সূচনা_পর্ব #রাঙিয়ে_দাও #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
456

তোমার ছেলে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ ছেলে বড়আম্মা ।আজ বাড়িতে আসুক তোমার ছেলেকে আমি খু/ন করে ফেলবো।

প্রাচিন বড়সড় দুতলা বিশিষ্ট বাড়ীটার তিনপাশ জুড়েই শুধু ঘর।সামনের বিস্তৃত জায়গাজুড়েই বিশাল উঠোন। সীমানাজুড়ে চারপাশ দিয়েই প্রাচীরে ঘেরা।আর উঠান পেরিয়েই সামনের প্রাচীরের মধ্যমনি সদর দরজা।আর সেখানে দাঁড়িয়ে বেশ ক্রোধিত হয়ে কথাটা বলে উঠলো প্রান্তি।

পুরানো বাড়িটার উঠোনের একপাশে কলপাড়।সেখানে দাড়িয়েই কাজের বুয়ার দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন মাহবুবা বেগম।প্রান্তির কথাগুলো কর্ণগোচর হতেই বিস্ময়ে চোখগুলো বড়বড় হয়ে গেল উনার।পিছনে মুড়তেই নজরে পড়লো প্রান্তির গোলগাল ফর্সা রাগান্বিত চেহারা।আর মায়াবীনি হরিনী চোখজোড়ার লালবর্ণতা।ইশশ..মেয়েটার কি অবস্থা!গোলগাল ফর্সা মায়াবী মুখখানা রক্তিম হয়ে গেছে।হরিনী মায়াময় চোখজোড়া কেঁদেকেটে লালবর্ন হওয়ার সাথে সাথে ফুলিয়ে ফেলেছে।মেয়েটা কলেজে যাওয়ার সময় সুন্দর হাসিখুশীমাখা মুখখানা নিয়ে গেলো।অথচ এখন তার একি অবস্থা?কিন্তু কেনো?কি হয়েছে?আর প্রহানকেই বা মারার কথা বলছে কেনো?তবে কি প্রহান কিছু বলেছে?প্রহানের সাথে কি কিছু হয়েছে?নিশ্চয় এই ছেলেটা আবারও উল্টো পাল্টা কিছু শুনিয়ে দিয়েছে। এই ছেলেকে নিয়ে আর পারা গেলো না।ভাবনা ছেড়ে মাহবুবা বেগম এগিয়ে গেলেন প্রান্তির দিকে।হাত ধরে সদর দরজা থেকে ভিতরে নিয়ে এসে উঠানে পাতানো মোড়ায় বসালেন।শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখমুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বেশ আদুরী ভঙ্গিতে বললেন।

—কি হয়েছে আমার প্রানোরানির?চোখমুখের এ অবস্থা কেনো?

ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো প্রান্তি।দুইহাতে গলা জড়িয়ে ধরল মাহবুবা বেগমের।মা নেই তার।তবুও মায়ের অভাবটা কখনো বুঝতে দেয়নি এই মমতাময়ী নারী।এই বাড়ীতে সবাই তাকে খুব ভালোবাসে।শুধু ওই হৃদয়হীন পাষান্ড অসভ্য লোকটা ছাড়া।আর সবচেয়ে ভালোবাসে এই বড়আম্মা নামক মানুষটা।সেজন্য ওই লোকটা তাকে আরও মোটেও সহ্য করতে পারেনা।লোকটার মায়ের ভাগ নিচ্ছে যে সে।সহ্য করবে কেমন করে!খারাপ ইতুর লোক একটা।আজ বাড়িতে আসুক।তাকে বিনাকারণে বকার মজাটা বুঝাবে।তার সাজানো গুছানো ঘর যদি সে লন্ডভন্ড না করে রেখেছে তো তার নামও প্রান্তিকা কবির নয়।

—আরেহ কাঁদছিস কেনো?কি হয়েছে বলবি’তো।

—তোমার ওই খারাপ ছেলে আমাকে ভরা ক্লাসের মধ্যে সবার সামনে আপমান করেছে।এজন্য বলেছিলাম তোমার ওই প্রফেসরগিরীকরা ছেলের কলেজে আমি ভর্তি হবো না।শুনলেনা তখন আমার কথা।সবাই মিলে আমাকে বাধ্য করে জোর করে বুঝিয়ে ওই কলেজেই ভর্তি করালে।আমি জানতাম।খুব ভালোকরে জানতাম।তোমার ওই মুখে কুলূপ এঁটে থাকা ছেলে বাড়িতে কিছু বলতে না পারলেও সেগুলোর শোধ,সে ঠিকই কলেজে গিয়ে প্রফেসরগীরি করেই আমার উপরেই তুলবে।আজ সে তাই করেছে। কথাগুলো বলে পুনরায় ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো প্রান্তি।অপমানিত হওয়া কথাগুলো পুনরায় কানে বেজে উঠতেই জোরসে নাকে টান দিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে।

—আরেহ আবারও কাঁদে।কি হয়েছে সেটাতো বলবি।না হলে আমি প্রহানকে বকবো কি করে?

