উধয়রনী #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ ||পর্ব-৬১: অন্তিম পর্বের শেষাংশ||

0
617

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৬১: অন্তিম পর্বের শেষাংশ||

১৩০।
কৃত্রিম আলোয় সুসজ্জিত হোটেলে পা রাখলো আফিফ। সম্পূর্ণ শীততাপনিয়ন্ত্রিত হোটেল, অথচ ঘামতে ঘামতে আফিফের শার্ট ভিজে গেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তার হাতে পেপার দিয়ে মোড়ানো বড় একটা ক্যানভাস। কপালের একপাশে রঙের দাগ। রাত জেগে আহির জন্য ছবি এঁকেছে আফিফ। রাতে একটুও ঘুমায় নি সে। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দুপুর বারোটায় বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই কখন যে সন্ধ্যা সাতটা বেজে গিয়েছিল, সে বুঝতেই পারলো না। কেউ একটু ডাকলোও না তাকে। এখনো কিছুই খায় নি সে। আফিফ ভুলেই গেছে সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার তার পেটে যায় নি। তাই হয়তো এখন একটু বেশিই শরীর কাঁপছে তার।

হোটেলের বড় অডিটোরিয়ামে ঢুকতেই বুকটা হুঁ হুঁ করে উঠলো আফিফের। আহি দাঁড়িয়ে আছে একপাশে। ধূসর বেগুনি রঙের শাড়ি পরিহিতা মিষ্টি হাসির মেয়েটি মুহূর্তেই আফিফের মনে তীব্র অস্থিরতা সৃষ্টি করে দিয়েছে। আগেও অনেক বার আহিকে দেখে এমন অনুভূত হয়েছিল তার। কিন্তু আজ আফিফের উপর অনেক বড় দায়িত্ব। আজ তার উপর আহিকে ভালোবাসি বলার দায়িত্ব। নয়তো সে আহিকে আর কখনো পাবে না। আর আহিকে না পাওয়ার ব্যর্থতা সারাজীবন তাকে কষ্ট দেবে। আফিফ আহির কাছাকাছি আসতেই উজ্জ্বল আহির পাশে এসে দাঁড়ালো। থমকে গেলো আফিফ। সামনে এগোনোর সাহস পাচ্ছে না সে। এদিকে উজ্জ্বল আহির হাত ধরে আহিকে নিয়ে অডিটোরিয়ামের বড় স্টেজে উঠে দাঁড়ালো। ক্যামেরা ম্যান ব্যস্ত তাদের ছবি তুলতে। আহি হাসছে উজ্জ্বলের দিকে তাকিয়ে। মিনিট খানিক আফিফ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। আহিকে কি সে সুখে রাখতে পারবে? সে কি আহির যোগ্য? এমনই সব প্রশ্ন তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। আফিফ চুপচাপ বেরিয়ে পড়লো অডিটোরিয়াম থেকে। আফিফকে চলে যেতে দেখে উজ্জ্বল বলল,
“মিস্টার আফিফ তো চলে যাচ্ছেন!”

আহির ভীষণ খারাপ লাগলো। যার জন্য সে এতোটা উন্মাদ, সেই মানুষটা একটু সাহস নিয়ে তাকে ভালোবাসি বলতে পারছে না? আহি স্টেজ থেকে নামতেই হঠাৎ বাইরে থেকে একটা কন্ঠ ভেসে এলো।

