রাঙিয়ে_দাও #পর্ব_(৬) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
298

#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব_(৬)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

প্রান্তির মনেমনে অসম্ভাব্য-ময় ভাবনার মাঝেই রাবেয়া খাতুন আবার-ও বলা শুরু করলেন।

—পারুল যেটা চেয়ে গিয়েছিলো।আজ আমিও সেটাই চাইছি।শুধু আমি নয় এই বাড়ির সবাই সেটা চায়।এখন
তোমার মায়ের ইচ্ছে-সহ এ-বাড়ির সবার চাওয়াটা শুধু তোমাকে বললাম।এখন তুমি ভেবে দেখতে পারো তুমি কি চাইছো বা চাও?তবে তুমি এটা ভেবো-না তোমার উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।এখন তুমি হ্যা বা না যেটাই সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই হবে।তোমার উপর এবিষয়ে কোনোরূপ জোর করা হবেনা।এমন-কি জোর করে কোনোরূপ সম্পর্কও চাপিয়ে দেওয়া হবেনা।তবে একটা কথা বুবুমনি তোমার বয়সটা আবেগপ্রবণতার।তাই এত বড় একটা সিদ্ধান্ত আবেগপ্রবণ হয়ে নিও না।রাগ জেদ মন মস্তিষ্ক থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে একটু ভেবে তারপরে সিদ্ধান্ত নিও।দরকার পড়লে তোমার কাছের মানুষদের কাছথেকে পরামর্শ নাও।তবুও একটু ভেবে-চিন্তে বুঝে- শুনে তারপর সিদ্ধান্তটা নিও।

ক্ষীন সময় নিলেন রাবেয়া খাতুন।পরপর শ্বাস ছাড়লেন কয়েকবার।ফের প্রান্তির শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন।–আমার হঠাৎ এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া নিয়ে হয়তো তোমার মাথার মধ্যে অনেক ভাবনায় চলছে।কিন্তু তোমার ভাবনার কাছে আমি নিরুপায়।আমার অবস্থাটা তো দেখছো,বয়সটাতো কম হয়নি।এই আছি এই নেই।যতো দিন যাচ্ছে মৃত্যুর সময়টা ঘনিয়ে আসছে।তাই এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে আমি এতো ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছি।যেমনটা তোমার মা মৃত্যুর আগে তোমার বড় মায়ের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্তে মরতে চেয়েছিলেন।যে আল্লাহতো সকল প্রানির সর্বপ্রথম এবং পরম ভরসা।উনার উপর ভরসা রেখে একটা বিশ্বস্ত হাতে তার বাচ্চাটা-কে তুলে দিয়েই সে শান্তিতে মরতে চেয়েছিলো।পেরেছিলোও হয়তো সেজন্য শতো যন্ত্রণা ভোগ করেও হাসিমুখে মরতে পেরেছিলো।

রাবেয়া খাতুন চোখের নোনাজলটা মুছলেন।ফের একটু সময় নিয়ে বললেন।—বলাতো যায়না আমাকেও কখন আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হয়।তবে যাওয়ার আগে পারুলের মতো তোমার একটা বিশ্বস্ত হাতে তুলে দিয়ে যেতে পারলে আমি-ও শান্তিতে আর নিশ্চিতে মরতে পারি।আর মরে যাওয়ার পর যদি তোমার মায়ের সাথে দেখা হয়।তবে তাকে জেনো বলতে পারি তোর মেয়েকে আমি একটা বিশ্বস্ত হাতে সঁপে দিয়ে আসতে পেরেছি।যেটা তুই চেয়েছিলি সেটাই করে আসতে পেরেছি।

এই বয়সটা সত্যিই আবেগপ্রবণতার।রাবেয়া খাতুনের কথায় আবেগপ্রবণ হলোও প্রান্তি।এতোসময় নিশ্চুপ বসে নানিআম্মার সব কথা শুনে গেলেও, শেষের কথা
গুলো শুনে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলো-না।ফুপিয়ে কেঁদে উঠে নানিআম্মার কোলে মাথাটা রেখে শুয়ে পড়লো।প্রান্তিকে কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়তে দেখেই রাবেয়া খাতুন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। স্নেহের হাত রাখলেন প্রান্তির মাথা।যদিও নিজের কথাদ্বারা বাচ্চা মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন,যা তিনি করতে চাননি তবুও ক্ষনিকের কষ্ট যদি দীর্ঘস্থায়ী সুখের কারন হয়ে থাকে।তবে সেই ক্ষনিকের জন্য কষ্ট অনুভব করা অতি ভালো।প্রান্তির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তিনি ফের বললেন।

