#শুনলাম_বসন্ত_নাকি_আবার_এসেছে
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ১৯
কলেজ থেকে বেরিয়ে নীর আর শেহনাজ গাড়িতে উঠে বসল ৷ নীরের বাড়ি থেকে আসা গাড়িকে শেহনাজ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ৷ কারন আজকেও দুজনে ঘোরার পরিকল্পনা করেছে ৷ সেই অনুযায়ী প্রথমে নীর আর শেহনাজ পার্কে চলে গেল ৷ সেখানে হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে ওরা আশেপাশে ঘুরতে লাগল ৷ নীর আর শেহনাজ পিঠাপিঠি ৷ তিন মাসের ছোট বড় ৷ তাই ওদের সম্পর্কটাও মজবুত ৷
হাঁটতে হাঁটতে আচমকা শেহনাজ মুখ থুবড়ে পড়ে গেল ৷ সামনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে নীর আগের মতোই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ৷ হঠাৎ বলতে লাগল,,,
চল শেহনাজ আরো কিছু হাওয়াই মিঠাই কিনি ৷
শেহনাজের থেকে কোনো জবাব না পেয়ে নীর ভ্রু কুঁচকে সাইড ফিরে বলতে লাগল,,, কি রে কথা বলছিস….
পাশে কেউ নেই দেখে নীর অবাক হয়ে চারদিকে তাকাতে লাগল ৷ পিছনে তাকাতেই ও আহাম্মক হয়ে গেল ৷ শেহনাজ ঘাসের উপর উল্টে পড়ে ওর দিকে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে ৷ নীর নিজের হতভম্ভ ভাব কাটিয়ে দ্রুত ওর দিকে ছুটে গিয়ে ওকে ধরে ধরে তুলল ৷ শেহনাজ উঠার পাশাপাশি আশেপাশে তাকাতে লাগল ৷ কেউ দেখে নি খেয়াল হতেই শেহনাজ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,,,,
যাক বাবা কেউ দেখেনি ৷
নীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,, তোকে কিছু বলার নেই আমার ৷
শেহনাজ ৩২ পাটি দাঁত বের করে হাসতে লাগল ৷ নীর ভ্রু কুঁচকে বলল,,,, দাঁতের মতো শরীরের হাড়গুলো শক্তিশালী করলে হতো না শেজু?
শেহনাজ নীরের কাঁধে হাত রেখে বলল,,, বাদ দে তো ৷ আমার এই পড়ে যাওয়ার বেমো তোর দুলাভাই ছাড়া কেউ আটকাতে পারবে না ৷
নীর সামান্য হেসে উঠল ৷ সব বাচ্চা কাচ্চার মধ্যে নীর আর তুষার সবচেয়ে শান্ত প্রকৃতির ৷ অতিরিক্ত কথা কখনো বলে না ওরা আর না কখনো গলা উচু করে কারো সাথে কথা বলে ৷
হাঁটতে হাঁটতে শেহনাজ অন্যমনস্ক হয়ে হাওয়াই মিঠাইয়ে কা*মড় দিতে গিয়ে অবাক হয়ে গেল ৷ আহাম্মক হয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,,,
আরে আমার হাওয়াই মিঠাই কোথায় গেল? দোকানদার আঙ্কেল আমাকে ঠকাল? নিলাম বেলুনের মতো ফোলা আর এখন হয়ে গেল পাতলুর মতো লাঠি! কি বা*টপার!
নীর হেসে হেসে বলল,,, গা*ধা হাওয়াই মিঠাই হাওয়া হয়ে গেছে ৷ না খেয়ে ধরে রাখলে তো হারিয়ে যাবেই তাই না?
শেহনাজ মাথা চুলকে বলল,,, ওওও ৷
নীর কিছু একটা ভেবে বলল,,, আচ্ছা শেহনাজ তুষার ভাইয়া যে সবসময় বই পড়ে তো তোদের লাইব্রেরির সব বই পড়া ভাইয়ার মেবি শেষ হয়ে গেছে তাই না?
