রাঙিয়ে_দাও #পর্ব_(১৫) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
309

#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব_(১৫)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

সময়টা শেষ বিকাল হলে-ও চৈত্রমাসের তাপদহনে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত।সময়টা রমজান মাস হওয়ায় চৈত্রের তপ্ততা জেনো প্রতিটি রোজাদারের হৃদয় আরও ব্যাকুল করে তুলছে।রোজাদারদের পিপাসার্ত হৃদয় জেনো একটু পানির জন্য,মরুভূমির তৃষ্ণার্থ পাখিদের ন্যায় গলাফাটা হাল।তবে আজ প্রান্তি ছটফটিয়ে বেড়াচ্ছে।রোজা না থাকার দরূন কষ্ট কম হলে-ও চৈত্রের তাপদহনে জান বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।কোনো কাজ না পারা সত্ত্বেও আজ মামিদের হাতেহাতে টুকটাক যেটুকু পারছে সেটুকু কাজ করে দিচ্ছে সে।এমনিতেই গরমে নাজেহাল অবস্থা সবার।তার-উপরে রোজাদার সবাই।আর সে রোজা না থাকা সত্ত্বেও কি-করে চুপচাপ নিজের রুমে আরামে বসে থাকবে?

—মেজোআম্মা, আলুর ভর্তা মাখানো শেষ।এখন কি করবো?

ক্লান্ত মুখে সুন্দর হাসি ফোঁটালেন মিসেস আশা।চুলার উপরের পায়েসটা হালকা আঁচে ঢেকে দিয়ে প্রান্তির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন–আর কিছু করতে হবে না পাগলী।কাজ অনেক হয়েছে এবার তুই রুমে যা।দেখ গিয়ে বিচ্ছু দুটো তোর রুমে কি অপকর্ম করে চলেছে।

—ওরা কিচ্ছু করছে-না।আমার ফোনে গেইম খেলছে।আমি দেখে এসেছি।আর ওরা আমার রুমে কখনোই অকাজ করেনা

—তবেই ভালো।

কথাটা বলে নিজের কাজে মন দিলেন মিসেস আশা।উনার একপাশে চুপচাপ বিভিন্ন ধরনের ফল কেটে যাচ্ছে হিমানি।সেদিন মেয়েটার বিয়ে হওয়ার পর আর নিজ বাড়িতে যায়নি সে।মেয়েটার সৎ মা বিয়েটা নিয়ে কম চোটপাট করেনি।এমনকি মেয়েটার চরিত্র নিয়েও আজেবাজে কথা শুনিয়েছে।তবে তাতে কেউই ভ্রূক্ষেপ করেনি।তবে মেয়েটা কি হাবিবের সাথে ভালো আছে? হাবিব কি মেয়েটাকে মেনে নিয়েছে?দু’জনেই এমন ধাঁচের মানুষ।বিশেষ করে হিমানী।মেয়েটা এতোটা শান্ত আর চুপচাপ প্রকৃতির।দু’জনের মধ্যে চার দেয়ালের ভিতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা তাদের ব্যবহারে হোক বা অবয়বের বহিঃপ্রকাশে কখনোই বোঝা যাবেনা, জানাও সম্ভব নয়।তবে মেয়েটা এখন উনাদের দায়িত্ব। যেমনটা দায়িত্বে ছিলেন তিনি উনার বড় জায়ের।মানুষটা নিজ স্বভাবগুনে আর ব্যবহারে উনাকে সবকিছু শিখিয়ে পড়িয়ে এই সংসারের যোগ্য বউ করে তুলেছেন।হয়তো হিমানিকে শিখিয়েপড়িয়ে নিতে হবেনা উনাদের।মেয়েটা যথেষ্ঠ সাংসারিক এবং কর্মঠ।সে নিজগুণে সংসারের যোগ্য বউ হয়ে উঠতে পারবে।তবে হাবিবের বিষয়টা নিয়ে মেয়েটার সাথে একটু কথা বলতে হবে।বুঝতে হবে, জানতে হবে মেয়েটার সাথে হাবিবের বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিক কেমন চলছে।হাবিব মেনে নিয়েছে কি মেয়েটাকে?ঠিকঠাক ভাবে না চললে এভাবেতো চলতে দেওয়া যাবেনা।যদিও এটা তাদের স্বামী স্ত্রীর নিজেদের বিষয়।তবুও সংসারের প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে,বা বিশেষ করে এসব সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড়দের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়।আপনজনদের সম্পর্কগুলো মজবুত আর ভালো রাখার জন্য এসব বিষয়ে গুরুত্ব রাখতে হয় বড়দেরকে।সব বিষয়ে তাদের নিজেদের বলে এড়িয়ে চললে হয় না।

—-মেজোআম্মা বললে না তো আর কি করবো?

—আরেহ বললাম তো কিচ্ছু করা লাগবে না।আর নেই তো কোনো কাজ।তুই রুমে যা,দেখ গিয়ে বিচ্ছু দুটো করছেটা কি?