—দাদুভাইকে তোমার ঠিক পছন্দ নয়।কিন্তু তুমি ভেবে দেখো যে কারনগুলাের জন্য দাদুভাইকে তোমার পছন্দ নয়।অপছন্দ!সেই কারনগুলো ঠিক কি-না? আদৌ-ও যুক্তিযুক্ত কি-না?দাদুভাই মানুষটা ওরকমই।তোমার নানুভাই*ও ওরকম ছিলেন।সবার সামনে তিনি গম্ভীর আর শক্তপোক্ত স্বভাবের মানুষ।তোমার ফুফু, মামারা কখনো মুখ উঁচু করে তার সামনে কথা বলেনি।এমনকি তোমার নানুর ভাইয়েরাও পর্যন্ত।আমি-ও বিয়ের প্রথম প্রথম যখন তোমার নানুর সংসারে এলাম।সবার মতো তাকে আমিও তাকে ভয় পেতাম।কিন্তু তিনি বাহিরের জগতের সবার কাছে শক্তপোক্ত আর গম্ভীর্য স্বভাবের মানুষ থাকলেও আমার কাছে ছিলো পুরো ভিন্ন ধরনের মানুষ।প্রানখোলা।যা আমাকে তারসাথে সহজ হতে বাধ্য করেতো। প্রতিটি পুরুষ মানুষ বাহিরের জগতের কাছে যেমনই থাকুক না কেনো তার স্ত্রীর কাছে সে ভিন্নতর,অন্যরকম। খোলাসা স্বভাবের।

আবারও থামলেন রাবেয়া খাতুন। একটু থেকে প্রান্তির চোখের কোণঘেঁষে গড়া নোনাজল মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন।—যেকোনো মানুষের ভালো খারাপ দিক বা তাকে অপছন্দ করার কারন হিসাবে বিবেচনা করতে হয় তার স্বভাব চরিত্র আর ব্যবহার দেখে।তুমিও আবেগে নয় তোমার যেটুকু বুদ্ধি হয়েছে সেটুকু দিয়েই তাকে সেভাবে বিবেচনা করে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নাও যে তুমি তারসাথে সম্পর্কটা তৈরী করতে চাও কি না?বিবেচনা করে দেখো আমাদের কথা রাখা যায় কি না?আমার আর কিচ্ছু বলার নেই।এবার তুমি ভেবো দেখো।তুমি কি সিদ্ধান্ত নেবে।

কথা শেষ করে মুখ নিচু করে প্রান্তির গালে বৃদ্ধ ঠোঁটের শুষ্ক স্পর্শ দিলেন রাবেয়া খাতুন।ফের শান্তকন্ঠে বললেন।–উঠে বসো বুবুমনি।

নানিআম্মার এক কথায় উঠে বসলো প্রান্তি।মাথার মধ্য চলচে তার বিভিন্ন এলোমেলো ভাবনা।তারমধ্যে রাবেয়া খাতুন প্রান্তির মুখটা দু’হাতে আজলে নিয়ে ফের বললেন–তবে একটা কথা,সিদ্ধান্ত হ্যা বা না যাই হোক তাড়াতাড়ি জানাবে আমাকে।যতো দেরি করবে ততো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে।

.

—কি নিয়ে আমাদের প্রানোরানিটার এতো মন খারাপ?যে দাদিআম্মা তাঁকে এতো আদর দিচ্ছেন ।

কথাটা বলে প্রজ্ঞা দু’জনের দিকে এগোলো।প্রান্তি চোখ মুছে প্রজ্ঞার দিকে তাকালো।আর দাদিআম্মা ততক্ষণাৎ চোখ ইশারা করে প্রজ্ঞাাকে কিছু বোঝালেন।প্রজ্ঞা কিছু না বুঝলেও দাদিআম্মার ইশারা পেতেই চুপ হয়ে গেলো।
চুপচাপ গিয়ে বসলো দাদি আম্মার পাশে।প্রসঙ্গ এড়িয়ে প্রান্তির মাথায় হাত বুলিয়ে প্রজ্ঞা বললো।

