#হাতটা_দাও_বাড়িয়ে
#অরিত্রা_অর্নি
#পর্ব_১২
#রাজনীতি_রিলেটেড
“সময় পেরিয়ে গেছে আরও দুইদিন । এই দুইদিনে রাফিয়ার সাথে আর আহিলের দেখা হয়নি আর না কথা হয়েছে । আহিল শত ব্যাস্ততায় আছে। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে ঝামেলা ততো বেড়েই চলেছে ।
অন্যদিকে রুদ্র ও বরাবরের মতোই আহিলের ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ।
সকাল সকাল আহিল বসে আছে ওদের ক্লাব ঘরে চলছে মিটিং এর মধ্যেই আহিলের ফোন একটা কল আসে । নামটা দেখেই আহিল কল রিসিভ করে ।
_ হে বল ।
_ ভাই ভাবী বাসা থেকে বের হইছে । সম্ভবত ভার্সিটি যাইবো । এখন কি করুম ?
” শেষ দুইদিন ধরে আহিল রাফিয়াদের বাড়ির সামনে লোক রেখেছে যাতে রাফিয়া কোথাও গেলে সহজেই জানতে পারে গাড়ির ব্যাবস্থা ও করেছে এই মুহূর্তে ঘুরে বেড়ানো ঠিক হবে না তাই । এই দুইদিন রাফিয়া বের হয়নি ”
_ গাড়ি নিয়ে যা । বলবি আহিল ভাই পাঠিয়েছে । কিছুতেই যেনো রিকশায় না উঠে ।
_ আচ্ছা ভাই ।
” কল কেটে দিয়ে ছেলেটা দ্রুতই গাড়ি নিয়ে
রাফিয়ার সামনে হটাৎ ই গাড়ি চলে আসায় ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে যায় রাফিয়া ”
_ সরি ভাবী । উঠেন গাড়িতে ।
_ গাড়িতে উঠবো কেনো ? কে আপনি ?
_ আমি সাব্বির ভাবী আহিল ভাইর লগে থাকি ।
_ তো আপনার ভাইয়ের সাথে থাকেন এইখানে কি করছেন ? আর একবারে ভাবী ভাবী ও করবেন না ।
_আল্লাহ কি কন ভাবী । আপনারে ভাবী কমু না তো কি কমু আপনি তো ভাবী ই ।
এইবার গাড়িতে উঠেন । আহিল ভাই কইয়া দিছে গাড়িতে কইরা আপনারে দিয়া আইতে ।
“রাফিয়ার পাশে এতক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল রিপা । আর পারছে না । রাফিয়া যে কিছুতেই এই গাড়িতে উঠবে না তা সে জানে । কিন্তু না উঠলে আবার আহিল রাফিয়ার খবর করে ছাড়বে ”
_ এত করে বলছে । চল যাই সমস্যা কি ?
_ তোর ইচ্ছে হোক তুই যা । আর আপনি ।
আপনার আহিল ভাইকে বলে দিবেন তার গাড়ি করে আমি কোথাও যাবো না । আমি রিকশা করেই যাবো ।
” কথাটা বলে রিপার হাত ধরে টেনে নিয়ে রাস্তার ওপর পাশে থেকে রিকশায় উঠে চলে যায় । সাব্বির আর কি করবে সে সাথে সাথে আহিল কে কল করে জানিয়ে দেয় ”
_ একটা ঘাড়তেরা কে বিয়ে করছি । শোন সাব্বির তুই ওর রিকশা ফলো করবি । যতক্ষণ না আবার ভার্সিটি থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরে তুই নজর রাখবি ।
_ আচ্ছা ভাই চিন্তা কইরে না ।
“কলটা কেটে দিয়ে আহিল চেয়ারে গা এলিয়ে দেয় । এই মেয়ে কিছুতেই ওকে শান্তি দিবে না । ইচ্ছে করছে তুলে নিয়ে আসতে কিন্তু শ্বশুর মশাইর জন্য তা ও পারছে না । এ কেমন বউ রে বাবা স্বামীর কথা শুনে না । আহিল কে এইভাবে শুয়ে
থাকতে দেখে শাওন এগিয়ে আসে ”
_ কি বলেছিলাম না বিয়ে করিস না । এইবার বোঝ ঠেলা ।
” আহিল শাওনের কথার কোনো উত্তর দেয় না মুচকি হেসে আবার ঠিক হয়ে বসে ”
_ ঐদিকের কি খবর ?
