#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব-(১২)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম
“আপনাকে আমার কখনোই চাই না”কথাটা মুখে বলাটা যতোটা সহজ,সেই মানুষটার প্রতি কঠিন দূর্বলতা আছে জেনে বুঝে-ও অন্তর থেকে সেই একই কথা মানাটা কি ঠিক ততোটাই সহজ?কখনোই না!কথাটা অন্তর থেকে
মানাটা ঠিক তারথেকে-ও কয়েকগুণ কঠিন।যন্ত্রণার!
সেই কঠিন যন্ত্রণায় ছটফট করছে প্রান্তি।বলতে গেলে, মন দূর্লতার মানুষটার ক্ষেত্রে রাগের বশিভূত হয়ে মুখ দিয়ে যাচ্ছেতাই কথা বলতে পারলেও সেই কথাগুলো মন মানতে চায়না। কিছুতেই গ্রহন করতে চায়-না।
রাগের বশিভূত হয়ে আমরা কতোকিছু না মুখ দিয়ে বলে ফেলি। অথচ মনের ভিতর যন্ত্রটা ভিন্ন কথা বলে।ভিন্ন কিছু চায়।প্রান্তিরও সেরকম অবস্থা।রাগের বশিভূত হয়ে অভিমানে মুখে হাজার-বার আপনাকে আমার চাই-না।চাই-না মানে চাই না।একটুও চাইনা।কথাগুলো সহস্রবার মুখে আওড়ালে-ও মনের ভিতরের চাওয়াটা পুরোটাই ভিন্ন।যদিও মুখে কথাগুলো বলতে গিয়ে তার অন্তরের ভিতরটা ব্যথায় দলাপাকিয়ে যাচ্ছিলো।তবুও রাগের আর জেদের বশিভূত হয়ে কথা গুলো মানুষটাকে না শোনানো পর্যন্ত নিজেকে ঠিক শান্ত করতে পারছিলো না।আর না তখন নিজেকে শান্ত রাখা যাচ্ছিলো।
নিজের রুমের বেলকনিতে হাটুদ্বয় একসাথে করে মুখ গুঁজে বসে আছে প্রান্তি।কান্নার শব্দটা নাহলেও,ছোট্ট শরীরটার থমকে থমকে কাঁপুনিটা বুঝিয়ে দিচ্ছে নীরবে অশ্রুপাতের বিবরণ।কিছুক্ষণ পরপর সেই নীরব অশ্রুকণা বারবার দু’হাত দিয়ে অনবরত মুছছে আর প্রহানের চৌদ্দ পুরুষের গোত্র উদ্ধার করছে।কথাগুলো ওই অসভ্য মানুষটা যখন তাকে উদ্দেশ্যে বলছিল,তার ভিতরটা দাবানলের মতো পুড়ে যাচ্ছিলো।কি-করে মানুষটা ওই ভয়াবহ কথাগুলো তাকে বলতে পারলো।যে মানুষটাকে তার জীবন থেকে ছুড়ে ফেলে প্রান্তুি অন্য কাউকে তার জীবনে পছন্দসই বেছে নেবে। ঠাই দেবে।
মানুষটাকে প্রান্তি এতোদিন কাঠখোট্টা আর গম্ভীর হিসাবে জানতো।অথচ মানুষটা এতোটা হৃদয়হীন নির্দয় আজ সেটা জানলো প্রান্তি।মানুষটা এতো নিষ্ঠুর এটা প্রান্তির জানা ছিলোনা।
হ্যা এটা সত্যি মানুষটা তার অপছন্দনীয় ছিলো,আর সবার চাওয়াটা প্রাধান্য দিয়ে সেই অপছন্দনীয় মানুষটাকে সে নিজের জীবনসঙ্গ হিসাবে গ্রহণ করেছে।এটাতে কি তার মোটেও ইচ্ছে ছিলোনা?এই সম্পর্কটা কি শুধু সবার বুঝানো আর চাওয়ার ফলস্বরূপ?তবে যদি তাই হয়ে থাকে সেটাই।সে পরিবারের সিদ্ধান্তে পছন্দনীয় হোক বা অপছন্দনীয় ওই মানুষটাকে বিয়ে করে নিয়েছে।কিন্তু বিয়ের পর সম্পর্কটাকে তো সে ফেলনা ভাবিনি বা এমন কিছু করেনি যে ওই মানুষটার কাছে তার কথা কার্যকলাপ এই সম্পর্কটাকে ফেলনা মনে হবে?সম্পর্কের টানে হোক বা অন্যত্র কারনে সে তো মানুষটাকে নিজের মনে বসিয়ে নিয়েছে।একটু একটু করে তারদিকে এগোচ্ছে।একটু আর কোথায়?সে যে এই সম্পর্কটাতে মন থেকে কতোখানি এগিয়ে গেছে ওই নির্দয় মানুষটাকে যদি বোঝাতে পারতো?হয়তো এটাই তার চরম ব্যর্থতা কি-করে আর কিভাবে বোঝায় মানুষটাকে?