হিমানীর ফল কাটা শেষ।ফলের ট্রেটা সাজিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে।সেটা দেখে মিসেস আশা তাকেও বললেন–এই হিমানী তুমিও যাও।ফলের ট্রেটা ডাইনিং টেবিলে রেখে আপাতত রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নাও। ইফতারির তো সবকিছু গোছানো শেষ।পায়েসটাও হয়ে এসেছে।আপতত আলুর চাপটা করলেই হয়ে যাবে।
রান্নার-ও সবকিছুই গুছিয়ে দিয়ে গেছে ফুলবানু।শুধু চড়িয়ে দিলেই হয়ে যাবে।তাই তোমাদের এখানে কাজ নেই।আপতত রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।

আন্টি বলা মানুষটাকে হঠাৎই ভাবি ডাকটা কেমন অস্বস্তি হয় হিমানীর।তবুও এই পনেরো দিনে ডাকটা অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে।নিচুস্বরে হিমানী বললো।

—কাজ না থাকলেও আমি আপনার কাছেই থাকি না ভাবি।রুমের মধ্যে দমবন্ধ লাগে আমার।একটুও থাকতে ভালো লাগেনা।

হিমানীর নিচুস্বরের কথায় তার মুখের দিকে অপলক নজরে তাকিয়ে রইলেন মিসেস আশা।হিমানীর শেষের কথাগুলো খুব নিচুস্বরের হলেও কথার মর্মার্থ বুঝতে অসুবিধা হলোনা না উনার।তবে প্রান্তির দিকে তাকিয়ে মেয়েটাকে তিনি আর ঘাটালেন না।তবে প্রান্তিকে উদ্দেশ্য করে বললেন।

—তোর কাজ চাই তাই-তো?হিমানি-কে নিয়ে ছাঁদে যা। আজ ফুলবানুর মা নাকি খুব অসুস্থ,তাই তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছে।জামাকাপড় গুলো উঠিয়ে গুছিয়ে রেখে যেতে পারে নি।পারলে হিমানীকে নিয়ে জামাকাপড় গুলো উঠিয়ে নিয়ে আয়।

নির্দেশ পেতেই আর দাঁড়ালো না প্রান্তি।হিমানির নরম
হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ছুটলো ছাঁদের পানে।হিমানীও ছুটলো প্রান্তির সাথে সাথেই।এবাড়ির মানুষ গুলো ছোটোবেলা থেকেই তার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলো।পনেরো দিন আগে থেকে সেই শুভাকাঙ্ক্ষীনিময় মানুষগুলাে পরম আপনজনে পরিনত হয়ে গেছে।আর এই চঞ্চল মেয়েটা সেই শুভাকাঙ্ক্ষীনি মানুষদের দলের প্রথম কাতারের মানুষ।রক্তের সম্পর্ক নেই মেয়েটার সাথে অথচ তার কথা-কাজ আপনের চেয়ে-ও আপন। এই বাড়িতে আসার পর নতুন সম্পর্ক তো সেই রক্তের সম্পর্ক না থাকার পরও মধুরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।মেয়েটার ব্যবহারের মাধুর্যতা আন্তরিকতা তাঁর প্রতি আরও দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।

—হিমানী আপু থেকে তোমাকে ছোটো মামনী বলতে আমার জেনো কেমন একটা অদ্ভুত অদ্ভুত লাগে।তবে বড়আম্মার দেওয়া আদ্রনিদ্র আর আমার জন্য নতুন আম্মা বলে ডাকটা মন্দ নয়।

প্রান্তির কথায় তারদিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো হিমানী।তারও অদ্ভুত কি লাগেনা?বিয়ের আগে এই মানুষগুলাের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আত্মার একটা মায়ময় সম্পর্ক ছিলো তার।সেই সম্পর্কের ডাকগুলো ছিল এই সম্পর্কের পুরো বিপরীত।তারও যে এখন এই ডাকগুলো কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত লাগে।তবে বলেনা,মানুষ অভ্যাসের দাস।সেও অদৃশ্য এক সম্পর্কে এর বন্ধনে জড়িয়ে অভ্যাসের দাস হয়ে গেছে।তবে যে মানুষটার জন্য এই সম্পর্কগুলা বদলালো তার সাথে সেই সম্পর্কটা তৈরী হলো কৈ?আর হবে-ও বা কখনো?হয়তো না!তবে যে কপাল ছিলো তার।এরথেকে মানুষটা তাঁকে উদ্ধার করে একটা শান্তির পরিবেশ আর সুখের সংসার দিয়েছে এটাই হয়তো তার পরম ভাগ্য।

