রাঙিয়ে_দাও #পর্ব(১০) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
242

#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব(১০)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

একাধারে কথা বলে চললো প্রহান।তবে ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফোন কান থেকে নামিয়ে একবার দেখে নিলো।নাহ,লাইন তো কেটে যায়নি।তবে হঠাৎই কেনো নিশ্চুপ হয়ে গেলো মেয়েটা?কপাল কুঁচকে শান্ত নজরে ফোনের দিকেই নিষ্পলক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো প্রহান।ধূর্ত মস্তিষ্কের নিউরনে খেলে গেল অন্যকিছু।ততক্ষণাৎ ভাসমান চোখজোড়ার দুয়ার ক্ষীন সময়ের জন্য বন্ধ করে নিলো সে।বুঝতে পারলো, তার গুপ্ত ভালোবাসার নিদর্শন কিছুটা হলে-ও প্রকাশ্য পেয়েছে।যা সহজেই প্রকাশ করতে চায়নি প্রহান।তবে ভাগ্য হয়তো অন্যকিছু চাইছে,তাই না চাইতে-ও তার লুকায়িত ভালোবাসার কিছু নিদর্শন নজরে পড়ে গেছে মেয়েটার।কিন্তু উপঢৌকনগুলাে যার জন্য সংগ্রহ করা তাকে তো দিতেই হতো।আজ না হলে-ও কাল অথবা যেকোনো একদিন।তবে এতো তাড়াতাড়ি নিজের লুকায়িত ভালোবাসাসরূপ উপঢৌকনগুলো প্রকাশ্য করতে চায়নি প্রহান।কারন তো আছেই!তবে যার জন্য ওই উপঢৌকন গুলো তার যখন নজরে পড়ে গেছে তবে আর কি!সে-ও একপা এগিয়ে যাক।এগোতে তো হবেই।
ধীরেসুস্থে ফোনটা কানে নিলো।সবসময়ের গম্ভীর্যতা বজায় রাখা কন্ঠটায় রাজ্যের কোমলতা এনে ওপাশের রমনীকে ডেকে উঠলো সে।

—প্রান।

কোমল কন্ঠের আদূরী ডাকটা ফোনের মধ্য থেকে কানে ভেসে আসতেই চমকে উঠলো প্রান্তি।শুধু নিজের বহির্ভাগ চমকিয়ে উঠেছে এমনটা নয়।ছোট্ট শরীরটার
ভিতর বাহির সবটা জুড়েই কেঁপে উঠেছে তার।সমস্ত শরীরে কম্পন ধরিয়ে দিয়েছে ওই ছোট্ট আদূরে কোমল ডাকটা।এ কেমন অনুভূতিতে কাঁপছে শরীর- মন যা দুরন্ত তাকেও এতদিনের অপছন্দের মানুষটার বিরুদ্ধে থামিয়ে দিতে চাইছে।থেমে গেছে সে।সেদিন রাতের পর তার ঘুমটা হারাম করে দিয়েছে ওই অপছন্দনীয় মানুষটা।যা সে প্রকাশ করতে চাইনি। অন্য কার-ও তো দূর নিজের কাছে-ও স্বীকার করেনি।সেদিন মনে হয়েছিলো পবিত্র সম্পর্কের টান হয়তো এই অনুভূতি।মনকে বুঝিয়ে শুনিয়েই এই পর্যন্ত।কিন্তু ইদানীং ওই অপছন্দনীয় মানুষটার কর্মকান্ড তাকে আর-ও দূর্বল করে দিচ্ছে।তবুও নিজের মনকে যতসম্ভব বুঝিয়ে নিজেকে সংবরণ করে রেখেছে সে।কিন্তু আজ এসব কি দেখছে সে?প্রহানের প্রানের উপঢৌকনাদি..নিজেকে আর কি-করে ওই মানুষটার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণে রাখবে সে?পারবে কি?

