অর্ধ_নক্ষত্র ।১৭। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
125

#অর্ধ_নক্ষত্র ।১৭।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

জুনায়না লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়েই বলল,”আমি মা কে বলেছি আসাদ এর ব্যাপারে।মা বলেছে কাল ওর পরিবারের সঙ্গে আমাদের বিয়ের ব্যাপার নিয়ে কথা বলবে।”

প্রশান্ত থমকে গেলো,তার হাঁসি মুখ খানা চুপসে গিয়েছে,স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে জুনায়নার মুখ পানে।তার কন্ঠ কাপছে,বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে।বলতে ইচ্ছে করলো,”নাহ জুনায়না তুই তো শুধু আমার।” কিন্তু কী করে বলবে সে,নিজেই তো চাইছে জুনায়না যেনো তার থেকে দূরে থাকুক।

প্রশান্ত শুকনো ঢোক গিলে বলল,”আমাদের মামনি এই বিষয়ে আগে জানালো না কেনো?”

“মা কে বলেছি আমি তোদের বলে দিবো, তাই বলেনি।”

প্রশান্তর কাধে রাখা জুনায়নার দুই হাত সে সরিয়ে দিলো,ব্যাস্ত কণ্ঠে বলল,”গাড়িতে উঠে বস।”,বলে নিজে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।জুনায়না নিঃশব্দে হাঁসলো বিড়বিড় করলো,”আর কত ধৈর্যশক্তি আছে তোর তা আমিও দেখতে চাই।”

জুনায়না গাড়িতে উঠে বসলো।প্রশান্ত গাড়ি স্টার্ট দিলে জুনায়না আড় চোখে চেয়ে চেয়ে দেখলো প্রশান্তর মুখ খানা।হুট করেই প্রশান্ত বলে উঠলো,”এমন করে তাকিয়ে আছিস কেনো?ঐভাবে আমাকে না দেখে বিয়ের পর জামাইকে দেখিস।”

“তা তো অবশ্যই দেখবো।সারাদিন তাকে চেয়ে চেয়ে দেখবো।তাকে এই আড় চোখে মধ্যেও এক সুখ অনুভূত হয় আমার।”

প্রশান্ত প্রতিউত্তর করলো না।

🍁

ফাইজ দেরী করে ঘুম থেকে উঠলো।সবে এগারোটা বেজে দশ মিনিট।কাল রাতে মায়ের সাথে সে কী তুলুম ঝগড়া শেষে ঘুমাতে দেরী হয়ে যায় তার।এখন সে ফ্রেশ হয়ে জাম রঙ্গা এক পাঞ্জাবি পড়ে তৈরি।সে আজ হাসপাতাল যাবে না,আজ সে যাবে আঞ্জুমান এর সঙ্গে আসাদ এর বাড়িতে।সাথে আরশমান,প্রশান্তর যাওয়ার কথা রয়েছে।

ফাইজ নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরের দিকে অগ্রসর হলো।বসার ঘর পেরিয়ে যখন সদর দরজা অতিক্রম করবে পিছন থেকে ডাক পড়লো,”ফাইজ।”

ফাইজ ফিরে চাইলো,তার মা কোমড়ে দুই হাত রেখে দাড়িয়ে আছে।ফাইজ ভ্রু কুঁচকে বলল,”কী হয়েছে মা?তুমি না কাল ঝগড়ার মাঝে বলেছো আমার সঙ্গে কথা বলবে না তাহলে এমন করে ডাকছো কেনো?”

ফাইজ এর মা তুলি এগিয়ে আসলো,ফাইজ এর সম্মুখে এসেই ফাইজের কান মুচড়ে ধরলো বলল,”আমি আমার ছেলেকে যখন মন চায় ডাকব তাতে তোর কী?”

ফাইজ ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠল বলল,”মাহ ছাড়ো আমার কান!আমি এখন ৩৬ বছরের ধামড়া ছেলে আর তুমি এখনো আমার কান টেনে ধরো।মানুষ জানলে আমাকে দেখে হাসাহাসি করবে।”

তুলি ছেড়ে দিলো ফাইজকে, আড় চোখে আপাদমস্তক দেখে নিলো ছেলেকে অতঃপর বলল,”কোনো মেয়ের সঙ্গে ডেটে যাচ্ছিস নাকি?”

