রাঙিয়ে_দাও #পর্ব(৯) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
302

#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব(৯)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

উষ্ণতার তাপদহনে কোমল গালজোড়া তপ্ততায় ছড়িয়ে পড়লো।কান মাথা ব্রজপাতের শব্দের মতো কথা-গুলো শুনে ঝাঁঝাঁ করে উঠলো প্রান্তির।ক্ষনিকের জন্য জড়বস্তুর মতো নিজের নড়নচড়নের অচলতা অনুভব করলো সে।বরফ ঠান্ডার মতোই শরীরের রক্তস্রোতের প্রবহমানতা হঠাৎই অতি শীতলতা অনুভব করলো।যার দরুন শরীরের বহিরঙ্গের নুইয়ে থাকা উপশমগুলাে কাঁটার মতো সোজা হয়ে বিঁধলো।লজ্জায় শিরশির করে উঠলো সমস্ত অঙ্গ।লজ্জাজনক কথাগুলো বলে নীরবে পদক্ষেপ ফেলিয়ে মানুষটাতো সেই কখন চলে গিয়েছে।অথচ সে এখনো সেখান থেকে একচুল-ও নড়তে পারল না।কিসব লজ্জাজনক কথা বলে তাঁকে পাথরের ন্যায় স্থির করে রেখে গেলো মানুষটা।এতোটা-ও খেয়াল করে দেখেছে তাঁকে,নাহলে বুঝলো কি-করে তার ঠোঁটজোড়া কালচে,লালচে নাকি গোলাপি।

খেয়ালতো বান্দা অবশ্যই করে তাকে নাহলে বিয়েরদিন লাল শাড়িতে তাঁকে কেমন লাগছিলো বুঝলো কিকরে।না-হলে ওরকম মেসেজ কি ওই কাঠখোট্টা রসকষহীন প্রহান মাহমুূদ পাঠাতে পারে।আর না আজকের মতোন এরকম লজ্জাজনক বাক্যগুলো সে নির্দ্বিধায় বলতে পারে।অনন্ত প্রহান মাহমুদের মতো মানুষতো পারেই না!
তবে বিয়ের দিন মানুষটা তাকে এতোটা খেয়াল করে দেখলো কখন?শত ভেবেও এটাই বুঝতে পারছে-না প্রান্তি।হঠাৎই বিয়ে হলো।কবুল বলার আগ পর্যন্ত না দু’জনের দেখা হলো আর না কথা হলো।কবুল বলার সময়-ও তো আড়ালেই ছিলো দু’জন।সেভাবে সাক্ষাৎই তো হয়নি দু’জনের।সত্যি বলতে প্রান্তিতো সেদিন খেয়ালই করিনি মানুষটাকে।তবে মানুষটা কখন তাকে এতোটা গভীর নজরে খেয়াল করলো।আর সেদিনের কথা বাদ দিলেও প্রান্তিতো কখনোই মানুষটাকে নিজের দিকে এতোটাও নিরিখ ধরে তাকিয়ে থাকতে তো দেখে না।এই চলতে ফিরতে একপলকে একটু দেখা।একটু নজরে পড়া ছাড়াতো সেভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেনা মানুষটাকে।তবুও সঙ্গে সঙ্গে নজর সরিয়ে ফেলা।তবে?

মুখ উঁচু করে প্রহানের রুমের বিশাল বড় ওয়ালসেট আয়নাটার দিকে তাকালো প্রান্তি।নিজের ঠোঁটজোড়ার দিকে বিমূঢ় হয়ে তাকাতেই একা-একা নিজেই লজ্জায় আড়ষ্ট হলো।ফের ভাবনায় এলো প্রহানের বলা সম্পূর্ণ বাক্যগুলো।মূহুর্তেই মন খারাপ হয়ে গেল তার।মানুষটা নিজের ইচ্ছেতে নয়,সবার ইচ্ছেতেই তাকে বিয়ে করতে সম্মতি দিয়েছে।ভাবতেই লজ্জায় আড়ষ্ট হওয়া মুখটা মন খারাপে পরিনত হলো।যদিও এটা নিয়ে মন খারাপ করার কথা না থাকলেও খুবই মন খারাপ হলো প্রান্তির।সে নিজেও জানেনা কেনো?সে তো নিজে-ও সবার ইচ্ছেটা মানতে মানুষটাকে বিয়ে করেছে।তবে কেনো মানুষটার স্বীকারোক্তি সে মানতে পারছেনা।কেনো এই সহজ স্বীকারোক্তি কিছুতেই তার মন মানতে চাইছে না।