হিমানীকে কথা না বলে,নিজের ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে প্রান্তিও আর কথা বাড়ালোনা।এই মেয়েটাকে সে চুপিচুপি প্রায় কাঁদতে দেখে।নিজের দুঃখকষ্টগুলো থেকে রেহায় পাওয়া মেয়েটার কি সত্যিই কষ্ট দুঃখগুলা ঘুচেনি?নাকি পুরোনো ব্যাথা মেয়েটা চুপিচুপি কাঁদায়? বুঝে উঠতে পারেনা প্রান্তি।যারজন্য নিজেও মেয়েটাকে হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা কম করেনা।তবুও মেয়েটা বরাবরের মতোই নির্জীব।এতো শান্ত চুপচাপ মেয়েটার এতো দুঃখ কেনো থাকবে?ছোটো মামা কি কিছুতেই পারেনা এই মেয়েটার দুঃখগুলো গুচিয়ে দিতে।যেমনটা তার সদ্য সম্পর্কটা তৈরী হওয়া মানুষটা দেয়।এতো বছরের অপছন্দনীয় মানুষটা ক’দিনেই তার সবটাজুড়ে আপন হয়ে গেলো।শান্তশিষ্ট এই মেয়েটাকে ছোটো মামা সেরকম করে আপনকরে আগলে নিতে পারছে না?

ছাঁদে পা রাখতেই ভাবনা ছুটলো প্রান্তির।নজর চলে গেলো ছাঁদে টানানো বিভিন্ন দঁড়ির মধ্যে পশ্চিম পাশের লম্বা করে টানানো দড়িটায়।সেখানে তার বর নামক মানুষটার জামাকাপড় গুলো শুকাতে দেওয়া।ইদানীং ফুলবানুর সাথে ভাব হয়েছে তার।ফুলবানুর অন্যকাজে হেল্প না করলেও ফুলবানু কাপড় কাচতে আর ধূতে গেলে সাহায্য করে প্রান্তি।তার বর নামক সদ্য প্রেমে পড়া মানুষটার কাজ করতে তার দারূন সুখসুখ অনুভূত হয়।সেই সুখ কুড়িয়ে নেওয়ার জন্য তার এই অভিনব পদ্ধতি।নিজে হাতে সেই মানুষটার জামাকাপড় গুলো ধোঁয়া আবার শুকাতে দেওয়া অদ্ভুত এক সুখকর তৃপ্তি অনুভব করে প্রান্তি।যা হয়তো কখনোই কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়! বোঝাতে পারবেনা সে।

একগাদা কাপড় হওয়ায় সকালে কাপড় শুকাতে দিতে গিয়ে দঁড়ির সংকট পড়েছিলো।এটা প্রয়াসই হয়ে থাকে।তবুও আলসেমিতে দড়ি টানানো হয়না।যার-যার নিজ বেলকনিতে সেই অতিরিক্ত জামাকাপড় গুলো শুকাতে দেওয়া হয়।আজ আর সেটা ফুলবানুকে করতে দেয়নি প্রান্তি।একটা দড়িতে নিজের পাতলা ওড়নাগুলা টানটান করে দিয়ে তারউপরে সেই মানুষটার শার্ট গেঞ্জি টিশার্টগুলো শুকাতে দিয়েছিলো প্রান্তি।সেটা দেখে ফুলবানুও পর্যন্ত তাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছিলো।

—কেয়া বাত হে আপামনি।আপতো কামাল কারদিয়া। এই বুদ্ধি এতোদিন আমার মাথায় আসিনি কেনো?
তাহলে তো আর একবার এঘর তো একবার ওঘর করা লাগতোইনা।

ফুলবানুর কথার উত্তর দেয়নি প্রান্তি।শুধু মৃদুমন্দ হেসেছিল।সে যদি বোঝাতে পারতো ফুলবনাুকে কেনো এটা করেছে তবে তো রক্ষে ছিলোনা তার।যদিও ফুলবানু এখন তার ভাইজানকে নিয়ে তাকে বেশ কথা শোনায়।তবে প্রান্তি আর আগের মতো এতোটাও ক্ষেপে না।যার প্রতি শরীর মন এতোটা দূর্বল তারপ্রতি মিছে মিছে এতো রাগের ছলনা করে লাভ কি?

দড়ি থেকে সমস্ত জামাকাপড় গুলো উঠালো হিমানী আর প্রান্তি।আলাদা আলাদাভাবে সেগুলো একে-একে ভাজও করলো।ভাজকৃত জামাকাপড় দু’জনে নিজ দায়িত্বে যারযার রুমে গিয়ে রেখে-ও আসলো।হিমানীও চলে গেলো নিজের রুমে।নিজের জামাকাপড় আর সেই মানুষটার ভাজকৃত জামাকাপড়গুলো নিয়ে কাঙ্ক্ষিত রুমটার দিকে ছুটলো প্রান্তি।কাঙ্ক্ষিত রুমটার সামনে আসতেই মধুর ধ্বনিতে কুরআন তেলওয়াতের৷ স্বরে পা জোড়া থেমে গেলো তার।মানুষটার কুরআন তেলওয়াত গলা বরাবরই প্রশংসনীয়।যা সবাইকে মুগ্ধ করে।এমনকি তাকেও।