—এখনো দাদিআম্মার অসুস্থতার জন্য মন খারাপ করে আছিস।পাগল মেয়ে দাদিআম্মা তো ঠিক হয়ে গেছেন।আর মন খারাপ করিস না।

বিনিময়ে প্রান্তি শুধু মৃদুতর হাসলো।দাদিআম্মা সুযোগ বুঝে প্রান্তিকে উদ্দেশ্য করে বললেন।-বুবুমনি তোমার বড়ো আম্মাকে একবার আমার ঘরে আসতে বলোতো, যাও।

ধীরগতিতে খাট থেকে নেমে নানিআম্মার ঘরের বাহিরে এগোলো প্রান্তি।রান্নাঘরথেকে বড়আম্মাকে ডেকে দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো সে।ড্রয়িংরুম মাড়াতে গিয়ে নজরে পড়ল,ড্রয়িংরুমের ডাবল সোফায় বসারত মানুষ দুটোর দিকেই।একজন তার বাবা, অন্যজন সেই মানুষটা।যার সাথে স্বামী- স্ত্রী মতোন একটা শক্তপোক্ত সম্পর্কের বাঁধনে আজীবন জড়ানোর ইচ্ছা পোষণ করেছেন নানিআম্মা এমনকি নিজের মৃত মা-ও ।তার জীবনের অপছন্দনীয় মানুষটা হবে নাকি নিজের অতি কাছের মানুষ।সত্যিই কি তা কখনোই সম্ভব?

নিজের জীবনে মানুষটাকে গভীর নজরে কখনো দেখা হয়নি প্রান্তির।আবিশা থেকে পরিচিত মেয়েরা বলতো মানুষটা সুদর্শন।সবার কথায় সে নজর বুলিয়েছে, দেখেছে সত্যিই মানুষটা সুদর্শন।তবে সেই সুদর্শন মানুষটাকে সবাই কেনো সুদর্শন বলে সেটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি কখনো তার।কোনো এক অদ্ভুত কারনে আজ সেটা পর্যবেক্ষণ করতে চাইলো প্রান্তির মন।কখনোই যার পক্ষপাত ছিলোনা মন আজ কোনো অজানা বশে পক্ষপাত করে বসলো।নজর দৃঢ় রেখেই সোফায় বসা শক্তপোক্ত পেটানো শরীরের উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মানুষটাকে খেয়াল করলো সে।

উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ মুখখানা বরাবরের মতোন গম্ভীর্য আর শান্ত।বুদ্ধিদীপ্ত স্থির নজরে প্রান্তির বাবার কথা শুনে চলেছে মানুষটা।শক্তপোক্ত পেটানো শরীরখানায় নেভি ব্লু কালারের পাঞ্জাবিটা মন্দ লাগছে না দেখতে।মাথার ঘনকাল চুলগুলা বরাবরের মতোই পরি-পাটি।সোফায় আঁড়গোছে বসার নিদর্শনটা-ও জেনো, মানুষটার সব কর্মকান্ডের মতো নিখুঁত থাকার প্রচেষ্টা।তবে সে যতোই মানুষটাকে অপছন্দ করুক না কেনো।সত্যি বলতে মানুষটা দেখতে সত্যিই সুদর্শন।হঠাৎ করেই মনে প্রশ্ন বিঁধলো প্রান্তির,নানিআম্মা যে সিদ্ধান্তটা তাকে জানাল।সেই সিদ্ধান্তটা কি এই মানুষটাকেও জানিয়েছে?আর জানলে মানুষটা সেই সিদ্ধান্তে রাজি কি?নিজের এলোমেলো ভাবনার একপর্যায়ে নিজেই চমকে উঠলো প্রান্তি।এগুলো সে কি ভাবছে?নানিআম্মার কথাগুলোয় তার মন মস্তিষ্ক পুরো এলোমেলো হয়ে গেছে।

