিয়ে পড়তে। কিন্তু আফসোস আমার মতো বিলাইয়ের যে ইঁদুরের ছোট গর্তে জায়গা হবেনা! অগত্যা তাই লজ্জায় রঞ্জিত মুখশ্রী ঢেকে কোনোরকমে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম রান্নাঘর থেকে। পেছন থেকে ভেসে এলো মা, মামনির হাসির ঝংকার।
মুখ ঢেকে দৌড়ে আসতে গিয়ে পথিমধ্যে কারো বুকের সাথে ধাক্কা লেগে থমকে গেলাম আমি। মাথা উঁচু করে নিভু নিভু দৃষ্টিতে সামনে তাকাতেই আরও একদফা লজ্জায় নুইয়ে পড়লাম আমি। আমি নুইয়ে পড়তে দেখে সে নিঃশব্দে হাসল। হাসির রেখা প্রশস্ত করে আমার চিবুক উঁচু করে, ভ্রু নাচিয়ে বলল
-‘ কি ব্যাপার, আমায় দেখে আজকাল লজ্জাও পাচ্ছে মেহুপাখি! কি সাংঘাতিক বিষয়!
তার কথার কোন প্রকার জবাব দিতে পারলাম না আমি। লজ্জায় বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেছি ইতোমধ্যে। সে হয়তো বুঝতে পারল আমার ব্যাপারটা। তাই কিছুটা ঝুঁকে মিহি স্বরে বলে উঠল
-‘ আমায় দেখে আর খুব বেশিদিন আপনায় এভাবে লজ্জা পেতে হবে না ম্যাম। তার বন্দোবস্ত অতি শীগ্রই হতে চলেছে যে। আপনার এই অধমের প্রতি আপনি নির্দ্বিধায় আস্থা রাখতে পারেন, আমার প্রিয় মেহুরাণী!
আদ্রিশ ভাইয়ার আচমকা এহেন কথায় যেন আমি লজ্জা পেতেও ভুলে গেলাম। ফলে হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার পানে। এই সুযোগে সে মিষ্টির প্যাকেট থেকে একটা ইয়া বড় একটা রসগোল্লা নিয়ে আলতো হেসে বলল
-‘ তোমায় মিষ্টি মুখ না করিয়ে কিন্তু আমি ছাড়ছি না মেহুপাখি!
কথাটা বলতে বলতেই আমার মুখে পুরো মিষ্টিটা পুড়ে দিয়ে পুনরায় সে বলে উঠল
-‘ কংগ্রাচুলেশনস মাই ডিয়ার মেহুরাণী! আমার পক্ষ থেকে আপাতত এতোটুকুই। তবে তোমার জন্য কিন্তু একটা বড়সড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
#চলবে~
আপনাদের মেহুর মতো আপনাদের লেখিকাও A+ পেয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। তাই ট্রিট হিসেবে দুই পর্ব+ স্পেশাল পর্ব দিয়েছি। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য🤲 আর হ্যাঁ, আপনারা কিন্তু রেসপন্স করতে ভুলে যাচ্ছেন তাই কাইন্ডলি রেসপন্স করবেন সবাই।
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/