অডিটোরিয়ামের বাইরে মাইক্রোফোন রাখা। পুরো হোটেলের দেয়ালে দেয়ালে নির্দিষ্ট দূরত্বে স্পিকার বসানো। আর আহি সেই কন্ঠ অডিটোরিয়াম থেকেই শুনতে পাচ্ছে। কন্ঠটি আফিফের। আফিফ বলতে লাগল,
“আমি বরাবরই ভীতু গোছের মানুষ। আমাকে দিয়ে কিছুই হয় না। তবুও আজ অনেক সাহস নিয়ে তোমাকে এই কথাগুলো বলছি। আমার জীবনে প্রথম চিরকুট পাওয়া তোমার কাছ থেকেই। হ্যাঁ, তুমিই লিখেছিলে সেটি। সেখানে লেখা ছিল, সেই বেনামী চিরকুটের এক অজ্ঞাতনামা ভক্ত আমার প্রেমে পড়েছে। আর আমি যাতে তার একটা নাম দেই। আমি সেদিনই তার নাম রেখেছিলাম, খেয়ালী। আমার খেয়ালী। তুমি আমার খেয়াল হয়েই ছিলে, আহি। একটার পর একটা চিরকুট, এক একটা স্কেচ আমার হৃদয়ে অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি করেছিলো। বয়স খুব বেশি ছিলো না আমার। এই আঠারো-উনিশ হবে। আমার কিশোর বয়সের প্রথম অনুভূতি। একদম বোকাসোকা ছেলে ছিলাম আমি। তোমার চিরকুট পেয়ে তোমাকে এদিক-ওদিক খুঁজতাম। কখনো সামনে এসে দাঁড়াও নি। তবে ভালো লাগতো সেই চিরকুটগুলো। তুমি উত্তর পাঠানোর কোনো ঠিকানা দাও নি। তাই আমি বাসায় ফিরে নিজেই উত্তর লিখে নিজের কাছেই যত্ন করে রেখে দিতাম। ভেবেছিলাম, যেদিন তোমাকে প্রথম দেখবো, আমার সামনে বসে তুমি তোমার চিরকুটের প্রতিত্তোরে লেখা আমার চিঠিগুলো পড়বে। আর তোমার মিষ্টি হাসি দেখতে দেখতেই আমি তোমার একটা ছবি আঁকবো। আমার কিশোর বয়সের স্বপ্ন ছিল এটাই। সামনের ভয়ংকর দিনগুলো নিয়ে আমার কোনো কল্পনায় ছিলো না। এরপর শুরু হলো সেই অদ্ভুত ভয়ংকর দিনগুলো। আমি পার করেছি, তার বিনিময়ে তোমাকে হারিয়েছিলাম। আমি জানতাম না, এমন একটা দিন আমি ফিরে পাবো, যেদিন আমিই আমার মনের কথা তোমাকে জানাবো। আমার অতীত হয়তো তোমার অপছন্দের। কিন্তু তুমি আমার পছন্দের মানুষ ছিলে। শুনেছিলাম, প্রেয়সীদের শুধু অনুভবই করা যায়। আমি তোমাকে সবসময় অনুভব করেছি। তোমার চিরকুটগুলো এখনো নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। তোমার চিরকুট আর আমার উত্তরের সংগ্রহে একটা বই ছাপিয়েছিলাম। নামহীন বই। এখনো বুঝতে পারছি না, কী নাম দেওয়া যায়। তোমার ভালোবাসার কাছে আমি নিতান্তই অযোগ্য প্রেমিক। তাই নাম দেওয়ার ক্ষমতাও, রাখি নি। আমি আর বেশি কথা না বাড়াই। তোমাকে একটা কথা জানিয়ে দিতে চাই। আহি, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। সেই চারুশিল্পে পাওয়া প্রথম চিরকুটের অনুভূতি আজও বর্তমান। মাঝখানে যা হওয়ার হয়েছিল, কিন্তু তোমাকে আমি স্মৃতি থেকে কখনো মুছে ফেলি নি। হয়তো ভালোবাসা প্রকাশে বাঁধা ছিল। মানুষ যখন কোনো সমাজ শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে যায়, তখন শুধু ভালোবাসলেই হয় না। ভালোবাসার মানুষকে সমাজের সব অভিযোগ থেকে মুক্ত করে রাখতে জানতে হয়। তুমি তো সব জানো, আহি। তুমি কি আমাকে আমার অতীতের দুর্বলতার জন্য ক্ষমা করে দেবে না?আচ্ছা, তুমি কি আমার সম্রাজ্ঞী হবে? আমি ভালোবাসি তোমাকে। ভীষণ ভালোবাসি।”