প্রহানের সাবলীল স্বীকারোক্তি মানতে না পেরে মনের মধ্যে অন্যরকম এক ব্যথা অনুভব করলো প্রান্তি।সেই ব্যথা যা অনুভব করলো,যা প্রান্তির কাছে চাইলো সেটা মানতে নারাজ প্রান্তি।মনেমনে মনকে সান্ত্বনা দিলো,তুই এটা কিছুতেই চাইতে পারিস না মনমাঝি।তোর না ওই মানুষটাকে বড়োই অপছন্দের।তবে কি এমন হলো,যে এতো তাড়াতাড়ি তার বশিভূত হয়ে পড়তে চাইছিস।তার হয়ে অদ্ভুত সব রংবদলের গীত গাইছিস।কেনো?

মনেমনে নিজের মনকে শত সান্ত্বনায় ভরিয়ে দিতে থাকলো প্রান্তি।তবুও কাজ হলোনা।কোথাও গিয়ে মন ও মানলো না তার।ফের বিড়বিড়িয়ে বললো–একি সর্বনাশের ব্যথায় ডুবাতে চাইছিস আমাকে মনপাখি ? আমার হয়েও অন্য কারও গীত কেনো গাইছিস।

ভাবনার একপর্যায়ে রুমের বাহিরে এলো প্রান্তি।দুতলার সিঁড়ির মাথায় এসে নজর চলে গেলো নিচে ড্রয়িংরুমের সোজাসুজি ডাইনিং রুমে।সেখানে খুব সুন্দর ভঙ্গিমায় এবং শান্ত আর মনোযোগ সহকারে খাবার খেয়ে চলছে প্রহান মাহমুদ।একটু আগে যে তার কথায় কাওকে অর্ধ মেরে রেখে এসেছে।সেই খেয়াল ধ্যানটা কি আছে ওই বান্দার?কৈ আছে?থাকলে তো এতো সুন্দর আর মনোযোগ সহকারে খাবার খেতে পারতো না সে!তবে তাকে অশান্ত করে দিয়ে শান্তিতে খাওয়া,মেনে নিতে চাইলো-না প্রান্তি।তবে যে লজ্জাজনক কথা-গুলো ওই মানুষটা তাকে শুনিয়ে গেলো তারপর এখন-তো আর মানুষটার সামনে যাওয়া আর-ও লজ্জাময়।সেই লজ্জা লংঘন করে ওই মানুষটার সামনে যাওয়া তো মুশকিল।যাবে কিকরে সে?নাহলে সে শোধ কি তুলতোনা প্রান্তি?অবশ্যই তুললো।তবে এখন শোধ তুলতে না পারলে-ও ছাড় দেবে না সে।অবশ্যই শোধ তুলবে।সময় আসুক যেভাবেই হোক শোধ তো সে নেবেই।প্রহান মাহমুদ বলে কথা,তাকে জ্বালাতে তার যে ভিষণ শান্তি শান্তি লাগে।

