হাতটা_দাও_বাড়িয়ে #অরিত্রা_অর্নি #পর্ব_৪

0
187

#হাতটা_দাও_বাড়িয়ে
#অরিত্রা_অর্নি
#পর্ব_৪
#রাজনীতি_রিলেটেড

“সন্ধ্যায় রাফিয়া আর রিপা বসে বারান্দায় গল্প করছে । এমন সময় হটাৎ ই রাফিয়ার চোখে পড়ে নিচে ওনগুলো বাইক এসে ভিড় করেছে ।রাফিয়া উঠে দাড়ায় রিপা ও সাথে সাথে উঠে ভালো করে খেয়াল করে
দেখে আহিল গেট দিয়ে ঢুকছে । রাফিয়া বেশ অবাক হয় । রিপার পা নড়ছে না কিছু একটা হতে চলেছে । রিপা রাফিয়াকে রেখেই দৌড়েই বসার ঘরে চলে যায় । এর মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠে ।

_ রিপা গিয়ে দরজাটা খুলে দে রিজন এসেছে মনে হয় ( রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলে রিপার মা )

“রিপা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না । আহিল কেনো এলো হটাৎ । রাফিয়া এসে রিপার সামনে দিয়ে দিয়ে দরজা খুলতে যায় রিপা রাফিয়ার হাত চেপে ধরে ”

_ কি করছিস তুই । দরজা খুলিস না ।

_ কেনো খুলবো না ওই মাস্তানটা কেনো এসেছে জানতে হবে না ।

” কথাটা বলে রাফিয়া দরজা খুলে দেয় । আহিল দাড়িয়ে আছে পিছনে আরো পাঁচ ছয়জন ছেলে দাড়িয়ে আছে। রাফিয়াকে দেখেই আহিল একটা মুচকি হাসি দেয় । রাফিয়া ও সোজা হয়ে দাঁড়ায় ”

_ এমন অসভ্যের মতো বেল বাজিয়ে যাচ্ছেন কেনো ? কি চাই ?

“আহিল একটু হেসে আরেকটু সামনে এসে দাঁড়ায় ”

_ চাই তো আমার অনেক কিছুই কিন্তু এখন রিজনকে হলেই চলবে ।

_ ভাইয়া বাসায় নেই ।

_ কে এসেছে রে ( পেছন থেকে এসে দরজায় সামনে দাঁড়ায় রিপার মা )

” আহিলকে দেখে তিনি কিছুটা ভয় পায় । কিন্তু প্রকাশ করে না না জানি আবার রিজন কি করেছে ”

_ আরেহ আহিল বাবা যে দাড়িয়ে আছো কেনো ভেতরে আসো ( ভয়ে ভয়ে বলেন তিনি)

_ না আন্টি ভেতরে যাবো না । রিজনকে দরকার ছিলো এই জন্যই আসা ।

_ কেনো বাবা ও আবার কি করেছে । ওকে এত বুঝাই বুঝতেই চায় না । কোনো ভুল করলে আমার কাছে বলো বাবা ওকে কিছু করোনা ।

_ না না ও কিছুই করেনি । আসলে সামনে নির্বাচন জানেন তো সব ই ।এই জন্যই ভাবলাম দেখা করে আসি ।

” রিপার না যেনো জান ফিরে পায় । রাফিয়া এখনো আহিলের দিকে তাকিয়ে আছে । নির্বাচন আবার রিজনকে খুঁজছে খালামুনি ই বা কেনো ভয় পাচ্ছে এই মাস্তানটা কে কিছুই মাথায় ঢুকছে না ”

_ আচ্ছা একটু সরবত খেয়ে যাও তাহলে । আমি সরবত করে নিয়ে আসি ( কথাটা বলে চলে যায় )

” আহিল রাফিয়াকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর সামনে তুরি বাজায় । রাফিয়া এইবার হুসে আসে । মেজাজ খারাপ হচ্ছে তাই ভেতরে চলে যেতে চায় কিন্তু আহিল রাফিয়ার হাত চেপে ধরে ”

_ কোথায় যাচ্ছো ধানিলংকা । সব সময় এইভাবে আমাকে চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দাও কেনো । এইটা কিন্তু ঠিক না । আমি জানি আমি সুন্দর তাই বলে দেখলেই নজর দিবে ।

_ আপনি সুন্দর ( তাচ্ছিল্য করে হেসে বলে রাফিয়া )

_ আচ্ছা রিপা আমি কি দেখতে সুন্দর না ?