আফিফ দেয়ালের দিকে ফিরে মাইক্রোফোন হাতে কথাগুলো বলে গেলো। পেছনে দাঁড়িয়ে আছে পুষ্প, লাবীব, নায়ীব, লিনাশা। সাথে দাঁড়িয়ে আছে পদ্ম। পদ্মের চোখে অশ্রু ভীড় করেছে। এদিকে আহি বেরিয়ে এলো অডিটোরিয়াম থেকে। সামনের হালকা ভীড় ঠেলে বেরিয়ে আসতেই দেখলো আফিফ দেয়ালের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে একটা ইজেলের উপর রাখা ক্যানভাস। ক্যানভাসে আহির ছবি আঁকা। ছবিটিতে আহির চোখ অশ্রুসিক্ত, ঠোঁটে মিষ্টি হাসি, পরণে সাদা শাড়ি, পেছনে সমুদ্রের ঢেউ। আফিফ পেছন ফিরতেই আহির মুখোমুখি হলো। আফিফের হৃদকম্পন বেড়ে যাচ্ছে। হাত কাঁপছে অসম্ভব ভাবে। এখন আহি যদি তাকে ফিরিয়ে দেয়? আফিফ চোখ বন্ধ করলো। বলল,
“সেদিন বৃষ্টি ছিল, তুমি কৃষ্ণচূড়ার মতো ফুটেছিলে আমার পথে।
আমি স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারি নি।
সেদিন উত্তপ্ত রোদ ছিল, তুমি অলকানন্দা সেজে এসেছিলে আবদার নিয়ে।
আমি তোমার চোখে চোখ রাখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারি নি।
সেদিন শরতের সকাল ছিল, তুমি সাদা কাশফুলের মতো বসে ছিলে আমার অপেক্ষায়।
আমি তোমার সামনে এসে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারি নি।
সেদিন কুয়াশা জড়ানো সন্ধ্যা ছিল, তুমি মিষ্টি হাসি হেসেছিলে আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি বার-বার ফিরে সেই হাসি দেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারি নি।
সেদিন বাগানে ফুল ফুটেছিল, তুমি ডেকেছিল প্রিয় অলকানন্দ বলে।
আমি খুব করে তোমাকে প্রিয় অলকানন্দা বলে ডাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারি নি।
আর আজ আকাশ মেঘলা।
তুমি ধূসর বেগুনি শাড়ি পরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো।
আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার হাতটা ধরতে চাইছি,
তোমার চোখে চোখ রেখে তোমাকে ডাকতে চাইছি প্রিয় অলকানন্দা বলে।
তোমার মুগ্ধ হাসি দেখে একটা ছবি আঁকতে চাইছি।
আর বলতে চাইছি, ভালোবাসি খেয়ালী।”

আহির চোখে অশ্রু। সে চোখ মুছে দৌঁড়ে লিফটের দিকে চলে গেলো। আফিফ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সেকেন্ডের জন্য তার মনে হলো, সে আহিকে হারিয়ে ফেললো বুঝি! পদ্ম আফিফের সামনে এসে বলল,
“তুমি আহির কাছে যেও না। ও তোমার চেয়ে ভালো কাউকে…”

লিনাশা পদ্মের হাত চেপে ধরে তাকে থামিয়ে দিলো। এরপর আফিফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“যার দৃষ্টিতে আপনি রাজা, তার কাছে আপনি শূন্য হাতেও ফিরতে পারেন। আপনার শূন্য হাত সে পূর্ণ করবে আপনার হাতে হাত রেখে। ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকা, তার হাত ধরে বাকী জীবন কাটানোর মতো বড় প্রাপ্তি দ্বিতীয় কোনোটাতেই নেই। আর যেই মানুষের এই প্রাপ্তি হয়, তার চেয়ে বেশি ধনবান কেউ হয় না। মানসিক শান্তিই সবচেয়ে বড় সম্পদ। আর ক্ষমতা দিয়ে সেই মানসিক শান্তি কেনা যায় না। এর জন্য শখের মানুষের খুব প্রয়োজন। আপনি আহির শখের মানুষ। ওকে একমাত্র আপনিই সম্পূর্ণ করতে পারবেন। আহির কাছে যান। কারো কথায় নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারাবেন না। নয়তো কষ্ট আপনাদের হবে, জয় হবে যাদের হিংসে হয়, তাদের।”

আফিফ পদ্মের দিকে এক নজর তাকিয়ে লিফটের দিকে চলে গেলো। পদ্ম লিনাশার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আর আমার ভালোবাসা কেউ দেখলো না?”

“যদি তোর মধ্যে বিন্দু পরিমাণ সততা থাকতো, আজ তুই বোরহান আলীর স্ত্রীর পরিচয়ে থাকতি না। আরো ভালো জায়গায় তোর বিয়ে হতো। আর আহি এবং তার এআরের সুখের সংসার হতো। আর আমরা চার বান্ধবীও একসাথে ভালো থাকতাম। তোর জন্য কতো সম্পর্ক নষ্ট হলো, আর কতোগুলো মানুষ কষ্ট পেলো একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ।”

১৩১।

আফিফ ছাদে উঠলো। দেখলো পুরো ছাদ খালি আর আহি একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আফিফ তা দেখে ছাদের দরজা বন্ধ করে দিলো। আহি শব্দ শুনে পেছন ফিরে আফিফের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার খুব কান্না পাচ্ছিলো। কারো সামনে তোমার জন্য কাঁদতে চাই নি। অনেক আগেই অন্য কারো সামনে তোমার জন্য কান্না করা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ আমি আমার ভালোবাসাকে দুর্বল দেখাতে চাই না। তবুও কোথাও না কোথাও দুর্বল হয়েই পড়তাম।”