প্রান্তির শান্তি শান্তি ভাবনার মাঝে ডাইনিংয়ে বসা মানুষটাও একপলক তাকালো উপরের দিকে।পলকেই হয়তো ভাবনারত রমণীর মনের ভাবনাগুলো কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারলো।কম তো অভিজ্ঞতা নেই ওই দস্যি রমনী সম্পর্কে তার।তবে ওই রমনী যেটাই ভাবুক না কেনো,সেটা পূর্ণ করার জন্য হলেও এবার ওই রমনীকে তার অতি সন্নিকটে আসতেই হবে।আর সেটা রমনীটির নিজ ইচ্ছেতে।আর ওই রমনী নিজ ইচ্ছেতে কাছে আসলে কি সেই পূর্বের ন্যায় ছেড়ে দেবে নাকি? কখনোই নাহ!আগে নারীটি তারজন্য হারাম থাকলে-ও এখন নারিটি তারজন্য সম্পূর্ণরূপে হালাল।আগে ছাড় দিলেও এবার ছাড় দেবেনা প্রহান মাহমুদ।ওই নারীর সমস্ত জ্বালাময় দস্যিপনা যদি তার নীরব প্রাপ্তি হয়ে থাকে তবে ভালোবাসাটা-ও তার প্রাপ্য।যা সে ওই নারিটির কাছথেকে তারই ইচ্ছেতে উশুল করে নেবে এবং ওই রমনীর প্রাপ্যের লেনাদেনাটা-ও উত্তমরুপে বুঝিয়ে দেবে। মিটিয়ে দেবে।

—আজকের মতো সম্পর্কের টানটা এরকম একটুএকটু করে তোকে আমার কাছে নিয় আসবে।নিজেই আসবি তুই আমার কাছে।টান দিয়েছি সম্পর্কের সূতোতে আমি ভালোবাসার দাবিটাও তুই রাখবি।

.

আজ ইচ্ছাকৃতভাবে কলেজে যায়নি প্রান্তি।কোনো এক বিশেষ কারনে তার বিশেষ মনখারাপ।তার মন বেচারার ইদানীং কিছুমিছু একটা রোগ হয়েছে।কিন্তু সেই রোগের ঔষধি করতে সে বড়োই নারাজ।তবুও বেহায়া মন উল্টাে পাল্টা গেয়েই চলেছে। তাই শোক কাটাতে আজ সে বাড়িতে।হঠাৎই হাতের ফোনটা বেজে উঠলো।তার প্রানপ্রিয়া বান্ধবী আবিশা ফোন করেছে।মেয়েটা এখনো তার বিয়ের শোক কাটাতে পারিনি।ঠিক হয়েছে।সেদিন সত্যি বলা সত্ত্বেও তার কথা কেনো বিশ্বাস করলো-না।

—ওই ফোন দিস কেনো?বলেছি না কলেজে যাবো না।

—আচ্ছা প্রহান ভাইয়া যে এখন তোর বর।আগের থেকে সম্পর্ক মজবুত। তুই যে এই দুইদিন অন্তঅন্ত,মন ভালো এটা ভালো নেই সেটা ভালো নেই বলে কলেজ ফাঁকি দিচ্ছিস।প্রহান ভাইয়া কিছু বলছে না তোকে।মানে দুই একটা কানের নিচে লাগাচ্ছে না।

—ওই প্রহান ভাইয়াকা চামচা,থাম।বর হয়েছে তো কি হয়েছে।মাথা কিনে নিয়েছে নাকি তোর প্রহান ভাইয়া।যে মন চাইলেই কানের নিচে দেবে।যা আগে করতে পারেনি তা এখন করবে?এখন আমি তার বউ বরং এতোদিন সে যা করেছে করেছে,এখন আমার কথায় উঠবে আর বসবে।বুঝছিস?

—প্রহান ভাইয়া উঠবে আর বসবে বউয়ের কথায়।সেটা আবার আমাকে মানতে-ও হবে।বুঝতেও বলছিস।হাও টু মাচ্ ফানি।তবে বসলে-ও বসতে পারে, যদি বউয়ের এক্সট্রা ভালোবাসা আদর পাওয়া যায়।দিচ্ছিস নাকি তুই?তবে আমি মানতে রাজি।

কান জ্বলে উঠলো প্রান্তির।কি অসভ্য মেয়েরে বাবাহ।হবেনা কেনো?যেমন টিচার তেমন তার স্টুডেন্ট।একটারও মুখে লাগাম বলতে কিচ্ছু নেই।দুটোই নির্লজ্জ

—কথা বলিস না ক্যান?সত্যিই কিছু-মিছু হয়েছে নাকি?