—আরেহ প্রান্তি।ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো এদিকে আয়।

এলোমেলো ভাবনাগুলো ভঙ্গহলো প্রান্তির।বাবার ডাকে একটু চমকালে-ও ততক্ষণাত নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।নজর পড়ে গেলো সেই মানুষটার গম্ভীর্য নজরে।সঙ্গে- সঙ্গেই নজর সরিয়ে ফেললো প্রান্তি।ঈষৎ ইতস্তত বোধ করলো।যা কখনোই এরমটা অনুভব হয়নি।বাবার ফের ডাকে সেদিকে পা বাড়াল সে।কাছে যেতেই কবির সাহেব ডেকে পাশে বসালেন মেয়েকে।মেয়ের মুখ-পানে তাকিয়ে হঠাৎ অনুভব করলেন মেয়েটা চিন্তিত! না-হলে এরকম শান্ততো তাকে দেখা যায়না।একটু আগেও তো মেয়েটাকে কেমন উচ্ছল দেখাচ্ছিলো।তবে কি প্রান্তির নানিআম্মা প্রান্তিকে বিয়ের সিদ্ধান্তটা সম্পর্কে অবগত করেছেন।

—বাবা,আমি তোমার সাথে পরে কথা বলি?

ভাবনা কাটিয়ে ততক্ষণাত কবিরসাহেব বললেন-আচ্ছা যাও।

প্রান্তির হঠাৎকরেই মিইয়ে যাওয়া।নিজের সামনে দ্বিধা নিয়ে কথা বলা।প্রহানের নজরও এড়ালোনা।সবসময়ের দস্যিপনা করা মেয়েটার হঠাৎকরে কি হলো?যে বান্দা এরকম শান্ত হয়ে গেলো।যদিও দাদিআম্মার অসুস্থতায় মেয়েটা কেঁদেকেটে নিজের নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছিলো।তবে আজ সারাদিন তো মেয়েটাকে উচ্ছল দেখলো।তবে হঠাৎ এখন আবার কি হলো।অবশ্যই ওনার নাম প্রান্তি,তিনি কখন কোন মুডে থাকেন তিনি নিজে-ও জানেন না।সেখানে আলাদা অস্তিত্ব হয়ে তার অনুভব করা কি সম্ভব?প্রহানের ভাবনার মাঝেই গুটিগুটি পায়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো প্রান্তি।

.

শাশুড়ীমার ডাকে মাহবুবা বেগম উনার রুমে আসতেই প্রান্তিকে বলা কথাগুলো তিনি মাহবুবা বেগমকে জানালেন।মাহবুবা বেগমসহ পাশে বসে প্রজ্ঞাও চুপচাপ শুনলো।মাহবুবা বেগম বললেন।

–সব ঠিক আছে আম্মা।কিন্তু মেয়েটার এখনো আঠারো বছর পূর্ন হয়নি।এতো তাড়াহুড়ো করা কি উচিত হবে?

—আমি চাইছি শুধু কবুলটা বলে সম্পর্কটা জুড়ে যাক একে-অপরের সাথে।আর দাদু-ভাইয়ের উপরে আমার বিশ্বাস আছে।সে মোটে-ও অবিবেচক মানুষ নয়।আর না তার কথা কাজ অবিবেকচকের মতো।মেয়েটাকে সে কিভাবে গুছিয়ে রাখবে এই ভরসাটা আমার আছে তার উপর।

—তবুও আম্মা।

—তুমি প্রান্তি বুবুমনির কথা ভাবছো তাইতো?আমি-ও ভাবছি।তবে তিন কবুলের বলা সম্পর্কে অদ্ভুত একটা অদৃশ্য শক্তি আছে জানো। যেমন অচেনা মানুষের প্রতি হুটকরে টান হয়ে যায়,একে অপরের মায়ায় শরীর মন জড়িয়ে যায়।ভালোবাসার সম্পর্কের থেকে বেরিয়ে আসা গেলে-ও এই টান আর মায়ায় সম্পর্কের থেকে সহজে বেরিয়ে আসা যায়না। বের হওয়া যায়না!আমি শুধু আপতত দু’জনের মধ্যে আজীবনের বন্ধনটা গড়ে দিয়ে সেই টান আর মায়ার সম্পর্কটা তৈরী করার পথটা সহজ করে দিতে চাইছি।