এবার আহি আফিফের সামনে এসে দাঁড়ালো। তার গালে আলতো করে হাত রাখলো। এরপর তার বুক স্পর্শ করে বলল,
“তোমাকে স্পর্শ করার, তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার কন্ঠে অলকানন্দা ডাক শোনার, তোমার চোখে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখার তীব্র অপেক্ষায় আমি কতো রাত জেগেছি, কতো রাত একাকী বসে ছিলাম তার কোনো হিসেব নেই। এক একটা মিনিট আমার কাছে অনেক বিশাল বিশাল মুহূর্ত ছিল। অনেক, অনেক, অনেক বেশি অপেক্ষা করেছি। আমার মস্তিষ্ক, আমার মন কীভাবে যে তোমাতেই এতোটা আসক্ত ছিল, আমি এর কোনো উত্তর পাই নি। আমি আর উত্তর খুঁজতেও চাই না। ভালোবাসার মানুষকে বেশি অপেক্ষা করানো যায় না। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি, এআর। তোমার চেয়েও বেশি। তুমি ভাবতেই পারবে না এতোটা ভালোবাসি। আমি খুব শক্ত মনের। কিন্তু তোমার সামনে এলেই আমি পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল একটা মানুষ। তুমি আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, আফিফ। আর তোমাকে ভালোবাসা আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। কারণ আমার মতো করে কেউ তোমাকে ভালোবাসতে পারে নি, পারছে না, পারবেও না।”

আফিফ আহির হাত ধরে হাঁটু গেড়ে বসলো। বলল,
“আমি তোমাকে…”

আফিফ থেমে গেলো। আহি আফিফের সামনে বসে বলল,
“এবার ভিন্ন কিছু হোক।”

“কি!”

“আমি জানি, তুমি কি বলতে চাও। এটাও জানি তুমি কেন থেমে যাচ্ছো।”

আফিফ চোখ নামিয়ে নিলো। ইতস্তত কন্ঠে বলল,
“আমার উপর অনেক দায়িত্ব। আমার হয়তো একটা ভালো অবস্থানে যেতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে।”

“আমি তোমাকে ভালোবাসি, আফিফ। তোমার অবস্থানকে নয়। ওমন হলে, চারুশিল্প থেকে তোমার পিছু নিয়েই ফিরে আসতাম, আর কখনো তোমার দিকে ফিরে তাকাতাম না। তুমি সেখানে রাখলেও কিন্তু আমি ভালো থাকবো। কারণ আমি শুধু তোমাকে চেয়েছিলাম। এবার তো বলো!”

“আমাকে বিয়ে করবে, আহি?”

আহি মুচকি হাসলো। তার চোখে আনন্দাশ্রু। সে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো। তখনই শুরু হলো বৃষ্টি। আহি মেঘেদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আজ কি আমি একা ভিজবো?”

আফিফ আহির কোমড় জড়িয়ে তাকে নিজের কাছে টেনে আনলো। দু’জন অনেকটা কাছাকাছি। তাদের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। সাথে বাড়ছে বৃষ্টির বেগ। আফিফ এবার আহির কপালে কপাল ঠেকালো। আলতো করে আহির অধর স্পর্শ করলো। এরপর তার গালে হাত রাখলো, তার খোঁপাটাও আলগা করে দিলো। আহি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আফিফকে। আফিফ মুখ গুঁজলো আহির ঘাড়ে। অদ্ভুত উন্মাদনা চড়েছো দু’জনের মনে। যেই উন্মাদনার সাক্ষী হতে হতেই হলো না বর্ষার বারিধারা। আফিফ মুখ ফিরিয়ে নিলো আচমকা। আহিও সরে গেলো সাথে সাথেই। বৃষ্টিতে শাড়ি ভিজে গেছে তার। উঠে দাঁড়ালো সে। ছাদের পিলারে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো আহি। আফিফও উঠে দাঁড়ালো৷ বেশ খানিকক্ষণ বাদে আফিফও পিলারের অন্য পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। দু’জনই চুপ। নিরবতা কাটলো আফিফের ফোন বেজে ওঠায়। আফিফ দেখলো স্ক্রিনে রেনুর নাম ভেসে উঠেছে। কল ধরতেই রেনু বলল,
“ভাইয়া, ছাদের পাশের রুমে জামা চেঞ্জ করে আহির বাড়িতে চলে এসো আহিকে নিয়ে।”

আফিফকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রেনু কল কেটে দিলো। এরপর আফিফ ছাদের দরজা হালকা খুলতেই দেখলো লাবীব আর পুষ্প বাইরে দাঁড়ানো। পুষ্প আফিফকে দেখে লাবীবকে কনুইয়ের গুঁতো মেরে অন্যদিকে ঘুরলো। লাবীব হালকা হেসে বলল,
“এভাবে ভেজা কাপড়ে বাসায় তো যাওয়া যাবে না। কাপড় চেঞ্জ করে নিন। আমরা নিচে নেমে যাচ্ছি। ক্যামেরা অফ করে দিয়েছে আপতত। গাড়ি নিচে আছে। আমাদের তাহলে আহির বাসায় দেখা হচ্ছে!”

কথাগুলো বলে লাবীব পুষ্পকে টেনে নিয়ে গেলো লিফটের দিকে। আফিফ বেশ অবাক হলো, সাথে ভীষণ লজ্জায়ও পড়েছিল। সে এবার ছাদের গেট হালকা লাগিয়ে পাশের রুমে এসে দেখলো আহি আর তার জন্য জামা রাখা। আফিফ রুম থেকে বেরিয়ে আহিকে ডাকলো। আহি আফিফের সামনে এসে দাঁড়াতেই আফিফ চোখ সরিয়ে নিলো। আহিও অন্যদিকে ঘুরে বলল,
“সরি। আজ সবকিছু উল্টাপাল্টা লাগছে আমার কাছে।”

আফিফ বলল,
“পাশের রুমে গিয়ে ভেজা শাড়িটা চেঞ্জ করে এসো।”

আহি ছাদ থেকে বেরিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো। দেখলো তার জন্য সাদা রঙের সাদাসিধে একটা গাউন রাখা আছে। আহি সেটা পরে বেরিয়ে আসতেই আফিফ রুমে ঢুকলো। আফিফের ইতস্ততভাব দেখে বেশ মজা পেলো আহি। এতো লাজুক মানুষ! এমন মানুষই তো আহির পছন্দ। না এমন মানুষ নয়, তার তো আফিফকেই পছন্দ। আফিফ খুব তাড়াতাড়ি জামা চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলো। এরপর দু’জনই নিচে নেমে এলো। গাড়ির কাছে আসতেই অবাক হলো তারা। গাড়িটি কাঠগোলাপ আর অলকানন্দা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। আহি আর আফিফ তা দেখে মুচকি হাসলো। একে অপরের দিকে তাকালো। আহি আফিফকে সেই সুযোগে আপাদমস্তক দেখে নিলো। সাদা স্যুটে বেশ মানিয়েছে তার এআরকে। আহির ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দিতেই তারা গাড়িতে উঠে বসলো। আহি আফিফের হাত আলতো করে স্পর্শ করলো। আফিফ আহির স্পর্শ পেয়ে মুচকি হাসলো। আহি অনেকক্ষণ পর ভ্রূ কুঁচকে আফিফের দিকে তাকিয়ে আফিফের বাহুতে ঘুষি মেরে বলল,
“একদম আনরোমান্টিক ছেলে একটা! ওহ সরি। ছেলে না, আনরোমান্টিক লোক একটা!”

আফিফ মুচকি হাসলো। আহির আরেকটু কাছে এসে বসলো। তার দিকে ঝুঁকে তাকালো আফিফ। আহি অভিমানী মুখে বলল,
“তুমি একটা নিস্ক্রিয় পদার্থ। তোমাকে সুড়সুড়ি না দিলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকো।”

আফিফ কপাল চুলকে বলল,
“কি করবো! একটু সময়…”

আহি আফিফকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আরো দশ বছর পরও তোমার একটু সময় লাগবে?”

আহির মান-অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতে গাড়ি পৌঁছে গেলো আহির হোয়াইট প্যালেসে। বৃষ্টি এখন কমেছে। আহি গাড়ি থেকে নেমেই আফিফের হাত ধরে ভেতরে চলে এলো। তারা ভেতরে ঢুকতেই রেনু, লিনাশা, পুষ্প তাদের গায়ে ফুল ছিটিয়ে দিতে লাগলো৷ একপাশে পদ্ম দাঁড়িয়ে আছে। আফিফের চোখ তার দিকে পড়তেই রেনুও ভাইয়ের চোখ অনুসরণ করে সেদিকে তাকালো। সে পদ্মকে আড়াল করে দাঁড়াতেই আফিফের চোখ পড়লো তার দিকে। রেনু চোখের ইশারায় আফিফকে আশ্বস্ত করলো। আফিফ এবার আহির দিকে তাকালো। বাসায় ঢুকতেই ওয়াসিফ দৌঁড়ে এসে বলল,
“হোয়াইট হোয়াইট আন্টি, তুমি তো দেখছি হোয়াইট কুইন হয়ে গেছো! আর মামাকে তো হোয়াইট কিং মনে হচ্ছে।”

আহি ওয়াসিফের থুতনি ধরে বলল,
“আর তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ব্লু প্রিন্স।”

“সত্যি?”