দু’জনের কথার মাঝেই টুল নিয়ে বসলেন রাবেয়া খাতুন তিনি প্রান্তির নানী।ঘর থেকে বেরিয়ে কাজের মহিলাকে জামাকাপড় দিতে গিয়ে প্রান্তিকে নজরে পড়লো এই বাড়ির মেজো বউ অর্থাৎ প্রান্তির মেজো মামি।তিনিও এসে দাঁড়ালেন প্রান্তির অন্যপাশে। প্রশ্ন করলেন কি হয়েছে?সবার কথায় এবার সোজা হয়ে বসলো প্রান্তি।চোখ-নাক মুছেলো মাহবুবা বেগমের শাড়ির আঁচলে। ফের কিছু বলতে যাবে।তার আগেই কলপাড় থেকে এই বাড়ির কাজের বুয়া ফুলবানু বলে উঠলেন।

—আমি জানি এইহানে এখখান কিন্তু আছে।ভাইজানের কোনো দোষ নাই।তবু্ও আমার মনে হইতাছে ভাইজানকেই দোষী করা হইবো।ভাইজান নিজ ইচ্ছেতে কোনো দোষ করতেই পারে না।

ফুলির কথা শুনে ক্ষেপে গেলো প্রান্তি।মাহবুবা বেগম চোখ মোটামোটা করে রাগান্বিত হয়েই তাকালেন ফুলির দিকে।একে মেয়েটাকে ঠান্ডা করা যাচ্ছেনা।তাতে উনি আবার ভাইজানের হয়ে ইন্ধন জোগাচ্ছেন।সময় পেলেন না আর।

—বড়মা,ওই ফুলের বানুকে চুপ থাকতে বলো।যদি আর একবারও তার ভাই জানের হয়ে সালিশী করতে আসে।আমি বলে দিলাম খুব খারাপ হবে।তারপর ফুল বানুর দিকে রাগান্বিত হয়ে বললো।

—এতো যখন ভাইজানের উপর দরদ।তার হয়েই চামচামি করো।তাহলে ভাইজানকে নিয়ে আলাদা খেতে পারোনা।দুজনে তো দিব্যি আমার মামুর পয়সায় আর তার সংসারেই গিলছো।এ্যাহ উনি আইছেন, আমার ভাইজানের কোনো দোষ নাই কিন্তু তাকেই দোষী করা হবে।তিনি একেবারে দুধে ধোঁয়া তুলশী পাতা।সচ্ছ পানির মতো পরিস্কার।

রাগে ফুলবানুকে ব্যঙ্গকরে এটা ওটা বলতেই থাকলো প্রান্তি।ওদিকে হা হয়ে ফুলবানু তারদিকে তাকিয়ে আছে।সে কি বললো।আর এই মেয়ে সেই কথার কি মানে বের করে আবোল তাবোল বলে চলেছে।সে কেনো ভাইজানরে নিয়ে আলাদা খেতে যাবে?এসব কি বলে চলেছে মেয়েটা।নিশ্চিত এই মেয়ের মাথাটা আজ পুরো গেছে।

মাহবুবা বেগম ধমক দিয়ে ফুলবানুকে কাজে বসিয়ে দিলেন।আর বললেন।একটা কথাও জেন তার মুখ দিয়ে না বের হয়।ফুলবানু চুপ থাকার পাত্রী নয়।বিশেষ করে তার ভাইজানের বিরুদ্ধাচারণ হলে।তবে এই অদ্ভুত মেয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে তার মাথা এখন ঠিক নেই।তাই সেও চুপ হয়ে কাজে মন দিলো।তবে কান তার প্রান্তিকে ঘিরে।ফুলবানুকে ধমক দিয়ে মাহবুবা বেগম প্রান্তিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন।–ও বোকা।ও বোঝেনা।ওর কথা বাদ দে।বল কি হয়েছে?

মাহবুবা বেগমের সাথে প্রান্তির মেজো মামিও সান্তনা দিলেন।বুঝলেন মেয়েটা আজ বেশ ক্ষেপেছে।দু’জনের শান্তনায় প্রান্তিও কিছুটা শান্ত হলো ফের বলতে শুরু করলো।

.

প্রান্তি কলেজে যাওয়ার প্রায় একমাস গড়িয়েছে।এই কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে তার খুবই আপত্তি ছিলো। তার কারন একটাই,প্রহান।ওই মানুষটা খারাপ বা প্রান্তি তাকে মোটেই দেখতে পারেনা এমনটাও নয়।তবে ওই মানুষটার কড়া শাষন আর অতি গম্ভীরতা তার পছন্দ নয়। সর্বদা নিয়ম কানুনের মধ্যে থাকা মানুষটাকে তার বিরক্ত লাগে।পড়ার সময় পড়া খাওয়ার সময় খাওয়া, যখন যেটা যে নিয়ম তখন সেটা সর্বদা করতে হবে।তার মাঝে মাঝে মনেহয়,মানুষটা প্রফেসর না হয়ে আইন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা হলে মন্দ হতো না।নামডাক হতো বেশ।আর বাড়ির মানুষ গুলোকে না জ্বালিয়ে দেশের মানুষগুলোকে জ্বালাতো।