শান্ত পায়ে রুমের মধ্যে পা বাড়ালো প্রান্তি।মুখে ফুটে উঠলো প্রানবন্ত হাসি।বুকের মধ্য চললো উথালপাতাল অনুভূতির ঢেউ।ইদানীং কারণে অকারণে মানুষটার সান্নিধ্যে পেতে চায় তার মন।খুবকরে এই লোভটা বেড়েছে তার।তবে একটু নয় সেই লোভটা পাহাড়সম বেড়েছে।রুমে ঢুকতেই মন খারাপ হয়ে গেলো প্রান্তির ।রুমের মধ্য কেউ নেই।সুরা আর রহমান তেলওয়াতকৃত মধুর আওয়াজটা বেলকনিতে থেকে ভেসে আসছে।আর সে বেলকনিতে যাবে কি-করে?নিজে যেচে তো আর মানুষটার কাছে যেতে পারবেনা।মন খারাপ করে প্রহানের জামাকাপড়গুলো সযত্নে গুছিয়ে রেখে নিজের জামাকাপড়গুলো নিয়ে বাহিরের পানে পা বাড়াতেই সেই পরান চমকিয়ে হৃদয়ে অনুভূতির উথাল-পাতাল উচ্ছ্বাস বয়ে দেওয়ার মতো ডাকটা কানে ভেসে এলো তার।সঙ্গে সঙ্গেই প্রান্তির মুখে প্রানউচ্ছল হাসি ফুটলো।মনে বয়ে গেলো শীতলস্রোত।

—এই প্রান।আমার এখানে আয়,শুনে যা।

দ্বিতীয়বার ডাকে পিছু মুড়লো প্রান্তি।নিজের হাতের গচ্ছিত জামাকাপড়গুলো প্রহানের বেডের উপর রেখে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো বুকের মধ্যে চললো অজানা আলোড়ন।তবুও পা থামালোনা সে।রুমের মধ্য থেকেও দেখতে পেলো জলপাই রঙা টিশার্ট পরা লম্বাটে মানুষটাকে।বরাবরের মতোই পরিপাটি সে।শান্তপায়ে প্রহানের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় করলো না প্রহান।প্রান্তির হাতের বাহু ধরে তাঁকে কাছে টেনে নিয়ে একপাশ থেকে বুকে জড়িয়ে নিলো তাকে।কাঠফাটা চৈত্রের এই বিকালে তার তৃষ্ণার্থ হৃদয়েকে শীতল করার জন্য মেয়েটাকে এখন প্রহানের খুব প্রয়োজন ছিলো।যেচেতো আর সবার মাঝ থেকে মেয়েটাকে কাছে ডাকা সম্ভব ছিলোনা।তবে এই মূহুর্তে সে মনে-মনে খুব করে চাইছিলো মেয়েটা একবার হলেও তার কাছে আসুক।আগের দিন মেয়েটা তার কোলে মাথা রাখতেই মূহুর্তেই যে প্রশান্তিটা সে অনুভব করেছিলো সেটা একটু হলেও প্রান্তি তাকে দিয়ে যাক।অতঃপর মেয়েটাকে কাছে পেতেই সময়টা সেকেন্ডের জন্য হলেও ব্যয় করতে চাইনি সে।আকস্মিক কাছে টানাতে প্রান্তিও কেঁপে উঠলো।সে মানুষ টার সান্নিধ্যে চাইলেও হঠাৎ নিজেকে মানুষটার এতোটা কাছে আসবে কল্পনা ও করেনি।মুখ হালকা উঁচু করে প্রহানের মুখের দিকে তাকাতেই হলুদ হলুদ উজ্জ্বল শ্যামারঙা হাসিমাখা মুখখানা মোহবশ হলো প্রান্তি।কবে দুপক্ষের এই কাছাকাছি আসা হলো?কবে পিছনের সব ভুলে দু’জন দুজনকে চাইতে শুরু করল খেয়ালে নেই প্রান্তির। তবে তারমতো যে মানুষটা ও তাকে একটু একটু করে চাইতে শুরু করেছপ এটা মানুষটার কথা কাজে বেশ উপলব্ধি করতে পারে প্রান্তি।প্রহানের মুখের দিকে মোহনীয় আবেশে ডুবে থাকা প্রান্তির মন হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেললো ।

—আপনি রোজাদার মানুষ হয়ে আমাকে এভাবে কাছে নিলেন কেনো?

কিঞ্চিৎ হাসলো প্রহান।দ্বিতীয়বারের মতো নিজের পুরো ঠোঁটের ভালোবাসাময় প্রগাঢ় স্পর্শ লেপে দিলো প্রান্তির কপালে।আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো প্রান্তি ।
সুখের অনুভূতিতে ছেয়ে গেলো নারী শরীরের প্রতিটি রোমে রোমে।কোমল বাম হাতখানা দিয়ে খামচে ধরলো প্রহানের বুকের কাছের টিশার্টটা।প্রগাঢ় চুম্বন একেদিয়ে বেশ মজার ছলে প্রহান বললো।

—কেনো?আমার বউটা রোজাদার না বলে তাকে কাছে নেওয়া যাবেনা বুঝি?রোজা না থাকা ব্যক্তিকে কাছে নিলে বুঝি আমার রোজাও বিনষ্ট হয়ে যাবে?