শেহনাজের মনের ভিতর যে ভালোলাগা ছিল সে সব এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেল নীরের প্রশ্নে ৷ নীরের তুষার ভাইকে নিয়ে আগ্রহ দেখানো আর তুষার ভাইয়ের নীরকে নিয়ে আগ্রহ বেশ পো*ড়াচ্ছে শেহনাজের ছোট্ট মনটাকে ৷ শেহনাজকে ভাবুক হতে দেখে নীর ওকে ঝাকিয়ে বলল,,,
শেজু? এই শেজু? কোথায় হারিয়ে গেলি?
শেহনাজ ভাবনা থেকে বেরিয়ে বলল,,, হু? কিছু না ৷
নীর ভ্রু কুঁচকে শেহনাজের দিকে তাকিয়ে থেকে হাতের একটা প্যাকেট পাশে রাখা ডাস্টবিনে ফেলে দিল ৷ কিন্তু একই সময়ে অন্য একটা ছেলে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে আসায় নীরের প্যাকেট টা ছেলেটার হাতে পড়ে গেল ৷ নীর তৎক্ষণাৎ বলে উঠল,,,
আফওয়ান ভাইয়া ৷
ছেলেটা একপলক নীরকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলল,,, হোয়াট সরি? তোমার মাফ ধুয়ে কি আমি পানি খাব? চোখে দেখো না নাকি ইচ্ছা করেই এমন করেছো যাতে আমার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাও কোনটা?
নীর কোনো তর্কে গেল না কারন এটা ওর স্বভাবের মধ্যে পড়েই না ৷ উল্টো ঘুরে যেতে ধরলে ছেলেটা ওর পথ আগলে বলল,,,
ধরা পড়ে যাওয়ায় এখন পালিয়ে যাচ্ছ? তোমরা টিনএজ মেয়েরা বড়ই চতুর ৷ সুন্দর ছেলে দেখলেই গায়ে পড়ে কথা বলতে চাও ৷
শেহনাজ টি*টকারি মে*রে বলল,,, সে তো দেখতেই পাচ্ছি কে গায়ে পড়ে কথা বলতেছে ৷ কার মেয়েদের দেখলে কথা বলার কুরকুরি উঠে যায় ৷
ছেলেটা চোখ পাকিয়ে শেহনাজের দিকে তাকাল ৷ ওকেও আপাদমস্তক কিছুপল দেখে নিয়ে বলল,,,
আসলে তোমাদের কোনো দোষ নেই ৷ আমিই একটু বেশি সুদর্শন তো তাই লোভ সামলাতে পারো নি ৷ কোনো ব্যাপার না ৷ আমি তোমাদের ইচ্ছা পূরণ করব ৷ চলো কোথাও ঘুরতে যাই ৷
নীর আর শেহনাজ সমস্বরে বলে উঠল,,, নো থ্যাংকস ফাং ৷
বলে ওরা যেতে ধরলে ছেলেটা আবারও ওদের পথ আটকে দিয়ে বলল,,, ভার্সিটির ক্রাশ বয়, টপার বয়কে রিজেক্ট করছো? বলি তোমাদের কি লজ্জা লাগল না?
আরো আজেবাজে কথা বলে ছেলেটা ওদের বি*রক্ত করতে লাগল ৷ আশেপাশে কেউ নেই যে তাদের থেকে সাহায্য নিবে ৷ নীর আর শেহনাজ এখনও ছোট মানুষ , এসব বা*জে ছেলেদের সাথে ওরা কোনো তর্কে যায় না তাই ৷ কিন্তু আজ এই ছেলে ইচ্ছা করে ঝা*মেলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে ৷
দুজনেই ক্যারাটে শিখেছে রাইমার কাছে কিন্তু প্রয়োগ করার মতো অভিজ্ঞতা এখনও অর্জন করেনি ওরা ৷ এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কোথা থেকে তুবা এসে ছেলেটার পিঠে সজোরে একটা লা*ত্থি দিয়ে বলতে লাগল,,,
কি রে মানিক লাল এখানেও ইভটিজিং করা শুরু করেছিস?