যাই হোক,বান্দার অনিয়ম পছন্দ নয় তো অন্যকেউ সেই অনিয়ম করুক সেটাও পছন্দ নয়।উনার এই অতি পাংচুয়াল আর কড়া শাষন প্রান্তির একটুও ভালো লাগে না।এসব কারনেই মানুষটাকে তার মোটামুটি অপছন্দ।যারজন্য ওই মানুষটা যেদিকে যায় সে তার বিপরীত স্রোতের দিকেই গা ভাসাতে পছন্দ করে।তাছাড়া মানুষটার সাথে তার আর কোনো বিবাদ নেই।কিন্তু ওই যে কথায় আছে না।হাতে না মারলে ভাতে মারবো।বাড়িতে সবার আদরের হওয়ায় মানুষটা তাকে কিছু বলতে পারেনা বলে নিজের মাতব্বরির জায়গায় কি ছেড়ে দেবে?দেয় কেউ?দেয় না।সে দোষ না করা সত্ত্বেও তাঁকেও দেয়নি।এসব কারনেই সে ওই কলেজে ভর্তি হতেই চায়নি।যেখানে মানুষটার এসব স্বভাবের কারনে সবাই তাকে যমদূতের মতো ভয় পায়।সেখানে জেনেশুনে সে কিকরে নির্দ্বিধায় পা ফেলতে পারে।সেটা বাড়ির মানুষগুলো বুঝলে-তো।সে খুব ভালো জানতো সুযোগ পেলে তাঁকেও ওই অসভ্য লোকটা ছেড়ে দেবে না।ছোটবেলা থেকে যে মানুষটার অবাধ্যতামী সে করে আসছে।আর এখনও করছে।আর সুযোগ পেলে বুঝি সেই মানুষটা একটুও শোধ তুলবে না?তাকে ছেড়ে দেবে?তা কখনো হয়? কি করে হয়?হয় না!

কলেজে ভর্তি৷ হওয়া নিয়ে আপত্তি থাকলে-ও,ভর্তি হওয়ার পর যখন শুনলো তাদের কলেজ এন্ড ভার্সিটির শিক্ষকের তালিকায় প্রহান শুধু ভার্সিটির স্টুডেন্টর ক্লাস নেয়।তাদের নয়।সে ভিষণ খুশি হয়েছিলো।কিন্তু খুশি হতে পারিনি তার প্রানপ্রিয় বান্ধবী আবিশা।বেশ আফসোস নিয়ে বলেছিলো, আহারে প্রাহন ভাইয়াই যদি ক্লাস না নেবে তাহলে এই কলেজে ভর্তি হয়ে লাভ কি হলো?

আবিশায় কথায় কখনো কর্নপাত করেনা প্রান্তি।ছোটো থেকেই একসাথে বড় হয়েছে তারা।প্রানপ্রিয় বান্ধবী-ও দুজন।বিধায় মানিকজোড়ার স্কুল লাইফটা কাটিয়ে এবার কলেজ লাইফটা শুরু হয়েছে তাদের।বিধায় আবিশা সম্পর্কে নখদর্পনে প্রান্তির।ছোটো থেকেই ওই প্রহান নামক লোকটা বলতে দুঢোক পানি বেশিই খেয়ে থাকে আবিশা। সুদর্শন ছেলে দেখলেই ক্রাশ খাওয়ার অভ্যাস আছে তার।সেই হিসাবে তার ক্রাশের লিস্টের কাতারে সর্বপ্রথম নাম হলো মোহাম্মদ প্রহান মাহমুদ।
যারজন্য বাড়ির সবার মতো এই কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে আকাশসম আগ্রহ ছিলো আবিশার-ও।তাকে-ও কম পটিয়েছে মেয়েটা?আর যারজন্য আগ্রহী হয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে সে তিনি তাদের ক্লাস নিচ্ছেন না।আর তাঁকে নিয়ে আবিশা আফসোসের বানি আওড়াবেনা তা কি করে হয়।বিধায় আবিশার মর্মাহত হৃদয়ের আফসোসের বানি সম্পর্কে শোনা অভ্যস্ত হয়ে গেছে প্রান্তির।