—ওই মুখে লাগাম দে বেয়াদব মেয়ে।তুই যে দিনকে দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছিস এটা আন্টি জানে।

—আম্মু জানবে ক্যান?আম্মু থোড়াই না আমার বান্ধবী।বান্ধবীতো তুই।জানও তুই পরাণও তুই।তাই তুই জানবি আমি নির্লজ্জ নাকি বেহায়া নাকি অসভ্য।

—ওই আবিশা থাম।তোর মাথা ঠিক আছে?তুই এরকম পাগলের মতো বকছিস কেনো?

—হ আমি পাগল হইছি।তুই আমারে না জানিয়ে বিয়ে করলি ক্যান।আমাদের কতো প্ল্যান ছিল।আর সেই তুই একা একা বিয়ে করে নিলি।তুই যেদিন আমার ক্র্যাশ লাইন থেকে প্রহান ভাইয়াকে টোটাল বাদ করে সেখানে বসালি ওই লাল দাত ওয়ালা আনিসকে।আমি মেনে নিলাম।কিন্তু আমাকে না জানিয়ে সেই প্রহান ভাইয়াকে তুই বিয়ে করে নিলি তবুও মেনে নিলাম।তাই বলে আমাকে এককবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না এটা আমি মানতে পারছি-না জানু।এই দুঃখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।

আজ একসপ্তাহ ধরে এই একই গান শুনে চলছে প্রান্তি।এই একসপ্তাহ ধরে আবিশার আর তারমধ্যে যে কথাই হোক না কেনো,ঘুরে-ফিরে শেষে সে এই দুঃখের বানি আওড়ে চলেছে সে।বিয়ের পরের দিন যখন আবিশা কলেজে যাওয়ার জন্য তাদের বাড়িতে এলো।বাড়িতে আসতেই সুসংবাদ পেয়ে খুশি হওয়ার বদৌলে মর্মাহত হলো মেয়েটা।কিছুতেই মানতে নারাজ তার বিয়ে হয়েছে।আর তার থেকেও বড় শক্ লেগেছে প্রান্তি আর
প্রহান মাহমুদ কখনোই বর বউ হতে পারেনা।তাদের বিয়ে হতে পারেনা,তারা এক হতে পারেনা।এটা সম্ভব নয়।তবু-ও বাড়ির সবার কথাতো আর অবিশ্বাস করা যায়না।তাই বাধ্য হয়ে বিশ্বাস করলেও ক্ষনে ক্ষনে তার বাথা বাড়ছে।আর প্রান্তিকে আবোলতাবোল বলে জ্বালিয়ে মারছে।কিন্তু প্রান্তি আবিশাকে হাজার বুঝিয়ে ও লাভ হচ্ছে না।সে বুঝতে চাইছেনা।প্রান্তিও বুঝলো না মেয়েটদ কেনো বুঝছে না তারও কি করার ছিলো।

—এখন কি তোর পায়ে ধরে মাফ চাইতে হবে।সেদিন বলেছিলাম বিশ্বাস করিসনি।আমার কি দোষ।আর থোড়াই না আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।তোকে সব কিছু বললাম তো।তবুও সেই একই গান নিয়ে পড়ে আছিস।এবার অন্তত মাফ কর।

—পায়ে ধরে মাফ চাইলেও তুই মাফ পাইবিনা।আর এই গান আমি বেঁচে থাকাকালীন আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলবে।দরকার পড়লে তোর নাতি নাতনিরাও শুনবে এই গান।

—আচ্ছা ঠিক আছে,তোর যা ইচ্ছে হয় তুই তাই করিস।তবে আপাতত এখনের জন্য ক্ষেমা দে।

তবুও প্রান্তিকে প্যারা দিতে বন্ধ করলো না আবিশা।আরও কিছু সময় একই কথা নিয়ে প্যানপ্যানানি করেই গেলো।প্রান্তিও ধৈর্য্য নিয়ে শুনলো।সত্যি বলতে মেয়েটা তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।আর সেই ভালোবাসা থেকে এই প্যানপ্যানানিটা জায়েজ আছে।আর তারও শুনে যাওয়াটা।তাই আর-ও কিছু সময় আবিশার ঘুরেফিরে সেই একই প্যানপ্যানানি শুনে ফোনটা রেখে দিলো প্রান্তি ।

.