কথার ছলে বলে ফেলা কথার উত্তরের বদৌলে প্রশ্নটা ঠিক হজম হলো-না প্রান্তির।সে রোজা না এই মানুষটা জানলো কিকরে?লজ্জা পেল প্রান্তি।নজর সরিয়ে নিয়ে ক্ষীনস্বরে বললো।—কে বললো আমি রোজা না?

—আমার বউটা ভরা বাজারের মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আস্ত রসগোল্লা খাচ্ছে। আর সে বলতে চাইছে বাজারের একটা মানুষও তাকে দেখবেনা?সেটা কিকরে হয়?

মিষ্টিটা তো সে দুপুরের সময় খেয়েছিলো।তখন তো বাড়িতে পুরুষ বলতে কেউ ছিলোনা।এমনকি মানুষটাও না।তবে?আর বড়আম্মা জোর না করলে সে কখনোই মিষ্টিটা খেতো না।কারন রোজার সময় রোজা না থাকলেও সে পানি ছাড়া মুখে অন্যকিছু তোলে।বলতে গেলে তার খেতে ইচ্ছে করেনা।তবে মানুষটা বাড়ি না থাকা সত্ত্বেও দেখলো কি-করে?তিন মামনী ছাড়া তার খাওয়ার কথাতো কার-ও জানার কথা নয়।তবে?

—-আদ্রনিদ্র একটু আগে চিপস খাচ্ছিলো।আমি দেখে বললাম,এই রোজার সময় এভাবে খোলামেলা খেতে আছে?তাতেই বান্দারা মুখ খুলে দিলো।বললো–একটু আগে তো প্রান্তি আপু-ও সবার সামনে রাসোগোল্লা খেয়েছে তাকে তো বড়আম্মা, আম্মু, নতুন আম্মা কেউ কিচ্ছু বলেনি।বরং বড়আম্মা বারবার খেতে বলছিলো।
খাচ্ছিলোনা বলে আরও বকে রাগ দেখিয়ে খাওয়ালো।
তবে আমারতো আপুর থেকে-ও কতো ছোটো।আমরা কেনো খেতে পারবো না?

দুই বিচ্ছুর উপরে প্রান্তির বেশ রাগ হলো।ফাযিল দুটো বলার আর জায়গা পেলোনা। তাকে কেমন ধারায় লজ্জায় ফাঁসিয়ে দিলো।প্রান্তির মনের হালচাল বুঝি বুঝতে পারলো প্রহান।প্রান্তিকে আরও কাছে টেনে নিয়ে এবার দু’হাতে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো।

—ওটা নরমাল বিষয়।ওটা নিয়ে লজ্জা পাওয়ার কিচ্ছু নেই।আর আমার কাছে তো ওবিষয়ে লজ্জা পাওয়াটা আরও বেমানান।সো বি ইজি…

ফের প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললো-আমার কুরআন তেলওয়াত এখনো শেষ হয়নি।শুনবি আমার কুরআন তেলওয়াত?

প্রসঙ্গ পাল্টাতে প্রান্তিও স্বস্তি পেলো।প্রহানের কথার প্রসঙ্গে মুখে কিছু বললো-না।শুধু মাথা উঁচিয়ে প্রহানের মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।সেটা দেখে ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসি ফুটিয়ে প্রহান বললো—তবে এভাবে শান্ত মেয়ের মতো চুপচাপ থাকবি।আর আমার তেলওয়াত শেষ না হওয়া অব্দি একটুও নড়াচড়া করবি না!অশান্ত হবিনা!

কথা শেষে সময় না নিয়ে সুমধুর ধ্বনিতে পুনরায় তেলওয়াত শুরু করলো প্রহান।আগেরবার সূূরা আর রহমানের প্রায় অর্ধেকের মতো পড়ে ফেলেছিলো।তবে হঠাৎই থেমে যাওয়ায় পুনরায় আবার শুরু করলো সে।মুগ্ধ নজরে সেই কুরআন তেলওয়াতের প্রতিটি আায়াত প্রতিটি শব্দ শুনে গেলো প্রান্তি।কতো সুন্দর সহিশুদ্ধ তেলওয়াত।মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো কন্ঠস্বর মানুষটার।বেশ সময় পার হতেই প্রহানের তেলওয়াত শেষ হলো।এতোসময় তেলওয়াতে মুগ্ধ হয়ে ডুবে থাকা প্রান্তির মন তেলওয়াত শেষহতেই অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।

—আপনার সূরা আর রহমান পুরোটা মুখস্থ?