_ কোনো খবর নাই। রিজন কে আর দেখা ও যায়নি। বাড়িতে ও নাকি আসেনি আর । রুদ্র ওর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে । আমার মনে হয় রুদ্র আবার মনে মনে কিছু একটা করার কথা ভাবছে ।
_ লাভ নেই । ও আর কিছুই করতে পারবে না । আর মাত্র তিনদিন পর নির্বাচন । এইটুকু সময়ে ওর পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না ।
_ তারপর ও ওকে আমার সুবিধার মনে হয় না ।
_চোখ কান খুলে কাজ করতে বল সকল কে । যাই হয়ে যাক যতই ঝামেলা হোক । সাধারণ মানুষ যাতে এতে না জড়ায়।
_ হুম ।
” আহিল শাওনের সাথে আরো কিছু কথা বলে । আবার বেরিয়ে পড়ে অন্য কাজে । না বাড়িতে যেতে পারছে আর না বউয়ের কাছে ।শুধু গাড়ি নিয়ে চরকির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে । বার বার ফোন করে রাফিয়ার খবর নিয়ে নিয়েছে ”
” ভার্সিটি শেষে একসাথে বের হয় রিপা রাফিয়া । এইবার ও চোখে পরে সেই গাড়ি । কিন্তু রাফিয়া গাড়ির দিকে না তাকিয়ে আবার রিকশায় উঠে বসে ”
_ তোর কপালে দুঃখ আছে দেখিস । আগে না হয় দেখতে পারতি না এখন তো তোর হাসবেন্ড হয় রাফিয়া ।
_ চুপ কর । কিসের হাসবেন্ড ।তোরা সবাই মিলে বুদ্ধি করে আমাকে বিয়ে দিয়েছিস আমি কি বলেছিলাম উনাকে বিয়ে করবো ।
_ এত জেদ রাখিস না বোন । তোর ভালোর জন্যই । আহিল ভাইয়ের জন্য কত মেয়ে পাগল জানিস আর তুই পেয়ে ও এমন করছিস ।
_ সবাই যার জন্য পাগল আমি তার জন্য পাগল নই।
” রিপা আর কিছু বলতে পারে না চুপ করে বসে থাকে । বাড়ির সামনে এসে রিকশায় থেকে নেমে ওরা ভেতরে চলে যায় । এই খবর আহিলের কাছে পৌঁছতেই আহিলের অস্থিরতা কমে ।
বাড়িতে গিয়ে রাফিয়া সোজা বিছানায় গা এলিয়ে দেয় । এখন প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে । রাফিয়া আবার উঠে ফ্রেশ হয়ে আনিসুল হকের রুমে যায় । কিছুটা সময় গল্প করে আবার বেরিয়ে আসে। রিপা আর ওর মায়ের সাথে ও বসে বসে গল্প করে । সন্ধ্যার দিকে রাফিয়া রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ে প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তার ।
রাফিয়া ঘুম ভাঙ্গে রাত দেড়টার দিকে ।হুট করেই চোখ মেলে তাকায় পুরো ঘরে শুধু একটা মোমবাতি জ্বলছে । আর সেই আলোতেই রাফিয়া দেখে আহিল ওর দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে । রাফিয়া কিছু না বুঝেই জোড়ে চিৎকার দিয়ে ফেলে । আহিল ভাবেনি রাফিয়া চিৎকার করবে । সাথে সাথে আহিল রাফিয়ার মুখ চেপে ধরে ।
_ এই মেয়ে আমি । এত জোড়ে কেউ চিৎকার করে ছি । তোমার বাপ খালা তো আমায় নির্লজ্জ ভাববে ।
” রাফিয়া কিছু বলতে পারছে না কারণ আহিল ওর মুখ চেপে ধরেছে । ব্যাপারটা আহিল বুঝতে পেরে রাফিয়ার মুখ ছেড়ে দেয় ”
_ এই আপনি আমার ঘরে কি করছেন । আর রিপা কোথায় ।
_ ছি বউ এইগুলা কোনো কথা । বউ জামাই যদি এক সাথে থাকে সেখানে আর কেউ থাকে নাকি ।
_ চুপ থাকুন । আপনি কেনো এসেছেন । আর এইভাবে আমার দিকে ঝুঁকে কি দেখছিলেন ?
