রাঙিয়ে_দাও #পর্ব-(৩) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
298

#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব-(৩)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

বিগত দু’দিন ধরেই কলেজ যাচ্ছে না প্রান্তি।শান্ত বাঘকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে সে।বিধায় দ্বিধাদন্ড আর ভয়ে কলেজ যেতে পারছে-না ।কেননা বাড়িতে রাজত্ব তার চললে-ও কলেজে যে ওই মানুষটার রাজত্ব চলবে।সেখানে তাঁকে বাঁচাবে কে?বিধায় আজ দু’দিন পেটব্যথা আর মাথা ব্যথার বাহানা করে কলেজ মিস করেছে ।বাড়ির মানুষ তো আর জানেনা সে রাগের বশিভূত হয়ে কি অকাজটা করে ফেলেছে।কাওকে বলতেও তো পারবে-না আবার কতোদিন এরকম বাহানা দিয়ে কলেজ মিস করবে সেই ভাবনায় গভীর ডুবে আছে সে।ভেবে ভেবে অস্থির হয়েই চলেছে।পুরো সুস্থ মানুষ সে আজ আবার কি বাহানা দিয়ে কলেজ মিস করবে?যদি-ও কলেজ মিস করাটা তার একটুও ভালো লাগছেনা।তারজন্য আবিশাও যাচ্ছে না।গভীর ভাবনার মাঝেই হাতে থাকা ফোনের স্কিন লাইট জ্বলে উঠতেই সেদিকে নজর দিলো প্রান্তি ।আবিশা মেসেজ করেছে।

—কিরে আজ-ও কলেজ যাবিনা নাকি?

ক্ষীন সময় নিল প্রান্তি।ফের রিপ্লাই করলো–দেখছি কি করা যায়।

—আচ্ছা তুই যে কলেজ যাচ্ছিস না।প্রহান ভাইয়া কিছু বলছেনা।তিনি তো এরকমটা মেনে নেওয়ার পাত্র নন।

—সেটাই তো দেখছি।আজ দু’দিন তো কিচ্ছু বললেননা।এমনকি আমার বিষয়ে কিছু বলার থাকলে আগে বড় আম্মাকে বলেন।বড়আম্মা সেটা আমাকে বুঝিয়ে বলেন কিন্তু উনার কথার ধরন শুনলে আমি বুঝতে পারি কথা টা কে বলেছে।বড়আম্মার মুখে কার বসানো কথা।কিন্তু আজ দু’দিন সেরকম কোনো কথা তো বড়আম্মা বলেন নি আমাকে।তবে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে বড় আম্মার সাথে তার কিছু একটা হয়েছে।হা, হু, হুম ছাড়া সেভাবে দু’জনে কথা বলতেতো শুনছিনা।বুঝতে পারছি না মা ছেলের মধ্যে হয়েছেটা কি?কেনো যে রাগের বশিভূত হয়ে উল্টো পাল্টা করতে গেলাম।কিন্তু আমার এখন কি মনেহচ্ছে জানিস,নিশ্চয় মানুষটা আমার কলেজে যাওয়ার অপেক্ষা করছে।এজন্য বাড়িতে বড় আম্মাকে কিছু বলছেনা।কারন বড়আম্মা বরাবরই আমার পক্ষ নেয়।

—তুই বেশি ভাবছিস।আবোল তাবোল কথা কাজ করে কম তো জ্বালাস না উনাকে।তবু-ও তো কখনোই কিছু বলতে শুনলাম-না।দেখলামও তো না। আর বাড়ির রাগ কলেজে গিয়ে উঠাবে এমনটা প্রহান ভাইয়া নন।

কথা সত্য হলে-ও মানতে নারাজ প্রান্তি।বাড়িতে তাঁকে যথেষ্ঠ সহ্য করে মানুষটা।যেটা মানুষটার পছন্দ নয় সেটা তো বরংবার তার সামনে করতে থাকে সে।অথচ আদ্রনিদ্র নজরের আড়ালে করলেও বকা খায়।অবশ্যই বকা খাওয়ার আগে প্রহান মাহমুদের শান্ত নজরের তাকানোতে দুটো এমনিতেই বরফ হয়ে যায়।তবে তাঁকে কখনো বকে-ও না, রাগ-ও দেখায় না।কিন্তু তারজন্য বড়আম্মা কে কথা শোনাতে ছাড়ে-না মানুষটা।সবার সামনে না বললেও সবার অগোচরে ঠিকই তাকে নিয়ে বড়আম্মাকে কথা শোনায়।এটা সে জানে-ও এবং শুনেছেও।