ছেলেটা তাল সামলাতে না পেরে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেল ৷ নিজেকে সামলে নিয়ে ও উঠে দাঁড়িয়ে রা*গান্বিত হয়ে তুবার দিকে তাকাতেই চুপসে গেল ৷ তুবা ভ্রু নাচিয়ে বলল,,,
তোর সাহস তো কম না আমার বোনদের বির*ক্ত করিস! ভার্সিটিতে বারিশ স্যারের হাতে তোর পা*ছায় যে সপাত সপাত বাড়ি খাওয়ালাম তাও শিক্ষা হয়নি তোর? কাল ভার্সিটিতে আয় শুধু আবার বারিশ স্যারের কাছে নালিশ দিব ৷
মানিক হাত জোর করে বলল,,, এই এমন করিস না বোন আমার ৷ বারিশ স্যার মে*রে ফেলবে আমাকে! আমি জানতাম না এরা তোর বোন ৷
ওওও তার মানে অন্যের বোন হলে করতি?
মানিক বি*স্ফোরিত চোখে বলল,,, সেটা কখন বললাম?
তলে তলে তো সেটাই বললি ৷
আমার কথার ডাবল মিনিং বের করলে কিন্তু আমি ভার্সিটির ছাদ থেকে ঝাপ দিব বলে দিলাম!
তুবা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,, আচ্ছা যা ঝাপ দে ৷ তবে হ্যাঁ সন্ধ্যার আগে আগে দিস তাহলে ডুবন্ত সূর্যের সাথে তোর একটা ঝাপন্ত পিক তুলে আমি বেস্ট ফটোগ্রাফার হয়ে যাব ৷
মানিক হতাশ স্বরে বলল,,, এতোটা নি*ষ্ঠুর হতে নেই ৷ দিনদিন দুনিয়া থেকে অনেক কিছুই উঠে যাচ্ছে ৷ তুই দয়া করে মানবতাকেও উঠিয়ে দিস না ৷
নীর আর শেহনাজ তখন থেকে চোখ বড় বড় করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ শেষের কথাগুলো শুনে ওরা হাসতে লাগল ৷ শেহনাজ হাসতে হাসতে বলল,,,
আপু এ নাকি তোমাদের ভার্সিটির ক্রাশ বয় আর টপার ৷
তুবা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,,, এসব বলেছে ছ্যাহ! এই মানিক লাল রিজেকশনে সেঞ্চুরি করেছে ৷ আমাদের ক্লাস আর সিনিয়র আপু মিলিয়ে মোট ১০০ মেয়েকে প্রপোজ করেছে ৷ তার মধ্যে ৫০ জনের কাছে রিজেকশনের পাশাপাশি থা*প্পড়ও খেয়েছে তাই না রে?
মানিক থতমত মুখে মাথা নিচু করল ৷ তুবা পুনরায় বলতে লাগল,,, হ্যাঁ টপার বলা যায় তবে পিছনের দিক দিয়ে ৷ পিছনের দিক দিয়ে ও ফাস্ট পজিশনে আছে ৷ সাবজেক্টের দিক দিয়ে সবচেয়ে ভালো পজিশনে আছে বারিশ স্যারের সাবজেক্টে, অবশ্যই সেটা পিছনের দিক থেকে ৷ এ তো আমাদের আয়েশা আপুর থেকেও খারাপ র্যাংকিংয়ে আছে!