রাবেয়া খাতুন একটু থেমে ফের বলতে লাগলেন–আর এখনকার যা যুগ-জামানা।ছেলেমেয়ে বিগড়ে যেতে সময় লাগেনা।আবেগ আর নজরের ভালোলাগার বয়স এটা।কখন কাকে ভালো নজরে লেগে যায়।আর সেই নজরের ভালো লাগা থেকে যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্তে জড়িয়ে যায় মেয়েটা।তবে তোমাদের ওই আদর আর ভালোবাসা দিয়ে গড়া প্রানটার জীবটা কেমন হতেপারে ভাবতে পারছো?আশেপাশে দেখছো-না।প্রতিনিয়ত কি ঘটে চলেছে।বিধায় আমরা বুবুমনির আপনজন হয়ে আমাদের কর্তব্য নয়-কি সেই ভুল পথে পদচারণ করার আগে তার প্রিয়জন হয়ে জীবনটা সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়া।যদি-ও এই সিদ্ধান্তে বুবুমনি হয়তো ভাবতেপারে আমরা তার ভালো চাইছিনা।তার অপছন্দের মানুষটার সাথে বিয়ে দিয়ে তার খারাপ চাইছি।তবে সম্পর্কটা তৈরী হতে দাও,সময় গড়িয়ে যাক।দেখবে একটা সময় গিয়ে বুবুমনি ঠিকই বুঝবে।আমরা তার ভালো চেয়েছি নাকি খারাপ?সেই বিশ্বাস দাদুভাইয়ের উপরে নেই কি তোমার?

ছেলের উপরে সেই বিশ্বাস উনার আছে।তবুও ছেলেটার উপর মাঝেমধ্যে মাথা গরম করে উল্টো পাল্টা বলে পেলেন উনি।শাশুড়ীমা’র কথার আর দ্বিরুক্তি করলেন না মাহবুবা বেগম।প্রজ্ঞা-ও নিশ্চুপ রইলো।সত্যি বলতে দাদিআম্মার সিদ্ধান্তে সে প্রচন্ড খুশী।আর দাদিআম্মা শেষের কথাগুলো এখন বাস্তবতা হয়ে সমাজের চারপাশে বিচারন করছে।কথাটা যদি-ও না হতে পারে।তবুও হবেনা এটারও বা গ্যারান্টি কি আছে।আজকাল চারপাশে যা হয়ে চলেছে।আর প্রান্তির বয়সটারও আবেগের।সেখানে প্রান্তি যদি এরকম একটা কাজ করে বসে বাড়ির সবাই মেনে নেবে।মেয়েটা ভালো থাকবে কি মন্দ থাকবে সেই সম্পর্কে সেটা’ত উপরওয়ালাই জানে।তবে তার ভাইটা ভালো থাকবে কিকরে?হয়তো সে-ও প্রান্তির ভালোটা ভেবে মেনে নেবে।কিন্তু সে ভালো থাকবে কিকরে?ভাইটাকে তো খুবভালো করে চিনে সে।বাহিরে সে কাউকে কিছু বুঝতে না দিলেও মনের মধ্যে তার কি চলতে পারে এটা কিছুটা হলেও বুঝেতে পারে প্রজ্ঞা।তাই ভাইটার ভালোভেবে দাদির সিদ্ধান্তে কথা না বলে আজ নাহয় সে একপক্ষী স্বার্থপর হলো।তবে তার ভাইয়ের সাথে প্রান্তির জীবনটা জড়িয়ে গেলে মেয়েটা কেমন থাকবে এটা সে খুব ভালো করে জানে।বাকিটা ভাগ্য।তাই এটা একপক্ষীয় স্বার্থপরতাও বলা যায় না।

—বড় বউমা।মাহমুদ আর মাসুদ বুঝি এখনো বাজারে?

মাহমুদ আর মাসুদ সাহেবের নিজস্ব ব্যবসা।বাবার ছোট ব্যবসাটার হাল ধরে দু’ভাই বিশাল বড় করে ফেলেছেন।বাড়ি থেকে কিছদুর যেতেই বড় বাজার।সেখানে বিশাল বড় কয়েকটা সিরামিকের শোরুমসহ নামকরা রড- সিমেন্টের দোকানও আছে।

—জ্বি আম্মা।

—ওদেরকে ফোন দিয়ে বাড়িতে আসতে বলো।বলো আম্মা বাড়িতে আসতে বলেছেন তাদের। ওদের সাথে আমার এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

—আম্মা আপনি সবে হাসপাতাল থেকে এসেছেন।এ বিষয়ে নাহয় পরে কথা বলবেন।ডাক্তার কিন্তু আপনাকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন।

—সুস্থ মানুষ যেখানে হুটহাট মরে যাচ্ছে সেখানে আমি তো কতোটা বছর কাটিয়ে আসলাম।বলা যায় না মৃত্যু কখন আমার দুয়ারে হানা দেয়।রাতও কাটতে না পারে।তাই আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো।

মাহবুবা বেগম আর একটা শব্দও করলেন না।নিশ্চুপ বিনাবাক্যবয়ে উঠে চলে গেলেন।প্রজ্ঞাও দাদদিমার সঙ্গে আরও কিছুসময় কথা বলে প্রান্তির রুমের দিকেই আগ্রসর হলো।

.