অনুভূতির অতলস্পর্শে ডুবে গিয়েছে প্রান্তি।ওপাশে যে কেউ একজন তাকে ডেকে চলছে সেদিকে তার খেয়াল নেই।মানুষটাও হয়তো,নজরের আড়ালে থাকা প্রান্তিকে বুঝতে পারলো।পুনরায় কোমলকন্ঠে ডেকে উঠলো।

—এই প্রান।

আগের থেকে-ও দ্বিগুণহারে চমকে উঠলো প্রান্তি।হঠাৎ ডাকে নিজেও সাড়া দিয়ে বসলো—হুমম।

—যেখানে তোর নজর আটকিয়ে আছে ওগুলো সবই তোর।অপছন্দনীয় ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বে-ও বিয়েটা সেই করলি আমাকে অথচ তোর পাওনাটা দাবি রাখলি-না।যদি-ও সবার ইচ্ছেটা মানতে বিয়েটা করেছিস।তবু-ও সম্পর্কটা তো মিথ্যা নয়।তুই না মানলে-ও আমি মানি সম্পর্কটা।তাই তোর পাওনাটা আমি নিজ দায়িত্বে গচ্ছিত রেখেছি।যদি-ও অপছন্দের মানুষের দেওয়া উপহার তবুও পাওনাটা তো তোরই।নিয়ে নিস।

একটু থামলো প্রহান।থামাটা জেনো কোনো কারনে প্রয়োজন মনে করলো সে।প্রান্তিও নিঃশব্দে শুনে যাচ্ছে কথাগুলো।প্রহান ফের বললো।

—মোহরানাটা তুই দাবী না করলে-ও ওটা অধিকার তোর।আর আমি আমার অবুঝ বাচ্চা বউটার হক মেরে খাই কি-করে,আমার প্রানকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখি কি-করে?তাই সে দাবী না রাখতে-ও তারই অপছন্দনীয় মানুষটা নিজ দায়িত্বে তার আমানত গুচ্ছিত রেখেছে।সে যে কখনোই তার প্রানের অধিকার কোনো কারনসরূপ বঞ্চিত রাখবেনা।রাখতে চায় না-ও সে।তার প্রাননাশিনী চাইলেও না।

বারবার মানুষটার মুখে অপছন্দনীয় মানুষটা কথাটা শুনতে প্রান্তির ভালো লাগলোনা।হঠাৎই কথাটা শুনতে তার ভিষণ খারাপ লাগলো।যদিও কথাটা সে আগে মানতো,কিন্তু মন বেচারা এখন জানি ওই মানুষটার মুখ থেকে কিছুতেই কথাটা শুনতে চাইছে-না।এমন কি মানতে-ও চাইছে-না।কিন্তু মানুষটার কথার প্রেক্ষিতে কোনো কথারই প্রতিত্তোর সে করতে পারলো-না।ক্ষীন সময় নিজেকে জেনো পাথর মনে হলো।কি দেখছে,আর কি বলে চলেছে মানুষটা।সবটা জেনো তারকাছে অদ্ভুত ঠেকছে।মাথার মধ্যে এলোমেলো করে দিচ্ছে তার।সাথে তো রয়েছে নিজের বেহায়া মন।যা এখন নিজের বশে কম অন্যের বশিভূত হয়ে থাকে সারাক্ষণ।

ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেই কখন।ওপাশ থেকে আর কোনো সাড়া-শব্দ না আসায় ফোনটা কান থেকে ধীরেসুস্থে নামালো প্রান্তি।কিছুক্ষণ সেই ফোনের দিকে নিটোল নজরে তাকিয়ে থাকলো।ফের পুনরায় নজর দিলো কেবিনেটের কাঙ্ক্ষিত তাকটার দিকে।জিনিসগুলোর থেকে বক্সের গায়ে লেখা শব্দগুচ্ছগুলো তাকে টানছে বেশি।সামন্য কয়েকটা শব্দগুচ্ছগুলো তাকে এমন পাগলপারা অনুভূতির উচ্ছ্বাসে পাগল করে তুলছে কেনো প্রান্তির জানা নেই।শুধু আজ নিজের মধ্য অন্য এক প্রান্তিকে খুঁজে পেলো সে,যে সম্পর্কের টানে বা মায়ার হোক অপছন্দনীয় মানুষটার বশিভূত হয়ে পড়েছে।

