হাতটা_দাও_বাড়িয়ে #অরিত্রা_অর্নি #পর্ব_১৪ #রাজনীতি_রিলেটেড

0
408

#হাতটা_দাও_বাড়িয়ে
#অরিত্রা_অর্নি
#পর্ব_১৪
#রাজনীতি_রিলেটেড

“আজকে নির্বাচন । সকাল থেকে ই শুরু হয়েছে ভোট । আহিল নিজের ক্লাব ঘরে চেয়ারে চুপ করে বসে আছে । ওর আসে পাশে বাকিরা । কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো সকাল থেকেই কোথাও রুদ্র কে দেখতে পায়নি আহিলের লোকেরা শাওন এই বিষয় নিয়ে ভাবছে তবে আহিল অনেকটা রিল্যাক্স মুডে ই আছে ”

” রাফিয়ার আজকে ভার্সিটি বন্ধ ভোটের কারনে । রাফিয়া তাই একটু দেরিতেই উঠেছে ঘুম থেকে । ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে
রাফিয়ার বাবা আর খালা দুইজন মিকে বের হচ্ছে । রিপা সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে ”

_ কোথায় যাচ্ছো খালামণি তোমরা ? ( সোফায় বসে বর রাফিয়া )

_কোথায় আবার ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছি । ভোট দিতে হবে না ।

_ তা না হয় বুঝলাম । কিন্তু তুমি কেনো যাচ্ছো বাবা ?

_ বিয়াই সাহেব যেতে বললো তাই যাচ্ছি । দেখে আসি একটু ।

” রাফিয়া হতাশ । আর কোনো কথা বলে না
ওনারা বেরিয়ে যায়। রাফিয়া সোফায় শুয়ে পড়ে ”

_ শুয়ে পড়লো কেনো ?

_ তো কি করবো । নাচবো ।

_ এখন বাঁচবি কেনো ? নাচবি তো সন্ধ্যায় । তোর এক মাত্র জামাই এমপি হচ্ছে তুই হয়ে যাবি এমপি এর বউ।

” রাফিয়া এইসব শুনে একটা মুখ ভেংচি দেয় । তারপর আবার শুয়ে পড়ে”

” সারাদিন শেষে সন্ধায় ভোট গণনা শুরু হয় । এই সময়ের জন্যই সবাই অপেক্ষায় ছিলো । রাফিয়া নিজের রুমে গিয়ে বসে আছে । বাকিরা টিভির সামনে বসে আছে । রাফিয়া চায়ছে কিন্তু যেতে পারছে না । কেনো যেনো ওর ও খুব ভয় করছে । যদি আহিল হেরে যায় । মানুষটার ভীষণ মন খারাপ হবে । এইসব ই বসে বসে ভাবছে । হটাৎ করেই বাইরে থেকে চিল্লাচিল্লির শব্দ পায় রাফিয়া উঠে বারান্দায় যায় । রিপা দৌড়ে রাফিয়ার কাছে যায় ”

_ এমপির বউ । এইখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি তোমার এমপির জন্য অপেক্ষা করছো ।

_ফালতু বকবি না তো । আমি করো জন্য অপেক্ষা করছি না ।

_ জানি জানি আর বলতে হবে না ।

” রাফিয়া আর কোনো উত্তর দেয়না । চুপ করে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকে । অন্যদিকে আহিল তার জয়ের খবর শুনে ও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি । এমন মনে হচ্ছে ফলাফল টা আগে থেকেই জানা । সব কাজ সেজে আহিল রাতে বাড়ি ফিরে । হাবিব আহমেদ আর রেবেকা বেগম সোফায় বসে আছে । আহিল তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে দুইজনকে এক সাথে জড়িয়ে ধরে । হাবিব আহমেদ জানতেন তার ছেলে তাকে নিরাশ করবে না কিছুতেই । সব শেষে আহিল নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে । রেবেকা বেগম টেবিলে খাবার বাড়ছে ”

_ কিরে এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস ? আয় খেয়ে নিবি আয় ।

_ মা ,,, এখন তো খেতে পারবো না । সারাদিন চলে গেছে তোমার ছেলে তার বউয়ের সাথে একটু কথা ও বলতে পারেনি এখন যদি না যাই বউ তো আমায় ছেড়ে চলে যাবে মা ।