ফ্লোরে পড়ে থাকা ফোনের ভাইব্রেশনের আলোতে মুখ উঁচু করে তাকালো প্রান্তি।বাহির থেকে এসে কোনোমতে বড়আম্মার সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে এসেছে ।বাহিরের জামাকাপড় এখনো ছাড়েনি। ওভাবেই বেলকনিতে চলে এসেছে সে।ফোনটাও সাথে ছিলো বিধায় সেটাও সেভাবে নিয়ে এসে ফ্লোরে রেখে দিয়েছিলো।ফোনের স্কিনে কল দেওয়া ব্যাক্তির নামটা দেখে কান্না জেনো ঠিকরে বের হয়ে আসতে চাইলো তার।কোনোমতে কান্নাটা নিয়ন্ত্রণ করে কলটা রিসিভ করলো।
—বলো বুবুমনি।
ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল প্রজ্ঞা।সত্যি মেয়েটা কেদে কেটে ভাসিয়ে দিচ্ছে।তার অকর্মা ভাইটা সত্যিই মেয়েটাকে কাঁদিয়ে ছাড়লো।কাঁদিয়ে আবার তাকে ডানপন্থী সাজিয়ে ফোন দিয়েই মেয়েটাকে শান্ত করতে বললো।সবকিছু জানা সত্ত্বেও প্রজ্ঞা বেশ আদূরে গলায় জিজ্ঞেস করলো।
—তুই কাঁদছিস কেনো?
প্রিয় মানুষটার কথায় আহ্লাদে গলে পড়লো প্রান্তি।ফের ফুপিয়ে কেঁদে দিয়ে বললো।–তোমার ভাই একটুও ভালো না বুবুমনি। সে আমাকে একটু-ও বুঝতে চায়না।বোঝেনা সে আমাকে?তুমি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও,তোমার ভাইয়ের সঙ্গে একই বাড়িতে আমি আর থাকবো না বুবুমনি।থাকতে চাই না আমি।
তিনজনের গ্রুপিং কলে তৃতীয় ব্যক্তি শুধু নীরব শ্রোতা হয়ে চোখবুঁজে কথাগুলো শুনে গেলো।প্রজ্ঞা আবারও আদূরী স্বরে বললো।
—আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসবো আমার কাছে।তার আগে কি হয়েছে আমাকে সেটা বল?ওই ফাযিলটাকে আগে তো বকতে হবে।তারপর নাহয় তোকে নিয়ে আসবো।
প্রান্তি ক্রন্দনরত অবস্থায় একটু একটু করে নালিশ জানালো।যার নামে নালিশ জানাল,ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে সেও নীরবে শুনল।নালিশ শেষে আবারও অভিযোগ নামা খুললো প্রান্তি।
—তুমি সেদিন বললে না, সম্পর্ক ভালো রাখতে বা ঠিক রাখতে হলে দু’জনকেই সম্পর্কে এগোতে হবে।আমিতো এগিয়েছিলাম।তোমার ভাইটাই এগোতে চায়-না বলে আমার এগোনোটাকে-ও পিছিয়ে দিলো।আমিও বেহায়া নাকি?আমারও চাই না তাকে।একটুও চাই না।চাই না মানে তাকে আমার কখনোই চাই।মোটেও চাই না।
অবস্থা বেগতিক!সেদিন কথাগুলো বলে বোঝানোর পর মেয়েটা যে তার কথাগুলো একটু হলে-ও বুঝবে বা বোঝার চেষ্টা করবে।এটা জানতো প্রজ্ঞা।তবে ফাজিল ভাইটা মেয়েটাকে জানা সত্ত্বেও ক্ষেপিয়ে দিয়েছে।দিয়ে আবার তাঁকে ধরেছে ঘটক।প্রহানকে খুব বকতে ইচ্ছে করলো প্রজ্ঞার।লাইনে থাকা সত্ত্বেও বকতে পারলোনা।তবে প্রান্তি না থাকলে সে অবশ্যই ফাজিলটাকে বকতো।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রজ্ঞা ফের প্রান্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো।
