রাঙিয়ে_দাও #পর্ব_(৭) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
249

#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব_(৭)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

মুখে মিষ্টি হাসি প্রজ্ঞার।এই মিষ্টি হাসিটা জেন নিদারুণ মানায় তার গোলগাল মাায়াবিনী মুখশ্রীতে।মুখে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটিয়ে প্রহানের রুমের দিকেই এগিয়ে চলেছে সে।কাঙ্ক্ষিত দরজার সামনে যেতেই দাঁড়িয়ে পড়লো।ভিড়ানো দরজায় উঁকি দিতেই দেখলো,গভীর মনোযোগ সহকারে বই পড়ে চলেছে প্রহান।ওদিকে তার জীবনচক্রটা পাল্টে যেতে চলেছে।সেখানে পদার্পণ হতে চলেছে তারই মনে-প্রানে চাওয়া সেই দস্যি-পনা দূরন্ত মানবীর।অথচ সেই সম্পর্কে বেমালুম অজ্ঞত সে।আচ্ছা খবরটা শুনলে তার ভাইটার এক্সপ্রেশন কেমন হবে?অনাকাঙ্ক্ষিত চাওয়াটা হঠাৎ করে পাওয়ায় পরিনত হওয়ায় ছেলেটা চমকাবে কি?খুশিতে আত্মহারা হবে?না-কি সব-সময়ের মতোই জীবনের স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার স্যাপার ভেবে বরাবরের মতোই শান্ত থাকবে?

থাকলে-ও থাকতেই পারে!ও প্রহান!কেনো যে ছেলেটা এতোটা অনুভূতিশূন্য হলো বুঝতেই পারেনা প্রজ্ঞা।বাচ্চারা নাকি মা-বাবা যেকোনো একজনের জিন পায়।অথচ এই ছেলে কার জিন পেয়েছে,সে ভেবে পায়-না।তার বাবা -মা তো এতোটা অনুভূতি শুন্য তো কখনোই নয়।মুলত তার চৌদ্দ গুষ্টিতে এরকম কোনো ব্যক্তি আছে বলে তো মনে হয়-না প্রজ্ঞার।তবে দাদু নাকি কিছুটা ওরকম ছিলেন।কিন্তু দাদিআম্মাকে তো প্রায়ই গল্প করতে শুনেছে,দাদু বাহিরের সবার কাছে গম্ভীর্য স্বভাবের থাকলে-ও দাদিআম্মার কাছে ছিলেন নাকি অন্য রকম মানুষ।প্রানউচ্ছল আর বাহিরের মানুষের জানার পুরো বিপরীত।তাহলে কি প্রহানও সেই গুনটাই পেয়েছে।সে-ও কি দাদুর স্বভাবটাই পেয়েছে।তবে কি সেরকমটাই হবে?শুধু প্রান্তির কাছে ভাইটা তার,তাদের জানা অন্যরকম মানুষটা হয়ে থাকবে।

কথাগুলো ভাবতে গিয়ে মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলেও সেই হাসিটা পুনরায় মুখে ফুটিয়ে উঠল প্রজ্ঞার।কিছুটা অস্পষ্টস্বরে বললো—তবে তাই হোক।বাহিরের মানুষের কাছে তার ভাইটা যেমনই জানা থাকে থাকুক না,শুধু প্রান্তির কাছেই অনাবৃত মনের হয়ে থাকুক। ওরা দু’জন দু’জনকে ভালোবেসে একে-অপরকে বুঝে-শুনে খুব ভালো থাকুক।তবেই হবে।

—ওখানে দাঁড়িয়ে একা-একা কি বকে চলেছো বুবুমনি?তোমার আবার এই একা বকার রোগে পেলো কবে থেকে।নাকি সঙ্গ দোষ?