নিজের রুমের জানালার গ্রিলধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তি। নজরটা তার তারকা-ভরা চাঁদে উজ্জ্বলিত হয়ে থাকা বিশাল আকাশটাপানে।দাদিমার কথাগুলো সেই থেকে সে ভেবে চলেছে।অথচ নিজের মন আর মস্তিষ্কের দন্ডে উত্তর মিলছেনা।মস্তিষ্ক দাদিআম্মার কথাগুলো মানতে চাইলেও মন মানতে চাইছে না।

—কিরে মন এখনো খারাপ?

প্রজ্ঞার গলার আওয়াজে পিছে ফিরলো প্রান্তি।মুখটা অসহায় ভঙ্গিতে করে তাকিয়ে রইলো প্রজ্ঞার দিকে।দাদিআম্মা যে বুবুমনিকে বিষয়টা সম্পর্কে এতোক্ষণে জানিয়ে দিয়েছেন।বুঝতে বাকি নেই তার।

—ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?আমার অপছন্দনীয় ভাইকে বিয়ে করতে খুব অসুবিধা নাকি?

—আমার কি হ্যাঁ বলা উচিত বুবুমনি?তুমিতো আমার খুব প্রিয় একজন আপনজন।নানিআম্মা বলেছে আপনজনের থেকে পরামর্শ নিতে।বলো না বুবুমনি আমার কি করা উচিত?

প্রজ্ঞা শান্তপায়ে প্রান্তির কাছে এগিয়ে এলো।ফের দুষ্ট মিষ্টি হেসে বললো-ভাইটাতো আমার।শুধু ভাইয়ের কথা ভেবে যদি আমি স্বার্থপরের মতো বলি হ্যাঁ। তবে কি আমার কথা মানবি তুই?

—তুমি স্বার্থপর কখনোই হতে পারো-না।আর নও-ও। আমার বুবুমনি কখনো স্বার্থপরের মতো কাজ করেনা, আর কথাও সেরকম কখনো বলেনা।আমি জানি সেটা।আর আমার বিষয়ে তো কখনোই নয়।

নিজের প্রতি প্রান্তির বিশ্বাস দেখে প্রজ্ঞা নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ফের প্রান্তির মুখটা দু’হাতে আজলে নিয়ে বললো-আজ নয় একদিন ঠিকই তুই দাদিআম্মার এই সিদ্ধান্তের জন্য তাকে কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দিবি।এটা আমার বিশ্বাস।

আর কিছু বললোনা প্রজ্ঞা। প্রান্তিও জেনো প্রজ্ঞার এক কথার সংজ্ঞায় বুঝে ফেললো বুবুমনি কি বলতে চাইছে আর কি বোঝাতে চাইলো তাকে।দু’জনের কথার মাঝে মাহবুবা বেগমও প্রান্তির ঘরে ঢুকলেন।কাছে গিয়ে মমতাময়ী দৃষ্টি রাখলেন প্রান্তির মুখে।স্নেহপূর্ণ হাতটা রাখলেন প্রান্তির মাথায়।প্রান্তিও জেনো আবেগে ভাসলো।এই মানুষটা মানেই তার আবদার -অনাবদার সবকিছুই বিনামূল্যে বিনাবাক্যদ্বয়ে মেনে নেওয়া।বড়ো আম্মা ডাকটা ডাকলেও মনেপ্রাণে সে এই মানুষটাকে মা মানে।এবার সেই মায়ের সিদ্ধান্ত জানার জন্য মন উতলা হলো প্রান্তির।

—তুমিও কি চাইছো বড়আম্মা আমি তোমার ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাই?