মানিক আর এক মুহূর্ত দেরি না করে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়ল ৷ এর চেয়ে বেশি অপ*মান ওর কান স*হ্য করতে পারবে না ৷ মানিক চলে যেতেই ওরা তিনজন হেসে উঠল ৷ হাসি থামিয়ে তুবা ক*টমট দৃষ্টিতে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
গাল বরাবর একটা থা*প্পড় মা*রতে পারিস নি? ওমন ম্যানত ম্যানত করছিলি কেন? তোদের কি এজন্যই রাইমা খালামনি ক্যারাটে শিখিয়েছিল? আ*হাম্মকের দল!
নীর আর শেহনাজ লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,,, আর একটু সাহস জোগাড় করার পর প্রয়োগ করা শুরু করব ৷
তুবা কিছুক্ষণ শান্ত চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,, ঠিক আছে মাফ করলাম ৷ চল আইসক্রিম খাওয়াই তোদের ৷ আয়েশা আপু তো ছাত্রকে পড়াতে গেছে ৷ আমি না হয় তোদের একটু শিক্ষা দেওয়াই ৷
ওরা তিনজন চলে গেল ৷ ওরা চলে যেতেই দূর থেকে একটা গাড়ি নজরে আসল ৷ স্বাধীন নিজের চশমা ঠিক করে মুচকি হেসে বলল,,,
লা*ত্থিটা ওবাবাগো!
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
বীর মনোযোগ দিয়ে কিছু ম্যাথ সলভ করছে আর আয়েশা গালে হাত দিয়ে সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ৷ বারিশ কিছুক্ষণ আগেই ড্রয়িংরুমে এসেছে ৷ বর্তমানে ও কিচেনে গিয়ে কফি মেকারে কফি বানাচ্ছে ৷ আয়েশা বীরের খাতা থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে দেখতে লাগল ৷ বর্ষা খুব সুন্দর করে নিজের সংসার টা সাজিয়ে রেখেছে ৷ তা দেখে আয়েশার বেশ ভালো লাগল ৷
হঠাৎ এক জোড়া নতুন জুতোর দিকে চোখ যেতেই আয়েশা বলে উঠল,,, ওগুলো কার জুতো বাছা?
বীর ম্যাথ করা থামিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,,, আমার আমার ৷
বেশ সুন্দর তো ৷ কিন্তু ওগুলো এখনও প্যাকেটে গুছিয়ে রেখেছো কেন? গতকালকেও তো এখানেই রাখা দেখেছিলাম ৷ তুমি কি জুতোগুলো পুরাতন হওয়ার ভয়ে পড়ছো না নাকি বাছা?
তেমন টা না সু..
বীর আটকে গেল ৷ কেউ একজন ওকে এই নামে ডাকতে কড়াভাবে নি*ষেধ করেছিল ৷ হু*মকি দিয়েছিল দ্বিতীয়বার এই নামে ডাকলে পা*ছা লাল করে দিবে!
বীরকে থামতে দেখে আয়েশা কপাল কুঁচকে বলল,,, কি?
বীর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,,, আসলে শপের আঙ্কেলটা বলেছিল নতুন জুতো প্রথম দুইদিন পড়লে একটু ব্যা*থা লাগবে তারপরে আর লাগবে না ৷ তাই ভেবে রেখেছি দুইদিন পর জুতোটা পড়ব ৷ তাহলে আর ব্যা*থাই পাব না আমি ৷
আয়েশা আহাম্মক হয়ে গেল ৷ একে কি করে বোঝাবে যে জুতাটা দুইদিন পর পড়ুক আর এক মাস পর পড়ুক তবুও প্রথম প্রথম একটু ব্যা*থা লাগবেই!
বারিশ কফি খেতে খেতে ড্রয়িংরুমে আসতে আসতে বলল,,, যেমন টিচারের বুদ্ধি তেমন তার ছাত্রের বুদ্ধি!
আয়েশাও তৎক্ষণাৎ বলে উঠল,,, যেমন টিচারের বুদ্ধি তেমন তার ছাত্রীর বুদ্ধি টু!
চলবে,,,,,