সঙ্গ-দোষ বলতে কথাটা প্রহান কাকে বুঝিয়েছে প্রজ্ঞা বেশ বুঝলো।মুখের মিষ্টি হাসিটা দুষ্টমিতে পরিনত হলো প্রজ্ঞার।ঘরের ভিতর ঢুকে প্রহানের দিকে এগোতেই বললো–হয়,সঙ্গদোষই হয়েছে।তবে সঙ্গদোষের দোষিটা আমার সঙ্গ ছাড়িয়ে কার সঙ্গিনীতে স্থানতর করা যাই সেটাই মূলত ভাবছি।

বুবুর খোঁচা দেওয়া কথাটার মানে বুঝতে সময় নিলোনা প্রহান।চুপচাপ ফের নিজের কাজে মন দিলো প্রহান।
কাঁধে চাপাইনি তাই যা জ্বালাতন।আর কাঁধে চাপাইলেই তো কাঁধটা সেই জ্বালাতনের রানি নিজেরই ভেবে নেবে।
প্রহানকে ফের বইতে মনোযোগী হতে দেখে প্রজ্ঞাও ধীর পায়ে প্রহানের কাছে গিয়ে বিছানায় উপর বসলো।অতি মনোযোগ দিয়ে পড়া বইটা তার হাত থেকো কেঁড়ে নিয়ে বিছনার অন্যত্র পাশে রেখে দিলো।ফের বললো।

—পড়াশোনা পরে করবি ভাই।আগে নিজের মতামতটা জানা।দাদিআম্মা তোর কাছে পাঠিয়েছেন তোকে সিদ্ধান্তটা জানানোর জন্য আর তোর সিদ্ধান্তটা জানার জন্য ।

কপালকুঁচকে ফেললো প্রহান।তার সিদ্ধান্ত মানেটা কি? কিসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দাদিমা যারজন্য তার সিদ্ধান্ত জানাতে হচ্ছে,তাকে মতামত দিতে হচ্ছে।আর বুবুমনিও কথা জীবনে সোজাসুজি বলতে পারে-না।যেটা বলবে কথার শেষে গিয়ে মুল কথটাই সর্বশেষে বলবে।মুলকথা টা যে আগে বলা প্রয়োজন সেটা কখনোই বলবেনা।

— কিসের মতামত?

মুখের মিষ্টি হাসিটা বেশ প্রসারিত করল প্রজ্ঞা।তারপর ভ্রূজোড়া নাচিয়ে বললো–তোর বিয়ের মতামত।

হঠাৎ নিজের বিয়ের কথা।চমকে উঠার কথা থাকলেও চমকালো না প্রহান।তবে একটু নড়েচড়ে বসলো।ফের স্বাভাবিক গলায় বলল।—মানেটা কি?হঠাৎ দাদিআম্মা ছোটচাচ্চুকে রেখে আমাকে নিয়ে পড়লেন কেনো?আর কার সাথে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি,শুনি?

—তোর প্রাণোনাশিনীর সাথে।

এবার মনেমনে বেশ চমকাল প্রহান।তবে মুখের আদলে সেটা প্রকাশ করলো না।বাক্যও কিছু সময় বন্ধ রাখল।ফের বললো–দাদিআম্মার হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কি?

নিজের মুখের হাসিটা মিলিয়ে নিয়ে এবার প্রজ্ঞাও একটু গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করলো।দাদিআম্মা যেটুকু বলতে বলেছেন।সীমাবদ্ধতা রেখে সেটুকু বললো প্রজ্ঞা।
কথাগুলো শান্ত মনোযোগে শুনে সেরকমই শান্ত গলায় প্রহান বললো-শুধু আমার মতামতটা জানতে এসেছো? তার মতামত জানার প্রয়োজন নেই?

—সে মতামত জানিয়েছে।

এবারও মনেমনে বেশ আশ্চর্য হলো প্রহান।তার কিছুটা প্রভাব মুখেও পড়লো।নিটোল কপালটায় কিছুটা ভাজ পড়ল।সেভাবেই কপাল কুঁচকে সে বললো–কি সিদ্ধান্ত জানিয়েছে?

—আমার মায়ের আদূরী বিড়ালটা,আমার কাঠখোট্টা ভাইটাকে বিয়ে করতে রাজি।

নিজের আশ্চর্যের সীমা পার হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এবারও শান্ত দেখা গেলো প্রহান’কে।এতকিছু তার অগোচরে হলো কখন?আর হঠাৎ নেওয়া দাদি আম্মার সিদ্ধান্তটা বিনাবাক্যবয়েই মেনে নিলো মেয়েটা? এটা কি কখনোই সম্ভব?কখন সিদ্ধান্ত নিলো,কিভাবে কি হলো এসব?