_ তোমাকে ( বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে আহিল )
_ এইটা কি হচ্ছে । আমি কিন্তু আবার চিৎকার করবো ?
_ করো যত ইচ্ছে চিৎকার করো। কাল সকালে তো আমি চলে যাবো তুমি তো থাকবে মুখ দেখিও সবাইকে ( মুচকি হেসে বলে আহিল )
_ কেনো এসেছেন ? আর আপনাকে আসতে দিলো কে আমার ঘরে ।
” আহিল রাফিয়ার এত প্রশ্নে খুব বিরক্ত । ও এসেছে রাফিয়াকে দেখতে আর সকালে ঘারতেরামির জবাব নিতে । কিন্তু হটাৎ বৃষ্টি চলে আশায় আর ফিরে যায়নি । বিয়ে করা বউ ই তো এই ভাবেই রয়ে গেছে ।
আহিল এইবার উঠে বসে রাফিয়াকে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে নিজে ওর উপরে ঝুকে শুয়ে পড়ে । তবে পুরোপুরি রাফিয়ার উপর ভর দেয় না ।
হটাৎ এমন হওয়ায় রাফিয়া ও বেশ অবাক হয় । বার বার আহিলের বুকে ধাক্কা দিতে থাকে ওকে সরানোর জন্য কিন্তু আহিলের ওই শরীলে রাফিয়ার ছোট্ট হাতের ধাক্কা কিছুই করতে পারবে না ”
_ যেইদিন থেকে তোমাকে দেখেছি সেইদিক থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছো । এত ঘাড়তেরা কেনো তুমি হে। সকালে আমার গাড়িতে উঠনী কেনো । জেদ দেখিয়ে রিকশায় করে আসলে । যদি আবার কিডন্যাপ হয়ে যাবো কে বাঁচাবে ।
_হলে হবো আপনাকে তো বাঁচাতে বলিনি । আমার উপর থেকে সরুন বলছি । কি পেয়েছেন কি । জোর করে বিয়ে করে নিলেন এখন আবার জোর করে কাছে আসতে চায়ছেন ।
” শেষের কথাটা শুনে আহিল আরএকটু এগিয়ে যায় রাফিয়ার দিকে । রাফিয়া চোখ মুখ খিচে ধরে সাথে সাথে । আহিল আস্তে করে একটা ফু দেয় রাফিয়ার মুখের উপর ”
_ কাছে আসতে হলে জোর করে আসতে হয় নাকি । আমি কাছে আসবো ভালোবেসে ।
_ আসার দরকার নেই সরে জান ( আস্তে করে বলে রাফিয়া )
_ তুমি কি চায়ছ আমি তোমার কাছে যাই।
_ আমি কি আপনার মতো অসভ্য ।
” আহিল রাফিয়ার মুখের দিকে তাকায় । মেয়েটা চোখ বন্ধ করে আছে । দেখতে একটা ছোট্ট পরির মতো লাগছে । আহিল ভালো করে রাফিয়ার দিকে নজর দেয় । একটা বেবি পিংক কলার টি শার্ট পরে আছে । আহিলের চোখ যায় রাফিয়ার ফর্সা গলায় । আহিল আস্তে আস্তে মুখ নিয়ে যায় রাফিয়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় । রাফিয়া সাথে সাথে হাত দিয়ে বিছানার চাদর চেপে ধরে । এইভাবে যদি কেউ কাছে আসে সে যদি হয় আবার নিজের স্বামী তাহলে কোন মেয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে । এই মুহূর্তে রাফিয়া যেনো নিজের জেদের কাছে হেরে যাচ্ছে ।