সেখান থেকে ঘন্টাখানিক সময় যেতেই আবারও ফোন বেজে উঠলো প্রান্তির।বাড়িতে আপতত কেউই নেই।সে ড্রয়িং রুমে বসে একা-একা টিভি দেখছে।হঠাৎই ফোন বেজে উঠায় মনোযোগ বিচ্ছিন্নহলো তার।কিছুটা বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নম্বরটা দেখতেই হাতসহ বুকের মধ্যে মৃদু কেঁপে উঠলো তার।এই মানুষটা তো সহজেই তার নাম্বারে ফোন দেয়না।তবে আজ কেনো?কলেজে যায়নি তাই?নাকি ইমার্জেন্সি কিছু?সে কলেজ যায়নি সেটাতো মানুষটা বাড়ি থেকেই জেনে গিয়েছে।তবে কি ইমার্জেন্সি কিছু?ভাবনার মধ্য কলটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সময় নিয়ে পুনরায় আবারও বেজে উঠতেই রয়ে-সয়েই কলটা ধরলো প্রান্তি।

—মা, কোথায়?এতো ফোন করছি তুলছে না কেনো?

ফোনে কখনো মানুষটার সাথে কথাবলা হয়নি প্রান্তির।হুটকরে ফোনে কথা বলতে কেমন জানি অস্বস্তি বোধ করলো সে।অস্বস্তিবোধ করার আরও একটা বিশেষ কারন আছে।আর কারনটা এই মানুষটা নিজেই। হঠাৎ নিজের কি হলো নিজেই জেনো বুঝে উঠতে পারছেনা প্রান্তি।সেই অজানা জ্বালায় ভুগছে সে।

—বড়আম্মা বাড়িতে নেই।এমনকি কেউ বাড়িতে নেই।

প্রশ্নের জবাবটা পেতে দেরী হলে-ও প্রান্তির শান্ত স্বরটা শুনতেই ওপাস থেকে ফের প্রহান বললো—কোথায় গিয়েছে?

—হিমানী আপুদের বাড়িতে।

ওপাশে কপাল কুঁচকে গেল প্রহানের।বললো-মেয়েটাকে আজও মেরেছে নাকি?

—হুমম।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো প্রহান।হিমানি মেয়েটার বাড়ি তাদের পাশের বাড়িটা।মেয়েটা ছোট থাকতেই বাবা মা বিশেষ কিছু কারনে আলাদা হয়ে যায়।দুই বছরের শ্যামারঙা মেয়েটার জন্য দ্বিতীয় মা আনা হয়।তারপর থেকেই মেয়েটার কপালে দূর্গতি দূর্দশা লেগেই আছে।মেয়েটার দাদিমা যতোদিন সুস্থ ছিলেন মেয়েটাকে আগলে রেখেছেন।এখন অসুস্থ থাকায় আর পারেন না।বাবার আর সময় কোথায় মা ছাড়া মেয়েটার খোঁজ নেওয়ার।

—তবে তুই একটা কাজ করে দে আমার।

তার সাথে এতো সাবলীল ভা্ষায় কথা বলতে কখনো শোনিনি প্রান্তি।কিছুটা চমকালেও প্রান্তি বেশ শান্তস্বরে বললো—কি?