—জোর করে তারউপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছো?নাকি ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল।কোনটা?

মেজাজ খারাপ হলো প্রজ্ঞার।সে যেমন ধৈয্যশীল তেমন আবার হঠাৎ করেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।চোখ-মুখ কুঁচকে বেশ অসন্তুষ্টতা গলায় বললো–তোর মনেহয় আমরা ওর উপরে জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছি? সে আমাদের কাছে কি এটা জানিস না তুই? মনে নেই তোর?আমাদের কথা বাদই দিলাম তোর মায়ের কাছে মেয়েটা কি সেটা ভুলে গেলি?তারউপর দাদিআম্মা যদি জোরকরে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়,বাড়ির সবাই মানলে-ও তোর মা মেনে নেবে এটা মনেহয় তোর?তোর মা মানবে সেটা?নিজের সন্তান হওয়া সত্ত্বে-ও, ছেলের মনের মধ্যে কি চলছে সেটা বুঝতে পারার পর-ও,যে মা সেই মেয়ের বিরুদ্ধে না গিয়ে, তাঁকে না বুঝিয়ে তার সকল আবদার অনাআবদার এককথায় বিনাবাক্যে মেনে চলেছে।
মায়ের ওই পোষা পাখিটার প্রতি এতো মায়া,ভালোবাসা যে নিজের সন্তানের ভালোমন্দের কথা ভেবেও কখনোই সেই পাখিটার বিদ্ধচরণ করেনি।সেই মা এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত মেয়েটার উপর চাপিয়ে দেওয়া মেনে নেবে কখনো?এবাড়ির কেউ সেটা মানবে বলে মনেহয় তোর,বল?আর দাদিআম্মাকে-ও এতোটাও অবিবেচক মনেহয় তোর?যে নিজের আদরের মেয়ের বাচ্চার উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মতো এতোটা-ও অমানবিক হবেন তিনি?একজন জ্ঞানী বুদ্ধি-সম্পন্ন বিচক্ষণ মানুষ হয়ে জেনেশুনে বাড়ির মানুষের প্রতি এরকম ধারনা তোর কাছ থেকে আশাকরা যায়না ভাই।তার ভালোমন্দ ইচ্ছে অনিচ্ছে নিয়েই কি শুধু তোর চিন্তা এবাড়ির আর অন্য কারও নয়।এরকমটা তুই কখনোই ভাবতে পারিস না ভাই!ভাবা উচিত নয় তোর।

প্রহান বুঝলো বুবুমনি তার কথায় রেগে গেছে।হওয়ারই কথা।প্রশ্ন সে সেরকমই করেছে।গোটা জীবনের প্রশ্ন তবে কেনো সে করবেনা?করা অবশ্যই উচিত।এখনোও করবে সে।তাতে বুবুমনি তাকে বকাঝকা যাই করুক আপত্তি নেই তার।

—তবে সে রাজি হলো কি-করে? তার রাজী হওয়াটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে বলছো আমায়?

এটা যে তার বিজ্ঞ ভাই প্রহান সেটা মনেহয় বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো প্রজ্ঞা।আর প্রান্তির বিষয় যখন, তখন তো মাথায় শক্তপোক্তভাবে গেঁথে নিয়ে আরও খেয়ালে রাখা উচিত ছিলো।সংগোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রজ্ঞা ফের বললো—তবে তুই যে ধারনাটা করছিস সে রাজি হলো কি করে?রাজী হওয়ার কথাতো তার নয়?সত্যি বলতে তাকে বুঝানো হয়েছে।নিশ্চয় যে-কোনো মেয়ের তার ভালো-মন্দের ভবিষ্যতের জন্য বোঝানোর দ্বায়টা তার পরিবারের।সেই বুঝটা শুধু মেয়েটার নিজের একার নয়।এখানে তার ভালোমন্দের ভবিষ্যতের জন্য আমরা ওর প্রিয়জন হয়ে দায়বদ্ধতাটা পালন করেছি শুধু।তবে না আমরা সিদ্ধান্ত ওর উপরে চাপিয়ে দিয়েছি।আর না জোর করে মতামত নিয়েছি।

—ওর এখনো আঠারো হয়নি বুবুমনি।

এবার সত্যিই প্রহানের উপর প্রচুর বিরক্ত হলো প্রজ্ঞা। মুখের অবয়বে আর নজরে সেটা বেশ ফুটিয়ে রাগান্বিত গলায় বললো–তুই কি এসব কথা বলে বিয়েতে অনিচ্ছুকতার কথা প্রকাশ করতে চাইছিস?তবেকি তুই প্রান্তিকে বিয়ে করতে রাজি না?এতো কথা না বলে এটা বল আমাকে?তুই বিয়ে করতে রাজি কি না?

