অর্ধ_নক্ষত্র ।১৯। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
151

#অর্ধ_নক্ষত্র ।১৯।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

আরশমান মেহরার সঙ্গে খুনশুটি করতে করতে আসাদ এর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।গাড়ির সম্মুখে এসে হাত ঘড়ির দিকে চেয়ে আরশমান বলে,”আপনি আকাশ এর সঙ্গে বাড়ি চলে যান মেহরা। আমার আপনার সঙ্গে যাওয়া হবে না।”

মেহরা খুশি হয়ে গেলো,বলল,”আরেহ আকাশ কেন? আমি তো একটা রিকশা করেই একা চলে যাব।”,বলে মেহরা ঘুরে তাকালো রিকশা ডাকার জন্য আরশমান হাঁসলো মেহরার পাশে গিয়ে ওড়নায় মৃদু টান দিলো,মেহরা ভড়কে গেলো বিস্মিত নয়নে চাইলো আরশমানে মুখ পানে।আরশমান কণ্ঠের রেশ ক্ষীণ রেখে বলল,”আমি আপনার সাথে যাবো না বলে কী এত খুশি?”

মেহরা দূরে সরে আসলো বলল,”হম ,অবশ্যই খুশি।
আর আপনি দূরে থাকবেন একদম।”

আরশমান হাঁসলো রাস্তার অপরপাশে দাড়িয়ে থাকা রিকশা চালক’কে উচ্চ কণ্ঠে ডাকলো।রিকশা চালক রিকশা ঘুড়িয়ে আরশমান,মেহরার সম্মুখে এসে রিকশা থামালো।আরশমান নম্র হেঁসে রিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলল, অতঃপর ফিরে মেহরার ওড়নার গিট্টু খুলে দিলো।বলল,”রিকশায় উঠুন ম্যাডাম।”

মেহরা ক্ষীণ হেঁসে রিকশায় উঠে বসলো। আরশমান পুনরায় বলে উঠলো,”রিকশা সোজা শেইখ ভিলায় যাবে,আমি যদি জানতে পারি আপনি বাড়ি না গিয়ে অন্য কোথাও গিয়েছেন তখন ঐখান থেকে তুলে নিয়ে আসব।”

মেহরা চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে,”আমাকে থ্রেট করছেন?”

আরশমান শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে হেঁসে বলে,”হ্যাঁ করছি।আরশমান খান যা এই মুখ থেকে বের করে তাই করে দেখায়।”

“দেখবো কত করে দেখাতে পারেন খাম্বা খান।”,বলে থেমে যায় মেহরা,চোখ মুখ কুঁচকে রিকশা চালকের উদ্দেশ্যে বলে,”মামা এই খাম্বা খানের সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে চলুন তো বড্ডো বিরক্তি লাগছে এই খাম্বা কে।”

রিকশা চালক হাঁসলো,রিকশা নিয়ে প্রস্থান করলো। আরশমান ক্ষীণ হেঁসে রিকশার প্রস্থান এর দিকে চেয়ে বলল,”আমি খাম্বা খান! এই মেয়ে আমার নামের মান ইজ্জত খেয়ে দিলো।”

.
ফাইজ তো ভেবেছিল আজ হাসপাতাল তার যাওয়া হবে না কিন্তু সে এখন হাসপাতাল এর উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।পরনে তার সেই জাম রঙ্গা পাঞ্জাবি।আসাদ এর বাড়ি থেকে বিকেলে বেরিয়ে নিজের বাড়িতে আসা মাত্রই হাসপাতাল থেকে কল আসে,হুট করেই ধূসর মাথা ব্যাথায় চিৎকার চেঁচামেচি করছে।তা শোনা মাত্র আর বসে থাকে না ফাইজ,বেরিয়ে পড়ে।হাসপাতালে
ধূসর এর সঙ্গে জাহরা,হ্যাভেন,স্টিভ রয়েছে।