মাহবুব বেগম মিষ্টি করে হাসলেন।প্রান্তির মাথায় রাখা স্নেহময় হাতটা প্রান্তির গালে এনে সঁপে দিলেন।ফের অতি কোমল গলায় বললেন–সবার সিদ্ধান্তের মতো আমার সিদ্ধান্ত-ও, হ্যা।তুই আমার কাছে স্থায়ীত্ব হয়েই থেকে যাবি এই সিদ্ধান্তে আমি হ্যা না জানিয়ে থাকতে পারি? খুশী না হতে বলছিস তোর বড়আম্মাকে?তবে একটা কথা, তোর সিদ্ধান্তটাই গ্রহনযোগ্য।তুই হ্যাঁ বা না যেই সিদ্ধান্তটাই নিবি আমি সেটাতে খুশী।আমি সত্যি বলছি তুই যে সিদ্ধান্তটা খুশি মনে নিবি তোর বড়আম্মা তোর সিদ্ধান্তেটাতে খুশি হবে।

কথা শেষ করে প্রান্তির কপালে আদরের ছোঁয়া বসিয়ে তিনি চলে গেলেন।তিনি মুলতে দেখতে এসেছিলেন শাশুড়ী মায়ের কথায় মেয়েটা মন খারাপ করে বসে আছে কি-না। কান্নাকাটি করছে কি-না।কিন্তু নিজের মেয়েকে প্রান্তির কাছে দেখে ভরসা পেলেন।

.
এশারের নামাজের পর বাড়ির সিনিয়র পার্টি সবাই রাবেয়া খাতুনের রুমে হাজির হলেন।মুলত তিনিই সবাই কে ডেকেছেন।সবাই আসতেই তিনি নিজের সিদ্ধান্তটা জানালেন।রাবেয়া খাতুনের কথায় কেউ দ্বিরুক্তি করল না।শুধু মাহমুদ সাহেব অর্থাৎ প্রহানের বাবা বললেন।

—আমার সোনামা রাজি তো আম্মা?সে রাজী থাকলে তাঁকে আমার কাছে স্থায়ী করে রেখে দিতে তো কোনো সমস্যা নেই।

নিজের বোনটাকে মাহমুদ সাহেব খুবই ভালোবাসতেন। বোন অন্ত জান ছিলো উনার।মেয়েটাকে মনে পড়লে এখনো নামাাজে বসে কাঁদেন তিনি।আর সেই বোনের বাচ্চাটা তার কি।সেটা শুধু তিনিই জানেন।

—আপনার সোনামা রাজি, বাবা।

দরজায় দাড়ানোর প্রজ্ঞার কথা শুনে সবার মুখে হাসি ফুটলো।প্রজ্ঞাও হাসলো ক্ষীন।মেয়েটা অনক দ্বিধান্বিত হয়ে তারপর মতামত জানিয়েছে।হয়ত তার আপনজন প্রিয়জনদের মুখ চেয়ে।তাদের কথা রাখতে।সামনে এই সম্পর্কটা কেমন গড়াবে তার জানা নেই।তবে প্রহানের প্রতি ভরসা আছে তার।

.
নিজের ঘরের আরামদায়ক বিছানার উপর দুহাতে মাথা চেপে বসে প্রান্তি।সবার চাওয়ায় আর হাসিখুশি মুখের দিকে তাকিয়ে হ্যা তো বলে দিয়েছে সে।তবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা সম্পর্কে তার ভালোমতো জানা আছে।ওই মানুষটাকে তার সেভাবেই মেনে নিতে হবে।ভাবতেই শরীর হিম হয়ে আসছে তার।হাত পা সব মরা মানুষের মতো শীতল অনুভব অনুধাবিত হচ্ছে।

—ওই কাঠখোট্টা মানুষটাকে স্বামীরূপে মানবে কিকরে সে।সম্ভব কি?

চলবে….

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আর যাদের গল্পের বর্ননা পড়তে পছন্দ নয়।আমার গল্প তারা এড়িয়ে যাবেন।গল্প উপন্যাস মানে শুধু নায়ক নায়িকা আর তাদের অনুভূতি আর রোমান্টিকতা নয়।একটা গল্পে আরও বিভিন্ন চরিত্র জড়িয়ে থাকে,তাদেরও আবেগ অনুভূতি থাকে।তাদের আবেগ অনুভূতি,মনের কথাগুলো প্রকাশ করাটা আমি জরুরি মনে করি।বিধায় বর্ণনা গুলো বড় হয়ে যায়।আর আমি হালাল সম্পর্কের রোমান্টিকতা বরাবরই পছন্দ করি।সেটা গল্পে লিখতে হোক বা বাস্তবে।বিধায় প্রহানের আর প্রান্তির সকল রোমান্টিকতা আমি তাদের বিয়ের পর লিখতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করবো।কেউ রাগ হবেন না প্লিজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here