প্রহান না চাইতেও হেসে ফেললো।বুবুমনি যে তার প্রশ্নে যেমন অতি বিরক্ত হয়ে গেছে তেমন রাগান্বিতও।মুখের মৃদু হাসিটা বজায় রেখে সে বললো–রেগে যাচ্ছো কেন বুবুমনি?তোমরা-তো একসূতোয় বেধে দিয়ে নিশ্চিন্ত। কিন্তু সেই সূতোর টানটা তো আমাকেই সামলাতে হবে।আর ওই দস্যিকে-ও।তাই সবটা বুঝেশুনেই এগোনো ভালো নয় কি?

বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো প্রহান।বেড থেকে বইটা নিয়ে
শান্ত পায়ে নিজের রুমের বিশাল বড় বুকশেলফটার দিকে এগোতেই বললো—সবার সিদান্তটা মেনে নিয়ে নিজে মতামত প্রকাশ করে এই বিয়েতে সে রাজি হচ্ছে, যেমনটা তুমি বলছো আমাকে।অথচ দেখে নিও,বিয়ের হওয়ার পরে আমি কেনো বিয়েতে রাজি হয়েছি সেটা নিয়েই জ্বালিয়ে মারবে আমাকে।মাথা খারাপ করে দিয়ে, উতলা বানিয়ে ফেলবে।এখন তুমিই বলো,তার বিষয়ে জেনেশুনো রাখা উচিত নয় কি?

প্রহানের কথায় বিরক্ত কাটিয়ে এবার খিলখিল করেই হেসে উঠল প্রজ্ঞা।ভাইটা তার মন্দ বলেনি।মেয়েটা শুধু প্রহানের ক্ষেত্রেই এমন।প্রজ্ঞার এমন খিলখিলিয়ে হাসিতেও কোনো প্রভাব পড়লোনা প্রহানের উপর।সে নিজের কাজে ব্যস্ত। বইটা গুছিয়ে রেখে অন্য কি বই পড়বে সেটা মনস্থির করতে ব্যস্ত। সেটা দেখে কিছুটা কৈফিয়তেরস্বরে প্রজ্ঞা বললো–ওর যে এখনো বয়সটা হয়নি সেটা আমাদের সবার জানা।আর এই বিষয়ে সবাই কথা বলেছে-ও।তবে দাদি-আম্মার তার নাতির উপরে অগাধ বিশ্বাস। তাই আপতত আকদটা সেরে রাখতে চাইছেন তিনি।

কথা শেষে তবুও প্রহানকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে প্রজ্ঞা ফের বললো।—একটু পরেই কাজি সাহেব আসবেন।দাদিআম্মা মতামত জানার পর তোকে রেডি হয়ে নিতে বলেছেন।

হাত থামলো বুকশেলফে রাখা বইয়ের ফাঁকেই। মনের মধ্যে অনুভূতির কিছুমিছু প্রকাশ চললো তবে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে প্রহান পিছে ফিরলো।কপালটা কিঞ্চিৎ কুঁচকে ফেলে বললো—দাদিআম্মা পাগল হয়ে গেছেন নাকি?এতো তাড়াহুড়োর কি আছে?আর এভাবে হঠাৎ বললেই বিয়ে হয়?