—ওর ওই সামন্য কথায় তুই কাঁদিয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছিস,
পাগল মেয়ে।আর এসব কি কথা?তোমার ভাইকে আমার চাইনা মানে কি?যে কথাগুলো ও বলেছে সেই কথার দরুন তুই ওকে জ্বালাবি,পুড়াবো,বিরক্ত করে শেষ করে দিবি তা না কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে।আবারও বলছে আমার তাকে চাইনা।
কান্না থেমে গেলো প্রান্তির।গলারস্বর তীক্ষ্ণ করে বললো —বলবো না কেনো?তোমার ভাই কথাগুলো আমাকে শোনালো কি করে?সবাই চেয়েছে বলে না-হয় আমি বিয়েটা করেছি তাই বলে কি বিয়েটা অস্বীকার করেছি আমি।তোমার ভাই আমাকে একটুও ভালোবাসে না বুবুমনি।একটুও না।
কথাটা বলে নিজেই থমকালো প্রান্তি।থামকলো আর-ও একজন।তবে বরাবরই সে নীরব শ্রোতা।তাই নিশ্চুপ রইলো।প্রান্তির কথা শুনে প্রজ্ঞা-ও দুষ্ট হাসলো।ফের বললো।
— আমার ভাইটাতো তোকে একদম ভালোবাসেনা ঠিক আছে মানালাম।কিন্তু তুই কি ভালোবাসিস আমার ভাইটাকে?
নিজের মনের অনুরক্তি গুলো লুকোলো প্রান্তি।ফের গলার তীক্ষ্ণতা বজায় রেখে বললো–খেয়ে দেয়ে আমার কাজ আছে।যে তোমার ওই কাঠখোট্টা ভাইটাকে আমি ভলোবাসতে যাবো।সে বোঝে ভালোবাসা মানেটা কি?
জানে শুধু বইয়ে ডুবে থাকতে আর অকারণে সবাইকে হাজার কথা শোনাতে! বকতে!
–তাহলে ওর সামন্য কথায় কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিচ্ছিস কেনো?
—কথাগুলো তোমার সামন্য মনেহলো বুবুমনি।তবে ওই কথাগুলো শুনে আমার কেনো বুকে ব্যথা জাগলো?
—ওই বুক ব্যথা কি সত্যি সত্যি বলছে প্রহানকে তোর চাই না?
প্রান্তি চুপ হলো।বুকের মধ্যে মনটা কি চাইছে সেটা সে বুবুমনিকে কি করে বলবে ? আর বুবুমনিকে বলেও কি হবে?বরং বুবুমনি জানলে লজ্জা পেতে হবে তাকে।তাই নিশ্চুপ রইলো।কিন্তু ওপাশের আঠারো বছরের সংসারী অভিজ্ঞ নারী, প্রান্তিকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে বুঝে নিতে পারলো তাকে।বেশ কোমল গলায় বললো।
—আমার কথায় রেগে যাস না পাখি।আগে কথাগুলো মন দিয়ে শুনবি বুঝবি তারপর তোর ভালো না লাগলে বা তোরকাছে কথাগুলো যুক্তিযুক্ত মনে নাহলে যা মন চায় তাই ইচ্ছে করিস।জানিস তো ভাই ওরকমই এজন্য তো তোকেই এগোতে বলেছিলাম।তুই না এগোলে তোর বিরুদ্ধাচরণ করে সে কখনোই এগোবে না।ভাই যেমনই থাকুক খারাপ চরিত্রের ছেলে নয়।এটা তো তুইও ভালো করেই জানিস।কার-ও উপর জোরজবরদস্তি করে সম্পর্কের অধিকার ফলানো বা নিজের ইচ্ছেগুলো মন মর্জি চাপিয়ে দেওয়া।এগুলো কখনোই করেনা ভাই।হয়তো নিজেকে সবদিক দিয়ে গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে ভালোবাসে আর নিজের মানুষগুলোও তারমতো গুছিয়ে থাকুক সেটাই চায়।কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছেগুলো চাপিয়ে দেওয়া অথবা জোরজবরদস্তি কিন্তু সে কখনোই করেনা।তাই ওর কথায় মন খারাপ করে থাকিসনা পাগলি।যেকোনো সম্পর্কে কোনো ভালোমন্দ কথা নিয়ে, বিশেষ করে স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে কেউ এতোটা উতলা হলে সে সম্পর্ক ঠিক রাখা যায়না।যদিও সম্পর্ক ঠিক রাখার দ্বায় একা তোর নয়,ভাইয়ের ও।তবে কথাগুলো হয়তো ও এমনি এমনি বলেনি,কারও কথা বা কোনো বিশেষ কারনের উপর ভিত্তি করেই নিশ্চয় বলেছে।আর সেই কারনদ্বারাই তোর অভিব্যক্তি জানতে চাইছে।তাছাড়া তো হুটহাট এরকম অহেতুক কথা বলার ছেলে ভাই তো নয়,এটাও তোর জানা।তুই মানিস বা না মানিস,সবার মতো ভাইও যে তোর ভালো চায়,তুই খুব ভালো থাক।এটা তারও চাওয়া।মনেকর সেই প্রেক্ষিতেও কথাগুলো বলেছে হয়তো।
থামলো প্রজ্ঞা।রাগ জেদ কমে এসে প্রান্তির মনও নরম হলো।প্রজ্ঞার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে গিয়ে হঠাৎ দাদিআম্মার বলা কথাগুলো মনে উঠল তার।ওই মানুষটা দাদিআম্মার কথাগুলো শুনে তারউপর ভিত্তি করে তাকে তখন কথাগুলো বলেনি তো?হতেও পারে।নাহলে হঠাৎ ওরকম কথা তুলবে কেনো মানুষটা?
আবার মন ঘুরলো প্রান্তির।মনেমনে বকলো প্রহানকে। যারতার কথা শুনে তাকে আবোলতাবোল প্রশ্ন করবে কেনো?তার প্রেক্ষিতে নিজের যা মনে আসে তাই বলবে নাকি মানুষটা?উল্টোপাল্টা তো শুনবে না প্রান্তি।সবারটা শুনবে বুঝবে।তবে তারটা শুনতে বুঝতে ওই মানুষটার সমস্যা কোথায়?তারবেলায় এতো অবুঝ হবে কেনো মানুষটা?
প্রান্তির ভাবনার মাঝে প্রজ্ঞা মজার ছলে ফের বললো।
—এখন তুই যে তারউপর রাগ করে আমার কাছে চলে আসবি,বর যদি তোর অন্য কারও হয়ে যায়।এমনিতেই তোর বর জানে তুই তাকে পছন্দ করিসনা।এরমধ্যে এই ঘটনা,ভাইটাতো আর আমার জানেনা তার কথার বিরহ তার বাচ্চাবউটা কেঁদেকেটে বুকব্যথা বাড়িয়ে ফেলেছে।এখন যদি তার মন অন্য দিকে চলে যায় তখন তো তার বউটা মরমে মরে যাবে।আর আমার ভাইটাকে তার বউ টা একটুও ভালোবাসেনা তাই তার সামন্য কথাতে এত কষ্ট পাচ্ছে।বুকে ব্যথা পর্যন্ত বাঁধিয়ে ফেলেছে।আর যদি অন্য কারও সাথে আমার ভাইটাকে দেখে তবেতো উপায়নেই।এখন ভেবেচিন্তে দেখ,ওই কথার দরূন কাছে থেকে তাকে বিরক্ত করবি জ্বালাবি নাকি এরকম কেঁদে কেটে নিজেকে তারকাছ থেকে সরিয়ে রাখবি?
কথাগুলো শুনে লজ্জা পেলেও আঁতকে উঠলো প্রান্তি।ওই মানুষটা অন্য কারও হয়ে যাবে।সে মানবে কিকরে? মুখে যতোই বলুক আপনাকে আমার চাইনা।কিন্তু মন কতোখানি তাঁকে চাইছে,এটা ওই মানুষটা বোঝাবে কি করে সে।কিছুটা চমকানো গলায় প্রান্তি বললো।
—এসব কি বলছো বুবুমনি?