” রিপা চমকে যায় । কি উত্তর দিবে । এই লোকতো আসলেই অনেক সুন্দর তাতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু এখন যদি বলে যে আহিল সুন্দর তাহলে রাফিয়া ওর ঘাড় মটকে দিবে আর যদি না বলে তাহলে আহিল ছাড়বে না ”

_ জি ভাইয়া আপনি অনেক সুন্দর ( আস্তে করে বলে রিপা )

_ দেখলে । আসলে কি আর বলবো তুমার হয়তো চোখে সমস্যা আছে। ডাক্টার দেখিয়ে নিও । আর এইভাবে বারান্দায় বসে থাকতে যেনো আর না দেখি ।

“কথাটা বলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে যায় আহিল । রাফিয়া জোড়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয় । রিপার দিকে রাগী রকে তাকায় ”

_ এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো । আমি কি ইচ্ছে করে বলেছি ।

_ তুই কোনো কথা বলবি না আমার সাথে ।তোরা কেনো এত ভয় পাশ বলতো । কি করবে ওই লোকটা । খালামণি ও ভয় পাচ্ছে রিজন ভাইয়ার সাথে উনার কি সম্পর্ক ।

_ উনাকে অকারণে ভয় পাই না । আমি তো বলেছি তুই আহিল ভাইকে যেমন ভাবিস উনি তেমন না । মা ভয় পেয়েছে রিজন ভাইয়ার জন্য । রিজন ভাইয়া আহিল ভাইয়ার শত্রু । এর আগে অনেকবার আহিল ভাইয়ের ক্ষতি করেছে । মা অনেক বুঝিয়েছে । যাদের সাথে মিশে এইসব করছে রিজন ভাইয়া তারা সময় মতো ভাইয়ার ই ক্ষতি করে দিবে এইটা কিছুতেই ভাইয়া বুঝতে চায় না । আবার হয়তো কিছু করেছে তো খুঁজতে এসেছে ।

” কথাগুলো শুনে রাফিয়া চুপ হয়ে যায় । রিজনকে দেখেই ওর সন্দেহ হয়েছিল । কিন্তু খারাপ তো আহিল ও । সে যদি ভালো হতো তাহলে কি মারপিট করে বেড়াতো নাকি ”

_ কি ভাবছিস ?

_ না কিছু না । আচ্ছা নির্বাচন এর কথা কি বললো রে ।

_ আহিল ভাইয়ার বাবা বর্তমানে এমপি। উনার বয়স হয়েছে এইবার নির্বাচনে তাই আহিল ভাইয়া ই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ।

_ আর রিজন ভাইয়া কেনো উনার ক্ষতি করতে চায় । কি লাভ এতে ?

_ টাকা ।( মন খারাপ করে বলে রিপা )

” রাফিয়া চুপ হয়ে যায় শুনে । টাকার লোভ মানুষকে সব কিছু করতে বাধ্য করে । রিপার মা সরবত নিয়ে এসে দেখে আহিল নেই । তাই সরবত রিপার হাতে দিয়ে আবার নিজের কাজে চলে যায় । রাফিয়া আর রিয়া নিজদের ঘরে চলে যায় ”

“একটা খোলা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে আহিল ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে রিজন ওকে ধরে রেখেছে তিনজন ছেলে ।
রিজন মুখে জঘন্য কিছু গালি দিয়ে যাচ্ছে । আহিল শুনছে কিছু বলছে না । রিজন তবুও চুপ হয় না । আহিল আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না । রিজনকে দাড় করিয়ে ওর কলার চেপে ধরে ”

_ তোকে আমি অনেক সুযোগ দিয়েছে অনেক । কেনো জানিস । মায়ের আর বোনের কথা ভেবে । কি করিসনি তুই সব আমার পিছনে লেগে আছিস । কি লাভ তোর এতে । তোর মা বোনের কথা ও তো ভাবতে পারিস । নেশা করে ঘুরে বেড়াস আর কি চাস আমার ক্ষতি আমি হেরে যাই এইটা ই দেখতে চাস কিন্তু তোর এই স্বপ্ন কি কখনো পূরণ হবে বলে তোর মনে হয় ।

_ স্বপ্ন পূরণ আমি করেই ছাড়বো । তোর ভালো আমি হতে দিবো না । তোর জন্য আমার এই অবস্থা। কি আছে তোর কি ক্ষমতা তোর জার জন্য মানুষ তোর নাম করে বেড়ায় । সহ্য হয়না আমার তোর ক্ষতি আমি একদিন করেই ছাড়বো ।

” আহিলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে রিজন । আহিল মুচকি হেসে রিজন গেল চেপে ধরে ”

_ আগে ভালো ভাবে বেঁচে থাক তারপর নাহয় আমার ক্ষতি করবি । যা তোকে আমি সবার সুযোগ দিলাম । এইবার ই শেষ । আমাকে তো চিনিস । তোকে মেরে গুম করে ফেলতে আমার এক মিনিট ও সময় লাগবে না ।

“আহিল আরো শক্ত করে রিজনের গাল চেপে ধরে । যন্ত্রণায় রিজন আর্তনাদ করে উঠে । আহিল ছেড়ে দেয় হাতটা ঝেড়ে ছেলেগুলোকে রিজনকে ওর বাড়ির সামনে পৌঁছে দিতে বলে বাইক নিয়ে চলে যায় ।সামনে নির্বাচন এখন এইসব ঝামেলা আহিল করতে চায় না তারউপর আবার মন দিয়েছে এক ধানিলংকা কে । কাটার মতো গলায় বিধে আছে । আহিল আর কিছু কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে । হাবিব আহমেদ এখনো জেগে আছে । ছেলের চিন্তায় তার ঘুম হচ্ছে না । সাথে রেবেকা বেগম ও । আহিলকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেই হাবিব আহমেদ সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে । একটা ই ছেলে তার সে চায় না ওর কোনো ক্ষতি হোক । নিজে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন আবার ছেলের ও রাজনীতি প্রতি টান দেখে কিছু বলতে ও পারেন না ।
আহিল বাড়িতে ঢুকে দুইজনকে বসে থাকতে দেখে হেসে টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ায় ”

_ এখনো ঘুমাওনি বাবা ।

_ তোর চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে ঘুমাবে কি । কতো করে বললাম ঘুমাতে যেতে শুনলো ই না ( বলে রেবেকা বেগম )

_ কি নিয়ে এত চিন্তা বাবা । আমি ঠিক আছি তো ।

” হাবিব আহমেদ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ”

_ তুমি আমার অহংকার আহিল । আমি দায়িত্ব ছাড়ছি । তুমি সেই দায়িত্ব ধরবে আর নিজের দায়িত্ব ও পালন করবে ।

” আহিল মুচকি হেসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে । টুকটাক কথা শেষ করে নিজের ঘরে চলে যায় । সারাদিন বাড়িতে ফেরা হয় না । রবেকা বেগম খাবার নিয়ে ছেলের ঘরে যায়
আহিল বিছানায় শুয়ে আছে চোখদুটো উপরে ফেনের দিকে । রেবেকা বেগম আহিলের পাশে গিয়ে বসে চলে হাত বুলিয়ে দেয় ”

_ মেয়েটাকে কবে দেখবি আমাদের ? ( হুট করেই বলে রেবেকা বেগম )

_ জানিনা মা । ও বড্ড জেদি একটা মেয়ে । ছোট । আমার এই অনুভূতি ও কখনো বুঝতে পারবে কিনা তাই জানিনা তার মধ্যে আবার রিজনের কাজিন হয় । তুলে নিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তো মা

_ তাহলে তুলেই নিয়ে আয় । আমার ছেলে কি কাউকে ভয় পায় নাকি । তবে তুলে আবার আগে ওকে তোর ভালোবাসার কথা অবশ্যই জানাবি ।

” আহিল জোড়ে হেসে দেয় । যেই মেয়ে আহিলকে সহ্য ই করতে পারে না তাকে নাকি ভালোবাসার কথা জানাবে ”

_ হাসছিস কেনো ?

_ এমনেই । অনেক রাত হয়েছে তুমি গিয়ে শুয়ে পরো ।

” রেবেকা বেগম চলে যায় । আহিল আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে । ভাবতে থাকে । কতো মেয়ে ওর জন্য পাগল হয়েছে তাদের কাউকেই আহিলের মনে ধরেনি আর যে কিনা দেখতেই পারছে না তার উপর মন চলে যাচ্ছে । এ কেমন বিচার খোদার । কিভাবে বুঝাবে সে তার অনুভূতি । প্রেমিক সে হতে পারবে না । প্রেমিক হতে গেলে অনেক কিছু করতে হয় যা আহিলের দ্বারা সম্ভব নয় তবে বর হতে পারবে । দিনে না হোক রাতে তো বউকে সময় দিতে পারবে ।
বুকে জড়িয়ে রাখতে পারবে ”

চলবে ,,

_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here