—দাদিআম্মার দিকটা কেনো ভাবছিস না ভাই।তোকে বললাম তো তিনি এই ভয়ে আছেন।হুটকরে তিনি মারা গেলে তখন যদি প্রান্তিকে কেউ মানাতে না পারে?আর তিনি মুলত প্রান্তির বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন।তাই এতো তাড়াহুড়ো করছেন।

প্রহান আর কিছু বললো না।প্রজ্ঞাও কিছুসময় নিশ্চুপ থাকলো।ফের উঠে দাঁড়িয়ে বললো–তোর ফ্রেন্ডের মধ্য এখন বাড়ির কাছে বলতে ফারহান আর মাহিম আছে।ওদেরকে ডেকে নে।পরে নাহয় সবাইকে জানানো যাবে।

আর কথা না বাড়িয়ে প্রহানের রুম ত্যাগ করলো প্রজ্ঞা।প্রহানও সেদিকে বেশ কিছুসময় তাকিয়ে নিঃশব্দে শ্বাস ফেললো।মেয়েটার সাথে কি তার একবার কথা বলে নেওয়া উচিত?নাকি যেটা হচ্ছে সেভাবেই হতে দেওয়া উচিত?

.

রাত দশটার দিকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রহান আর প্রান্তির বিয়েটা হয়ে গেলো।আশ্চর্য হয়ে সবকিছু শুধু দেখে গেলো প্রান্তি।সে মনে করেছিল,সে মতামত দিলে-ও ওই মানুষটা কিছুতেই মতামত দেবেনা।তাঁকে কখনোই বিয়ে করতে রাজি হবেনা।কিন্তু কি সুন্দর সবার কথা মেনে নিয়ে বান্দা বিয়েতে রাজি হয়ে গেল।জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম আশ্চর্য হলো সে আজকে!এখন মনেহচ্ছে ওই মানুষটাকে অন্ধ ভরসা করা তার একটুও ঠিক হয় নি।নানিআম্মাকে বুঝিয়ে বলা উচিত ছিলো।এখন ওই মানুষটার সাথে স্ত্রী স্ত্রী টাইপের ব্যবহার করবে কি করে সে?আর ওই মানুষটা তো নিশ্চয় এতোদিনের করা অবাধ্যতামী,জ্বালানোর রাগক্ষোভটা তার উপর মিটাবে নিশ্চয়।এই বিষয়গুলো তো সবার ইমোশনাল কথার মধ্যে তার মাথাতেই ছিলো।এখন কি হবে তার?কবুল বলার আগ সময় থেকেই এই কথাগুলো ভেবে চলেছে সে।কিন্তু ভেবে আর কি হবে?কথাগুলো ভাবতে যে তার বহুত দেরী হয়ে গেছে।

–কিরে বাঁধনহারা,অপছন্দের মানুষটার মান্যতা স্বিকার
করতে এতো তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে গেলি।

কথাটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লাগলো প্রান্তির। তাই মুখটা গোমরা করে বললো–এখন একথা বলছো।তখন কেনো সম্মতি দিলে?কেনো আমাকে এতো করে বোঝালে?

প্রান্তির মুখ গোমরা রেখে বলা কথাগুলা শুনে শব্দকরে হেসে ফেললো হাবিব।বিয়েটা হয়েছে এখান থেকে আধা ঘন্টা আগে কবুল বলার কিছু সময় পর মেয়েটা নিজের ঘরে চলে এসেছে।তারপর থেকে এক এক করে তার খোঁজ নেওয়ার জন্য কেউ না কেউ ওর রুমে চলে আসছে।প্রান্তির কাছে গিয়ে দাড়ালো হাবিব।- বললো

—লাল শাড়িতে তোকে আজকে একদম কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো সৌন্দর্যময়ী দেখাচ্ছে-রে বাঁধনহারা।কি অপরূপা লাগছে তোকে।

মামার কথার ভঙ্গিমায় প্রান্তি লজ্জা পেলো।এই সুন্দর লাল জামদানী শাড়িটা বড়মা তাকে দিয়েছে।এত রাতে গোসল করে শাড়িটা সুন্দর করে পরিয়ে দিয়েছে তাকে বুবুমনি।শুধু শাড়িটা পরা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো সাজ নেই শরীরে।না কোনো অলংকার আর না কোনো সাজসজ্জা।তবুও মামা এমন করে বলছে।তবে শুধু মামাতো নয় এই শাড়িটা পরার পর যে দেখেছে সেই-ই তার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছে।