গাড়ি এসে হাসপাতাল এর সম্মুখে থামতেই দ্রুত গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে হাসপাতালের ভিতর চলে যায় ফাইজ।”৫০৩” নম্বর রুমটি ধূসরের সেই বরাদ্দকৃত রুম।রুমটির সামনে এসে থামতেই ফাইজ বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিতে থাকে,শুভ্র রঙ্গা বিছানার উপর জাহরার কোলে ধূসর কে আবেশে ঘুমোতে দেখে তার অস্থির মন ক্ষীণ শান্ত হয়ে ওঠে।

ফাইজ ধীর পায়ে ভিতরে প্রবেশ করে।জাহরা চোখ তুলে চায় ফাইজ এর দিকে,কেমন পা গ ল পা গ ল দেখাচ্ছে ফাইজকে।চুল গুলো এলোমেলো,চোখে চিন্তার ছাপ,পাঞ্জাবির উপরের দিকে কয়েকটি বোতাম খোলা।ঘর্মাক্ত মুখাবয়বে অস্থিরতা স্পষ্ট।

ফাইজ ধূসরের মাথার কাছে বসে পড়ে,ছোট ধূসরের কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে,”তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি ধূসর বাবু।”

জাহরা চিন্তিত কণ্ঠে ক্ষীণ স্বরে বলল,”আপনার এই অবস্থা কেনো ফাইজ?”

ফাইজ চাইলো জাহরার মুখ পানে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,”আমি কখনও আমার রোগীদের নিয়ে এত টা অস্থির হয়নি যত টা এই ধূসর কে নিয়ে হই।এই ধূসর আমার কলিজা আমার পরিবারের কাছে আমার থেকেও ও বেশি অদূরে।বড্ডো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জাহরা।কিছুক্ষনের জন্য বোধ হচ্ছিলো হারিয়ে ফেলবো ধূসর কে।”

জাহরা চেয়ে চেয়ে দেখলো ফাইজ এর অস্থিরতা মাখা মুখ’খানা।ফাইজ হাত বাড়িয়ে ধূসরকে জাহরার কোল থেকে নিয়ে নিলো বেডে শুয়ে দিলো সেলাইন ঠিক করে চলছে কিনা দেখে নিলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ধূসরের।

পিছনের সোফায় বসে থাকা হ্যাভেন,স্টিভ এতক্ষন যাবৎ নিশ্চুপ দর্শকের ন্যায় দেখলো ফাইজকে।স্টিভ বলে উঠলো,”Don’t worry faiz.We gave him the injection and now he will sleep peacefully.”(চিন্তা করবেন না ফাইজ।আমরা ওকে ইনজেকশন দিয়েছি , এখন সে শান্তিতে ঘুমাবে।)

ফাইজ ঘুড়ে চাইলো স্টিভের দিকে,নম্র হেঁসে বলল,”ধন্যবাদ স্টিভ।আপনারা আমার কেবিনে গিয়ে বসুন আমি আসছি।”

স্টিভ,হ্যাভেন অনেকটাই বাংলা ভাষা বুঝতে পারেন,তারা সবসময়ের মত বুঝলো ফাইজ এর বলা কথা।উঠে দাঁড়ালো রুমটি ত্যাগ করলো দুজনেই।ফাইজ জাহরার দিকে চেয়ে বলে,”আপনি কেনো বসে আছেন?আপনাকে কী ইনভাইটেশন কার্ড পাঠাতে হবে মিস?”

জাহরা ভ্রু কুচকে ফেললো,এই লোকের দাড়া ভালো ব্যবহার আশা করা মানে অমাবস্যায় চাঁদ দেখার মত আশা করে ফেলা।জাহরা বেড থেকে নেমে দাঁড়ালো দুই কদম ফেলতে তার ওড়নায় টান পড়লো,জাহরা তিক্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,”আপনার দাড়া এইসব আশা করিনি ফাইজ!”