জিনিসগুলোর হকদার সে হলে-ও সেগুলো ছুঁতে কেমন গা ছমছম করে উঠলো প্রান্তির।কোমল স্পর্শে লেখাটা সহ জিনিসগুলোতে কেবল হাতের ছোঁয়া লাগালো সে। ছুঁয়ে দিলো সেগুলো তবে ধরে দেখলো-না।দেখতে ভয় পেল।যেন-তেন ভয় নয় নিজেকে নিয়ন্ত্রণের রাখার ভয়।এই-যে হঠাৎই ওই লেখাটা দেখে আর মানুষটার ওসব কথা শুনে তার নিজের শরীর মন এখনো অজানা অনুভূতিতে কেঁপে চলেছে।আবার এখন যদি এগুলো খুলে নিজের মস্তিষ্কের ভাবনার বাহিরের কিছু দেখে তবে সে তো বুকের কেমন কেমন করে উঠা ব্যথায় মরে যাবে।মারবে কি-না জানেনা।তবে ভিষণ যন্ত্রণায় ভুগতে হবে তাঁকে।তাই সেগুলো না খুলে আর-ও কিছু সময় অপলক সেদিকে তাকিয়ে থেকে পুনরায় কেবিনেটটা লক করে নিচে নেমে এলো সে।

তবে ভাবনাতে চললো অনেক কিছু।তার জানামতে ওই মানুষটা তাকে খুব অপছন্দ করে।যা বাড়ির সবার জন্য মানুষটা তাকে বলতে পারেনা।বিশেষ করে বড়আম্মার জন্য তারউপর রাগটা দেখাতে পারেনা,ক্ষোভটা ঝাড়তে পারে-না।তবে সেই মানুষটার কি এমন হলো যে এমন মিষ্টিস্বরে তারসাথে কথা বলছে।তবে কি তার মতো রোগে পেয়েছে মানুষটার নাকি তাকে বশিভূত করার ফন্দি।বশিভূত করার ফন্দি কথাটা ঠিক নিজেও মানতে পারলো-না প্রান্তি।তবু-ও উল্টো পাল্টা ভেবে নিজের মনের আর মাথার মধ্যে চলা প্রশ্নের উত্তর-গুলো খুঁজে পেতে উতলা হলো সে।

.

কেটে গেল আরও দুটো দিন।এই দুটোদিন মনের ভুলেও প্রহানের সামনে আসলো-না প্রান্তি।লজ্জায় ভয়ে নাকি সংকোচনে বুঝে উঠতে পারলো-না সে।যে মানুষটার সামনে সব-সময় দ্বিধাহীন চলা-ফেরা করেছে সে।যাকে ভয় না পেয়ে যার বিরুদ্ধাচরণ করে গেছে নিজের গোটা লাইফ।হঠাৎই তার সামনে পড়তে এতো দ্বিধান্বিতবোধ কেনো করছে প্রান্তির মন মস্তিষ্ক।সেটা বুঝলেও পাত্তা না দেওয়ার চেষ্টা করলো প্রান্তি।তবে মস্তিষ্ক মানলে-ও মন সেটা কিছুতেই মানলো না।কারন তার নতুন অসুখ করেছে।সেই অসুখটা মস্তিষ্কে সামন্য ছড়িয়ে পড়লেও মনে ছড়িয়ে পড়েছে বিস্তৃত জায়গাজুড়ে।তাই মানুষটার সামনে না পড়লেও তাঁকে লুকিয়ে দেখতে ভোলোনি প্রান্তি।কি করবে সে?ইদানীং মন বেচারা কিছুতেই যে তার নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকতে চাইছে না।কিছুতেই চেয়ে-ও পারছে না যে সে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।শুধু উল্টো পাল্টা ভেবে যাচ্ছে, চেয়ে যাচ্ছে।আবোলতাবোল চাওয়ার মধ্য মানুষটাকে একপলক দেখার তিব্রতা-ও জেনো তার মন বেচারার ভিষণ ভিষণ বেড়েছে।কি এক জ্বালাময় অসুখে ভুগছে সে।না পারছে নিজেই ঔষধি করতে আর না পারছে সেই অসুখের নিরাময় খুঁজতে।শুধু দিনকে দিন অসুখটা তার মন মস্তিষ্ক-জুড়ে বেড়েই চলেছে এটা শুধু জানে প্রান্তি।হাজার ভেবেও কিনারা পায় না সে,
কি প্রান্তি ছিলো সে আর কি প্রান্তি হয়ে গেলো।ভেবেই নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে তার।