ফাইজ কণ্ঠে বিরক্তির রেশ টেনে বলল,”আজব মা কার সঙ্গে ডেটে যাবো আমি?”

“ওহ হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম আমার যেই ছেলে,তার এই খোমা দেখে কোনো মেয়েই তাকে ডেট করতে চাইবে না।”

ফাইজ হেঁসে বলল,”মা সবাই বলে আমার খোমা টা নাকি ফুলটু তোমার মত দেখতে।”,বলে এক দৌড় লাগায় ফাইজ।

তুলি বুঝে উঠতে পারে না।চেয়ে চেয়ে দেখে ফাইজ এর প্রস্থান।হঠাৎ করে এর অর্থ যখন মাথায় হানা দিলো তুলি চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”হারামী ছেলে আমি অনেক সুন্দরী বুঝছিস।”,

মুখ ভার করে সোফায় গিয়ে বসে পড়লেন তুলি।এখন সে আরশমান এর মা কে ফোন করবেন জাহরার সম্পর্কে জানার জন্য।বিয়ে তো তিনি দিয়েই ছাড়বেন।গত কাল রাতে তিনি ফাইজ এর বাবা কে শক্ত কণ্ঠে বলে দিয়েছেন,জাহরা কে তার খুব ভালো লেগেছে।তিনি ফাইজ আর জাহরার বিয়ে দিতে চান আর এই বিয়ের বিরুদ্ধে কেউ গেলে সে কী তুলুম কান্ড বাধাবে সে নিজেই জানে না।এহেন কথা শুনে ফাইজ এর বাবা চুপসে যায়।

.
সাধের ঘুম যখন কেউ ভেঙে দিয়ে বলে,”ভালো করে ঘুম হয়েছে তো?”,তখন তাকে ধরেই উত্তম মাধ্যম কেল্যানি দিতে ইচ্ছে করে।মেহরা কানের কাছে ফোন চেপে ধরে একের পর এক গালি আওয়ালো,ঐপাশ থেকে আরশমান সেই গালি শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

আরশমান মেহরার বাড়ির নিচে,কিছুক্ষন আগেই এসেছে।এসেই মেহরাকে ফোন করে যাচ্ছে বারবার।কাল রাতেই জ্বর ছেড়েছে শান্তির এক ঘুম দিয়েছিল মেহরা,কিন্তু সেই শান্তি কে অশান্তিতে রুপান্তর করে দিলো আরশমান।মেহারার ঘুম ভেংগে গেল ফোন রিসিভ করেই অনর্গল গালিগালাজ করলো আরশমান কে। আরশমান গলির ফাঁকে জিজ্ঞেস করলো,”ঘুম কেমন হয়েছে প্রাণ?”

.
মেহরা থামলো বড় বড় নিশ্বাস নিলো।ঐপাশ থেকে আরশমান হাসতে হাসতে বলল,,”আর ইউ ওকে প্রাণ?”

মেহরা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”জাস্ট শাট আপ,এখন রূপসী বলা বন্ধ হয়েছে তো প্রাণ প্রাণ করছে।তোর কোন জন্মের প্রাণ আমি।”

জ্বরের ঘোরে মেহরা বলেছিলো আরশমানকে যেনো তাকে রূপসী না ডাকে সে।তাইতো আরশমান রূপসী বলে ডাকে না মেহরাকে।

আরশমান উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো।হাঁসির ইতি টেনে বলল,”আপনি আমার এই জন্মের প্রাণ।যাইহোক এখন শরীর কেমন লাগছে আপনার?”

মেহরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,শান্ত হলো।বলল,”হম আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আছি।”

“আপনি আমার সঙ্গে জুনায়নার বাড়ি যেতে পারবেন?”

“কেনো?”