—কি হলো চুপ আছিস কেনো?কি করবি?ভাইয়া কিছু বলবেনা।চল-না কলেজে যাই।একটা ইস্যুর জন্য আর এভাবে কতোদিন ক্লাস মিস করবি?আজ না হলে-ও কাল যেতে তো হবেই।

মানুষটা ক্লাস না নিলে অবশ্যই কলেজে যেতো প্রান্তি।কলেজ মিস সে করতো না সে।কিন্তু মানুষটা সেদিন যে বললো তিনি অন্য স্যারের পরিবর্তে কয়েকদিন ক্লাস নেবে।এটাইতো সমস্যা।তবু্ও আবিশাকে সান্ত্বনা সরূপ লিখলো–দেখছি কি করা যায়!আমি গেলে অবশ্যই তোকে বলবো।আর তা না-হলে তুই চলে যা।

—এটা কোনো কথা হলো।আমার জন্য সমস্যাটা তৈরি হলো।আর সেই আমি তোকে ফেলে নাচতে নাচতে কলেজ চলে যাবো।আর এমনিতে-ও স্কুলে থাকতে কখনো তোকে ছাড়া ক্লাস করেছি নাকি গিয়েছি কখনো?যে আজ যাবো।তুই ছাড়া স্কুলে যেতেও ভালো লাগতোনা।ক্লাস করতেও ইচ্ছে করতো না।সেই আমি তোকে ছাড়া কলেজে যাই কি করে।তোকে ছাড়া যেতে ইচ্ছে করেনা।

আবিশার আবেগপ্রবণ কথাগুলো পড়তেই মন খুশীতে উৎফুল্ল হলো প্রান্তির।বাড়ির সবার মতো মেয়েটা-ও তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।সে লিখল।-আচ্ছা ঠিক আছে।
এতো সেন্টি মারিস না।দেখি কি করা যায়!তবে তুই রেডি থাকিস।কলেজে গেলে তোকে নক দিয়ে জানিয়ে দেবো।

—দেখ বড়আম্মাকে দিয়ে প্রহান ভাইকে বলে মানানো যায় কি-না ।খুব ক্ষুধা লেগেছে।এখন খেতে যাবো।আর এমনিতেও আম্মু ডাকছে।আল্লাহ হাফেজ জানু।

—আল্লাহ হাফেজ।

আবিশার শেষের কথাটা মনে ধরলেও।মা ছেলের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে ভাবতেই মনটা আবার-ও মিইয়ে গেলো প্রান্তির।মন খারাপ করে নিজের রুম থেকে বের হয়ে চারপাশটা দেখে নিল সে।দুই মামি টেবিলে খাবার গোছাগোছ করছেন।আদ্র-নিদ্রের স্কুল সাড়ে আটটায় হওয়াতে তারা চলে গিয়েছে।মামারা এখনো যে যার রুমে অবস্থান করছেন।আর ছোটো মামার সকাল হবে বেলা এগারোটায়।ড্রয়িংরুমে আপতত কেউ নেই।ভাবুক মনে সেখানে গিয়ে বসল প্রান্তি।তবে নজর তার সিঁড়ির দিকে।দোতলার কর্নারের রুমের দরজার শব্দ হতেই সে এখান থেকে উঠে যাবে।হঠাৎ মাহবুবা বেগমের কথাতে দৃষ্টি তারদিকে ফিরালো প্রান্তি।

—কিরে আজও কলেজে যাবিনা নাকি?

.

–আজ কোনটা করছে আমাদের প্রানোরানির মাথাব্যথা নাকি পেটব্যথা।

মাহবুবা বেগমের প্রশ্নে আমতাআমতা করে কিছু বলতে যাবে প্রান্তি।তার আগেই উচ্ছলিত নারী কন্ঠের বার্তা শুনতেই পিছনে ফিরলো সে।আদূরে পরিচিত মুখটা দেখেই তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। ফের দৌড়ে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললো।–আরেহ বুবুমনি তুমি কখন এসেছো?কেমন আছো তুমি?তোমাকেই তো প্রয়োজন এখন আমার।