—হুমম।রোজ পড়তে পড়তে মুখস্থ হয়ে গেছে।আজ থেকে তো আর পড়ছিনা।সেই কতো ছোটো বেলা থেকে পড়ছি।সুরা আর রহমান বাদেও অনেক সুরা আমার মুখস্থ।

—তবে আপনার কুরআন তেলওয়াতের গলা অসম্ভব সুন্দর।

প্রান্তির মুখের দিকে তাকালো প্রহান।ফর্সা গোলগাল মায়াবী মুখখানা তার অতিশয় প্রিয়।আজ থেকে নয়,সেই কবে থেকেই।কবে?সতেরো বছর আট মাস নয়দিন পনেরো ঘন্টা ষোল মিনিট পাচ সেকেন্ড।যা ক্ষনে ক্ষনে হিসাব করে চলেছে সে।ওয়ালের উপর রাখা ফোনটা এখনের ঘন্টা সেকেন্ড মিনিট হিসাব করাটা সহজ করে দিলো।বছর আর দিন মাস তার সর্বক্ষণের মতো মনে গেঁথে থাকে।নিজের হাতের একত্রে আঙুলগুলোদ্বারা প্রান্তির মুখের উপর পড়া ছোটো ছোটো চুলগুলো মুখ মুছে দেওয়ার মতো করে সরিয়ে দিলো প্রহান।স্পর্শ পেতেই শরীরে ফের কম্পন সৃষ্টি হলো প্রান্তির।মূহুর্তেই সমস্ত শরীরের উপশম কাটা দিয়ে উঠলো তবে একচুল নড়লো না সে।প্রান্তির আগের কথার প্রেক্ষিতেই প্রহান বললো।

—তুইও রোজ সকালে তেলওয়াত করবি,দেখবি আস্তে আস্তে তোরও তেলওয়াত ও সুন্দর হবে।রোজ পড়িস কি?

মন খারাপ হলো প্রান্তির।রোজতো তার পড়া হয়না বরং সপ্তাহে শুক্রবারের দিন পড়া হলেও কিছু কিছু শুক্রবার মিস যায়।নাহলে সেও তো এতো সুন্দর করে কুরআন তেলওয়াত করতে পারত।প্রহানের কথায় এবারও মুখে উত্তর নাদিয়ে নাথা নাড়ালো।সেটা দেখে প্রহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।

—নামাজ, কুরআন তেলওয়াতের মতো বিষয়ে এতোটা বেখেয়ালি হলে হয়-না।বিশেষ করে নামাজের ক্ষেত্রে।যেকোনো মুসলমান নর-নারীর, আল্লাহর ইবাদাতের ক্ষেত্রে হেয়ালিপনা, আলসেমি, কার্পণ্য করা একটু-ও ঠিক নয়।নামাজ তো পড়বিই একটু হলে রোজ কুরআন তেলওয়াত করবি দেখবি অভ্যাস হয়ে যাবে।

প্রান্তি ফের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।সেটা দেখে প্রহান আবারও মজার ছলে বললো– ব্যাপারটা কি বলতো? আমার প্রানোনাশিনী হঠাৎই আমার এতোটা বাধ্যতাস্বীকার করছে?আমার তো ঠিক হজম হচ্ছে না।

কি বলবে প্রান্তি,যে আপনার প্রাননাশিনী আপনাতে প্রচন্ড দূর্বল হয়ে বসেছে।ডুবে গেছে আপনার আসক্তিতে।দিনরাত সেই অপছন্দনীয় মানুষটার কথা ভেবেভেবে মনেঅসুখ বাধিয়ে ফেলেছে।আপনার ভালোতে সে ভালো খুজছে আর আপনার মন্দতে মন্দ।সে নিজেই বুঝতে পারছেনা আপনাতে বাধত্যস্বীকার করে বসলো কবে?আপনাকে বলবে কিকরে?প্রহানের কথার উত্তর না দিয়ে তার মুখের দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলো প্রান্তি।সেটা লক্ষ্য করে তৃতীয়বারের মতোন নিজের ঠোঁটের দীর্ঘ উষ্ণ স্পর্শ আকলো প্রান্তির ফর্সা নিটোল কপালে।ফের বললো।

—ইট’স ওকে।বউতো আমার বাধ্যতা স্বীকার করলেও প্রহানের ক্ষতি নেই।না স্বীকার করলে-ও ক্ষতি নেই।সর্বাবস্থায় প্রহান তার প্রানকে সহ্য করে নিতে পারবে।

মুগ্ধ নজরে প্রহানকে দেখে গেলো প্রান্তি।মানুষটাকে কম জ্বালিয়েছে সে।মানুষটা পছন্দ ছিলোনা বলে কারনে অকারণে তাকে বিরক্ত করেছে,কষ্ট দিয়েছে,জ্বালিয়েছে সে।অথচ মানুষটা কখনো তারপ্রতি উফফ তাক শব্দ ব্যবহার করেনি।জেনো করেনি?হয়তো কিছুটা হলেও এখন অনুভব করতে পারে প্রান্তি।যা আগে কখনোই তার উপলব্ধি হয়নি।বিয়ের পর মানুষটাকে যেভাবে খেয়াল করা হয়েছে সত্যি বলতে বিয়ের আগে কখনোই সে সেভাবে খেয়াল করেনি।হয়তো সেই কারনের মানুষটাকে সেভাবে বোঝা বা উপলব্ধি করা হয়নি।

—একটা কাজ কর।

বেশ অনেকটা সময় পর মুখ খুললো প্রান্তি।শান্তকন্ঠে বললো—কি?