রোজ কলেজে এসে প্রহান মাহমুদকে দেখে আবিশা আফসোসের বানি আওড়ালেও প্রান্তির দিনগুলো যাচ্ছিলো দারূন।কিন্তু সেই দারূন দিনগুলোর অবসান ঘটিয়ে আজ প্রহান মাহমুদ তাদের ক্লাসে প্রবেশ করল।অল্প বয়স্ক এবং দেখতে সুদর্শন হওয়ায় ক্লাসের প্রত্যেকটা মেয়ে স্টুডেন্ট ভঙ্গিতে গদগদ হয়ে উঠলো তাকে দেখে।আর আবিশার কথাতো বাদই।কিন্তু প্রান্তি বুঝে উঠলোনা হঠাৎ এই বান্দার তাদের ক্লাসের আগমনের কারনটা কি?তবে কিছু সময় যেতেই পরিচয় পর্ব মিলতেই বুঝতে পারলো।এই টাইমে তাদের যে শিক্ষক ক্লাস নিয়ে থাকেন।তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় প্রহান মাহমুদ তাদের কিছুদিন ক্লাস নেবেন।ভার্সিটির জুনিয়র শিক্ষক হওয়ায় কলেজের এই ক্লাসের সুযোগটা তাঁকে দেওয়া হয়েছে।প্রান্তি ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না এটা তার সৌভাগ্য নাকি দূর্ভাগ্য।যেটা থেকে সে দূরে থাকতে চাইছিল।তারই আগমন।তবে বরাবরই সে ভালো স্টুডেন্ট বিধায় শত ভাবনা ছেড়ে সে ক্লাসে মন দিলো।কিন্তু ভাগ্য মনেহয় তার সৌভাগ্যটা চায়নি বিধায় কপালের সাথে সাথে এরকম একটা বান্ধবীও জুটেছে তার।শত স্টুডেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও ভয়ডর ছাইয়ের মতো উড়িয়ে দিয়ে তাঁকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো।

—অন্য দিনের তুলনায় আজ প্রহান ভাইয়াকে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে তাই নারে প্রান্তি।ঈশশ ফর্মাল লুকে তাঁকে এতো মারাত্মক লাগে।পুরো আমার স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহের মতো।আয়হায় মে তো গায়া।

আবিশার কথায় প্রান্তি চোখ বড়বড় করে ফেললো।মানুষটা সম্পর্কে মেয়েটা খুব ভালো জানে তবুও এসব বলে চলেছে।সামনে একপলক নজর দিয়ে আঁড়চোখে আবিশার দিকে তাকিয়ে উপহাসেরস্বরে ফিসফিসিয়ে প্রান্তি বললো।

—মরবি তো এমনিতেও তুই।সামনের মানুষটা যদি ক্ষুন্ন অক্ষরেও বুঝতে পারে তার ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে তুই তাঁকে নিয়েই পরিচর্যা করছিস।তাহলে তুই তো গায়া,হামকোও সাথমে লে গায়া।মরবি সাথে আমাকেও মারবি।

—এটা কোনো ব্যাপারই না।

—তোর কাছে কোনো ব্যাপার নাথাকলেও আমার কাছে বহুত ব্যাপার।আর তোর ওই হ্যান্ডসাম সালমান শাহ সম্পর্কে তোর খুব ভালো করে জানা।সো নিজে না ডুবে, আমাকেও না ডুবিয়ে ক্লাসে মনোযোগ দে।প্লিজ আবিশা।না হলে….

কথা শেষ করতে পারলোনা প্রান্তি।তার আগে বজ্রকন্ঠে কেউ বলে উঠলো—হেই ইউ।স্ট্যান্ডআপ।

বজ্রকন্ঠে পুরো ক্লাসের পরিবেশ মূহুর্তেই থমথমে হয়ে উঠলো।প্রান্তি আর আবিশার কথাও থেমে গেলো।নজর চলে গেলো সামনে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে।আর পুরো ক্লাসের সমস্ত স্টুডেন্টের মনোযোগ আর নজর চলে এলো তাদের দিকে।ফের আবারও বজ্রকন্ঠের নির্দেশ হতেই উঠে দাঁড়াতে হলো প্রান্তিকে।গলা তার বজ্রকন্ঠের হে ইউ শুনতেই শুকিয়ে গেছে।কলিজা কেঁপে চলেছে কাল বৈশাখি ঝড়ের বেগে।পুনরায় নিজের দিকে পুরুষালী আঙুলের নির্দেশনা উঠতেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ।আর সামনের মানুষটা তার লজ্জা শতগুণ বাড়িয়ে দিয়ে অতি শান্ত আর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো।

—এটা ক্লাসরুম।গল্প করার জায়গায় নয়।গল্প করার জন্য ভিন্নতর জায়গা আছে।ক্লাসে মনোযোগ না দিতে পারলে সেখানে গিয়ে গল্প করো।ক্লাসে নয়।আর আমার ক্লাসটা মাছের বাজার হোক সেটা অন্তত আমি মেনে নেবো না।সো মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করো নাহলে ক্লাসের বাহিরে চলে যাও।বুঝতে পেরেছো।সিট ডাউন।