ফাইজ অবাক হলো বলে উঠলো,”আমার আপনার ওড়না ধরে টানাটানি করার শখ নাই ভাই একটু পিছন ফিরে তাকান প্লিজ।”

জাহরা পিছন ফিরে চাইলো, বেডের এক কোণায় ওড়না বেজে রয়েছে।ফাইজ বুকে দুই হাত গুঁজে হেঁসে বলল,”এখন আপনার ওড়না নিয়ে টানাটানি করার শখ একদম নেই যদি মা আমাদের সত্যি বিয়ে দেয় তখন এই ওড়না টানাটানি নিয়ে ভেবে দেখতে পারি।”

জাহরা দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠে,”আমার ওড়না ছুঁয়ে দেখুন না ওই হাত কে’টে অন্য হাতে ধরিয়ে দিবো।”

“সুন্দরী ডক্টরের হাতে খু’ন হতেও সমস্যা নেই।”

জাহরা প্রতিউত্তর করার জন্য মুখ খুলবে তার পূর্বেই ফাইজ পুনরায় বলে উঠে,”কী ভেবেছিলেন এমনটি বলবো!একদম নাহ।আমার হাত কা’টবে সাহস তো বড্ডো আপনার, ছুঁয়ে দেখুন না এই ফাইজকে,আপনাকে মনে হয় আস্ত রাখবো।একেবারে কে’টে সালাদ বানিয়ে বিরিয়ানির সঙ্গে খেয়ে ফেলবো।”

জাহরা বিস্মিত কণ্ঠে বলল,”আমাকে সালাদ বানিয়ে বিরিয়ানির সাথে খাবেন, আশ্চর্য!বাজারে কী শশা টমেটোর অভাব পড়ছে নাকি!”

“হম আমি বুঝলে বড্ডো গরীব তাই শশা টমেটোর জায়গায় তোমাকেই বিরাইনির সঙ্গে চালিয়ে দিতে চাচ্ছি।”

“অ’স’ভ্য লোক!”,বলেই গটগট করে রুমটি থেকে বেরিয়ে যায় জাহরা।ফাইজ মুখ ভেংচে জাহরার যাওয়ার পানে চেয়ে বলে,”অ’স’ভ্য মহিলা।”

.
বিকেলের কোমল আকাশ হলদে কমলা রঙের আভায় ছেয়ে আসতেই কেমন এই ব্যাস্ত শহর নিশ্চুপতায় ছেয়ে যায়।হাসপাতালের রোগীর ভিড় টাও যেনো কমে এসেছে এখন।ফাইজ জাহরার বেরিয়ে যাওয়ার কিয়ৎক্ষণ পর নিজের কেবিনের দিকে অগ্রসর হয়।নিজের কেবিনে গিয়ে আলোচনায় বসে সকলের সঙ্গে।সবে সকলে আলোচনার ইতি টেনে হাসপাতালের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে।

স্টিভ,হ্যাভেন নিজেদের গাড়ি নিয়ে প্রস্থান করলে।জাহরা হাঁটা ধরে সড়কের দিকে।পিছন থেকে ফাইজ ডেকে ওঠে ‘ জাহরা ‘ বলে।জাহরা পিছন ফিরে চায় বলে,”সমস্যা কী?”

“আমার তো আবার তোমায় নিয়ে বড্ডো সমস্যা,আমার একমাত্র বেয়াইন বলে কথা।”

জাহরা বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে,”উফ বিরক্ত করবেন না জলদি বলুন কী বলবেন।নাহয় জুতা খুলে ছুড়ে মারবো বলে দিলাম।”

“মারো আমিও ক্যাচ করে তা আবার তোমার উপর ছুঁড়ে মারবো।”

জাহরা ঝুঁকে গিয়ে খুললো পায়ের থেকে একটি জুতো,ফাইজ এর দিকে জুতোটি ছুঁড়ে মারার জন্য প্রস্তুতি নিতেই ফাইজ চেঁচিয়ে বলে উঠে,”এই সত্যি সত্যি জুতা দিয়ে মারবে নাকি!বইন তোর ওই জুতা তোর পায়েই সুন্দর,হাতে না।প্লিজ নামা জুতা নামা বইন।”

