হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶 #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব৩৩

0
114

#হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব৩৩
#বোনাস_পর্ব

[পর্বটা একটু রোমান্টিক হতে পারে। তাই নিজ দায়িত্বে পড়বেন]

বিয়ের সাঁজ পোশাক ছেড়ে নিজের কক্ষে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। সারাদিনে শরীরের উপর দিয়ে বড্ড ধকল গেছে। ভ্যাপসা গরমে একেবারে নাজেহাল অবস্থা হয়েছে। এদিকে উপরি পাওনা স্বরূপ আমার কক্ষের এসিটাও নষ্ট হতে হলো! এই বিয়ে বিয়ে করে গতরাতে না ঠিকমতো ঘুম হয়েছে আর না সারাদিন সেভাবে খাওয়া দাওয়াও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ঘিরে ফেলেছে আমায়।

আমার ক্লান্তি লাগছিল বলে একটু আগে অরনী এসে ঠান্ডা শরবত দিয়ে যায়। এখন ওরা ব্যস্ত আমাদের বাসর ঘর সাঁজাতে। এজন্য আদ্রিশের কক্ষে না গিয়ে তাই নিজের কক্ষে চলে এলাম। ভারী ভারী স্বর্ণের অলংকার খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে, বেনারসি গায়ে জড়িয়েই শুয়ে পড়লাম। মাথার উপর সিলিং ফ্যান চলছে, তবুও গরম কমার নাম নেই যেন! বিরক্ত হয়ে তাই গায়ের উপর থেকে শাড়ির আঁচল খানিকটা সরিয়ে ফেললাম। শরবতটা খাওয়ার পর অবশ্য একটু ভালো লাগছিল!

শুনেছি প্রতিটা মেয়েই নাকি বিদায়বেলায় তাদের মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কান্নাকাটি করে। এরপর সম্পূর্ণ অপরিচিত স্থান – শশুরবাড়িতে গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় আর সকলের মন জুগিয়ে চলতে হয়! অরনীর ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটেছিল। ওর বিয়েতে ওতো রিচুয়ান্স মেইনটেইন করা হয়নি। অনেকটা হুট করেই বিয়েটা হয়েছিল ওর। এখনো মনে পড়ে, আমাদের ছেড়ে যাওয়ার সময় সবাইকে জড়িয়ে ধরে ভীষন কান্নাকাটি করেছিল অরনী। সেদিন সন্তর্পণে সামলে নিয়েছিল আরাভ ভাইয়া।

যদিও আমার বেলায় এর ব্যতিক্রমটাই ঘটেছে। আমায় আর কোথাও যেতেও হয়নি আবার এমন কান্নাকাটিও করতে হয়নি। আগে ছিলাম এই বাড়ির নয়নের মণি আর আজ থেকে এই বাড়ির বউরাণি!

আচমকা মৃদু আওয়াজ তুলে মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠায় আমার ভাবনার সুঁতোয় টান পড়ে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে কোনোরকমে উঠে বসে, বেড সাইড টেবিল থেকে হাতরিয়ে তুলে নিলাম মোবাইলটা। ফোনের স্ক্রিন সামনে ধরতেই দেখলাম, আমার ছোটবেলার কিছু বান্ধবীরা ওয়াটস্ অ্যাপে কল দিয়েছে। বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমানোর কারণে ওতো দূর থেকে ওদের পক্ষে আমার বিয়েতে এটেন্ড করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

ওদের সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে হঠাৎ কারো চিৎকার ভেসে আসতেই কল কেটে দিয়ে চকিত সামনে ফিরে চাইলাম আমি। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আদ্রিশ চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে বলে উঠল

-‘ আরে বউ, আমাদের বিয়েটা হয়ে পারেনি এখনই তুমি আমায় সিডিইউস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো! বাহ্ তুমি দেখি আমার চাইতো বেশি ফার্স্ট!