অল্প বয়স্ক সুদর্শন শিক্ষককে দেখে ক্লাসের যেসব মেয়েরা গদগদ হয়ে উঠেছিলো।বজ্রকন্ঠের গম্ভীর কথা গুলো শুনে মূহুর্তেই সবার মুখ পাংশুটে হয়ে গেলো।মূহুর্তেই সবাই শান্ত হয়ে ক্লাসে মনোযোগ দিলো।প্রান্তিও দাঁতে দাঁত চেপে কান্না আটকিয়ে কথাগুলো শুধু হজম করে গেলো।লজ্জায় মনেহলো দৌড়ে ক্লাসের বাহিরে চলে যেতে।কিন্তু পা যে তার নড়তেই চাইছে না।পাথর বনে গেছে।বাকি ক্লাসটা অসীম ধৈর্য্য নিয়ে চুপচাপ শুধু করে গেলো।এরমধ্যে চোখের জলও বাধা মানেনি।অনবরত গড়িয়ে চলেছে তারা।পাশে বসে আবিশা শুধু বোবা মানুষের মতো দেখে গেছে।নিজের জন্য মেয়েটা এতো অপমানিত হলো,যেখানে সামনের পুরুষটা সম্পর্কে তারা জানা।নিজেকে খুবই ছোট মনেহলো।কিচ্ছু বলতে পারলোনা সে।প্রান্তির মতো সে-ও চুপচাপ ক্লাস করে গেলো।ক্লাস শেষে আর এক মূহুর্তও কলেজে দাড়ালো না প্রান্তি।আবিশাকে সঙ্গে না নিয়েই একাএকা বাড়িতে চলে এসেছে সে।

.

কথা শেষ করতেই আবারও চোখের নোনাজল আর নাকের পানিটা মাহবুবা বেগমের শাড়ির আচলে মুছলো প্রান্তি।প্রান্তির কথায় মাহবুবা বেগম কি বলবেন খুঁজে পেলেন না।ছেলেটা তার এরকমই।সেটা প্রান্তিও জানে।তবুও কেনো মেয়েটা অমনোযোগী হলো।মেয়েটার আর দোষ কোথায়?মাহবুবা বেগমের ভাবনার মাঝেই প্রান্তির নানি বলে উঠলো।

—তুই তো জানিস দাদুভাই একটু ওরকই।

নানির কথার প্রেক্ষিতে প্রান্তি কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রান্তির মেজোমামি বললো।-আদ্র আর নিদ্র কি বলে জানিস?বলে মা দাদাভাইয়ের ভয়তে আমরা স্কুলের বাহিরেও একটু যেতে পারি না।বন্ধুদের সাথে দুষ্টিমীও করতে পারিনা।কেউ আমাদের কিছু বললে ভয়ে মারামারিও করতে পারিনা।মনে ভয় হয়,এই বুঝি দাদাভাই দেখে ফেললো।আর বকলো।দাদাভাই তো কখনো আমাদের মারে না তবুও দাদাভাইয়ের কন্ঠ শুনলে আমাদের হাঁটু কাঁপতে থাকে।খুব ভয় হয়।আর ক্লাসে অমনোযোগী তো কখনো হইনা।মনেহয় এই বুঝি ক্লাসে অমনোযোগী হওয়ার কারনটা দাদাভাইয়ের কানে চলে গেলো।আর দাদাভাই কষে আমাদের কয়েক ঘা বসিয়ে দিলো।যদিও জানি দাদাভাই মারবে না তবুও ভয় হয়।যারজন্য স্কুলের বাহিরে যাবো বা কারও সাথে মারামারি করবো বা ক্লাসে অমনোযোগী হবো, ভাবতেই দাদাভাইকে স্মরণ হয়।আর সবকিছু ভুলে যাই।সেখানে বেয়াদবিতো মনেই থাকেনা।

থামলেন তিনি।মেজো মামি উনার কথা দ্বারা কি বোঝাতে চাইলেন তার মর্মার্থটা বেশ বুঝলো প্রান্তি।এটা সত্যি মানুষটা ওরকমই।তাই বলে দয়ামায়া বলতে কিছুই থাকবে-না।সে যে ক্লাসে অমনোযোগী স্টুডেন্ট এমনটাতো নয়।মানুষটাতো তার সম্পর্কে বেশ জানে।তবুও এতগুলা কথা শোনানোর আগে একটুও ভাবলো না।আর এমন করে হে ইউ বললো জেনো তাকে চেনেই না।বান্দা তাকে প্রথম দেখছে।সেও ভাববেনা।মানুষটার প্রিয় জায়গাটা সে আজ অপ্রিয় করে তুলবে।তাতে যা হয় হবে।ভরা ক্লাসে হওয়া অপমানের শোধ তো সে তুলবেই।

মাহবুবা বেগম নিজের মমতাময়ী আদূরে কথা দিয়েই বুঝিয়ে শুনিয়ে প্রান্তিকে ঘরে পাঠিয়ে দিলেন।প্রান্তিও মাহবুবা বেগমের কথা মেনে নিয়ে চলে গেলো।কিন্তু মনের মধ্যে চলছে তার অন্য কিছু। চোখের আড়াল হতেই প্রান্তির নানি বললেন।

—এই দুটোকে তুমি এক করবে কি করে বড় বউমা।একজনন উত্তরমেরুর তো অন্যজন দক্ষিণমেরু।ছোটো বেলা থেকেই দু’জন দুই প্রান্তের মানুষ। এদেরকে বাঁধবে কি করে এক সুতোয়।পারুলের দেওয়া কথা রাখবে কি করে তুমি?