প্রান্তির কথাকে শুনেও না শোনার ভান করে প্রজ্ঞা ফের বললো—কাল পূর্নকে পাঠিয়ে দেবো।চলে আসিস।আর পুতুলের ক্ষুধা লেগেছে,খেতে চাইছে।পরে কথা বলছি।আল্লাহ হাফেজ আমার ভাইয়ের সোনা বউটা।
কান্নাকাটি হজম করে থমথমে গলায় প্রজ্ঞাকে আল্লাহ হাফেজ জানালো প্রান্তি।ফের প্রজ্ঞার বলা কথাগুলো নিয়ে গভীর ভাবতে বসলো।
.
প্রান্তি আল্লাহ হাফেজ বলতেই ওপাশ থেকেই দুষ্ট হেসে প্রান্তির লাইনটা বিচ্যুত করে দিয়ে প্রজ্ঞা প্রহানকে রাগ দেখিয়ে বললো—হয়েছে এবার শান্তি।মেয়েটাকে না রাগালে তোর চলে-না?কথা একটু বুঝেশুনে বলা যায় না।মেয়েরা এমনিতেই এসব বিষয়ে ভিষণ সেনসেটিভ হয়।আর প্রান্তি বাহিরে ঝাঁঝালো হলেও ভিতরটা তার নরম।মেয়েটাকে জেনেও কথাগুলো বলা তোর উচিত হয়নি ভাই।
বুবুর রাগান্বিত কথাগুলো শুনেও চমৎকার হাসলো প্রহান।তার ক্ষীন শব্দটা প্রজ্ঞা-ও টের পেলো।কিছুটা আশ্চর্য হয়ে সেটা অনুভব ও করলো সে।কতো-দিন পর প্রহানের এমন হাসির শব্দ শুনলো।ছোট থেকেই ভাইটা তার একটু গম্ভীর স্বভাবের।বিধায় এসব হাসি ঠাট্টা বিষয়গুলোও তারমধ্য খুবই ক্ষীন।
—তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করতে চাইনা বুবুমনি।তবে আমার আমিটাকে সবসময় ভালো রাখার স্বার্থেও তোমাকে খুব ভালোবাসি বুবুমনি।আর স্বার্থ বিহীন-ও তোমার ভাইটা তোমাকে খুব ভালোবাসে।
একটু চুপ থেকে প্রহান ফের বললো—ভিন্নতর হলেও তোমার ভাইয়ের জীবনের তিনজন বিশেষ নারীকে সে ভিন্নরূপেই প্রচন্ড ভালোবাসে।খুব ভালোবাসে বুবুমনি।
–তবে আর আমার ভাইয়ের বাচ্চা বউটাকে দূরে সরিয়ে রাখিস-না প্রহান।ও কাছে আসতে চাইলে এবার ওকে আগলিয়ে নে।
তড়িৎ গতিতে প্রজ্ঞার কথার উত্তর দিলোনা প্রহান।কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে রয়েসয়ে সময় নিয়ে শুধু হুম শব্দটা বললো।প্রজ্ঞাও আর কথা বাড়ালোনা।প্রহানের উত্তর এমনই ঠান্ডা আর নিরিবিলি হবে এটা আর জানা।তবে তার ভাইটা যদি মেয়েটাকে একবার কাছে টানে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবে এটাও তার জানা।সেখানে প্রান্তি আর কখনোই অভিযোগ হানতে পারবে না।
.
আজও মন খারাপ প্রান্তির।কলেজ শেষে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আবিশা আর সে।আবিশা বুঝে পায়না, এই মেয়েটার আজকাল হচ্ছেটা কি।সময় নেই অসময়ে কারনে অকারণে মন খারাপ করে বসে থাকে।জিজ্ঞেস করলেও ঠিকঠাক উত্তর মেলেনা।আর কিছু বলেও না।
—আজ আবার কি নিয়ে মন খারাপ করলি বললি না তো?
নাক ফুলিয়ে উত্তর দিলো–তোদেরতো ধারনা আমার অকারণেই মন খারাপ হয়।সেই অকারণেই মন খারাপ হয়েছে আমার।
—এটা কোনো কথা হলো?হয়েছেটা কি তোর বললেই তো হয়?বলনা আমাকে?