আদ্রিশ হতে এমন অশোভনীয় কথায় নিজের দিকে এক পলক তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম। আয়হায়, গরম লাগছিল বলে শাড়ির আঁচল খানিকটা সরিয়েছিলাম কিন্তু এখন দেখি পুরোটাই সরে গেছে! ইশ কি লজ্জা! তড়িঘড়ি করে শাড়ির আঁচলটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলাম তাই। আদ্রিশের দিকে একবার অসহায় চাহনিতে দৃষ্টিপাত করে আবারও মাথা নত করে ফেললাম। আর মনে মনে অরনীকে কয়েকদফা ঝারলাম। কেননা যাওয়ার আগে বারবার করে ওকে বলে দিয়েছি, দরজায় যেন লক করে যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

এদিকে মেহরুনের শরীরটা খারাপ লাগছিল বলে সবার সাথে বসে খেতে পারেনি আর। এজন্যই তো আদ্রিশও না খেয়ে একেবারে তার আর তার বউয়ের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল, দুজন মিলে একসাথে খাবে বলে! কিন্তু এসেই যে মেহরুনকে এমন অর্ধ উন্মুক্ত অবস্থায় দেখতে হবে তা কখনো ভাবেনি আদ্রিশ। তাই তো নিজেকে দমিয়ে না রেখে উক্ত কথাটা অকপটেই বলেই ফেলল। আজকাল কেন জানিনা তার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে মন চায়না!

বউকে এমন অবস্থায় দেখলে কার মাথা ঠিক থাকে! তবে আদ্রিশ নিজেকে সামলে নেয় কেননা বউ তার সারাদিন খায়নি, বেচারিকে তো এখন খাওয়াতে হবে নইলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে! তাই ওসব অবাধ্য চিন্তাগুলোকে দূরে ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে আদ্রিশ শান্ত গলায় বলে উঠল

-‘ আমার ঘরে না গিয়ে তুমি এখানে কেন?

তখনের ওমন ঘটনার জন্য আমি এখনো ইতস্তত বোধ করছি। তবুও আদ্রিশের দিকে না তাকিয়েই মাথা নত রেখে জবাব দিলাম

-‘ আপনার ঘর সাজাচ্ছিল ওরা। আর আমার খারাপ লাগছিল তাই এখানেই চলে এলাম।

-‘ আবার আপনি! সারাজীবনেও আপনি করে বলিসনি আর এখন নতুন নতুন ঢং করছিস! খবরদার আমায় আপনি করে না বলে তুমি করে বলবি!

রাগ করে এতোটুকু বলে আমার পাশে এসে বসে পড়ল আদ্রিশ। খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে এক লোকমা খাবার মুখে তুলে দিল আমার মুখে। সত্যিই ভীষণ খিদে পেয়েছিল তাই আমিও আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলাম। অর্ধেক খাবার খাওয়া হতেই আমার টনক নড়ে, আদ্রিশও তো খায়নি। আমি তাই প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম

-‘ এই তুমি তো খাওনি!

-‘ তুমি খেলেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে!

আমার কথার পিঠে একগাল হেসে উক্ত কথাটা বলল আদ্রিশ। তার কথায় পাত্তা না দিয়ে, উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে, প্লেট হাতে নিয়ে খাইয়ে দিলাম তাকে। সে খাবার খেতে খেতে বলে উঠল

-‘ আহ্ কি অপূর্ব স্বাদ!

-‘ অপূর্ব তো হবেই। নামকরা বাবুর্চির রান্না এটা, অপূর্ব না লেগে যাবে কোথায়?

-‘ আরে তা তো। তবে বউয়ের হাতে খাবার খাচ্ছি বলে রান্নার স্বাদ বহুগুণে বেড়ে গেছে!

আহ্লাদে গদগদ হয়ে কথাটা বলে উঠল আদ্রিশ। আর আমি ভেংচি কেটে বললাম, ‘যতসব ঢং!’

খাওয়া দাওয়া শেষে প্লেটগুলো টেবিলের উপর রেখে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। আদ্রিশ এসে এবার বলল

-‘ চলো যাই।

-‘ কোথায়?

-‘ কোথায় আবার আমাদের বাসর ঘরে। আজ না আমাদের বাসর রাত!

দুষ্ট হেসে কথাগুলো বলে, আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের কক্ষে চলে এলো আদ্রিশ।

আমার কাজিনরা এখানেই ছিল এতোক্ষণ। আমাদের আসতে দেখে তারা মিটিমিটি হেসে কেটে পড়ে। তবে যাওয়ার আগে রিশতা আমায় ফিসফিসিয়ে বলে যায়

-‘ কংগ্রাচুলেশনস এণ্ড ইনজয় দিস মোমেন্ট! আর হ্যাঁ কাল সকালে তোর এক্সপেরিয়েন্সটা শেয়ার করতে ভুলিস না যেন!