—আজ আমার নিচে যেতে একটুও ইচ্ছে করছেনা।বড় আম্মাকে বলে আমার ইফতারটা উপরে এনে দে-তো। এটুকু স্বামী সেবা করতে পারবি কি?

প্রহানের বলার ভঙ্গিমা শুনে হেসে ফেললো প্রান্তি।ফের আবারও মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে হ্যা জানালো।প্রহানও প্রান্তিকে ছেড়ে দিয়ে বললো—ইফতারির সময়টা হয়ে এসেছে।তবে যা স্বামীআজ্ঞাটা আজ পালন কর।

প্রান্তিও আর দাঁড়ালো না।দূরন্ত পায়ে চলে এলো নিচে।মানুষটার স্পর্শে এতো সুখ সুখ ভালো লাগে কেনো?ইশ মানুষটার প্রতি আরও দূর্বলতায় ছেয়ে পড়লো মন।এ কেমন মরমর ডুবে যাওয়া প্রেম হলো তার।যা দিনকে দিন শুধু ডুবিয়ে দিচ্ছে।

নিচে নেমে মাহবুবা বেগমকে প্রহানের কথা জানাতেই তিনি নিশ্চুপ থেকে কিছুক্ষণ প্রান্তিকে পর্যবেক্ষণ করলেন।ফের ছেলের ইফতারিটা গুছিয়ে প্রান্তির হাতে ধরিয়ে দিলো।সেগুলো নিয়ে সনন্দে প্রান্তিও এগোলো।
প্রহানের রুমের মধ্যে ঢুকতেই বুঝতে পারলো মানুষটা ওয়াশরুমে।প্রান্তি ও খাবারগুলো সযত্নে গুছিয়ে রাখতে লাগলো প্রহানের রুমের বেডের পাশে ছোট্ট টেবলটায়।প্রহান বের হতেই খাবারগুলো দেখিয়ে বাহিরের পানে পা বাড়াতেই প্রহান তাকে ডেকে উঠলো।

–প্রান।নিচে যাস না।আমার সাথে আজ ইফতারিটা এখানে বসেই সেরে নে।

প্রান্তির চেয়ে থাকলো প্রহানের মুখের দিকে।প্রস্তাবটা শুনে মন খুশি হয়ে গেলেও নিজের অনিমেষ চাহুনিদ্বারা বোঝাতে চাইলো,আমি রোজাদার নই আমার ইফতারি করা আর না করা সমান।তবে প্রয়োজন কি?প্রহানও বুঝে নিতে পারলো নিজের প্রানের নজরের ভাষা।সে-ও শান্তকন্ঠে বললো।

—বউ আমার।আমার সবকিছুতে তার অর্ধেক অধিকার রয়েছে। সেখানে সে রোজা থাকুক আর নাই বা থাকুক আমার ইফতারিতে তারও অর্ধেক পাওনা রয়েছে।আর পাওনা না বুঝিয়ে দিলে তো আমি স্বামী আমার স্ত্রীর হক মেরে খাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দায়ী হয়ে যাবো।তাই না?আমিতো কখনো দ্বায়ী হতে চাইনা।তুই দ্বায়ী করতে চাস আমাকে?

অবাক হয়ে প্রহানের মুখের দিকে চেয়ে থাকলো প্রান্তি।মানুষটা এতো উল্টো পাল্টা কথা বলতে জানে এটা তার জানা ছিলোনা।আশ্চর্য!শেষমেশ কথার ছলে হোক বা নিজ ইচ্ছেতে ইফতারি সময়টা একসাথে দু’জনে কাটালো।

.

বাড়ির পুরুষের তারাবির নামাজে যাওয়ার পর মিসেস আশা ঢুকলেন হিমানীর রুমে।মেয়েটা উদাস হয়ে বসে আছে জানালার পাশের সোফায়।ধীরপায়ে তারকাছে গিয়ে বসলেন মিসেস আশা।হিমানী টের পেতেই চমকে পাশে তাকালো।ফের ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললো।

—আরেহ ভাবী আপনি কখন এলেন।কোনো প্রয়োজন? তবে আমাকে ডেকে পাঠাতেন কষ্ট করে আসতে গেলেন কেনো?

—কেনো এরুমে আসা যাবেনা বুঝি।

নিজের কথার ভঙ্গিমাটা এমন ধারার হলো লজ্জা পেল হিমানী।ফের আগের তুলনায় আরও ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললো।-তেমনটা নয় যেমনটা আপনি ভাবছেন।আপনি
কেনো আসবেন না।এরুমে যখন তখন আসার অধিকার রয়েছে আপনার বরং আমি মানা করার কে?

—তুমি মানা করার কে মানে?