অথচ আজ দুটো দিন যে,সে ওই মানুষটা সামনে যাচ্ছে না বা তাকে মানুষটা দেখছে না।এটা নিয়ে-ও মানুষটার জেনো কোনো মাথাব্যথা নেই।ভুলে-ও কাউকে মানুষটা জিজ্ঞেস করলো-না যে প্রান্তি নামক মেয়েটার হয়েছেটা কি?কেনো তাঁকে দেখছে না সে?মেয়েটা বেঁচে আছি নাকি মরে গেছে?এসব প্রশ্ন কি একবারও উদয় হচ্ছেনা ওই নিষ্ঠুর মানুষটার মনে।অথচ সেদিন কিসব হৃদয় দোলানো,মন ভোলানো কথাগুলোই না শোনালো তাকে।আজ দুটো দিন তাকে না দেখে-ও সেই মানুষটার কোনো হেলদোল নেই।তিনি দিব্যি ভার্সিটি টাইম শেষ করে বাসায় আসছেন,খাচ্ছেন, নির্দ্বিধায় ঘুমাচ্ছেন আর ঘুরে বেড়াচ্ছেন।এটা কিছুতেই মানতে পারছেনা প্রান্তি।বুকের মধ্যে ব্যথারা এবার জ্বলছে তার।অভিমানে ছেয়ে আছে মন।অকারণে চোখের জ্বল পড়ছেও ক্ষনে ক্ষনে।তবে এখন কলেজ টাইম বলে নাহলে এখনো হয়তো কেঁদে ফেলতো সে।শুধু নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টায়।

—কিরে মন খারাপ কিজন্য বললি নাতো?প্রহান ভাইয়া কোনো কারনে বকেছে নাকি?তাছাড়া তো বাড়ির আর কেউ সহজে তোকে বকে না।

—আমার মন খারাপ নয় এমনিতেই কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।

কলেজ আসা পর্যন্ত এযাবৎ অনেকবার মন খারাপের কারন জিজ্ঞেস করেছে আবিশা।কিন্তু বরাবরই একই উত্তর মিলেছে।অনেক ফাজলামো করেও কাজ হয়নি।বিধায় আবিশা বুঝতে পেরেছে,মেয়েটার আজ সত্যিই মন খারাপ। কিন্তু কোনো কিছুই তো বলছেনা।আর-ও কিছু সময় চুপ থেকে আবিশা বললো।

—চলনা প্রান্তি কলেজর সামনে থেকে ঝালমুড়ি খেয়ে আসি।আজ তো ইংলিশ ক্লাস হবেনা।প্রহান ভাইয়াতো আজ দুদিন ক্লাস নিচ্ছেনই না।ইংলিশ স্যারও আসেননি নাকি।তাহলে ইংলিশ পিরিয়ড মিস,পরের পিরিয়ড হতে এখনো অনেক দেরি।চলনা জানু।

প্রান্তি রাজি হলোনা।আবিশা-ও নাছোড়বান্দা প্রান্তিকে ছাড়লো-না।মুলত মেয়েটার মন খারাপ থাকলে তার-ও ভালো লাগেনা।কিন্তু এটাই ভেবে পাচ্ছেনা মেয়েটার মন খারাপ হলো কি নিয়ে?যেটা তাকে-ও বলতে পারছে-না মেয়েটা।অথচ প্রান্তির কোনো কিছু নিয়ে মন খারাপ হলে বা অন্যত্র কোনো কিছু হলে তাকে না জানিয়ে মেয়েটা থাকতেই পারেনা।সে না শুনতে চাইলেও জোর করে বলবে মেয়েটা আর শুনতে তাকে হবেই।অথচ সেই মেয়েটা কালকে তো নিশ্চুপ ছিল আজ আরও চুপচাপ।
প্রান্তুিকে কথার বিভিন্ন ছলে মানালো আবিশা।প্রান্তি-ও বাধ্য হয়ে যেতে স্বীকার করলো।বুঝতে পরালো আবিশা তার মন খারাপ দূর করার জন্য এই ঝালমুড়ি খাওয়ার বাহানা পথ অবলম্বন করেছে।তাই নিজের মন খারাপের জন্য মেয়েটার অনুভূতিকে তো আর তুচ্ছ করে দেখা যায়না।

.

প্রান্তিদের কলেজে নতুন একটা পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে।আপতত বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ।রঙের কাজ চলছে।বিল্ডিংয়ের পাশ ঘেঁষে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে।চলতি পথে নজরকাঁড়া ফুলগুলো দেখে থেমে গেল প্রান্তি।আর আবিশা বকবক করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হলো।তার খেয়াল নেই পাশে প্রান্তি আছে কি-না। হঠাৎ প্রহানকে দেখে থেমে গেলো সে।এদিকে আসছে কেনো প্রহান ভাইয়া? তবে কি তাদের ক্লাস নিতে যাচ্ছে?তবে হয়েছে এবার ঝালমুড়ি খাওয়া!আবার ক্লাস টাইমে তারা যে বাহিরে, বকে দেয় কি-না?