—তবে আমাদের এই বাড়িতে এরকমই একটা লাল টুকটুকে বউয়ের দরকার ছিলো।সেটা তুই এই সংসারে স্থায়ী হয়ে থেকে গিয়েই পূর্ণ করে দিয়েছিস।তোর সিদ্ধান্তে আমি খুব খুশি হয়েছি বাঁধনহারা।

মামার কথায় পুনরায় সব ভুলে আবেগপ্রবণ হলো প্রান্তি। চোখে জমে গেলো নোনাজল।সেদিকে লক্ষ্য করে হাবিব হাত বাড়িয়ে মুছিয়ে দিয়ে প্রান্তির কপালে স্নেহের পরশ ছোঁয়ালো।ফের অতি নরম কন্ঠে বললো।

—আমি দোয়া করি খুব খুব ভালো থাকিস তুই।আর প্রহানের উপরও আমার বিশ্বাস আছে দেখিস ও তোকে খুব খুব ভালো রাখবে।খুব খুব যত্নে রাখবে।

কথা শেষ করে প্রান্তির মুখের উচ্ছল রেশটুকু পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য বেশ কৌতুকপূর্ণ গলায় বললো–
—তবে একটা কথা,তুই আগে যেমন জ্বালাতিস ওকে এখন থেকে আরও বেশি বেশি করে জ্বালাবি। কেমন?

মামার কথায় মন খারাপটা মূহুর্তেই কেটে গিয়ে মুখে উচ্ছল হাসি ফুটলো প্রান্তির।মুখে কিছু না বললেও মাথা উপর নিচ ঘনোঘনো নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।অর্থাৎ মামা তোমার কথা শিরোধার্য মানতে রাজি প্রান্তি।সেটা দেখে হাবিব-ও জোরেশোরে হেসে দিলো।দু’জনের হাসি দেখে দরজার আড়াল থেকে তৃতীয় ব্যক্তিও মৃদু হেঁসে চলে গেলো।

.
রাত প্রায় এগারোটা বাজে, নিচে বাড়ির মানুষসহ কিছু আমন্ত্রিত মানুষের খাওয়া দাওয়ার পর্ব চলছে।সেদিকে লক্ষ্য নেই প্রান্তির।নিজের রুমে বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে সে।একটু আগে বড়আম্মা এসে তাকে খাইয়ে দিয়ে গেছে।আর বলে গিয়েছে ঘুমাতে।কিন্তু ঘুম তার কিছুতেই আসছেনা।আবিশার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।মেয়েটা তার হঠাৎকরে বিয়ে হওয়া সম্পর্কে জানলে কি রকম রিয়াকশন দেবে সেটাই ভাবছে প্রান্তি।শুধু সেটা নয় এটাও ভাবছে যদি মেয়েটা শোনে প্রহান মাহমুদের সাথে তার বিয়ে হয়েছে তবে নিশ্চিত হার্ট-অ্যাটার্ক করবে।দাদিআম্মাকে সিদ্ধান্ত জানানোর পর মেয়েটার সাথে চেয়েও কথা বলতে পারিনি সে।তার বিয়ে হয়ে গেলো অথচ মেয়েটা বিয়েতে থাকতে পারলো না।মন খারাপ হলো প্রান্তির। দুই বান্ধবীর বিয়ে নিয়ে দুজনের কতো ইচ্ছে আকাঙ্ক্ষা ছিলো।সব পানি হয়ে গেলো।

দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রান্তি।সেই কখন থেকে মেয়েটার লাইনে আসার অপেক্ষা করছে অথচ আজ তার খোঁজ নেই।কি করছে কে জানে?তার ফোনেও টাকা নেই যে কল করে জানবে।প্রান্তির ভাবনার মাঝে লাইনে এলো আবিশা।কয়েকবার নক করলোও।তবে প্রান্তিকে রিপ্লাই দিতে না দেখে ভিডিও কল করলো সে।ফোন ভাইব্রেট হতেই ভাবনা কাটলো প্রান্তির।আবিশা কল করেছে।মেয়েটা লাইনে আসলো কখন?মেসেজ নোটিফিকেশন ও দেখা যাচ্ছে। তারমানে নকও করেছে।ফোনের নক নোটিফিকেশন সাউন্ড বন্ধ থাকা খেয়াল হয়নি তার।

কল রিসিভ করতেই কপাল কুঁচকে গেলো আবিশার।বললো–এতো নক করি রিপ্লাই দিসনা কেনো?আর এতো রাতে শাড়ি পরে এরকম পুতুল সেজেগুজে বসে আছিস?ব্যাপার কি বান্ধবী,দুলাভাই আসবে নাকি রাতে?