হিমানী চুপ হয়ে গেলো।তার কথার শ্রী এমন টাইপের হয়ে যাচ্ছে কিকরে সে নিজে বুঝতে পারছেনা।তাই চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করলো।মিসেস আশার প্রশ্নের উত্তরটা দিলোনা।তবে মিসেস আশা চুপ থাকলেন না।

—হিমানী আমার দিকে তাকাও।বলো,হাবিব এখনো মানিনি তোমাকে?

বুক ভেঙে কান্না আসতে চাইলো হিমানীর।তবে ছোটো বেলা থেকে না পাওয়ার কষ্ট ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা আছে তার।তাই নিজেকে যতসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলো সে।যে মানুষটার বদৌলে শান্তিতে এবাড়িতে আছে সে তাকে ছোটো করে কথা বলার বা দেখানোর কোনো মানেই হয়না।উচিতও নয়?বরং তার মতো মা হারানো শ্যামবর্ণের এক মেয়েকে নিজের জীবনে ঠাই দিয়ে এবাড়িতে রেখেছে এতেই তার কতো কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত?নাহলে ওই সুদর্শন মানুষটার পাশে কি তাকায় মানায়। মানায় না বলে তো সেই বিয়ের রাত থেকে মানুষটা একবারও তারসাথে কথা বলেনি তারদিকে ফিরে পর্যন্ত তাকায়নি।তবে সত্যি বলতে এবাড়ির মানুষগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী ভালো।

—হিমানি আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি?

—আমি ভালো আছি ভাবি।

—আমি তোমার ভালো থাকার কথা জিজ্ঞেস করিনি হিমানী।আমি যেটা জিজ্ঞেস করেছি একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে হয়ে সেটা তুমি বেশ বুঝেছো।আমাকে সেটার উত্তর দাও।

টলমল চোখে মিসেস আশার পানে চাইলো হিমানী।নজরটা পড়তে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ মিসেস আশার তিল পরিমানও সময় লাগলোনা।তবে হিমানীর স্বীকারোক্তি ছিলো পুরো মিথ্যা।যেটা বুঝতে ও সময় লাগেনি উনার।

—উনাকে কোনো কারনে দোষারোপ করবেন না ভাবী।উনি আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়ে ভালো রেখেছ…..

কথাটা শেষ করার আগেই হিমানীর নজর চলে গেলো নিজের রুমের দরজার পানে।সেখানে স্থির নজরে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে সেই মানুষটা।যাকে নিয়ে তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।মাথা নিচু করে নিলো হিমানী।হঠাৎ কথা অসমাপ্ত রেখে হিমানীকে মাথা নিচু করে নিতে দেখে মিসেস আশাও সামনে তাকালেন।হীববকে এতো তাড়াতাড়ি নামাজ সেরে বাড়িতে দেখে কপাল কুঁচকে গেলেও উঠে দাঁড়ালেন তিনি।সামনে এগিয়ে গিয়ে হাবিবকে প্রশ্ন করলেন।

—আজ এতো তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ করে চলে এলে যে।

—শরীরটা ভালো লাগছিলো না।তাই কিছু রাকাত শেষ করে চলে এসেছি।

মিসেস আশা হাবিবকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন তবে তার অসুস্থতার কথা শুনে তিনি আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে এলেন।তিনি বের হওয়ার কিছুসময় পার হতেই মাথা নিচু রেখেই হিমানী বললো।

—আমাকে ক্ষমা করবেন।আমি আপনার নামে মিথ্যা বলতে চাইনি।

স্থির নজরে মাথা নিচু করে থাকা হিমানিকে দেখে যাচ্ছিল হাবিব।আজ বিয়ের পনেরো দিনে না মেয়েটার সাথে তার কথা হয়েছে আর না তারদিকে বিশেষ করে খেয়াল দেওয়া হয়েছে। অথচ মেয়েটা তার সম্মান বাঁচাতে মিথ্যা স্বীকারোক্তি দিচ্ছে।হিমানীর কথায় ধ্যান ভাঙতেই ভিতরে পা বাড়াতেই সে বললো।

—আমাকে সময় দাও আমি তোমার দায়িত্বে কখনোই অবহেলা করবো-না।

আশকারা মুলক কথা কানে যেতেই মাথা উঁচু করে তাকাল হিমানী মানুষটা কিছুটা ছন্নছাড়া স্বভাবের এটা সে জানে।তবুও সেই ছন্নছাড়া মানুষটার কাছে মনে দ্বিধা সংকোচ ভয়ডর না রেখে আবদার করে বসলো হিমানী।

—আমার কোনো কিছু চাইনা।না জিনিসপত্র আর না কোনো সাজসজ্জা।আমার শুধু একটু আমার স্বামীর ভালোবাসা চাই।তবে খুব বেশি নয় শুধু একটুখানি ভালোবাসা হলেই আমার চলবে।সেটা যদি দেখানো আর মিথ্যা ভালোবাসা হয় তবুও এই হিমানির চলবে…

চলবে…..

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here