কি বলবে সে?ওই মানুষটার বিরহে সে মরে যাচ্ছে।আর মানুষটার তাতে কোনো হেলদোল নেই।এটা সে বলুক আর এই ফাজিল মেয়ে তার মজা উড়াক।তবুও বলতে চেয়েছিল সে।কিন্তু সেটার জন্যও যে মুড দরকার সেটা আপতত কাজ করছে না প্রান্তির।কিযে হয়,নিজে কিযে চায়?মাঝেমধ্যে নিজেও বুঝতে পারেনা সে।যার কারনে অকারণেই তার মন খারাপ হয়ে যায়।তারজন্য বিশেষ কোনো কারন লাগেনা।যদিও এটাতে কারন আছে কিন্তু সমাধান করতে না পারায় তার মন আরও খারাপ।
—আমার মন খারাপ নয়!আর থাকলেও বিশেষ কোনো কারন নেই!
প্রান্তির এবারের কথায় আবিশা স্পষ্ট বুঝলো কারন আছে।তবে প্রান্তির মুড সম্পর্কে সে আবগত তাই জানে মেয়েটা এখন কিছুতেই বলবেনা।আবিশা নিভলো।এই মেয়েকে তার মাঝে মাঝে ঘুর্নিপাকের মতো জটিল মনে হয়।কিন্তু কি আর করার।মেয়েটার মন খারাপ থাকলে তারও যে ভালো লাগেনা।প্রান্তির কাছ থেকে আপতত উত্তর মিলবেনা বুঝতে পেরে আর কথা বাড়ালোনা আবিশা।সিএনজির জন্য নজরটা এদিক ওদিক পানে ঘুরাতেই রাস্তার অন্যত্রপাশের কফিশপে প্রহান আর তার মুখোমুখি বসা মেয়েটাকে দেখেই কপাল কুঁচকিয়ে ফেললে সে।মেয়েটাকে সে চেনে।ততক্ষণাৎ আঙুল উঁচুিয়ে প্রান্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো।
—এই প্রান্তি দেখ প্রহান ভাইয়ার সাথে ওটা নাবা আপু না?
চমকে আবিশার ইশারাকৃত আঙুলের দিকে তাকালো প্রান্তি।হ্যাঁ আবিশা যা বলছে ঠিকই।ওটাতো নাবা আপু।কিন্তু এখানে কি করছে?মেয়েটাকে প্রহানের সাথে দেখে মেজাজ মোটেও খারাপ বা বিগড়ালোনা প্রান্তির।তবে এই কারনে বিগড়ে গেলো।যে তাকে একদন্ড সময় দেওয়া যায়না জেন সারাদিন উনার কতো ব্যস্ততা অথচ বান্ধবীকে নিয়ে কফিশপে বসে শরীর এলিয়ে গল্প করা যায়।তবে তাকে বুঝবে কিকরে?তার মনটা তো সুদুরপ্রসারি।
—নাবা আপু এখানে আসলে প্রহান ভাইয়া বাদে মাহিম ভাইয়া বা তার অন্যত্র কোনো বন্ধুদের সাথেতো সেভাবে কথা বলতে দেখা যায়না।কিন্তু প্রহান ভাইয়ার সাথেতো ঠিকই প্রত্যেকবার এখানে আসলেই কথা বলতে দেখা যায়।ব্যাপার কি বলতো?যদিও আপু বিব…
কথাটা শেষ করতে পারলোনা আবিশা।পুরুষালি গলার স্বরে কথা বন্ধ হয়ে গেল তার।এটা প্রহান ভাইয়ার ফ্রেন্ড ফারহান ভাইয়ার গলা।যার বাড়ি তাদের বাড়ির কাছে।
–ব্যাপারটা হচ্ছে সুর ওখানে বাঁধা গীত আমাদের কাছে গেয়ে কি করবে?
চলবে….
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বার্তা- স্টিকার কমেন্ট অথবা নেক্সট না লিখে ছোটো ছোটো করে হলেও গল্প পড়ে নিজেদের অনুভূতি জানাবেন।তাতে লেখার আগ্রহটা বাড়ে।কথাটা রাখার চেষ্টা করবেন অনুরোধ রইলো।