কথাটা বলে হো হো করে হেসে দিলো আবিশা।এরকম ফাজলামো তারা প্রায়শই করে থাকে।আবিশার হাসি খুশী মুখটা দেখে প্রান্তির মুখটা অসহায়পনা হয়ে উঠল। কয়েক সেকেন্ড কাচুমাচু করে সে বললো–আমার না বিয়ে হয়ে গেছে আবিশা।

কথাটা শুনে আবিশার আকাশ থেকে পড়ার মতো এমন একটা রিয়াকশন হওয়া উচিত ছিলো।কিন্তু সেটা সে মোটেও করলোনা বরং প্রান্তির কথাটা সিরিয়াস না নিয়ে সে পুনরায় ফাজলামো করে বললো—তা বিয়ে যখন হয়ে গিয়েছে তুই তোর বাড়িতে তোর রুমে, কি করছিস?তোর তো তবে ফুলসজ্জার রাত আর সেখানে
তো এখন রোমান্সে ভরপুর থাকার কথা।কিন্তু তুইতো দেখি তোর বেডে একা বসে আছিস।দুলাভাই কে নজরেই পড়ছে না।

আবিশার কথা শুনে প্রান্তির কান ঝা ঝা কটে উঠলো। অন্যদিন হলে এসব নিয়ে দু’জনেই ফাজলামো করতো তবে আজ আবিশার কথা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সে বললো।—সত্যিই আমার হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে গেছে আবিশা।

—তবে দুলাভাইকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস?তোর হৃদয়ের গহীনে?

এবারও সিরিয়াসলি নিলো না আবিশা।প্রান্তি বুঝলো এটা তাদের ফাজলামোর ফল।প্রাঙ্ক করতে করতে এরকম একটা পর্যায়ে চলে যেতো যে একে অপরের কথা তারা বিশ্বাস করতো।ফের পরে কি হতো,যে সেটা প্রাঙ্ক ছিলো।এখন আর সহজে ফোনে কেউ অদ্ভুত কিছু বললে কেউ কারও কথা বিশ্বাস করেনা।আজ নিজের উপর নিজেরই মেজাজ খারাপ হলো প্রান্তির।বুঝলো অতি ফাজলামোর মজা এরকমই ফল দেয়।নিজেদের জালে নিজেরাই ফাঁসা যারে বলে। সেরকমটা হয়েছে।কিছুতেই আবিশাকে বিশ্বাস করাতে পারলোনা,যে তার সত্যিই বিয়ে হয়ে গেছে।শেষমেশ রাগে রেগেমেগে গিয়ে ফোন কেটে দিলো প্রান্তি।শেষে আবিশাকে একটা মেসেজ দিয়ে ফোন রাখতে গিয়ে দেখলো আননোন নম্বর থেকে একটা ফোন মেসেজ এসেছে।মেসেজ দেখার আগে নম্বরটা গভীর মনোযোগে খেয়াল করলো সে।নম্বরটা তার পরিচিত।তবে সেইভ করা হয়নি ইচ্ছে করেই।

নম্বরটা দেখে কোনো কারন ছাড়াই হঠাৎই সমস্ত শরীর কাটা দিয়ে উঠলো প্রান্তির।তারপর মেসেজটা পড়তেই
হৃদস্পন্দন কিছু সময়ের জন্য থেমে রইলো তার।

—আর কখনো লাল শাড়ী পরিস না।বুকে কাঁপন ধরে, নজরে নেশা লেগে যায়।চেয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়না রে…

চলবে….
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।লেখার পরে রি-চেইক করা হয়না।বিধায় অনেক টাইপিং মিস্টিক থাকে।সেগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর শরীর প্রচন্ড খারাপ।নিজের ভালো মন্দ সম্পর্কে জানাতে কখনো সাচ্ছন্দ্য বোধ করিনা।তবে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে।পর্বটা দেরিতে দেওয়ার জন্য পারলে মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here