শাশুড়ীর কথায় মাহবুবা বেগম মোটেও বিচলিত হলেন না আর না চিন্তিত হলেন।বরং মনেমনে হাসলেন তবে মুখে সেটা প্রকাশ করলেন না।ছেলে মেয়ে দু’জনকেই তিনি কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন।তাদেরকে তিনি খুব ভালো করে চিনেন।আর নিজের ছেলেকে তো খুব ভালো করেই চিনেন এবং জানেন।তিনি শাশুড়ীকে কিছু সান্ত্বনাসরূপ বলতে যাবেন।তার আগেই চঞ্চল পুরুষালী গলার বার্তা এলো।

—ওদের এক সুতোয় বাঁধতে চাইলে বুড়ো বয়সে তোমাকে অভিনেত্রী হতে হবে মা।একটু অভিনয় করতে হবে।

কথাটা বলে সদর দরজা পেরিয়ে ভিতরে আসলো হাবিব আফরোজ।তিনি প্রান্তির ছোটো মামা।বয়স পার হয়ে গেলেও বিয়েসাদী এখনো করেন নি।হাবিবের কথাটা শুনে কপাল কুঁচকে ফেললেন রাবেয়া খাতুন। মা ছেলে হলেও সম্পর্ক উনাদের দা আর কুমড়োর মতো।দুজনের মধ্যে বনিবনা কম।তার কারনও আছে।বিশেষ কারন পড়াশোনা শেষ করেও চাকরি বাকরি না করে বাউন্ডলিপনা করে ঘোরাফেরা করা।আর বয়স পার হওয়া সত্ত্বেও বিয়েসাদী না করা।অন্যদিকে হাবিবের কথা শুনে মুখে মিষ্টি হাসি ফুটলো মাহবুবা বেগমসহ উনার মেজো জায়ের।এই মা আর ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটির দন্ড বাঁধলো বলে কথা।সঙ্গে সঙ্গে বাজখাঁই গলায় রাবেয়া খাতুন বললেন।

–নিশ্চয় আমার মরমর অসুস্থতার অভিনয় করতে হবে।দেখেছো বড় বউমা আমাকে মারতে পারলেই ও বাঁচে।ও বুড়ো বয়সে আমাকে মরার মিথ্যা অভিনয় করতে বলছে।মিথ্যা অভিনয় করার পর সত্যিই যদি আমি মরে যাই তবে কবরে জায়গা হবে আমার?কখনো হবে?অবশ্যই ও নিজের হোক বা বাড়ির কারও ভালোমন্দটা বুঝলোটা আর কবে?

কথা বলতে বলতে উঠে দাড়ালেন রাবেয়া খাতুন। ফের আদররের ছোটো ছেলের দিকে রাগান্বিত আর বিরক্তির দৃষ্টি ফেলে পুনরায় বললেন।—ওদেরকে এক সূতোয় বাঁধতে যদি আমাকে অসুস্থতার মরমর অভিনয় করতে হয়।তবে তোকে বিয়ে দিতে আমায় কি করতে হবে?নিজেকে মারতে?নাকি মরতে?

রাবেয়া খাতুন এটাওটা বলে বকতে থাকলেন।মায়ের কথা শুনে হাবিব আশ্চর্য হয়ে গেলো।সে মা’কে একটু অভিনয় করার কথা বলেছে।তবে এটাতো বলেনি মরার অভিনয় করতে হবে।শুধু একটু অসুস্থতার নাটক করতে হবে।কিন্তু মা তার মনের কথাটা ঠিকই বলার আগে বুঝে নিয়েছেন।অবশ্যই মা যতোই তারউপর অসন্তুষ্ট হোক বা তাঁকে গালমন্দ করুক।বরাবরই মা তাঁকে একটু বেশিই বোঝে।রাবেয়া খাতুন বকতে বকতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।মাহবুবা বেগম আর উনার জা এখনো মিটিমিটি হেসে চলেছেন।সেটা দেখে হাবিব বোকাসোকা ভাব করে বললো।

—আমিতো শুধু অভিনয় করার পরামর্শ দিলাম মা-কে। তাতেই মা বুঝে ফেললেন আমি উনাকে কি দৃশ্যবলী অভিনয় করার কথা বলছি।আশ্চর্য।

মাহবুবা বেগম বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।হাবিবের ঘনো চুলে স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন।

—মা তো।বাচ্চারা অর্ধেক বললেও আর অর্ধেক উনারা বাচ্চার বলার ভঙ্গিমা আর কথার ধরন দেখে বুঝে নিতে পারেন।সেখানে আম্মা তো তোমাকে খুব ভালোবাসেন।

মাথায় স্নেহের পরশ পেতেই বড় ভাবির দিকে কৃতজ্ঞতাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো হাবিব।এই ভদ্রমহিলা শুধু তার ভাবি নন।দ্বিতীয়ও মা-ও।বাবা মায়ের বৃদ্ধ বয়সের সন্তান সে।সে জন্মানোর সময় মায়ের মরমর অবস্থা।এই বড় ভাবী নামক মানুষটার কোলে-ও তখন দু মাসের বাচ্চা।তার ভাইজি প্রজ্ঞা।মায়ের অসুস্থতার জন্য হাবিব ঠিকমতো বুকের দুধ না পাওয়ায় এই মমতাময়ী নারী তার বুকের দুধ পান করিয়ে দুধমাতা হয়েছিল।যার কারনে এই নারীর প্রতি অদ্ভুত টান তার।বিভিন্ন কারনে মা শাসন করলেও বকলেও এই নারী কখনোই তা করেনা।বরং সেই শাসন বকা থেকে আরও আগলিয়ে রাখে।

.