_ আমি ফোন দিয়েছিলাম বিয়াই কে । আর বউকে রেখে থাকতে হবে না তোমার । এইবার বউ আনার ব্যবস্থা করছি ।

_ তাড়াতাড়ি মা ,,,,

” কথাটা বলেই আহিল দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় । রেবেকা বেগম ছেলের কান্ড দেখে মুচকি হাসে ।
আহিল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় । তার বউ তো তার খবর জীবনে ও নিবে না তাই বলে কি সে ও নিবে না । আহিল রিপাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামায় । রাফিয়ার নাম্বারে কল করে । রাফিয়া তখন টেবিলে বসে পড়ছিল । আহিলের নাম্বার দেখে রাফিয়া সাথে সাথে কেটে দেয় । কেনো যেনো খুব রাগ হচ্ছে ওর । আহিল আবার কল করে রাফিয়া আবার ও কেটে দেয় । এইবার আহিল মেসেজ দিয়ে বসে ”

” যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে নিচে নেমে না আসো । আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না ”

” রাফিয়া মেসেজ দেখে ও কিছু বলে না । আহিল আবার ও মেসেজ দেয় । এইবার রাফিয়া উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় । আহিল ওকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দেয়। আর তার বিনিময়ে রাফিয়া দেয় মুখ ভেংচি । আহিল ওকে ইশারায় নামতে বলে । রাফিয়া চলে যেতে চায় । কিন্তু কি যেনো ভেবে দরজা খুলে নিচে নামে । গেট দিয়ে বের হয়ে ধীরে ধীরে আহিলের সামনে এসে দাঁড়ায় । আহিল ও রাফিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে হুট করেই রাফিয়া কে কোলে তুলে নেয় । রাফিয়া ভাবতে ও পারেনি আহিল এমন কিছু করবে ”

_ করছেন কি আপনি । মানুষ দেখবে । নামান আমাকে অসভ্য লোক । রাস্তা ঘাটে অসভ্যতামি করছেন ,,,,

” আহিল কেনো উত্তর না দিয়ে রাফিয়া কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে বসে ।
রাফিয়া বুঝতেই পারছে না কিছু । গাড়িতে উঠেই আহিল রাফিয়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ”

_ আমি জানি তুমি আমাকে একটু ও সহ্য করতে পারো না । আমি বর হিসেবে খুব বাজে । এখন একটু ও নড়বে না এইভাবে আমাকে থাকতে দাও । আমি ভীষন ক্লান্ত বউ । তুমি ছাড়া শান্তির জায়গা নেই আমার ।

” আহিলের এমন কথায় রাফিয়া একবারে চুপ হয়ে যায় । লোকটার এমন অধিকার বোধ রাফিয়াকে দুর্বল করে দিচ্ছে । রাফিয়া চুপ করে বসে থাকে । আহিল ওকে আরো কাছে টেনে নেয় । গাড়ির লাইট অফ থাকায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না । শুধু অনুভব করা যাচ্ছে । আহিল একটু পরেই রাফিয়াকে আবার ছেড়ে দিয়ে ঠিক হয়ে বসে । কোনো কথা না বলেই গাড়ি স্টার্ট দেয় ”

_ কোথায় যাচ্ছেন । আমাকে রেখে যান আমি কোথাও যাবো না ।

_ চুপ করে বসে থাকো । কোনো কথা না ।

_ বসে থাকবো না । আমি কোন হরিদাস পাল যে আমাকে আপনার সব কথা শুনতে হবে । আমাকে জায়গা মতো দিয়ে আসুন ।

_ চুপ থাকো বউ । আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো না ।

_ আপনাকে আমি বিশ্বাস করি না ।

_ আমি ও তোমাকে করি না । ঐদিন যা করেছো। এখনো আমার ঘাড়ে দাগ আছে ।

“রাফিয়া তাকিয়ে দেখে আসলেই আহিলের ঘাড়ে অনেকগুলো দাগ । এমনিতে আহিল সব সময় পাঞ্জাবি পড়ে তবে এখন টি শার্ট পরায় স্পষ্ট দাগ গুলো দেখা যাচ্ছে ”

_ আপনি আগে করেছেন কেনো ?