প্রজ্ঞা হেসে প্রান্তিকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বললো।-এইতো আসলাম মাত্র।আর আমি সপ্তাহ অন্ত আসি।রোজ ফোনে কথা হচ্ছে তবুও ভালো মন্দটা বলতেই হবে?তবুও বলছি আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি।

প্রজ্ঞাকে ছেড়ে দাঁড়ালো প্রান্তি।ফের বললো—আমাদের পুতুল রানি কোথায়?তাঁকে নিয়ে আসোনি।

—না!এখন ওর স্কুল টাইম ভুলে গেলি।ওকে স্কুলে দিয়ে এখানে চলে এলাম।

প্রান্তির সাথে কথার মধ্য মা ও চাচির সাথেও ভালোমন্দ কথা সেরে নিলো প্রজ্ঞা।ফের গায়ের বোরকা খুলে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসতেই প্রান্তি বললো–আমার পেটব্যথা মাথাব্যথার খবর তোমাকে কে দিলো বুবুমনি?

প্রজ্ঞা মৃদু হাসলো।ফের প্রান্তির নাক টেনে ধরে বললো।
–ইট’স ম্যাজিক।আমি সব জানি।আর এটাও জানি এই ব্যথা-বেদনা সব সব আমাদের প্রানোরানির কলেজে না যাওয়াার বাহানা।

প্রজ্ঞার কথায় মূহুর্তেই মুখ গোমরা করলো প্রান্তি।ফের অভিমানী স্বরে বললো–আর এই কলেজে না যাওয়ার বাহানাটা কেনো করছি।এটা জানো-না।

–জানিতো।আগের দিনতো ফোনে নালিশ করলি সেটা!আচ্ছা তখন আসতেই বললি আমাকেই তো প্রয়োজন তোর এখন।কেনো?

গোমরা মুখ হঠাৎই উচ্ছলতায় ভরে উঠলো প্রান্তির।এই বাড়িতে বড় আম্মার পরে এই বুবুমনি নামক মানুষটার সাথে প্রাণখোলা আর সহজ ওই মানুষটা।বড়আম্মার সাথে মানুষটার কি হয়েছে তার জানা নেই।তবে তাদের কথাবার্তায় প্রান্তি বুঝতে পারছে কিছু একটা অবশ্যই তো হয়েছে।যারজন্য মা আর ছেলের মধ্যে অভিমান চলছে।এখন বড়আমম্মাকে দিয়ে মানুষটাকে মানানোর জন্য বলা উচিত হবে-না।তবে কাকে দিয়ে বলাবে?তার অতি ভাবনার মধ্যে বুবুমনিকে দেখেই চোখ জ্বলজ্বল করে উঠেছে।তাই সে কথাটা বলেছে।

—এতো কি ভাবছিস?কি হলো বল?

—বুবুমনি তোমার ভাইটাকে একটু মানাও না।তারজন্য আমি আর আবিশা কলেজ যেতে পারছিনা।আমি রাগে যে অকাজটা করেছি তারজন্য জেনো সে আমাকে কলেজে একা পেয়ে না বকে।

প্রজ্ঞার মুখে দুষ্ট মিষ্টি হাসি।সে সোফায় আরও ভালো করে হেলান দিয়ে বসল ফের বললো—আমাদের প্রানো রানি এতটা ভিতু হলো কবে থেকে?যে এবাড়ির বাঘকে দমিয়ে রাখে তার মুখে একথা মানায়?

—এজন্য বলেছিলাম আমি তোমার ওই প্রফেসরগীরি ভাইয়ের কলেজে ভর্তি হবোনা।তখন কেউ শোনোনি আমার কথা।এখন সব জ্বালা আমার!

প্রান্তির কথাগুলো শুনে মুখের দুষ্ট মিষ্টি হাসিটা আরও একটু প্রসারিত হলো প্রজ্ঞার।ফের বিড়বিড়িয়ে বললো।
—সত্যিই জ্বালাটা তোর!তাই পোহাতেও তোকে হবে!

—কিছু বললে?

—কিছু নাহ।আচ্ছা ঠিক আছে, মন খারাপ করিস-না।আমি দেখছি।সকালে খেয়েছিস?

—নাহ!খেতে মন চাইছেনা।ভালো লাগছেনা কিছু!