সময়টা বিকাল।ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে টিভি দেখছে প্রান্তি।আর তাকে সেবায় নিয়োজিত এই বাড়ির ছোট দুই সদস্য আদ্র-নিদ্র।সম্পর্কে তারা প্রান্তির মামাতো ভাই।জমজ হওয়ার সুবাধে দু’জনেই ক্লাস ফাইভের স্টুডেন্ট।একজনের কোলে প্রান্তির মাথা তো অন্যজনের কোলে প্রান্তির পাজোড়া।তিনজন মিলে মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে।বাড়িতে আপতত কেউ নেই।বাড়ির পুরুষ সদস্য গুলো নিজ নিজ কাজের জন্য আপতত এখনো বাহিরে।আর মহিলা পার্টি গিয়েছে পাশের বাসার এক আন্টি অসুস্থ।তাকে দেখতে।বিধায় তিনজনের বিঘ্ন ঘটানোর আপতত কেউ নেই।চ্যানেল আইতে আনন্দ অশ্রু ছবি হচ্ছে।সেটাই মনোযোগ সহকারে দেখছে প্রান্তি।কতোবার ছবিটা দেখেছে তার হিসাব নেই।তবুও ছবিটা যতবার যে চ্যানেলে হয় প্রান্তি দেখে।বলতে গেলে শাবনুরের আগের ছবিগুলো তার দেখতে ভিষন ভালো লাগে।তবে প্রান্তির মনোযোগ টিভিতে থাকলেও আদ্র আর নিদ্রের মনোযোগ ড্রয়িংরুমের খুলে রাখা দরজার পানে।কিছুক্ষণ পরপর সেখানে নজর বুলাচ্ছে তারা।কখন বাড়ির বাঘ ঢুকে পড়ে আর তাদেরকে পাকড়াও করে।কোনো কারনে প্রান্তি আপু আজ টিভির ভলিউম স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দিয়ে রেখেছে।সেখানে এখন আনন্দ অশ্রু ছবির বিখ্যাত গান।—উত্তরে ভয়ংকর জঙ্গল দক্ষিণে না যাওয়ায় মঙ্গল।পূর্ব পশ্চিম দুইদিক অন্ত নদী।

গানের কারনে ভলিউমটা জেনো কানে আরও মারাত্মক লাগছে।নিদ্র বুঝলোনা প্রান্তি আপু আজ কেনো এরকম অস্বাভাবিক সাউন্ড দিয়ে টিভি দেখছে।তার কি দাদাভাইয়ের কথা স্মরণ করে ভয় লাগছেনা।হুটকরে যদি দাদাভাই বাড়িতে আসে আর এসে যদি দেখে এই সাউন্ড দিয়ে তারা টিভি দেখছে তবে তো…..ভাবনাটা আর সামনে গড়ালো-না নিদ্র।পুনরায় দরজার দিকে একবার সতর্ক নজর দিয়ে ফের প্রান্তির দিকে তাকিয়ে বললো।

—আপু,দাদাভাই আসার সময় হয়ে গেছে।টিভির সাউন্ড একটু কমিয়ে দাও।নাহলে বুঝতে পারছো কি হবে?

—কি হবে?তোর দাদাভাইকে ভয় পেতে যাবো কেন?সে বাঘ নাকি ভাল্লুক যে তাঁকে ভয় পেতে হবে?সে কি আমাদের খেয়ে ফেলাবে?

—তুমি এইকথা বলছো?তুমি জানোনা দাদাভাই কেমন?

—তোর দাদাভাই যেমনই হয় হোক! চুপচাপ টিভি দেখ।বাড়িতে কে আসলো কে গেলো সেদিকে নজর দিবিনা।নজর স্থির রাখ টিভিতে তাহলেই হলো।

নিদ্র তার গোলগোল চশমাটা নাকের মধ্যেভাগ থেকে ঠেলে ঠিক করে নিলো।এই সময়ে তারা ব্যাচে থাকে কিন্তু আজ টিচার কোনো কারনে ছুটি দেওয়ায় তারা বাড়িতে।খবরটা এতোক্ষণে অবশ্যই দাদাভাইয়ের কাছে চলে গিয়েছে।বাড়িতে এসে দাদাভাই তাদের দেখে কিছু না বললেও।এই অতি সাউন্ড দিয়ে টিভি দেখা নিয়ে কি করবে ভেবে শান্ত হয়ে বসতে পারছে না সে।আপুকে বলেও কাজ হচ্ছেনা।অবশ্যই বাড়ির এসব দস্যুপনা কাজে প্রান্তি আপুর জুড়ি নেই।তিনি একমাত্র দাদাভাইকে ভয়ডর পেয়ে চলেনা।তবুও এখন তো দাদাভাই তার কলেজের টিচার তবুও কেনো ভয় পায় না আপু।ভেবে ভেবে দিশেহারা হচ্ছে নিদ্র।তবে প্রান্তির কথামতো তার নজর টিভিতে স্থির থাকলেও আড়চোখ তার দরজার পানে।

.