_আমি করলেই তুমি করবে নাকি ।

_ অবশ্যই ।

_ আচ্ছা তাহলে রেডি থাকো ।

_ কিসের জন্য ।

_ সময় হলেই দেখতে পাবে । এইবার চুপ থাকো ।

” রাফিয়া সত্যি ই চুপ করে থাকে । গাড়ি চলছে তো চলছেই । প্রায় অনেকটা সময় পরে । গাড়ি এসে একটা একটা সুন্দর রাস্তায় থামে । আহিল গাড়ি থেকে নেমে । রাফিয়াকে ও নামায় । রাফিয়া নেমেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে যায় । কি সুন্দর রাস্তা । দুই পাশে গাছ পালা । রাস্তার এক পাশ ধরে অনেকগুলো ল্যাম্পপোস্ট এর বাতি। যা দিয়ে পুরো রাস্তা সুন্দর ভাবেই দেখা যাচ্ছে । রাফিয়ার মনটা খুশি হয়ে যায় । আহিল জানতো এইখানে আসলে রাফিয়ার মন ভালো হবেই । রাফিয়ার পাশে এসে দাঁড়ায় আহিল তারপর শক্ত করে রাফিয়ার হাত ধরে । রাফিয়া ও কিছু বলে না । দুইজন পাশাপাশি হাঁটতে থাকে । কিছুতে দূরেই একটা চায়ের টং দোকান দেখতে পায় । দুইজনে গিয়ে সেখানে বসে । আসে পাশে অল্প কিছু মানুষ ও আছে । তবে রাফিয়া অবাক হচ্ছে এই রাত বারোটায় ও মানুষ চা খেতে বের হয় ”

_ কি ভাবছো ?

_ না ভাবছি যে । মানুষ এই রাত বারোটায় ও চা খেতে এইখানে আসে ।

_ হুম কেনো আসবে না । প্রিয় মানুষকে নিয়ে আসে । দোকানের নাম দেখো না ” প্রেম চা ” মানে হচ্ছে যারা প্রেম করে তারা এইখানে এসে চা খায় ।

_ শুধু যারা প্রেম করে তারা ই আসে । বাকিরা আসলে কি চা দেয় না ।

_ দেয় তো । আমি তো আগে একাই আসতাম । আমাকে তো দিতো ।

_ আপনি আগে ও এইখানে এসেছেন ?

_ অনেকবার । ইচ্ছে ছিলো প্রিয় মানুষ নিয়ে আসার । আজকে তা ও পূরণ হয়ে গেলো ।

” রাফিয়া অবাক হয় আহিলের এই কথা শুনে । রাফিয়া ওর প্রিয় মানুষ । এইটা ও সম্ভব । রাফিয়া আর আহিল আরো টুকটাক কথা বলে চা শেষ করে । আবার গাড়ি করে চলে আসে । পুরো রাস্তায় রাফিয়া শুধু ভেবেছে আহিল কে কি জিজ্ঞেস করবে রাফিয়া তার প্রিয় মানুষ কি না কিন্তু জড়তা কাজ করায় আর বলতে পারে না । বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায় আহিল । রাফিয়া নেমে যেতে নিবে আহিল রাফিয়ার হাত ধরে ফেলে । রাফিয়া ঘুরে তাকায় আহিলের দিকে ”

_ তুমি আর প্রিয় মানুষ । ভীষণ প্রিয় মানুষ । যাও । গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে । খুব তাড়াতাড়ি তোমায় নিতে আসবো । তৈরি থেকো বউ ( বলে রাফিয়ার কপালে একটা চুমু খায় । রাফিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে )

” আহিল চুমু খেয়ে ও দেখে রাফিয়া চোখ বন্ধ করে আছে । আহিলের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে”

_ ঠোঁটে কি একটু চুমু খেতে পারি বউ । অনুমতি কি দেওয়া যাবে ,,,

” রাফিয়া সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায় । আহিল আস্তে করে একটা ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বেরিয়ে যায় । দৌড়ে বাসায় চলে যায় । আহিল মুচুকি হেসে নিজের বাসর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ”

চলবে ,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here