—খেয়ে, কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নে।আমি প্রহানকে দেখছি…

কথা শেষ করার আগেই প্রজ্ঞাকে দু’হাতে শক্তকরেই জড়িয়ে ধরলো প্রান্তি।সে জানে বুবুমনি বললেই মেনে যাবে ওই কাঠখোট্টা মানুষটা।কারন বুবুমনিকে যে ওই মানুষটা বড়আম্মার মতো খুবই ভালোবাসে।খুব সম্মান করে আর মানেও।

—আই লাভ ইউ বুবুমনি।আমি তোমাকে এত্তো- এত্তো ভালোবাসি।

হাত দু’দিকে প্রসারিত করে বাচ্চাদের ন্যায় কথাটা বলতেই প্রান্তির কপালে আদরের ছোঁয়া বসালো প্রজ্ঞা।ফের দুষ্টু হাসিটা ঠোঁটের কোণে টেনে এনে বললো।–সে তুই আমাকে যতোই ভালোবাসিস না কেনো।আমি সবসময় দোয়া করি ভাইয়ের মতো তোর জেনো একটা বর হয়।যাকে সামলাতে সামলাতে তোর জান যাবে।আর তখন এই বুবুমনিকে স্মরণ করবি।

কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো প্রজ্ঞা।মুখে তার দুষ্টমিষ্টি হাসিটা লেগেই আছে।প্রান্তি ক্ষেপে গিয়ে কিছু বলার আগেই সেখান থেকে কেটে পড়লো সে।এখন প্রহানের গুনাগুনসহ গুষ্টি উদ্ধার করবে প্রান্তি।যা প্রজ্ঞার জানা।আর যে কারনে প্রান্তি ভয় পেয়ে কলেজে যাচ্ছে-না সে কারনটা কোনো কারনই নয়।তারজন্যই তো সকাল সকাল এবাড়িতে পদার্পণ তার।

.

ভিড়ানো দরজা ঠেলে প্রহানের রুমে উঁকি দিলো প্রজ্ঞা।
প্রহান কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।রেডি হচ্ছে কি প্রায় রেডি হয়ে গেছে।গলায় শব্দ করে প্রহানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো প্রজ্ঞা।প্রহানও গলার শব্দ পেতেই পিছু ফিরলো।প্রজ্ঞাকে দেখেই গম্ভীর মুখে মৃদু হাসি ফুটলো তার।সে হাসিতে অমায়িক দেখালো পুরুষালী মুখের উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ আদলখানা।সেটা দেখেও প্রজ্ঞার মুখে হাসি ফুটলো।প্রহান বললো–তুমি এসেছো তবে?বাহিরে দাঁড়িয়ে কেনো ভিতরে এসো।

প্রজ্ঞা ধীর পায়ে প্রহানের পারিপাটি করে রাখা শান্ত পরিবেশের ঘরটায় ঢুকলো। ঘরের চারদিকে একবার নজর বুলিয়ে ফের মজার ছলে বলল।–আসতেই হলো। তোর ঘর গোছানোর জন্য।আগের দিন যে ভিডিও কলে দিয়ে অভিযোগ করলি দেখালি-ও।যে দেখো বুবুমনি তোমার মায়ের আদুরে বিড়ালটা আমার রুমের অবস্থাটা কি করেছে!আর এই নিয়ে তোমার মায়ের আদূরে বিড়ালটাকে কিছু বললেই তোমার মা আমার উপর ক্ষেপে যাবে, অভিমান করবে।

একটু থেমে মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে ফের প্রজ্ঞা টেনে টেনে বললো-এখন মা তো আর তাঁকে একা আদূরে বিড়াল বানায়নি!কিন্তু কেউতো আর এখন নিজের দোষ স্বিকার করবেনা। ঘাড়ে নেবেনা।তাই মায়ের আদূরে বিড়ালটার অকাজটা গুছিয়ে দিতে আসলাম।কিন্তু এসেতো দেখছি অকাজটা সেই কেউই গুছিয়ে নিয়েছে।তবে আমার মায়ের আদূরে বিড়ালটার রাগে জেদে করা কাজগুলো আমরা একাই মেনে নিয়ে তাকে আদূরে বিড়ালটা করে তুলেছি?আর কেউ কি তার এই রাগে জেদে করা কর্মকান্ডগুলাে সহ্য করে নিয়ে প্রশ্রয় দিয়ে কি মাথায় তুলে রাখিনি?যারজন্য সে বারবার সুযোগ আর সাহস পায় অকাজগুলো করতে