“আপনি যদি যেতে পারেন জলদি করে তৈরি হয়ে চলে আসুন।আমি বাড়ির নিচেই গাড়িতে বসে আছি।যেতে যেতে নাহয় সকল কথা হবে।”

মেহরা ভাবনায় পড়ে গেলো কেনো যাবে সে?তাই পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,”আন্টি ঠিক আছে?জুনায়না ঠিক আছে?”

“হম ঠিক আছে ওরা।এখন এইটুকু বলতে পারি যে আজকের দিনটি প্রশান্ত আর জুনায়নার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।জলদি চলে আসুন মেরি জান।”

মেহরা গলা খাকারি দিয়ে বলে,”এইসব উদ্ভট নামে না ডেকে মিষ্টি করে অনুরোধ করুন,মেহরা প্লিজ আসুন।এমন করে তাহলে আমি আসব।”

আরশমান নিঃশব্দে হাঁসলো।মিষ্টি করে অনুরোধ করলো,”মেহরা প্লিজ আসুন,আপনার এই আরশমান আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”

মেহরা হাঁসলো বলল,”শেষ টুকু কেনো বললেন আমি বলেছি এমন করে বলতে।আপনি আমার কথা কখনোই শুনবেন না।”

.
আরশমান বাড়ির সদর দরজার দিকে চেয়ে আছে।আধ ঘন্টা হয়ে গেলো,কোথায় তার মেহরা।আরশমান দীর্ঘশ্বাস ফেললো বলল,”আকাশ তুমি তো বিবাহিত, তোমার বউ’ও কী এমন তৈরি হতে ঘণ্টার পর ঘন্টা তোমাকে বসিয়ে রাখে?”

ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা আকাশ আফসোসের সহিত বলল,”কী বলবো ভাই বউ তো আমাকে বলে এইযে পাঁচ মিনিট,কিন্তু ঐদিকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে বসে থাকা আমি।মাঝে মাঝে তো তার অপেক্ষা করতে করতে দুই তিন রাইন্ড ঘুম দিয়ে ফেলি।”

আরশমান হাঁসলো,হাঁসির মাঝেই বলে উঠলো,”এসে পড়েছে আমার লাল টুকটুকে মায়াবিনী,আমার প্রাণ।”

মেহরা সদর দরজা পেরিয়ে গাড়িটির সম্মুখে এসে দাড়াতেই আরশমান দরজা খুলে দিলো মেহরার হাত ধরে হেঁচকা টানে তাকে ভিতরে নিয়ে নিলো।মেহরা ভড়কে গেলো ধীরিম করে আরশমান এর পিঠে কিল বসিয়ে তেঁতে উঠে বলল,”এমন ডা কা তে র মত দিন দাহারে হাত ধরে টানাটানি কেন করছেন বে য়া দ ব লোক।”

আরশমান হেঁসে বলে,”এই আরশমান তো এখন সত্যি এই লাল টুকটুকে মেহরাকে ডা কা তি করতে চাইছে। কী বলেন প্রাণ আপনি চাইলে আজকেই আপনাকে
ডা কা তি করে বিয়ে টা সেরে ফেলবো।”

মেহরা চোখ বড়বড় করে ফেললো।আরশমান হাত বাড়িয়ে মেহরার কপালে হাত রাখলো মৃদু কণ্ঠে বলল,”আলহামদুলিল্লাহ,জ্বর কমেছে মহারানীর।তাই বলি এত জোরে কিল দেয়ার শক্তি কোথা থেকে পায় সে!”

“আপনি চাইলে আরও একটা কিল বসি দিতে পারি।”

আরশমান মেহরার হাত ধরে বলল,”আপনি করবেন আদর তা না করে আমাকে ধিরিম ধারাম মারছেন।একটু মান ইজ্জত রাখেন এই এলাকার এমপি আমি।”

মেহরা মুখ ভেংচে বলে,”ক চু র এমপি।”

“নাহ আমি তো হ্যান্ডসাম এমপি।একটু বেশি হ্যান্ডসাম।”

মেহরা হো হো করে হেঁসে বলে উঠে,”সাদা ইঁদুরের মত মুখ তাহার আবার বলে সে নাকি হ্যান্ডসাম।কচুর হ্যান্ডসাম।”

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here