—আমাদের রুমে যা।গিয়ে কেবিনেট খোল।দেখ ওখানে কলেজ ফাইল বলে চিহ্নিত করা একটা নীলরঙা ফাইল আছে ওটা বের কর।তুই রুমে যা আমি ফোনে আছি।

প্রহান একটানা কথা বলে গেলেও,প্রান্তি আটকে আছে আমাদের রুমে যা।আমাদের রুম মানে?শব্দটা যে ওই মানুষটা ভুলকরে বলেনি,এটা মানুষটার অনর্গল সহজ সাবলীল বলে যাওয়া বাক্যলাপে বুঝতে পারলো প্রান্তি।
অতঃপর বুকের মধ্যে সেই চেনা পরিচিত অনুভূতিরা কাজ করতে থাকলো। যা আজ কয়েকদিন ধরে খুবই বাজেভাবে জ্বালাময় করে তুলেছে তাঁকে।অহেতুক সব চাওয়া আবদার করে চলেছে তারকাছে, যা কিছুতেই তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে-না।অনুভূতিরা আবোল তাবোল গাইতে থাকলেও পা আঁটকে রাখলো না প্রান্তি।বাধ্য মেয়ের মতোই রুমের দিকেই পা বাড়ালো।রুমে ঢুকতেই জেনো ওপাশের মানুষটাও বুঝে গেল।বললো।

—রুমে ঢুকেছিস।

প্রান্তি ফের নরম গলায় জবাব দিলো।—হুমম।

—তৃতীয় কেবিনেটটা খোল।

থ্রীপার্টের কেবিনেটের তৃতীয় পার্টায় হাত লাগালো প্রান্তি।টান দিতেই বুঝতে পারলো লক করা–ওটাতো লক করা।

—ওহ হ্যাঁ।ওর চাবিটা দেখ কর্নার শো-পিচের প্রথম তাকের গোল ঝুড়িটায় রাখা।

চাবি নিয়ে কেবিনেট খুললো প্রান্তি।ওই মানুষটার সব জিনিসের ছোঁয়াতে কেমন জেনো শরীর মন অকারণেই শিরশিরিয়ে উঠছে।কেবিনেট খুলতেই বিভিন্ন তাঁকে সুন্দর করে গোছানো বিভিন্ন ফাইল দেখা গেলো।এই কেবিনেটটায় শুধু ফাইলপত্র আর কগজের সমাহার।
সেখান থেকে নীলরঙা ফাইলটা হাতে নিতেই ওপাশ থেকে আবারও বার্তা এলো।–পেয়েছিস।

হুমম-বলে কেবিনেট আটকাতে গিয়ে উপরের তাকের দিকে নজর আঁটকে গেলো প্রান্তির।হৃদস্পন্দন থেমে গেলো।থেমে গেলো স্বাভাবিক চলিত শ্বাস প্রশ্বাসের চলাচল।নিটোল চোখে শুধু চেয়ে রইলো,তাকটায় থাকা বক্সটায় লেখা বার্তার দিকে।

—একটু পরে একটা ছেলে যাবে।তার কাছে ফাইলটা দিয়ে দিস।অবশ্যই ছেলেটা যাওয়ার পর আমি যোগাযোগ করে নেবো।

কথা কানে গেলেও খেয়াল হলো-না প্রান্তির।সে শান্ত নজরে চেয়ে আছে তাকটায় রাখা জিনিসগুলোর দিকে।সেখানে মাঝারি সাইজের একটা বক্স।রঙিন কাগজে মোড়ানো।পাশাপাশি আরও দুটো শপিং ব্যাগ।ব্যাগের উপরে সাদা খামে জড়ানো কিছু রাখা আছে।আর খামের উপরে একটা লালরঙা জুয়েলারি বক্স।
সেসবে একপলক নজর ফেলিয়ে বড় বক্সটার লেখার পানে তাকিয়ে আছে প্রান্তি।সেখানে সাবলীল ভাষায় এবং গোটাগোটা সুন্দর হাতের লেখনীতে লেখা।

—প্রহানের প্রানের উপঢৌকনাদি।

চলবে….

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

আপনাদের মনেহয় গল্পটা ঠিক ভালো লাগেনা।কেনো জানিনা তাই আমারও লিখতে ভালো লাগেনা।ভালো লাগলে তো অবশ্যই পাঠক পাঠিকারা মন্তব্য করে।তাই মনে হলো আর কি…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here