বয়সে প্রায় এগারো বছরের ছোট বড় তারা।তবুও ভাই বোনের মধ্যে সম্পর্কটা তাদের প্রানখোলা।ছোটবেলা থেকেই যেটা মা’কে বলতে পারতোনা সেটা দ্বিধাছাড়াই এই বুবুমনি নামক মানুষটাকে সহজে বলতে পারতো প্রহান।দু’জনের বয়সের তফাৎ বেশ হলে-ও সম্পর্কের মধ্যে তাদের অদ্ভুতভাবে কেনো জানি সংকোচ নেই।যেখানে সবার কাছে সে ভালোমন্দ যে কোনো বিষয়ে অনুভূতিহীন আর গম্ভীর্য।সেখানে একমাত্র এই নারীটার কাছেই সে প্রান খোলা।আর এই স্নেহময়ী রমনীও তাঁকে কিভাবে জেনো বুঝে যায়।তার না প্রকাশ করা অনুভূতি গুলো সম্পর্কেও কেমন ভাবে জেনো অবগত হয়ে যায়।
ভাবনা ছেড়ে প্রহান বললো।

—এতো সহ্য করেও তাই তোমার মায়ের তার আদূরী বিড়ালটার জন্য আমাকে সঠিক পাত্র বলে মনে হচ্ছে না।তার উপর নাকি শুধু দায়বদ্ধতা থেকে আমি চুপ থাকি।আর সেই দায়বদ্ধতার জন্য নাকি আমি তাঁকে সহ্য করি।যারজন্য তোমার মা তার আদূরে বিড়ালটার জন্য অন্যত্র যোগ্য পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে তাঁকে ঘর জামাই রাখবে।

প্রহানের কথায় স্পষ্ট যে মায়ের কথার দারূন তার খুব অভিমান হয়েছে।তবে বরাবরের মতোই সে স্বাভাবিক আর নিশ্চুপ।কেননা বরাবরই অনুভূতি প্রকাশে সে অক্ষম।যারজন্য ভালো হোক বা মন্দ কারও প্রতি রাগ অভিমান বা অভিযোগ হলে নিজের ভিতরে দাহন করা ছাড়া তাদের প্রতি প্রকাশে সে অতি কাঁচা।যেটা মা-ও বোঝেন তবে মায়ের ও এক কথা।ছেলে মানুষ এতো চাপা স্বভাবের হলে চলে?প্রিয় মানুষদের ক্ষেত্রে ভালো মন্দ যেকোনো অনুভূতি এতো দমিয়ে রাখলে হয়না।ভালোমন্দটা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে খুলে বলতে হয়। নাহলে প্রিয় মানুষগুলোর থেকে দূরে সরে যেতে হয়।আর তার আপনজন ও প্রিয় মানুষগুলোও তার থেকে দূরে সরেযায়।নিজের প্রিয় মানুষদের ক্ষেত্রে এতো চাপা স্বভাবের হলে চলেনা।ছেলেটা উনার সব বোঝে এটা কেন বোঝেনা।এই বিষয়ে কেনো সে এতো অবুঝ হবে।যারজন্য ছেলেকে বুঝেও শক্ত শক্ত কথা শোনান তিনি।দূর্বলতায় আঘাত হানেন।কিন্তু কাজের কাজতো কিছুই হয়না।সেই যেমনটা তেমনই।শুধু মাঝখান থেকে দু’জন দু’জনের প্রতি অভিমান জমিয়ে রাখে।

—কি হলো চুপ করে আছো যে।

—-তুই মা’কে কি বললি?

—আমি আর কি বলবো!তার বিষয়ে ভালো-মন্দ কোনো কিছু বলা মানেই আমার ভুল।ভালোমন্দ কিছুই বলা যাবেনা।যাই বলতে যাও, দোষ আমার।সেজন্য চুপ থাকায় শ্রেয় মনে হয়েছে।

—তারমানে সত্যি যদি মা প্রান্তিকে অন্যত্র বিয়ে দেয়।তাতে কোনো আপত্তি নেই তোর?মনে নিবি তুই?