আহিল ও নিজের মধ্যে নেই । সে রাফিয়ার গলায় পাগলের মতো চুমু দিতে শুরু করে। একটা পর্যায় কামড়ে ধরে রাফিয়ার গলা । রাফিয়া সাথে সাথে একটা চিৎকার করে উঠে । নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আহিল কে ধাক্কা দেয় রাফিয়া । আহিলের হুস ফিরে আসে । দ্রুত রাফিয়ার উপর থেকে উঠে বসে । রাফিয়া গলায় হাত দিয়ে কান্না করে দেয় । আহিলের নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে । চুমু পর্যন্ত তো মেয়েটা ঠিক ই ছিলো কামড় দেওয়াটা ,,,,,
আহিল এগিয়ে যায় রাফিয়ার দিকে । রাফিয়াকে উঠে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে ”
_ সরি বউ আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না । বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ব্যাথা দিতে চায়নি। লক্ষ্মী বউ তাকাও আমার দিকে ।
” আহিলের এমন আহ্লাদী কোথায় রাফিয়ার রাগ আরো বেড়ে যায় । রাফিয়া আহিলকে ধাক্কা দিয়ে আবার বিছানায় ফেলে দেয় নিজে আহিলের উপরে উঠে বসে । আহিল অবাক না হয়ে পারছে না । তার বউ কি পাগল হয়ে গেলো নাকি ।
রাফিয়া উঠে বসেই আহিলের ঘাড়ে জোড়ে জোড়ে কামড় দিকে শুরু করে একটা না দুইটা না সমানতালে দিয়ে যাচ্ছে । এত্ত জোড়ে কামড় গুলো দিচ্ছে আহিলের জান বেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না চুপ করে সহ্য করছে । রাফিয়া এক পর্যায় ধীরে ধীরে কামড় দিতে থাকে তবু ও থামে না । আহিলের পুরো ঘাড় লাল বর্ণ ধারণ করেছে ।রাফিয়া একটা পর্যায় থেকে যায় ঘাড়ে থেকে মুখ সরিয়ে আহিলের দিকে তাকায় ”
_ আপনি যত ই মাস্তান হোন না কেন ।আমার সাথে লাগতে আসবেন না । মেরে ফেলবো একেবারে ।
” আহিল ওর ঘাড় নড়াতে পারছে না ব্যাথা সাথে জ্বলে যাচ্ছে । রাফিয়া আহিলের উপরে থেকে উঠতে যাবে । আহিল হাত ধরে আটকে দেয় । নিজের বুকে নিয়ে আসে রাফিয়া কে । রাফিয়া উঠে যেতে চাইলে আরো শক্ত করে ধরে । রাফিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ”
_ এইযে এই কামড় গুলোর ব্যাথা তোমাকে ফিরিয়ে দিতে আমার একটু ও সময় লাগতো না বউ ।শুধু এখন চায়ছি না । এই ব্যাথা গুলো ফিরিয়ে দিতে । বুকে থাকো ।আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও ।
” আহিলের এমন শান্ত কণ্ঠে বুক কেপে উঠে রাফিয়ার । বউ বউ করছে কেনো । রাফিয়ার মায়া হয় আহিলের জন্য । কি করুন আবার আবদার । ঘুমাতে দাও । রাফিয়া আর কিছু বলে না । চুপ করে শুয়ে থাকে আহিলের বুকে । একটু সময় পরে ই আহিল ঘুমিয়ে যায় । রাফিয়া মাথা তুলে তাকায় আহিলের দিকে । চোখে মুখে ক্লান্তি ।সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত আহিলকে দেখে রাফিয়া তাকিয়ে থাকে ”
চলবে “””””
( প্রচুর বৃষ্টি ছিল কাল। কারেন্ট ছিলো না ।তাই কালকের পর্বটা দিতে পারিনি )
_