আবিশার ভাবনার মাঝেই খেয়াল করলো প্রহান দ্রুত তাকে ক্রস করে সামনে চলে গেলো।চোখজোড়া তার আতংকিত।প্রান্তিকে খোঁজার জন্য পাশে তাকালো আবিশা।না পেয়ে পিছনে তাকানোর আগে পুরুষালী তীক্ষ্ণ গলার আওয়াজে কেঁপে উঠলো সে।পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো।কমলা রঙের ছিটেফোঁটাতে ছেয়ে আছে শুভ্র রঙের শার্ট পরিহিত প্রহান ভাইয়া।আর তার বুকের মাঝে জড়ানো রমণীরও একই অবস্থা।

—হোয়াট ইজ দিস।আপনারা চোখে দেখেন না।একটা মেয়ে নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটা দেখে-ও তাকে সতর্ক না করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।আর তার থেকে-ও বড় কথা এখানে কাজ চলছে আপনারা সতর্কতার জন্য বোর্ড লাগিয়ে রাখবেন না।বোর্ড কৈ?আপনাদেরকে তো সর্তকবার্তা লেখানো বোর্ড দেওয়া হয়েছে।সেটা কোথায়?

উপারের দিকে তাকিয়ে রঙ করা দু’জন মিস্ত্রি সম্পর্কে তেজীয়ান গলায় কথাগুলো বললো প্রহান।আজ দুদিন ভার্সিটির ঝামেলায় কলেজের স্টুডেন্টদের ক্লাস নেওয়া হয়না তার।কলেজের ইংলিশ টিচারের হার্টে ব্লক সমস্যা জনিত কারনে ডাক্তারের চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। বিধায় কিছুদিনের দায়িত্বটা এখন তার পালন করতে হচ্ছে।আজ দুদিন যাবত ক্লাস নেওয়া হয়নি আজ ক্লাসে যাচ্ছিলো সে।পথিমধ্য যেতেই খেয়াল করলো প্রান্তিকে।মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকে গিয়েছিলো তার।বিল্ডিংয়ে কাজ চলছে অথচ মেয়েটা জানেনা নাকি?তবু-ও ওখানে ওভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কেনো?ভেবে উপারের দিকে তাকাতেই যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো।

ঝুলন্ত মইয়ের সাহায্যে দু’জন রঙ মিস্ত্রি রঙ করছে বিল্ডিংয়ে।হাতে রঙ তাদের।যখন তখন যেকোনো কারনে অসতর্ক বসত পড়ে যেতে পারে।আর তাই হলো অসতর্ক বসত রঙের বালতি আকারে কৌটটা ঝুলিয়ে রাখতে গিয়ে ছিটকে পড়েছে।যদিও প্রান্তির দিক থেকে কিছুটা দূরে ছিটকে তারই পাশ ঘেঁষে পড়েছে। তবে অসতর্ক বসত মেয়েটার গায়ে পরতে কতক্ষণ ছিলো?ভয়ে বুক কাপছে তার এখনো।আর সেই দূরুদূরু বুকের মধ্য চলা অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনের স্থানে মাথা রেখে চুপটি করে আছে প্রান্তি।তার একান্ত পুরুষটার প্রথম ছোঁয়া।এই ছোঁয়াতে এতো সুখ এতো শান্তি।এটা প্রান্তির জানা ছিলো না।আর না জানা ছিলো এই পুরুষালী দু’হাতের বন্ধনীতে কতোটা নিরাপদ সে।আজ দু’দিনের মন খারাপ আর অভিমান-গুলো একটু একটু করে গলে যেতে থাকলো।সেখানে অনুভব হতে থাকলো স্বর্গীয় কোনো সুখ।মন চাইলো সেই শক্তবাঁধনে আরও একটু নিবিড় হতে।মনকে আজ পাত্তা দিলো প্রান্তি।প্রহানের বুকের কাছের শার্টটা আরও শক্তকরে খামচে ধরলো সে।মাথাটা আরও শক্তকরে সঁপে দিলো সেই শক্তপোক্ত বুকে।আর নিশ্চুপ হয়ে শুনতে থাকলো প্রহানের বুকের অস্বাভাবিক হৃদ স্পন্দনের গতিবেগের শব্দ। এই বুকের মধ্যে যন্ত্রণাটা আজ তারজন্য এতোটা অস্বাভাবিকভাবে তোলপাড় হচ্ছে।খারাপ লাগার কথা প্রান্তির।কিন্তু লাগলোনা।বরং সুখ সুখ অনুভব করলো সে।