নিজেকে সম্পূর্ণ রেডি করে নিয়ে শেষমেশ চুলটা ঠিক করে নিচ্ছিলো প্রহান।প্রজ্ঞার কথায় হাত থেমে গেলেও বরাবরই মতোই স্বাভাবিক আচারন করলো সে।ফের চুলটা ঠিক করতে করতে বললো।

—ইচ্ছাকৃতভাবে গরম চা গায়ে ফেলে দেওয়ার পরও কিছু না বলা।সেটা শুধু একবার নয়।তার রাগ জেদের বহিঃপ্রকাশে নিজের রুমের প্রিয় জিনিসগুলো নষ্ট হতে দেখা।যখন তখন আমার রুমে ঢুকে উল্টো পাল্টা কাজ করা যা আমি সহ্য করতে পারিনা।যেগুলো আমার পছন্দ নয় তা প্রতিনিয়ত আমার সামনে করা এগুলো চুপচাপ মেনে নেওয়া, সহ্য করার পরও তোমাদের যদি মনেহয় এগুলো শুধু দায়বদ্ধতা থেকে আমি সহ্য করছি
তবে আমার করার কি আছে।আমিতো আর জোরকরে তোমাদের ধারণা বদলাতে পারিনা।

একটু থামলো প্রহান।ফের বললো-আমাকে কেউ বুঝুক আর না বুঝুক।মা কিন্তু ঠিকই আমাকে বোঝেন। তবুও উল্টোপাল্টা কথা শোনাতে ছাড়েন না।এখন মা যেটা ভালো মনে করেন।

আরওবিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও অল্পতে সমাপ্তি টেনে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে রুমের বাহিরের দিকে যেতে নিলো প্রহান।পিছন থেকে প্রজ্ঞা কিছু বলতেই পুনরায় থেমে গেলো।–ও তোর ভয়ে কলেজে যাচ্ছে না।আজ কলেজে যেতে চাইছে।কিছু বলিস না জেন ওকে।

পিছে ফিরে প্রজ্ঞার দিকে শীতল দৃষ্টিতে চাইলো প্রহান।যার অর্থ নিজের নজর দ্বারাই বুঝিয়ে দিল।প্রজ্ঞা সেটা৷ বুঝতে পেরে হেসে দিল।ফের বললো।–আমি তো জানি আমার মায়ের আদূরে বিড়ালটাকে আমার ভাইটা-ও নিজের আদূরে বিড়াল বলে মানে।তবুও বললাম এজন্য কেউ আমাকে মানাতে বলেছে তোকে।তাই

কথাটা শুনেও স্থির নজরে বোনের দিকে তাকিয়ে রইল প্রহান।সেটা দেখে তারদিকে এগিয়ে এলো প্রজ্ঞা। ফের প্রহানের হাত ধরে বললো।-চল নিচে চল।বুঝলিতো সব জায়গায় সবার রাজত্ব চলে-না ভাই।যার কারনে আমরা যাদের ভয় পাইনা।কিছু কিছু জায়গায় আর সময়েও তাদের ভয়ে চলতে হয়।যে কারনে তোর রিয়াকশনটা এমন তার রাজত্ব বাড়িতে কলেজে নয়।বিধায় বাঘকে ভয় না পাওয়া মানুষও তাকে ভয় পাচ্ছে।

খেতে বসে ইশারা চললো।প্রজ্ঞা ইশারা করেই বুঝিয়ে দিলো সে প্রহানকে বুঝিয়ে বলে দিয়েছে প্রহান আর তাকে কিছু বলবেনা।যেটা বুঝে প্রান্তিও খুশি হলো।নিজ মনে মাথানিচু করে খেতে থাকলেও নিজের পাশে বসা আর নিজের সামনের চেয়ারে বসা রমনীদের ইশারা ইঙ্গিত সবকিছু টের পেলো প্রহান।তবে এইটা ভেবে কূল ঠিক করতে পারলোনা।যে তার মায়ের আদূরে বিড়ালটা তাকে কবে থেকে ভয় পেতে শুরু করলো।

.