জাহরা ফেলে দিলো,পায়ে পড়ে নিলো জুতাটি অতঃপর বলল,”আরেকবার পিছু ডাকলে তোকে জুতা পিটা করবো ফা’জি’ল।”,বলে বড় বড় কদম ফেলে সড়কের দিকে চলে গেলো।

ফাইজ ভ্রু কুচকালো,জাহরার যাওয়ার পানে চেয়ে থেকে বলল,”জ ল্লা দ মাইয়া ভাই রে ভাই!এই সুন্দরী মাইয়া গুলা এমন জ’ল্লা’দ কেনো হয়!”

.
আসাদ এর বাড়ি থেকে বের হয়েই প্রশান্ত অফিসে এসেছিল।নিজেকে কাজের মাঝে বুদ করে রেখেছে সে।ঘড়িতে এখন সাতটা বেজে চল্লিশ মিনিট।বর্তমানে প্রশান্ত কনফারেন্স রুমে মিটিং এটেন্ড করছে।

নয়না ইন্ডাস্ট্রির প্রবেশ দ্বার পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে জুনায়না,পরনে তার পুলিশের পোশাক।লিফটে চড়ে কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে চলে আসে সে। কনফারেন্স রুমের সম্মুখে আসতেই রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তীব্র জুনায়নাকে দেখে বলে ওঠে,”আপনি?”

“আমি ভিতরে যেতে চাই।”

“ভিতরে যাওয়া তো সম্ভব নয়।স্যার মিটিং এটেন্ড করছেন।”

“এই জুনায়নার দ্বারা সব কিছুই সম্ভব।”,বলে তীব্রকে সরিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে জুনায়না।ঠোঁটের কোণে এক ফালি হাঁসি ঝুলিয়ে উচ্চ কণ্ঠে বলে ওঠে,”হায় হ্যান্ডসাম।”

কনফারেন্স রুমে বসে থাকা সকলে এক সঙ্গে ঘাড় ঘুড়িয়ে জুনায়নার দিকে চায়।প্রশান্ত’র হাত থেকে ফাইল পড়ে যায়,তার বিদেশী ক্লাইন্ট’দের সামনে কী আজ তার মান সম্মান খেয়ে দিবে?

জুনায়না মুচকি হেঁসে সকলের উদ্দেশ্যে বলে,”সবাই এইভাবে কেনো তাকিয়ে আছেন আমার তো লজ্জা লাগছে।”

প্রশান্ত বাদে সকলে এক সঙ্গে হো হো করে হেঁসে ওঠে।
প্রশান্ত বিড়বিড় করে বলে,”এই মেয়ের আবার লজ্জা!”

জুনায়না অগ্রসর হয় প্রশান্ত’র দিকে।প্রশান্ত’র সম্মুখে এসে বলে ওঠে,”আমি বলেছিলাম আমাকে নিতে যাবি মুখের ওপর বারণ করার সাহস কী করে হলো তোর!”

প্রশান্ত জুনায়নার দিকে চাইলো না অন্য দিকে চেয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল,”আস্তে কথা বল।সবাই তাকিয়ে আছে তোর দিকে।”

“আমি তাকিয়ে দেখার মতোই একটা মানুষ।কিন্তু তুই,তুই তো আমার দিকে তাকিয়ে অব্দি দেখছিস না।”

প্রশান্ত চরম বিরক্তির স্তরে চলে গেলো জুনায়নার বাহু ধরে সকলের দিকে তাকিয়ে বলল,”আপনারা কিছু মনে করবেন না,আমি আসছি।”,বলেই জুনায়নার বাহু ধরে বড় বড় কদম ফেলে জুনায়নাকে নিয়ে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

বেরিয়েই ছেড়ে দিলো জুনায়নার বাহু।বলে উঠলো,”সমস্যা কী তোর?”

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here