“হ্যাঁ।”

“আচ্ছা, হোয়াইট হোয়াইট আন্টি! তোমার সাথে কি মামার বিয়ে হবে?”

আহি আফিফের দিকে তাকালো। আফিফ মুচকি হেসে চোখ নামিয়ে নিলো। লিনাশা ওয়াসিফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, মিস্টার ব্লু প্রিন্স। তোমার মামার আর তোমার হোয়াইট হোয়াইট আন্টির আজ বিয়ে। এখন তুমি চুপচাপ ভদ্র বাচ্চার মতো বিয়েটা দেখো।”

ওয়াসিফ মাথা নেড়ে বলল,
“হুম, হুম মজা হবে। আমার জিনি আর বেস্ট মামা একসাথে থাকবে। ওয়াও, আমি তো অনেক মজা করবো।”

এবার সালমা ফাওজিয়া এসে আহির কপালে চুমু খেলেন। ভেজা কন্ঠে বললেন,
“আমার অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। তোমাকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দেওয়ায় আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল। যেই ছেলেটা আমার মেয়েকে রানী বানিয়ে রাখবে। যেমন সে আমার চোখে রানি হয়ে ছিল।”

সালমা ফাওজিয়া এবার আফিফের দিকে তাকালেন। আফিফ ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। আফিফা বেগম এবার আহির সামনে এসে দাঁড়ালেন। বললেন,
“তোমাকে তো অনেক আগেই আমার পছন্দ হয়েছিল। তোমার মিষ্টি কথাগুলো এতো ভালো লেগেছে! আফিফকে তোমার কথা রোজ বলতাম। একটা মায়ের প্রশান্তি এখানেই। তার ছেলেকে কেউ অসম্ভব ভালোবাসুক। আমার হীরার টুকরাকে যদি কেউ এতোটা ভালোবাসতে পারে, সেই মেয়ের সাথে আমার ছেলে সারা জীবন সুখী হবে, এটা আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি। আমার দোয়া, তোমরা অনেক সুখী হও। তোমাদের জীবনে আর কোনো কালো ছায়া না আসুক।”

পদ্ম আফিফা বেগমের কথায় মাথা নিচু করে নিলো। আজ আহি আর আফিফের বিয়ে। খুব সাদামাটা আয়োজন। আর রাতের খাবারের আয়োজন আহির হোয়াইট প্যালেসেই হচ্ছে। আহির মাথায় লাল ঘোমটা পরিয়ে মুখ পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছে রেনু। এরপর আহি আর আফিফকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। একজন হুজুর এসে তাদের বিয়ে পড়াচ্ছেন। কবুল বলতে বলা হলো আহিকে। আহি চোখ বন্ধ করে তিন বার কবুল বললো। এরপর আফিফ এক নিঃশ্বাসে খুব দ্রুত তিন বার কবুল বললো। বিয়ের কাগজে স্বাক্ষর করলো দু’জনই। বিয়ে শেষ হতেই সবাই দু’হাত তুলে মোনাজাত করলো। আহি কাঁদছে। আফিফও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছে। আহির ফুঁপানো কান্নার শব্দ সবার কানে এসে ঠেকলো। আফিফ আহির হাত ধরে মাথা নিচু করে রাখলো। এরপরই লিনাশা আহিকে নিয়ে উপরে চলে গেলো। নায়ীবও আফিফের পাশে এসে বসলো। তার কাঁধে হাত রেখে বলল,
“মেয়েটা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি জানতাম, ও তোমাকে কখনোই ভুলতে পারবে না। আমার কাছে অনেক পেশেন্ট এসেছে। সবার এক এক ধরণের গল্প। কিন্তু আহির গল্পটা সবচেয়ে ভিন্ন। ওর মতো ভালোবাসার মানুষ পাওয়া অনেক বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার। আজ তুমি একটা ভালো কাজ করেছো, আফিফ। যদিও অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষটা তো ভালোই হলো।”

(***)