রাবেয়া খাতুন আজ দু’দিন বেশ চিন্তায় আছেন।চিন্তায় চিন্তায় আজ সকাল থেকেই প্রেশারটা বেড়েছে জেনো উনার।সকাল থেকেই কেমন জেনো অস্বস্তি অনুভব করছেন উনি।বৃদ্ধ হওয়ায় হাই প্রেশারের সাথে হ্দরোগ আর ডায়েবিটিসও আছে।সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী থাকতে হয়ে।কিন্তু আজ দু’দিন চেয়েও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী থাকতে পারছেন না তিনি।
যে রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে তাতে দুশ্চিন্তা করা যাবে
না জেনেও চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না তিনি।আর উনার
একমাত্র চিন্তার কারন প্রান্তি।তিন ছেলে আর একমেয়ে উনার।দুই ছেলের পরে মেয়েটা উনার।বাবাসহ ভাইদের বেশ আদূরে ছিলো বোনটা।একটা মেয়ে হওয়ার সুবাধে দেখেশুনে বেশ ভালো পরিবারেই বিয়ে দিয়েছিলেন।জামাইটাও উনার সহজ সরল আর ভালো-ও।কিন্তু অতি সুখেরসংসার মেয়েটার কপালে বেশিদিন টিকলো টিকলোনা বলতে জুটলোনা।প্রান্তি হওয়ার বছরের মাথায় মরণব্যাধি রোগ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে সে।সেখান থেকে আরও ছ’মাস যেতেই পরপারে পাড়ি জমালো।হাজার ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়ে-ও কোনো কাজ হলোনা।তাকে সুস্থ করা আর গেলোনা।আর সেই থেকেই প্রান্তি উনাদের কাছে।

নিজের আদূরে মেয়েটার ছায়া দেখতে পান রাবেয়া খাতুন প্রান্তির মধ্যে।এবাড়ির সবাই যে মেয়েটাকে প্রচন্ড ভালোবাসেন এটা তিনি জানেন।তবুও দুশ্চিন্তা করছেন এটা ভেবে।পাশের বাড়িতে উনার বয়সি এক বৃদ্ধা।সুস্থ মানুষ হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়লেন।এমন অসুস্থ হয়ে পড়লেন হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করা লাগলো।এখন মরণাপন্ন অবস্থা মানুষটার।সুস্থ মানুষ কেমন হঠাৎই মরণাপন্ন অবস্থা হয়ে গেলো উনার।উনাকে দেখে এসে সেখান থেকেই নিজের কথা ভেবে চলেছেন রাবেয়া খাতুন।ভেবে চলেছেন তিনিও যদি হঠাৎকরে মারা যান।

বাড়ির কাউকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না থাকলে-ও প্রান্তিকে নিয়ে উনার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। মেয়েটা যা একগুঁয়ে স্বভাবের।সাথে রাগি আর জেদিও।প্রহানকে যদি মানতো তবে উনার আর এই দুশ্চিন্তা করা লাগতো না।আর তিনি মারা যাওয়ার পরে যদি বড় বউমা তাকে মানাতে না পারে।মেয়েটার যদি অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়।বড় বউমার মতো ধৈর্য্য নিয়ে কে সামলাবে ওকে।সবাই কি উনার বড় বউমার মতো মমতাময়ী আর গুনী হয়?
প্রহান দাদু ভাই-ও মেয়েটার বিষয়ে অনেক ধৈর্য্যশীল।এরকম একটা সংসার যদি মেয়েটা না পায়?তবে কি করবে মেয়েটা?ভালো থাকবে কি মেয়েটা?এসব ভেবে ভেবে প্রেশার বাড়িয়ে ফেলেছেন তিনি।

উনার এই সোনার সংসারে কপাল গুনে দু’টো বউমা পেয়েছেন তিনি।ভিন্ন বারড়ির মেয়ে হলেও তাদের কথা কাজ আচারন সহোদর বোনের মতোই।এই সংসারে মেয়েটাকে যদি তিনি স্থায়ী করতে পারতেন তবে নিশ্চিতে মরতে পারতেন।আর মরে-ও শান্তি পেতেন

প্রান্তিকে নিয়ে এসব দুশ্চিন্তা করতে গিয়ে সকালের দিকে প্রেশার বাড়লেও বিকালের দিকে গিয়ে বুকে ব্যথা শুরু হলো উনার।অসুস্থও হয়ে পড়লেন বেশ।সঙ্গে সঙ্গে হসপিটালে ভর্তিও করা লাগলো।এই অসুস্থতার কারনে দু’দিন হাসপিটালেও কাটাতে হলো উনাকে।দু’দিন বাদে কিছুটা সুস্থ হতেই উনাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হলো।বাড়িতে আসতেই তিনি প্রান্তিকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠালেন…

চলবে….

ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here