এতোটুকু বলেই দৌড়ে চলে যায় রিশতা। ওর যাওয়ার পানে কটমট করে চেয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। কি অসভ্য মেয়ে রে বাবা!

ওরা চলে যেতেই দরজা আঁটকে দেয় আদ্রিশ। এরপর মাতাল করা এক চাহনি নিয়ে একপা একপা করে এগিয়ে এলো আমার পানে। তার অধরের কোণে লেপ্টে আছে দুষ্ট হাসি। আড়ষ্ট গলায় সে বলে উঠল

-‘ ইশ, ছোট থেকে আমার বউটাকে একপ্রকার কোলে পিঠেই মানুষ করেছি বলা চলে! আমার সেই ছোট্ট মেহুপাখি আজ আমার বউরাণি! আসো বউ কাছে এসো, একটু আদর করে দেই তোমায়!

আদ্রিশের এহেন বাক্যচয়নে লজ্জা পেয়ে বসলাম এবার। তাই পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। এরই মাঝে আমায় পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সে। ইতোমধ্যে শাড়ির আঁচল ভেদ করে তার বলিষ্ঠ হাত জোড়া গভীর স্পর্শে আমার পেটের ওপর বিচরণ করতে থাকে। ঘটনার এমন আকস্মিকতায় এক অজানা অদ্ভুত শিহরণে শিউরে উঠলাম আমি। এভাবে সে আমায় কখনোই স্পর্শ করেনি! ফলে সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে আমার। মনের কোণে বয়ে যায় এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির! আমি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই সে আরো জোড়ালোভাবে আঁকড়ে ধরে। আমার ঘাড়ে তার অধরজোড়া গভীরভাবে ছুঁইয়ে দিয়ে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে উঠল

-‘ ভালোবাসি বউপাখি! এদিনটারই অপেক্ষায় ছিলাম এতোদিন!

বলেই আমায় ছেড়ে এবার নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয় আদ্রিশ। আমার চিবুকে হাত রেখে হুট করে বলে উঠল

-‘ আচ্ছা ভালো কথা, খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়া উত্তম! তো আমার মিষ্টি কই?

-‘ ফ্রিজেই আছে। ওখান থেকে খেয়ে নিন না!

কোনোমতে এতোটুকু বলে থামলাম। আদ্রিশ আমার ওষ্ঠাধরে স্লাইড করতে করতে বলল

-‘ আমি তো ভিন্ন রকমের মিষ্টির কথা বলছিলাম!

আমি এতোক্ষণ তার দিকে না তাকালেও এবার অবাক হয়ে তার পানে চাইলেন। সে আবারও দুষ্ট হেসে ফিসফিস করে বলল

-‘ কি বুঝলে না তো! দাঁড়াও বুঝিয়ে দেই। ওয়েট!

বলেই আবারও শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরে তার প্রেয়সীর। এরপরেই তার অধরের ভাঁজে নিজের ওষ্ঠাধর ডুবিয়ে দেয় আদ্রিশ।

কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে সে বলল

-‘ একজন বিবাহিত পুরুষের জন্য সবচেয়ে উত্তম ভিটামিন হচ্ছে তার স্ত্রীর এই ঠোঁট! আমার এই ভিটামিনটার বড্ড অভাব ছিল আর আজ তা পূরণ হলো! বুঝলে বউ তুমি আমায় নিয়ম করে প্রতিদিন চু’মু খাবে নয়তো আমিই আমার অধিকার আদায় করে নিব কিন্তু!

এতোটুকু বলে আবারও কিছু বলার পূর্বেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার প্রেয়সী। সে নিজের শরীরের সমস্ত ভর এখন আদ্রিশের উপর ছেড়ে দিয়েছে ইতোমধ্যে। প্রতিনিয়ত তার হৃদয়ে তোলপাড় বয়ে যায়, আর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। আদ্রিশ বুঝে যায় তার বউয়ের সম্মতি। শব্দ করে হেসে তাই কোলে তুলে নেয় বউকে। শত অপেক্ষার অবশেষে আজ তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল তবে!

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here