অন্ধকার রাত। আকাশে হালকা মেঘ ভাসছে। মোম দিয়ে সাজানো হয়েছে সমুদ্র সৈকতের কিছু অংশ। হাওয়ার তালে মোমগুলো নিভে যাওয়ার উপক্রম। আহি সাদা শাড়ি পরে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে বালির উপর। চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের আর্তনাদ উপভোগ করছে সে। আফিফের হাতে একটা মোম। সে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো আহির দিকে। আহি পিছু ফিরতেই তার পিঠ ঠেকলো আফিফের বুকে। আফিফ তার কোমড়ে হাত রেখে তার থুতনি আহির কাঁধের উপর রাখলো। আহি ফুঁ দিয়ে আফিফের হাতে থাকা মোমটি নিভিয়ে দিয়ে বলল,
“অল্প সময়ে কতো কিছু হয়ে গেলো!”

“হুম। তোমার বান্ধবীরা করেছে এসব?”

“হুম, লিনু তো জানে আমার স্বপ্ন কি!”

আফিফ এবার আহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“আর কি কি স্বপ্ন তোমার?”

“আছে অনেক।”

“বলো না!”

“কেন জানতে চাচ্ছো?”

“আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করবো। যতোটা কষ্ট দিয়েছি, তার চেয়ে দ্বিগুণ ভালোবাসা ফিরিয়ে দেবো।”

আহি মুচকি হাসলো। আফিফের দুই গালে হাত রেখে বলল,
“জানো, আমি সৃষ্টিকর্তার যা-ই চেয়েছি, তাই পেয়েছি। উনি তার বান্দাদের সব ইচ্ছে পূরণ করেন। একটু দেরীতে দিয়েছেন, তবুও অসম্ভব চমৎকার একটা মুহূর্ত দিয়েছেন। তোমাকে ফিরে পাওয়াটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।”

“আমার তো এখনো বিশ্বাসও হচ্ছে না, আমি আমার খেয়ালীকে বাস্তবে ফিরে পেয়েছি। আমার কাল্পনিক প্রাক্তন!”

আফিফ হাসলো। আহিও হেসে বলল,
“কাল্পনিক প্রাক্তনের সাথে বিয়ে, বিষয়টা চমৎকার না?”

“আমাদের গল্পটাই অদ্ভুত সুন্দর, তাই না?”

“অদ্ভুত বলতে ভীষণ অদ্ভুত। ট্রাস মি, আফিফ, আমি হয়তো স্বপ্ন দেখছি। আমাকে একটা চিমটে দাও তো।”

আফিফ হাসলো। আহির গালে হালকা কামড় বসিয়ে দিয়ে দুষ্টু হাসি হেসে বলল,
“স্বপ্নটা কেমন ছিল, হুম?”

আহি আফিফের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“তাই বলে কামড় দেবে?”

“ব্যথা লেগেছে না-কি?”

আহি ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“না। আচ্ছা চলো খেয়ে নেই। তুমি সারাদিন কিছু খাও নি।”

“তোমাকে কে বলেছে?”

“রেনু।”

এবার আহি আফিফের হাত ধরে তার পাশে বালির উপর বিছিয়ে রাখা মাদুরে এসে বসলো। বাকিদের খাওয়া-দাওয়া আহির হোয়াইট প্যালেসে হলেও, আফিফ আর আহির রাতের খাবার আলাদাভাবে এখানে সাজানো হয়েছে। কারণ আহির স্বপ্ন ছিল বিয়ের প্রথম রাত সমুদ্রের ঢেউ দেখে, আর সেই ঢেউয়ের আছড়ে পড়া গর্জন শুনে কাটাবে। এদিকে আহি পাশ ফিরে সমুদ্রের ঢেউ দেখছে। আর আফিফ যত্নের সাথে আহির প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে। আহির মনোযোগ সেদিকে পড়তেই সে আফিফের হাত থেকে চামচ নিয়ে বলল,
“ইশ, দেখো তো, কেমন বউ আমি! আমার বর সারাদিন না খেয়ে আছে, আর আমি আত্মভোলা হয়ে আছি।”

আহি আফিফের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার মেখে আফিফের মুখের সামনে ধরলো। আফিফ আহির দিকে তাকালো। আহি বলল,
“যখন আমরা চারুশিল্পে পড়তাম, আর তুমি এক্সিডেন্ট করেছিলে, তখন আন্টি, আই মিন আম্মু বলেছিল তোমার না-কি খাইয়ে দিলে পেট ভরে যায়। আমি এখন থেকে তোমাকে খাইয়ে দেবো।”

“প্রতিদিন?”