প্রহানের গলার তীক্ষ্ণ বাক্যের ফলে কলেজ স্টুডেন্টসহ কলেজ কতৃপক্ষরাও হাজির হলো।ভুল মুলত কলেজ কতৃপক্ষের।বিল্ডিংয়ের কাজ হয়ে যাওয়ার সাথেসাথেই সতর্কতামুলক বিলবোর্ডটা উনারা নামিয়ে ফেলছিলেন।রঙের কাজ চলছে বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার বেশ অনেক পরে বিধায় বোর্ডটা আর লাগানো হয়নি। মুলত লাগানোর ইচ্ছে পোষণ করেন নি উনারা।আর কলেজ স্টুডেন্টদের এদিকে আসা যাওয়া কম।বিধায় গুরুত্ব-ও সেভাবে দেওয়া হয়নি।বিষয়টা জানার পর মেজাজটা দ্বিগুণ হারে চড়ে গেলে-ও কিছুই বলতে পারলো-না প্রহান।শুধু নিজের রাগটা অতি-মাত্রায় সংবরন করার প্রচেষ্টা করলো সে।

এতো মানুষের সমাগমে ও যখন প্রান্তিকে নিজের থেকে সরালোনা প্রহান।প্রান্তি এবার নিজেই নড়েচড়ে উঠে নিচু কন্ঠে বললো।—ছেড়ে দিন আমায়। সবাই তাকিয়ে আছে।

প্রান্তির হাতটা টেনে নিজের দিকেই আনতে গিয়ে সরে পিছনে পড়ে যেতে গিয়ে তখন প্রান্তিকে বুকে জড়িয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলো প্রহান।প্রান্তির কথাতে সেটা খেয়াল হলেও ছাড়লোনা প্রান্তিকে বরং জোরেশোরে এক ধমক দিয়ে বললো।

—নজর কোথায় থাকে?দেখেশুনে চলা ফেরা করা যায় না?আজ বাড়িতে চল,তোর হাতেপায়ে মেরে চলাফেরা শিখাবো।কি হতে চলেছিলো বুঝতে পারছিস,ইডিয়ট!

হালকা মুখ উঁচু কটে প্রহানের দিকে তাকালো প্রান্তি।এতোগুলো মানুষের সামনে তাকে ধমক দিয়ে কথা বলার জন্য তার মন ভিষণ খারাপ হওয়া উচিত ছিলো।
যা বরাবরই মানুষটার ক্ষেত্রে সে করে আসছে।কিন্তু আজ কিছুতেই একটুও মন খারাপ হচ্ছে না।যেটা হচ্ছে সেটা হলো একরাশ ভালো লাগা।তাকে হারানোর ভয়ে মানুষটা আতংকিত!রাগান্বিত,আশঙ্কাগ্রস্থ।রাগের বদৌলে ওই মানুষটার রাগান্বিত হয়ে বকাটাকে সুখ সুখ অনুভব হলো প্রান্তির। এ কেমন অনুভূতি?প্রান্তি অনুভব করলো সে প্রেমে পড়েছে।তার জীবনের অপছন্দনীয় মানুষটার গভীর প্রেমে পড়েছে সে।স্বামী নামক একান্ত পুরুষটার সুখ সুখ প্রেমঅসুখে জড়িয়ে পড়েছে তার মনমস্তিষ্ক।আর সেই অসুখনামা সেই মানুষটার সান্নিধ্যে পেয়ে নিরাময় হয়ে গেছে।

—-তারমানে তার প্রিয় অসুখটা মানুষটার সান্নিধ্য পেতে চাইছে?

চলবে…

আমি কিছুতেই টাইম মেইনটেইন করে গল্পটা লিখতেও পারছিনা আর দিতেও পারছিনা।পবিত্র রোজার মাস চলছে বিধায় পাঠক পাঠিকারা সমস্যাটা আশা করি বুঝবেন।আর তারজন্য আমাকে এই এলোমেলো টাইমে গল্প দিতে হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত লেখার মধ্যে প্রচুর টাইপিং মিস্টিক থাকে।তাই সেটা নিজগুণে বুঝে পড়ে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করবেন।

আসসালামু আলাইকুম❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here