বিকাল গড়িয়ে কিছুক্ষণ বাদেই বাড়ি ফিরলো প্রহান। বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে উঠােনে আসতেই বুঝতে পারলো টিভির অস্বাভাবিক সাউন্ড।আর এই অস্বাভাবিক সাউন্ড দিয়ে কে টিভি দেখতে পারে এটাও বেশ বুঝতে পারলো।আজ যে তার অপ্রিয় কর্মকান্ডগুলাে এবাড়িতে অবশ্যই চলবে এটাও তার জানা।তপ্ত শ্বাস ফেলে বাড়ির ভিতরের দিকে এগোলো সে।বাড়ির মেইন গেইট সারাদিন খোলা থাকলেও বাড়ির সদর দরজা কখনো খোলা থাকে না।সেটা খোলা দেখে কপাল কুঁচকে ফেললেও,ড্রয়িংরুমের ভিতরে ঢুকে সেখানকার দৃশ্য দেখে সবকিছু স্বাভাবিক মনেহলো তার।মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখা সদস্যরাও বুঝতে পারলো বাড়িতে কে ঢুকেছে।তারা মনেমনে সবাই বিচলিত হলেও টিভিথেকে নজর একচুলও এদিক ওদিক করলোনা।তাদের কান্ডকারখানা বেশ বুঝতে পারলেও সেখানে একটাও শব্দ ব্যয় করলোনা প্রহান।নিজের ব্যক্তিত্বের গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে শান্ত পায়ে দোতলায় নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো।তবে চলে যাওয়ার আগে শান্ত নজরটা সোফায় শয়নরত রমনীর দিকে একবার ফেলতে ভুললো না।

টিভিতে চলা চঞ্চল অভিনেত্রী আর সোফায় শয়নরত নারীর সাদৃশ্যের তফাৎটা খুব একটা অমিল পেলো না প্রহান।চেহারার যেমন অদ্ভুতভাবে কিছু মিল রয়েছে।কথা কাজে চঞ্চলতা-ও বেশ মিল।দুটোই অদ্ভুত প্রানী।মানুষের জীবন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নাশশ করতে হয় কি করে এদের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।দোষ করা সত্ত্বেও কিছু বলা মানেই যে ভালোটা বলবে সেই দোষী।

প্রহান চোখের আড়াল হতেই,টিভির দিক থেকে নজর সরিয়ে দোতালার কর্নারের রুমটার দিকে তাকালো প্রান্তি।মুখে তার অদ্ভুত দুষ্ট হাসির রেখা ফুটে আছে।লোকটা নিজের অপ্রিয় কর্মকান্ড গুলো দেখবে জ্বলবে পুড়বে আর তপ্ত হবে।কিন্তু তাঁকে কিছুই বলতে পারবে না।প্রথম ধাপ শেষ।এবার দ্বিতীয় ধাপ শুরু।হয়তো এতোসময় শুরু হয়ে গেছে।আর তৃতীয় ধাপের জ্বলনটা সে এখান থেকে পাঁচ মিনিট পরে উপরে গিয়ে জ্বালিয়ে দিয়ে আসবে।সে দোষ না করা সত্ত্বেও তাকে অপমানিত করা।আর দোষ যদি করে থাকে তারসাথে আবিশাও করেছে। তবে ভরা ক্লাসে শুধু তাকে দাঁড় করিয়ে কেনো অপমানিত করলো মানুষটা।কথা বলতে তো নিশ্চয় দুজনকেই দেখেছে।তবে বাজে কথাগুলো কেনো শুধু তাকে শোনালো?এটাকি এক তরফা রাগ দেখানো নয়?
টিভির বলিউমটা আরও একটু বাড়ালো প্রান্তি।ফের মুখের দুষ্ট হাসিটা আরও একটু চওড়া করে অস্পষ্টস্বরে বললো।

—-আমাকে প্রাননাশিনী বলে ডাকেন তাই না।হ্যাঁ আমি আপনার প্রাননাশিনী।আমাকে অকারণে বকলে রাগ দেখালে আমি সত্যিই আপনার প্রান নাশ- নাশ করে ছেড়ে দেবো।আমাকে ডাকা নামটার সার্থকতা দেখিয়ে দেবো আপনাকে।

চলবে…

#সূচনা_পর্ব
#রাঙিয়ে_দাও
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here