“তোমার অফিস টাইমে তো সম্ভব না।”

“তুমি খাইয়ে দিলে, আমি ব্রেক নিয়ে বাসায় চলে আসবো।”

“আমিও যেতে পারি অফিসে।”

“তোমার কাজ থাকলে আমি তোমার অফিসে খাবার নিয়ে চলে যাবো।”

“বাহ! আমার হাতে খাওয়ার এতো শখ?”

আফিফ আহির গাল টেনে দিয়ে বলল,
“কিছু শখ দেরীতে পূরণ হয়। আর অনেক কষ্টে ফিরে পাওয়া কোনো কিছুর মূল্য অনেক। আমার কাছে এই শখের মূল্য অনেক বেশি। আমি তো সব কাজ ফেলে বাসায় চলে আসবো।”

আফিফ আর আহির খাওয়া-দাওয়া শেষ হলো। আহি আফিফের কাঁধে মাথা রেখে বসলো। হঠাৎ আহি অনুভব করলো তার গায়ে হালকা বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। আহি চোখ খুলতেই আফিফ বলল,
“বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে হয়তো।”

আহি বলল,
“বর্ষার মাসে বিয়ে করার এটাই সৌন্দর্য। যখন-তখন রোমান্টিক মুহূর্ত সৃষ্টি হয়ে যায়।”

আফিফ আর আহি উঠে দাঁড়ানোর আগেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। আহি আর আফিফ ব্যস্ত হাতে খাবারের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো। পাশেই তাদের কটেজ। এদিকে তীব্র হাওয়া দক্ষিণ দিক থেকে ধেয়ে আসছে। আহির শাড়ি আঁচল উড়ছে হাওয়ায়। হঠাৎ আফিফ আহির হাত ধরলো। আহি আফিফের দিকে ফিরে তাকালো। অদ্ভুত উন্মাদনা আফিফের দৃষ্টিতে। আহিও হারিয়ে যাচ্ছে সেই চোখের গভীরে। আফিফ বলল,
“তোমার অসম্ভব চমৎকার রূপ দেখেছি বর্ষায়। তোমার হাসি সুন্দর, তোমার ভালোবাসা সুন্দর, তোমার অশ্রুসিক্ত চোখ সুন্দর, তোমার অভিমান সুন্দর। তুমি বর্ষার জন্যই সৃষ্টি হয়েছো, উধয়রনী।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে বললো, “উধয়রনী?”

“তুমি তো এতো বছর রানী হয়ে ছিলে, এবার আমার সম্রাজ্ঞী হয়ে থাকবে। যেই সম্রাজ্ঞী কখনো হেরে যায় না। সে সফল হয়। যার প্রতিটা ইচ্ছে পূরণ হয়। ভবিষ্যতেও পূরণ হবে।”

বৃষ্টির বেগ বাড়লো। আফিফ আহির হাত ধরে দৌঁড়াতে লাগলো কটেজের দিকে। দু’জনই হাসছে। চমৎকার সেই হাসির শব্দ। সেই শব্দে আলোড়ন তুলছে সমুদ্র পার। কটেজের ছাউনির কাছে আসতেই আফিফের বুকে ঝাপ্টে পড়লো আহি। ভিজে গেছে দু’জনই। মুখে পানির বিন্দু বিন্দু কণা। দু’জনেই হাঁপাচ্ছে। আহি আফিফের কপালে কপাল ঠেকিয়ে নিজেকে শান্ত করলো আর বলল,
“নামটা ভীষণ সুন্দর। আরেকবার আমাকে সেই নামে ডাকবে, এআর?”

হাওয়ার ঝাপ্টা তাদের শরীরে এসে লাগছে। তাদের সেদিকে খেয়াল নেই। আহি ব্যস্ত আফিফের কন্ঠে নতুন সম্বোধন শোনায়, আর আফিফ ব্যস্ত তার খেয়ালীর ছোট্ট মিষ্টি আবদার পূরণ করায়।

আফিফ আহির মিষ্টি আবদারের প্রতিত্তোরে মুচকি হেসে বলল,
“আমার সাদাসিধে জীবনে আমি তোমার সম্রাট আর তুমি আমার উধয়রনী।”

আহি বলল,
“এতোদিন শূণ্য ছিলাম, এবার পূর্ণ হলাম। এবার শুরু হবে এআর আর তার উধয়রনীর মিষ্টি সংসার।”

#সমাপ্ত

(কেমন লাগলো সমাপ্তি? ইনশা আল্লাহ ওদের সংসার নিয়ে গল্পটা খুব শীঘ্রই শুরু করব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here